দশম শ্রেণি – বাংলা – অদল বদল – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

Gopi

আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার ষষ্ঠ পাঠের দ্বিতীয় বিভাগ ‘অদল বদল’ থেকে কিছু বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো পরীক্ষায় প্রায়ই আসতে দেখা যায়। আশা করছি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

অদল বদল – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
অদল বদল – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
Contents Show

অমৃত সত্যি তার বাবা-মাকে খুব জ্বালিয়েছিল। — অমৃত কীভাবে বাবা-মাকে জ্বালাতন করেছিল? অবশেষে অমৃতের মা কী করেছিল?

অমৃতের জ্বালাতন – অমৃত ও ইসাব দুজন খুব ভালো বন্ধু ছিল। খেতে কাজ করতে গিয়ে ইসাবের জামা ছিঁড়ে যাওয়ায় তার বাবা তাকে নতুন জামা কিনে দিয়েছিলেন। আর সেটা দেখার সঙ্গেই, তার জামা প্রায় নতুন থাকা সত্ত্বেও অমৃত জেদ করেছিল তার জন্যও নতুন জামা কেনার। নিজের জামার একটা ছোট ছেঁড়া জায়গা খুঁজে বের করে, তাতে আঙুল ঢুকিয়ে সেই জায়গাটাকে সে আরও ছিঁড়ে দিয়েছিল। অমৃতের মা তাকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এটাও বলেছিলেন যে, ইসাবকে জামা কিনে দেওয়ার আগে ইসাবের বাবা তাকে খুব মেরেছিলেন। এই কথা শুনে অমৃত মার খেতেও রাজি ছিল।

অমৃতের মায়ের গৃহীত পদক্ষেপ – এই সমস্ত ঝামেলা থেকে বাঁচবার জন্য অমৃতের মা অমৃতকে তার বাবার কাছে যেতে বলেছিলেন। অমৃত জানত, তার মা যদি না বলেন তাহলে তার বাবার রাজি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র সে ছিল না। সে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল, খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল, রাতে বাড়ি ফিরতেও চায়নি। এমনকি একদিন রাতে ইসাবদের গোয়ালঘরে গিয়েও সে লুকিয়েছিল। অবশেষে অমৃতের মা হাল ছেড়ে দিয়ে অমৃতের বাবাকে রাজি করিয়েছিলেন তাকে জামা কিনে দেওয়ার জন্য।

ওরা ভয়ে কাঠ হয়ে গেল। – কারা কেন ভয়ে কাঠ হয়ে গেল

উদ্দিষ্ট ব্যক্তিবৃন্দ – পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পের উল্লিখিত অংশে অমৃত আর ইসাবের কথা বলা হয়েছে।

ভয় পাওয়ার কারণ – নতুন জামা পরে অমৃত ইসাবের সঙ্গে বাইরে বেরোলে, কালিয়ার দল অমৃতকে জোর করে কুস্তি লড়তে বাধ্য করে এবং অনিচ্ছুক অমৃতকে মাটিতে ফেলে দেয়। বন্ধুর এই লাঞ্ছনায় ইসাবের মেজাজ চড়ে যায়। সে কালিয়াকে ল্যাং মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। বিষয়টা ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে বুঝে, এবং কালিয়ার বাবা-মা এসে তাদের পেটাতে পারে বলে আশঙ্কা করে, সবাই তখন পালিয়ে যায়। অমৃত আর ইসাবও সেখান থেকে চলে যায়। কিন্তু কিছুটা যাওয়ার পরেই অমৃতের নজরে আসে যে ইসাবের জামার পকেট এবং 6 ইঞ্চি পরিমাণ কাপড় ছিঁড়ে গেছে। এতেই তারা ভয়ে কাঠ হয়ে যায়, কারণ ইসাবের বাবা হাসান পাঠান সুদখোরের কাছ থেকে টাকা ধার করে কাপড় কিনে ইসাবের জামা সেলাই করে দিয়েছিলেন। অমৃত আর ইসাব তাই ভয় পেয়েছিল যে ইসাবের বাবার দেওয়া শার্ট দেখামাত্রই তার ‘চামড়া তুলে নেবে’। এই ভয়েই তারা কাঠ হয়ে গিয়েছিল।

গ্রামপ্রধানের অমৃত ও ইসাবের নাম অদল বদল ঘোষণা করার পেছনে যে কারণ ছিল তা বর্ণনা করো।

  • শুরুর কথা – পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পে, যখন কালিয়া অমৃতকে কুস্তিতে হারিয়ে ফেলে দেয়, তখন ইসাব বন্ধুর অপমানের প্রতিবাদ জানাতে কালিয়ার সঙ্গে কুস্তিতে লড়াই করে।
  • কুস্তি লড়াই – কুস্তিতে ইসাব কালিয়াকে হারিয়ে দেয়। কিন্তু এই লড়াইয়ের সময় ইসাবের নতুন জামা ছিঁড়ে যায়।
  • জামা অদলবদলের বুদ্ধি – বাবার মারের হাত থেকে বাঁচতে অমৃত ইসাবকে জামা অদলবদলের পরামর্শ দেয়। অমৃত তার নিজের জামা ইসাবকে দিয়ে ইসাবের জামাটি নিজে পরে নেয়। এই জামা অদলবদলের ঘটনাটি গ্রামের এক ছেলে এবং ইসাবের বাবা দেখে ফেলেন। এ দৃশ্য দেখে ইসাবের বাবা অমৃতের উদারতা ও দুই বন্ধুর গভীর বন্ধন দেখে মুগ্ধ হন।
  • অদলবদলের কাহিনি প্রচার – ইসাবের বাবা অমৃতের বাড়িতে এসে এই কাহিনি অমৃতের মাকে বলেন, আর পাড়ার অন্যরাও এই কাহিনি শুনে মুগ্ধ হয়। এরপর থেকে গ্রামের অন্য ছেলেরা তাদের ‘অদল বদল’ বলে ডাকতে শুরু করে।
  • অদল বদল নামকরণ – জামা অদলবদলের এই কাহিনি গ্রামপ্রধানের কানে পৌঁছায়, এবং তিনিও গল্পটি পছন্দ করেন। তখন তিনি ঘোষণা করেন, অমৃতকে ‘অদল’ আর ইসাবকে ‘বদল’ নামে ডাকা হবে। এর পর থেকে পুরো গ্রামে তাদের এই ‘অদল বদল’ নামটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

উনি ঘটনাটা জানেন, শুধু ভালোবাসার ভান করছেন – আসল ঘটনাটি কী? উদ্দিষ্ট ব্যক্তি ভালোবাসার ভান করেছিলেন কিনা বুঝিয়ে দাও।

প্রকৃত ঘটনা – ‘অদল বদল’ গল্পে ইসাবকে তার বাবার মারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অমৃত তার সঙ্গে নিজের ছেঁড়া জামাটি পাল্টে নেয়। কিন্তু গ্রামের ছেলেরা এই দৃশ্য দেখে ফেলে এবং তাদের পেছন পেছন চলতে চলতে ‘অদল-বদল’ বলে চিৎকার করতে থাকে। বাবারা তাদের বিষয়টি জেনে ফেলবে মনে করে তারা ভয়ে বাড়ির দিকে ছুটতে থাকে। ইসাবের বাবা তখন বাড়ির সামনে দাওয়ায় বসে হুঁকো টানছিলেন। তিনি ইসাব-অমৃতের কাছে জানতে চান যে তারা বন্ধুদের কাছ থেকে পালিয়ে আসছে কেন। তিনি তাদের কাছে এসে বসতেও বলেন। ইসাবের বাবার শান্ত গলা শুনেই অমৃত-ইসাবের চিন্তা হয় যে তিনি হয়তো উল্লিখিত ঘটনাটা জানেন এবং তাদের কাছে আনার জন্য ভালোবাসার ভান করছেন।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রকৃত মনোভাব – ইসাবের বাবার ভালোবাসার কোনো ভান ছিল না। বরং বন্ধুর প্রতি অমৃতের এরকম ভালোবাসা দেখে তিনি আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। দশ বছরের অমৃতকে জড়িয়ে ধরে তিনি অমৃতের মাকে বলেন, আজ থেকে আপনার ছেলে আমার। অমৃতের মতো ছেলে পেলে তিনি যে একুশ জনকেও পালন করতে রাজি এ কথাও বলেন। তিনি আরও বলেন, অমৃতের কাছ থেকেই তিনি শিখেছেন ‘খাঁটি জিনিস কাকে বলে’। অমৃতের মায়ের উদ্দেশে বলা এই কথাগুলো বুঝিয়ে দেয়, অমৃতের বন্ধুপ্রীতি জীবন সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টে দিয়েছিল।

অমৃতের জবাব আমাকে বদলে দিয়েছে। – অমৃতের কোন্ জবাব বক্তাকে বদলে দিয়েছিল? কীভাবে বদলে দিয়েছিল তার বর্ণনা দাও।

অমৃতের জবাব – অদল বদল গল্পে বন্ধু অমৃতের লাঞ্ছনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ইসাব কালিয়াকে কুস্তি লড়তে আহ্বান করে এবং তাকে হারিয়েও দেয়। কিন্তু এতে তার নতুন জামা ছিঁড়ে যায়। ইসাবকে তার বাবার মারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য অমৃত নিজের জামাটি তার সঙ্গে পালটে নেয়। এই সময় ইসাব অমৃতকে জিজ্ঞাসা করেছিল, “তোর বাবা যদি তোকে মারে কী হবে?” এর উত্তরে অমৃত বলেছিল, “কিন্তু আমার তো মা আছে।” অমৃতের এই জবাব ইসাবের বাবাকে বদলে দিয়েছিল।

বক্তার ওপর অমৃতের জবাবের প্রভাব – ইসাবের বাবা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন অমৃত আর ইসাবের বন্ধুত্বের গভীরতা এবং সরলতা দেখে। অমৃত জানে, যদি তার বাবা তাকে মারেন, তার মা তাকে রক্ষা করবেন। কিন্তু ইসাবের মা নেই। অমৃতের এই অনুভূতির মধ্যেই বন্ধুত্বের প্রকৃত সংজ্ঞা লুকিয়ে আছে। ধর্মীয় পার্থক্য কখনোই তার কাছে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ইসাবের বাবা নিজের চোখে বন্ধুত্বের এই অপূর্ব দৃশ্য দেখেছিলেন। দশ বছরের ছোটো এই ছেলেটির নিষ্পাপ হৃদয় ও সরলতা তাঁকে মুগ্ধ করেছিল। তিনি প্রতিবেশীদেরও সেই অবাক করা ঘটনার কথা জানিয়েছেন। এভাবেই অমৃতের দেওয়া জবাবে জীবন সম্পর্কে ইসাবের বাবার উপলব্ধি সম্পূর্ণভাবে বদলে গিয়েছিল।

পাড়া-পড়শি মায়ের দল পাঠানের গল্প শোনার জন্য ঘিরে দাঁড়াল। – গল্পটি নিজের ভাষায় লেখো। এই গল্পে সকলের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?

