দশম শ্রেণি – বাংলা – নদীর বিদ্রোহ – অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

নদীর বিদ্রোহ গদ্যাংশটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা।

নদীর বিদ্রোহ গল্পে নদেরচাঁদ পেশায় ছিলেন একজন স্টেশনমাস্টার।

নদেরচাঁদ স্টেশনমাস্টারি করতে এসে 5 দিন তার পরিচিত নদীটিকে দেখতে পায়নি।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।

নদেরচাঁদের দেশের নদীটি ছিল ক্ষীণস্রোতা ও নির্জীব।

নদীকে দেখতে না পেয়ে নদেরচাঁদের অবস্থা ছেলেমানুষের মতো হয়ে গিয়েছিল। সে ছোটো ছেলের মতো উতলা হয়ে উঠেছিল নদীকে দেখার জন্য।

নদেরচাঁদ নদীর ধারে জন্মেছে, নদীর ধারেই মানুষ হয়েছে, নদী যেন তার চিরপরিচিত আপনজন। এই বিষয়টিকেই নদেরচাঁদ নদীর প্রতি তার ভালোবাসার সহজ কৈফিয়ত হিসেবে তুলে ধরতে পারে।

নদেরচাঁদ স্টেশনমাস্টার ছিলেন। তাই সারা দিনরাতে যেসব মেল, প্যাসেঞ্জার ও মালগাড়ি তীব্র গতিতে ছুটে চলে, তাদের গতি নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব ছিল নদেরচাঁদের ওপর।

স্টেশনমাস্টারি করতে এসে নদেরচাঁদের সঙ্গে পরিচয় হওয়া নদীটি ছিল গভীর, প্রশস্ত ও জলপূর্ণ, আর তার দেশের নদীটি ছিল ক্ষীণস্রোতা ও নির্জীব।

নদেরচাঁদের দেশের ক্ষীণস্রোতা নদীটি শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে সে প্রায় কেঁদে ফেলেছিল। দুরারোগ্য ব্যাধিতে পরমাত্মীয় মারা যাওয়ার উপক্রম হলে মানুষ যেভাবে কাঁদে, সেও সেভাবেই কেঁদেছিল।

নদেরচাঁদের দেশের ক্ষীণস্রোতা নদীটি অনাবৃষ্টির বছরে প্রায় শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে সে কেঁদে ফেলেছিল।

30 বছর বয়সে নিজের পেশারত দায়িত্ব কীভাবে পালন করতে হয় এবং আচরণ কেমন হওয়া উচিত তা নদেরচাঁদ বোঝে।

ব্রিজের কাছে এসে নদীর দিকে প্রথমবার তাকিয়ে নদীর উন্মত্ত চেহারা দেখেই নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হয়ে গেল।

নদীর জল বর্ষায় অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল। তাই নদীর স্রোত ব্রিজের ধারকস্তম্ভে বাধা পেয়ে আবর্ত রচনা করছিল।

বৃষ্টির জল পেয়ে নদীর জলপ্রবাহ উন্মত্ত হয়ে উঠেছিল। আর এই উন্মত্ততার জন্যই নদেরচাঁদের নদীর জলপ্রবাহকে জীবন্ত বলে মনে হল।

নদেরচাঁদ তার স্ত্রীকে যে 5 পৃষ্ঠার বিরহ-বেদনাপূর্ণ চিঠিটি লিখেছিল, এখানে সেই চিঠির কথা বলা হয়েছে।

অবিরাম হয়ে চলা বৃষ্টিধারার সঙ্গে সুর মিলিয়ে নদেরচাঁদ তার স্ত্রীকে চিঠি লিখেছিল।

স্ত্রীকে লেখা পুরোনো চিঠিটি নদীর জলস্রোতে ফেলার পর নদেরচাঁদের মনে হল নদীর জীবন্ত জলপ্রবাহ চিঠিটাকে যেন তাড়াতাড়ি লুকিয়ে ফেলেছে।

নদী থেকে উঠে আসা অশ্রুতপূর্ব একটি শব্দের সঙ্গে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ মিশে যেন একটা সংগত পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। ওই শব্দ শুনে নদেরচাঁদের মনে হল তার সর্বাঙ্গ যেন অবশ ও অবসন্ন হয়ে আসছে।

নদীর অবস্থা ভয়ংকর ছিল, নদী যেন রোষে ও ক্ষোভে উন্মত্ত ছিল। নদেরচাঁদ নদী থেকে এক হাত উঁচুতেই বসেছিল। তাই বর্ষার জলে ফুলে ফেঁপে ওঠা নদী যে – কোনো মুহূর্তে বিপদ ঘটাতে পারে, এই ভেবে নদেরচাঁদ ভয় পেয়েছিল।

নদেরচাঁদ নদীকে বিশ্বাস করতে পারেনি তার উন্মত্ত চেহারার জন্য।

ব্রিজ ও মানুষের হাতে গড়া বাঁধ ভেঙে নদী নিজের স্বাভাবিক গতি ফিরে পেতে চায় বলে নদেরচাঁদের মনে হলো।

শুকনো নদী পাঁচ দিনের বৃষ্টির জলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। উন্মত্ত নদীর তীব্র স্রোতযুক্ত জলধারা দেখে নদেরচাঁদ নদীর বিদ্রোহের কারণ বুঝতে পারল।

ব্রিজ ও বাঁধ ভেঙে ফেললেও নদী রেহাই পাবে না বলে নদেরচাঁদের মনে হলো। কারণ, মানুষ আবারও নতুন করে ব্রিজ ও বাঁধ গড়ে তুলে নদীকে বন্দি করবে।

স্টেশনের কাছে নতুন রং করা ব্রিজটির জন্য নদেরচাঁদ গর্ব অনুভব করেছিল।

অন্ধকারে অন্যমনস্কভাবে লাইন ধরে স্টেশনের দিকে যাওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় নদেরচাঁদের মৃত্যু হয়েছিল।

পাঁচ দিন ধরে বৃষ্টির জল পেয়ে নদী যেন ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল, বাঁধ ভেঙে বেরিয়ে আসতে চাইছিল। নদীর এই উন্মত্ত রূপ দেখেই নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল।

নদেরচাঁদ ব্রিজের মাঝামাঝি ইট, সুরকি আর সিমেন্ট দিয়ে গাঁথা ধারকস্তম্ভের শেষপ্রান্তে গিয়ে বসল।

নদেরচাঁদ তার স্ত্রীকে লেখা পত্রখানি নদীর জলে ছিঁড়ে ফেলতে লাগল।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নদীর বিদ্রোহ গল্পে আমরা দেখি, নদেরচাঁদ অনুভব করে নদীর ওপরে ব্রিজ তৈরি করা ও বাঁধ দেওয়ার কারণেই নদী বিদ্রোহ করেছে।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নদীর বিদ্রোহ গল্প থেকে নেওয়া আলোচ্য অংশে ৭ নম্বর ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেনের কথা বলা হয়েছে।