ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারতীয় উপমহাদেশের – প্রাচীন ইতিহাসের ধারা (দ্বিতীয় পর্যায় : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-৬০০ অব্দ) – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Rahul

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায়, ‘ভারতীয় উপমহাদেশের – প্রাচীন ইতিহাসের ধারা (দ্বিতীয় পর্যায় : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-৬০০ অব্দ)’ অধ্যায়ের কিছু অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও সহায়ক। কারণ ষষ্ঠ শ্রেণী এবং চাকরির পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসতে দেখা যায়।

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারতীয় উপমহাদেশের – প্রাচীন ইতিহাসের ধারা 3
ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারতীয় উপমহাদেশের – প্রাচীন ইতিহাসের ধারা 3
Contents Show

রামায়ণে রাবণকে দশ মাথাওয়ালা রাক্ষস বলা হয়েছে কেন?

রামায়ণে রাবণ একজন অনার্য এবং যুদ্ধে পরাজিত রাজা। তাই রাবণকে ছোটো করে দেখানোর জন্য তাকে দশমাথাওয়ালা দস্যু বা রাক্ষস হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষায় কথা বলা মানুষ কোথায় বাস করত বলে বেশিরভাগ ঐতিহাসিক মনে করেন?

বেশিরভাগ ঐতিহাসিক মনে করেন যে, ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষায় কথা বলা মানুষ প্রথমে তৃণভূমি এলাকায় যাযাবর হিসেবে বাস করত, পরে তারা ইরানে ও ভারতে বাস করতে থাকে।

রামায়ণের বিষয়বস্তু কী?

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী রামায়ণ হল প্রজাবৎসল রাম, দস্যু রাবণের সঙ্গে যুদ্ধ করে কীভাবে স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করেছিলেন তার কাহিনি। ইতিহাসের দিক থেকে দক্ষিণ ভারতের আর্য সভ্যতার বিস্তৃতি এবং আর্য ও অনার্যদের সংঘাত রামায়ণে বর্ণিত হয়েছে।

জেনে রাখো – আর্যদের আদি বাসভূমি কোথায় ছিল তা নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। কারও মতে আর্যরা ভারতেরই অধিবাসী। আবার কোনো কোনো পন্ডিত্তের মতে আর্যরা বাইরে থেকে ভারতে এসেছিল। প্রত্যেকেই তাদের মতের স্বপক্ষে প্রমাণ দিয়েছেন। তবে বেশিরভাগ ঐতিহাসিকেরা মনে করেন যে, আর্যরা বিদেশি।

আর্য কারা?

আর্য কারা এ নিয়ে পন্ডিতদের মধ্যে নানা মত আছে। একটি মত অনুযায়ী যারা আর্য ভাষায় কথা বলত তারা আর্য। অন্যমত অনুযায়ী, খ্রিস্টপূর্ব 1500 অব্দে ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে যে-জাতি ভারতে প্রবেশ করেছিল তারা আর্য।

মনে রেখো – আর্যরা নাচ, গান, রথ-দৌড়, পাশাখেলা প্রভৃতি তাদের অবসর বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করত। পাশাখেলার সঙ্গে সঙ্গে জুয়া খেলাও চলত।

বৈদিক সভ্যতা নাম হয় কেন?

বৈদিক সাহিত্য থেকে ভারতে আর্যদের বসতি বিস্তার ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানা যায়, তাই এই সভ্যতার নাম হয় বৈদিক সভ্যতা।

বৈদিক সাহিত্যের ক-টি ভাগ? কী কী?

বৈদিক সাহিত্যের চারটি ভাগ – সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ।

কোন্ সময়কে আদি বৈদিক যুগ বলে ধরা হয়?

