আজকের এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলা চতুর্থ পাঠের প্রথম অংশ “বহুরূপী” থেকে কিছু বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলি প্রায়ই পরীক্ষায় দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পড়াশোনার জন্য সহায়ক হবে।

বাঃ, এ তো বেশ মজার ব্যাপার! – মজার ব্যাপারটি কী? তা বক্তার ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলেছিল?
মজার ব্যাপার – সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পে, জগদীশবাবুর বাড়িতে এক সন্ন্যাসী থাকার জন্য এসেছিলেন। এই সন্ন্যাসী খুবই উচ্চশ্রেণির এবং হিমালয়ের গুহায় বাস করতেন। তিনি নাকি সারাবছর একটি হরীতকী ছাড়া আর কিছুই খেতেন না। অনেকের মতে, তাঁর বয়স ছিল 1000 বছরেরও বেশি। জগদীশবাবু ছাড়া আর কাউকে তিনি পায়ের ধুলো নিতে দেননি। জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর জন্য একজোড়া কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সন্ন্যাসীকে বিদায় দেওয়ার সময়, জগদীশবাবু 100 টাকার একটি নোট জোর করে সন্ন্যাসীর ঝোলার মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন। এটাই ছিল মজার গল্প।
বক্তার উপর প্রভাব – সন্ন্যাসীর গল্প শুনে হরিদা প্রথমে গম্ভীর হয়ে যান। তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন। গরিব হরিদা নির্দিষ্ট কোনো পেশার সাথে যুক্ত ছিলেন না। তাই মাঝে মাঝে বহুরূপী সেজে পয়সা রোজগার করতেন। কিন্তু তাতেও তাঁর দিন ভালোভাবে চলত না। জগদীশবাবুর বাড়িতে আসা সন্ন্যাসীর কথা শুনে হরিদা ভাবলেন, জগদীশবাবু সন্ন্যাসীকে উদারভাবে দান করেছেন। তাই, তিনিও যদি কোনো সাধু বা সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করে জগদীশবাবুর বাড়িতে যান, তবে তিনি নিশ্চয়ই তাঁর দান থেকে বঞ্চিত হবেন না। এই উদ্দেশ্যেই হরিদা একদিন সত্যি সত্যি বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন।
গল্প শুনে খুব গম্ভীর হয়ে গেলেন হরিদা – গল্পটি কী ছিল? হরিদার গম্ভীর হয়ে যওয়ার কারণ কী ছিল?
গল্পের বর্ণনা – সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পে অবস্থাপন্ন জগদীশবাবুর বাড়িতে এসে এক সন্ন্যাসী সাত দিন ধরে ছিলেন। তিনি হিমালয়ের গুহায় বাস করতেন। অনেকে বিশ্বাস করতেন, তাঁর বয়স 1000 বছরেরও বেশি। তিনি সারাবছরে মাত্র একটি হরীতকী ছাড়া আর কিছুই খেতেন না। জগদীশবাবু ছাড়া আর কাউকে তিনি পায়ের ধুলো দেননি। জগদীশবাবুও কৌশলে তা পেয়েছিলেন। জগদীশবাবু একজোড়া কাঠের খড়মে সোনার বোতাম লাগিয়ে সন্ন্যাসীর পায়ের কাছে ধরেন, আর সন্ন্যাসী বাধ্য হয়ে তাতে পা গলাতে গেলে সেই সুযোগে জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নিয়ে নেন। এরপর, জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর ঝোলার ভিতরে জোর করে 100 টাকার একটি নোট রেখে দেন। সন্ন্যাসী হাসিমুখে সেখান থেকে চলে যান। এই গল্পই হরিদাকে শোনানো হয়েছিল।
হরিদার গম্ভীর হওয়ার কারণ – সন্ন্যাসী এবং জগদীশবাবুর এই গল্পটি শুনে হরিদা গম্ভীর হয়ে যান। কথক ও তাঁর বন্ধুরা হরিদার এই গম্ভীরতার কারণ বুঝতে পারেননি। এই সময়েই হরিদা তাঁদের বলেন যে, তিনি জগদীশবাবুর বাড়িতে খেলা দেখাতে যাবেন। আসলে, জগদীশবাবুর কাছ থেকে সারা বছরের প্রয়োজনীয় অর্থ হাতিয়ে নেওয়াই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। জগদীশবাবুর ধর্মবিশ্বাসের প্রতি দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে হরিদা নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে চেয়েছিলেন।
হরিদার জীবনে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে। – হরিদার জীবনে নাটকীয় বৈচিত্র্যের যে পরিচয় পাওয়া যায় তা সংক্ষেপে লেখো।
- বৈচিত্র্যময় জীবন – সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা ছিলেন অত্যন্ত গরিব মানুষ। তবে তিনি একঘেয়েমি জীবনযাপন পছন্দ করতেন না। তাই অভাবের মধ্যেও তিনি জীবনের বৈচিত্র্য খুঁজে পেতেন। বহুরূপীর বৈচিত্র্যময় পেশাকে সঙ্গী করেই তিনি অন্নসংস্থানের চেষ্টা করতেন।
- নানান ছদ্মবেশ – মাঝে মাঝে হরিদা বিচিত্র ছদ্মবেশে পথে বের হতেন। কখনও বাসস্ট্যান্ডের কাছে উন্মাদের বেশে দেখা যেত, আবার কখনও শহরের রাজপথ ধরে বাইজির বেশে ঘুঙুর বাজিয়ে যেতেন। শহরে নতুন আসা মানুষরা, যারা তাকে চিনত না, তারা বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকত। আর পরিচিতরা তার কাণ্ড দেখে হেসে উঠত। কখনও বোঁচকা কাঁধে বুড়ো কাবুলিওয়ালা, কখনও হ্যাট, কোট, প্যান্টালুন পরা ফিরিঙ্গি সাহেব — এমন বহু রূপে হরিদাকে দেখা যেত। এমনকি একবার তিনি পুলিশ সেজে স্কুলের মাস্টারমশাইকেও বোকা বানিয়েছিলেন।
- পেশার প্রতিষ্ঠা – তার বিচিত্র সাজ এবং চরিত্রের সঙ্গে মানানসই আচরণে মানুষ কখনও হাসত, কখনও তারিফ করত, আবার কখনও বিরক্ত হত। হরিদা যে সামান্য বকশিশ পেতেন, তাতেই তিনি তার ভাতের যোগান মেটানোর চেষ্টা করতেন। কিন্তু এই দারিদ্র্যের মধ্যেও হরিদা মুক্ত প্রাণের আনন্দ খুঁজে পেতেন।