গল্পটির বিবরণ – পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পে, ইসাবের বাবা বলেছিলেন দুই অভিন্ন হৃদয় বন্ধু ইসাব আর অমৃতের জামা বদলের গল্প। নতুন জামা পরে যাওয়া অমৃতকে কালিয়া কুস্তি লড়ার জন্য জোর করে মাঠে নিয়ে যায় এবং তাকে মাটিতে ফেলে দেয়। তখন বন্ধুর অপমানের শোধ নিতে ইসাব কালিয়াকে ল্যাং মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। কিন্তু এই ধস্তাধস্তিতে ইসাবের জামার পকেট এবং ছয় ইঞ্চি কাপড় ছিঁড়ে যায়। ছেঁড়া শার্ট দেখে ইসাবের বাবা তাকে প্রচণ্ড মারবে — এই ভেবে ইসাব ভীষণ ভয় পায়। তখনই অমৃত তার নতুন জামাটি ইসাবকে পরিয়ে দেয় এবং নিজে ইসাবের পুরানো জামাটি পরে নেয়। সে জানায়, বাবা তাকে মারলেও অমৃতের মা আছে তাকে রক্ষা করার জন্য, কিন্তু ইসাবের মা নেই।

গল্পটির প্রতিক্রিয়া – আড়াল থেকে এই দৃশ্যটি দেখে বন্ধুত্বের এই উদার প্রকাশে ইসাবের বাবা উচ্ছ্বসিত হন। তাঁর মুখে এই কথা শুনে উপস্থিত সকলের বুক আনন্দে ভরে যায়। গ্রামের প্রধান ঘোষণা করেন যে, অমৃতকে ‘অদল’ আর ইসাবকে ‘বদল’ বলে এখন থেকে ডাকা হবে। তাদের বন্ধুরাও এতে খুব খুশি হয়। ক্রমশ গ্রাম পেরিয়ে আকাশ-বাতাসও ‘অমৃত-ইসাব-অদল-বদল’ আওয়াজে মুখরিত হয়ে ওঠে।

অমৃত ও ইসাবের পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার গল্প শুনে তাঁদেরও বুক ভরে গেল। – তাঁদের বলতে কাদের কথা বোঝানো হয়েছে? অমৃত ও ইসাবের ভালোবাসার গল্পটি কেমন?

তাঁদের পরিচয় – অদল বদল গল্পে ‘তাঁদের’ বলতে ইসাবের বাবা হাসান এবং অমৃতের মা বাহালির কথা বোঝানো হয়েছে।

অমৃত ও ইসাবের ভালোবাসার গল্প – পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘অদল বদল’ গল্পটিতে, অমৃত আর ইসাব বেশিরভাগ সময় একসঙ্গেই থাকত। তাদের বাড়িও ছিল মুখোমুখি। গল্পে দেখা যায়, অমৃতের অনিচ্ছা সত্ত্বেও কালিয়া তাকে কুস্তি লড়তে বাধ্য করে এবং তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এটা দেখে ইসাব রেগে গিয়ে কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়ে তাকে হারিয়ে দেয়। কালিয়া যখন অমৃতকে আঘাত করে, তখন ইসাব সেটা সহ্য করতে পারেনি। কিন্তু এই লড়াইয়ের ফলে ইসাবের নতুন জামা ছিঁড়ে যায়। এতে সে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়, কারণ সে ভাবে, জামা ছেঁড়ার জন্য বাবার কাছে মার খেতে হবে। এই সময় অমৃত ইসাবকে জামা অদলবদলের বুদ্ধি দেয়। ইসাব আপত্তি জানালে, অমৃত তাকে বলে, সে মার খেলেও তার মা আছে তাকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু ইসাবের শুধু বাবা আছেন, তাই বাবার হাতে মার খেলে তাকে কেউ বাঁচাতে আসবে না। এইসব ঘটনা থেকেই বোঝা যায়, তারা একে অপরকে কতটা ভালোবাসত এবং তাদের বন্ধুত্ব কতটা গভীর ছিল।

আজ থেকে আপনার ছেলে আমার – বক্তা কে? কাকে কেন এ কথা বলেছেন?

বক্তা – অদল বদল গল্প থেকে নেওয়া উদ্ধৃত অংশটির বক্তা ইসাবের বাবা হাসান পাঠান।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে এ কথা বলার কারণ – হোলির দিন কালিয়া নামের একটি ছেলে অমৃতকে জোর করে কুস্তি লড়তে বাধ্য করে এবং অমৃতকে মাটিতে ফেলে দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে উল্লাসে মেতে ওঠে। এতে ইসাব রেগে যায়। সে কালিয়াকে লড়তে ডাকে এবং তাকে হারিয়েও দেয়। কিন্তু বন্ধুর ভালোবাসার মাশুল দিতে গিয়ে ইসাবের নতুন জামা ছিঁড়ে যায়। এই জন্য বাবার কাছে মার খেতে হবে ভেবে ইসাব ভয় পায়। তখন অমৃত তার জামাটা ইসাবের সঙ্গে অদলবদল করার প্রস্তাব দেয়। এতে ইসাব আপত্তি জানায়। তখন অমৃত তাকে আশ্বস্ত করে জানায়, তার বাবা মারতে এলে তার মা তাকে বাঁচাবে। ইসাবের বাবা আড়াল থেকে ঘটনাটি দেখছিলেন। তাই বন্ধুরা যখন ইসাবদের জামা অদলবদলের কথা ফাঁস করতে যায়, তখন তিনি তাদের দুজনকে নিজের কাছে ডেকে নেন এবং দশ বছরের অমৃতকে জড়িয়ে ধরে প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেন। এত ছোটো ছেলের মধ্যে যে অসামান্য বন্ধুত্বের প্রকাশ ইসাবের বাবা দেখেছিলেন, তা-ই তাঁকে মুগ্ধ করেছিল। অমৃতের আচরণে তিনি জীবন-আচরণের শিক্ষা পেয়েছিলেন।

ও আমাকে শিখিয়েছে, খাঁটি জিনিস কাকে বলে। — বক্তার কাছে খাঁটি জিনিসটি কী ছিল? তার প্রভাবে বক্তার মানসিক অবস্থার কী বদল ঘটেছিল?

খাঁটি জিনিসের পরিচয় – অদলবদল গল্পে বন্ধুকে বাঁচাতে জামা অদলবদলের পরে ইসাব অমৃতকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘তোর বাবা যদি তোকে মারে, কী হবে?’ অমৃতের উত্তর ছিল, ‘আমার তো মা রয়েছে।’ একদিকে মায়ের প্রতি আস্থা, অন্যদিকে বন্ধুপ্রীতি — এই দুটি বিষয়কেই ইসাবের বাবা ‘খাঁটি জিনিস’ বলেছেন।

বক্তার মানসিক অবস্থা – ইসাবের বাবা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন অমৃত আর ইসাবের বন্ধুত্বের গভীরতা এবং সরলতা দেখে। অমৃত জানে, তার বাবা যদি তাকে মারেন, তাহলে তার মা তাকে রক্ষা করবে। কিন্তু ইসাবের মা নেই। অমৃতের অনুভবের মধ্যেই লুকিয়ে আছে বন্ধুত্বের প্রকৃত সংজ্ঞা। ধর্মীয় পার্থক্য কখনোই তার কাছে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ইসাবের বাবা নিজের চোখে বন্ধুত্বের সেই অপূর্ব দৃশ্য দেখেছিলেন। দশ বছরের এই ছোট ছেলেটির নিষ্পাপ হৃদয় ও সরলতা তাঁকে বিস্মিত করেছিল। তিনি এই অবাক করা ঘটনার কথা তার প্রতিবেশীদেরও জানিয়েছিলেন। এভাবেই অমৃতের দেওয়া জবাবে জীবন সম্পর্কে ইসাবের বাবার উপলব্ধি সম্পূর্ণভাবে বদলে গিয়েছিল।

আজ থেকে আমরা অমৃতকে অদল আর ইসাবকে বদল বলে ডাকব। – কে, কখন এ কথা ঘোষণা করেন? এর আড়ালে কোন্ সত্য লুকিয়ে আছে?

ঘোষক এবং ঘোষণার মুহূর্ত – অদল বদল গল্পে ইসাব আর অমৃতের জামা অদলবদলের ঘটনা যখন গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে গ্রামপ্রধানের কানে পৌঁছালো, তখন তিনি সব শুনে খুশি হয়ে প্রশ্নে উদ্ধৃত ঘোষণাটি করেছিলেন।

কথার আড়ালে লুকানো সত্য – বন্ধু অমৃতের অপমানের শোধ নিতে ইসাব কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়েছিল। এই ঘটনায় ইসাবের জামা ছিঁড়ে যাওয়ায়, ইসাবকে তার বাবার হাত থেকে বাঁচাতে অমৃত নিজের জামাটা খুলে পরতে দিয়েছিল। অমৃতের যুক্তি ছিল, তার বাবা তাকে মারতে এলেও ঠেকানোর জন্য তার মা আছেন, কিন্তু ইসাবের মা নেই, তাই তাকে বাঁচানোরও কেউ নেই। ইসাব আর অমৃতের ধর্ম আলাদা ছিল, কিন্তু শৈশব-কৈশোরের এই নিষ্পাপ বন্ধুত্বে ধর্ম কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং চারপাশ থেকে এই বন্ধুত্ব সাদরে অভ্যর্থিত হয়েছিল। যে বাবাকে ইসাব ভয় পেত, তিনিই তাদের কাছে টেনে নিয়েছিলেন। ছেলেদের এমন মানসিকতার পরিচয় পেয়ে গর্বিত হয়েছিলেন ইসাবের বাবা এবং অমৃতের মা। ক্রমে চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছিল তাদের জামা অদলবদলের গল্প। আর সেই কাহিনি স্বীকৃতি পেয়েছিল গ্রামপ্রধানের ঘোষণাতে। মানবতার কাছে ধর্মের দেয়াল কোনো বাধা হতে পারে না। বন্ধুত্বের টানে, ভালোবাসার শক্তিতে মানুষ আত্মার আত্মীয় হয়ে উঠতে পারে। অমৃত-ইসাবের অদল-বদল নামকরণের মাধ্যমে গ্রামপ্রধান মানবতার এই চিরসত্যকেই স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।

অদল বদল গল্পে হোলির পড়ন্ত বিকেলে কী ঘটনা ঘটেছিল তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।

  • শুরুর কথা – পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘অদল বদল’ গল্পে হোলির পড়ন্ত বিকেলে দুই বন্ধু অমৃত আর ইসাব একই রকম জামা পরে ফুটপাথের শান-বাঁধানো রাস্তায় বসে ছেলেদের ধুলো ছোড়াছুড়ির খেলা দেখছিল।
  • কুস্তির ডাক – ঠিক সেই সময়, তাদের দুজনের একই রকম পোশাক দেখে ছেলেদের দঙ্গল থেকে একটি ছেলে এসে অমৃতকে কুস্তি লড়তে বলল। অমৃত কুস্তি লড়তে চায়নি, কারণ সে নতুন জামা পরেছিল এবং এই জামা সে অনেক কষ্টে, অনেক জেদ করে বাড়ি থেকে আদায় করেছিল। তার মা তাকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, যেন জামা নোংরা না করে।
  • কুস্তি লড়াই – কিন্তু অমৃতের অনিচ্ছা সত্ত্বেও কালিয়া তাকে বাধ্য করে কুস্তি লড়তে, এবং লড়াইয়ের সময় তাকে মাটিতে ফেলে দেয়। এই ঘটনা দেখে ইসাব রেগে গিয়ে কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়ে এবং তাকে হারিয়ে দেয়। কুস্তি লড়তে গিয়ে ইসাবের নতুন জামা ছিঁড়ে যায়।
  • অদল বদল নামকরণ – বাবার কাছে এই জামা ছেঁড়ার জন্য মার খেতে হবে ভেবে ইসাব যখন ভয় পায়, তখন অমৃত তাকে জামা অদল বদলের পরামর্শ দেয়। এই জামা অদল বদলের ঘটনার পর থেকে সারা গ্রামে তাদের ‘অদল বদল’ নামে পরিচিত হয়ে যায়।

অদল বদল গল্পটিতে অমৃত-ইসাবের মধ্যে যে ভালোবাসা ও প্রকৃত বন্ধুত্ব প্রকাশিত হয়েছে তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।

অমৃত ও ইসমতের ভালোবাসার গল্প – পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘অদল বদল’ গল্পটিতে অমৃত আর ইসমত বেশিরভাগ সময় একসঙ্গেই থাকত। তাদের বাড়িও ছিল মুখোমুখি। গল্পে দেখা যায়, অমৃতের অনিচ্ছা সত্ত্বেও কালিয়া তাকে কুস্তি লড়তে বাধ্য করে এবং তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এটি দেখে ইসমত রেগে গিয়ে কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়ে এবং তাকে হারিয়ে দেয়। কালিয়া যখন অমৃতকে আঘাত করে, ইসমত সেটা সহ্য করতে পারেনি। কিন্তু এই লড়াইয়ের ফলে ইসমতের নতুন জামা ছিঁড়ে যায়, আর তাতে সে ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। সে ভাবে, জামা ছেঁড়ার জন্য বাবার কাছে মার খেতে হবে। এই সময় অমৃত ইসমতকে জামা অদলবদলের বুদ্ধি দেয়। ইসমত প্রথমে আপত্তি জানালেও, অমৃত তাকে বোঝায় যে, সে মার খেলেও তার মা তাকে বাঁচানোর জন্য আছে, কিন্তু ইসমতের কেবল বাবা আছেন। তাই বাবার হাতে মার খেলে তাকে বাঁচানোর কেউ থাকবে না। এইসব ঘটনা থেকেই বোঝা যায়, তারা দুজন একে অপরকে কতটা ভালোবাসত এবং তাদের বন্ধুত্ব কতটা গভীর ছিল।

ওরা ভয়ে কাঠ হয়ে গেল। – কারা কেন ভয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল? কীভাবে এই ভয় থেকে তাদের মুক্তি ঘটেছিল?

ভয় পাওয়ার কারণ – পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল-বদল’ গল্পে অমৃত আর ইসাব ভয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল। নতুন জামা পরে ঘর থেকে বেরোনো অমৃতকে কালিয়া কুস্তি লড়ার জন্য জোর করে খোলা মাঠে নিয়ে যায় এবং তাকে ছুঁড়ে মাটিতে ফেলে দেয়। ইসাব বন্ধুর এই অপমান সহ্য করতে না পেরে কালিয়ার হাত ধরে তার সাথে লড়ার জন্য আহ্বান জানায় এবং কালিয়াকে হারিয়েও দেয়। কিন্তু এসবের মধ্যেই ইসাবের নতুন জামার পকেটটা অনেকটা ছিঁড়ে যায়। নতুন জামা ছিঁড়ে যাওয়ায় ইসাবকে তার বাবার কাছে ভয়ানক মার খেতে হবে—এই কথা ভেবেই দুই বন্ধু তখন ভয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল।

ভয় থেকে মুক্তি – এই ভয় এবং ইসাবকে মার খাওয়া থেকে বাঁচাতে অমৃত নিজের জামাটা খুলে ইসাবকে পরতে দেয়, নিজে ইসাবেরটা পরে। এভাবে তারা তখনকার মতো দুশ্চিন্তা ও ভয় থেকে মুক্তি পেয়েছিল। বাড়ি ফেরার পরে অমৃতের মা ছেঁড়া জামা দেখে বিব্রত হলেও সেভাবে কিছু বলেননি, ছুঁচ-সুতো দিয়ে জামাটা রিফু করে দিয়েছিলেন। এতে দুজনের ভয় আরও কেটে গিয়েছিল। গল্পের শেষে যখন ইসাবের বাবা জামা বদলের কাহিনিটি অমৃতের মাকে জানান এবং অমৃতের কাজে ও বন্ধুত্বে খুশি হয়ে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন, তখন যাবতীয় ভয় এক অনাবিল আনন্দে বদলে গিয়েছিল।

অদল বদল গল্পে হিন্দু-মুসলিম পারস্পরিক সম্প্রীতির যে পরিচয় পাওয়া যায় তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।

অথবা, ‘অদল বদল’ গল্পের মাধ্যমে চিরন্তন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া হয়েছে-আলোচনা করো।

  • শুরুর কথা – পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘অদল বদল’ গল্পে আমরা অমৃত ও ইসাব—এই দুই বন্ধুর কথা জানতে পারি।
  • সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি – এই দুই বন্ধুর প্রায় সব কিছুই ছিল একরকম। তবে তাদের ধর্ম ছিল আলাদা। অমৃত ছিল হিন্দু পরিবারের ছেলে, আর ইসাব মুসলিম পরিবারের। কিন্তু ধর্মের পার্থক্য তাদের বন্ধুত্বের মধ্যে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এমনকি তাদের পরিবারের মধ্যেও ছিল সুসম্পর্ক।
  • পরিপূরক বন্ধুত্ব – অমৃত আর ইসাব বিপদের দিনে সবসময় একে অপরের পাশে দাঁড়াত। অমৃত যখন কালিয়ার দ্বারা জোরপূর্বক কুস্তি লড়তে বাধ্য হয় এবং কালিয়া তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়, তখন ইসাব প্রতিবাদ করে।
  • বন্ধুত্বের পরিচয় – বন্ধুর অপমানের শোধ নিতে ইসাব কালিয়াকে কুস্তি লড়ার আহ্বান জানায় এবং তাকে পরাজিত করে। এই লড়াইয়ে ইসাবের জামা ছিঁড়ে যায়, যা দেখে ইসাব ভয় পেয়ে যায়। তখন অমৃত নিজের নতুন জামাটি দিয়ে ইসাবকে তার বাবার মারের হাত থেকে রক্ষা করে।
  • ইতিকথা – এই ঘটনাগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে তাদের ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব সমস্ত ধর্মীয় ভেদাভেদকে অতিক্রম করেছে। তাদের বন্ধুত্ব মানবিকতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে চিরস্থায়ী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা বহন করে।

অদল বদল গল্পের নামকরণ কতদূর সার্থক হয়েছে তা বিচার করো।

যে-কোনো সাহিত্য রচনার মূলভাব বা বিষয় পাঠকের কাছে ফুটে ওঠে রচনার নামকরণের মাধ্যমে। নামকরণ প্রতিটি সাহিত্যকর্মের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নামকরণ সাধারণত বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক, চরিত্রকেন্দ্রিক, ভাব অনুযায়ী, আবার কখনও-বা ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে থাকে। পান্নালাল প্যাটেলের লেখা ‘অদল বদল’ গল্পটির নামকরণ করা হয়েছে মূলত গল্পের বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে। এই গল্পে আমরা দুই বন্ধুর কাহিনি পাই, যাদের সবকিছুই প্রায় একরকম ছিল। এমনকি তারা একই ধরনের জামাও পরত। একজনের বিপদে অন্যজন সবসময় এগিয়ে আসত। ইসাব আর অমৃত দুজনেই হোলি উপলক্ষে পেয়েছিল নতুন জামা, আর সেই জামা যাতে না ছেঁড়ে সে বিষয়ে দুজনেই সচেতন ছিল। কারণ তারা জানত, জামা ছিঁড়লে, আর সেটা বাড়ির লোকেরা জানতে পারলে তাদের কপালে দুর্ভোগ আছে।

হোলির দিন বিকেলে কালিয়া অমৃতকে কুস্তি লড়ার নাম করে মাটিতে ফেলে দেয়। সেই ঘটনা দেখে ইসাবের মেজাজ চড়ে যায়। সে অমৃতের হেনস্থার প্রতিশোধ নিতে কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়ে এবং তাকে হারিয়ে দেয়। কিন্তু কুস্তি লড়তে গিয়ে তার নতুন জামা ছিঁড়ে যায়। ইসাব জানত, জামা ছেঁড়ার কথা তার বাবা জানতে পারলে তাকে বাড়ি ফিরে নিশ্চিত মার খেতে হবে। অমৃত, ইসাবকে তার বাবার মারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য নিজেদের জামা অদলবদল করার পরামর্শ দেয়। তাদের এই জামা অদলবদলের কাহিনি সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি গ্রামপ্রধানও তাদের নাম ‘অদল’ এবং ‘বদল’ বলে ঘোষণা করেন। গ্রামবাসীদেরও তাদের সেই নামে ডাকতে বলেন। অমৃত ও ইসাবের এই জামা অদলবদল এবং তাদের নতুন নামকরণ ‘অদল’ আর ‘বদল’ — এইসব বিষয়কে কেন্দ্র করেই গল্পের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। তাই বলা যায়, গল্পের বিষয়বস্তুর অনুসরণে রচিত এই ‘অদল বদল’ নামকরণটি সার্থক হয়েছে।

অদল বদল গল্প অবলম্বনে ইসাবের বাবা হাসানের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

  • কথামুখ – পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পে ইসাবের বাবা হাসান পাঠান একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তিনি গল্পের প্রধান চরিত্রদের মধ্যে অন্যতম এবং মানবতার প্রতিনিধিত্বকারী একজন ব্যক্তি।
  • দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই – হাসানের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। বাড়ির সদস্য বলতে তিনি ও তাঁর ছেলে ইসাব, এই দু’জন। কিন্তু ইসাবকে লেখাপড়া শেখাতে হিমশিম খেতে হয় হাসানকে। সাময়িক বিপদ-আপদে সুদে টাকা ধারও নিতে হয় তাঁকে। সামান্য জমির আয়ে কোনোমতে তাদের দিন চলে। ইসাবের জন্য হাসান মহাজনের কাছ থেকে টাকা ধার করে জামা কিনে দেন, যা তার আর্থিক অবস্থার সংকটের পরিচায়ক।
  • পিতৃসত্তার বিকাশ – কুস্তির সময় ইসাবের জামা ছিঁড়ে যায়। সহপাঠী অমৃত ইসাবের ছেঁড়া জামাটি নিয়ে তাকে তার ভালো জামাটি দেয়, যাতে ইসাব বাবার হাতে মার খাওয়া থেকে রক্ষা পায়। এ কথা আড়াল থেকে শুনে হাসানের সংকীর্ণ ধর্মীয় চিন্তাধারার কালো মেঘ কেটে যায়। তার মনে হয়, অমৃত যেন তাঁরও ছেলে। মুসলমান হাসান এক মুহূর্তেই হয়ে ওঠেন শাশ্বত পিতা, যাঁর জন্য মনুষ্যত্বই একমাত্র ধর্ম।
  • মানবতা – দেশকালের সীমা অতিক্রম করে যে মানবতা, গল্পে তার স্বীকৃতি দিয়েছেন হাসান। ধর্ম বা জামা অদলবদল নয়, বরং হৃদয়ের নিখাদ ভালোবাসার বিনিময়ে সমাজে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটতে পারে। এই ভাবনাই গল্পের কেন্দ্রীয় বার্তা।
  • ইতিকথা – এই চিরন্তন সত্যটি হাসান চরিত্রের মাধ্যমে গল্পে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাঁর মধ্য দিয়ে গল্পটি মানবতার শ্রেষ্ঠত্বকে তুলে ধরে, যেখানে ধর্ম বা জাত নয়, বরং ভালোবাসা এবং মনুষ্যত্বই প্রধান।