খ্রিস্টপূর্ব 1500 থেকে 1000 অব্দ সময়কে আদি বৈদিক যুগ বলে ধরা হয়।

জান কি? – ঋগবেদে আবাদি জমিকে ‘ক্ষেত্র’ ও ‘উর্বরা’ বলা হয়েছে। লাঙলকে বলা হত ‘মীর’। আর লাঙল জমিতে ব্যবহার করলে যে-দাগ পড়ে তাকে বলা হত ‘সীতা’।

রাজ্য কী? পরবর্তী বৈদিক যুগে এগুলির নাম কীভাবে দেওয়া হতে থাকে?

রাজা যে-এলাকা শাসন করত তাকে বলা হত রাজ্য। পরবর্তী বৈদিক যুগে উপজাতি বা গোষ্ঠীর নামে অঞ্চলের নাম হতে থাকে।

বৈদিক সমাজে কোন্ কোন্ খেলা জনপ্রিয় ছিল?

বৈদিক যুগে পাশাখেলা বেশ জনপ্রিয় ছিল। রথ চালনা ও ঘোড়ার দৌড় মানুষের মনোরঞ্জন করত।

বিদথ কী?

ঋবৈদিক যুগে একটি সমিতি বা প্রতিষ্ঠান ছিল বিদথ। এখানে রাজা ও বিশের সদস্যরা যুদ্ধ করা ও যুদ্ধে প্রাপ্ত সম্পদের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে আলোচনা করত।

পরবর্তী বৈদিক যুগে রাজা কী কী নামে পরিচিত হন?

পরবর্তী বৈদিক যুগে রাজা ভূপতি অর্থাৎ জমির মালিক, মহীপতি অর্থাৎ পৃথিবীর রাজা, নৃপতি অর্থাৎ মানুষের রক্ষাকারী নামে পরিচিত হয়।

বৈদিক যুগে কীসের মাধ্যমে ব্যাবসাবাণিজ্য চলত?

বৈদিক যুগে জিনিসপত্র বিনিময় করা হত। এ যুগে মুদ্রার ব্যবহার ছিল বলে মনে হয় না। যদিও ‘নিষ্ক’ বা ‘শতমান’ মুদ্রার মতোই ব্যবহার করা হত।

বৈদিক যুগে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের কাজ কী ছিল?

বৈদিক যুগে ব্রাহ্মণরা পুজো, যজ্ঞ, বেদ পাঠ করতেন। আর ক্ষত্রিয়দের কাজ ছিল যুদ্ধ করা ও সম্পদ লুঠ করা। এরা রাজা ও শাসকের দায়িত্বও পালন করতেন।

পরবর্তী বৈদিক যুগে শূদ্রদের কী অবস্থা হয়েছিল?

পরবর্তী বৈদিক যুগে সবথেকে খারাপ অবস্থা হয়েছিল শূদ্রদের। তারা সামাজিক কোনো সুযোগসুবিধা পেত না। সমাজে তাদের মর্যাদাও ছিল কম।

পরবর্তী বৈদিক সমাজে কোন্ কাজে মেয়েরা যোগ দিত না?

পরবর্তী বৈদিক সমাজে যুদ্ধ বা ‘সভা’ ও ‘সমিতি’র কাজে মেয়েরা যোগ দিত না। সভায় অংশ নিতে পারত বয়স্ক ব্যক্তিরা এবং সমিতিতে জনসাধারণ অংশ নিত।

‘গোত্র’ কী?

বৈদিক যুগে গবাদি পশু রাখার জায়গাকে বলা হত ‘গোত্র’। পরে ‘গোত্র’ ও উত্তরাধিকারী এক হয়ে যায়। জাতিভেদ – প্রথার ক্ষেত্রে গোত্রের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

সভা ও সমিতি কী?

পরবর্তী বৈদিক যুগে বয়স্ক ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত পরামর্শ পরিষদ ছিল সভা। আর সাধারণ মানুষদের নিয়ে তৈরি হত সমিতি। এরা রাজাকে শাসনকাজে সাহায্য করতেন।

বৈদিক যুগের মানুষ কী ধরনের খাবার খেতেন?