এই শহরের জীবনে মাঝে মাঝে বেশ চমৎকার ঘটনা সৃষ্টি করেন বহুরূপী হরিদা। – যে চমৎকার ঘটনাগুলি হরিদা ঘটিয়েছিলেন তার উল্লেখ করো।
- কথামুখ – সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা বহুরুপীর বেশে শহরের জীবনে মাঝে মাঝেই বিভিন্ন ঘটনা ঘটাতেন। যেমন-
- পাগলের ছদ্মবেশ – একদিন হরিদা উন্মাদ পাগল সেজে বাসস্ট্যান্ডের কাছে দাঁড়িয়েছিলেন। তার মুখ থেকে লালা ঝরে পড়ছিল। তার চোখ দুটি ছিল কটকটে লাল। কোমরে তার ছেঁড়া কম্বল জড়ানো, গলায় টিনের কৌটোর মালা ঝুলছে। বাসযাত্রীদের দিকে সে মাঝে মাঝে তেড়ে যাচ্ছিল থান ইট নিয়ে।
- পুলিশের ছদ্মবেশ – এইরকমই একদিন পুলিশ সেজে দয়ালবাবুর লিচু বাগানে হরিদা দাঁড়িয়েছিলেন। সেখান থেকে চার জন স্কুলছাত্রকে তিনি ধরেন। তারপর স্কুলমাস্টার এসে নকল পুলিশের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং আট আনা ঘুষ দিয়ে স্কুলমাস্টার তাঁর ছাত্রদের ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।
- বাইজির ছদ্মবেশ – আর-একদিন সন্ধ্যায় দোকানের লোকজনের ব্যস্ততা আর মুখরতা যখন জমে উঠেছে তখন হঠাৎ করেই সকলে ঘুঙুরের শব্দ শুনতে পায়। তারা দেখে এক রূপসি বাইজি প্রায় নাচতে নাচতে রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছে। শহরে যারা নতুন এসেছিল তারা বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে থাকে। রূপসি বাইজি মুচকি হেসে, চোখ টিপে তার ফুলসাজি দোকানদারদের দিকে এগিয়ে দেয় আর দোকানদাররাও হাসিমুখে তাতে এক সিকি ফেলে দেয়। কেবল দোকানদার তাকে চিনতে পারে যে এই বাইজি আসলে বহুরুপী হরিদা।
- উপসংহার – বহুরুপী সেজে হরিদা এই চমৎকার ঘটনাগুলি ঘটিয়েছিলেন।
আজ তোমাদের একটা জবর খেলা দেখাব। – কে, কাদের উদ্দেশে এ কথা বলেছেন? তিনি কোন জবর খেলা দেখিয়েছিলেন?
বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – বহুরূপী গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হরিদা, কথক ও তাঁর বন্ধুদের উদ্দেশ্যে এ উক্তিটি করেছেন।
জবর খেলার পরিচয় – বহুরূপী সেজে টাকা রোজগার করাই ছিল হরিদার নেশা ও পেশা। তাই ধর্মভীরু জগদীশবাবুকে বোকা বানিয়ে নিজের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে, হরিদা সাদা থান পরে, সাদা উত্তরীয় গায়ে দিয়ে হাজির হন জগদীশবাবুর বাড়িতে। জগদীশবাবু হরিদার নিখুঁত ছদ্মবেশের কারণে তাঁকে চিনতে না পেরে বিনয় ও ভক্তিতে গদগদ হয়ে যান। নিজেকে ‘সৃষ্টির মধ্যে এককণা ধূলি’ বলে উল্লেখ করে, হরিদা জগদীশবাবুকে নিচে নেমে আসতে বাধ্য করেন। কণ্ঠস্বরে গাম্ভীর্য ও মুখমণ্ডলে প্রশান্তির ছবি ফুটিয়ে তুলে, হরিদা নিজের সাজকে পূর্ণতা দান করেন। বিরাগী বেশে হরিদা জানান, তাঁর কোনো রাগ নেই, তিনি বিষয়ীর ঘরে থাকতে চান না। তীর্থযাত্রার জন্য জগদীশবাবু হরিদাকে 101 টাকার থলি দিতে চাইলে, তিনি তা ছুঁয়েও দেখেন না এবং সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন। হরিদার এই ছদ্মবেশ ধারণ করে জগদীশবাবুকে ধোঁকা দেওয়াকেই ‘জবর খেলা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এবার মারি তো হাতি, লুঠি তো ভাণ্ডার – কে, কোন্ প্রসঙ্গে মন্তব্যটি করেছেন? তাঁর এই উদ্দেশ্য কী শেষ অবধি সফল হয়েছিল-গল্প অবলম্বনে আলোচনা করো।
বক্তা ও প্রসঙ্গ – সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পে মন্তব্যটি করেছেন বহুরূপী হরিদা। কথকের কাছ থেকে হরিদা জানতে পারেন, জগদীশবাবুর বাড়িতে এক হিমালয়ের সাধু এসেছিলেন এবং জগদীশবাবু তাঁর পায়ের অতি দুর্লভ ধুলো পাওয়ার জন্য কীভাবে সাধুর খাতির-যত্ন করেছিলেন। এইসব শুনে হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে একটি ‘জবর খেলা’ দেখানোর পরিকল্পনা করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল ‘মোটা কিছু’ আদায় করা। তাই কাঙালের মতো হাত পেতে বকশিশ নেওয়ার পরিবর্তে, হরিদা জগদীশবাবুর ধর্মবিশ্বাস ও দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে সারাবছরের রোজগার একদিনে করে নিতে চাইলেন। এই প্রসঙ্গেই তিনি মন্তব্যটি করেন।
উদ্দেশ্যের সফলতা – এক ফুরফুরে সন্ধ্যায় বিরাগীর বেশে হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে হাজির হন। আদুর গা, ধবধবে সাদা উত্তরীয়, সাদা থান পরা হরিদার আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক কথাবার্তায় জগদীশবাবু মুগ্ধ হন। তিনি বিরাগীকে তীর্থভ্রমণের জন্য 101 টাকা প্রণামি দিতে চান। কিন্তু হরিদা এখানে নিজেকে সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর ভূমিকায় উপস্থাপন করেন। সবকিছু প্রত্যাখ্যান করে তিনি চলে যান। পরে কথকের কাছে হরিদা বলেন, সন্ন্যাসী হয়ে টাকা স্পর্শ করলে তাঁর বহুরূপীর ‘ঢং’ নষ্ট হয়ে যেত। নিজের পেশার প্রতি সততা দেখিয়ে, হরিদা অবশেষে অর্থ উপার্জনের অসাধু ইচ্ছাকে ত্যাগ করেন।
তোমরা যদি দেখতে চাও, তবে আজ ঠিক সন্ধ্যাতে জগদীশবাবুর বাড়িতে থেকো। – বক্তা কে? সেই সন্ধ্যায় কোন দৃশ্য দেখা গিয়েছিল? সেই ঘটনার মধ্য দিয়ে বক্তার কোন্ পরিচয় পাও?
বক্তা – বহুরূপী গল্পে এই মন্তব্যটি করেছিলেন বহুরূপী হরিদা।
সন্ধ্যার দৃশ্য – সেই সন্ধ্যায় বিরাগী সেজে হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন তিনি জগতের সীমার ওপার থেকে হেঁটে হেঁটে এসেছেন। জগদীশবাবু নিচে নেমে তাঁকে অভ্যর্থনা না করায়, হরিদা একে জগদীশবাবুর সম্পত্তির অহংকার বলে উল্লেখ করেন। ‘পরম সুখ’ বলতে তিনি বোঝান, সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া। জগদীশবাবু তাঁকে কয়েকদিন থাকতে বললে, তিনি জানান যে খোলা আকাশ আর ধরিত্রী থাকতে তিনি বিষয়ীর দালানবাড়িতে থাকবেন না। জগদীশবাবু প্রণামি হিসেবে একশো এক টাকা (101 টাকা) দিতে গেলে, হরিদা তা নেন না। বরং বলেন— “আমি যেমন অনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি, তেমনই অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি।”
উল্লিখিত ঘটনায় বক্তার পরিচয় – হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন সারাবছরের রোজগার করতে। কিন্তু চরিত্রটির সঙ্গে এতটাই একাত্ম হয়ে যান যে তাঁর আর উপার্জনের লক্ষ্য থাকে না। বহুরূপীর বেশে নিজের সৃষ্টিতে তিনি মগ্ন হয়ে যান। তাই খাঁটি সন্ন্যাসীর মতো সব কিছুকে তুচ্ছ করে চলে যান, নইলে তাঁর ‘ঢং নষ্ট’ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল।
চমকে উঠলেন জগদীশবাবু – জগদীশবাবুর পরিচয় দাও। তাঁর চমকে ওঠার কারণ বর্ণনা করো।
জগদীশবাবুর পরিচয় – সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পে জগদীশবাবু একজন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তিনি একজন অবস্থাপন্ন ও জ্ঞানী ব্যক্তি।
- শান্ত ও সৌম্যকান্তি – সাদা মাথা ও সাদা দাড়িতে তাঁকে যথেষ্টই সৌম্য এবং শান্ত দেখায়। সাধু-সন্ন্যাসীদের প্রতি তাঁর প্রবল ভক্তি রয়েছে।
- আশীর্বাদ লাভের চেষ্টা – অর্থের সাহায্যে ঈশ্বরের আশীর্বাদ সহজে লাভের চেষ্টা করেছিলেন তিনি। হিমালয়ের গুহায় বাস করা এক সন্ন্যাসীর কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে তিনি তাঁর ‘দুর্লভ’ পায়ের ধুলো সংগ্রহ করেছিলেন। এতে তাঁর সরল ভক্তি ছিল না।
- বিরাগীর সেবা – বিরাগীর বেশধারী হরিদাকে দেখে জগদীশবাবু বিচলিত হয়ে ওঠেন। তাঁকে বাড়িতে থাকতে অনুরোধ করেছিলেন এবং তাঁর সেবা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
- ভক্তিভাবনা ও সচ্ছল জীবনযাত্রা – শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুতেই সফল না হয়ে তিনি তাঁর তীর্থযাত্রার জন্য 101 টাকা প্রণামি হিসেবে দিতে চেয়েছিলেন। জগদীশবাবুর ভক্তিভাবনার সঙ্গে তাঁর সচ্ছল জীবনযাত্রার বিষয়টি বারবার যুক্ত হয়েছে।
- তবুও – তাঁর বিনয়, সাধুসঙ্গ লাভের ইচ্ছা, এবং শান্তির সন্ধান ইত্যাদি তাঁর চরিত্রটিকে আলাদা করে তুলেছে।
জগদীশবাবুর চমকে ওঠার কারণ – এক মনোরম সন্ধ্যায় জগদীশবাবু বাড়ির বারান্দায় একটি চেয়ারে বসেছিলেন। তখনই বিরাগীর বেশধারী হরিদার আগমন ঘটে। ধবধবে সাদা উত্তরীয় গায়ে, ছোটো বহরের সাদা থান পরা হরিদাকে দেখে মনে হচ্ছিল, যেন জগতের সীমার ওপার থেকে হেঁটে এসেছেন। তাঁকে দেখেই জগদীশবাবু চমকে ওঠেন।
জগদীশবাবুর বাড়ি হরিদার বিরাগী সেজে যাওয়ার পর যে ঘটনা ঘটেছিল তা বর্ণনা করো।
- বিরাগীর পোশাক – জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগী হরিদার খালি গায়ে ছিল সাদা উত্তরীয়, আর পরনে ছিল সাদা ছোটো থান। তাঁর পা ছিল ধুলোমাখা, আর সঙ্গে ছিল একটি ঝোলা। সেই ঝোলার মধ্যে একটি গীতা রাখা ছিল। বিরাগী হরিদাকে দেখে জগদীশবাবু চমকে ওঠেন।
- বিরাগীর বক্তব্য – বিরাগী জগদীশবাবুকে বলেন, তিনি নিজের সম্পত্তি ও অর্থের অহংকারে নিজেকে ভগবানের থেকেও বড়ো মনে করেন। জগদীশবাবু বিরাগীকে রাগ করতে বারণ করলে, বিরাগী উত্তর দেন, “আমি বিরাগী, রাগ আমার কোনো রিপু নয়।” জগদীশবাবু বিরাগীকে বাড়িতে থাকার অনুরোধ জানান। বিরাগী উত্তর দেন, “ধরিত্রীর মাটিতেই আমার স্থান, এই দালান বাড়িতে আমি থাকব না।”
- খাবার গ্রহণ না করা – খাওয়ার প্রসঙ্গ উঠলে, বিরাগী কোনো কিছু স্পর্শ না করে কেবল এক গ্লাস ঠান্ডা জল পান করেন।
- মোহমুক্তির বাণী – বিরাগী জগদীশবাবুকে মোহমুক্ত হওয়ার উপদেশ দিয়ে বলেন, “ধন, যৌবন সবই বঞ্চনারূপ। যাকে পেলে সৃষ্টির সব ঐশ্বর্য পাওয়া যায়, তাঁর কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করো।” এই কথা বলে তিনি চলে যান।
