অ্যানোডাইজিং (Anodising) কাকে বলে?

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অ্যানোডাইজিং (Anodising) কাকে বলে?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “ধাতুবিদ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যানোডাইজিং (Anodising) কাকে বলে?

অ্যানোডাইজিং (Anodising) কাকে বলে?

অ্যালুমিনিয়াম বা তার ধাতুসংকর দ্বারা তৈরি জিনিসপত্রকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করার জন্য বর্তমানে অ্যালুমিনিয়ামের ওপর তড়িৎবিশ্লেষণ দ্বারা অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের প্রলেপ দেওয়া হয়। একে অ্যানোডাইজিং বলে। একটি তড়িৎবিশ্লেষণ-পাত্রে ক্রমিক অ্যাসিডের দ্রবণ নিয়ে তার মধ্যে অ্যালুমিনিয়ামকে অ্যানোড হিসাবে ব্যবহার করে তড়িৎবিশ্লেষণ করলে অ্যালুমিনিয়াম অ্যানোডে অক্সিজেন উৎপন্ন হয় এবং তার ওপর সূক্ষ্ম অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের আবরণ পড়ে। একে ইচ্ছামতো রং করে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

অ্যানোডাইজিং কী?

অ্যানোডাইজিং হল একটি তড়িৎ–রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে অ্যালুমিনিয়াম বা তার মিশ্র ধাতুর পৃষ্ঠে একটি স্থায়ী ও সুরক্ষামূলক অক্সাইড স্তর (প্রলেপ) তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় ধাতব বস্তুকে অ্যানোড হিসেবে ব্যবহার করা হয় বলেই এর নাম “অ্যানোডাইজিং”।

অ্যানোডাইজিং করা হয় কেন?

অ্যানোডাইজিং মূলত দুটি কারণে করা হয় –
1. সুরক্ষা – অ্যানোডাইজিংয়ের মাধ্যমে যে অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড স্তর তৈরি হয় তা অত্যন্ত শক্ত ও ক্ষয়রোধী। এটি নিচের ভঙ্গুর অ্যালুমিনিয়ামকে মরিচা, আবহাওয়া ও রাসায়নিক ক্ষয় থেকে সুরক্ষা দেয়।
2. সৌন্দর্য – এই অক্সাইড প্রলেপটি ছিদ্রযুক্ত প্রকৃতির হওয়ায় সহজেই বিভিন্ন রঙে রাঙানো যায়। ফলে অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের বাহ্যিক চেহারা আরও আকর্ষণীয় ও টেকসই হয়।

অ্যানোডাইজিং প্রক্রিয়াটি কিভাবে কাজ করে?

অ্যানোডাইজিং প্রক্রিয়াটির কাজ –
1. একটি তড়িৎবিশ্লেষণ পাত্রে (Electrolytic Bath) সাধারণত সালফিউরিক অ্যাসিডযুক্ত অ্যাসিডিক দ্রবণ নেওয়া হয়।
2. অ্যালুমিনিয়ামের বস্তুটিকে অ্যানোড (ধনাত্মক প্রান্ত) এবং অন্য একটি ধাতুকে ক্যাথোড (ঋণাত্মক প্রান্ত) হিসেবে সংযোগ করা হয়।
3. তড়িৎপ্রবাহ চালু করলে অ্যানোডে (অ্যালুমিনিয়াম বস্তুর পৃষ্ঠে) অক্সিজেন উৎপন্ন হয়।
4. এই অক্সিজেন অ্যালুমিনিয়ামের সাথে বিক্রিয়া করে ঘন ও শক্ত অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড (Al₂O₃) স্তর গঠন করে।

অ্যানোডাইজিংয়ের পর রং করা হয় কীভাবে?

