কার্বন বিজারণে Na, Ca, Al ধাতু নিষ্কাশন না হওয়ার কারণ কী?

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “কার্বন-বিজারণ পদ্ধতিতে সোডিয়াম, ক্যালশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতু নিষ্কাশন করতে না পারার কারণ লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “ধাতুবিদ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

কার্বন-বিজারণ পদ্ধতিতে সোডিয়াম, ক্যালশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতু নিষ্কাশন করতে না পারার কারণ লেখো।

কার্বন-বিজারণ পদ্ধতিতে সোডিয়াম, ক্যালশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতু নিষ্কাশন করতে না পারার কারণ লেখো।

তীব্র তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতু, যেমন – সোডিয়াম, পটাশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতির তড়িৎ-ঋণাত্মক ক্লোরিন এবং অক্সিজেনের প্রতি তীব্র আসক্তি আছে। ওইসব ধাতুর ক্লোরাইড এবং অক্সাইড অত্যন্ত সুস্থির প্রকৃতির যৌগ। তাই এদের ক্লোরাইড বা অক্সাইডকে কার্বন-বিজারণ পদ্ধতি দ্বারা নিষ্কাশন করা যায় না। আবার ক্যালশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতুর অক্সাইডকে কার্বন দ্বারা বিজারিত করতে গেলে ধাতব কার্বাইড উৎপন্ন হয়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

কার্বন বিজারণ পদ্ধতি কী?

এটি একটি ধাতু নিষ্কাশনের পদ্ধতি যেখানে ধাতুর অক্সাইডকে কার্বনের সাথে গরম করলে কার্বন, অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং ধাতু মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, দস্তা অক্সাইড (ZnO)কে কার্বনের সাথে গরম করলে দস্তা (Zn) ধাতু পাওয়া যায়।
ZnO + C → Zn + CO

সোডিয়াম, ক্যালশিয়াম বা অ্যালুমিনিয়ামের মতো ধাতু নিষ্কাশনে কার্বন বিজারণ পদ্ধতি কেন ব্যবহার করা যায় না?

প্রধানত দুটি কারণে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় না—
1. তীব্র তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতুর যৌগ অত্যন্ত সুস্থির – সোডিয়াম, ক্যালশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতু খুবই তীব্র তড়িৎ-ধনাত্মক। তাদের অক্সিজেন বা ক্লোরিনের প্রতি আকর্ষণ (আসক্তি) অত্যন্ত বেশি। ফলে গঠিত অক্সাইড বা ক্লোরাইড যৌগগুলো খুবই সুস্থির হয়। কার্বন এই যৌগগুলিকে ভেঙে ধাতু মুক্ত করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী বিজারক নয়।
2. ধাতব কার্বাইড গঠনের প্রবণতা – ক্যালশিয়াম বা অ্যালুমিনিয়ামের মতো কিছু ধাতুর অক্সাইডকে কার্বন দিয়ে বিজারিত করলে কাঙ্ক্ষিত ধাতুর পরিবর্তে ধাতব কার্বাইড (যেমন – CaC₂, Al₄C₃) উৎপন্ন হয়। ফলে ধাতু পাওয়া যায় না।

যদি কার্বন দিয়ে বিজারণ করা না যায়, তাহলে এই ধাতুগুলো কীভাবে নিষ্কাশন করা হয়?

এই ধরণের তীব্র তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতু নিষ্কাশনের জন্য তড়িৎ-বিশ্লেষণ পদ্ধতি (Electrolysis) ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ —
1. সোডিয়াম নিষ্কাশন করা হয় গলিত সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) -এর তড়িৎ-বিশ্লেষণ করে।
2. অ্যালুমিনিয়াম নিষ্কাশন করা হয় বিশুদ্ধ অ্যালুমিনা (Al₂O₃) -এর গলিত মিশ্রণের তড়িৎ-বিশ্লেষণ করে (হলের পদ্ধতি)।

‘তীব্র তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতু’ বলতে কী বোঝায়?

যে সকল ধাতু ইলেকট্রন সহজে ত্যাগ করে ধনাত্মক আয়ন (ক্যাটায়ন) গঠনের প্রবণতা খুব বেশি, তাদেরকে তীব্র তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতু বলে। এরা সাধারণত পর্যায় সারণির বাম দিকের (গ্রুপ 1 ও 2) -এর ধাতু, যেমন — Li, Na, K, Ca ইত্যাদি। অ্যালুমিনিয়ামও এই শ্রেণিতে পড়ে।

কার্বন বিজারণ পদ্ধতিতে কোন ধাতুগুলো নিষ্কাশন করা যায়?

কার্বন বিজারণ পদ্ধতি সাধারণত মধ্যম সক্রিয়তার ধাতু নিষ্কাশনের জন্য উপযোগী— যারা তড়িৎ-রাসায়নিক শ্রেণিতে হাইড্রোজেনের নিচে অবস্থান করে। যেমন – লোহা (Fe), দস্তা (Zn), টিন (Sn), সীসা (Pb) ইত্যাদি।

‘ধাতব কার্বাইড’ গঠন বলতে কী বোঝায়? এটি কেন সমস্যা তৈরি করে?

ধাতব কার্বাইড হলো ধাতু ও কার্বনের যৌগ। উদাহরণস্বরূপ, ক্যালশিয়াম অক্সাইড (CaO)-এর সঙ্গে কার্বন (C) বিক্রিয়া করলে ক্যালশিয়াম ধাতুর পরিবর্তে ক্যালশিয়াম কার্বাইড (CaC₂) উৎপন্ন হয় —
CaO + 3C→ CaC2​ + CO এটি সমস্যাযুক্ত কারণ লক্ষ্য ছিল মুক্ত ধাতু (Ca) পাওয়া, কিন্তু এর পরিবর্তে একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন যৌগ (CaC₂) তৈরি হয়। তাই এই পদ্ধতি ধাতু নিষ্কাশনের জন্য কার্যকর নয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “কার্বন-বিজারণ পদ্ধতিতে সোডিয়াম, ক্যালশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতু নিষ্কাশন করতে না পারার কারণ লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “ধাতুবিদ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ব্রোমিনের সঙ্গে অ্যাসিটিলিনের যুত বিক্রিয়াটি উল্লেখ করো।

ব্রোমিনের সঙ্গে অ্যাসিটিলিনের যুত বিক্রিয়াটি উল্লেখ করো।

কার্যকরী মূলক বা ক্রিয়াশীল গ্রুপ কাকে বলে? কার্যকরী মূলক ও জৈব মূলকের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।

কার্যকরী মূলক বা ক্রিয়াশীল গ্রুপ কাকে বলে? কার্যকরী মূলক ও জৈব মূলকের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।

একটি জৈব যৌগের আণবিক সংকেত C₂H₄O₂। যৌগটি জলে দ্রাব্য এবং যৌগটির জলীয় দ্রবণে NaHCO₃ যোগ করলে CO₂ নির্গত হয়। জৈব যৌগটিকে শনাক্ত করো। জৈব যৌগটির সঙ্গে ইথানলের বিক্রিয়া শর্ত ও সমিত রাসায়নিক সমীকরণসহ লেখো।

C₂H₄O₂ সংকেতের একটি জৈব যৌগ NaHCO₃-এর সাথে CO₂ গ্যাস দেয়। যৌগটি শনাক্ত করো ও ইথানলের সাথে এর বিক্রিয়ার শর্তসহ সমীকরণ দাও।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026

Madhyamik Life Science Suggestion 2026

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026 – রচনাধর্মী প্রশ্ন

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026 – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026 – সত্য মিথ্যা