- নির্লোভ মানসিকতা – তীর্থভ্রমণের জন্য জগদীশবাবু বিরাগীকে 101 টাকা দিতে চাইলে, বিরাগী সেই টাকা নেননি। তিনি বলেন, “আমি যেমন ধুলো মাড়িয়ে যেতে পারি, তেমনই সোনা ও টাকা মাড়িয়ে যেতে পারি।” এই বলে তিনি সেখান থেকে চলে যান।
পরমসুখ কাকে বলে জানেন? সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া! – হরিদার জীবনে এ সত্য কীভাবে সার্থক হয়েছে আলোচনা করো।
- বক্তা ও প্রসঙ্গ – ‘বহুরূপী’ গল্পে জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগীবেশী হরিদা জগদীশবাবুকে এই উক্তিটি করেছিলেন। আপাতদৃষ্টিতে, বহুরূপী হরিদা নিজের ছদ্মবেশকে নিখুঁত ও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য কথাটি বলেছিলেন। তবে, তার আচরণ দ্বারা এই বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করেছিলেন। জগদীশবাবুর আতিথ্যের প্রস্তাব তিনি বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
- বন্ধন মুক্তি – খোলা আকাশ আর মাটি ছেড়ে ‘বিষয়ীর দালান বাড়ি’-তে থাকতে হরিদা আপত্তি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন – “ধন, জন, যৌবন কিছুই নয়, জগদীশবাবু। এগুলো হলো সুন্দর এক একটি বঞ্চনা। ঈশ্বরকে পাওয়াই জীবনের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা হওয়া উচিত।” বিরাগীবেশে হরিদার এই মন্তব্য যে শুধু কথার কথা ছিল না, তা বোঝা যায় যখন জগদীশবাবুর দেওয়া প্রণামির 101 টাকা তিনি ফেলে রেখে যান।
- নির্লোভ মানসিকতা – বিদায়ের সময়ে তিনি বলে যান – “আমি যেমন অনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি, তেমনই অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি।” অথচ হরিদা বড় উপার্জনের জন্যই জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন।
- পেশার প্রতি নিষ্ঠা – নিজের এই আচরণের ব্যাখ্যায় হরিদা পরে জানান যে, টাকা স্পর্শ করলে তাঁর ‘ঢং’ নষ্ট হয়ে যাবে। অর্থাৎ এভাবে তিনি বিরাগী চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন।
আমি যেমন অনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি, তেমনই অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি। – ছদ্মবেশ ধারণ করেও হরিদা কীভাবে এই কথার সত্যতা প্রমাণ করেছেন লেখো।
নাটকীয় বৈচিত্র্যে ভরা জীবন – হরিদার জীবন বড়ই চমকপ্রদ এবং নাটকীয় বৈচিত্র্যে ভরা। তিনি বাঁধাধরা আর পাঁচটা পেশায় নিযুক্ত হতে চাননি, কারণ একঘেয়ে কাজ করতে তাঁর ভীষণ আপত্তি ছিল।
- আর্থিক অসচ্ছলতা – বহুরুপী সেজে যা উপার্জন করতেন, তা দিয়ে ঠিকমতো তাঁর দিন চলত না।
- সন্ন্যাসীর কথা – এই সময়ে তিনি শোনেন, জগদীশবাবুর বাড়িতে এক সন্ন্যাসীর আসার কথা। ধনী জগদীশবাবু সেই সন্ন্যাসীকে অর্থসহ নানা দান করেছিলেন।
বিরাগীর ছদ্মবেশ – সন্ন্যাসীর গল্প শুনে হরিদা উজ্জীবিত হন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়ি থেকে কিছু আদায় করবেন, যা দিয়ে তাঁর সারাবছর চলবে।
- নির্লোভ – হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে উপস্থিত হন। জগদীশবাবু তাঁকে দেখে অভিভূত হয়ে, ভক্তিতে গদগদ হয়ে প্রথমে তাঁকে নিজের বাড়িতে থাকার প্রস্তাব দেন। তারপর টাকার থলি এনে হরিদার পায়ের কাছে রাখেন। কিন্তু প্রকৃত বিরাগীর মতো হরিদা সমস্ত কিছু প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর লোভ ত্যাগে পরিণত হয়।
- পেশাদারিত্বের পরাজয় – বিরাগীর চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে হরিদা ঘোষণা করেন যে, তাঁর কাছে ধুলোর মতো সোনাও তুচ্ছ। চরিত্রের সঙ্গে এই একাত্মতাই তাঁর চরিত্রকে মহনীয় করে তোলে, যার কাছে পেশাদারিত্বও পরাজিত হয়।
সেদিকে ভুলেও একবার তাকালেন না বিরাগী। – বিরাগী কোন্ দিকে তাকালেন না? তাঁর না তাকানোর কারণ বিশ্লেষণ করো।
উপেক্ষার উপলক্ষ্য – কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষের লেখা ‘বহুরূপী’ ছোটগল্পে, বিরাগী হরিদা তাঁর পায়ের কাছে রাখা জগদীশবাবুর একশো টাকা ভরতি থলির দিকে তাকাননি।
না তাকানোর কারণ – হতদরিদ্র হরিদা বহুরূপী সেজে অধিক উপার্জনের জন্য জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগী সেজে গিয়েছিল।
- তাৎপর্যবাহী – অথচ জগদীশবাবুর দেওয়া প্রণামি হিসেবে একশো এক টাকার একটি থলি পেয়েও তিনি সেদিকে তাকাননি। গল্পের এই ঘটনা গভীর তাৎপর্য বহন করে।
- বহুরূপী পেশা – হরিদা বহুরূপী। এটাই তাঁর পেশা। পুলিশ, পাগল, বাইজি প্রভৃতি সেজে তিনি পয়সা রোজগার করেছেন। উক্ত পেশাগুলির সঙ্গে পয়সা নেওয়ার ব্যাপারটা খুব একটা অসংগতিপূর্ণ নয়।