অ্যানোডাইজিংয়ের সময় পৃষ্ঠে যে অক্সাইড স্তর তৈরি হয় তা অসংখ্য ক্ষুদ্র ছিদ্রযুক্ত হয়। এই ছিদ্রগুলোর মধ্যে বিশেষ ধরনের রঞ্জক (Dye) শোষণ করিয়ে পৃষ্ঠে রং করা হয়।
এরপর সিলিং (Sealing) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেই ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে রং স্থায়ী থাকে ও জল বা রাসায়নিক ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে

অ্যানোডাইজিং করা জিনিসের রং কি ফিকে পড়ে বা খসে যায়?

না, সঠিকভাবে অ্যানোডাইজিং ও সিলিং করা হলে রং অত্যন্ত টেকসই হয়। এটি শুধু উপরিভাগে না থেকে অক্সাইড স্তরের ভেতর শোষিত থাকে, ফলে সাধারণ পেইন্টের মতো খসে পড়ে না বা সহজে ফিকে হয় না।

অ্যানোডাইজিং কি ধাতুর আয়তন বা পুরুত্ব বাড়ায়?

হ্যাঁ, অ্যানোডাইজিংয়ের ফলে ধাতুর পৃষ্ঠে একটি অতিরিক্ত অক্সাইড স্তর যুক্ত হয়। ফলে সামান্য পুরুত্ব বৃদ্ধি পায়, যদিও এটি খুবই সূক্ষ্ম এবং সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

অ্যানোডাইজিংয়ের ব্যবহারিক ক্ষেত্র লেখো।

অ্যানোডাইজিংয়ের ব্যবহারিক ক্ষেত্র –
1. স্থাপত্যে – জানালার ফ্রেম, দরজা, বিল্ডিংয়ের বাইরের ক্ল্যাডিং।
2. গৃহস্থালি পণ্য – রান্নার পাত্র, ফ্ল্যাশলাইট, ফার্নিচার, কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স।
3. ইলেকট্রনিক্স – ল্যাপটপ বডি, স্মার্টফোন কেস।
4. স্বয়ংচালিত ও মহাকাশ শিল্পে – গাড়ি ও বিমানের হালকা ও টেকসই যন্ত্রাংশ।
5. খেলাধুলার সামগ্রী – সাইকেল ফ্রেম, হাইকিং উপকরণ ইত্যাদি।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “অ্যানোডাইজিং (Anodising) কাকে বলে?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “ধাতুবিদ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ব্রোমিনের সঙ্গে অ্যাসিটিলিনের যুত বিক্রিয়াটি উল্লেখ করো।

ব্রোমিনের সঙ্গে অ্যাসিটিলিনের যুত বিক্রিয়াটি উল্লেখ করো।

কার্যকরী মূলক বা ক্রিয়াশীল গ্রুপ কাকে বলে? কার্যকরী মূলক ও জৈব মূলকের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।

কার্যকরী মূলক বা ক্রিয়াশীল গ্রুপ কাকে বলে? কার্যকরী মূলক ও জৈব মূলকের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।

একটি জৈব যৌগের আণবিক সংকেত C₂H₄O₂। যৌগটি জলে দ্রাব্য এবং যৌগটির জলীয় দ্রবণে NaHCO₃ যোগ করলে CO₂ নির্গত হয়। জৈব যৌগটিকে শনাক্ত করো। জৈব যৌগটির সঙ্গে ইথানলের বিক্রিয়া শর্ত ও সমিত রাসায়নিক সমীকরণসহ লেখো।

C₂H₄O₂ সংকেতের একটি জৈব যৌগ NaHCO₃-এর সাথে CO₂ গ্যাস দেয়। যৌগটি শনাক্ত করো ও ইথানলের সাথে এর বিক্রিয়ার শর্তসহ সমীকরণ দাও।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Life Science Suggestion 2026 – রচনাধর্মী প্রশ্ন

Madhyamik Life Science Suggestion 2026 – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

Madhyamik Life Science Suggestion 2026 – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – স্তম্ভ মেলাও

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – সত্য মিথ্যা