এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

দশম শ্রেণি – বাংলা – অদল বদল – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার ষষ্ঠ পাঠের দ্বিতীয় বিভাগ ‘অদল বদল’ থেকে কিছু বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো পরীক্ষায় প্রায়ই আসতে দেখা যায়। আশা করছি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

Table of Contents

অদল বদল – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
অদল বদল – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

অমৃত সত্যি তার বাবা-মাকে খুব জ্বালিয়েছিল। — অমৃত কীভাবে বাবা-মাকে জ্বালাতন করেছিল? অবশেষে অমৃতের মা কী করেছিল?

অমৃতের জ্বালাতন – অমৃত ও ইসাব দুজন খুব ভালো বন্ধু ছিল। খেতে কাজ করতে গিয়ে ইসাবের জামা ছিঁড়ে যাওয়ায় তার বাবা তাকে নতুন জামা কিনে দিয়েছিলেন। আর সেটা দেখার সঙ্গেই, তার জামা প্রায় নতুন থাকা সত্ত্বেও অমৃত জেদ করেছিল তার জন্যও নতুন জামা কেনার। নিজের জামার একটা ছোট ছেঁড়া জায়গা খুঁজে বের করে, তাতে আঙুল ঢুকিয়ে সেই জায়গাটাকে সে আরও ছিঁড়ে দিয়েছিল। অমৃতের মা তাকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এটাও বলেছিলেন যে, ইসাবকে জামা কিনে দেওয়ার আগে ইসাবের বাবা তাকে খুব মেরেছিলেন। এই কথা শুনে অমৃত মার খেতেও রাজি ছিল।

অমৃতের মায়ের গৃহীত পদক্ষেপ – এই সমস্ত ঝামেলা থেকে বাঁচবার জন্য অমৃতের মা অমৃতকে তার বাবার কাছে যেতে বলেছিলেন। অমৃত জানত, তার মা যদি না বলেন তাহলে তার বাবার রাজি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র সে ছিল না। সে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল, খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল, রাতে বাড়ি ফিরতেও চায়নি। এমনকি একদিন রাতে ইসাবদের গোয়ালঘরে গিয়েও সে লুকিয়েছিল। অবশেষে অমৃতের মা হাল ছেড়ে দিয়ে অমৃতের বাবাকে রাজি করিয়েছিলেন তাকে জামা কিনে দেওয়ার জন্য।

ওরা ভয়ে কাঠ হয়ে গেল। – কারা কেন ভয়ে কাঠ হয়ে গেল

উদ্দিষ্ট ব্যক্তিবৃন্দ – পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পের উল্লিখিত অংশে অমৃত আর ইসাবের কথা বলা হয়েছে।

ভয় পাওয়ার কারণ – নতুন জামা পরে অমৃত ইসাবের সঙ্গে বাইরে বেরোলে, কালিয়ার দল অমৃতকে জোর করে কুস্তি লড়তে বাধ্য করে এবং অনিচ্ছুক অমৃতকে মাটিতে ফেলে দেয়। বন্ধুর এই লাঞ্ছনায় ইসাবের মেজাজ চড়ে যায়। সে কালিয়াকে ল্যাং মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। বিষয়টা ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে বুঝে, এবং কালিয়ার বাবা-মা এসে তাদের পেটাতে পারে বলে আশঙ্কা করে, সবাই তখন পালিয়ে যায়। অমৃত আর ইসাবও সেখান থেকে চলে যায়। কিন্তু কিছুটা যাওয়ার পরেই অমৃতের নজরে আসে যে ইসাবের জামার পকেট এবং 6 ইঞ্চি পরিমাণ কাপড় ছিঁড়ে গেছে। এতেই তারা ভয়ে কাঠ হয়ে যায়, কারণ ইসাবের বাবা হাসান পাঠান সুদখোরের কাছ থেকে টাকা ধার করে কাপড় কিনে ইসাবের জামা সেলাই করে দিয়েছিলেন। অমৃত আর ইসাব তাই ভয় পেয়েছিল যে ইসাবের বাবার দেওয়া শার্ট দেখামাত্রই তার ‘চামড়া তুলে নেবে’। এই ভয়েই তারা কাঠ হয়ে গিয়েছিল।

গ্রামপ্রধানের অমৃত ও ইসাবের নাম অদল বদল ঘোষণা করার পেছনে যে কারণ ছিল তা বর্ণনা করো।

  • শুরুর কথা – পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পে, যখন কালিয়া অমৃতকে কুস্তিতে হারিয়ে ফেলে দেয়, তখন ইসাব বন্ধুর অপমানের প্রতিবাদ জানাতে কালিয়ার সঙ্গে কুস্তিতে লড়াই করে।
  • কুস্তি লড়াই – কুস্তিতে ইসাব কালিয়াকে হারিয়ে দেয়। কিন্তু এই লড়াইয়ের সময় ইসাবের নতুন জামা ছিঁড়ে যায়।
  • জামা অদলবদলের বুদ্ধি – বাবার মারের হাত থেকে বাঁচতে অমৃত ইসাবকে জামা অদলবদলের পরামর্শ দেয়। অমৃত তার নিজের জামা ইসাবকে দিয়ে ইসাবের জামাটি নিজে পরে নেয়। এই জামা অদলবদলের ঘটনাটি গ্রামের এক ছেলে এবং ইসাবের বাবা দেখে ফেলেন। এ দৃশ্য দেখে ইসাবের বাবা অমৃতের উদারতা ও দুই বন্ধুর গভীর বন্ধন দেখে মুগ্ধ হন।
  • অদলবদলের কাহিনি প্রচার – ইসাবের বাবা অমৃতের বাড়িতে এসে এই কাহিনি অমৃতের মাকে বলেন, আর পাড়ার অন্যরাও এই কাহিনি শুনে মুগ্ধ হয়। এরপর থেকে গ্রামের অন্য ছেলেরা তাদের ‘অদল বদল’ বলে ডাকতে শুরু করে।
  • অদল বদল নামকরণ – জামা অদলবদলের এই কাহিনি গ্রামপ্রধানের কানে পৌঁছায়, এবং তিনিও গল্পটি পছন্দ করেন। তখন তিনি ঘোষণা করেন, অমৃতকে ‘অদল’ আর ইসাবকে ‘বদল’ নামে ডাকা হবে। এর পর থেকে পুরো গ্রামে তাদের এই ‘অদল বদল’ নামটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

উনি ঘটনাটা জানেন, শুধু ভালোবাসার ভান করছেন – আসল ঘটনাটি কী? উদ্দিষ্ট ব্যক্তি ভালোবাসার ভান করেছিলেন কিনা বুঝিয়ে দাও।

প্রকৃত ঘটনা – ‘অদল বদল’ গল্পে ইসাবকে তার বাবার মারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অমৃত তার সঙ্গে নিজের ছেঁড়া জামাটি পাল্টে নেয়। কিন্তু গ্রামের ছেলেরা এই দৃশ্য দেখে ফেলে এবং তাদের পেছন পেছন চলতে চলতে ‘অদল-বদল’ বলে চিৎকার করতে থাকে। বাবারা তাদের বিষয়টি জেনে ফেলবে মনে করে তারা ভয়ে বাড়ির দিকে ছুটতে থাকে। ইসাবের বাবা তখন বাড়ির সামনে দাওয়ায় বসে হুঁকো টানছিলেন। তিনি ইসাব-অমৃতের কাছে জানতে চান যে তারা বন্ধুদের কাছ থেকে পালিয়ে আসছে কেন। তিনি তাদের কাছে এসে বসতেও বলেন। ইসাবের বাবার শান্ত গলা শুনেই অমৃত-ইসাবের চিন্তা হয় যে তিনি হয়তো উল্লিখিত ঘটনাটা জানেন এবং তাদের কাছে আনার জন্য ভালোবাসার ভান করছেন।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রকৃত মনোভাব – ইসাবের বাবার ভালোবাসার কোনো ভান ছিল না। বরং বন্ধুর প্রতি অমৃতের এরকম ভালোবাসা দেখে তিনি আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। দশ বছরের অমৃতকে জড়িয়ে ধরে তিনি অমৃতের মাকে বলেন, আজ থেকে আপনার ছেলে আমার। অমৃতের মতো ছেলে পেলে তিনি যে একুশ জনকেও পালন করতে রাজি এ কথাও বলেন। তিনি আরও বলেন, অমৃতের কাছ থেকেই তিনি শিখেছেন ‘খাঁটি জিনিস কাকে বলে’। অমৃতের মায়ের উদ্দেশে বলা এই কথাগুলো বুঝিয়ে দেয়, অমৃতের বন্ধুপ্রীতি জীবন সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টে দিয়েছিল।