- বিরাগীর ছদ্মবেশ – কিন্তু বিরাগী তো এক লোভহীন জীবানাদর্শকে মেনে চলেন। সংসারত্যাগী বিরাগীর কাছে টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত অতি তুচ্ছ বিষয়। তা গ্রহণ করলে বিরাগীর আদর্শ বা আচরণ নষ্ট হয়।
- চরিত্রের গাম্ভীর্য – আসলে বহুরূপী হরিদা বাদবাকি যেসব চরিত্রের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন, সেসব ক্ষেত্রেও তিনি সেরূপ আচরণ করেছিলেন। সেখানে চরিত্রগুলির গুরুত্ব বা গাম্ভীর্য কিংবা তাৎপর্য — কোনো কিছুই বিরাগীর চরিত্রের সমান নয়। বিরাগী হিসেবে তিনি বিশ্বাস করেন যে, ‘পরম সুখ’ হল সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যাওয়া। এই বোধ থেকেই হরিদা টাকার থলির দিকে তাকাননি।
তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায়। – এই উক্তির মাধ্যমে হরিদা কোন্ সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, তা নিজের ভাষায় লেখো।
বিরাগীর সাজ – সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে বিরাগী সেজে গিয়েছিলেন। তাঁকে দেখে কেউ বুঝতে পারেনি যে তিনি হরিদা।
- জগদীশবাবুর উদ্দেশ্য – জগদীশবাবু হরিদাকে বিরাগী ভেবে ভুল করেছিলেন এবং পুণ্যের জন্য বিরাগীর তীর্থভ্রমণের উদ্দেশ্যে তাঁকে টাকা দিতে চেয়েছিলেন। বিরাগী সেই টাকা স্পর্শ না করেই সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন।
- আর্থিক সংকট – হরিদা যথেষ্ট অভাবের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন; চাইলেই তিনি টাকাটা নিতে পারতেন এবং তাঁর জগদীশবাবুর বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যও ছিল সেটাই। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি তা করেননি।
- চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হওয়া – এখানে হরিদা বিরাগী চরিত্রটির সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন। একজন প্রকৃত বিরাগী, যিনি সংসারধর্ম ত্যাগ করেছেন, তিনি কোনোদিনই পার্থিব সম্পদ স্পর্শ করেন না। হরিদাও সেই চরিত্রের মতোই টাকা স্পর্শ করেননি।
- পেশাদারিত্বের পরাজয় – হরিদা পেশায় বহুরূপী হলেও প্রতিটি রূপের সঙ্গে তিনি একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন। তাই বিরাগী সেজে তিনি টাকা কেন নেননি জানতে চাওয়া হলে তাঁর উত্তর ছিল, “তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যেত।” কারণ, তিনি বিরাগীর বেশে সত্যিই সন্ন্যাসীর মতো আচরণ করতে শুরু করেছিলেন। তাই, জগদীশবাবুর কাছ থেকে তীর্থভ্রমণের টাকা গ্রহণ করলে তা তাঁর চরিত্রবিরুদ্ধ এবং ধর্মবিরুদ্ধ হত।
কী অদ্ভুত কথা বললেন হরিদা! – কোন প্রসঙ্গে হরিদা অদ্ভুত কথা বলেছিলেন? কথাটি অদ্ভুত কেন?
প্রসঙ্গ – বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে পাওয়া প্রণামির টাকা হরিদা অবহেলায় প্রত্যাখ্যান করে চলে আসেন। এই ঘটনা কথকের বাড়ির চায়ের আড্ডায় উপস্থিত তিনিসহ তাঁর বন্ধুদের কাছে অত্যন্ত বিস্ময়কর বলে মনে হয়। তখন হরিদা তাঁদের বলেন যে একজন বিরাগী সন্ন্যাসী হয়ে টাকা স্পর্শ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়, কারণ তাতে তাঁর ‘ঢং’ নষ্ট হয়ে যাবে। এ কথাকেই কথকেরা ‘অদ্ভুত কথা’ বলে মনে করেন।
কথাটি অদ্ভুত মনে হওয়ার কারণ – কথাটি অদ্ভুত মনে হওয়ার কারণ দুটো। প্রথমত, হরিদা একজন পেশাদার বহুরুপী ছিলেন, তাঁর পক্ষে সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করে নির্লোভ হওয়া ছিল বেশ বিস্ময়কর। দ্বিতীয়ত, বহুরুপী হরিদার জীবন ছিল অভাবের। জগদীশবাবুর বাড়ি যাওয়ার আগে তিনি বলেছিলেন, “এবার মারি তো হাতি, লুঠি তো ভাণ্ডার।” অর্থাৎ, তাঁর সারাবছরের প্রয়োজনীয় অর্থ তিনি জগদীশবাবুর বাড়ি থেকে সংগ্রহ করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। অথচ, অনেক টাকা প্রণামি পাওয়ার পরও তিনি তা রেখে উদাসীনভাবে চলে আসেন। যে মানুষ দু-বেলা ভাত জোটাতে পারে না, সে যখন সন্ন্যাসীর ‘ঢং’ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা বলে টাকা ফেলে রেখে চলে যায়, তখন তা ‘অদ্ভুত’ বলেই মনে হয়। কারণ, এর ফলে তাঁকে সারাজীবনে হয়তো অনেক সময় ভাতের হাঁড়িতে শুধু জল ফুটিয়ে দিন কাটাতে হবে।
খাঁটি মানুষ তো নয়, এই বহুরূপীর জীবন এর বেশি কী আশা করতে পারে? – বক্তা কে? খাঁটি মানুষ নয় বলার তাৎপর্য কী?
