এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

দশম শ্রেণি – বাংলা – বহুরূপী – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক বাংলার চতুর্থ পাঠের প্রথম অংশ ‘বহুরূপী’ থেকে কিছু সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

বহুরূপী – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
বহুরূপী – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

বহুরূপী গল্প অবলম্বনে হরিদার জীবনযাত্রার পরিচয় দাও।

  • দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই – হরিদা ছিলেন গরিব মানুষ। শহরের সবচেয়ে ছোট্ট একটি গলির মধ্যে তাঁর ছোট ঘরটি ছিল। এই ঘরে বসত কথকদের চায়ের আড্ডা। যদিও চা, চিনি, দুধ কথকরা নিজেরাই আনতেন। হরিদা শুধু তাঁর উনুনের আগুনে জল ফুটিয়ে দিতেন। ঘড়ির কাঁটা ধরে কোনো ধরাবাঁধা কাজ করতে হরিদার মনে বাঁধা ছিল। অভাব সহ্য করতে তাঁর আপত্তি না থাকলেও, একঘেয়েমি কাজ করতে তিনি ভীষণ আপত্তি করতেন।
  • নাটকীয় বৈচিত্র্য – হরিদার জীবনে নাটকীয় বৈচিত্র্য ছিল। মাঝে মাঝে তিনি বহুরূপী সেজে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তেন। কখনও পাগল, কখনও পুলিশ, কখনও কাবুলিওয়ালা, ফিরিঙ্গি সাহেব, আবার কখনও বাইজি সেজে তাঁকে দেখা যেত। যারা তাঁকে চিনতে পারত, তারা এক-দু-আনা বকশিশ দিত। যারা চিনতে পারত না, তারা হয় কিছুই দিত না কিংবা বিরক্ত হয়ে দু-এক পয়সা দিত। কোনোদিন-বা তাঁর বেশি রোজগার হত। এই বহুরূপী সাজাই একরকম তাঁর জীবনের পেশা হয়ে গিয়েছিল।
  • অবশেষে – এইভাবে শহরের জীবনে মাঝেমাঝেই চমৎকার সব ঘটনা ঘটিয়ে, বহুরূপী বেশে কিছু রোজগার করে হরিদার জীবন চলত।

বহুরূপী গল্প অবলম্বনে জগদীশবাবুর চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

  • কথামুখ – ‘বহুরূপী’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হরিদা হলেও, গল্পের মূল ভাবনাকে প্রতিষ্ঠা দিতে জগদীশবাবুর ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
  • ব্যক্তি জগদীশবাবু – ব্যক্তি জগদীশবাবু ধনী, ঐশ্বর্যশালী। কৃপণ হলেও, তিনি সৌম্য, শান্ত এবং জ্ঞানী। তাঁর জীবনের সরলতা, ঈশ্বরভক্তি এবং ধর্মচর্চা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছে।
  • ভক্তির আতিশয্য – জগদীশবাবু ঈশ্বরবিশ্বাসী, তাই তিনি সাধুসন্ন্যাসীর সেবা করা পছন্দ করতেন। বাড়িতে আগত হিমালয়বাসী সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নেওয়ার জন্য তিনি কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে দিয়েছেন। বিরাগী হরিদার কাছেও দুই হাত জোড় করে তাঁকে তাঁর বাড়িতে থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন। এমনকি তীর্থভ্রমণের জন্য 101 টাকার একটি থলি বিরাগীর পায়ের কাছে নিবেদন করেছেন। আন্তরিক বিনয়ের সঙ্গে জগদীশবাবু বিরাগীর কাছে উপদেশও প্রার্থনা করেছেন। এই সমস্ত দিক থেকে জগদীশবাবুর চরিত্রের মধ্যে ভক্তির আতিশয্য বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
  • কাহিনির গতি নিয়ন্ত্রক – বহুরূপী হরিদা বিরাগী সেজে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে বিষয়-আসক্তিকে ত্যাগ করার মধ্যেই প্রকৃত ঈশ্বরসন্ধান সম্ভব। জগদীশবাবুর বিত্ত-নির্ভর ভক্তিভাবনা হরিদার মতাদর্শকে আরও উজ্জ্বল করেছে। জগদীশবাবুর প্রলোভন বিরাগীর চরিত্রাদর্শকে কষ্টিপাথরে যাচাই করে সত্যে পরিণত করেছে। জগদীশবাবু এখানে উপলক্ষ্যের ভূমিকা পালন করেছেন। এক কথায় বলা যায়, জগদীশবাবু ‘বহুরূপী’ গল্পের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্র, যাঁর দ্বারা কাহিনির গতি নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।

বহুরূপী গল্পের নামকরণ কতদূর সার্থক বিচার করো।

সাহিত্যের ক্ষেত্রে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই নামকরণ সাধারণত বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক, ভাবকেন্দ্রিক বা ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে থাকে। সাহিত্যের অন্তর্নিহিত ভাবও এই নামকরণের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়। শহরের সবচেয়ে সরু গলির ভেতরের ছোট্ট ঘরটাই হরিদার জীবনের একমাত্র আশ্রয়। কোনো ছকে বাঁধা কাজ করতে তাঁর ভালো লাগে না। তবে তাঁর জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্য হলো, তিনি মাঝে মাঝে বহুরূপী সাজেন। এতে সামান্য কিছু রোজগারও হয় বটে। বহুরূপী সেজে তিনি কখনো বাসস্ট্যান্ডে, কখনো বাজারে, আবার কখনো অন্য কোনো উপায়ে তাঁর সাজ দেখিয়ে পয়সা রোজগার করেন। বহুরূপী সাজাটাই তাঁর পেশা। এই পেশাগত দৃষ্টিকোণ থেকে গল্পের নামকরণ যথার্থ। তবে সুবোধ ঘোষ গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন যখন হরিদাকে জগদীশবাবুর বাড়িতে আনলেন। হরিদা চেয়েছিলেন কৃপণ ও ধনী জগদীশবাবুর কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করবেন। সেইমতো তিনি বিরাগীর বেশে সেজেছিলেন। জগদীশবাবু হরিদাকে বিরাগীর বেশে দেখে মুগ্ধ হন এবং বুঝতে পারেন না যে, এই বিরাগী আসলে একজন বহুরূপী। উপরন্তু, জগদীশবাবু বিরাগী হরিদাকে একশ এক টাকার একটি থলি দিতে গেলে হরিদা তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি জানান, বিরাগীর কোনো অর্থের প্রয়োজন নেই। ত্যাগই তাঁর জীবনের ধর্ম। অর্থাৎ, বহুরূপী সাজলেও হরিদা তাঁর চরিত্রের মহিমা নষ্ট করেননি। এখানেই হরিদার বহুরূপী পেশা পাঠকদের কাছে গৌরবের বিষয় হয়ে ওঠে। তাই বলা যায়, গল্পের নামকরণ বিষয়কেন্দ্রিক হওয়ার পাশাপাশি ব্যঞ্জনাধর্মীও হয়ে উঠেছে। এই দিক থেকে গল্পের নামকরণ ‘বহুরূপী’ সার্থক হয়েছে।

বহুরূপী গল্পে হরিদার চরিত্রটি আলোচনা করো।

  • কথামুখ – সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পটির কাহিনিই বিকাশ লাভ করেছে হরিদার চরিত্রকে কেন্দ্র করে। তাঁর চরিত্রের মধ্যে যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়, তা হল –
  • বৈচিত্র্যসন্ধানী – জীবনে কোনো ধরাবাঁধা কাজ হরিদার পছন্দ ছিল না। কাজের মধ্যে একঘেয়েমি থেকে মুক্তি এবং স্বাধীনতার আনন্দ খুঁজে নিতে চান হরিদা। আর এই কারণেই অন্য নিশ্চিত পেশায় না গিয়ে বহুরূপীর পেশা গ্রহণ করেছিলেন হরিদা।
  • সামাজিকতা – হরিদার চরিত্রের মধ্যে সামাজিকতার দিকটি লক্ষণীয়। শহরের সবচেয়ে সরু গলিটার ভিতরে তাঁর ছোট্ট ঘরটিই কথকদের চার বন্ধুর সকাল-সন্ধ্যার আড্ডার ঘর। চা, চিনি, দুধ কথকরা নিয়ে আসেন আর হরিদা উনানের আঁচে জল ফুটিয়ে দেন।
  • পেশাগত দক্ষতা – কখনও বাসস্ট্যান্ডের পাগল, কখনও রাজপথ দিয়ে হেঁটে যাওয়া বাইজি, বাউল, কাপালিক, বুড়ো কাবুলিওয়ালা, ফিরিঙ্গি সাহেব — এরকম অজস্র রূপে হরিদাকে দেখা গেছে। শুধু সাজ নয়, চরিত্রের সঙ্গে মানানসই ছিল তাঁর আচরণ।
  • সততা – হরিদার চরিত্রটি পরিণতির শীর্ষ ছুঁয়েছে কাহিনির শেষে। বিরাগীর বেশে জগদীশবাবুকে মুগ্ধ করে দিলেও তাঁর আতিথ্য গ্রহণের অনুরোধ কিংবা প্রণামী হরিদা প্রত্যাখ্যান করেন। এভাবেই পেশাগত সততায় অর্থলোভকে তিনি ত্যাগ করেন। বকশিশ ছাড়া বহুরূপীর জীবন আর কিছু আশা করতে পারে না — হরিদার এ কথা দীর্ঘশ্বাসের মতো শোনালেও তা আসলে তাকে সততার আলোয় আলোকিত করে।

ছোটোগল্প হিসেবে বহুরূপী কতদূর সার্থক বিচার করো।

ছোটোগল্প হল একটি একমুখী নিটোল গদ্যকাহিনি, যার বক্তব্য একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে দ্রুত পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। সূচনায় থাকে আকস্মিকতা এবং উপসংহারে থাকে কৌতূহলবোধ। এই বৈশিষ্ট্যের আলোকে সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পটি বিচার্য।

‘বহুরূপী’ আসলে হরিদা নামে এক হতদরিদ্র মানুষের বাস্তব জীবনযাপনের কাহিনি। ঘড়ির কাঁটার সামনে সময় বেঁধে দিয়ে আর নিয়ম করে একই ধরনের কাজ করা হরিদার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তিনি মাঝে মাঝে বহুরূপী সেজে যেটুকু রোজগার করেন, তাতেই তার কোনোরকমে দিন চলে যায়। পেশা হিসেবে বহুরূপী সাজাকে বেছে নেওয়ার জন্য গল্পের নাম ‘বহুরূপী’। ব্যঞ্জনাসূচক বিশেষ ভাবসত্যও পাওয়া যায়। হরিদা যখন বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর যাবতীয় প্রলোভন এবং অর্থ তুচ্ছজ্ঞান করেছেন, তখনই কাহিনিটি ছোটোগল্পের মর্যাদা পেয়ে যায়। বিভিন্ন চরিত্রের বেশ ধারণ করে পয়সা উপার্জন করাই হরিদার পেশা। তবু তিনি জগদীশবাবুর টাকার থলি স্পর্শ করেননি। করলে ছোটোগল্পের ব্যঞ্জনা নষ্ট হতো। করেননি বলেই পাঠকমন গল্পের উপসংহারে এসে অতৃপ্তি আর কৌতূহলে ঘুরপাক খেতে থাকে। এই ধরনের পরিণতিই আধুনিক ছোটোগল্পের বিশেষত্ব। তাই বলা যায়, ছোটোগল্পের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে ‘বহুরূপী’ সার্থক।


আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক বাংলার চতুর্থ পাঠের প্রথম অংশ ‘বহুরূপী’ থেকে কিছু সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত সহায়ক হতে পারে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাজে লেগেছে। যদি কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, তাহলে টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়া, এই পোস্টটি আপনার পরিচিতদের মধ্যে শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাদের এটি উপকারে আসবে। ধন্যবাদ।

Share via:

মন্তব্য করুন