শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা পথের দাবী গল্পটি বাংলা সাহিত্যের একটি অমর কীর্তি। এই গল্পটিতে শরৎচন্দ্র একটি যুগান্তকারী ধারণা তুলে ধরেছেন, তা হলো মানুষের অধিকার। তিনি বলেছেন যে, প্রত্যেক মানুষেরই জীবনের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার, এবং সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। এই অধিকারগুলিকে কেউই হরণ করতে পারে না।
গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র সব্যসাচী মল্লিক একজন সাধারণ মানুষ। তিনি একজন শ্রমিক। তিনি তার জীবনের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেন। তিনি অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তিনি তার অধিকার আদায়ের জন্য প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিতে প্রস্তুত।
![দশম শ্রেণি – বাংলা – পথের দাবী – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর 1 দশম শ্রেণি – বাংলা – পথের দাবী – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2024/01/দশম-শ্রেণি-–-বাংলা-–-পথের-দাবী-–-সামগ্রিক-বিষয়ভিত্তিক-প্রশ্নোত্তর.webp)
পথের দাবী রচনাংশ অবলম্বনে অপূর্বর চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।
- কথামুখ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্বর অনুভবই হয়ে উঠেছে কাহিনির মূল বিষয়। তার চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করা যায় তা হল –
- দেশপ্রেম – অপূর্ব বাংলা দেশের ছেলে এবং সে স্বদেশি ভাবধারায় বিশ্বাসী। নিমাইবাবুর মুখে সব্যসাচীর বর্ণনা শুনে অপূর্বর মনে এই মহান দেশপ্রেমিক সম্পর্কে শ্রদ্ধা ও ভক্তি জেগে ওঠে। তবে রাগ হয় নিমাইবাবুর ওপর। কারণ বাঙালি হয়েও তিনি নিজের দেশের এত বড়ো একজন মুক্তিযোদ্ধাকে গ্রেফতার করতে তৎপর। সব্যসাচী সন্দেহে আটক গিরীশ মহাপাত্রই যে আসলে সব্যসাচী তা অনুমান করতে অপূর্বর দেরি হয়নি। তাই সে নিমাইবাবুকে বলেছে- এ লোকটিকে কোনো কথা জিজ্ঞেস না করেই ছেড়ে দিন, যাকে খুঁজছেন সে যে এ নয়, তার আমি জামিন হতে পারি। পুলিশের কাছে এরকম উক্তি অপূর্বর চরিত্রের দৃঢ়তা এবং দেশপ্রেমকেই তুলে ধরে।
- সাহসী ও প্রতিবাদী স্বভাব – শান্তশিষ্ট হলেও অপূর্ব প্রতিবাদী। সে রামদাসের কাছে পুলিশের সমালোচনা করেছে। এতে অপূর্ব রাজদ্রোহিতার অপরাধে শাস্তি পেতে পারে। বর্মা সাব-ইনস্পেকটরের আচরণের প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে তাই সে এতটুকুও দ্বিধা করেনি।
- ইতিকথা – সবদিক দিয়ে বিচার করে বলা যায়, ‘Doing and Suffering‘-এর ভিত্তিতে অপূর্ব আলোচ্য কাহিনি অংশের মুখ্য চরিত্র।
পথের দাবী রচনাংশ অবলম্বনে নিমাইবাবুর চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।
- কথামুখ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পথের দাবী’ শীর্ষক গল্পাংশে সব্যসাচীকে আশ্রয় করে কাহিনি বিস্তার লাভ করলেও নিমাইবাবুর চরিত্রটি সেখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
- পেশাগত দায়বদ্ধতা – নিমাইবাবু পেশায় পুলিশ অফিসার। তিনি নিজে বাঙালি এবং একইসঙ্গে ভারতীয়। কিন্তু কর্তব্যের খাতিরে ভারতের মুক্তিসংগ্রামের অগ্রদূত সব্যসাচী মল্লিককে ধরতে তিনি সুদুর রেঙ্গুনে এসেছেন। কোনো মোহ বা আবেগই তাঁকে সেই কর্তব্য থেকে সরিয়ে রাখতে পারেনি।
- মানবিকতা – পুলিশের বড়োকর্তা হলেও নিমাইবাবু কঠোর বা নিষ্ঠুর নন। সব্যসাচী সন্দেহে ধৃত গিরীশ মহাপাত্রকে নিয়ে তিনি যে রসিকতা করেছেন তা নিছক রঙ্গতামাশা নয়, এর মধ্য দিয়ে তাঁর চরিত্রের মানবিক গুণও ফুটে উঠেছে। গিরীশ মহাপাত্রের শরীরের প্রতি লক্ষ রেখে তিনি তাকে গাঁজা না খেতে অনুরোধ করেছেন – কিন্তু ক’দিনই বা বাঁচবে,- এই তো তোমার দেহ,-আর খেয়ো না। বুড়োমানুষটার কথা শুনো। অন্যদিকে নিমাইবাবুর ভদ্র, শান্ত, অল্পভাষী স্বভাব তাঁকে শ্রদ্ধেয় করে তুলেছে। এই সমস্ত বিশেষত্বগুলিই কাহিনিতে নিমাইবাবুকে স্বতন্ত্র মর্যাদা দান করেছে।
- ইতিকথা – অপূর্ব তার নিকটাত্মীয় এই মানুষটিকে শ্রদ্ধা না করলেও নিজস্ব চরিত্র বৈশিষ্ট্যে নিমাইবাবু উজ্জ্বল।
স্বল্প পরিসরে হলেও ‘পথের দাবী’ রচনাংশে রামদাস তলওয়ারকর চরিত্রটি কীভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে লেখো।
- কথামুখ – রামদাসের চরিত্রটি ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অতি অল্প পরিসর জুড়ে থাকলেও চরিত্রবৈশিষ্ট্যে সে উল্লেখযোগ্য ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
- বিচক্ষণতা ও বন্ধুপ্রীতি – রামদাস তলওয়ারকর একজন শিক্ষিত মারাঠি যুবক। অপূর্বর অন্যমনস্কতা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। সে ভেবেছিল বাড়ি থেকে কোনো দুঃসংবাদের চিঠি পেয়েছে সে। পরে অবশ্য তার ভুল ভেঙে যায়। সে বুঝতে পারে সব্যসাচীর প্রতি অগাধ ভক্তিই অপূর্বকে অন্যমনস্ক করে তুলেছে। তবে সেই ভক্তির প্রত্যক্ষ প্রকাশ বিপদ ডেকে আনতে পারে ভেবে সে অপূর্বকে সাবধান করে দিয়েছিল।
- সহমর্মিতা – গল্পে রামদাস ছিল অপূর্বর সহমর্মী। ফিরিঙ্গি ছেলেদের অত্যাচার, স্টেশনমাস্টারের অমানবিক আচরণের কথা যখন অপূর্ব বলছিল, তখন সমবেদনায় রামদাসের ফরসা মুখ লাল হয়ে উঠেছিল। তারও দু-চোখ ছলছল করে উঠেছিল।
- স্বদেশিকতা – গাড়ি ছাড়ার মুহূর্তে অপূর্ব যখন গিরীশ মহাপাত্ররূপী সব্যসাচীর পিছনে পুলিশের ঘুরে বেড়ানোর কথা বলে তখন রামদাসকে শঙ্কিত হয়ে উঠতে দেখা যায়। লেখকের বর্ণনায় সেই ছবি ধরা পড়েছে এইভাবে – এই মুহূর্তকালের মধ্যে রামদাসের প্রশস্ত উজ্জ্বল ললাটের উপরে যেন কোন এক অদৃশ্য মেঘের ছায়া আসিয়া পড়িয়াছে এবং সেই সুদূর দুর্নিরীক্ষ্য লোকেই তাহার সমস্ত মনশ্চক্ষু একেবারে উধাও হইয়া গিয়াছে।
- ইতিকথা – ‘পথের দাবী’ রচনাংশে খুব স্বল্প পরিসরেও মার্জিত, মানবিক চরিত্রের আলোয় রামদাস ভাস্বর হয়ে উঠেছে।
তোমাদের পাঠ্যাংশ ‘পথের দাবী’-তে গিরীশ মহাপাত্র যদি সত্যিই সব্যসাচী হন, তবে তাঁর সম্পর্কে তোমার মনোভাব ব্যক্ত করো।
- প্রাককথন – ‘পথের দাবী’ রচনাংশে উল্লিখিত গিরীশ মহাপাত্রই সব্যসাচী কি না, তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। সমগ্র উপন্যাসের কাহিনি অনুসারে গিরীশ মহাপাত্রই সব্যসাচী। কিন্তু আলোচ্য আংশিক কাহিনিতে বোঝার কোনো উপায় নেই যে উদ্দিষ্ট ব্যক্তিই সব্যসাচী। এমনকি, অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু বা জগদীশবাবুও তা বুঝতে পারেননি। গিরীশ মহাপাত্রকে ‘পলিটিক্যাল সাসপেক্ট’ সব্যসাচী মল্লিক হিসেবে আটক করা হলেও সে বুদ্ধিবলে নিজেকে মুক্ত করে নিতে পেরেছিল। অবশ্য অপূর্ব তার দূরদৃষ্টির সাহায্যে বুঝেছিল গিরীশ মহাপাত্রই সব্যসাচী। ইংরেজের পুলিশ তাকে ধরতে না পারায় সে উল্লসিত হয়েছিল।