বক্তার পরিচয় – সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পের উল্লিখিত অংশটির বক্তা হলেন হরিদা।
তাৎপর্য – পেশায় বহুরূপী হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়ি থেকে বড় উপার্জনের আশা করেছিলেন। তাঁর বেশভূষা ও কথাবার্তা জগদীশবাবুকে চমকে দিয়েছিল। তিনি হরিদার ছদ্মবেশ ধরতে পারেননি। ফলে, প্রণামি হিসেবে অনেক টাকাই তিনি হরিদাকে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হরিদা তখন সন্ন্যাসীর চরিত্রে নিজেকে একাত্ম করে ফেলেছিলেন, তাই উদাসীনভাবে সেই অর্থ ফেলে চলে আসেন। কথক ও তাঁর সঙ্গীরা হরিদার এই আচরণকে সমর্থন করতে পারেননি। তখন হরিদা জানান, অর্থ নিলে তাঁর ‘ঢং’ নষ্ট হয়ে যেত। একইসঙ্গে তিনি জানান, বকশিশের জন্য তিনি অবশ্যই জগদীশবাবুর কাছে যাবেন। বহুরূপী হিসেবে মাত্র আট-দশ আনাই তিনি নিজের প্রাপ্য মনে করেন। ‘খাঁটি মানুষ’ অর্থাৎ যে নিজের জীবনাচরণ ও জীবনদর্শন সৎভাবে অনুসরণ করে, তার হয়তো অনেক পাওনা থাকতে পারে, কিন্তু হরিদা নিজেকে বহুরূপী মনে করেন। নকল করাই তাঁর পেশা। পেশার আড়ালে তাঁর ভিতরের মানুষটা যে সমাজের কাছে হারিয়ে গিয়েছে, সেই বিষণ্ণতাই বহুরূপী হরিদার উচ্চারণে প্রকাশ পেয়েছে। ‘খাঁটি মানুষ নয়’ — এটি একজন আদ্যন্ত খাঁটি মানুষের মর্মবেদনা প্রকাশ করে।
হরিদার জীবনের ভাতের হাঁড়ি মাঝে মাঝে শুধু জল ফুটিয়েই সারা হবে – এ কথার মধ্য দিয়ে লেখক যে ব্যঞ্জনা ফুটিয়ে তুলেছেন তা লেখো।
- বিরাগীর সাজে – ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন অর্থ উপার্জনের আশায়। তাঁর বেশভূষা এবং কথা বলার ধরন জগদীশবাবুকে তো বটেই, উপস্থিত সকলকেই চমৎকৃত করেছিল। জগদীশবাবু এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি বিরাগীকে আতিথ্য গ্রহণের অনুরোধ জানান এবং বিদায়ের সময় তীর্থভ্রমণের জন্য প্রণামী হিসেবে ১০১ টাকা দিতে চান।
- লোভহীন বিরাগী – বিরাগীর বেশে থাকা হরিদা অনায়াসে সেই টাকা প্রত্যাখ্যান করে চলে যান। তিনি যাওয়ার সময় বলে যান – “আমি যেমন অনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি, তেমনই অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি।” তাঁর এই আচরণ কথকদের বিস্মিত করে। কারণ, বিপুল পরিমাণ টাকা অগ্রাহ্য করার মধ্যে দারিদ্র্যকে মেনে নেওয়ার এক গভীর ইঙ্গিত ছিল।
- চরিত্রের সঙ্গে একাত্মতা – সন্ন্যাসীর চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার কারণে হরিদা টাকা নেননি, কারণ এতে সেই চরিত্রের ‘ঢং’ নষ্ট হয়ে যেত। এই ঘটনায় নিশ্চিত হয় যে, অভাব কখনও হরিদাকে ছেড়ে যাবে না। ভাতের হাঁড়িতে মাঝে মাঝে শুধু জলই ফুটবে, তাতে চালের যোগান থাকবে না। কথকের মনে হয়, অদৃষ্ট হরিদার এই ভুল কোনোদিন ক্ষমা করবে না।
অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না। – হরিদা কী ভুল করেছিলেন? অদৃষ্ট ক্ষমা না করার পরিণাম কী?
হরিদার ভুল – ‘বহুরূপী’ গল্পে, হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন অর্থ উপার্জনের জন্য। হরিদার বেশভূষা ও কথাবার্তায় জগদীশবাবু এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি ‘বিরাগী’কে আতিথ্য গ্রহণের অনুরোধ জানান। এমনকি বিদায়ের সময়ে 100 টাকা প্রণামীও দিতে চান। কিন্তু উদাসীনভাবে হরিদা সে টাকা প্রত্যাখ্যান করে চলে যান। যাওয়ার সময় বলে যান – “আমি যেমন অনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি, তেমনই অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি।” সন্ন্যাসী চরিত্রের সঙ্গে তিনি এতটাই একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন যে, চরিত্রের ‘ঢং নষ্ট হবে’ বলে হরিদা টাকা নেননি। বিস্মিত গল্পকথক এটাকেই হরিদার ‘ভুল’ বলেছেন।
পরিণতি – অভাবী হরিদার ভাগ্য তাকে সঙ্গ দিতে চেয়েছিল, কিন্তু ব্যক্তিগত সততা ও আদর্শবোধের কারণে হরিদা ভাগ্যের সহায়তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এতে নিশ্চিত হয়ে গেছে যে, অভাব কখনও হরিদাকে ছেড়ে যাবে না। তার ভাতের হাঁড়িতে মাঝে মাঝে শুধু জলই ফুটবে, তাতে চালের জোগান থাকবে না। কথকের মনে হয়েছে, অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুলকে ক্ষমা করবে না।
বহুরূপী গল্প অবলম্বনে হরিদার জীবনযাত্রার পরিচয় দাও।
- দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই – হরিদা ছিলেন গরিব মানুষ। শহরের সবচেয়ে ছোট্ট একটি গলির মধ্যে তাঁর ছোট ঘরটি ছিল। এই ঘরে বসত কথকদের চায়ের আড্ডা। যদিও চা, চিনি, দুধ কথকরা নিজেরাই আনতেন। হরিদা শুধু তাঁর উনুনের আগুনে জল ফুটিয়ে দিতেন। ঘড়ির কাঁটা ধরে কোনো ধরাবাঁধা কাজ করতে হরিদার মনে বাঁধা ছিল। অভাব সহ্য করতে তাঁর আপত্তি না থাকলেও, একঘেয়েমি কাজ করতে তিনি ভীষণ আপত্তি করতেন।
- নাটকীয় বৈচিত্র্য – হরিদার জীবনে নাটকীয় বৈচিত্র্য ছিল। মাঝে মাঝে তিনি বহুরূপী সেজে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তেন। কখনও পাগল, কখনও পুলিশ, কখনও কাবুলিওয়ালা, ফিরিঙ্গি সাহেব, আবার কখনও বাইজি সেজে তাঁকে দেখা যেত। যারা তাঁকে চিনতে পারত, তারা এক-দু-আনা বকশিশ দিত। যারা চিনতে পারত না, তারা হয় কিছুই দিত না কিংবা বিরক্ত হয়ে দু-এক পয়সা দিত। কোনোদিন-বা তাঁর বেশি রোজগার হত। এই বহুরূপী সাজাই একরকম তাঁর জীবনের পেশা হয়ে গিয়েছিল।
- অবশেষে – এইভাবে শহরের জীবনে মাঝেমাঝেই চমৎকার সব ঘটনা ঘটিয়ে, বহুরূপী বেশে কিছু রোজগার করে হরিদার জীবন চলত।
বহুরূপী গল্প অবলম্বনে জগদীশবাবুর চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
- কথামুখ – ‘বহুরূপী’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হরিদা হলেও, গল্পের মূল ভাবনাকে প্রতিষ্ঠা দিতে জগদীশবাবুর ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
- ব্যক্তি জগদীশবাবু – ব্যক্তি জগদীশবাবু ধনী, ঐশ্বর্যশালী। কৃপণ হলেও, তিনি সৌম্য, শান্ত এবং জ্ঞানী। তাঁর জীবনের সরলতা, ঈশ্বরভক্তি এবং ধর্মচর্চা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলেছে।
- ভক্তির আতিশয্য – জগদীশবাবু ঈশ্বরবিশ্বাসী, তাই তিনি সাধুসন্ন্যাসীর সেবা করা পছন্দ করতেন। বাড়িতে আগত হিমালয়বাসী সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নেওয়ার জন্য তিনি কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে দিয়েছেন। বিরাগী হরিদার কাছেও দুই হাত জোড় করে তাঁকে তাঁর বাড়িতে থাকার জন্য অনুরোধ করেছেন। এমনকি তীর্থভ্রমণের জন্য 101 টাকার একটি থলি বিরাগীর পায়ের কাছে নিবেদন করেছেন। আন্তরিক বিনয়ের সঙ্গে জগদীশবাবু বিরাগীর কাছে উপদেশও প্রার্থনা করেছেন। এই সমস্ত দিক থেকে জগদীশবাবুর চরিত্রের মধ্যে ভক্তির আতিশয্য বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
- কাহিনির গতি নিয়ন্ত্রক – বহুরূপী হরিদা বিরাগী সেজে প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে বিষয়-আসক্তিকে ত্যাগ করার মধ্যেই প্রকৃত ঈশ্বরসন্ধান সম্ভব। জগদীশবাবুর বিত্ত-নির্ভর ভক্তিভাবনা হরিদার মতাদর্শকে আরও উজ্জ্বল করেছে। জগদীশবাবুর প্রলোভন বিরাগীর চরিত্রাদর্শকে কষ্টিপাথরে যাচাই করে সত্যে পরিণত করেছে। জগদীশবাবু এখানে উপলক্ষ্যের ভূমিকা পালন করেছেন। এক কথায় বলা যায়, জগদীশবাবু ‘বহুরূপী’ গল্পের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্র, যাঁর দ্বারা কাহিনির গতি নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।
বহুরূপী গল্পের নামকরণ কতদূর সার্থক বিচার করো।
সাহিত্যের ক্ষেত্রে নামকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই নামকরণ সাধারণত বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক, ভাবকেন্দ্রিক বা ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে থাকে। সাহিত্যের অন্তর্নিহিত ভাবও এই নামকরণের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়। শহরের সবচেয়ে সরু গলির ভেতরের ছোট্ট ঘরটাই হরিদার জীবনের একমাত্র আশ্রয়। কোনো ছকে বাঁধা কাজ করতে তাঁর ভালো লাগে না। তবে তাঁর জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্য হলো, তিনি মাঝে মাঝে বহুরূপী সাজেন। এতে সামান্য কিছু রোজগারও হয় বটে। বহুরূপী সেজে তিনি কখনো বাসস্ট্যান্ডে, কখনো বাজারে, আবার কখনো অন্য কোনো উপায়ে তাঁর সাজ দেখিয়ে পয়সা রোজগার করেন। বহুরূপী সাজাটাই তাঁর পেশা। এই পেশাগত দৃষ্টিকোণ থেকে গল্পের নামকরণ যথার্থ। তবে সুবোধ ঘোষ গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন যখন হরিদাকে জগদীশবাবুর বাড়িতে আনলেন। হরিদা চেয়েছিলেন কৃপণ ও ধনী জগদীশবাবুর কাছ থেকে বেশি টাকা আদায় করবেন। সেইমতো তিনি বিরাগীর বেশে সেজেছিলেন। জগদীশবাবু হরিদাকে বিরাগীর বেশে দেখে মুগ্ধ হন এবং বুঝতে পারেন না যে, এই বিরাগী আসলে একজন বহুরূপী। উপরন্তু, জগদীশবাবু বিরাগী হরিদাকে একশ এক টাকার একটি থলি দিতে গেলে হরিদা তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি জানান, বিরাগীর কোনো অর্থের প্রয়োজন নেই। ত্যাগই তাঁর জীবনের ধর্ম। অর্থাৎ, বহুরূপী সাজলেও হরিদা তাঁর চরিত্রের মহিমা নষ্ট করেননি। এখানেই হরিদার বহুরূপী পেশা পাঠকদের কাছে গৌরবের বিষয় হয়ে ওঠে। তাই বলা যায়, গল্পের নামকরণ বিষয়কেন্দ্রিক হওয়ার পাশাপাশি ব্যঞ্জনাধর্মীও হয়ে উঠেছে। এই দিক থেকে গল্পের নামকরণ ‘বহুরূপী’ সার্থক হয়েছে।
বহুরূপী গল্পে হরিদার চরিত্রটি আলোচনা করো।
- কথামুখ – সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পটির কাহিনিই বিকাশ লাভ করেছে হরিদার চরিত্রকে কেন্দ্র করে। তাঁর চরিত্রের মধ্যে যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়, তা হল –
- বৈচিত্র্যসন্ধানী – জীবনে কোনো ধরাবাঁধা কাজ হরিদার পছন্দ ছিল না। কাজের মধ্যে একঘেয়েমি থেকে মুক্তি এবং স্বাধীনতার আনন্দ খুঁজে নিতে চান হরিদা। আর এই কারণেই অন্য নিশ্চিত পেশায় না গিয়ে বহুরূপীর পেশা গ্রহণ করেছিলেন হরিদা।
- সামাজিকতা – হরিদার চরিত্রের মধ্যে সামাজিকতার দিকটি লক্ষণীয়। শহরের সবচেয়ে সরু গলিটার ভিতরে তাঁর ছোট্ট ঘরটিই কথকদের চার বন্ধুর সকাল-সন্ধ্যার আড্ডার ঘর। চা, চিনি, দুধ কথকরা নিয়ে আসেন আর হরিদা উনানের আঁচে জল ফুটিয়ে দেন।
- পেশাগত দক্ষতা – কখনও বাসস্ট্যান্ডের পাগল, কখনও রাজপথ দিয়ে হেঁটে যাওয়া বাইজি, বাউল, কাপালিক, বুড়ো কাবুলিওয়ালা, ফিরিঙ্গি সাহেব — এরকম অজস্র রূপে হরিদাকে দেখা গেছে। শুধু সাজ নয়, চরিত্রের সঙ্গে মানানসই ছিল তাঁর আচরণ।
- সততা – হরিদার চরিত্রটি পরিণতির শীর্ষ ছুঁয়েছে কাহিনির শেষে। বিরাগীর বেশে জগদীশবাবুকে মুগ্ধ করে দিলেও তাঁর আতিথ্য গ্রহণের অনুরোধ কিংবা প্রণামী হরিদা প্রত্যাখ্যান করেন। এভাবেই পেশাগত সততায় অর্থলোভকে তিনি ত্যাগ করেন। বকশিশ ছাড়া বহুরূপীর জীবন আর কিছু আশা করতে পারে না — হরিদার এ কথা দীর্ঘশ্বাসের মতো শোনালেও তা আসলে তাকে সততার আলোয় আলোকিত করে।
ছোটোগল্প হিসেবে বহুরূপী কতদূর সার্থক বিচার করো।
ছোটোগল্প হল একটি একমুখী নিটোল গদ্যকাহিনি, যার বক্তব্য একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে দ্রুত পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। সূচনায় থাকে আকস্মিকতা এবং উপসংহারে থাকে কৌতূহলবোধ। এই বৈশিষ্ট্যের আলোকে সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পটি বিচার্য।
‘বহুরূপী’ আসলে হরিদা নামে এক হতদরিদ্র মানুষের বাস্তব জীবনযাপনের কাহিনি। ঘড়ির কাঁটার সামনে সময় বেঁধে দিয়ে আর নিয়ম করে একই ধরনের কাজ করা হরিদার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই তিনি মাঝে মাঝে বহুরূপী সেজে যেটুকু রোজগার করেন, তাতেই তার কোনোরকমে দিন চলে যায়। পেশা হিসেবে বহুরূপী সাজাকে বেছে নেওয়ার জন্য গল্পের নাম ‘বহুরূপী’। ব্যঞ্জনাসূচক বিশেষ ভাবসত্যও পাওয়া যায়। হরিদা যখন বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর যাবতীয় প্রলোভন এবং অর্থ তুচ্ছজ্ঞান করেছেন, তখনই কাহিনিটি ছোটোগল্পের মর্যাদা পেয়ে যায়। বিভিন্ন চরিত্রের বেশ ধারণ করে পয়সা উপার্জন করাই হরিদার পেশা। তবু তিনি জগদীশবাবুর টাকার থলি স্পর্শ করেননি। করলে ছোটোগল্পের ব্যঞ্জনা নষ্ট হতো। করেননি বলেই পাঠকমন গল্পের উপসংহারে এসে অতৃপ্তি আর কৌতূহলে ঘুরপাক খেতে থাকে। এই ধরনের পরিণতিই আধুনিক ছোটোগল্পের বিশেষত্ব। তাই বলা যায়, ছোটোগল্পের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে ‘বহুরূপী’ সার্থক।
আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলা চতুর্থ পাঠের প্রথম অংশ “বহুরূপী” থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এসব প্রশ্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রায়শই দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের কাজে লেগেছে। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা কোনো বিষয় বুঝতে অসুবিধা হয়, তাহলে টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি সহায়তা করার চেষ্টা করব। এছাড়া, পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না যাতে আপনার প্রিয়জনেরাও এর সুবিধা নিতে পারেন। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন