এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

Madhyamik Bengali Question Paper 2019 With Answer

আজকের এই আর্টিকেলে, আমরা মাধ্যমিক পরীক্ষার পুরাতন বছরের প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করব। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে, শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক পরীক্ষায় আগের বছর কী কী প্রশ্ন এসেছিল সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন।

Table of Contents

এই আর্টিকেলে আমরা মূলত মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্নপত্র ২০১৯ সহ উত্তর নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক ২০১৯ সালের প্রশ্নগুলি আগামী বছরের পরীক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, আপনারা মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা দেওয়ার আগে মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্নপত্র ২০১৯ সহ উত্তরটি ভালো করে দেখে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবেন।

Madhyamik Bengali Question Paper 2019 With Answer

Madhyamik Bengali Question Paper 2019 With Answer

১. সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো : [১৭×১ = ১৭]

১.১ তপনের মেসোমশাই কোন্ পত্রিকায় তপনের লেখা ছাপানোর কথা বলেছিলেন?

(ক) ধ্রুবতারা

(খ) শুকতারা

(গ) সন্ধ্যাতারা

(ঘ) রংমশাল

উত্তরঃ (গ) সন্ধ্যাতারা

১.২ নদের চাঁদকে পিষিয়া দিয়া চলিয়া গেল –

(ক) ৭ নং ডাউন প্যাসেঞ্জার

(খ) ৫ নং ডাউন প্যাসেঞ্জার

(গ) ৭ নং আপ প্যাসেঞ্জার

(ঘ) ৫ নং আপ প্যাসেঞ্জার।

উত্তরঃ (ক) ৭ নং ডাউন প্যাসেঞ্জার

১.৩ অপূর্বর পিতার বন্ধু হলেন –

(ক) জগদীশবাবু

(খ) রামদাস

(গ) নিমাইবাবু

(ঘ) গিরীশ মহাপাত্র

উত্তরঃ (গ) নিমাইবাবু

১.৪ “যেখানে ছিল শহর/সেখানে ছড়িয়ে রইল” – কী ছড়িয়ে রইল?

(ক) পায়ের দাগ

(খ) কাঠকয়লা

(গ) গোলাপি গাছ

(ঘ) প্রাচীন জলতরঙ্গ

উত্তরঃ (খ) কাঠকয়লা

১.৫ আদিম যুগে স্রষ্টার কার প্রতি অসন্তোষ ছিল?

(ক) দয়াময় দেবতার প্রতি

(খ) কবির সংগীতের প্রতি

(গ) নিজের প্রতি

(ঘ) ধরিত্রীর প্রতি

উত্তরঃ (গ) নিজের প্রতি

১.৬ কোনটি জয় গোস্বামীর লেখা কাব্যগ্রন্থ?

(ক) বাবরের প্রার্থনা

(খ) অগ্নিবীণা

(গ) রূপসী বাংলা

(ঘ) পাতার পোষাক

উত্তরঃ (ঘ) পাতার পোষাক

১.৭ রাজশেখর বসুর ছদ্মনাম –

(ক) বনফুল

(খ) শ্রীপান্থ

(গ) পরশুরাম

(ঘ) রূপদর্শী

উত্তরঃ (গ) পরশুরাম

১.৮ “বাংলা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধাদিতে আর একটি দোষ” প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক কোন্ প্রবাদের উল্লেখ করেছেন?

(ক) অরণ্যে রোদন

(খ) অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী

(গ) হাতের পাঁচ

(ঘ) হ-য-ব-র-ল

উত্তরঃ (খ) অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী

১.৯ চিনারা চিরকালই লেখার জন্য ব্যবহার করে আসছে –

(ক) তুলি

(খ) ব্রোঞ্জের শলাকা

(গ) হাড়

(ঘ) নল-খাগড়া 

উত্তরঃ (ক) তুলি

১.১০ ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের সম্পর্ককে বলে –

(ক) সমাস

(খ) কারক

(গ) প্রত্যয়

(ঘ) বিভক্তি

উত্তরঃ (খ) কারক

১.১১ ‘কথটা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল’ – নিম্নরেখ পদটি –

(ক) সম্বোধন পদ

(খ) কর্তৃকারক

(গ) সম্বন্ধ পদ

(ঘ) নিমিত্তকারক

উত্তরঃ (গ) সম্বন্ধ পদ

১.১২ যে সমাসে সমস্যমান পদ দুটির উভয় পদই বিশেষ্য ও পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে বলে –

(ক) তৎপুরুষ সমাস

(খ) কর্মধারয় সমাস

(গ) দ্বন্দু সমাস

(ঘ) অব্যয়ীভাব সমাস 

উত্তরঃ (খ) কর্মধারয় সমাস

১.১৩ কৃত্তিবাস রামায়ণ রচনা করেন-নিম্নরেখ পদটি কোন সমাসের উদাহরণ?

(ক) কর্মধারয় সমাস

(খ) তৎপুরুষ সমাস

(গ) বহুব্রীহি সমাস

(ঘ) দ্বন্দ্ব সমাস

উত্তরঃ (গ) বহুব্রীহি সমাস

১.১৪ ‘আমাদের মধ্যে যারা ওস্তাদ তারা ওই কালো জলে হরতকী ঘষত।’ – বাক্যটি কোন্ শ্রেণীর?

(ক) সরল বাক্য

(খ) জটিল বাক্য

(গ) যৌগিক বাক্য

(ঘ) মিশ্র বাক্য

উত্তরঃ (খ) জটিল বাক্য

১.১৫ বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে—অর্থগত দিক থেকে এটি –

(ক) না-সূচক বাক্য

(খ) সন্দেহবাচক বাক্য

(গ) প্রশ্নবাচক বাক্য

(ঘ) প্রার্থনাসূচক বাক্য

উত্তরঃ (গ) প্রশ্নবাচক বাক্য

১.১৬ ক্রিয়ার অর্থ প্রাধান্য পায় —

(ক) কর্তৃবাচ্যে

(খ) ভাববাচ্যে

(গ) কর্মবাচ্যে

(ঘ) কর্ম-কর্তৃবাচ্যে

উত্তরঃ (খ) ভাববাচ্যে

১.১৭ তাকে টিকিট কিনতে হয়নি-বাক্যটির কর্তৃবাচ্যের রূপ হল —

(ক) তার টিকিট কেনা হয়নি

(খ) তিনি টিকিট কেনেননি

(গ) তাঁর দ্বারা টিকিট ক্রীত হয়নি

(ঘ) তিনি বিনা টিকিটে চলেছেন

উত্তরঃ (খ) তিনি টিকিট কেনেননি

কম-বেশি ২০টি শব্দে প্রশ্নগুলির উত্তর দাও : [১৯×১=১৯]

২.১ যে-কোনো চারটি প্রশ্নের উত্তর দাও : [৪×১=৪]

২.১.১ ‘অদল-বদলের গল্প’ গ্রাম প্রধানের কানে গেলে তিনি কী ঘোষণা করেছিলেন?

উত্তরঃ গ্রামপ্রধান ঘোষণা করেন যে, গ্রামের সকলে অমৃতকে ‘অদল’ এবং ইসাবকে ‘বদল’ বলে ডাকবে।

২.১.২ “সপ্তাহে বড়োজোর একটা দিন বহুরূপী সেজে পথে বের হন হরিদা” – ‘বহুরূপী’ কাকে বলে?

উত্তরঃ যে নানা রূপ ধারণ করে বিবিধ বেশে সজ্জিত হয় এবং উপার্জন করে।

২.১.৩ ভামো যাত্রায় ট্রেনে অপূর্বের কে কে সঙ্গী হয়েছিল?

উত্তরঃ একজন আরদালি বা পিয়োন এবং অফিসের একজন হিন্দুস্থানি ব্রাহ্মণ পেয়াদা।

২.১.৪ “সূচিপত্রেও নাম রয়েছে” – সূচীপত্রে কী লেখা ছিল?

উত্তরঃ ‘প্রথম দিন’ (গল্প) শ্রীতপন কুমার রায়।

২.১.৫ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম কী?

উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।

২.২ যে-কোনো চারটি প্রশ্নের উত্তর দাও : [৪×১=৪]

২.২.১ “ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে!” – কী ছড়ানো রয়েছে?

উত্তরঃ ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে শিশুদের শব।

২.২.২ “ছদ্মবেশী অম্বুরাশি-সুতা” কেন ইন্দ্রজিতের কাছে এসেছিলেন?

উত্তরঃ বীরবাহুর মৃত্যু সংবাদ ও রাজা রাবণের যুদ্ধসজ্জার সংবাদ মেঘনাদকে দেওয়ার জন্য অনুবাশি-সুতা মেঘনাদের ধাত্রীর ছদ্মবেশে এসেছিল।

২.২.৩ “সখী সবে আজ্ঞা দিল” – বক্তা তার সখীদের কী আজ্ঞা দিয়েছিলেন?

উত্তরঃ অচেতন পাঁচজন কন্যাকে বস্ত্র দ্বারা ঢেকে উদ্যানের মাঝে নিয়ে যেতে।

১২.২.৪ ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি কে বাংলায় তরজমা করেছেন?

উত্তরঃ ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি নবারুণ ভট্টাচার্য বাংলায় তরজমা করেছেন।

২.২.৫ “প্রলয় বয়েও আসছে হেসে”-‘প্রলয়’ বহন করেও হাসির কারণ কী?

উত্তরঃ প্রলয় বহন করেও হাসির কারণ হল প্রলয়ের মধ্যেই সৃষ্টির উল্লাস রয়েছে ।

২.৩ যে-কোনো তিনটি প্রশ্নের উত্তর দাও: [৩x১=৩]

১২.৩.১ “সোনার দোয়াত কলম যে সত্যই হতো” তা লেখক কীভাবে জেনেছিলেন?

উত্তরঃ সুভো ঠাকুরের বিখ্যাত দোয়াত সংগ্রহ দেখতে গিয়ে।

২.৩.২ দোকানদার লেখককে কলম বিক্রি করার আগে কী জাদু দেখিয়েছিলেন?

উত্তরঃ দোকানদার কলমের মুখ থেকে খাপটা খুলে একটা কাঠের বোর্ডের ওপর সেটা জোরে ছুঁড়ে দিলেন। কলমের নিবটা এতই ভালো ছিল যে সেটা ছুঁড়ে ফেলেও অক্ষত রইল।

২.৩.৩ ছেলেবেলায় রাজশেখর বসু কার লেখা জ্যামিতি বই পড়তেন?

উত্তরঃ ছেলেবেলায় রাজশেখর বসু ব্রহ্মমোহন মল্লিকের লেখা বাংলা জ্যামিতি বই পড়তেন।

২.৩.৪ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কবে পরিভাষ সমিতি নিযুক্ত করেছিলেন?

উত্তরঃ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৩৬ সালে পরিভাষা সমিতি নিযুক্ত করেছিলেন।

২.৪ যে-কোনো আটটি প্রশ্নের উত্তর দাও : [৮×১=৮]

২.৪.১ বিভক্তি ও অনুসর্গের একটি পার্থক্য লেখো।

উত্তরঃ

বিভক্তিঅনুসর্গ
অনুসর্গের পৃথক অর্থ আছে।বিভক্তির পৃথক অর্থ নেই।

২.৪.২ ‘মন্দিরে বাজছিল পূজার ঘণ্টা’-নিম্নরেখ পদটির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করো।

উত্তরঃ নিম্নরেখ পদটি অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি ।

২.৪.৩ ব্যাসবাক্যসহ একটি দ্বন্দ্বসমাসের উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ ব্যাসবাক্যসহ একটি দ্বন্দ্বসমাসের উদাহরণ হল পিতা ও মাতা = পিতামাতা

ব্যাসবাক্য = পিতা ও মাতা

দ্বন্দ্বসমাস = পিতামাতা

২.৪.৪ ‘মেঘে ঢাকা’ শব্দটির ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ‘মেঘে ঢাকা’ শব্দটির ব্যাসবাক্য = মেঘের দ্বারা ঢাকা

‘মেঘে ঢাকা’ শব্দটির ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম = করণ তৎপুরুষ

২.৪.৫ বিধেয় প্রসারকের একটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ বিধেয় প্রসারকের একটি উদাহরণ হল – রাম গান গাইলো।

১২.৪.৬ ‘ঠিক ইসাবের মতো জামাটি না পেলে ও স্কুলে যাবে না।’- যৌগিক বাক্যে পরিবর্তন করো।

উত্তরঃ ঠিক ইসাবের মতো জামাটি না পেলে ও কিন্তু স্কুলে যারে না।

২.৪.৭ কর্তৃবাচ্য কাকে বলে?

উত্তরঃ যে বাক্যে কর্তার প্রাধান্য থাকে এবং ক্রিয়া কর্তার পুরুষের অনুগামী হয় তাকে বলে কর্তৃবাচ্য।

২.৪.৮. ‘তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।’ – ভাববাচ্যে পরিবর্তন করো।

উত্তরঃ তাদের আর স্বপ্ন দেখা হলো না।

২.৪.৯. অলোপ সমাস কী?

উত্তরঃ সমাসনিষ্পন্ন হওয়ার পরেও পূর্বপদের বিভক্তিচিহ্ন লোপ না পেয়ে, সমস্যমান পদের মতো থেকে গেলে, তাকে অলোপ সমাস বলে।

২.৪.১০ সে তখন যেতে পারবে না। – হাঁ-বাচক বাক্যে পরিবর্তন করো।

উত্তরঃ সে তখন যেতে অপারগ।

৩. প্রসঙ্গ নির্দেশসহ কম-বেশি ৬০টি শব্দে উত্তর দাও : [৩+৩ = ৬]

৩.১ যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও: [১×৩ = ৩]

৩.১.১ “যে ভয়ঙ্কর আহ্লাদটা হবার কথা, সে আহ্লাদ খুঁজে পায় না ।’—’আহ্লাদ’ হবার কথা ছিল কেন? ‘আহ্লাদ খুঁজে’ না পাওয়ার কারণ কী?

উত্তরঃ

আহ্লাদ হবার কারণ – তপনের লেখা গল্প সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় প্রকাশিত হলে লেখক হিসেবে তার নাম ছাপা হবে-এ কথা ভেবেই তপনের আহ্লাদ হওয়ার কথা ছিল।

আহ্লাদ না-হওয়ার কারণ – তপনের ছোটোমেসোর সহায়তায় সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তার গল্প প্রকাশিত হলে চারিদিকে সবাই মেসোর মহত্ত্বের কথাই বলতে থাকে। মেসো না থাকলে কোনোদিনই সন্ধ্যাতারা পত্রিকার সম্পাদক তপনের লেখা ছুঁয়েও দেখত না-এরকম কথাও অনেকে বলে। এইসব কথার মাঝখানে আসল যে লেখক, সে-ই যেন কোথাও হারিয়ে যায়। তপনের যেন কোনো কৃতিত্বই নেই। এইসব দেখে লেখা ছেপে আসার পর যে আহ্লাদ হওয়া উচিত ছিল তা হয় না তপনের।

৩.১.২ “নিজের এই পাগলামিতে যেন আনন্দই উপভোগ করে।” — কার কথা বলা হয়েছে? তার ‘পাগলামিটি’ কী?

উত্তরঃ

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – মানিক বন্দ্যোপাদ্যায় ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পের উল্লিখিত অংশে নদেরচাঁদের কথা বলা হয়েছে।

পাগলামির পরিচয় – নদীর সঙ্গে নদেরচাঁদের শৈশব থেকেই সখ্য। কর্মক্ষেত্রে এসেও তার নদীর প্রতি আকর্ষণ একটুও কমেনি। তাই প্রবল বৃষ্টির কারণে পাঁচ দিন নদীকে দেখতে না পেয়ে সে ‘ছেলেমানুষের মতো’ আকুল হয়ে ওঠে। বৃষ্টি একটু থামলেই নদীর দিকে যেতে শুরু করে। নদীর প্রতি এই আকুলতাই ছিল তার ‘পাগলামি’, যার অর্থ সে নিজেকে বুঝতে পারে না।

৩.২ যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও।

৩.২.১ “অতি মনোহর দেশ” – এই ‘মনোহর দেশে’র সৌন্দর্যের পরিচয় দাও।

উত্তরঃ

মনোহর দেশ – পদ্মাবতীর মাঞ্জস সমুদ্রের ঢেউর দ্বারা জলের মধ্যে যে ‘দিব্য পুরী’-তে গিয়ে পৌঁছোয় তাকেই ‘মনোহর দেশ’ বলা হয়েছে।

মনোহর বলার কারণ – কবির বর্ণনানুসারে এই দিব্য পুরী অতি মনোহর। কেন-না সেখানে কোনো দুঃখকষ্ট নেই; আছে শুধু সত্যধর্ম এবং সদাচার। সেখানে আছে একটি পর্বত এবং নানা ফুলে ভরা অপূর্ব এক উদ্যান। সেখানকার গাছগুলিতে নানা ফল ও ফুলের সমারোহ। একদিকে প্রকৃতির শোভা, অন্যদিকে সুস্থ জীবনাদর্শ দেশটিকে মনোহর করে তুলেছিল।

৩.২.২ “অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো” – কবি কোথায় অস্ত্র রাখতে বলেছেন? তাঁর একথা বলার কারণ কী?

উত্তরঃ

অস্ত্র রাখার স্থান – কবি গানের দুটি পায়ে অস্ত্র রাখতে বলেছেন।

এ কথা বলার কারণ – জয় গোস্বামী তাঁর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় যুদ্ধবাজ মানুষদের উদ্দেশে এই আহ্বান জানিয়েছেন। ক্ষমতার নেশায় মেতে ওঠা মানুষ নিজের শ্রেষ্ঠত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে হাতে তুলে নেয় অস্ত্র। অস্ত্র হিংস্রতার প্রতীক। মানুষের পৃথিবীতে অস্ত্রের কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ অস্ত্রই সভ্যতার শেষ কথা নয়। তার বদলে চাই গান যা সাম্যের আর সুন্দরের কথা বলে। তাই কবি অস্ত্র ফেলে গানকেই জীবনযুদ্ধের হাতিয়ার করতে বলেছেন। এখানে কবির মানবতাবাদী মনোভাবটিই প্রকাশিত।

৪. কম-বেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও :

৪.১ ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্প অবলম্বনে নদীর প্রতি নদের চাঁদের অকৃত্রিম ভালোবাসার পরিচয় দাও।

উত্তরঃ

জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদের জন্ম থেকেই যেন নদী তার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে। তাই বর্ষায় পাঁচ দিন নদীকে দেখতে না পেলে তার মন ছটফট করত, ছেলেমানুষের মতো উৎসুক হয়ে উঠত সে নদীর দেখা পাওয়ার জন্য।

জীবনের অতিবাহক ও পরমাত্মীয় – নদীর ধারেই তার শৈশব, কৈশোর এবং যৌবন কেটেছে। স্টেশনমাস্টারের কাজ নিয়ে এসে তার পরিচয় হয় এক প্রশস্ত ও জলপূর্ণ এক নদীর সঙ্গে। নদীটিকে সে যেমন ভালোবেসেছিল তেমনই সে তার দেশের ক্ষীণস্রোতা নির্জীব নদীটিকেও নিজের পরমাত্মীয়ারূপে ভালো বেসেছিল। অনাবৃষ্টিতে শুকিয়ে যাওয়া নদীর জন্য ছেলেবেলায় সে এমনভাবে কেঁদেছিল যেন কঠিন রোগে তার কোনো পরমাত্মীয়া মৃত্যুমুখে পড়েছে।

খেলায় মেতে ওঠা – বর্ষার জলে তার কর্মস্থলের কাছে অবস্থিত পরিপুষ্ট নদীটির উচ্ছল আনন্দের ছোঁয়া নদেরচাঁদের মনেও লেগেছিল। সেই নদীর পঙ্কিল জলস্রোতের আবর্তে সে তার স্ত্রীকে লেখা চিঠি ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলে এক অদ্ভুত খেলায় মেতে উঠেছিল, তার মনে হয়েছিল নদী যেন সেই চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের স্রোতের গভীরে তা লুকিয়ে ফেলছে।

বন্দিদশা থেকে মুক্তি কামনা – বাঁধ আর ব্রিজের মধ্যে বন্দি থাকা নদীর মুক্তিলাভের কামনা করেছিল নদেরচাঁদ। নদীর বন্দিদশা নদেরচাঁদকেও নিদারুণ কষ্ট দিয়েছিল।

উপসংহার – এইভাবে নদী কখনও নদের চাঁদের পরমাত্মীয়, কখনও-বা বন্ধু হয়ে উঠেছিল। কিন্তু নদীর কথা ভাবতে ভাবতে এক সময় অজান্তেই চলন্ত ট্রেন পিষে দিয়েছিল নদের চাঁদকে। নদেরচাঁদ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে নদীর প্রতি তার ভালোবাসার দাম চুকিয়ে দিয়ে গিয়েছিল।

৪.২ “অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না।” – হরিদা কী ভুল করেছিলেন? অদৃষ্ট ক্ষমা না করার পরিণাম কী?

উত্তরঃ

হরিদার ভুল – ‘বহুরূপী’ গল্পে হরিদা বিরাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন অর্থ উপার্জনের জন্য। হরিদার বেশভূষা, কথাবার্তায় জগদীশবাবু এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি ‘বিরাগী’কে আতিথ্য গ্রহণের অনুরোধ জানান। এমনকি বিদায়ের সময়ে একশো টাকা প্রণামীও দিতে চান। কিন্তু উদাসীনভাবে হরিদা সে টাকা প্রত্যাখ্যান করে চলে যান। যাওয়ার সময়ে বলে যান – “আমি যেমন অনায়াসে ধুলো মাড়িয়ে চলে যেতে পারি, তেমনই অনায়াসে সোনাও মাড়িয়ে চলে যেতে পারি।” সন্ন্যাসী চরিত্রের সঙ্গে তিনি এতটাই একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন যে, চরিত্রের ‘ঢং নষ্ট হবে’ বলে হরিদা টাকা নেননি। বিস্মিত গল্পকথক এটাকেই হরিদার ‘ভুল’ বলেছেন।

পরিণতি – অভাবী হরিদার ভাগ্য হরিদাকে সঙ্গ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত সততা ও আদর্শবোধের কারণে হরিদা ভাগ্যের সহায়তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। যা নিশ্চিত করে দিয়েছে যে অভাব কখনও হরিদাকে ছেড়ে যাবে না। তার ভাতের হাঁড়িতে মাঝে মধ্যে শুধু জলই ফুটবে, তাতে চালের জোগান থাকবে না। কথকের মনে হয়েছে। অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুলকে ক্ষমা করবে না।

৫. কম-বেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও :

৫.১ “চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে।” – ‘তোমার’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? তার ‘অপমানিত ইতিহাসের’ সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তরঃ

যার উদ্দেশ্যে এ কথা বলা – ‘আফ্রিকা’ কবিতায় সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপীয় শক্তিগুলি আফ্রিকার অপমানিত ইতিহাসে ‘চিরচিহ্ন’ দিয়ে গিয়েছিল।

অপমানিত ইতিহাসে চিরচিহ্ন মুদ্রণ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘আফ্রিকা’ কবিতায় আফ্রিকার ওপর সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের অত্যাচার ও শোষণ-বঞ্চনার কাহিনিকে বর্ণনা করেছেন। প্রাকৃতিকভাবে দুর্গম আফ্রিকা দীর্ঘসময় ইউরোপীয় শক্তিগুলির নজরের বাইরে ছিল। কিন্তু উনিশ শতকে ইউরোপীয়রা আফ্রিকায় উপনিবেশ স্থাপন শুরু করে। এই শতকের শেষে প্রায় পুরো আফ্রিকা ইউরোপের বিভিন্ন দেশের উপনিবেশে পরিণত হয়। এইসব তথাকথিত সভ্য রাষ্ট্রশক্তি আফ্রিকার মানুষদের ওপরে নির্মম অত্যাচার চালাত। সেখানকার মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। তৈরি হয় মানবিকতার লাঞ্ছনার কাহিনি। আফ্রিকার মানুষকে ক্রীতদাস হিসেবে সরবরাহ করা হতে থাকে। আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদও হয়ে ওঠে আকর্ষণের কেন্দ্র। তাদের নির্লজ্জ লোভ যেন বর্বরতার রূপ ধরে আত্মপ্রকাশ করেছিল। ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল আফ্রিকার মানুষ। তাদের রক্ত আর চোখের জলে কর্দমাক্ত হয়েছিল আফ্রিকার মাটি। সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রনায়কদের কাঁটা-মারা জুতোর নীচে বীভৎস কাদার পিন্ড যেন চিরকালের মতো অত্যাচারের চিহ্ন রেখে গিয়েছিল আফ্রিকার অপমানিত ইতিহাসে।

৫.২ “অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান” কবিতার মূল বক্তব্য নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তরঃ

গানের শক্তিতে শক্তিশালী কবি অস্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এই গানকে সঙ্গে নিয়েই যে-কোনো প্রতিবাদের মিছিলে তিনি হাজার মানুষের সঙ্গে হেঁটেছেন, এগিয়ে যাওয়ার শক্তি খুঁজে পেয়েছেন। গানকে বর্মের মতো ব্যবহার করে তিনি বুলেটকেও আটকাতে পেরেছেন। অর্থাৎ গানের মধ্যেই কবি খুঁজে পেয়েছেন সেই আশ্চর্য শক্তি, যার মাধ্যমে যুদ্ধ থেমে যায়, সৃষ্টি হয় শান্তির বাতাবরণ। মাথার কাছে শকুন বা চিল উড়ে চললেও কবি তাঁর ভেতরে থাকা কোকিলের ওপরেই অর্থাৎ গানের ক্ষমতার উপরেই ভরসা রেখেছেন। বর্ম খুলে ফেললে যখন যুদ্ধ-যুদ্ধ মানসিকতা সরে যায়, তখন এই গানকেই তাঁর মনে হয় ঋষিবালকের মতো শান্ত, সমাহিত। গানদরিয়ায় ভেসেই কবি পৌঁছে যান লোকজীবনের ভেতরে। গান মানুষকে নিয়ে যায় নদীতে কিংবা গ্রামে। গানের হাত ধরেই কবি সর্বত্র মানুষের কাছে পৌঁছে যান। গানের বিপুল ক্ষমতাকে উপলব্ধি করে কবি যুদ্ধবাজদের বলেন গানের কাছে যাবতীয় অস্ত্র সমর্পন করতে।

৬. কম-বেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও :

৬.১ ‘আমরা কালিও তৈরি করতাম নিজেরাই।” – কারা কালি তৈরি করতেন? তাঁরা কীভাবে কালি তৈরি করতেন?

উত্তরঃ

নিখিল সরকার ওরফে ‘শ্রীপান্থ’ রচিত ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ ও তাঁর সতীর্থরা নিজেরাই কালি তৈরি করতেন। ।

প্রচলিত ছড়া – আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক তাঁর ছেলেবেলায় কালি তৈরি নিয়ে প্রচলিত ছড়ার কথা বলেছেন। ছড়াটি হল – “তিল ত্রিফলা সিমুল ছালা/ছাগ দুগ্ধে করি মেলা/লৌহপাত্রে লোহায় ঘসি/ছিঁড়ে পত্র না ছাড়ে – মসি।”

উপকরণ – ছড়াটিতে তিল, ত্রিফলা, শিমুল গাছের ছাল, ছাগলের দুধ ইত্যাদি উপকরণের কথা আছে। এতগুলি উপকরণ জোগাড় করে কালি তৈরি করা খুব সহজ কাজ ছিল না। তাই লেখক অন্য সহজ পথ ধরেন।

বিকল্প পদ্ধতি – লেখকের বাড়িতে কাঠের আগুনে রান্না হত। তাতে কড়াইয়ের তলায় প্রচুর কালি জমত। লাউ পাতা দিয়ে তা ঘষে তুলে, পাথরের বাটিতে জলে গুলে রাখা হত। যারা কালি তৈরিতে ওস্তাদ তারা এই কালো জলে হরীতকী ঘষত। কখনো-কখনো আতপ চাল ভেজে পুড়িয়ে এবং তা বেটে সেই জলে মেশানো হত। এইসব ভালো করে মিশিয়ে একটা খুন্তির গোড়ার দিক পুড়িয়ে লাল করে সেই জলে স্পর্শ করালে তা টগবগ করে ফুটত। তারপর ন্যাকড়ায় ছেঁকে মাটির দোয়াতে ভরে নিলেই তৈরি হয়ে যেত কালি।

৬.২ “পাশ্চাত্য দেশের তুলনায় এদেশের জনসাধারণের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নগণ্য।’ – লেখকের এমন মন্তব্যের কারণ কী?

উত্তরঃ

কথামুখ – বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান যারা পড়েন, তাঁদের স্বরূপ নির্ণয় করতে গিয়ে লেখক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের পাঠকদের দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। প্রথম শ্রেণি, যাঁরা ইংরেজি জানেন না বা খুব অল্প জানেন এবং দ্বিতীয় শ্রেণি যাঁরা ইংরেজি জানেন এবং ইংরেজি ভাষায় কিছু বিজ্ঞান বিষয়ক বইও পড়েছেন। তিনি বলেছেন, পাশ্চাত্যের মানুষের তুলনায় এদেশের মানুষের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নগণ্য।

বোধগম্যতা – বিজ্ঞানের প্রাথমিক বিষয়গুলির সঙ্গে পরিচয় না থাকলে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ বোঝা সম্ভব নয়। ইউরোপ-আমেরিকায় পপুলার সায়েন্স লেখা খুব সহজ, কারণ সাধারণ মানুষ অনায়াসে তা বোঝে। কিন্তু আমাদের দেশের সামাজিক পরিস্থিতি এতটা সহজ নয়। এখানে বয়স্কদের জন্য যা লেখা হয়, তা-ও প্রাথমিক বিজ্ঞানের মতো গোড়া থেকে না লিখলে তাঁদের বোঝাবার মতো সহজ হয় না।

জনপ্রিয়তা – বাংলা ভাষায় যাঁরা বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখি করেন, তাঁদের জনপ্রিয়তা পেতে গেলে এই বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে। বিজ্ঞানশিক্ষার বিস্তার ঘটানোর প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গিয়ে প্রাবন্ধিক এই কথাগুলো বলেছেন।

ইতিকথা – মনে রাখা দরকার যে, বিজ্ঞানশিক্ষার প্রসার যথাযথ না হলে বিজ্ঞান বিষয়ক সাহিত্যের বিকাশ ঘটাও সম্ভব নয়।

৭. কম-বেশি ১২৫ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও :

৭.১ “বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না।” – কাদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলা হয়েছে? কোন্ দুর্দিনের জন্য তাঁর এই আবেদন?

উত্তরঃ

উদ্দিষ্ট জন – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশে নবাব সিরাজদ্দৌলা উল্লিখিত মন্তব্যটি সিপাহসালার মীরজাফর ও তাঁর অনুগামীদের উদ্দেশ্যে করেছেন।

দুর্দিনের পরিচয় – ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্রমশই তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলেছে। তাদের সঙ্গে যুদ্ধে কলকাতা জয় করতে পারলেও নবাবের প্রচুর লোকবল ও অর্থবল উভয় শক্তির ক্ষয় হয়েছে। এরপরে ইংরেজরা কাশিমবাজার অভিমুখে সৈন্য পাঠিয়েছে, নবাবের মিত্রপক্ষ ফরাসিদের কাছ থেকে চন্দননগরের দখল নিয়েছে। শুধু তাই নয়, ক্রমাগত নবাববিরোধী ষড়যন্ত্রে ইন্ধন জুগিয়ে চলেছে। ওয়াটসন এবং ওয়াটস্-এর যে দুটি চিঠি নবাব সর্বসমক্ষে আনেন, তাতে এই ষড়যন্ত্রের স্পষ্ট প্রমাণ ছিল। সভাসদ ও দেশীয় অভিজাতরা যে নবাব-বিরোধী ছিলেন এবং তাদের সঙ্গেও ইংরেজরা সমঝোতা করেছিল, সেকথা ওই চিঠিদুটিতে ছিল। এর সাথে উল্লেখ ছিল ঘসেটি বেগমের নবাব- বিরোধিতাও। এভাবে ভিতরে ও বাইরে নবাব বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছিলেন। এই সংকটজনক পরিস্থিতিকেই নবাব ‘দুর্দিন’ বলেছেন। তবে একে সিরাজ ব্যক্তিগত দুর্দিন না বলে বাংলার দুর্দিন বলেছেন। কারণ, তাঁর পরাজয় বা বিপর্যয়ের অর্থ বাংলার স্বাধীনতার অবসান। মীরজাফর-সহ রাজবল্লভ, জগৎ শেঠদের কাছে তিনি এই আশঙ্কা থেকে তাঁর পাশে থাকার আবেদন রেখেছেন।

৭.২ “ওখানে কী দেখচ মূর্খ, বিবেকের দিকে চেয়ে দ্যাখো!’ – বক্তা কে? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি বক্তার কী মনোভাব লক্ষ্য করা যায়?

