নবম শ্রেণী – ইতিহাস – বিংশ শতকে ইউরোপ – নাৎসি দল – বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

Sourav Das

নবম শ্রেণীর ইতিহাস পাঠ্যপুস্তকে নাৎসি দলের উত্থান ও পতন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা পাঠ্যপুস্তকের সাহায্যে নাৎসি দলের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে।

জার্মানিতে নাৎসি দল (Nazi Party) – এর উদ্ভবের পটভূমি বা কারণ লেখো।

উইলিয়ম দেশত্যাগ করলে জার্মানি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। এই প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি পরাজিত হয়। কাইজার দ্বিতীয় সময়ে জার্মানিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে, যেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল নাৎসি দল।

নাৎসি দল প্রতিষ্ঠা – ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে অ্যান্টন ড্রেক্সলার জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। এই দলের সদস্যসংখ্যা যখন মাত্র ২৩ জন তখন অ্যাডলফ হিটলার এর সদস্য হন। কিছুকাল পর হিটলারের দক্ষতায় দলের সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে তিনি দলের নতুন নামকরণ করেন ‘ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি।

জার্মানিতে নাৎসি দল (Nazi Party)-এর উদ্ভবের পটভূমি বা কারণ লেখো।

জার্মানিতে ননাৎসি দলের উদ্ভবের কারণ

জার্মানিতে ননাৎসি দলের উদ্ভবের জন্য নানা কারণ বিদ্যমান ছিল —

  1. সাম্যবাদ বিরোধিতা – রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবের প্রভাব জার্মানিতে ছড়িয়ে পড়েছিল। স্পার্টাকাস নামে একটি কমিউনিস্ট দল গড়ে ওঠে। শ্রমিক ধর্মঘট সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। রোজা লুক্সেমবার্গ রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেন। এই অবস্থায় নাৎসি দল কমিউনিস্ট বিরোধিতা করে, ফলে শিল্পপতিরা এই দলকে সমর্থন জানায়।
  2. ইহুদি বিরোধিতা – জার্মানির অর্থনীতিতে ইহুদিদের প্রভাব ছিল। বড়ো বড়ো সরকারি পদে ইহুদিরা নিযুক্ত ছিল। নাৎসি দল আর্যায়ন-এর নামে ইহুদি বিরোধিতা শুরু করলে সাধারণ জার্মানরা তা সমর্থন করে।
  3. বিশিষ্টদের সমর্থন – জার্মানির বিখ্যাত সেনাপতি লুডেনডর্ফ, জাংকার গোষ্ঠী এবং বেকার সৈনিক ও প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী এই দলকে সমর্থন জানায়।
  4. নাৎসি দলের কর্মসূচি – ভার্সাই সন্ধি বাতিল, হারানো উপনিবেশ উদ্ধার, সমস্ত জার্মানভাষীদের সমন্বয়ে জার্মান রাষ্ট্রগঠন, সাম্যবাদের অবসান ইত্যাদি নাৎসি কর্মসূচি বিধ্বস্ত জার্মান জাতির মনে আশার সঞ্চার করে। ফলে দলে দলে শিক্ষিত যুবক এই দলে যোগদান করে।
  5. জনমত গঠন – হিটলার বিভিন্ন জনসভায় প্রজাতান্ত্রিক সরকারের জাতীয়তাবাদবিরোধী কার্যকলাপ প্রচার করে জনমত গঠন করেন।
  6. হিটলারের প্রভাব – জার্মানিতে নাৎসি দলের উদ্ভবে হিটলারের সাংগঠনিক শক্তি, নেতৃত্ব ও বাগ্মিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। ‘মেইন ক্যাম্প’ (Mein Kampf) গ্রন্থে তিনি নাৎসি দলের উদ্দেশ্য, আদর্শ ও জার্মান জাতির শ্রেষ্ঠত্বের কথা তুলে ধরে জার্মানিবাসীকে নাৎসি দলের প্রতি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

এই সমস্ত কারণে জার্মানিতে নাৎসি দল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে এই দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এর ফলে এই দলের নেতা অ্যাডলফ হিটলার জার্মানির চ্যান্সেলার পদ লাভ করেন। পরে প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবুর্গ মারা গেলে হিটলারই প্রেসিডেন্ট হন। তাঁর পদবি হয় ‘ফ্যুয়েরার’। এভাবে নাৎসি দল রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে সমৰ্থ হয়।

নাৎসি দলের (Nazi Party) সংগঠনটি কীরূপ ছিল?

নাৎসি মতানুসারে দলনেতা বা ফ্যুয়েরার (Führer) ছিলেন অভ্রান্ত। তাঁর প্রতি অন্ধ আনুগত্য ও বিনা প্রশ্নে তাঁর নির্দেশ পালন করাই ছিল এই দলের নীতি। নাৎসি দলের বিভিন্ন সংগঠন ছিল। যেমন —

নাৎসি দলের (Nazi Party) সংগঠনটি কীরূপ ছিল

নাৎসি দলের সংগঠন –

  1. সাধারণ সদস্য – জার্মান নাগরিকরা এই দলের সদস্য হতে পারত। তারা দলীয় প্রতীক ‘স্বস্তিকা’ চিহ্ন ধারণ করতেন। তাদের দলীয় সভায় যোগ দিতে হত এবং এজন্য তাদের চাঁদা দিতে হত।
  2. স্টর্ম ট্রুপার্স (Stormtroopers) – বেকার যুবকদের নিয়ে গঠিত আধা-সামরিক ঝটিকাবাহিনীকে বলা হত স্টর্ম ট্রুপার্স। এই বাহিনী নাৎসি দলের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে অন্য দলের সভাসমিতিগুলিকে ভেঙে দিত এবং নিজেদের সভাসমিতিগুলিকে পাহারা দিত। এরা বাদামি পোশাক পরত বলে, এদের ‘ব্রাউন শার্টস্’ (Brown Shirts) – ও বলা হত।
  3. এলিট গার্ডস্ (Elite Guards) – স্টর্ম ট্রুপার্সের উপরে ছিল এলিট গার্ডস্। এরা নিজেদের জীবন তুচ্ছ করে নেতাদের জীবন রক্ষা করত। এরা কালো রঙের পোশাক পরত বলে, এদের ব্ল্যাক শার্টস্ (Black Shirts) – ও বলা হত।
  4. অন্যান্য বাহিনী – এ ছাড়া এই দলে ছিল যুববাহিনী, নারীবাহিনী, গুপ্ত পুলিশবাহিনী বা গেস্টাপো (Gestapo) প্রভৃতি। এ ছাড়া দলীয় প্রচারবিভাগ ছিল, যাদের কাজ ছিল ভাইমার প্রজাতান্ত্রিক সরকারকে হেয় করা এবং রাষ্ট্রের মধ্যে দলীয় সমান্তরাল প্রশাসন গড়ে তোলা। নাৎসি দলের সর্বোচ্চ পদে ছিলেন ফ্যুয়েরার তথা হিটলার। তাঁর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন রাইখ ডাইরেক্টরেট। যেমন — বিভিন্ন কর্মাধ্যক্ষ, কোষাধ্যক্ষ প্রভৃতি নেতারা।
  5. নাৎসি পতাকা – নাৎসি দলের পতাকাটি ছিল লাল বর্ণের এবং পতাকার মঝখানে সাদা রঙের মধ্যে কালো রঙের স্বস্তিকা চিহ্ন আঁকা থাকত। লাল ধনতন্ত্র বিরোধিতা, সাদা জাতীয়তাবাদ এবং স্বস্তিকা চিহ্ন ছিল আর্য রক্তের প্রতীক।
  6. নাৎসি মুখপত্র – নাৎসি দলের একটি মুখপত্র ছিল, যার নাম ছিল পিপলস্ অবজারভার (People’s Observer)।নাৎসি দল সমাজের সব শ্রেণি এবং সব অংশকে যুক্ত করার জন্য বিভিন্ন শাখা সংগঠন গড়ে তোলে। একক নেতৃত্ব, সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদলের মাধ্যমে হিটলার রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্র গড়ে তোলেন।

নাৎসি দল ছিল এক বর্বর এবং নিষ্ঠুর দল। এই দলের শাসনকাল ছিল এক ভয়াবহ অধ্যায়। এই ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি যে, জাতীয়তাবাদ এবং সামরিকবাদের চরমপন্থী রূপ যেকোনো জাতির জন্য বিপজ্জনক।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Tom Loses a Tooth

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

The North Ship

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer