নবম শ্রেণী – ইতিহাস – জাতিসংঘ এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায়, “জাতিসংঘ এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ” অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর পরীক্ষার প্রস্তুতি বা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত সহায়ক, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে সর্বদা প্রস্তুত থাকব। ধন্যবাদ।

Table of Contents

নবম শ্রেণী – ইতিহাস – জাতিসংঘ এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ
নবম শ্রেণী – ইতিহাস – জাতিসংঘ এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ

জাতিসংঘ (League of Nations) কত খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়? জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠায় কে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন?

জাতিসংঘ 1920 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন (Woodrow Wilson) জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। তিনি 1918 খ্রিস্টাব্দের 8 জানুয়ারি তাঁর বিখ্যাত ‘চোদ্দো দফা’ প্রস্তাবের শেষ দফায় একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কথা বলেছিলেন। তাঁর এই ধারণার উপর ভিত্তি করেই প্যারিস শান্তি সম্মেলনে (1919) লিগ অফ নেশন্স গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল।

উড্রো উইলসন কে ছিলেন? জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান কী?

উড্রো উইলসন ছিলেন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের 28তম রাষ্ট্রপতি এবং তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ‘চোদ্দো দফা’ নীতির মাধ্যমে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন, যা লিগ অফ নেশন্স গঠনের ভিত্তি ছিল।

জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?

জাতিসংঘের সনদে প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল –

  • আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা।
  • প্রত্যেক রাষ্ট্রের ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে সম্মান করা।
  • ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা।
  • অবহেলিত জাতি, নারী, শিশু ও শ্রমিকশ্রেণির অধিকার রক্ষা করা।

লিগ কভেনান্ট (League Covenant) কী?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর 1919 খ্রিস্টাব্দে প্যারিস শান্তি সম্মেলনে উড্রো উইলসনের সভাপতিত্বে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব গৃহীত হয়। তাঁর নেতৃত্বে 19 সদস্যের একটি কমিটি লিগ অফ নেশন্স-এর যে খসড়া সংবিধান তৈরি করে, সেটি লিগ কভেনান্ট নামে পরিচিত।

জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয় বা সদর দপ্তর কোথায় অবস্থিত? জাতিসংঘের প্রথম মহাসচিব বা সেক্রেটারি জেনারেল কে ছিলেন?

জাতিসংঘের সদর দপ্তর বা প্রধান কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে অবস্থিত।

জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয় বা সদর দপ্তর কোথায় ছিল

জাতিসংঘের প্রথম মহাসচিব ছিলেন ট্রিগভে লি (Trygve Lie), যিনি নরওয়ের নাগরিক ছিলেন।

জাতিসংঘ কয় ধরনের সদস্য নিয়ে গঠিত ছিল? প্রাথমিক সদস্য কাদের বলা হত?

জাতিসংঘ দুই ধরনের সদস্য নিয়ে গঠিত ছিল। যথা –

  • প্রাথমিক সদস্য (Original members) এবং
  • সাধারণ সদস্য (Non-Original members)।

যেসব দেশ জাতিসংঘ সনদ স্বাক্ষর করে প্রতিষ্ঠাকালে যোগদান করেছিল, তাদের প্রাথমিক সদস্য বলা হত।

জাতিসংঘের প্রধান সংস্থাগুলি কী কী?

জাতিসংঘ ছয়টি প্রধান সংস্থা নিয়ে গঠিত। এগুলি হলো –

  • সাধারণ পরিষদ (General Assembly) – প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধি নিয়ে সাধারণ পরিষদ গঠিত।
  • নিরাপত্তা পরিষদ (Security Council) – জাতিসংঘের সদস্যদের মধ্যে ৫টি স্থায়ী ও ১০টি অস্থায়ী সদস্য নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ গঠিত।
  • অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (Economic and Social Council)।
  • আন্তর্জাতিক বিচারালয় (International Court of Justice)।
  • তত্ত্বাবধান পরিষদ (Trusteeship Council)।
  • সচিবালয় (Secretariat) – এটি জাতিসংঘের মহাসচিব বা সেক্রেটারি জেনারেলের দপ্তর।

জাতিসংঘের সাধারণ সভার (League Assembly) কাজ কী ছিল?

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ছিল সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সংস্থা। এর কাজ ছিল –

  • আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা।
  • নতুন সদস্য রাষ্ট্রের গ্রহণ নিয়ে আলোচনা করা।
  • রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।

লিগ পরিষদ (League Council) কেন গঠিত হয়েছিল?

লিগ পরিষদ গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল –

  • লিগের সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে যেকোনো আক্রমণ থেকে রক্ষা করা।
  • সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক রাজনৈতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান করা।

লিগ পরিষদ (League Council) কীভাবে গঠিত হয়েছিল?

লিগ পরিষদ প্রথমে ৫টি স্থায়ী ও ৪টি অস্থায়ী সদস্য নিয়ে মোট ৯ সদস্য নিয়ে গঠিত হয়। স্থায়ী সদস্যরা ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, এবং জাপান। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র যোগ দেয়নি। পরে সোভিয়েত রাশিয়া এবং জার্মানি স্থায়ী সদস্য হিসেবে যোগ দিলে স্থায়ী সদস্যসংখ্যা দাঁড়ায় ৬, এবং অস্থায়ী সদস্য সংখ্যা হয় ৯। ফলে মোট সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫-তে।

জাতিসংঘের পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলি কারা ছিল?

লিগ পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালে স্থায়ী সদস্য ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, এবং জাপান। পরে সোভিয়েত রাশিয়া এবং জার্মানিকে স্থায়ী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

লিগ পরিষদের (League Council) প্রধান কাজ কী ছিল?

লিগ পরিষদের প্রধান কাজ ছিল আন্তর্জাতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা এবং তার সমাধান করা। লিগ অব নেশন্সের (League of Nations) কাজ পরিচালনার মূল দায়িত্বও ছিল লিগ পরিষদের ওপর। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হলে পরিষদের সকল সদস্যের একমত হওয়া বাধ্যতামূলক ছিল।

জাতিসংঘের সচিবালয়ের (Secretariat) কাজ কী ছিল?

জাতিসংঘের সচিবালয় জাতিসংঘের মহাসচিবের দপ্তর হিসেবে কাজ করে। সচিবালয়ের কাজ ছিল –

  • সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা।
  • সদস্য রাষ্ট্রের অভিযোগ ও প্রস্তাব নথিভুক্ত করা।
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংরক্ষণ করা এবং বিভিন্ন অধিবেশন আহ্বান করা।

আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থার (ILO) প্রধান কাজ কী ছিল? এর সদর দপ্তর কোথায় অবস্থিত ছিল? এই সংস্থার উদ্দেশ্য কী ছিল?

আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থার (ILO) প্রধান কাজ ছিল – বিশ্বের সমস্ত শ্রমিকের কাজের অবস্থার উন্নয়ন ও তাদের শোষণমুক্তির বিষয়ে নজর দেওয়া।

  • এর সদর দপ্তর ছিল সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে।
  • এই সংস্থার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শ্রমিকদের কাজের অবস্থার উন্নতি সাধন এবং শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

যুগ্ম নিরাপত্তা (Collective Security) বলতে কী বোঝো?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র একক প্রচেষ্টার পরিবর্তে সম্মিলিত প্রচেষ্টার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিল। মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে গড়ে তোলা এই শান্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেই ‘যুগ্ম নিরাপত্তা’ বলা হয়।

অছি প্রথা (Mandatory System) বলতে কী বোঝো?

ভার্সাই সন্ধির শর্তানুসারে, যুদ্ধে পরাজিত রাষ্ট্রগুলির অধিকৃত অঞ্চলসমূহের শাসন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব যে ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হতো, তাকে ‘অছি প্রথা’ বলা হয়।

কবে, কী উদ্দেশ্যে জেনেভা প্রোটোকল (Geneva Protocol) রচনা করা হয়েছিল?

জেনেভা প্রোটোকল 1925 সালে লীগ অব নেশন্সের (League of Nations) উদ্যোগে রচিত হয়। এটি মূলত রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য করা হয়েছিল।

উদ্দেশ্য –

  • রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্রের ব্যবহারকে নিষিদ্ধ করা।
  • আন্তর্জাতিক বিরোধের মীমাংসা শান্তিপূর্ণ উপায়ে করার কোনো নির্দেশনা এই প্রোটোকলে উল্লেখ ছিল না, বরং যুদ্ধের সময় এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহারকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়।

লোকার্নো চুক্তি (Locarno Treaty) কবে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?

লোকার্নো চুক্তি 1925 সালে লীগ অব নেশন্সের উদ্যোগে ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ইতালি, এবং বেলজিয়ামের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

উদ্দেশ্য – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিজয়ী এবং পরাজিত দেশগুলোর মধ্যে পুরোনো বিরোধের সমাপ্তি ঘটানো এবং ইউরোপে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এছাড়া, ফ্রান্স ও বেলজিয়ামের সঙ্গে জার্মানির সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করা হয়। জার্মানি 1926 সালে লীগ অব নেশন্সের সদস্যপদ লাভ করে এবং তার আন্তর্জাতিক অবস্থান কিছুটা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়।

লোকার্নোতে কয়টি ও কী ধরনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?

লোকার্নোতে মোট ৭টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল (1925 সালে)।

চুক্তির ধরন –

  • Treaty of Mutual Guarantee – ফ্রান্স, বেলজিয়াম, এবং জার্মানির মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি যা পারস্পরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে করা হয়।
  • Treaties of Arbitration – জার্মানি ও পোল্যান্ড এবং জার্মানি ও চেকোস্লোভাকিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি যা তাদের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ছিল।
  • Treaties of Non-Aggression – অন্যান্য চুক্তি আক্রমণ না করার বিষয়ে করা হয়।

লোকার্নো স্পিরিট (Locarno Spirit) কী?

লোকার্নো স্পিরিট বলতে বোঝায়, বিজয়ী ও পরাজিত দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব এবং উত্তেজনা হ্রাসের প্রচেষ্টা। প্রথমবারের মতো পরাজিত রাষ্ট্রকে (জার্মানি) মিত্রতা চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করে, যা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের একটি উদাহরণ তৈরি করে।

কেলগ-ব্রিয়া চুক্তি (Kellogg-Briand Pact) বা প্যারিসের শান্তিচুক্তি কবে, কোন্ কোন্ দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়? এই চুক্তির উদ্দেশ্য কী ছিল?

আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে 1928 খ্রিস্টাব্দের 27 আগস্ট প্যারিসে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্র্যাঙ্ক বি. কেলগ (Frank B. Kellogg) এবং ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যারিস্টাইড ব্রিয়া (Aristide Briand) – এর উদ্যোগে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রাথমিকভাবে এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলি ছিল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, জাপান, বেলজিয়াম, পোল্যান্ড এবং চেকোস্লোভাকিয়া। পরবর্তীতে আরও অনেক দেশ এই চুক্তিতে যোগ দেয়।

চুক্তির উদ্দেশ্য – এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধের মীমাংসা করা, যুদ্ধের পথ পরিত্যাগ করা এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

কোন্ কোন্ ঘটনা জাতিসংঘের দুর্বলতাকে প্রকট করে তুলেছিল?

অথবা, জাতিসংঘের ব্যর্থতার দুটি উদাহরণ দাও।

জাতিসংঘের দুর্বলতাকে প্রকট করে তুলেছিল এমন কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা –

  • 1923 খ্রিস্টাব্দে কারফু দ্বীপ নিয়ে গ্রিস ও ইতালির মধ্যে বিরোধের মীমাংসা করতে ব্যর্থ হয়।
  • 1931 খ্রিস্টাব্দে জাপানের মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ ও দখল (1932 খ্রিস্টাব্দে) করার পর জাতিসংঘ জাপানের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়।
  • 1935 খ্রিস্টাব্দে ইতালির আবিসিনিয়া আক্রমণের পরেও জাতিসংঘ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।

জাতিসংঘের উদ্যোগে কবে, কোথায় নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়? এতে ক-টি দেশ যোগ দিয়েছিল?

1932 খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে জাতিসংঘের উদ্যোগে নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে 61টি দেশ যোগদান করেছিল।

জাতিসংঘের সাফল্যের দুটি উদাহরণ দাও।

জাতিসংঘের উল্লেখযোগ্য দুটি সাফল্য হলো –

  • বিরোধ মীমাংসা – জাতিসংঘ ইঙ্গ-মিশর, জার্মানি-পোল্যান্ড, সুইডেন-ফিনল্যান্ড প্রভৃতি দেশের মধ্যে বিরোধ মীমাংসা করতে সক্ষম হয়েছিল, যা আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
  • আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদন – আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ জেনেভা প্রোটোকল (1924 খ্রি.), লোকার্নো চুক্তি (1925 খ্রি.), এবং কেলগ-ব্রিয়াঁ চুক্তি (1928 খ্রি.) সম্পাদন করেছিল, যা বিভিন্ন দেশের মধ্যে শান্তি ও সহযোগিতার ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

জাতিসংঘ কেন ব্যর্থ হয়েছিল?

মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও জাতিসংঘ কিছু কারণে ব্যর্থ হয়েছিল, যেমন –

  • সাংগঠনিক দুর্বলতা – জাতিসংঘের সংগঠনগত দুর্বলতা এর কার্যকারিতা সীমিত করেছিল।
  • ত্রুটিপূর্ণ ভোটদান পদ্ধতি – ভোটদান পদ্ধতির ত্রুটি জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করেছিল।
  • যুক্তরাষ্ট্রের সদস্যপদ গ্রহণ না করা – যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের সদস্যপদ গ্রহণ না করা জাতিসংঘের প্রভাব কমিয়ে দেয়।
  • আগ্রাসনকে নিষিদ্ধ না করা – যুদ্ধকে বেআইনি ঘোষণা করা হলেও আগ্রাসনকে নিষিদ্ধ করা হয়নি, যা শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
  • নিজস্ব সেনাবাহিনীর অভাব – জাতিসংঘের নিজস্ব কোনো সেনাবাহিনী না থাকায় দ্রুত সামরিক পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
  • ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের তোষণনীতি – ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের তোষণনীতি জাতিসংঘের কার্যক্রমকে দুর্বল করে।
  • বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মহামন্দা – 1930 – এর দশকের বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মহামন্দা জাতিসংঘের শক্তি এবং কার্যকারিতা কমিয়ে দিয়েছিল।

জাতিসংঘের কৃতিত্ব আলোচনা করো।

অথবা, জাতিসংঘের অবদান আলোচনা করো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাতিসংঘ দুর্বল হয়ে পড়লেও এবং এর অবলুপ্তি ঘটলেও এর প্রধান উদ্দেশ্য – শান্তি স্থাপনের প্রচেষ্টা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়নি। জাতিসংঘ অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, সমাজ ও শ্রমিকদের কল্যাণসাধন, জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন, দাসপ্রথার উচ্ছেদ, শিক্ষা ও সংস্কৃতির মানোন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সম্প্রীতির ধারণা প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের নাম কী? এটি কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানটির নাম হলো সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (United Nations Organisation)। এটি 1945 খ্রিস্টাব্দের 24 অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

UNO – এর পুরো নাম কী? সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা দিবস কবে?

UNO – এর পুরো নাম United Nations Organization (ইউনাইটেড নেশনস অর্গানাইজেশন)।

1945 খ্রিস্টাব্দের 24 অক্টোবর সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই 24 অক্টোবর দিনটিকে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা দিবস বা UN Day বলা হয়।

লন্ডন ঘোষণাপত্র (London Declaration, 1941 খ্রি.) বলতে কী বোঝায়?

1941 খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে লন্ডন শহরে কানাডা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিরা মিলিত হয়ে একটি ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রস্তাব করেন। এই ঘোষণাপত্রই ‘লন্ডন ঘোষণাপত্র’ নামে পরিচিত।

লন্ডন ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব কী?

1941 খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিরা লন্ডনে এক ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন। এই ঘোষণাপত্রটিই সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গঠনের প্রথম পদক্ষেপ বলে মনে করা হয়। তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম।

1941 খ্রিস্টাব্দের আটলান্টিক সনদ (Atlantic Charter) বলতে কী বোঝায়?

1941 খ্রিস্টাব্দের 9 আগস্ট আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাংকলিন রুজভেল্ট (Franklin Roosevelt) এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল (Winston Churchill) আটলান্টিক মহাসাগরে নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে ‘প্রিন্স অফ ওয়েলস’ (Prince of Wales) এবং ‘অগাস্টা’ (Augusta) নামক জাহাজে গোপন বৈঠকে মিলিত হন। 14 আগস্ট তাঁরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন, যা ‘আটলান্টিক সনদ’ (Atlantic Charter) নামে পরিচিত।

১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের আটল্যান্টিক সনদ (Atlantic Charter) বলতে কী বোঝো

আটল্যান্টিক সনদ (Atlantic Charter) জারি হওয়ার পটভূমি কী ছিল?

1941 খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ব্রিটেন, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিরা লন্ডনে একটি ঘোষণাপত্র পেশ করেন, যার উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধের মোকাবিলা করা এবং বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। এই ঘোষণার পরই আটলান্টিক সনদ স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যা জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।

আটল্যান্টিক সনদে কবে, কারা স্বাক্ষর করেন?

1941 খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ ‘এইচএমএস প্রিন্স অফ ওয়েলস’ (HMS Prince of Wales) এবং মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ‘ইউএসএস অগাস্টা’ (USS Augusta) – তে সাক্ষাৎ করেন এবং ‘আটলান্টিক সনদ’ নামে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন, যেখানে যুদ্ধপরবর্তী বিশ্বশান্তি এবং বিভিন্ন জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সম্পর্কিত বিভিন্ন নীতি উল্লিখিত হয়।

কবে এবং কোথায় আটল্যান্টিক সনদ (Atlantic Charter) রচিত হয়?

1941 খ্রিস্টাব্দের 9-12 আগস্ট আটলান্টিক মহাসাগরের উপর ব্রিটিশ রণতরী ‘এইচএমএস প্রিন্স অফ ওয়েলস’ (HMS Prince of Wales) এবং মার্কিন রণতরী ‘ইউএসএস অগাস্টা’ (USS Augusta) – তে একাধিক আলোচনার পর ‘আটলান্টিক সনদ’ রচিত হয়।

আটল্যান্টিক সনদের ঘোষিত নীতিগুলি কী ছিল?

আটলান্টিক সনদের ঘোষিত নীতিগুলি ছিল –

  • কোনো দেশ নিজেদের ভূখণ্ড বা অন্য কোনো জাতির ভূখণ্ড সম্প্রসারণের চেষ্টা করবে না।
  • প্রতিটি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার স্বীকৃত হবে।
  • বাণিজ্যে সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করা হবে।
  • যুদ্ধের অবসানের পর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করা হবে।
  • সমুদ্রের উপর স্বাধীন চলাচল নিশ্চিত করা হবে।
  • পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে পারস্পরিক বিবাদের মীমাংসা করা হবে।
  • কোনো জাতি নিজেকে সুরক্ষিত করতে সশস্ত্র শক্তি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকবে না।
  • যুদ্ধের ফলাফল হিসেবে জোরপূর্বক রাজনৈতিক পরিবর্তন আরোপ করা হবে না।

1942-1945 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মিত্রপক্ষীয় শক্তিগুলির দ্বারা আয়োজিত কয়েকটি সম্মেলনের নাম লেখো।

1942-1945 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মিত্রপক্ষীয় শক্তিগুলির দ্বারা আয়োজিত কয়েকটি সম্মেলন হলো –

  • 1942 খ্রিস্টাব্দের ওয়াশিংটন সম্মেলন,
  • 1943 খ্রিস্টাব্দের মস্কো সম্মেলন (অক্টোবর),
  • 1943 খ্রিস্টাব্দের তেহরান সম্মেলন (ডিসেম্বর),
  • 1944 খ্রিস্টাব্দের ডাম্বারটন ওকস্ সম্মেলন, এবং
  • 1945 খ্রিস্টাব্দের ইয়াল্টা সম্মেলন (ফেব্রুয়ারি)।

ওয়াশিংটন সম্মেলন (Washington Declaration) কবে, কোথায় অনুষ্ঠিত হয়? ওয়াশিংটন সম্মেলনের গুরুত্ব কী?

1942 খ্রিস্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীনসহ 26টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা এক সম্মেলনে মিলিত হন, যা ওয়াশিংটন সম্মেলন (Washington Conference) নামে পরিচিত।

এই সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধিরা আটলান্টিক সনদের মূল নীতিগুলি মেনে নিয়ে “সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ঘোষণাপত্র” (Declaration by United Nations) নামে একটি দলিলে স্বাক্ষর করেন। এই সম্মেলনের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রশক্তির ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং যুদ্ধোত্তরকালে একটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

মস্কো সম্মেলনে (Moscow Declaration) উপস্থিত বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের নাম লেখো। এই সম্মেলন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

1943 খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত মস্কো সম্মেলনে (Moscow Conference) যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, এবং চীনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

মস্কো সম্মেলনের গুরুত্ব হলো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান (পরবর্তীতে জাতিসংঘ) গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপন করা হয়।

তেহরান ঘোষণার (Tehran Declaration) গুরুত্ব কী?

1943 খ্রিস্টাব্দের 1 ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট, সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা স্টালিন, এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল ইরানের রাজধানী তেহরানে মিলিত হয়ে একটি যৌথ ঘোষণা করেন, যা তেহরান ঘোষণাপত্র (Tehran Declaration) নামে পরিচিত। এই ঘোষণায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রশক্তির কৌশল এবং যুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়। এছাড়া, সব দেশকে এই প্রতিষ্ঠানে যোগদানের জন্য আহ্বান জানানো হয়।

ডাম্বারটন ওকস সম্মেলন (Dumberton Oaks Conference) কত খ্রিস্টাব্দে, কাদের মধ্যে হয়েছিল? এই সম্মেলনের গুরুত্ব কী?

ডাম্বারটন ওকস সম্মেলন (Dumbarton Oaks Conference) 1944 সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সোভিয়েত ইউনিয়ন, এবং চীনের প্রতিনিধিদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

ডাম্বারটন ও সম্মেলন (Dumberton Oaks Conference) কত খ্রিস্টাব্দে, কাদের মধ্যে হয়েছিল

এই সম্মেলনের গুরুত্ব ছিল, একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতিসংঘের (United Nations) কাঠামো ও রূপরেখা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা। এখানে জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠার ধারণা ও কার্যপদ্ধতি প্রস্তাব করা হয়।

সম্মিলিত জাতিপুপ্তের (United Nations Organisation) খসড়া কবে, কোন্ সম্মেলনে গৃহীত হয়?

1944 সালে ডাম্বারটন ওকস সম্মেলনে (Dumbarton Oaks Conference) জাতিসংঘের খসড়া প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছিল, যা পরে সানফ্রান্সিসকো সম্মেলনে (San Francisco Conference) চূড়ান্ত করা হয়।

ইয়াল্টা সম্মেলনে (Yalta Conference) উপস্থিত প্রতিনিধিবর্গের নাম লেখো। এই সম্মেলন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

1945 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ক্রিমিয়ার ইয়াল্টা সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল, এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা জোসেফ স্ট্যালিন অংশগ্রহণ করেন।

এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী ইউরোপের পুনর্গঠন এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলির নাম ও তাদের ভেটো (Veto) ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত হয়।

সানফ্রান্সিসকো সম্মেলন (San Francisco Conference) কবে, কোথায় অনুষ্ঠিত হয়?

সানফ্রান্সিসকো সম্মেলন 1945 সালের এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো শহরে অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে বিশ্বের ৫০টি দেশের প্রতিনিধিরা 1945 সালের 25 এপ্রিল থেকে 26 জুন পর্যন্ত জাতিসংঘের উদ্দেশ্য, নীতি, এবং গঠনতন্ত্র নিয়ে আলোচনা করেন এবং এটি চূড়ান্ত করেন।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদ কবে ও কোথায় স্বাক্ষরিত হয়?

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সংবিধানকে ‘সনদ’ (Charter) বলা হয়। 1945 খ্রিস্টাব্দের 26 জুন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো শহরে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে 51টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা এই সনদে স্বাক্ষর করেন।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদ সদস্য (Charter Member) বলতে কী বোঝায়?

যে সকল রাষ্ট্র 1945 খ্রিস্টাব্দে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদে প্রথম স্বাক্ষর করেছিল, তাদের ‘সনদ সদস্য’ (Charter Member) বলা হয়। 1945 খ্রিস্টাব্দের 26 জুন সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদে 51টি দেশ প্রথম স্বাক্ষর করে। এই 51টি দেশ হলো ‘সনদ সদস্য’।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদে স্বাক্ষরকারী কয়েকটি রাষ্ট্রের নাম লেখো।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদে মোট 51টি রাষ্ট্র স্বাক্ষর করেছিল। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি রাষ্ট্র হলো — যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া), এবং চীন।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদ কীভাবে সংশোধন করা হয়?

নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে সাধারণ পরিষদের (General Assembly) সভায় উপস্থিত এবং ভোটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে জাতিপুঞ্জের সনদ সংশোধন করা হয়।

জাতিপুঞ্জের সনদে পারস্পরিক বিরোধ মেটাবার জন্য কোন্ কোন্ পদ্ধতির উল্লেখ আছে?

জাতিসংঘের সনদের ৬ অধ্যায়ের 33 নম্বর ধারায় শান্তিপূর্ণ বিরোধ মেটানোর ৭টি পদ্ধতির উল্লেখ রয়েছে। এই পদ্ধতিগুলো হলো – আলাপ-আলোচনা, অনুসন্ধান, মধ্যস্থতা, সালিশি বিচার, নিষ্পত্তি, আঞ্চলিক সংস্থা, ব্যবস্থাপনা, অথবা অন্য কোনো শান্তিপূর্ণ উপায় অবলম্বন।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী?

জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হলো –

  • আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করে পৃথিবী থেকে যুদ্ধের সম্ভাবনা দূর করা।
  • সমস্ত জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও সমানাধিকার স্বীকার করে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সৌহার্দ্য স্থাপন করা।
  • পৃথিবীর মানবজাতির অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রভৃতি মানবিক সমস্যাবলির সমাধান করা।
  • বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নীতিগুলি কী?

জাতিসংঘের সনদের 2 নম্বর ধারায় জাতিসংঘের নীতিগুলো লিপিবদ্ধ রয়েছে। নীতিগুলো হলো –

  • জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলির সমান সার্বভৌম মর্যাদা।
  • শান্তিপূর্ণ উপায়ে আন্তর্জাতিক বিরোধের সমাধান।
  • জাতিসংঘ কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রস্তাবনায় কী বলা হয়েছে?

জাতিসংঘের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে যে, জাতিসংঘের প্রথম কাজ হলো যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করে বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রধান সংস্থা কয়টি ও কী কী?

সম্মিলিত জাতিসংঘের প্রধান সংস্থা ছয়টি।

সম্মিলিত জাতিসংঘের প্রধান সংস্থাগুলো হলো –

  • সাধারণ পরিষদ (General Assembly)
  • নিরাপত্তা পরিষদ (Security Council)
  • অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (Economic and Social Council)
  • অছি পরিষদ (Trusteeship Council)
  • আন্তর্জাতিক বিচারালয় (International Court of Justice)
  • মহাসচিব ও সচিবালয় (Secretary-General and Secretariat)

জাতিপুঞ্জের কোনো রাষ্ট্রের সদস্যপদ লাভের পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করো।

জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসংঘের সনদের 4 নম্বর ধারা অনুযায়ী, জাতিসংঘের নিয়মকানুন মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কোনো রাষ্ট্র সদস্যপদ গ্রহণের জন্য আবেদন করতে পারে। আবেদনটি নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো হয় এবং পরিষদের সুপারিশের ভিত্তিতে সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতিতে আবেদনকারী রাষ্ট্র সদস্যপদ লাভ করে।

জাতিপুঞ্জে কোনো রাষ্ট্রের সদস্যপদ কীভাবে খারিজ হয়?

জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসংঘের সনদের 6 নম্বর ধারার অধীনে, যদি কোনো সদস্য রাষ্ট্র জাতিসংঘের সনদে বর্ণিত নীতিগুলো বারবার লঙ্ঘন করে, তবে নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশের ভিত্তিতে সাধারণ পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থনে সেই রাষ্ট্রের সদস্যপদ খারিজ করা হতে পারে।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভা (General Assembly) কীভাবে গঠিত হয়?

সম্মিলিত জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে সাধারণ পরিষদ গঠিত হয়। 1945 সালে 51টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে সাধারণ পরিষদ গঠিত হয়েছিল। বর্তমানে (2014 সালে) সাধারণ পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রসংখ্যা 193। প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্র সাধারণ পরিষদে ৫ জন করে প্রতিনিধি পাঠাতে পারে, তবে ভোট দেওয়ার অধিকার একজন প্রতিনিধি দ্বারা প্রয়োগ করা হয়।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভার বার্ষিক অধিবেশন কবে বসে? এই অধিবেশনে কত জন সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন?

বার্ষিক অধিবেশন – সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের বার্ষিক অধিবেশন প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় মঙ্গলবারে বসে।

সভাপতি ও সহ-সভাপতি – সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভার অধিবেশনে ১ জন সভাপতি এবং ২১ জন সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভার (General Assembly) কাজ কী?

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভার কাজ হল-

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভার (General Assembly) কাজ কী
  • জাতিপুঞ্জের সনদে লিপিবদ্ধ যেকোনো বিষয়ে আলোচনা করা, সমালোচনা করা এবং সুপারিশ করা।
  • জাতিপুঞ্জের বিভিন্ন সংস্থার সদস্য নির্বাচন করা।
  • জাতিপুঞ্জের বাজেট নিয়ে আলোচনা করা এবং তা অনুমোদন করা।

নিরাপত্তা পরিষদ বলতে কী বোঝায়?

নিরাপত্তা পরিষদ – নিরাপত্তা পরিষদ হল সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী সংস্থা। প্রথমে এটি ৫টি স্থায়ী এবং ৬টি অস্থায়ী সদস্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল। 1966 সালে অস্থায়ী সদস্য সংখ্যা ৬ থেকে বাড়িয়ে ১০ করা হয়। বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫। অস্থায়ী সদস্যরা ২ বছরের জন্য নির্বাচিত হন।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলির নাম উল্লেখ করো।

নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র হল –

  • যুক্তরাষ্ট্র
  • যুক্তরাজ্য
  • রাশিয়া
  • চীন
  • ফ্রান্স

জি-৪ (G-4) গোষ্ঠী কী?

ভারত, ব্রাজিল, জাপান এবং জার্মানি এই ৪টি দেশ একত্রে জি-৪ গোষ্ঠী নামে পরিচিত। এরা প্রত্যেকেই জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে অস্থায়ী সদস্য এবং নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ লাভের জন্য আগ্রহী।

নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান কাজ কী?

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উপর বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান কাজগুলো হল –

  • আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা।
  • আন্তর্জাতিক শান্তি বজায় রাখার জন্য যে – কোনো বিষয়ে তদন্ত, সালিশি ও শাস্তি প্রদান করা।
  • আন্তর্জাতিক শান্তিভঙ্গকারী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং সামরিক অভিযান পরিচালনা করা।

UNCIP কী?

কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ 1948 সালে একটি কমিশন নিয়োগ করে। এই কমিশনের নাম United Nations Commission For India and Pakistan বা সংক্ষেপে UNCIP।

ভেটো (Veto) বলতে কী বোঝায়?

অথবা, ভেটো ক্ষমতা বলতে কী বোঝো?

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে কোনো প্রস্তাব গ্রহণের ক্ষেত্রে স্থায়ী ৫টি সদস্য রাষ্ট্রের সম্মতি প্রয়োজন। যে – কোনো স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র অসম্মতি জানালে প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যায়। স্থায়ী সদস্যদের এই অসম্মতিযোগ্য ভোটকেই ‘ভেটো ক্ষমতা’ বলে।

ডবল ভেটো (Double Veto) বলতে কী বোঝায়?

অথবা, দ্বৈত ভেটো বলতে কী বোঝায়?

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৫টি স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র ‘ভেটো’ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। সাধারণভাবে, নিরাপত্তা পরিষদের পদ্ধতিগত কোনো বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্র একটি ভেটো প্রয়োগ করতে পারে এবং আবার সেই বিষয়ের নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর ওপর দ্বিতীয়বার ভেটো প্রয়োগ করতে পারে। এই দুইবার ভেটো দেওয়ার প্রক্রিয়াকে ‘ডবল ভেটো’ (Double Veto) বা ‘দ্বৈত ভেটো’ বলা হয়।

বারুচ প্রকল্প কী?

1946 সালে মার্কিন কূটনীতিবিদ বার্নার্ড বারুচ একটি আন্তর্জাতিক পারমাণবিক নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন, যা পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ, বিজ্ঞানসম্মত এবং অর্থনৈতিক ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেয়। এতে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবিত ছিল। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এই প্রস্তাব গৃহীত হলেও সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো প্রয়োগের মাধ্যমে নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবটি বাতিল করে। এই পরিকল্পনাই ‘বারুচ প্রকল্প’ নামে পরিচিত।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের আর্থসামাজিক পরিষদ (Economic and Social Council) কীভাবে গঠিত হয়?

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত ৫৪টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে আর্থসামাজিক পরিষদ গঠিত হয়। সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ ৩ বছর। প্রতি বছর ১৮টি সদস্য রাষ্ট্র অবসর গ্রহণ করে এবং নতুন ১৮টি সদস্য রাষ্ট্র নির্বাচিত হয়। এই পরিষদ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাবলি নিয়ে কাজ করে।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের অধীনে কতকগুলি কল্যাণমুখী সংস্থার নাম লেখো।

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের অধীনস্থ কল্যাণমুখী সংস্থাগুলি হল –

  • আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (International Labour Organisation – ILO)
  • বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organisation – WHO)
  • জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (United Nations Educational, Scientific and Cultural Organisation – UNESCO)
  • খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (Food and Agricultural Organisation – FAO)
  • জাতিসংঘের শিশু তহবিল (United Nations Children’s Fund – UNICEF)
  • আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (International Monetary Fund – IMF)

WHO কী?

WHO – এর পুরো নাম হল World Health Organization বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষা করা হল এই সংস্থার মূল উদ্দেশ্য। এই সংস্থা বিশেষত ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, বসন্ত, কুষ্ঠ, এইডস, পোলিও প্রভৃতি রোগ নির্মূল করার জন্য অর্থ, চিকিৎসা ও ওষুধ দিয়ে সাহায্য করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জাতিসংঘের অধীনস্থ একটি কল্যাণমুখী সংস্থা, যা বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে কাজ করে। এই সংস্থা বিশেষ করে রোগ প্রতিরোধ, প্রতিষেধক আবিষ্কার, এবং স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের জন্য কাজ করে থাকে।

জাতিপুঞ্জের সংস্থা WHO বিশ্ব মানবকল্যাণে কী ভূমিকা নেয়?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, এইডস, পোলিও, কুষ্ঠ, ইবোলা প্রভৃতি রোগের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী জনমতকে সচেতন করে। এই রোগগুলোর প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য গবেষণা পরিচালনা করা, ঔষধ ও অর্থ দিয়ে বিভিন্ন রাষ্ট্রকে সহায়তা করা, এবং বিশেষ করে অনুন্নত দেশগুলোর জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা এর মূল ভূমিকা।

UNESCO কী?

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের অধীনে গঠিত শিক্ষা, বিজ্ঞান এবং সংস্কৃতির প্রসারের জন্য সংস্থা হল United Nations Educational, Scientific and Cultural Organization (UNESCO)। এই সংস্থা বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষা, শিক্ষার প্রসার এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মানবকল্যাণে জাতিপুঞ্জের সংস্থা UNESCO কী ভূমিকা নিয়েছে?

UNESCO বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে শিক্ষা, বিজ্ঞান এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে কাজ করে। এই লক্ষ্যে নিরক্ষরতা দূরীকরণ, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, পাঠ্যপুস্তক রচনা, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার, এবং বিভিন্ন ঐতিহ্যমণ্ডিত স্থানের সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এই সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

UNICEF কী?

সংযুক্ত জাতিপুঞ্জের আন্তর্জাতিক ‘শিশু সুরক্ষা সংক্রান্ত তহবিল’ বা United Nations Children’s Emergency Fund (UNICEF) হলো একটি সংস্থা যা বিশ্বের কয়েক কোটি শিশুর উন্নয়নের জন্য কাজ করে। এছাড়াও, অনুন্নত দেশগুলিতে শিশুদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, চিকিৎসা, শিশুদের প্রতিপালন, ওষুধ সরবরাহ ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে এই সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

UNRRA কী?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, বিশ্বে অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য সংযুক্ত জাতিপুঞ্জের উদ্যোগে ‘জাতিপুঞ্জ ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রশাসন’ বা United Nations Relief and Rehabilitation Administration (UNRRA) নামে একটি সংস্থা গঠিত হয়।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিষদের কাজ কী?

সংযুক্ত জাতিপুঞ্জের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিষদের কাজ হলো –

  • বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং সাংস্কৃতিক প্রভৃতি বিষয়ে তথ্যাদি সংগ্রহ করে সুপারিশসহ সাধারণ পরিষদে উপস্থাপন করা।
  • বিশ্বের সব দেশের মানুষের মানবাধিকার, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, এবং স্বাধীনতা রক্ষা করা।
  • সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিষদের কাজের ক্ষেত্র এত বিস্তৃত যে এর অধীনে 13টি বিশেষায়িত সংস্থা রয়েছে, যেমন – WHO, IMF, FAO ইত্যাদি।

অছি ব্যবস্থা (Trusteeship System) বলতে কী বোঝো?

স্বায়ত্তশাসনের অধিকার থেকে বঞ্চিত অঞ্চলগুলির প্রশাসন পরিচালনা ও তদারকি করার জন্য সংযুক্ত জাতিপুঞ্জের সনদে যে ব্যবস্থার উল্লেখ করা হয়েছে, তাকে ‘অছি ব্যবস্থা’ বা Trusteeship System নামে পরিচিত।

জাতিপুঞ্জের অছি পরিষদের লক্ষ্য কী? কয়েকটি অছি-ভুক্ত দেশের নাম লেখো।

জাতিপুঞ্জের অছি পরিষদের লক্ষ্য হলো অছি অঞ্চলের জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত অগ্রগতির জন্য সহায়তা করা এবং স্বশাসনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, যাতে তারা স্বাধীনতা পাওয়ার উপযুক্ত হয়ে ওঠে।

কয়েকটি অছি-ভুক্ত দেশের নাম হলো – ক্যামেরুন, সোমালিল্যান্ড, টাঙ্গানিকা ইত্যাদি।

অছি পরিষদ কীভাবে গঠিত হয়?

অছি পরিষদ জাতিপুঞ্জের নিম্নোক্ত সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় –

  • অছি অঞ্চলগুলির প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ,
  • নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যবৃন্দ, এবং
  • সাধারণ পরিষদ কর্তৃক 3 বছরের জন্য নির্বাচিত সদস্যবৃন্দ।

আন্তর্জাতিক বিচারালয় (International Court of Justice) কত জন সদস্য নিয়ে কোথায় ও কী উদ্দেশ্যে স্থাপিত হয়?

আন্তর্জাতিক বিচারালয় নেদারল্যান্ডের (হল্যান্ডের) হেগ শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বিচারালয় 15 জন বিচারপতি নিয়ে গঠিত।

আন্তর্জাতিক বিবাদ এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করা এবং আন্তর্জাতিক আইনের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এটি স্থাপিত হয়।

আন্তর্জাতিক বিচারালয় কত জন বিচারপতি নিয়ে গঠিত? বিচারপতিরা কত বছরের জন্য নির্বাচিত হন?

জাতিপুঞ্জের সনদের 92 নম্বর ধারা অনুসারে আন্তর্জাতিক বিচারালয় 15 জন বিচারপতি নিয়ে গঠিত।

বিচারপতিরা 9 বছরের জন্য নির্বাচিত হন। প্রতি 3 বছর অন্তর 5 জন বিচারপতি অবসর গ্রহণ করেন এবং 5 জন নতুন বিচারপতি নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের দুটি প্রধান কাজ লেখো।

আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের প্রধান দুটি কাজ হলো –

  • জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সৃষ্ট বিরোধের বিচার করা।
  • জাতিসংঘের বিভিন্ন শাখাকে আইনগত পরামর্শ প্রদান করা।

ইন্টারপোল (Interpol) কী?

ইন্টারপোল হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ পুলিশ সংস্থা, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অপরাধ দমন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা করে। ইন্টারপোল জাতিসংঘের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অংশ নয়, এটি একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক সংস্থা। এর সদর দপ্তর ফ্রান্সের লিয়নে অবস্থিত এবং বর্তমানে 195টি দেশ এর সদস্য।

জাতিপুঞ্জের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্থার নাম লেখো। জাতিপুঞ্জের দপ্তর (Secretariat) কীভাবে গঠিত?

জাতিসংঘের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হলো – কর্মদপ্তর বা সচিবালয় (Secretariat)।

জাতিসংঘের সচিবালয় গঠিত হয় –

  • 1 জন মহাসচিব (Secretary General),
  • 8 জন সহকারী মহাসচিব (Assistant Secretary General),
  • এবং প্রায় 10,000 কর্মচারী নিয়ে।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সদর দপ্তর কোথায়? সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রথম মহাসচিব (Secretary General) কে?

  • সদর দপ্তর – জাতিসংঘের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত।
  • প্রথম মহাসচিব – জাতিসংঘের প্রথম মহাসচিব ছিলেন নরওয়ের ট্রিগভি লি (Trygve Lie)।

মহাসচিব কে? তিনি কীভাবে নির্বাচিত হন?

মহাসচিব হলেন জাতিসংঘের সচিবালয়ের প্রধান কর্মকর্তা এবং জাতিসংঘের মুখ্য প্রশাসনিক পরিচালক। তিনি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে সাধারণ সভার মাধ্যমে নির্বাচিত হন।

জাতিপুঞ্জের প্রথম এবং বর্তমান মহাসচিবের নাম কী?

জাতিসংঘের প্রথম মহাসচিব ছিলেন ট্রিগভি লি (Trygve Lie, 1946-1952), এবং বর্তমান মহাসচিব হলেন অ্যান্টোনিও গুতেরেস (Antonio Guterres, 2017-বর্তমান)।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মহাসচিবের কাজগুলি কী?

জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রধান কাজগুলো হলো –

  • আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানের জন্য রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করা।
  • আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলোর সমাধানে মধ্যস্থতা করা।
  • জাতিসংঘের বিভিন্ন দপ্তরের প্রশাসন পরিচালনা করা।
  • সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করা।
  • জাতিসংঘের বাজেট ও আর্থিক তত্ত্বাবধান করা।
  • বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করা।

জাতিসংঘ (League of Nations) ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের (United Nations Organisation) মধ্যে সাদৃশ্যগুলি আলোচনা করো।

জাতিপুঞ্জ ও জাতিসংঘের মধ্যে সাদৃশ্যগুলো হলো –

  • উভয় সংস্থার মূল উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা।
  • উভয় সংস্থাই চারটি প্রধান সংস্থার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করত।
  • উভয় সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রগুলো নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা এবং সংঘাত নিরসনের ওপর জোর দেয়।
  • উভয় সংস্থায়ই সদস্য রাষ্ট্রগুলো ভেটো প্রয়োগের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা দিতে পারে।

জাতিসংঘ ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মধ্যে বৈসাদৃশ্যগুলি আলোচনা করো।

জাতিসংঘ ও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মধ্যে বৈসাদৃশ্যগুলি হল –

  • জাতিপুঞ্জের সনদ অপেক্ষা জাতিসংঘের সনদ অধিক কার্যকর এবং বিস্তারিত।
  • জাতিপুঞ্জের সাফল্য ভার্সাই চুক্তির ওপর নির্ভরশীল ছিল, কিন্তু জাতিসংঘের সাফল্য কোনো নির্দিষ্ট চুক্তির ওপর নির্ভরশীল নয়।
  • জাতিসংঘের সদস্য সংখ্যা জাতিপুঞ্জের তুলনায় অনেক বেশি, ফলে জাতিসংঘ একটি বৃহত্তর প্রতিনিধিত্বমূলক সংস্থা।
  • জাতিপুঞ্জ অ-সদস্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারত না, কিন্তু জাতিসংঘ অ-সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের দুটি সাফল্য লেখো।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের দুটি সাফল্য হলো –

  • এই সংস্থা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ রোধ করতে সক্ষম হয়েছে।
  • কঙ্গো সংকট, সুয়েজ সংকট, আলজেরিয়া সংকট, মরক্কো সংকট প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করেছে।

এছাড়াও –

  • হল্যান্ডকে প্রতিহত করে ইন্দোনেশিয়ায় স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা (1949 খ্রি.) হয়েছে।
  • উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা (1953 খ্রি.) প্রভৃতি।

সুয়েজ সংকটে জাতিপুঞ্জের ভূমিকা কী ছিল?

1956 খ্রিস্টাব্দে মিশরের রাষ্ট্রপতি গামাল আব্দেল নাসের সুয়েজ খাল জাতীয়করণ করলে, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও ইসরায়েল যৌথভাবে মিশর আক্রমণ করে সুয়েজ খালের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভা যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব দেয় এবং জাতিপুঞ্জের শান্তিরক্ষী বাহিনী মিশরে প্রবেশ করে ওই অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনে।

কোরিয়া সম্পর্কে জাতিপুঞ্জের অস্থায়ী কমিশন কবে, কী উদ্দেশ্যে গঠিত হয়?

কোরিয়া সম্পর্কে জাতিপুঞ্জের অস্থায়ী কমিশন 1947 খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়। এই কমিশন গঠনের উদ্দেশ্য ছিল দুই কোরিয়ার মধ্যে বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান করা।
এই কমিশনের সভাপতি ছিলেন বিশিষ্ট ভারতীয় কূটনীতিবিদ কে পি এস মেনন।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতাগুলি লেখো।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতাগুলি হলো –

  • ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে।
  • নতুন ঔপনিবেশিকতাবাদের হাত থেকে বিশ্বকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
  • উপসাগরীয় যুদ্ধ ও বর্ণবৈষম্য দূর করতেও জাতিসংঘ ব্যর্থ হয়েছে।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ কেন ব্যর্থ হয়?

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নিজস্ব সেনাবাহিনী না থাকায় শান্তি স্থাপনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রেরিত সেনাদের মধ্যে সংহতি ও সমন্বয়ের অভাব, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা, জাতিপুঞ্জের আর্থিক তহবিলের ঘাটতি, এবং আমেরিকা ও রাশিয়ার মতো শক্তিধর রাষ্ট্রের প্রভাব ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ তার উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের গুরুত্ব আলোচনা করো।

যদিও সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক পুনর্গঠনে তার ভূমিকা অবিস্মরণীয়। এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতি এবং সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হিসেবে কাজ করে।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা আলোচনা করো।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ তার ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে, যেমন স্থায়ী নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠন, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর আর্থিক তহবিল বাড়ানো, নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি, এবং বৃহৎ শক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা। এ ধরনের পদক্ষেপ সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে তুলতে পারে।

জাতিপুঞ্জ কেন UNSCOP গঠন করেছিল?

প্যালেস্টাইন সমস্যা সমাধানের জন্য জাতিপুঞ্জ 1947 খ্রিস্টাব্দে ১১ জন সদস্য নিয়ে “ইউনাইটেড নেশনস স্পেশাল কমিটি অন প্যালেস্টাইন” (UNSCOP) গঠন করে। UNSCOP – এর সুপারিশের ভিত্তিতে 1947 খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে জাতিপুঞ্জ প্যালেস্টাইনে পৃথক ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর ফলে প্যালেস্টাইন অঞ্চলটি ইহুদি ও আরব রাষ্ট্রে বিভাজিত হয়ে যায়।

কেন জাতিপুঞ্জ নিরপেক্ষ জাতিসমূহের পুনর্বাসন কমিশন গঠন করেছিল? এই কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে কোন্ দেশ নিযুক্ত হয়েছিল?

কোরিয়া যুদ্ধে ধৃত যুদ্ধবন্দীদের প্রত্যর্পণের জন্য 1953 খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ ‘নিরপেক্ষ জাতিসমূহের যুদ্ধবন্দী প্রত্যর্পণ কমিশন’ গঠন করেছিল।

এই কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছিলেন ভারতের জেনারেল কে. এস. থিমাইয়া।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর ইতিহাসের সপ্তম অধ্যায়, “জাতিসংঘ এবং সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ” অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়ক হবে, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই নিবন্ধটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ!

Share via:

মন্তব্য করুন