অদল বদল গল্প অবলম্বনে অমৃতের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

  • কথামুখ – ‘অদল বদল’ গল্পে দেশ-কাল-ধর্মের সীমানা অতিক্রম করে বন্ধুত্বের এক অনবদ্য রূপ ফুটে উঠেছে। সেই চিরন্তন বন্ধুত্ব আসলে মানবতার প্রসার ঘটায়। আর সেখানে সর্বাধিক সক্রিয় চরিত্র হল অমৃত।
  • অকৃত্রিম বন্ধুপ্রীতি – অমৃত দরিদ্র কৃষক পরিবারের ছেলে। ইসাব তার বন্ধু। একই স্কুলে, একই ক্লাসে পড়ে তারা। দুজনের জামার মাপ, কাপড়, রঙ — এসবই ছিল এক ধরনের। অন্তরেও তারা দুজন এক। এই অকৃত্রিম বন্ধুত্বের চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে যখন অমৃত তার ভালো জামাটি দিয়ে ইসাবের ছেঁড়া জামাটি নিজের গায়ে পরে নেয়।
  • বাস্তব বুদ্ধি – অমৃত ইসাবকে বলে, “তোকে তোর বাবা পিটোবে। কিন্তু আমাকে বাঁচানোর জন্য তো আমার মা আছে।” অমৃতের এই উক্তি তার বুদ্ধিমত্তা এবং বাস্তব জ্ঞানের পরিচয় দেয়। পাশাপাশি মা-হারা ইসাবের প্রতি তার এই অতিরিক্ত ভালোবাসা পাঠককে মুগ্ধ করে।
  • মানবতা – বন্ধুত্ব কখনও ধর্ম-বর্ণ-আর্থিক পরিস্থিতির বাধা মানে না, তার যথার্থ প্রমাণ অমৃত। ইসাবের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় তা আরও উজ্জ্বল হয়েছে।

অমৃত বয়সে নিতান্তই ছোটো। তবুও তার আচার-আচরণ ও মানসিকতায় সহৃদয়তার প্রকাশ দেখা যায়। এভাবেই অমৃত এক অনবদ্য চরিত্র হয়ে উঠেছে।

অদল বদল গল্প অবলম্বনে ইসাবের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

  • কথামুখ – লেখক পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পটি বন্ধুত্বের এক জীবন্ত উদাহরণ। অমৃত আর ইসাব — এই দুজনের আন্তরিক সম্পর্কের স্বরূপই হলো গল্পের মুখ্য বিষয়।
  • পরিচয় – ইসাব দরিদ্র কৃষক পরিবারের ছেলে। তাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। সাময়িক বিপদ-আপদে তার বাবা হাসানকে সুদে টাকা ধার নিতে হয়। তবে তার মা নেই। বাবা-ই তাদের সংসারের একমাত্র কর্তা। ইসাবকে ক্ষেতেও কাজ করতে হয়।
  • অকৃত্রিম বন্ধুত্ব – অমৃতের সঙ্গে ইসাবের অকৃত্রিম বন্ধুত্ব। তাদের সব কিছুই একই রকমের। একই স্কুলে একই শ্রেণিতে পড়ে তারা। হোলির দিন কালিয়া নামের একটা ছেলে কুস্তি লড়ার সময় অমৃতকে ছুঁড়ে মাটিতে ফেলে দিলে ইসাব স্থির থাকতে পারেনি। সে কালিয়াকে ল্যাং মেরে মাটিতে ফেলে কালিয়ার ঔদ্ধত্য চূর্ণ করে দেয়।
  • সহমর্মিতা – কালিয়ার সঙ্গে লড়াইয়ের সময় ইসাবের নতুন জামাটার পকেট এবং কিছুটা অংশ ছিঁড়ে গিয়েছিল। অমৃত তার ভালো জামাটা ইসাবকে পরে নিতে বললে, ইসাব স্বার্থপরের মতো তা করতে চায়নি। সে বলেছিল — “তোর কী হবে, তুই কী পরবি?” কোনোভাবেই ইসাব অমৃত থেকে আলাদা হতে চায়নি।
  • ইতিকথা – বন্ধুত্বের যে নিষ্পাপ ও পবিত্র প্রকাশ এই গল্পে মানবতাকে ফুটিয়ে তুলেছে, তার একদিকে যেমন অমৃত, অন্যদিকে তেমনই রয়েছে ইসাবেরও উজ্জ্বল উপস্থিতি।

অদল বদল গল্প অবলম্বনে অমৃতের মায়ের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

  • কথামুখ – পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পটি মূলত অমৃত-ইসাবের বন্ধুত্বের কাহিনি। এই গল্পের খুব স্বল্প অংশজুড়ে থাকলেও অমৃতের মায়ের চরিত্রটিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
  • স্নেহময়ী – খুব সাধারণ পরিবারের গৃহবধূ অমৃতের মা। অমৃতের দুরন্তপনা তাঁকেই সামলাতে হয়। গল্পে আমরা দেখি, ইসাবের মতো নতুন জামা নেবে বলে অমৃত বায়না ধরে। নাছোড়বান্দা ছেলেকে বুঝিয়ে কাজ না হলেও, অমৃতের মা কিন্তু তার এই একগুঁয়ে স্বভাব দেখে রাগ করেননি। বরং, তিনি তাঁর স্বামীকে বুঝিয়ে ইসাবের মতো একটা নতুন জামা অমৃতকে কিনে দিতে রাজি করিয়েছেন। মায়ের স্নেহ ও ভালোবাসার প্রকাশ এখানে অত্যন্ত মূর্ত হয়ে উঠেছে।
  • আদর্শময়ী – অমৃতের মা আদর্শ গৃহবধূ। সন্তানের দুরন্তপনায় যেমন তাঁকে বিচলিত হতে দেখা যায় না, তেমনই বাবার পিটুনির হাত থেকে অমৃতকে বাঁচানোর দায়িত্বও তিনিই নেন। ইসাবের ছেঁড়া জামাটা নিজের গায়ে পরে নিয়ে অমৃত বাড়ি ফেরার সাহস পেয়েছে কেবল তার মায়ের আশ্বাসেই।
  • উদারমনা – অন্য ধর্মের হলেও তিনি কখনোই অমৃতকে ইসাবের সঙ্গে মিশতে বারণ করেননি। বরং, ইসাবের বাবাকে ‘হাসান ভাই’ সম্বোধন করে তিনি পারস্পরিক সামাজিক বন্ধনের একটি উদার মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, যা গল্পের সামাজিক মেলবন্ধনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে।
  • ইতিকথা – গল্পের শেষপর্যন্ত মাতৃত্বের এক আদর্শ মূর্তিতেই ভাস্বর হয়ে উঠেছেন অমৃতের মা। তাঁর স্নেহময়ী, আদর্শময়ী এবং উদার চরিত্রের মাধ্যমে তিনি শুধুমাত্র একজন মা হিসেবেই নয়, বরং একটি সমাজের অভ্যন্তরীণ বন্ধনের প্রতীক হিসেবেও প্রতিফলিত হয়েছেন।

ছোটোগল্প হিসেবে অদল বদল কতদূর সার্থক বিচার করো।

পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ হল ধর্ম এবং জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে দুই কিশোরের নির্মল বন্ধুত্বের গল্প। আয়তনে ছোটো হওয়া যদি ছোটোগল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হয়, তাহলে ‘অদল বদল’-এ সেই শর্ত অবশ্যই মানা হয়েছে। কাহিনির শুরু হয়েছে আকস্মিকতা দিয়ে — হোলির দিনের পড়ন্ত বিকেল। ছোটোগল্পের কাহিনিতে শাখাপ্রশাখার বিস্তার ঘটে না। একটি মাত্র ঘটনা তার আশ্রয় হয়। এই গল্পেও দুই বন্ধুর জামা বদল এবং তাদের বাড়ি ও চারপাশে তার প্রতিক্রিয়াই কাহিনির বিষয়। চরিত্রের সংখ্যাও স্বাভাবিকভাবেই খুব কম। এখানে প্রধান দুই চরিত্র অমৃত ও ইসাব ছাড়া, অমৃতের মা বাহালি এবং ইসাবের বাবা পাঠানকে পাওয়া যায়। ছেলের দল এবং কালিয়ার উপস্থিতিও অমৃত-ইসাবের বন্ধুত্বের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। তাই বলা যায়, প্রথাগতভাবে ‘অদল বদল’ তার ছোটোগল্পের আঙ্গিক বজায় রেখেছে।

অমৃতকে অপমানিত হতে দেখে ইসাব কুস্তি লড়ে, আবার কুস্তির মাঠে ইসাবের জামা ছিঁড়ে গেলে অমৃত নিজের নতুন জামাটা ইসাবকে দিয়ে দেয়। সব মিলিয়ে যে বন্ধুত্বের পরিবেশ তৈরি হয়, সেখানে ধর্ম নেই, আছে সহমর্মিতা আর ভালোবাসা। এভাবে বিষয়গত আবেদনেও ‘অদল বদল’ অসামান্য হয়ে উঠেছে। ছোটোগল্প হিসেবে এভাবেই ‘অদল বদল সার্থক হয়ে উঠেছে।


আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার ষষ্ঠ পাঠের দ্বিতীয় বিভাগ ‘অদল বদল’ নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী কিছু প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, তাহলে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়াও, যদি এই পোস্টটি আপনার কোনো প্রিয়জনের প্রয়োজন হয়, তাহলে তাদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

জেট বায়ু কাকে বলে জেট বায়ুর বৈশিষ্ট্য লেখো -

জেট বায়ুর বৈশিষ্ট্য – মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে জেট বায়ুর সম্পর্ক

নিরক্ষীয় অঞ্চলে পরিচলন বৃষ্টি হয় কেন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কীভাবে করা হয় -

নিরক্ষীয় অঞ্চলে পরিচলন বৃষ্টি হয় কেন? বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কীভাবে করা হয়?

মাধ্যমিক ইতিহাস - বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ - সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

About The Author

Gopi

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

জেট বায়ুর বৈশিষ্ট্য – মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে জেট বায়ুর সম্পর্ক

নিরক্ষীয় অঞ্চলে পরিচলন বৃষ্টি হয় কেন? বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কীভাবে করা হয়?

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – বিষয়সংক্ষেপ