অমৃতের জবাব আমাকে বদলে দিয়েছে। – অমৃতের কোন্ জবাব বক্তাকে বদলে দিয়েছিল? কীভাবে বদলে দিয়েছিল তার বর্ণনা দাও।

অমৃতের জবাব – অদল বদল গল্পে বন্ধু অমৃতের লাঞ্ছনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ইসাব কালিয়াকে কুস্তি লড়তে আহ্বান করে এবং তাকে হারিয়েও দেয়। কিন্তু এতে তার নতুন জামা ছিঁড়ে যায়। ইসাবকে তার বাবার মারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অমৃত নিজের জামাটি তার সঙ্গে পালটে নেয়। এই সময় ইসাব অমৃতকে জিজ্ঞাসা করেছিল, “তোর বাবা যদি তোকে মারে কী হবে?” এর উত্তরে অমৃত বলেছিল, “কিন্তু আমার তো মা আছে।” অমৃতের এই জবাব ইসাবের বাবাকে বদলে দিয়েছিল।

বক্তার ওপর অমৃতের জবাবের প্রভাব – ইসাবের বাবা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন অমৃত আর ইসাবের বন্ধুত্বের গভীরতা এবং সরলতা দেখে। অমৃত জানে, যদি তার বাবা তাকে মারেন, তার মা তাকে রক্ষা করবেন। কিন্তু ইসাবের মা নেই। অমৃতের এই অনুভূতির মধ্যেই বন্ধুত্বের প্রকৃত সংজ্ঞা লুকিয়ে আছে। ধর্মীয় পার্থক্য কখনোই তার কাছে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ইসাবের বাবা নিজের চোখে বন্ধুত্বের এই অপূর্ব দৃশ্য দেখেছিলেন। দশ বছরের ছোটো এই ছেলেটির নিষ্পাপ হৃদয় ও সরলতা তাঁকে মুগ্ধ করেছিল। তিনি প্রতিবেশীদেরও সেই অবাক করা ঘটনার কথা জানিয়েছেন। এভাবেই অমৃতের দেওয়া জবাবে জীবন সম্পর্কে ইসাবের বাবার উপলব্ধি সম্পূর্ণভাবে বদলে গিয়েছিল।

পাড়া-পড়শি মায়ের দল পাঠানের গল্প শোনার জন্য ঘিরে দাঁড়াল। – গল্পটি নিজের ভাষায় লেখো। এই গল্পে সকলের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?

গল্পটির বিবরণ – পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পে, ইসাবের বাবা বলেছিলেন দুই অভিন্ন হৃদয় বন্ধু ইসাব আর অমৃতের জামা বদলের গল্প। নতুন জামা পরে যাওয়া অমৃতকে কালিয়া কুস্তি লড়ার জন্য জোর করে মাঠে নিয়ে যায় এবং তাকে মাটিতে ফেলে দেয়। তখন বন্ধুর অপমানের শোধ নিতে ইসাব কালিয়াকে ল্যাং মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। কিন্তু এই ধস্তাধস্তিতে ইসাবের জামার পকেট এবং ছয় ইঞ্চি কাপড় ছিঁড়ে যায়। ছেঁড়া শার্ট দেখে ইসাবের বাবা তাকে প্রচণ্ড মারবে — এই ভেবে ইসাব ভীষণ ভয় পায়। তখনই অমৃত তার নতুন জামাটি ইসাবকে পরিয়ে দেয় এবং নিজে ইসাবের পুরানো জামাটি পরে নেয়। সে জানায়, বাবা তাকে মারলেও অমৃতের মা আছে তাকে রক্ষা করার জন্য, কিন্তু ইসাবের মা নেই।

গল্পটির প্রতিক্রিয়া – আড়াল থেকে এই দৃশ্যটি দেখে বন্ধুত্বের এই উদার প্রকাশে ইসাবের বাবা উচ্ছ্বসিত হন। তাঁর মুখে এই কথা শুনে উপস্থিত সকলের বুক আনন্দে ভরে যায়। গ্রামের প্রধান ঘোষণা করেন যে, অমৃতকে ‘অদল’ আর ইসাবকে ‘বদল’ বলে এখন থেকে ডাকা হবে। তাদের বন্ধুরাও এতে খুব খুশি হয়। ক্রমশ গ্রাম পেরিয়ে আকাশ-বাতাসও ‘অমৃত-ইসাব-অদল-বদল’ আওয়াজে মুখরিত হয়ে ওঠে।

অমৃত ও ইসাবের পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার গল্প শুনে তাঁদেরও বুক ভরে গেল। – তাঁদের বলতে কাদের কথা বোঝানো হয়েছে? অমৃত ও ইসাবের ভালোবাসার গল্পটি কেমন?

তাঁদের পরিচয় – অদল বদল গল্পে ‘তাঁদের’ বলতে ইসাবের বাবা হাসান এবং অমৃতের মা বাহালির কথা বোঝানো হয়েছে।

অমৃত ও ইসাবের ভালোবাসার গল্প – পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘অদল বদল’ গল্পটিতে, অমৃত আর ইসাব বেশিরভাগ সময় একসঙ্গেই থাকত। তাদের বাড়িও ছিল মুখোমুখি। গল্পে দেখা যায়, অমৃতের অনিচ্ছা সত্ত্বেও কালিয়া তাকে কুস্তি লড়তে বাধ্য করে এবং তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এটা দেখে ইসাব রেগে গিয়ে কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়ে তাকে হারিয়ে দেয়। কালিয়া যখন অমৃতকে আঘাত করে, তখন ইসাব সেটা সহ্য করতে পারেনি। কিন্তু এই লড়াইয়ের ফলে ইসাবের নতুন জামা ছিঁড়ে যায়। এতে সে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়, কারণ সে ভাবে, জামা ছেঁড়ার জন্য বাবার কাছে মার খেতে হবে। এই সময় অমৃত ইসাবকে জামা অদলবদলের বুদ্ধি দেয়। ইসাব আপত্তি জানালে, অমৃত তাকে বলে, সে মার খেলেও তার মা আছে তাকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু ইসাবের শুধু বাবা আছেন, তাই বাবার হাতে মার খেলে তাকে কেউ বাঁচাতে আসবে না। এইসব ঘটনা থেকেই বোঝা যায়, তারা একে অপরকে কতটা ভালোবাসত এবং তাদের বন্ধুত্ব কতটা গভীর ছিল।

আজ থেকে আপনার ছেলে আমার – বক্তা কে? কাকে কেন এ কথা বলেছেন?

বক্তা – অদল বদল গল্প থেকে নেওয়া উদ্ধৃত অংশটির বক্তা ইসাবের বাবা হাসান পাঠান।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে এ কথা বলার কারণ – হোলির দিন কালিয়া নামের একটি ছেলে অমৃতকে জোর করে কুস্তি লড়তে বাধ্য করে এবং অমৃতকে মাটিতে ফেলে দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে উল্লাসে মেতে ওঠে। এতে ইসাব রেগে যায়। সে কালিয়াকে লড়তে ডাকে এবং তাকে হারিয়েও দেয়। কিন্তু বন্ধুর ভালোবাসার মাশুল দিতে গিয়ে ইসাবের নতুন জামা ছিঁড়ে যায়। এই জন্য বাবার কাছে মার খেতে হবে ভেবে ইসাব ভয় পায়। তখন অমৃত তার জামাটা ইসাবের সঙ্গে অদলবদল করার প্রস্তাব দেয়। এতে ইসাব আপত্তি জানায়। তখন অমৃত তাকে আশ্বস্ত করে জানায়, তার বাবা মারতে এলে তার মা তাকে বাঁচাবে। ইসাবের বাবা আড়াল থেকে ঘটনাটি দেখছিলেন। তাই বন্ধুরা যখন ইসাবদের জামা অদলবদলের কথা ফাঁস করতে যায়, তখন তিনি তাদের দুজনকে নিজের কাছে ডেকে নেন এবং দশ বছরের অমৃতকে জড়িয়ে ধরে প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেন। এত ছোটো ছেলের মধ্যে যে অসামান্য বন্ধুত্বের প্রকাশ ইসাবের বাবা দেখেছিলেন, তা-ই তাঁকে মুগ্ধ করেছিল। অমৃতের আচরণে তিনি জীবন-আচরণের শিক্ষা পেয়েছিলেন।

ও আমাকে শিখিয়েছে, খাঁটি জিনিস কাকে বলে। — বক্তার কাছে খাঁটি জিনিসটি কী ছিল? তার প্রভাবে বক্তার মানসিক অবস্থার কী বদল ঘটেছিল?