উত্তরঃ

যাঁকে সম্বোধন – নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত লিখিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে ঘসেটি বেগম নবাব সিরাজকে ‘মূর্খ’ বলে সম্বোধন করেছেন।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি বক্তার মনোভাব – ঘসেটি বেগম বা মেহেরুন্নিসা নবাব আলিবর্দি খাঁর বড়ো মেয়ে, সম্পর্কে সিরাজের মাসি। ঘসেটির বিয়ে হয় ঢাকার শাসনকর্তা শাহমৎ জঙ্গের সঙ্গে। দত্তক পুত্র ইকরমের মৃত্যু হলে তার শোকে শাহমৎ জঙ্গও মারা যান। বিধবা ঘসেটি বিপুল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন। এদিকে আলিবর্দি খাঁ সিরাজদ্দৌলাকে বাংলার শাসনকর্তা মনোনীত করেন। এই ঘটনা ঘসেটি বেগমের ঈর্ষার কারণ হয়। তিনি আলিবর্দির মেজো মেয়ের ছেলে শওকত জঙ্গকে সিরাজের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেন। রাজবল্লভ এবং অন্যদেরও নিজের দলে টানেন। এসব জানতে পেরে ক্ষিপ্ত সিরাজ ঘসেটির মতিঝিলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। অবশেষে তাঁকে নিজের রাজপ্রাসাদে নজরবন্দি করে রাখেন। সিরাজের বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় শওকত জঙ্গ। এইসব ঘটনার ফলে ঘসেটি বেগম হয়ে ওঠেন প্রতিহিংসাপরায়ণ। তারই প্রকাশ ঘটেছে উল্লিখিত মন্তব্যে।

৮. কম-বেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও

৮.১ “আপনি আমার থেকে চার হাজার গুণ বড়োলোক, কিন্তু চার লক্ষ টাকা খরচ করেও আপনি নিজে শরীরটাকে চাকর বানাতে পারবেন না।” — বক্তা কাকে, কেন একথা বলেছিলেন?

উত্তরঃ

বক্তা ও প্রসঙ্গ –

  • উৎস – মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসের প্রথম পরিচ্ছদ থেকে আলোচ্য মন্তব্যটি গৃহীত হয়েছে।
  • বক্তা – গঙ্গার ঘাটে বিষ্টু ধরের শরীর দলাই-মলাই দেখে মজা-পাওয়া ব্যক্তিটি এ কথা বলেছেন।
  • প্রসঙ্গ – এই মানুষটি ক্রমশই তাঁর শারীরিক সক্ষমতার পরিচয় দিয়ে বিষ্টু ধরকে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করে তোলেন। লোকটি বিষ্টু ধরকে সুঠাম শরীরের উপযোগিতা বোঝাতে চান। প্রচুর অর্থ থাকলেও ইচ্ছাশক্তি না থাকলে যে শরীরকে আয়ত্ত করা যায় না তিনি তা-ও বুঝিয়ে দেন। হাতেকলমে তা প্রমাণের জন্য তিনি বিষ্টু ধরকে পাঞ্জা লড়াইয়ের আহ্বান জানান। অনেক চেষ্টা করেও বিষ্টু ধর সেই লোকটির শুকনো শিকড়ের মতো হাতটাকে হারিয়ে দিতে ব্যর্থ হলে লোকটি বিষ্টু ধরকে প্রশ্নে উদ্ধৃত কথাটি বলেন।

ব্যাখ্যা – সাড়ে তিন মন ওজনের বিষ্টু ধরের তুলনায় তাঁর প্রতিপক্ষ লোকটি ছিলেন অত্যন্ত রোগা। কিন্তু তবুও বিষ্টু ধরকে তিনি অনায়াসে পরাজিত করেন। এর মাধ্যমে তিনি বুঝিয়ে দেন যে, গায়ের জোরই সব নয়, মনের জোর হল আসল শক্তি। ইচ্ছাশক্তি দিয়ে শরীরের দুর্বলতা ঠেকিয়ে রাখা যায়। মানুষের শরীর যতটা সক্ষম, ‘ইচ্ছাশক্তি তাকে আরও বেশি ক্ষমতাবান করে তুলতে পারে। অর্থাৎ, মানুষের মন যে শরীরের তুলনায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী, সে-কথাই লোকটি বলতে চেয়েছেন।

৮.২ “এটা বুকের মধ্যে পুষে রাখুক।” – কী পুষে রাখার কথা বলা হয়েছে? কী কারণে এই পুষে রাখা?

উত্তরঃ

পুষে রাখার বিষয় – কোনি উপন্যাসে ক্ষিতীশের সঙ্গে কোনি গিয়েছিল চিড়িয়াখানা দেখতে। সেখানে ক্ষিতীশের কাছে খাবার থাকলেও জল ছিল না। কিছুটা দূরে থাকা স্কুলের মেয়েদের কাছে কোনি জল আনতে যায়। কিন্তু শিক্ষিকা তাকে অপমান করে ফিরিয়ে দেয়। এই অবস্থায় সেই মেয়েদের মধ্যেই থাকা হিয়া জলভরা প্লাস্টিকের দুটো গ্লাস নিয়ে তাদের কাছে আসে কিন্তু কোনি হাত দিয়ে হিয়ার গ্লাসে আঘাত করে। হাত থেকে তা ছিটকে পড়ে। চাই না তোমাদের জল। আমার কলের জলই ভালো। — কোনি এই বলে প্রবলভাবে প্রত্যাখ্যান করে হিয়াকে। ক্ষিতীশ চেয়েছিল এই রাগটাই মনের মধ্যে পুষে রাখুক কোনি।

পুষে রাখার কারণ – ক্ষিতীশ হিয়ার প্রতি কোনির আচরণকে সমর্থন করতে পারেনি। কিন্তু কোনিকে দারুণ বকবে ভেবেও ক্ষিতীশ শেষপর্যন্ত কিছুই বলেনি। কারণ সে বুঝে গিয়েছিল যে হিয়াই কোনির ভবিষ্যৎ প্রতিদ্বন্দ্বী। রবীন্দ্র সরোবরের সাঁতার প্রতিযোগিতায় হিয়ার সাঁতার ক্ষিতীশ দেখেছে। বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবে গিয়েও সে হিয়ার ট্রেনিং দেখে এসেছে। এখান থেকেই ক্ষিতীশের মনে হয়েছে যে হিয়ার প্রতি কোনির হিংস্র আক্রোশটাকে ভোঁতা করে দেওয়া ঠিক হবে না। এই আক্রোশ কোনি তার বুকের মধ্যে পুষে রাখুক যা তাকে হিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে শক্তি জোগাবে এবং সাফল্যের পথে নিয়ে যাবে।

৮.৩ ‘কোনি’ উপন্যাসের কাহিনি অবলম্বনে স্বামীর যোগ্য সহধর্মিনী রূপে লীলাবতীর পরিচয় দাও।

উত্তরঃ

কথামুখ – মতি নন্দী রচিত কোনি উপন্যাসে ক্ষিতীশ সিংহের স্ত্রী লীলাবতী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্বচরিত্র।

পরিশ্রমী ও কর্মপটু – লীলাবতীর পরিশ্রমেই তাঁদের সংসার চলত। ‘সিনহা টেলারিং’ যখন লোকসানের মুখে সেইসময় লীলাবতী নিজের গয়না বন্ধক রেখে নতুন ধরনের কাজ শুরু করেন। এসময় তিনি দোকানের নাম পালটে ‘প্রজাপতি’ রেখে অসম্ভব পরিশ্রম ও কর্মতৎপরতার মাধ্যমে চার বছরের মধ্যেই ‘প্রজাপতি’-র উন্নতি ঘটান।

তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও বাস্তববোধ – বাস্তববুদ্ধির পরিচয় দিয়ে তিনি পুরুষদের পোশাক তৈরি বন্ধ করে দুজন মহিলা কর্মচারীকে দোকানে রেখে শুধু মেয়ে ও শিশুদের পোশাক তৈরি শুরু করেন। তাঁর নেতৃত্বেই ব্যাবসা ক্রমশ বড়ো হয়ে ওঠে এবং আরও বড়ো স্থানের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

যোগ্য সহধর্মিণী – গম্ভীর স্বভাবের হলেও লীলাবতী স্বামীর প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীলা ছিলেন। স্বামীর সাঁতারপ্রীতির কথা জানতেন বলেই সাংসারিক সমস্ত কাজ নিজেই করতেন। স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই তিনি কোনির সাঁতার দেখতে হাজির হয়েছিলেন। সাফল্যের জন্য কোনিকে ফ্রক করে দেবেন বলেছেন। শুধু তাই নয় ইন্ডিয়া রেকর্ড করলে সিল্কের শাড়ি দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই ঘটনাগুলিতে গম্ভীর স্বভাবের আড়ালে কোথাও যেন মাতৃত্ব উঁকি দিয়ে গেছে লীলাবতীর মধ্যে।

শেষের কথা – স্বল্প পরিসরেও তাঁর কর্মপ্রাণা, সংসারী এবং পরোক্ষে স্বামী অনুরাগী চরিত্রটি উপন্যাসে ধরা পড়েছে।

৯. চলিত গদ্যে বঙ্গানুবাদ করো।

One day a fox was going beside the vine yard. He saw the ripe grapes hanging from a vine. He jumped but did not reach it. Because they wear beyond his reach.

উত্তরঃ একদিন একটা শিয়াল ফলের বাগানের ধার দিয়ে হাঁটছিল। সে দেখল লতা থেকে পাকা আঙ্গুর ঝুলছে। সে লাফিয়ে উঠল, কিন্তু আঙ্গুরে হাত দিতে পারল না। কারণ সেগুলো তার নাগালের বাইরে ছিল।

১০. কম-বেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও :

১০.১ বৃক্ষরোপণ-উপযোগিতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা কর।

উত্তরঃ

কৌশিক – দেখলি, আমাদের স্কুলের সামনের এত বড়ো বকুল গাছটা কেটে ফেলা হল! শুনলাম ওখানে ফ্ল্যাট বানানো হবে।

অভীক – আর বলিস না! মনটা এত খারাপ লাগছে, যে ওদিকে আর তাকাতেই পারছি না। সেই কোন্ ছোট্টবেলায় প্রথম স্কুলে আসার দিনটা থেকে গাছটার সঙ্গে বন্ধুত্ব, চেনাশোনা। মনে আছে, ছুটির পরে ওই বিশাল গাছটার নীচে বাঁধানো বেদিটায় চড়ে কত খেলেছি।

কৌশিক – সভ্যতার গর্বে উন্মত্ত মানুষ যেন ভুলেই গিয়েছে গাছের অবদান। নগরায়ণের এই হামলে পড়া নেশায় তরাই থেকে সুন্দরবন-সর্বত্রই চলেছে অরণ্যনিধনের এই যজ্ঞ।

অভীক – কেউ একবার অন্তত এটাও তো ভেবে দেখুক যে, এতে ক্ষতি শেষপর্যন্ত নিজেদেরই হয় বা হচ্ছে। এই ভয়ানক লোভে মানুষ নিজের সভ্যতাকেই ধ্বংস করছে! পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়ছে, মেরুপ্রদেশের বরফ গলে যাচ্ছে, বেড়ে যাচ্ছে পৃথিবীর জলস্তর, নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য-গাছপালা কমে যাওয়ায় অতিবেগুনি রশ্মিও প্রভাব ফেলছে পরিবেশের ওপরে। সবমিলিয়ে নানান অসুখবিসুখের প্রকোপও বেড়েই চলেছে।

কৌশিক – শুধু তা-ই নয়, তুই কি জানিস, বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো দেশের আয়তনের তুলনায় অরণ্যের পরিমাণ যখন ৩৫ শতাংশের নীচে নেমে যাবে, তখনই সেই দেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। ভারত-সহ পৃথিবীর বহু দেশই এখন এই সমস্যার সম্মুখীন।

অভীক – আসলে কী বল তো, ‘একটি গাছ একটি প্রাণ’-এই বাক্যটিকে নিছক স্লোগান নয়, জীবনযাপনের এক অনিবার্য শর্ত করে তুলতে হবে। নইলে এই ভয়ানক ধ্বংসের হাত থেকে কোনোক্রমেই মুক্তি পাওয়া যাবে না।

১০.২ বিদ্যালয়ের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করো।

উত্তর :

সুন্দরপুর আদর্শ বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন

নিজস্ব সংবাদদাতা, বারাসাত, ১২ ফেব্রুয়ারি – উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার সুন্দরপুর আদর্শ বিদ্যালয় এ বছর তাদের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ উদযাপন করছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি এই বর্ষব্যাপী এই অনুষ্ঠানের সূচনা করেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক আলোক সরকার। প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন বিশিষ্ট সমাজসেবী ও পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. সুছন্দ ব্যানার্জি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের ইতিহাস নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ একটি স্মারক পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। সকাল 9 টায় স্কুলের ছেলেমেয়েদের বর্ণাঢ্য প্রভাতফেরির মধ্য দিয়ে এই অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। ছেলেদের রণপা নৃত্য এবং স্কাউট প্রদর্শনী সকলের প্রশংসা কুড়ায়। বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্কুলের ছেলেমেয়েদের অভিনীত নাটক এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকর্ম প্রদর্শিত হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনারুল সর্দার বলেন যে ফুটবল প্রতিযোগিতা, ছাত্রছাত্রীদের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ইত্যাদি সারাবছর ধরে চলবে। গ্রামবাসীরা সকলেই এই অনুষ্ঠানকে সফল করার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

১১. কম-বেশি ৪০০ শব্দে যে – কোনো একটি বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করো।

১১.১ বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

উত্তর :

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

Superstition is to religion what astrolog is to astronomy-the mad daughter of a wise mother.

– Voltaire

ভূমিকা – বিজ্ঞানমনস্কতা আর বৈজ্ঞানিক তথ্য সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করা-এ দুয়ের মধ্যে অনেক তফাত রয়েছে। বৈজ্ঞানিক বিষয় সম্পর্কে কোনো ব্যক্তি অবহিত হলেই যে তিনি বিজ্ঞানমনস্কও হয়ে উঠবেন, এমনটা নয়। আসলে বাইরের জগতের বস্তুতান্ত্রিক নিয়মের কার্যকারণ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান লাভ করেই বিজ্ঞানচর্চা সম্ভব। কিন্তু পৃথিবীর সব ঘটনাই যে এই কার্যকারণ সম্পর্কের আওতায় পড়ে, এই সহজ যুক্তিকাঠামোটিকে উপলব্ধি করা এবং সেই অনুযায়ী নিজের জাগতিক ও মানসিক যুক্তিবোধ গড়ে তোলা-এই-ই হল বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে ওঠার প্রথম ধাপ।

সংঘাত – পৃথিবীর সহজ সত্যিগুলোকে মানুষ যখন কুসংস্কারের অন্ধকারে ঢেকে ফেলে, নিজের চোখ বা কানের চেয়েও অন্যের বলা কথাকে চটকের জোরে সত্যি বলে মানতে থাকে, তখনই তৈরি হয় যুক্তি আর সংস্কারের মধ্যে সংঘাত। অন্য সব প্রাণীর চেয়ে মানুষ যেখানে তার বুদ্ধিবৃত্তি ও বিচারশক্তির জোরে, উৎকর্ষ লাভ করেছে, সেখানেই বিজ্ঞান-মনস্কতার সূত্রপাত-যার হাত ধরে লক্ষকোটি বছরব্যাপী বিবর্তনের ধারায় মানুষ পৃথিবীতে হয়ে উঠেছে শ্রেষ্ঠ প্রাণী। অথচ বিজ্ঞানের এই প্রবলতেজা গতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার।

কুসংস্কারের কারণ – আসলে সভ্যতার আদিপর্বে মানুষ যখন বনবাসী, তখন প্রকৃতির কাছে সে ছিল নিতান্তই অসহায়। তার না জানা ছিল প্রকৃতিকে কাজে লাগানোর শক্তি, না জানা ছিল সেই দুর্যোগের কারণ। সে শুধু অজানা ভয়ে শঙ্কিত হত, বাঁচার রাস্তা খুঁজত। বিশাল প্রাকৃতিক শক্তির প্রতি তুচ্ছ মানুষের তখন স্বাভাবিকভাবেই ভয়মিশ্রিত সম্ভ্রমবোধ জাগত। সেই সম্ভ্রমবোধ থেকে মানুষ সেই শক্তির কাছে নতজানু হওয়া শুরু করল। তার নিজস্ব বোধবুদ্ধির বাইরে বেরিয়ে গিয়ে সেই কাল্পনিক অপদেবতাদের শান্ত করার জন্য কিছু কল্পিত আচার, ক্রিয়াকর্ম সে পালন করতে লাগল। এভাবেই শুরু হয় আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক শক্তির ওপর মানুষের অন্ধবিশ্বাসমূলক নির্ভরতার যুগ।

কুসংস্কারের ধরন – কিন্তু, আজও যখন বিজ্ঞানের রথের চাকা এগিয়ে গেছে বহুদূর, তবুও আমাদের মধ্যে এই কুসংস্কারের ধারা অব্যাহত।

আজও হাঁচি, কাশি, জাতিভেদ, বর্ণভেদ, তাবিজ, কবচ, তুকতাক, ঝাড়ফুঁক, ডাইনি-সবমিলিয়ে সমাজ ক্ষয়িষ্ণুপ্রায়। সেজন্যেই মাউসে ক্লিকরত আঙুলে চকচক করে ওঠে হরেক আংটির ছটা। কার্যকারণ সূত্রের মধ্য দিয়ে সত্যে পৌঁছোনোর চেয়ে, চটজলদি সুখের জন্য হাপিত্যেশ করে ঘুরতে ঘুরতে মানুষ, আজ পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকতেই বেশি স্বস্তি বোধ করেছে। ফলে ভণ্ডদের জুয়াচুরির হারও বেড়ে গেছে।

উপসংহার – কুসংস্কারের হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দেওয়ার ক্ষমতা বিজ্ঞানের নেই, আছে বিজ্ঞানচেতনার। যুক্তি, মুক্তচিন্তা ও কার্যকারণ সূত্রের মিশেলই মানুষকে এক স্বচ্ছ পৃথিবীর সন্ধান দিতে পারে, বলতে পারে।

১১.২ তোমার প্রিয় ঋতু

উত্তর :

তোমার প্রিয় ঋতু

তোমার নাম জানি নে, সুর জানি।
তুমি শরৎ প্রাতের আলোর বাণী।।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা – বাংলাদেশে ঋতুবৈচিত্র্য প্রকৃতি ও মানবজীবনে নিয়ে আসে বহু বর্ণময়তা। কালবৈশাখীর রুদ্র রূপ থেকে বর্ষার যৌবনোচ্ছ্বাস কিংবা পলাশরাঙা বসন্ত-প্রকৃতির যে নানা প্রকাশ তার আবেদন ও প্রভাবকে কেউই অস্বীকার করতে পারে না। কিন্তু তারই মধ্যে শরৎ আমার প্রিয় ঋতু। গ্রীষ্ম, বর্ষা বা শীতের চরম চরিত্রের পাশে শরৎ তার প্রশান্ত উপস্থিতি আর স্নিগ্ধ মাধুর্য দিয়ে তৈরি করে দেয় হৃদয়ের আনন্দগান।

শরতের আগমন – বর্ষার প্রমত্ত উচ্ছ্বাসে যখন দিশেহারা মানববিশ্ব, সর্বনাশের প্রহর গোনার সেই দিনযাপন শেষ হয় শরতের আগমনে। আনন্দিত কবিচিত্ত বলে ওঠে – আজি শরততপনে প্রভাত স্বপনে কী জানি পরান কী যে চায়। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরি খেলা নিয়ে শরৎ আসে। এক নির্মল প্রসন্নতায় ভরে ওঠে বিশ্ব চরাচর, শোনা যায় শরতের আবাহন গীত –

আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ, আমরা গেঁথেছি শেফালিমালা –
নবীন ধানের মঞ্জরী দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা।।
এসো গো শারদলক্ষ্মী, তোমার শুভ্র মেঘের রথে,
এসো নির্মল নীলপথে।

উৎসবের ঋতু শরৎ – উঠোন জুড়ে পরে থাকা সোনা রঙের রোদ, শিউলি ফুল আর আন্দোলিত কাশফুলে থাকে উৎসবের আগমনি। এই শরতেই হয় দুর্গাপুজো। এই উপলক্ষ্য দেবী দুর্গাকে কন্যা উমারূপে পূজা করা হয়। প্রতি বছর চারদিনের জন্য পিতৃগৃহে আগমন হয় দেবী উমার। কিন্তু দুর্গাপুজোর আনন্দ কোনো ধর্মের সীমায় আবদ্ধ থাকে না। জাতিধর্মনির্বিশেষে সমস্ত মানুষ উৎসবে মেতে ওঠে প্রাণের আনন্দে। নতুন জামাকাপড়পরা, মণ্ডপে ঠাকুর দেখা, বিজয়ার ভাসান-এ সবের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব কখন যেন হয়ে ওঠে শারদোৎসব। শুধু তো আনন্দ উদযাপন নয়, প্রতিমা ও মণ্ডপ নির্মাণ, আলোকসজ্জা, প্রচার থেকে ফুল বিক্রেতা, ঢাকি কত মানুষের দিনান্তের সঞ্চয় সম্ভব হয় এই উৎসবকে কেন্দ্র করে। শরৎ তাই প্রাণেরই নয়, জীবনেরও ঋতু। শুধু দুর্গাপুজো নয়, এই শরতেই বাঙালি আবাহন করে সম্পদের দেবী লক্ষ্মীকে, অশুভ শক্তিকে নাশ করার দেবী নৃমুণ্ডমালিনী শ্যামাকে। এই শরতেই হয় ভাইফোঁটা।

শারদ সাহিত্য এবং অন্য আয়োজন – শরতের উৎসবমুখরতার সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই প্রকাশিত হয় শারদ সাহিত্য। নামি-অনামি নানা পত্রিকার পুজো সংখ্যায় বিখ্যাত লেখকদের পাশাপাশি বহু নতুন লেখকেরও আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই সুযোগে বাঙালিও আরেকবারের জন্য ঝালিয়ে নিতে পারে সাহিত্যপ্রীতিকে। একইভাবে পুজোকে সামনে রেখে প্রকাশিত হয় অসংখ্য গানের অ্যালবাম, আয়োজিত হয় জলসা। এককথায় জীবনের তুচ্ছতা থেকে মুক্তির সুযোগ শরতই এনে দেয় বাঙালিকে।

আজ আমাদের ছুটি ও ভাই – শরৎ শুধু উৎসব নিয়ে আসে না, এনে দেয় উৎসব উদযাপনের অবকাশও। দেবীর বোধনের সঙ্গে সঙ্গে স্কুল-কলেজে ছুটি পড়ে যায়। কর্মব্যস্ত জীবনকে পিছনে ফেলে কিছুদিনের জন্য হলেও ঘরে ফেরে বাঙালি। তাই শরৎ শুধু প্রাণের নয়, পূর্ণতারও ঋতু।

দেখি নাই কভু দেখি নাই – গ্রীষ্ম-বর্ষা অথবা শীত বৈপরীত্যের সমাহার। আর শরৎ শুধুই কেয়াপাতার নৌকা ফুল দিয়ে সাজিয়ে মুগ্ধতার কাহিনি। শুধু নির্মলতা আর প্রসন্নতার বিচিত্র বিস্তার। বিক্ষত হৃদয়ে শরৎ শুশ্রূষার প্রলেপ। ভাঙনের পরে সুরের গুঞ্জরণ। তাই শরৎ আমার প্রিয় ঋতু, হৃদয়ের ঋতু।

১১.৩ ছুটির দিন

উত্তর :

ছুটির দিন

ভূমিকা – মাগো আমায় ছুটি দিতে বল/সকাল থেকে পড়েছি যে মেলা/এখন আমি তোমার ঘরে বসে/করব শুধু পড়া পড়া খেলা। – ছুটির জন্য মানুষের এই আকুলতা চিরন্তন। ছুটি ক্যালেন্ডারে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া কিছু নির্দিষ্ট দিন নয়, বরং বেঁচে থাকার জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় অক্সিজেন। প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় কিছু বৈচিত্র্য সংযোজনের মধ্য দিয়ে ছুটি মানুষের জীবনে নতুন উদ্দীপনার সঞ্চার করে। ফলে শরীর ও মন নতুন উৎসাহে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে পারে।

ছুটির প্রয়োজনীয়তা – একজন ছাত্র তার ক্রমশ বাড়তে থাকা পড়ার বইয়ের চাপে যখন দিশেহারা, বাড়ি-স্কুল-বাড়ির ধরাবাঁধা রুটিনে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে তার শৈশব ও কৈশোর, তখন ছুটির আনন্দেই সে খুঁজে নিতে পারে প্রাণের স্ফূর্তি। কখনও টিভির সামনে, কখনও খেলার মাঠে, কখনও নীল আকাশের নীচে বন্ধুদের সঙ্গে মুক্ত জীবনের উল্লাসে সে খুঁজে পায় তার মনের রসদ। একইভাবে কর্মক্লান্ত মানুষ তার অবসরের সার্থকতা খোঁজে কখনও বেড়ানোর আনন্দে, কখনও সৃষ্টিশীল কাজে, কখনও-বা বিনোদনের মাধ্যমে। আর এর মধ্য দিয়েই একঘেয়েমি কাটিয়ে সে নিজেকে প্রাণময় করে তোলে। মানসিক অবসন্নতা আজকের সমাজে একটা রড়ো অসুখ। ছুটি যন্ত্রজীবন থেকে মানুষকে বের করে ইচ্ছে ডানায় তাকে ভাসিয়ে অবসন্নতা থেকে মুক্তি ঘটায়।

ছুটি কাটানোর উপায় – ছুটির অর্থ শুধু অলস দিনযাপন নয়। অবসরের মুহূর্তেই শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টি হয়, জন্ম হয় সার্থক কবিতার, ক্যানভাসে ফুটে ওঠে চিত্রকলা। এ হল নিজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজেকে এবং চারপাশকে বুঝে নেওয়ার অবসর। এর পাশাপাশি ছুটির দিন মানুষকে যুক্ত করে বৃহত্তর সমাজজীবন ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। বিজ্ঞান সচেতনতা বৃদ্ধি, দূষণবিরোধী আন্দোলন, সাক্ষরতা আন্দোলন ইত্যাদিতে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ছুটি সার্থক হয়ে উঠতে পারে। আবার বড়ো কিছু না করেও, চারপাশের মানুষজনের সঙ্গে মেশার যে সুযোগ তৈরি হয় ছুটির দিনে তা নতুন করে সামাজিক সম্পর্ককে ঝালিয়ে নেয়। ফ্র্যাঙ্কলিন বলেছিলেন, ‘Leisure is time for doing something useful’। উক্তিটি মনে রাখলে আমাদের অবকাশের মুহূর্ত আলোকিত হতে পারে মনুষ্যত্বের আলোয়।

উপসংহার – ছুটি কাটানোর উপায়ের রকমফের থাকলেও তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ছুটির ছোঁয়া পেয়ে অবসাদগ্রস্ত মানবজীবন নতুন আনন্দ ও শক্তিতে উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন – সত্যকে খুব বড়ো করে ধ্যান করবার এবং উপলব্ধি করবার মতো মনের উদার অবকাশ প্রয়োজন। ছুটির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে শেষ কথা সম্ভবত এটাই।

১১.৪ বিশ্ব উষ্ণায়ন

উত্তর :

বিশ্ব উষ্ণায়ন

উন্মুক্ত বন্দর সব নীল সমুদ্রের
পায়ে-পায়ে মানুষ ও মেশিনের যৌথ শক্তিবলে
নীলিমাকে আটকেছে ইঁদুরের কলে।

– জীবনানন্দ দাশ

ভূমিকা – একুশ শতকে বিজ্ঞানের আলোকিত অগ্রগতি যেমন মানবসভ্যতাকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনই অনিয়ন্ত্রিত প্রয়োগ, ভারসাম্যহীন উষ্ণায়ন নিয়ে এসেছে আশঙ্কার কালো মেঘ। বিশ্ব উষ্ণায়ন, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ Global Warming এরকমই একটি আতঙ্কের নাম।

বিশ্ব উষ্ণায়ন কী?

আপাতভাবে বিশ্ব উষ্ণায়ন কথাটির অর্থ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে নোবেলজয়ী সুইডিশ বিজ্ঞানী আরথেনিয়াস বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তাঁর আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণিত করে ১৮৫০ থেকে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন ২০৩০ খিস্টাব্দের মধ্যে উষ্ণাতা বৃদ্ধির এই হার হবে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ফল হবে মানবসভ্যতার সর্বনাশ।

বিশ্ব উষ্ণায়ন ও গ্রিনহাউস গ্যাস – বাতাসে গ্রিনহাউস গ্যাসসমূহ যেমন – কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কোরোফ্লুরোকার্বন, জলীয় বাষ্প ইত্যাদির বৃদ্ধি তাপীয় ভারসাম্যকে বিনষ্ট করে দিচ্ছে। শিল্পবিপ্লবের আগে ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দে বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ ছিল ২৮০ পিপিএম, ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮২ পিপিএম। একইভাবে বছরে গড়ে ৪৪০-৬০০ মিলিয়ন টন মিথেন বায়ুমণ্ডলে এসে মিশছে। গ্রিনহাউস এফেক্টে এই মিথেনের অবদান প্রায় ১৩ শতাংশ।

মানুষের দায়িত্ব – পৃথিবীর উষ্ণাতা বৃদ্ধি তথা গ্রিনহাউস এফেক্ট তৈরিতে মানুষেরই ভূমিকা প্রধানতম। নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংস করা, কাঠ এবং জীবাশ্মকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা, সিমেন্ট শিল্পের প্রসার ইত্যাদি বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের বৃদ্ধি ঘটায়। এ ছাড়া সার শিল্প, অ্যালুমিনিয়াম শিল্প, এয়ারকন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটর শিল্প ইত্যাদি বাতাসে নানারকম গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলছে।

প্রভাব – গ্রিনহাউস এফেক্ট এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দ গত দুশো বছরে উষ্ণতম বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, এই অবস্থা বজায় থেকেছে পরবর্তী সময়েও। খরা, বন্যা, তুষারঝড় ইত্যাদি নানান বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে এক মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫৬২ টি টর্নেডো হয়েছে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে। গত ৩০ বছরে সুমেরুর বরফ গলেছে ৩৮,০০০ বর্গকিমি। এর ফলে সমুদ্রের জলের উচ্চতা বেড়ে চলেছে বর্তমানে প্রতিবছর ৩.১ মিলিমিটার হারে। ফলে এক বিস্তীর্ণ উপকূলবর্তী ভূখণ্ড চিরকালের মতো হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় প্রহর গুনছে। ডেঙ্গু, এনকেফেলাইটিস, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি অসুখের প্রাদুর্ভাব ঘটছে-এমনটাই জানিয়েছেন হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের চিকিৎসকরা। জীবকুলের অস্তিত্বও বিপন্ন হচ্ছে। বরফ গলে যাওয়ায় পেঙ্গুইন, মেরুভল্লুক ইত্যাদি প্রাণীরা দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে।

প্রতিরোধের প্রয়াস – গ্রিনহাউস গ্যাস বেরোনো বন্ধ করতে ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে ব্রাজিলের রিও-ডি-জেনেরোতে বসেছিল বসুন্ধরা শীর্ষসম্মেলন। পরবর্তীকালে ২০০২-এ জোহেনসবার্গে, ২০০৫-এ জাপানের কিয়োটো শহরে এবং ২০০৭-এ ইন্দোনেশিয়ার বালিতে একই উদ্দেশ্যে সম্মেলন হয়। কিন্তু এই বিপর্যয়ের জন্য যে উন্নত দেশগুলি প্রধানত দায়ী তাদের অসহযোগিতায় কোনো সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। তাই আশঙ্কার কালো মেঘে ঢাকা পড়ে আছে একুশ শতকের বিজ্ঞানপ্রদীপ্ত মানবসভ্যতা।

মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য যথাযথভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য, ২০১৯ সালের প্রশ্নপত্র ও উত্তরগুলি একটি মূল্যবান রিসোর্স হিসেবে কাজ করবে। নিয়মিত অনুশীলন এবং পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নপত্রগুলি বিশ্লেষণের মাধ্যমে, পরীক্ষার্থীরা তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে পারে এবং আসন্ন পরীক্ষায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।

Share via:

মন্তব্য করুন