চুয়াড় বিদ্রোহ সম্পর্কে টীকা লেখো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “চুয়াড় বিদ্রোহ – টীকা লেখো। নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “চুয়াড় বিদ্রোহ – টীকা লেখো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

চুয়াড় বিদ্রোহ - টীকা লেখো।

চুয়াড় বিদ্রোহ – টীকা লেখো।

কোম্পানির অপশাসনের বিরুদ্ধে আদিবাসী-উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের প্রথম সশস্ত্র প্রতিবাদ ছিল চুয়াড় বিদ্রোহ।

পরিচিতি –

চুয়াড়রা ছিল মেদিনীপুর, বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত ‘জঙ্গলমহল’ নামক বনাঞ্চলের আদিম অধিবাসী। কৃষিকার্য ও পশুপালনের পাশাপাশি তারা স্থানীয় জমিদারদের অধীনে পাইক বা সৈনিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত।

বিদ্রোহের কারণ –

কোম্পানির ভূমিরাজস্ব নীতিতে এই সমস্ত অঞ্চলের জমিদাররা বিক্ষুব্ধ ছিল। জমিদারের লাঠিয়াল বা রক্ষীর কাজের বিনিময়ে চুয়াড়রা প্রচুর নিষ্কর জমি (পাইকান জমি) ভোগ করত। কিন্তু নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থায় এই সকল নিষ্কর জমি ব্রিটিশ খাজনা বলয়ের অন্তলক্ষ হয়। চিরাচরিত ব্যবস্থায় এ হেন অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনের ফলে পাইক, চুয়াড়, কৃষক ও জমিদাররা একযোগে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

বিদ্রোহের সূচনা ও প্রসার –

1768 খ্রিস্টাব্দে জগন্নাথ সিং -এর নেতৃত্বে চুয়াড় বিদ্রোহের প্রথম পর্যায় সূচিত হলেও 1798-1799 খ্রিস্টাব্দে দুর্জন সিং -এর নেতৃত্বেই চুয়াড় বিদ্রোহের সংগঠিত রূপ প্রকাশ পায়। রায়পুর, বলরামপুর, তমলুক, রামগড়, শালবনি প্রভৃতি অঞ্চল বিদ্রোহীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়। মেদিনীপুরের রানি শিরোমণি, গোবর্ধন দিম্পতি প্রমুখের নেতৃত্বে বিদ্রোহ হিংসাত্মক আকার ধারণ করে।

বিদ্রোহ দমন –

বিদ্রোহীদের সাহায্য ও সমর্থনের অভিযোগে সরকার রানি শিরোমনি ও দুর্জন সিং -কে গ্রেপ্তার করলে বিদ্রোহীরা ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী নির্মম নির্যাতন ও নিপীড়নের মাধ্যমে বিদ্রোহ দমন করে।

গুরুত্ব –

আপাত ব্যর্থতা সত্ত্বেও চুয়াড় বিদ্রোহের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না –

  • প্রথমত – ব্রিটিশ শাসন, শোষণ ও ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এটি হল আদিবাসী-উপজাতি জনগোষ্ঠীর প্রথম সশস্ত্র সংগ্রাম।
  • দ্বিতীয়ত – জমিদারদের নেতৃত্বে কৃষকরা এই বিদ্রোহে অংশ নিলেও এটি ছিল নিম্নবর্গীয় মানুষের একটি স্বতঃস্ফূর্ত গণসংগ্রাম।
  • তৃতীয়ত – এই বিদ্রোহের ফলে ইংরেজ সরকার চুয়াড়দের অভিযোগগুলির যথার্থতা অনুভব করে এবং তাদের বসবাসের জন্য ‘জঙ্গলমহল’ নামে একটি পৃথক প্রশাসনিক অঞ্চল গঠন করে দেয়।

মন্তব্য –

ভারতের অগণিত কৃষক-উপজাতি বিদ্রোহের ভিড়ে চুয়াড় বিদ্রোহ এক স্বতন্ত্র স্থানের অধিকারী। চুয়াড়দের আত্মত্যাগ, স্বাধীনতাস্পৃহা এবং মরনপন সংগ্রাম ইতিহাসের এক উজ্জ্বল ইতিবৃত্ত।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

চুয়াড় বিদ্রোহ কী?

চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভূমিরাজস্ব নীতি ও শোষণের বিরুদ্ধে আদিবাসী-উপজাতি সম্প্রদায়ের প্রথম সশস্ত্র প্রতিবাদ। এটি মূলত বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া জেলার ‘জঙ্গলমহল’ অঞ্চলে সংঘটিত হয়।

চুয়াড়রা কারা ছিল?

চুয়াড়রা ছিল জঙ্গলমহল অঞ্চলের আদিবাসী সম্প্রদায়। তারা মূলত কৃষিকাজ, পশুপালন এবং স্থানীয় জমিদারদের অধীনে পাইক (সৈনিক) বা লাঠিয়াল হিসেবে কাজ করত।

চুয়াড় বিদ্রোহের প্রধান কারণ কী ছিল?

ব্রিটিশ ভূমিরাজস্ব নীতির ফলে চুয়াড়দের নিষ্কর জমি (পাইকান জমি) ব্রিটিশ খাজনা ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত হয়। এতে তাদের অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়, যা বিদ্রোহের মূল কারণ।

চুয়াড় বিদ্রোহের প্রধান কেন্দ্রগুলি কোথায় ছিল?

রায়পুর, বলরামপুর, তমলুক, রামগড়, শালবনি প্রভৃতি অঞ্চলে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে।

ব্রিটিশ সরকার কীভাবে চুয়াড় বিদ্রোহ দমন করে?

ব্রিটিশ পুলিশ ও সেনাবাহিনী নির্মম দমননীতি প্রয়োগ করে। রানি শিরোমণি ও দুর্জন সিং -কে গ্রেপ্তার করা হলে বিদ্রোহ দুর্বল হয়ে পড়ে।

চুয়াড় বিদ্রোহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?

চুয়াড় বিদ্রোহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব হল –
1. এটি ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আদিবাসী-উপজাতিদের প্রথম সশস্ত্র সংগ্রাম।
2. এটি নিম্নবর্গীয় মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলনের উদাহরণ।
3. ব্রিটিশ সরকার চুয়াড়দের জন্য ‘জঙ্গলমহল’ নামে পৃথক প্রশাসনিক অঞ্চল তৈরি করে।

চুয়াড় বিদ্রোহ কি সফল হয়েছিল?

যদিও বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়, তবুও এটি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আদিবাসী সংগ্রামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

চুয়াড় বিদ্রোহের অন্য নাম কী?

এটি জঙ্গলমহল বিদ্রোহ নামেও পরিচিত।

চুয়াড় বিদ্রোহের ফলে ব্রিটিশ সরকার কী ব্যবস্থা নেয়?

ব্রিটিশ সরকার চুয়াড়দের জন্য ‘জঙ্গলমহল’ নামে একটি পৃথক প্রশাসনিক অঞ্চল গঠন করে তাদের কিছু দাবি মেনে নেয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “চুয়াড় বিদ্রোহ – টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “চুয়াড় বিদ্রোহ – টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল? বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজের সীমাবদ্ধতা কী?

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারী সমাজের অংশগ্রহণ ও সীমাবদ্ধতা লেখো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে বাংলার ছাত্র সমাজ কীরূপ ভূমিকা পালন করেছিল?

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে বাংলার ছাত্র সমাজ কীরূপ ভূমিকা পালন করেছিল?

পরিবেশের ওপর বর্জ্য পদার্থের তিনটি প্রভাব সংক্ষেপে লেখো।

পরিবেশের ওপর বর্জ্য পদার্থের প্রভাব লেখো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারী সমাজের অংশগ্রহণ ও সীমাবদ্ধতা লেখো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে বাংলার ছাত্র সমাজ কীরূপ ভূমিকা পালন করেছিল?

পরিবেশের ওপর বর্জ্য পদার্থের প্রভাব লেখো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি সম্পর্কে টীকা লেখো।