নবম শ্রেণী – ইতিহাস – বিংশ শতকে ইউরোপ – জাতিসংঘ – বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

Sourav Das

বিংশ শতকে ইউরোপের ইতিহাস ছিল একটি অত্যন্ত নাটকীয় ও ঘটনাবহুল অধ্যায়। এই শতাব্দীতে ইউরোপে দুটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়, যা ইউরোপের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দেয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘ গঠিত হয়।

নবম-শ্রেণী-–-ইতিহাস-–-বিংশ-শতকে-ইউরোপ-–-জাতিসংঘ-–-বিশ্লেষণমূলক-প্রশ্ন-ও-উত্তর

জাতিসংঘ (League of Nations) প্রতিষ্ঠার পটভূমি – টীকা লেখো।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসলীলার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ (League of Nations) নামে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।

জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পটভূমি –

  1. স্থায়ী শান্তি স্থাপনের আন্দোলন – ভবিষ্যৎ যুদ্ধের সম্ভাবনা চিরতরে দূর করার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে উঠেছিল। বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি এতে অংশগ্রহণ করেন ও আন্দোলন পরিচালনার জন্য বহু প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এগুলির মধ্যে আমেরিকার League of Nations Society ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
  2. উইলসনের চোদ্দো দফা নীতি – মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন তাঁর বিখ্যাত চোদ্দো দফা নীতির মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী মানুষের শান্তিকামী মনোভাব ও প্রচেষ্টাকে সর্বোৎকৃষ্টভাবে রূপদান করেন। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিরোধকে শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসা করে বিশ্বশান্তি অব্যাহত রাখার কথা ঘোষণা করেন। ইংল্যান্ড ও অন্যান্য কয়েকটি রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দ মার্কিন রাষ্ট্রপতির এই ঘোষণাকে সমর্থন করেন।
  3. প্রস্তাব গ্রহণ – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর প্যারিস শান্তি সম্মেলনে উইলসন কর্তৃক উত্থাপিত লিগ অফ নেশনস – এর প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। জাতিসংঘ গঠনের প্রস্তাবটি ভার্সাই সন্ধির শর্তের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
  4. লিগ কভেনান্ট – জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা ও তার নিয়মাবলি রচনার উদ্দেশ্যে প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে উইলসনের সভাপতিত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটি ‘লিগ কভেনান্ট’ বা ‘লিগের চুক্তিপত্র’ নামে জাতিসংঘের একটি খসড়া সংবিধান রচনা করে।
  5. জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা – ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ২৮ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি জাতিসংঘের প্রথম অধিবেশন বসে।

জাতিসংঘের (Leauge of Nations) ব্যর্থতার কারণগুলি উল্লেখ করো।

অথবা, জাতিসংঘের ব্যর্থতার কারণগুলি সংক্ষেপে লেখো।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন ঘোষিত (৮ জানুয়ারি, ১৯১৮ খ্রি.) চোদ্দো দফা শর্ত – র শেষ দফা শর্তানুসারে জাতিসংঘ (League of Nations) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জাতিসংঘ কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফল হলেও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও যুদ্ধ নিবারণে ব্যর্থ হয়েছিল।

জাতিসংঘের (Leauge of Nations) ব্যর্থতার কারণগুলি উল্লেখ করো

জাতিসংঘের ব্যর্থতার কারণ

জাতিসংঘের ব্যর্থতার কারণগুলি হল –

  1. আমেরিকা-সহ অনেক রাষ্ট্রের অনুপস্থিতি – বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্র আমেরিকা জাতিসংঘের সদস্যপদ গ্রহণ করেনি। তা ছাড়া জার্মানি, ইটালি, ল্যাটিন আমেরিকার অনেক রাষ্ট্র জাতিসংঘ ত্যাগ করেছিল এবং রাশিয়া বহিষ্কৃত হয়েছিল।
  2. সাংবিধানিক ত্রুটি – জাতিসংঘ শক্তিধর ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির দ্বারা পরিচালিত হত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ী রাষ্ট্রগুলি জাতিসংঘকে নিজেদের স্বার্থরক্ষায় ব্যবহার করছিল বলে পরাজিত রাষ্ট্রগুলি জাতিসংঘের বিরোধিতা করেছিল। এ ছাড়া আক্রমণকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আর্থিক অবরোধ ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
  3. নিজস্ব সামরিক বাহিনীর অভাব – নিজস্ব সামরিক বাহিনী ছিল না বলে জাতিসংঘ প্রয়োজনে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করতে পারেনি।
  4. তোষণনীতি – ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স জাতিসংঘকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে। জাতিসংঘ দুর্বল সংস্থা ছিল বলে শক্তিশালী দেশগুলির অন্যায় কাজের বিরোধিতা করতে পারেনি। ফ্রান্স জার্মানির রুঢ় শিল্পাঞ্চলে এবং জাপান চিনের মাঞ্চুরিয়ায় সামরিক আগ্রাসন চালায়। জার্মানি রাইন অঞ্চলে সেনা অভিযান চালায় (১৯৩৬ খ্রি.) এবং অস্ট্রিয়া দখল করে (১৯৩৮ খ্রি.)। এ ছাড়া ইটালি ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে আবিসিনিয়া দখল করে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে জাতিসংঘ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে বা তোষণনীতি অনুসরণ করে।
  5. নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনের ব্যর্থতা – জাতিসংঘের উদ্যোগে জেনিভা শহরে নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় (১৯৩২-৩৩ খ্রি.)। এই সম্মেলনে ইটালি ও জার্মানির অস্ত্র মজুতের পরিমাণের প্রশ্নে মতভেদ দেখা দেয়। ফলে হিটলারের নির্দেশে জার্মান প্রতিনিধি সম্মেলন ত্যাগ করেন এবং নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন ব্যর্থ হয়।
  6. ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির পারস্পরিক স্বার্থসংঘাত, নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনের ব্যর্থতা, জার্মানি ও ইটালির সদস্যপদ ত্যাগ এবং সর্বোপরি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা জাতিসংঘের পতনকে সম্পূর্ণ করেছিল।

বিংশ শতকে ইউরোপের ইতিহাস ছিল একটি রক্তক্ষয়ী ও বেদনাদায়ক ইতিহাস। এই শতাব্দীতে ইউরোপে দুটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, যার ফলে বিপুল প্রাণহানি ও ধ্বংস হয়েছিল। এই যুদ্ধগুলির ফলে ইউরোপের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল।

যাইহোক, এই শতাব্দীতে ইউরোপের জন্য কিছু ইতিবাচক ঘটনাও ঘটেছিল। জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যা বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Tom Loses a Tooth

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

The North Ship

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer