জৈব যৌগ কাকে বলে? কার্বনের সব যৌগই কি জৈব যৌগ?

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “জৈব যৌগ কাকে বলে? কার্বনের সব যৌগই কি জৈব যৌগ?” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

জৈব যৌগ কাকে বলে? কার্বনের সব যৌগই কি জৈব যৌগ?

জৈব যৌগ কাকে বলে?

জৈব যৌগ – কার্বনের অক্সাইড, ধাতব কার্বনেট, বাইকার্বনেট, হাইড্রোজেন সায়ানাইড এবং ধাতব সায়ানাইড লবণগুলি ছাড়া কার্বন দ্বারা গঠিত যে যৌগগুলির মধ্যে কার্বন পরমাণুর ক্যাটিনেশন ধর্ম, সমাবয়বতা প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, তাদেরকে জৈব যৌগ বলে।

কার্বনের সব যৌগই কি জৈব যৌগ?

কার্বনের সব যৌগই জৈব যৌগ নয় – কার্বনের সব যৌগই জৈব যৌগ নয়। যেমন – কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড, ধাতব কার্বনেট, বাইকার্বনেট, হাইড্রোজেন সায়ানাইড এবং ধাতব সায়ানাইড প্রভৃতি যৌগগুলিতে কার্বন থাকলেও এইগুলিকে জৈব যৌগ বলা যায় না। কারণ, এই সমস্ত যৌগগুলিতে কার্বন পরমাণুর ক্যাটিনেশন ধর্ম, সমাবয়বতা প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যগুলি দেখা যায় না। এই যৌগগুলি অজৈব যৌগ।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

জৈব যৌগ কাকে বলে?

কার্বনের অক্সাইড (CO, CO₂), ধাতব কার্বনেট (যেমন – CaCO₃), বাইকার্বনেট (যেমন, NaHCO₃), হাইড্রোজেন সায়ানাইড (HCN) এবং ধাতব সায়ানাইড (যেমন – KCN) ছাড়া কার্বন দ্বারা গঠিত সেই সমস্ত যৌগকে জৈব যৌগ বলে, যাদের মধ্যে কার্বন পরমাণুর ক্যাটিনেশন (শৃঙ্খল গঠনের ক্ষমতা), সমাবয়বতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।

জৈব ও অজৈব যৌগের প্রধান পার্থক্য কী?

জৈব ও অজৈব যৌগের প্রধান পার্থক্যগুলো হল –
1. উৎস – জৈব যৌগ সাধারণত উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহ থেকে পাওয়া যায়, আর অজৈব যৌগ মূলত খনিজ বা মাটি থেকে পাওয়া যায়।
2. কার্বন উপস্থিতি – প্রায় সব জৈব যৌগেই কার্বন থাকে। অজৈব যৌগে কার্বন থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে।
3. ক্যাটিনেশন – জৈব যৌগে কার্বন পরমাণুর দীর্ঘ শৃঙ্খল গঠনের (ক্যাটিনেশন) বৈশিষ্ট্য থাকে, যা অজৈব যৌগের ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায় না।
4. দহন – জৈব যৌগ জ্বলনে সাধারণত কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জল উৎপন্ন করে। অজৈব যৌগ সাধারণত জ্বলে না।

কেন কিছু কার্বন যৌগকে জৈব যৌগ বলা হয় না?

কিছু কার্বন যৌগ (যেমন – CO₂, CaCO₃, KCN) তাদের রাসায়নিক ধর্ম ও গঠনের কারণে অজৈব যৌগের সাথে বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ। এগুলিতে জৈব যৌগের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গুণাবলি যেমন কার্বনের সাথে কার্বনের দীর্ঘ শৃঙ্খল (ক্যাটিনেশন) বা জটিল সমাবয়বতা দেখা যায় না। ঐতিহাসিকভাবেও এগুলো জীবিত বস্তু থেকে নয় বরং খনিজ উৎস থেকে পাওয়া যায়।

জৈব যৌগের কয়টি প্রধান শ্রেণিবিভাগ আছে?

জৈব যৌগকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় –
1. অ্যালিফ্যাটিক যৌগ – এগুলির কার্বন পরমাণুগুলি খোলা শৃঙ্খল বা শাখায়িত শৃঙ্খলে সজ্জিত থাকে। যেমন – মিথেন, ইথেন, প্রোপেন।
2. অ্যারোম্যাটিক যৌগ – এগুলিতে একটি বিশেষ ধরনের চক্রাকার গঠন (বেনজিন রিং) থাকে যা স্থিতিশীল এবং একক ও দ্বিবন্ধনের মধ্যে বিকল্পভাবে সজ্জিত। যেমন – বেনজিন, টলুইন।

হাইড্রোকার্বন কাকে বলে?

যে সমস্ত জৈব যৌগে শুধুমাত্র কার্বন ও হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে, তাদের হাইড্রোকার্বন বলে। যেমন – মিথেন (CH₄), ইথেন (C₂H₆), ইথিলিন (C₂H₄), বেনজিন (C₆H₆)।

জৈব যৌগের কিছু বৈশিষ্ট্যের উদাহরণ দাও।

জৈব যৌগের কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল –
1. দাহ্যতা – এদের বেশিরভাগই জ্বলনযোগ্য।
2. গলনাংক ও স্ফুটনাংক – সাধারণত কম।
3. জলে দ্রবণীয়তা – বেশিরভাগই জলে অদ্রবণীয় কিন্তু জৈব দ্রাবকে দ্রবণীয়।
4. সমাবয়বতা – একই আণবিক সংকেত কিন্তু বিভিন্ন গঠনসংকেতযুক্ত যৌগ গঠন করতে পারে।
5. ধীর গতির বিক্রিয়া – সাধারণত বিক্রিয়া গতি মন্থর।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “জৈব যৌগ কাকে বলে? কার্বনের সব যৌগই কি জৈব যৌগ?” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “জৈব রসায়ন” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ব্রোমিনের সঙ্গে অ্যাসিটিলিনের যুত বিক্রিয়াটি উল্লেখ করো।

ব্রোমিনের সঙ্গে অ্যাসিটিলিনের যুত বিক্রিয়াটি উল্লেখ করো।

কার্যকরী মূলক বা ক্রিয়াশীল গ্রুপ কাকে বলে? কার্যকরী মূলক ও জৈব মূলকের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।

কার্যকরী মূলক বা ক্রিয়াশীল গ্রুপ কাকে বলে? কার্যকরী মূলক ও জৈব মূলকের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।

একটি জৈব যৌগের আণবিক সংকেত C₂H₄O₂। যৌগটি জলে দ্রাব্য এবং যৌগটির জলীয় দ্রবণে NaHCO₃ যোগ করলে CO₂ নির্গত হয়। জৈব যৌগটিকে শনাক্ত করো। জৈব যৌগটির সঙ্গে ইথানলের বিক্রিয়া শর্ত ও সমিত রাসায়নিক সমীকরণসহ লেখো।

C₂H₄O₂ সংকেতের একটি জৈব যৌগ NaHCO₃-এর সাথে CO₂ গ্যাস দেয়। যৌগটি শনাক্ত করো ও ইথানলের সাথে এর বিক্রিয়ার শর্তসহ সমীকরণ দাও।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026

Madhyamik Life Science Suggestion 2026

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026 – রচনাধর্মী প্রশ্ন

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026 – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026 – সত্য মিথ্যা