আজকের এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলা তৃতীয় পাঠের দ্বিতীয় বিভাগ “হারিয়ে যাওয়া কালি কলম” নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পূর্ববর্তী বছরগুলোর পরীক্ষায় এ ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সহায়ক হবে।
আধুনিক যন্ত্রযুগকে মেনে নিয়েও লেখকের মনের আবেগ ও শিল্পীসত্তা কীভাবে ফুটে উঠেছে?
- কথামুখ – ‘কালি আছে কাগজ নেই, কলম আছে মন নেই’ গ্রন্থ থেকে নেওয়া ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে আমরা প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থের মনের আবেগ ও শিল্পীসত্তার এক অপূর্ব পরিচয় পেয়েছি।
- কালের ধারায় কলমের বিবর্তন – শৈশবে লেখকের সঙ্গী ছিল বাঁশের কলম, লেখার জন্য কলাপাতা, এবং বাড়িতে সহজ পদ্ধতিতে তৈরি কালি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি দেখেছেন কালের ধারায় কলমের বিবর্তন — বাঁশের কলম, খাগের কলম, পালকের কলম, ফাউন্টেন পেন, বলপেন। প্রতিটি ধাপে কলম আরও আধুনিক ও উন্নত হয়েছে।
- কম্পিউটারের আধিপত্য – এরপর কম্পিউটারের আগমনে কলমের গুরুত্ব ক্রমশ কমতে শুরু করে এবং কলম অবলুপ্তির পথে চলে যায়। লেখক এখানে নিজের বিপন্নতা অনুভব করেছেন, কারণ লেখালেখির কাজের সুবাদে কলমের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা গড়ে উঠেছিল। তাঁর সহকর্মীরা যখন কম্পিউটারে কাজ করতেন, তিনি তখনও পেনের ওপরই নির্ভরশীল ছিলেন। কলমের পরিবর্তন এবং তার ইতিহাসের কথা বলতে গিয়ে শ্রীপান্থ তাঁর মনের আবেগকে লুকিয়ে রাখতে পারেননি।
- আধুনিকতার পথে – পুরোনো দিনের কালিকলমের প্রতি গভীর ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও, একজন শিল্পী হিসেবে তিনি আধুনিকতার পথে পা রেখে নিজের কাজ চালিয়ে গিয়েছেন।
- শেষের কথা – বলপেনের কাছে আত্মসমর্পণ করলেও, নিজের শিল্পীসত্তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য লেখক এই পরিবর্তনকে মেনে নিয়েছেন।
কালিকলমের প্রতি ভালোবাসা হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধে কীভাবে ফুটে উঠেছে?
- কথামুখ – ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে কলম, দোয়াত, এবং দোয়াতের কালির প্রতি লেখকের স্মৃতিমেদুর ভালোবাসা এবং সভ্যতার ধারাবাহিকতায় এগুলোর হারিয়ে যাওয়ার বেদনা ফুটে উঠেছে।
- লেখাপড়ার সঙ্গী – শৈশবে লেখকের লেখাপড়ার সঙ্গী ছিল বাঁশের কলম এবং কাগজাকৃতি কলাপাতা। বাড়ির উনুনে কড়াইয়ের নিচে জমে যাওয়া কালি লাউপাতা দিয়ে ঘষে, পরে সেটি পাথরের বাটিতে জলে গুলে কালি তৈরি করা হতো। ধীরে ধীরে বাঁশের কলম হারিয়ে যায় এবং তার জায়গায় খাগের কলম ও পালকের কলমের প্রচলন শুরু হয়।
- ফাউন্টেন পেনের আগমন – এরপর কলমের জগতে ফাউন্টেন পেনের আগমন বিপ্লব আনে। ফাউন্টেন পেন সস্তা এবং সবার জন্য সহজলভ্য হয়ে ওঠে। বাজারে কাজল কালি, সুলেখা কালি দোয়াত ও বোতলে বিক্রি হতে থাকে। পরবর্তীতে বলপেনের প্রচলন হয়।
- কম্পিউটারের আধিপত্য – বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে কম্পিউটার কলমের জায়গা দখল করে নেয়। বাজার থেকে পেন ও কালি ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকলে লেখকের মতো ‘কালি কলমের ভক্ত’দের মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে।
- শেষের কথা – কম্পিউটারের আধিপত্যকে মেনে নিলেও, কলমের সঙ্গে জড়িত শৈশবের স্মৃতি হারিয়ে যাওয়ায় লেখক বিষণ্ন হয়েছেন এবং তাঁর মনকে ভারাক্রান্ত করেছে।
প্রবন্ধ কী? বস্তুনিষ্ঠ বা Formal Essay হিসেবে ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধটি কতদূর সার্থক?
প্রবন্ধ – প্রবন্ধ শব্দটির ইংরেজি অর্থ হল ‘Essay’। সংস্কৃতে বলা হয় ‘প্রকৃষ্টরূপে বন্ধন’। প্রবন্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে,Any brief composition in prose that undertakes to discuss a matter, express a point of view, or persuade us to accept a thesis on any subject whatever. প্রবন্ধ দুইপ্রকার হয় – 1. বস্তুনিষ্ঠ বা Formal Essay, 2. ব্যক্তিনিষ্ঠ বা Informal Essay.
বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধ হিসেবে সার্থকতা – শ্রীপান্থ রচিত ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ রচনাটিতে বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধের বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি, যুক্তিনিষ্ঠার সঙ্গে ব্যক্তিনিষ্ঠ প্রবন্ধের ব্যক্তিগত আবেগ ও অভিজ্ঞতার মিশ্রণ ঘটেছে। আলোচ্য প্রবন্ধটির শুরুতেই রয়েছে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ছোঁয়া। লেখকের অফিসে কলমের ব্যবহার আর কেউ করেন না-এই অভিজ্ঞতা থেকেই লেখক ফিরে যান তাঁর শৈশবে। বাঁশের কঞ্চির কলম, লেখার পাতা হিসেবে কলাপাতা, কালি তৈরির কৌশল-এসব দিয়ে শুরু হয় কলমের ইতিহাস-পরিক্রমা। কথাপ্রসঙ্গে আসে মিশর বা রোমের কলমের প্রসঙ্গ। ক্রমে আসে লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যান আর তাঁর ফাউন্টেন পেন আবিষ্কারের কথা। এই ফাউন্টেন পেন থেকে কম্পিউটার, লেখার ইতিহাসের এই বিবর্তনই তাঁর রচনার কেন্দ্রে থাকলেও তাঁর ব্যক্তিগত দীর্ঘশ্বাসও শোনা যায়, কলমের অবলুপ্তির কারণে। সমগ্র প্রবন্ধের মধ্যে তথ্যের জোগান যথেষ্ট কিন্তু প্রাবন্ধিকের ব্যক্তিগত আবেগ ও অনুভব এই প্রবন্ধটিকে যে অত্যন্ত সরস ও মনোগ্রাহী করে তুলেছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
প্রাবন্ধিক যেভাবে কলমের বিবর্তনের কথা বলেছেন, তা প্রবন্ধ অনুসরণে লেখো।
অথবা, হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধে লেখক কলমের যে অতীত ও বর্তমান রূপের কথা বলেছেন তার সম্পর্কে লেখো।
প্রবন্ধ – প্রবন্ধ শব্দটির ইংরেজি অর্থ হলো ‘Essay’। সংস্কৃতে বলা হয় ‘প্রকৃষ্টরূপে বন্ধন’। প্রবন্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, “Any brief composition in prose that undertakes to discuss a matter, express a point of view, or persuade us to accept a thesis on any subject whatever”। প্রবন্ধ সাধারণত দুই প্রকারের হয় – ১. বস্তুনিষ্ঠ বা Formal Essay, ২. ব্যক্তিনিষ্ঠ বা Informal Essay।
বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধ হিসেবে সার্থকতা – শ্রীপান্থ রচিত ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধটিতে বস্তুনিষ্ঠ প্রবন্ধের বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি ও যুক্তিনিষ্ঠার সঙ্গে ব্যক্তিনিষ্ঠ প্রবন্ধের ব্যক্তিগত আবেগ ও অভিজ্ঞতার মিশ্রণ ঘটেছে। আলোচ্য প্রবন্ধের শুরুতেই রয়েছে লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ছোঁয়া। লেখকের অফিসে কলমের ব্যবহার কেউ আর করে না – এই অভিজ্ঞতা থেকেই লেখক ফিরে যান তাঁর শৈশবে। বাঁশের কঞ্চির কলম, লেখার পাতা হিসেবে কলাপাতা, কালি তৈরির কৌশল – এসব দিয়ে শুরু হয় কলমের ইতিহাসের বিবর্তন। কথার প্রসঙ্গে আসে মিশর ও রোমের কলমের প্রসঙ্গ। ক্রমে আসে লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যানের ফাউন্টেন পেন আবিষ্কারের কথা। এই ফাউন্টেন পেন থেকে কম্পিউটার – লেখার ইতিহাসের এই বিবর্তনই তাঁর রচনার কেন্দ্রে থাকলেও, কলমের অবলুপ্তির কারণে লেখকের ব্যক্তিগত দীর্ঘশ্বাসও ফুটে ওঠে। সমগ্র প্রবন্ধে তথ্যের সঠিক জোগান রয়েছে, কিন্তু প্রাবন্ধিকের ব্যক্তিগত আবেগ ও অনুভব প্রবন্ধটিকে অত্যন্ত সরস ও মনোগ্রাহী করে তুলেছে।
হারিয়ে যাওয়া কালি কলম প্রবন্ধে লেখক বেশ কয়েকটি প্রবাদের ব্যবহার করেছেন – প্রবাদের এই ব্যবহারের প্রাসঙ্গিকতা কোথায়?
কথামুখ – প্রবাদ হলো সামাজিক অভিজ্ঞতার প্রতিফলন। এই সামাজিক অভিজ্ঞতার মধ্যে লুকিয়ে আছে সামাজিক ইতিহাসের ধারাও। প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে কালি ও কলমের ইতিহাস বলতে গিয়ে কয়েকটি ক্ষেত্রে প্রবাদের ব্যবহার করেছেন। লেখার প্রাসঙ্গিকতা ও ভাবনাকে আরও গভীরভাবে তুলে ধরার জন্য তিনি প্রবাদের সাহায্য নিয়েছেন। ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে মোট পাঁচটি প্রবাদের উল্লেখ পাওয়া যায়।
- কালি-কলম মন, লেখে তিনজন – প্রবন্ধের শুরুতেই এসেছে “কালি-কলম মন, লেখে তিনজন”। এখানে কালি এবং কলমের লুপ্তপ্রায় অবস্থা ইঙ্গিত করছে যে, প্রযুক্তির প্রভাবে ঐতিহ্যগত কালি ও কলমের ব্যবহার হারিয়ে যাচ্ছে।
- কালি নেই, কলম নেই, বলে আমি মুনশি – এরপর এসেছে “কালি নেই, কলম নেই, বলে আমি মুনশি” প্রবাদটি। এর মানে, বর্তমানে লেখালেখির কাজ করতে কলমের দরকার নেই, কারণ টাইপরাইটার বা কম্পিউটারের মাধ্যমে লেখা এখন সহজ হয়ে গেছে। এটি প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রতিফলন।
- তিল ত্রিফলা সিমূল ছালা/ছাগ দুগ্ধে করি মেলা/লৌহপাত্রে লোহায় ঘসি/ছিঁড়ে পত্র না ছাড়ে মসি – এই প্রবাদের মাধ্যমে লেখক পুরনো পদ্ধতিতে কালি তৈরির প্রক্রিয়া তুলে ধরেছেন। লোকশিক্ষা ও লোক-অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কালি তৈরি হত, যা তখনকার সমাজের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার প্রতিফলন।
- কলমে কায়স্থ চিনি, গোঁফেতে রাজপুত – এই প্রবাদের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, সেকালে নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের হাতে ছিল লেখার অধিকার। ‘কলমে কায়স্থ চিনি’ প্রবাদের অর্থ কায়স্থদের মধ্যে লেখালেখির প্রাধান্য ছিল, আর রাজপুতদের গোঁফ তাদের বীরত্বের প্রতীক।
- কালির অক্ষর নাইকো পেটে, চণ্ডী পড়েন কালীঘাটে – এই প্রবাদের মাধ্যমে লেখক কালি ও লেখার মাহাত্ম্য বোঝাতে চেয়েছেন। এটি বোঝায় যে, কালি না থাকলেও, ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী প্রথাগুলোর (যেমন কালীঘাটে চণ্ডীপাঠ) বিশেষ ভূমিকা ছিল।
শেষের কথা – এভাবেই প্রবাদের মাধ্যমে সামাজিক অভিজ্ঞতা, ইতিহাসের উপাদান ও সমাজের দর্পণ হিসেবে এই প্রবন্ধের ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে।
হারিয়ে যাওয়া কালি কলম রচনাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
সাহিত্যের নামকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। রচয়িতার অভিপ্রায় রচনাটির নামের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়। নামকরণ সাধারণত চরিত্রধর্মী, বিষয়ভিত্তিক বা ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে থাকে। আমাদের পাঠ্য ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধটির নামকরণ কতটা সার্থক, তা আলোচনার বিষয়।
কালি-কলম-মন, লেখে তিনজন — অর্থাৎ, প্রাচীনকাল থেকেই মনের সঙ্গে কালি এবং কলমের সম্পর্ক। সময় এগিয়ে চলেছে নদীর স্রোতের মতো। এই বহমানতার যুগে মানুষ ক্রমশ যন্ত্রকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। এর ফলে মানুষ মনের সঙ্গে যুক্ত থাকা ছোটো ছোটো সামগ্রী হারাতে বসেছে। লেখক তাঁর নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলেছেন, তাঁর অফিসে সবাই কম্পিউটার ব্যবহারে পারদর্শী। একমাত্র তিনিই কলম ব্যবহার ছাড়তে পারেননি। এর ফলে একদিন যদি কোনো কারণে কলম নিয়ে যেতে ভুলে যান, তবে বিপদ! “কলম! কারও কাছে কলম নেই।” এই বিলাপ থেকেই স্পষ্ট যে কলম হারিয়ে যেতে বসেছে। শৈশবে লেখকরা যেভাবে বাঁশের কলম তৈরি করে ব্যবহার করেছেন এবং কড়াইয়ের নীচের কালি লাউ পাতা দিয়ে ঘষে তুলে জলে গুলে যেভাবে কালি তৈরি করেছেন, তা এখন স্মৃতির বিষয়। ফাউন্টেন পেন আসার পর কলম হয়ে ওঠে সস্তা এবং সবার প্রিয়। ক্রমশ ফাউন্টেন পেনের আধিপত্যকে হটিয়ে দিয়ে বাজার দখল করে বলপেন। ইতিহাসের পাতায় চলে যায় বাঁশের পেন, খাগের পেন, পালকের পেন প্রভৃতি। হাতে তৈরি কালি, সুলেখা কালি, কালি শুকানোর ব্লটিং পেপার সব উধাও হয়ে যেতে থাকে। আক্ষেপের সুরে লেখক বলেছেন, “আশ্চর্য, সবই আজ অবলুপ্তির পথে। কম্পিউটার যেন তাদের জাদুঘরে পাঠানোর প্রতিজ্ঞা করেছে।” তাঁর আক্ষেপ বিষাদে পরিণত হয়েছে, কারণ তিনিও জানেন যে আধুনিকতার কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে হবে। তবুও শৈশবের সেই কালিকলম হারিয়ে যাওয়াকে তিনি মানতে পারেননি। তাই বিষয়ের সঙ্গে নামটি সাযুজ্যপূর্ণ এবং সংগতি লাভ করেছে। বিষয়ধর্মী নামকরণ হিসেবে রচনাংশটির নাম যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ ও সার্থক হয়েছে।
সব মিলিয়ে লেখালেখি রীতিমতো ছোটোখাটো একটা অনুষ্ঠান। – লেখালেখি ব্যাপারটিকে ছোটোখাটো অনুষ্ঠান বলা হয়েছে কেন বুঝিয়ে দাও।
বাঁশের কঞ্চির কলম – একসময় রোগা বাঁশের কঞ্চি কেটে কলম তৈরি করা হতো। কালি যাতে গড়িয়ে না পড়ে, তাই মুখটা চিরে দেওয়া হতো। লেখা হতো কলার পাতায়।
কালি তৈরি – কালিও নিজেদেরই তৈরি করতে হতো। কাঠের উনুনে রান্না করা কড়াইয়ের তলার কালি লাউপাতা দিয়ে ঘষে তুলে তা পাথরের বাটিতে রেখে জলে গোলা হতো। কখনও কখনও হরীতকী, আতপ চাল ভাজা পুড়িয়ে বেটে মিশিয়ে দেওয়া হতো তাতে, তারপর খুন্তি পুড়িয়ে জলে ছ্যাঁকা দিয়ে ফোটানো হতো।
- প্রথম লেখালেখি – বাঁশের কলম, মাটির দোয়াত, ঘরে তৈরি কালি আর কলাপাতায় লেখকের প্রথম লেখালেখি। শহরের হাই স্কুলে ভর্তির পরে বাঁশের বা কঞ্চির কলমকে ছুটি দেওয়া হয়। কালি বানানোও বন্ধ হয়ে যায়।
- কাচের দোয়াতে কালি তৈরি – কাচের দোয়াতে এই কালি বানানো হতো কালি ট্যাবলেট বা বড়িগুলি দিয়ে। তৈরি কালি পাওয়া যেত দোয়াতে।
- ফাউন্টেন পেনের জন্ম – ফাউন্টেন পেনের জন্য ছিল বিদেশি কালি। রকমারি নিব ও হ্যান্ডেল ছিল। ফাউন্টেন পেনকে প্ল্যাটিনাম, সোনা ইত্যাদি দিয়ে মুড়ে দেওয়া হতো।
- দোয়াত কলমের অবসান – এই পর্যায়ে দোয়াত কলম হয়ে গেল ঘর সাজানোর আসবাব। একসময় লেখা শুকানো হতো বালিতে, পরে ব্লটিং পেপারে। প্রথম যুগে তার চেহারা ছিল একরকম, পরবর্তীকালে সেই রূপের বদল ঘটে যায়।
- শেষের কথা – তারপর সবই অতীত হয়ে গেল। লেখালেখি এভাবে এক অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছিল।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার তৃতীয় পাঠের দ্বিতীয় বিভাগ “হারিয়ে যাওয়া কালি কলম” থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে বা কোনো বিষয়ে অসুবিধা হয়, তাহলে টেলিগ্রামের মাধ্যমে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমি সাহায্যের চেষ্টা করব। এছাড়া, এই পোস্টটি আপনার পরিচিতদের সঙ্গে শেয়ার করুন, যাদের এটি কাজে লাগতে পারে। ধন্যবাদ।