বিংশ শতকে ইউরোপে বিশ্বযুদ্ধ, বিপ্লব এবং অন্যান্য রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের ফলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক সন্ধি হয়েছিল। এই সন্ধিগুলি ইউরোপের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আমূল পরিবর্তন করেছিল এবং বিশ্বের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
![নবম শ্রেণী - ইতিহাস - বিংশ শতকে ইউরোপ - গুরুত্বপূর্ণ সন্ধি - বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন ও উত্তর 1 নবম শ্রেণী – ইতিহাস – বিংশ শতকে ইউরোপ – গুরুত্বপূর্ণ সন্ধি – বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন ও উত্তর](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/12/নবম-শ্রেণী-–-ইতিহাস-–-বিংশ-শতকে-ইউরোপ-–-গুরুত্বপূর্ণ-সন্ধি-–-বিশ্লেষণমূলক-প্রশ্ন-ও-উত্তর.webp)
ট্রিয়াননের সন্ধি (Trianon) – র শর্তাবলি উল্লেখযোগ্য ছিল কেন?
ট্রিয়াননের সন্ধির পটভূমি
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, মিত্রশক্তিগুলি হাঙ্গেরির সাথে শান্তি চুক্তি করার জন্য আলোচনা শুরু করে। হাঙ্গেরি ছিল অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ, যা যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল। মিত্রশক্তিগুলি হাঙ্গেরিকে ক্ষতিপূরণ দিতে এবং তার আকার এবং জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে চাইছিল।
ট্রিয়াননের চুক্তির শর্তাবলী
ট্রিয়াননের সন্ধি ১৯২০ সালের ৪ জুন প্যারিসে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তির শর্তাবলী ছিল –
- হাঙ্গেরি তার পূর্বাঞ্চলীয় তিনটি তৃতীয়াংশ, যা মোট ৭২,৯০০ বর্গকিলোমিটার (২৭,৯০০ বর্গমাইল) এবং ৫.৯ মিলিয়ন লোক, পোল্যান্ড, চেকোস্লোভাকিয়া, রোমানিয়া এবং যুগোস্লাভিয়ার মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল।
- হাঙ্গেরি তার দক্ষিণ-পশ্চিম তৃতীয়াংশ, যা মোট ১৩,৯০০ বর্গকিলোমিটার (৫,৩০০ বর্গমাইল) এবং ১.২ মিলিয়ন লোক, ইতালির কাছে ছেড়ে দিতে হয়েছিল।
- হাঙ্গেরির জনসংখ্যা ১০ মিলিয়ন থেকে ৩.৭ মিলিয়নে নেমে এসেছে।
- হাঙ্গেরি তার সামরিক বাহিনী ৭০,০০০ সৈন্য পর্যন্ত সীমিত ছিল।
- হাঙ্গেরি মিত্রশক্তির প্রতি তার দায়বদ্ধতা পূরণের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ফ্রাঙ্ক অর্থ প্রদান করতে বাধ্য হয়েছিল।
ট্রিয়াননের চুক্তির প্রভাব
ট্রিয়াননের সন্ধি হাঙ্গেরির জন্য একটি বিপর্যয় ছিল। এটি দেশকে ক্ষুদ্র, দুর্বল এবং বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। চুক্তিটি হাঙ্গেরির জনগণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে, যা পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্যাসিবাদী উত্থানের দিকে পরিচালিত করেছিল।
ট্রিয়াননের চুক্তির প্রভাবগুলি নিম্নরূপ ছিল –
- ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন – ট্রিয়াননের সন্ধির ফলে হাঙ্গেরির আকার এবং জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিল। দেশটি তার পূর্বাঞ্চলীয় তিনটি তৃতীয়াংশ, যা মোট ৭২,৯০০ বর্গকিলোমিটার (২৭,৯০০ বর্গমাইল) এবং ৫.৯ মিলিয়ন লোক, পোল্যান্ড, চেকোস্লোভাকিয়া, রোমানিয়া এবং যুগোস্লাভিয়ার মধ্যে ভাগ করে দিতে হয়েছিল। হাঙ্গেরির জনসংখ্যা ১০ মিলিয়ন থেকে ৩.৭ মিলিয়নে নেমে এসেছে।
- সামরিক সীমাবদ্ধতা – ট্রিয়াননের সন্ধির ফলে হাঙ্গেরির সামরিক বাহিনী ৭০,০০০ সৈন্য পর্যন্ত সীমিত ছিল। এটি হাঙ্গেরির স্বাধীনতার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য হুমকি ছিল।
- অর্থনৈতিক ক্ষতি – ট্রিয়াননের সন্ধির ফলে হাঙ্গেরির অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছিল। দেশটি তার শিল্প, কৃষি এবং বাণিজ্যের অনেক অংশ হারিয়ে ফেলেছিল।
- রাজনৈতিক অস্থিরতা – ট্রিয়াননের সন্ধির ফলে হাঙ্গেরিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল। দেশটিতে ফ্যাসিবাদী এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বৃদ্ধি পেয়েছিল।
ট্রিয়াননের সন্ধির প্রভাবগুলি আজও হাঙ্গেরির রাজনীতি এবং সমাজে অনুভূত হয়।
ট্রিয়াননের সন্ধির শর্তানুযায়ী –
- অস্ট্রিয়া থেকে হাঙ্গেরিকে বিচ্ছিন্ন করা হয়।
- শ্লোভাকিয়াকে চেক প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়।
- রোমানিয়াকে ট্রানসিলভানিয়া ও টেমসভারের অধিকাংশ দেওয়া হয়।
- গোশ্লাভিয়াকে ক্রোয়েশিয়া প্রদান করা হয়।
- হাঙ্গেরির সামরিক বাহিনী ৩৫ হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়।
- প্রতিবেশী যুগোশ্লাভিয়া ও রোমানিয়া রাষ্ট্রের মধ্যে বানাতকে ভাগ করে দেওয়া হয়।
- হাঙ্গেরির জনসংখ্যা আট মিলিয়ন (৮০ লক্ষ) এবং আয়তন বর্গমাইলে সীমিত হয়।
ফলাফল – হাঙ্গেরির সমরাস্ত্র ও সৈন্যসংখ্যা হ্রাস করা হয়। এবং নৌবাহিনী সম্পূর্ণ ধ্বংস করে তাকে বাধ্য করা হয় মিত্রপক্ষকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে।
নিউলির সন্ধি (Treaty of Neuilly) -র শর্তাবলি আলোচনা করো।
নিউলির সন্ধি বা নিউলির শান্তি চুক্তি ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির সাথে ফ্রান্সের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি। এই চুক্তিটি ১৯১৯ সালের ২২ জুন প্যারিসে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তিটিতে জার্মানিকে ফ্রান্সের কাছে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং ফ্রান্সের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জার্মানিকে নিরস্ত্রীকরণ করতে হয়েছিল।
নিউলির চুক্তির শর্তাবলী
- জার্মানিকে ফ্রান্সের কাছে ৫ বিলিয়ন ফ্রাঙ্কের ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে বাধ্য করা হয়েছিল।
- জার্মানিকে তার বিদেশী উপনিবেশগুলি ফ্রান্সের কাছে হস্তান্তর করতে হয়েছিল।
- জার্মানিকে তার সীমান্তের কাছাকাছি অঞ্চলগুলি ফ্রান্সের কাছে হস্তান্তর করতে হয়েছিল।
- জার্মানিকে তার সামরিক বাহিনীকে ১০০,০০০ সৈন্যের নিচে সীমাবদ্ধ করতে হয়েছিল।
- জার্মানিকে তার বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনীকে বিলুপ্ত করতে হয়েছিল।
নিউলির চুক্তির প্রভাব
নিউলির সন্ধিটি জার্মানির উপর একটি কঠোর এবং অপমানজনক শান্তি ছিল। এই চুক্তিটি জার্মান জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল। এটি পরবর্তীতে নাৎসি পার্টির উত্থানে অবদান রেখেছিল।
নিউলির চুক্তির সমালোচনা
নিউলির সন্ধিটিকে অনেক ইতিহাসবিদরা একটি ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন। এই চুক্তিটি জার্মানির উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছিল এবং এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে পরিচালিত করেছিল বলে মনে করা হয়।
নিউলির চুক্তির উল্লেখযোগ্য দিক
- এই চুক্তিটি ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির সাথে স্বাক্ষরিত প্রথম শান্তি চুক্তি।
- এই চুক্তিটি জার্মানির উপর একটি কঠোর এবং অপমানজনক শান্তি ছিল।
- এই চুক্তিটি জার্মানির জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল।
- এই চুক্তিটি পরবর্তীতে নাৎসি পার্টির উত্থানে অবদান রেখেছিল।
নিউলির চুক্তির সংক্ষিপ্ত বিবরণ
- তারিখ – ১৯১৯ সালের ২২ জুন
- স্থান – প্যারিস
- স্বাক্ষরকারী দেশ – ফ্রান্স ও জার্মানি
- নিউলির চুক্তির শর্তাবলী –
- জার্মানিকে ফ্রান্সের কাছে ৫ বিলিয়ন ফ্রাঙ্কের ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে বাধ্য করা হয়েছিল।
- জার্মানিকে তার বিদেশী উপনিবেশগুলি ফ্রান্সের কাছে হস্তান্তর করতে হয়েছিল।
- জার্মানিকে তার সীমান্তের কাছাকাছি অঞ্চলগুলি ফ্রান্সের কাছে হস্তান্তর করতে হয়েছিল।
- জার্মানিকে তার সামরিক বাহিনীকে ১০০,০০০ সৈন্যের নিচে সীমাবদ্ধ করতে হয়েছিল।
- জার্মানিকে তার বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনীকে বিলুপ্ত করতে হয়েছিল।
- নিউলির চুক্তির প্রভাব –
- জার্মানির উপর একটি কঠোর এবং অপমানজনক শান্তি ছিল।
- জার্মান জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল।
- পরবর্তীতে নাৎসি পার্টির উত্থানে অবদান রেখেছিল।
নিউলির সন্ধির শর্তানুসারে —
- ম্যাসিডোনিয়া প্রদেশ যুগোশ্লাভিয়াকে প্রদান করা হয়।
- রোমানিয়াকে দোব্রুজা দেওয়া হয়।
- বুলগেরিয়ার অস্ত্র, নৌবাহিনী হ্রাস করা হয় এবং সৈন্যসংখ্যা ২০ হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়।
- পশ্চিম থ্রেস ও ইজিয়ান উপকূল গ্রিসকে প্রদান করা হয়।
- ১৯১২-১৩ খ্রিস্টাব্দে বলকান যুদ্ধের সময় বুলগেরিয়া যেসব স্থান দখল করেছিল সেগুলি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
- বুলগেরিয়াকে ক্ষতিপূরণ দানে বাধ্য করা হয়।
ফলাফল – এই চুক্তির দ্বারা বুলগেরিয়াকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ইত্যাদি প্রায় সকল দিক থেকেই বলকানের এক দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়।
সেভরের সন্ধি (Treaty of Sevres) কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
সেভরের সন্ধি ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর উসমানীয় সাম্রাজ্য ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মিত্রশক্তির মধ্যে শান্তি চুক্তি হিসেবে স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এটি কখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এর আগেই জার্মান সাম্রাজ্যের সাথে ভের্সাইয়ের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যাতে উসমানীয় বলয়ে জার্মান অর্থনৈতিক অধিকার ও উদ্যোগ খর্ব হয়। অন্যদিকে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও ইটালি একই তারিখে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি নামক একটি গোপন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি ব্রিটেনের তেল ও অর্থনৈতিক ছাড় নিশ্চিত করে এবং উসমানীয় সাম্রাজ্যে প্রাক্তন জার্মান উদ্যোগগুলোকে ত্রিপক্ষীয় কর্পোরেশনে পরিণত করে। ভের্সাইয়ের চুক্তিতে জার্মান সাম্রাজ্যের উপর আরোপিত শর্তের চাইতে সেভ্র চুক্তির শর্তগুলো অধিক কঠোর ছিল।
সেভ্র চুক্তির শর্তাবলী –
- উসমানীয় সাম্রাজ্যকে ছোট একটি রাষ্ট্রে পরিণত করা হবে। এটি শুধুমাত্র আনাতোলিয়ার মধ্যভাগ ও উত্তর-পশ্চিম উপকূল, এবং পূর্বাঞ্চলের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত হবে।
- বাকি অঞ্চলগুলি মিত্রশক্তির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে।
- ইতালিকে পূর্ব তুরস্কের বেশিরভাগ অংশ দেওয়া হবে, যার মধ্যে রয়েছে ইস্তাম্বুল, ইজমির, আঙ্কারা এবং কাস।
- ফ্রান্সকে সিরিয়া ও লেবানন দেওয়া হবে।
- গ্রেট ব্রিটেনকে মেসোপটেমিয়া ও কুর্দিস্তান দেওয়া হবে।
- গ্রিসকে ইজমিরের উত্তর-পূর্বাঞ্চল দেওয়া হবে।
- আর্মেনিয়াকে পূর্ব তুরস্কের উত্তর-পূর্বাঞ্চল দেওয়া হবে।
- কুর্দিস্তানকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হবে।