- গিরীশ মহাপাত্ররূপী সব্যসাচী – গিরীশ মহাপাত্রের বেশভূষা নিমাইবাবু-সহ সমগ্র পুলিশদলকে বিভ্রান্ত করেছে। সদা সতর্ক ইংরেজ পুলিশের চোখে ধূলো দেওয়ার এমন কৌশল ছদ্মবেশ ধারণ তাঁর দক্ষতারই পরিচয় দেয়। সেই কারণেই তিনি মাথার চুল ছেঁটেছেন অদ্ভূতভাবে। কালচার বা আচার-ব্যবহার পালটাতে পারলে পুলিশ তাঁকে চিনতে পারবে না-এই ভেবে সব্যসাচী তাঁর সমগ্র কালচারটাই পালটে ফেলেছিলেন। তাঁর রোগা জীর্ণ শরীর তাঁকে সাহায্য করেছে। স্বদেশের মুক্তির জন্য দেশবিদেশে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে শরীরের দিকে নজর দেওয়ার কোনো অবকাশ তাঁর ছিল না। তবে অমর প্রাণশক্তিটুকুর জন্যই সব্যসাচীকে মৃত্যু অথবা ইংরেজের পুলিশ স্পর্শ করতে পারে না।
পথের দাবী রচনাংশটির নামকরণ কতদূর সার্থক হয়েছে বিচার করো।
নামকরণের মাধ্যমেই যে-কোনো সাহিত্যের অন্তর্নিহিত বিষয় বা ভাব তার পাঠকের কাছে ফুটে ওঠে। সাহিত্যকর্মের নামকরণ সাধারণত বিষয়বস্তু, চরিত্র বা ভাব অনুযায়ী আবার কখনও-বা ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে থাকে।
এখানে শরৎচন্দ্রের লেখা পথের দাবী উপন্যাসের একটি নির্বাচিত অংশ আমাদের পাঠ্য হিসেবে নেওয়া হয়েছে। পাঠ্যাংশে আমরা গিরীশ মহাপাত্র চরিত্রটি পাই, যে আসলে একজন বিপ্লবী এবং স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। তার আসল নাম সব্যসাচী মল্লিক, যে বিভিন্ন ছদ্মবেশে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে বেরায়। দেশকে স্বাধীন করাই সব্যসাচীর জীবনের মূল লক্ষ্য। মূল উপন্যাসে সব্যসাচী মল্লিকের একটি সংগঠন ছিল যার নাম পথের দাবী। এই সংগঠনে সব্যসাচী ছাড়া আরও কয়েকজন ছিলেন যারা একত্র হয়ে দেশকে কীভাবে স্বাধীন করা যায় এবং এই স্বাধীনতালাভের জন্য কোন্ পথে আন্দোলন করা যায়, সেইসব বিষয়ে আলোচনা করতেন। এই সংগঠনের মূল লক্ষ্যই ছিল দেশকে পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করা এবং স্বাধীনতার জন্য একজোট হয়ে আন্দোলন করা। এই সংগঠনের কার্যকলাপকে কেন্দ্র করেই উপন্যাসটি এগিয়েছে। আর এই সংগঠনের মূল কাণ্ডারি ছিলেন সব্যসাচী মল্লিক। সংগঠনটির নাম অনুযায়ী মূল উপন্যাসের নামকরণ করা হয়েছে, আর আমাদের পাঠ্যাংশটি মূল উপন্যাসেরই একটি নির্বাচিত অংশ। মূল উপন্যাসটিতেও স্বাধীনতার ও বিদেশি শাসকের অত্যাচার থেকে মুক্তির দাবি প্রাধান্য পেয়েছে। তাই মূল উপন্যাসের নাম অনুযায়ী আমাদের পাঠ্যাংশের এই নির্বাচিত অংশটির নামও ‘পথের দাবী’ রাখা হয়েছে। সেদিক থেকে ‘পথের দাবী’ নামকরণটি সার্থক ও যথাযথ হয়েছে বলা যায়।
পথের দাবী রচনাংশে অপূর্বর স্বদেশপ্রেমের যে পরিচয় লিপিবদ্ধ হয়েছে, তা নিজের ভাষায় লেখো।
অথবা, আমার মা, আমার ভাই-বোনকে যারা এই-সব সহস্র কোটি অত্যাচার থেকে উদ্ধার করতে চায় তাদের আপনার বলে ডাকবার যে দুঃখই থাক আমি আজ থেকে মাথায় তুলে নিলাম। – এই উক্তির আলোকে বক্তার দেশপ্রেমের পরিচয় দাও।
- শুরুর কথা – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব চরিত্রটির হৃদয়ে স্বদেশ ও স্বজনের প্রতি অনুরাগ থেকেই বোঝা যায় তার স্বদেশপ্রেম কতখানি অকৃত্রিম।
- স্বদেশ ও স্বজনের প্রতি অনুরাগ – নিজের বাড়িতে চুরির সংবাদ জানাতে থানায় এসে অপূর্ব দেখেছিল সব্যসাচী সন্দেহে ধৃত গিরীশ মহাপাত্রের খানাতল্লাশির ঘটনা। ‘সব্যসাচী’ নামটি শুনেই অপূর্বর মন বিচলিত হয়েছিল। গিরীশ মহাপাত্রকে সব্যসাচী ভেবেই সে মনে মনে প্রার্থনা করেছে পুলিশ যেন ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার না করে। তাই তাকে বলতে শুনি – কাকাবাবু, এ লোকটিকে আপনি কোনো কথা জিজ্ঞেস না করেই ছেড়ে দিন, যাকে খুঁজছেন সে যে এ নয়, তার আমি জামিন হতে পারি। আবার নিমাইবাবুর কার্যকলাপকেও সে সমর্থন করেনি। আমার বড়ো লজ্জা এই যে, এদের যিনি কর্তা তিনি আমার আত্মীয়, আমার পিতার বন্ধু।
- দেশপ্রেম – অপূর্বর দেশপ্রেমের যথার্থ পরিচয় পাওয়া যায় রামদাসের সঙ্গে কথোপকথনের মধ্যে। সব্যসাচী সম্পর্কে তার শ্রদ্ধা-ভক্তি চেপে রাখতে না পেরে সে বলেছে – যাঁকে তিনি দেশের টাকায়, দেশের লোক দিয়ে শিকারের মতো তাড়া করে বেড়াচ্ছেন তিনি ঢের বেশি আমার আপনার।
- আবেগপ্রবণ – কোনো কোনো সময় অপূর্ব খুব আবেগময় হয়ে পড়েছে। রাজরোষে পড়তে হবে জেনেও সে মনের ক্ষোভ ও বেদনাকে চেপে রাখতে পারেনি।
বিদেশি সাহেবের কাছে অপূর্বর অপমানিত ও লাঞ্ছিত হওয়ার যে দুটি ঘটনার বর্ণনা রয়েছে, তা লেখো।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশে দুটি ঘটনা দেখি যেখানে ইংরেজরা অপূর্বকে অপমান করেছে।
- প্রথম ঘটনা – একবার অপূর্বকে বিনা দোষে দণ্ডভোগ করতে হয়েছে। স্টেশনে একবার কিছু ফিরিঙ্গি ছেলে কোনো দোষ ছাড়াই লাথি মেরে তাকে প্ল্যাটফর্ম থেকে বার করে দেয়। অপূর্ব যখন সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে যায় তখন সাহেব স্টেশনমাস্টার তাকে ভারতীয় বলে অপমান করে কুকুরের মতো দূর করে দেয়। নিজের দেশে এইভাবে লাঞ্ছিত হওয়ার দুঃখ অপূর্ব কোনোদিন ভুলতে পারেনি।
- দ্বিতীয় ঘটনা – আর-একবার রেলপথে অপূর্ব রেঙ্গুন থেকে ভামো নগরের উদ্দেশে যাত্রা করছিল। অপূর্ব ছিল প্রথম শ্রেণির যাত্রী। সারাদিনের সমস্ত কাজকর্ম শেষ করে অপূর্ব ভেবেছিল প্রথম শ্রেণির যাত্রী হওয়ায় সে শান্তিতে ঘুমোবে। কিন্তু বারবার পুলিশের লোক এসে অপূর্বর ঘুম ভাঙিয়ে তার নাম-ঠিকানা লিখে নিয়ে যায়। একবার সে বিরক্ত হয়ে প্রতিবাদ করলে সাব-ইনস্পেকটর তাকে কটুকণ্ঠে বলে যে, এসব তাকে সহ্য করতেই হবে কারণ সে ইউরোপিয়ান নয়। অপূর্ব যখন বলে সে প্রথম শ্রেণির যাত্রী, তার সঙ্গে এইরকম কিছু করা অনুচিত, তখন ইনস্পেকটর জবাব দেয়, এই সমস্ত নিয়ম রেলের কর্মচারীর জন্য, তার জন্য নয়। শুধু ভারতীয় বলেই তাকে এইভাবে অপমানিত হতে হয়েছিল।
পথের দাবী গল্পটি একটি সমাজতান্ত্রিক গল্প। এই গল্পে শরৎচন্দ্র শ্রমিক শ্রেণির অধিকারের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, শ্রমিক শ্রেণিও সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাদের অধিকারগুলিকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এই গল্পটি আজও প্রাসঙ্গিক। এই গল্পটি আমাদের শিখিয়ে দেয় যে, প্রত্যেক মানুষেরই অধিকার আছে। এই অধিকারগুলিকে আমরা কখনই হারাবো না।
মন্তব্য করুন