বৈদিক যুগের মানুষের প্রধান খাদ্যশস্য ছিল গম, যব ও ধান। তারা দুধ, ঘি, মাছ, মাংস, ডিম, ফলমূল ইত্যাদি খেত।

বৈদিক যুগে শিক্ষার ক্ষেত্রে কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হত?

বৈদিক যুগে বেদ পাঠ, গণিত, ব্যাকরণ ও ভাষা শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া হত। তা ছাড়া হাতেকলমে অনেক কিছু সে যুগের ছাত্রদের শিখতে হত।

‘স্নাতক’ কাদের বলা হত?

বৈদিক যুগে ছাত্ররা গুরুর কাছ থেকে সাধারণত বারো বছর ধরে শিক্ষা গ্রহণ করত এবং বারো বছরের পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর ‘সমাবর্তন’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ছাত্রদের ‘স্নাতক’ বলে অভিহিত করা হত।

কোন্ সময়ের মধ্যে বৈদিক সাহিত্য রচিত হয়েছিল? বৈদিক শিক্ষার প্রধান দুটি বিষয় কী কী?

খ্রিস্টপূর্ব 1500-600 খ্রিপূর্বাব্দের মধ্যে বৈদিক সাহিত্য রচিত হয়। বৈদিক শিক্ষার প্রধান দুটি বিষয় ছিল- গুরুগৃহে থেকে শিক্ষালাভ এবং শিক্ষান্তে স্নাতক হওয়া।

বৈদিক যুগে কীভাবে গুরুদক্ষিণা দেওয়া হত?

বৈদিক যুগে স্নাতক হওয়ার পর গুরুগৃহ ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে ছাত্ররা তাদের গুরুকে সাধ্যমতো গুরু-দক্ষিণা দিত। এছাড়া গুরুদক্ষিণা হিসেবে শিষ্য বা ছাত্ররা গুরুগৃহের যাবতীয় কাজ করত।

কীনাশ ও শ্রেষ্ঠী কারা?

পরবর্তী বৈদিক যুগে কৃষক বা হলকর্ষকেরা কীনাশ এবং ধনী বণিকগোষ্ঠী শ্রেষ্ঠী নামে পরিচিত ছিল।

তুমি কী মনে করো বৈদিক যুগে লোহার প্রচলন ছিল?

ঋবৈদিক যুগে লৌহের ব্যবহার নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলা যায় না। তবে ‘ঋকবেদে’ উল্লেখিত ‘অয়স’ শব্দের ব্যবহার থেকে অনেকে অনুমান করেন যে, এযুগে লোহার। প্রচলন ছিল। কিন্তু পরবর্তী বৈদিক যুগে লোহার ব্যাপক প্রচলন ঘটে। লোহার ভারী লাঙলের ব্যবহারের দরুন কৃষি অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে।

পরবর্তী বৈদিক যুগে মানুষের ধর্মীয় জীবনে কী পরিবর্তন লক্ষ করা যায়?

পরবর্তী বৈদিক যুগের ধর্মীয় জীবনে নতুন বহু দেবদেবীর উৎপত্তি হয়, যেমন – প্রজাপতি, গোবুড়, বাসুদেব, নারায়ণ প্রভৃতি। এযুগে রুদ্র ও বিস্তৃর গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। পুরোহিতদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং যাগযজ্ঞের গুরুত্ব বাড়ে। নতুন 6টি পুরোহিত শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। এযুগে জন্মান্তরবাদ, কর্মফলবাদ ও জড়বাদী তত্ত্বের উদ্ভব ঘটে।

কোন্ সময়কালকে ঋক্-বৈদিক যুগ ও পরবর্তী বৈদিক যুগ ধরা হয়?

  • খ্রিস্টপূর্ব 1500-1000 খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত ঝক্- বৈদিক যুগের সময়কাল ধরা হয়।
  • 1000-600 খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত সময়কে পরবর্তী বৈদিক যুগের সময়কাল ধরা হয়।

বৈদিক যুগের বিভিন্ন আমলা ও রাজকর্মচারীদের নাম লেখো।

তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে 10 জন আমলার (রত্ন) নাম উল্লেখ আছে, যেমন – অক্ষবাপ, ক্ষত্রী, গ্রামণী, ভাগদুধ, সুত প্রভৃতি। বিভিন্ন রাজকর্মচারী ছিলেন – শতপতি, অধ্যক্ষ (বিচারক), ব্যবহারিক, স্থপতি, যুক্ত প্রভৃতি। এযুগে সভা ও সমিতির উপস্থিতি ছিল।

বৈদিক যুগে প্রচলিত কয়েকটি যজ্ঞের নাম লেখো।

অথবা, সে যুগে রাজারা কী কী যজ্ঞ করতেন?

বৈদিক যুগে রাজারা বিভিন্ন যজ্ঞ করতেন। যেমন – রাজসূয়, বাজপেয়, অশ্বমেধ যজ্ঞ ইত্যাদি। সাধারণত রাজারা তাঁদের ক্ষমতা জাহির করার জন্য এই যজ্ঞগুলি করতেন। যজ্ঞে পৌরোহিত্য করতেন পুরোহিতরা।

বৈদিক যুগে মানুষের পেশা কী কী ছিল?

বৈদিক যুগে সাধারণ মানুষের পেশা ছিল কৃষিকাজ ও পশুপালন। তবে ব্রাহ্মত্মণের পেশা ছিল অধ্যাপনা করা, যজ্ঞে পৌরোহিত্য করা। ক্ষত্রিয়ের পেশা ছিল যুদ্ধ করা। বৈশ্যের পেশা ছিল ব্যবসা করা। এছাড়া উচ্চবর্ণের মানুষরা রাজকর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত থাকত।

বৈদিক যুগে ব্যবহৃত দুটি মুদ্রার নাম লেখো।

বৈদিক যুগে ব্যবহৃত দুটি মুদ্রার নাম ছিল নিষ্ক ও শতমান। তবে সাহিত্য ছাড়া এই মুদ্রাগুলির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

মেগালিথ কেন্দ্র থেকে কী কী জিনিস পাওয়া গেছে?

মধ্যভারত ও দক্ষিণভারতে বৈদিক যুগের অনেক মোগালিথ আবিষ্কৃত হয়েছে। এইসব মেগালিথ বা সমাধিস্থল থেকে মৃত ব্যক্তির ব্যবহৃত নানান জিনিস পাওয়া গেছে, যেমন – কালো ও লাল মাটির বাসনপত্র, পাথর ও পোড়ামাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিস, এছাড়া সোনা, রূপো, ব্রোঞ্জ ও লোহার তৈরি বিভিন্ন জিনিস এবং বিভিন্ন জীবজন্তুর হাড়গোড় ও মাছের কাঁটা পাওয়া গেছে।

বৈদিক যুগের পড়াশোনায় গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক কেমন ছিল বলে মনে হয়?

বৈদিক যুগে গুরু-শিষ্য অর্থাৎ শিক্ষক-ছাত্রের মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠত। গুরুরা তাঁদের শিষ্যদের নানা বিষয়ে শিক্ষা দিতেন। এমনকি গুরুগৃহে শিষ্যরা বিনা পয়সায় থাকা ও খাওয়ায় সুযোগ পেত। তার বদলে শিষ্যরা গুরুগৃহে নানান কাজ করত। শিক্ষা শেষ হলে গুরুরা শিষ্যদের স্নাতক বলে ঘোষণা করতেন। অন্যদিকে শিষ্যরা গুরুদক্ষিণা হিসেবে গোদান করত। এই সময় গুরুরা শিষ্যদের যেমন স্নেহ করতেন, তেমনি শিষ্যরা গুরুকে পরম শ্রদ্ধা ও ভক্তি নিবেদন করত।

বর্ণাশ্রমগুলি কী কী?

ঋকবৈদিক যুগে আর্য সমাজে বর্ণাশ্রম বা চতুবর্ণ প্রথার প্রচলন ছিল। এই প্রথা অনুযায়ী আর্য সমাজ চারটি বর্ণে বিভক্ত ছিল। যথা – ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র।

পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীর অবস্থা খারাপ হয়েছিল কীভাবে?

পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীর অবস্থা ও মর্যাদা হ্রাস পায়। এযুগে কন্যাসন্তানের জন্মকে ভালো চোখে দেখা হত না। সেযুগে বাল্যবিবাহের প্রচলনও হয়েছিল। সতীদাহ প্রথা কঠোর হয়েছিল।

আদি বৈদিক যুগের বাণিজ্য কেমন হত?

ঋকবেদে সেযুগের বাণিজ্য সংক্রান্ত কিছু তথ্য পাওয়া যায়। সেখানে শতধন লাভ ও দূরদেশে বাণিজ্যের ইঙ্গিত মেলে। অনার্য পণি নামক বণিকশ্রেণির পরিচয় পাওয়া যায়। ঋকবেদে উল্লেখিত ‘শত অরিত্র’ বৈদিক যুগের সমুদ্র বাণিজ্যের ইঙ্গিত দেয়। এযুগে বিনিময় প্রথার মাধ্যম ছিল গোরু। পরে মনা নামক স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন হয়।

পরবর্তী বৈদিক যুগের অর্থনীতি বা অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে কী জানো?

বিভিন্ন বৈদিক সাহিত্য থেকে পরবর্তী বৈদিক যুগের অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে অনেক কথা জানা যায়। যেমন – লোহার লাঙল ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে এ যুগে বৈদিক অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। কৃষি পণ্যের উপর 5 শতাংশ কর নেওয়া হত। এযুগে বাণিজ্যের উন্নতি ঘটে। বৈশ্যরা বাণিজ্য করে প্রভূত সম্পত্তির মালিক হয়। গড়ে ওঠে ‘গিল্ড’ বা ব্যবসায়ী সমিতি। মনে করা হয় এ সময় নিষ্ক, শতমান বা কৃষ্ণল জাতীয় মুদ্রার দ্বারা লেনদেন চলত। এযুগে নতুন ধাতুর তালিকায় ছিল টিন, সিসা ও দস্তা। এছাড়া নৌ-শিল্প, ধাতু শিল্প, মৃৎশিল্প ও বস্ত্রশিল্পের উন্নতি সাধিত হয়।

আদি বৈদিক সমাজে নারীরা কী কী কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতেন?

আদি বৈদিক সমাজে নারীরা ছিলেন সর্বময়ী কত্রী। তাঁরা উপযুক্ত শিক্ষালাভ করতেন এবং সমাজের বিভিন্ন কাজে যোগ দিতেন। তাঁরা নাচ-গান থেকে শুরু করে যুদ্ধবিদ্যাতেও পটিয়সী ছিলেন। এছাড়া তাঁরা যজ্ঞানুষ্ঠানেও যোগ দিতে পারতেন।

ঋবৈদিক যুগের ব্যাবসাবাণিজ্য সম্পর্কে কী জানো?

বিভিন্ন বৈদিক সাহিত্য থেকে সেযুগের ব্যাবসাবাণিজ্য সম্পর্কে বেশ কিছু পরিচয় পাওয়া যায়। এযুগে বৈশ্য ও অনার্য পণিরা (অনার্য দাস ও দস্যু) ব্যাবসাবাণিজ্যে লিপ্ত ছিল। জলপথ ও স্থলপথে বাণিজ্য চলত। সমুদ্রপথে বাণিজ্যের জন্য সম্ভবত ‘শত অরিত্র’ ব্যবহৃত হত। স্থলপথে গোরুর গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হত। প্রথমদিকে ব্যাবসাবাণিজ্যের জন্য গো-বিনিময় প্রথা প্রচলিত ছিল। পরে নিষ্ক ও মনা নামক স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন ঘটে।

আদি বৈদিক যুগের কী কী জীবিকার প্রচলন ছিল?

ঋবৈদিক বা আদি বৈদিক যুগে নানা ধরনের জীবিকার প্রচলন ছিল। যেমন – পশুপালন ছিল তাদের আর একটি জীবিকা। গৃহপালিত প্রধান পশু গোরুকে গোধন বলা হত। গোরু ছিল সম্পদ ও সম্পত্তির মাপকাঠি। ধনী ব্যক্তিকে ‘গোমৎ’ বলা হত। গোরু ছাড়া ঘোড়া, হাতি, বৃষ, ভেড়া ও ছাগল পালন করা হত। এযুগে অন্যান্য কিছু পেশার কথা জানা যায়। যথা – তাঁতি, ছুতোর, ভিষক বা চিকিৎসক, বপ্তা বা নাপিত, কুমোর, চর্মশিল্পী, স্বর্ণকার ইত্যাদি।

ঋবৈদিক যুগের অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে কী জানো?

বিভিন্ন বৈদিক সাহিত্য থেকে ঋবৈদিক যুগের অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যায়। যেমন – এযুগে কৃষি ছিল প্রধান জীবিকা। কৃষিজমিকে বলা হত উর্বরা। কৃষক কৃষ্টি নামে পরিচিত ছিল। আর্যরা সীর বা লাঙল দিয়ে জমি কর্ষণ করত। তারপর বীজ বপন, সার প্রয়োগ ও জলসেচ করত। ধান ও যব ছিল প্রধান খাদ্যশস্য। ড. ব্যাসামের মতে, তখন জমির ব্যক্তিগত মালিকানা ছিল না। এর দায়িত্বে ছিলেন ‘গ্রামণী’।

ঋবৈদিক যুগে কী কী শিল্পের প্রচলন ছিল বলে মনে হয়?

বিভিন্ন ঋবৈদিক সাহিত্য থেকে সেযুগে প্রচলিত বিভিন্ন শিল্পের কথা জানা যায়। বাণিজ্যের সঙ্গে এযুগের ছোটো ছোটো শিল্পের একটা সূক্ষ্ম যোগাযোগ ছিল। এই শিল্পগুলির তালিকায় ছিল-স্বর্ণ শিল্প, পশম শিল্প, চর্ম শিল্প, মৃৎ শিল্প, নৌকা ও রথ নির্মাণ শিল্প, সুতিবস্ত্র শিল্প।

আদি বৈদিক যুগের মানুষ কীভাবে অবসর বিনোদন করত বলে মনে হয়?

বিভিন্ন বৈদিক সাহিত্য থেকে সমকালের মানুষের অবসর- বিনোদনের কথা জানা যায়, যেমন – অবসর সময়ে আর্যরা আমোদপ্রমোদ করত। সেযুগে নৃত্য, গীত ও যন্ত্রসংগীতের পরিচয় পাওয়া যায়। এছাড়া তারা ঘোড়াদৌড়, রদ প্রতিযোগিতা, মৎস্য শিকার, মৃগয়া, পাশাখেলা, জুয়াখেলা, মুষ্টিযুদ্ধ প্রভৃতিতে অংশগ্রহণ করত।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায়, “ভারতীয় উপমহাদেশের – প্রাচীন ইতিহাসের ধারা (দ্বিতীয় পর্যায় : আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-৬০০ অব্দ)” অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়ক হবে, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ!

Please Share This Article

Related Posts

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – নমুনা প্রশ্ন ও উত্তরপত্র (Sample Questions with Answers)

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – নমুনা প্রশ্ন ও উত্তরপত্র (Model Question)

ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

ষষ্ঠ শ্রেণী – ইতিহাস – ভারত ও সমকালীন বহির্বিশ্ব (খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত) – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Life Science Suggestion 2026 – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – স্তম্ভ মেলাও

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – সত্য মিথ্যা

Madhyamik Life Science Suggestion 2026 – শূন্যস্থান পূরণ

Madhyamik Life Science MCQ Suggestion 2026