- উসমানীয় সাম্রাজ্যকে মিত্রশক্তির পক্ষে যুদ্ধে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
সেভ্র চুক্তির শর্তাবলী উসমানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষের সৃষ্টি করে। তুর্কি জাতীয় আন্দোলন এই চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯২২ সালে তুর্কি জাতীয় আন্দোলন তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ী হয়। এর ফলে সেভ্র চুক্তি বাতিল হয়ে যায় এবং ১৯২৩ সালে লুজানের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। লুজানের চুক্তির শর্তাবলী সেভ্র চুক্তির চেয়ে অনেক বেশি নমনীয় ছিল। এটি উসমানীয় সাম্রাজ্যের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেয়।
সেভ্র চুক্তির গুরুত্ব –
- এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিভাজনের পরিকল্পনা ছিল।
- এটি তুর্কি জাতীয় আন্দোলনের উত্থান ও তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করে।
- এটি লন্ডন চুক্তির চেয়ে অনেক বেশি কঠোর ছিল।
সেভ্র চুক্তির প্রভাব –
- এটি তুর্কি জাতীয় আন্দোলনের উত্থান ও তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করে।
- এটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মধ্যপ্রাচ্যে নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
- এটি তুর্কি জাতীয়তাবাদের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সেভ্র সন্ধির শর্তানুসারে —
- মিশর, সুদান, সাইপ্রাস, মরক্কো, টিউনিস ইত্যাদি স্থানের উপর তুরস্ক অধিকার ত্যাগ করে।
- বসফরাস ও দার্দেনালিস প্রণালী দুটি আন্তর্জাতিক জলপথ হিসেবে ঘোষিত হয়।
- আরব, প্যালেস্টাইন, মেসোপটেমিয়া ও সিরিয়ার উপর তুরস্কের অধিকার বিলুপ্ত হয়।
- সিরিয়া ফ্রান্সকে এবং প্যালেস্টাইন ও মেসোপটেমিয়া ব্রিটেনকে দেওয়া হয়।
- কনস্ট্যান্টিনোপল, আলেকজান্দ্রিয়া প্রভৃতি বন্দরগুলিকে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
- তুরস্ক সাম্রাজ্য কনস্ট্যান্টিনোপল ও এশিয়া মাইনরের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।
- তুরস্কের সৈন্যসংখ্যা ৫০ হাজারে সীমাবদ্ধ করা হয়।
- খ্রিস্টান প্রজাতন্ত্র হিসেবে আর্মেনিয়া সৃষ্টি করা হয়। এই নবগঠিত রাষ্ট্রকে নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হয়।
- গ্যালিসিয়ায় ফরাসি প্রভাব স্বীকৃতি লাভ করে।
- দক্ষিণ আনাতোলিয়ায় ইটালির প্রভাব স্বীকৃতি পায়।
- আদ্রিয়ানোপল, গ্যালিপলি, অ্যামব্রোস, টেনেডস ও স্মার্নাদ্বীপ এবং এশিয়া মাইনরের উপকূলীয় অঞ্চল গ্রিসকে সমর্পণ করতে হয়। এ ছাড়া গ্রিস ডোডিকানিজ দ্বীপপুঞ্জ লাভ করে।
- তুরস্ককে বিশাল পরিমাণ যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।
ফলাফল – এই সন্ধির ফলে বিশাল তুরস্ক সাম্রাজ্যকে বিভক্ত করা হয়। ফলে ইউরোপের সামান্য অংশ ও আনাতোলিয়ার পার্বত্য অঞ্চলের মধ্যে তুরস্ক সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।
প্রতিক্রিয়া – মুস্তাফা কামাল পাশা নামে এক জাতীয়তাবাদী নেতা এই সন্ধির বিরোধিতা করেন। মিত্রপক্ষ সৈন্য পাঠালে কামাল পাশা তাদের পরাজিত করেন। ফলে মিত্রপক্ষ সেভরের সন্ধির শর্ত বদল করে লাসেন-এর সন্ধি স্বাক্ষর করে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে।
বিংশ শতকে ইউরোপের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিগুলি ইউরোপের রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক মানচিত্রকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল। এই সন্ধিগুলি ইউরোপের ইতিহাসের গতিপথকে নির্ধারণ করতে সাহায্য করেছিল।
মন্তব্য করুন