খাঁটি জিনিসের পরিচয় – অদলবদল গল্পে বন্ধুকে বাঁচাতে জামা অদলবদলের পরে ইসাব অমৃতকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘তোর বাবা যদি তোকে মারে, কী হবে?’ অমৃতের উত্তর ছিল, ‘আমার তো মা রয়েছে।’ একদিকে মায়ের প্রতি আস্থা, অন্যদিকে বন্ধুপ্রীতি — এই দুটি বিষয়কেই ইসাবের বাবা ‘খাঁটি জিনিস’ বলেছেন।

বক্তার মানসিক অবস্থা – ইসাবের বাবা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন অমৃত আর ইসাবের বন্ধুত্বের গভীরতা এবং সরলতা দেখে। অমৃত জানে, তার বাবা যদি তাকে মারেন, তাহলে তার মা তাকে রক্ষা করবে। কিন্তু ইসাবের মা নেই। অমৃতের অনুভবের মধ্যেই লুকিয়ে আছে বন্ধুত্বের প্রকৃত সংজ্ঞা। ধর্মীয় পার্থক্য কখনোই তার কাছে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ইসাবের বাবা নিজের চোখে বন্ধুত্বের সেই অপূর্ব দৃশ্য দেখেছিলেন। দশ বছরের এই ছোট ছেলেটির নিষ্পাপ হৃদয় ও সরলতা তাঁকে বিস্মিত করেছিল। তিনি এই অবাক করা ঘটনার কথা তার প্রতিবেশীদেরও জানিয়েছিলেন। এভাবেই অমৃতের দেওয়া জবাবে জীবন সম্পর্কে ইসাবের বাবার উপলব্ধি সম্পূর্ণভাবে বদলে গিয়েছিল।

আজ থেকে আমরা অমৃতকে অদল আর ইসাবকে বদল বলে ডাকব। – কে, কখন এ কথা ঘোষণা করেন? এর আড়ালে কোন্ সত্য লুকিয়ে আছে?

ঘোষক এবং ঘোষণার মুহূর্ত – অদল বদল গল্পে ইসাব আর অমৃতের জামা অদলবদলের ঘটনা যখন গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে গ্রামপ্রধানের কানে পৌঁছালো, তখন তিনি সব শুনে খুশি হয়ে প্রশ্নে উদ্ধৃত ঘোষণাটি করেছিলেন।

কথার আড়ালে লুকানো সত্য – বন্ধু অমৃতের অপমানের শোধ নিতে ইসাব কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়েছিল। এই ঘটনায় ইসাবের জামা ছিঁড়ে যাওয়ায়, ইসাবকে তার বাবার হাত থেকে বাঁচাতে অমৃত নিজের জামাটা খুলে পরতে দিয়েছিল। অমৃতের যুক্তি ছিল, তার বাবা তাকে মারতে এলেও ঠেকানোর জন্য তার মা আছেন, কিন্তু ইসাবের মা নেই, তাই তাকে বাঁচানোরও কেউ নেই। ইসাব আর অমৃতের ধর্ম আলাদা ছিল, কিন্তু শৈশব-কৈশোরের এই নিষ্পাপ বন্ধুত্বে ধর্ম কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং চারপাশ থেকে এই বন্ধুত্ব সাদরে অভ্যর্থিত হয়েছিল। যে বাবাকে ইসাব ভয় পেত, তিনিই তাদের কাছে টেনে নিয়েছিলেন। ছেলেদের এমন মানসিকতার পরিচয় পেয়ে গর্বিত হয়েছিলেন ইসাবের বাবা এবং অমৃতের মা। ক্রমে চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছিল তাদের জামা অদলবদলের গল্প। আর সেই কাহিনি স্বীকৃতি পেয়েছিল গ্রামপ্রধানের ঘোষণাতে। মানবতার কাছে ধর্মের দেয়াল কোনো বাধা হতে পারে না। বন্ধুত্বের টানে, ভালোবাসার শক্তিতে মানুষ আত্মার আত্মীয় হয়ে উঠতে পারে। অমৃত-ইসাবের অদল-বদল নামকরণের মাধ্যমে গ্রামপ্রধান মানবতার এই চিরসত্যকেই স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।


আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার ষষ্ঠ পাঠের দ্বিতীয় বিভাগ ‘অদল বদল’ নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী কিছু প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, তাহলে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়াও, যদি এই পোস্টটি আপনার কোনো প্রিয়জনের প্রয়োজন হয়, তাহলে তাদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।

Share via:

মন্তব্য করুন