মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – চলতড়িৎ – তড়িৎপ্রবাহ, ওহমের সূত্র ও রোধ

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ “তড়িৎপ্রবাহ, ওহমের সূত্র ও রোধ” নিয়ে আলোচনা করব। এই অংশটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “তড়িৎপ্রবাহ, ওহমের সূত্র ও রোধ” অংশটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের ষষ্ঠ অধ্যায় “চলতড়িৎ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই “তড়িৎপ্রবাহ, ওহমের সূত্র ও রোধ” থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান - চলতড়িৎ - তড়িৎপ্রবাহ, ওহমের সূত্র ও রোধ
Contents Show

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – চলতড়িৎ – তড়িৎপ্রবাহ, ওহমের সূত্র ও রোধ

তড়িৎপ্রবাহমাত্রা

কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎগ্রস্ত কণার প্রবাহকে (যেমন – ইলেকট্রন) তড়িৎপ্রবাহ বলে। এক্ষেত্রে একক সময়ে পরিবাহীর যে-কোনো প্রস্থচ্ছেদের মধ্য দিয়ে যে পরিমাণ আধান প্রবাহিত হয় তাকে তড়িৎ প্রবাহমাত্রা বলে।

  • প্রবাহমাত্রা \(I = \frac{Q}{t}\) [q = আধান] যদি n -সংখ্যক ইলেকট্রন প্রবাহিত হয় তাহলে Q = n⋅e সেক্ষেত্রে \(I = \frac{ne}{t}\)
  • একক – SI একক হল কুলম্ব·সেকেন্ড⁻¹ বা অ্যাম্পিয়ার (A)
  • প্রবাহমাত্রা হল স্কেলার রাশি।
  • তড়িৎপ্রবাহ চলাকালীন তারের মধ্যে ইলেকট্রন প্রবাহিত হয় কিন্তু প্রবাহমাত্রার অভিমুখ ইলেকট্রন প্রবাহের অভিমুখের বিপরীতে ধরা হয়। অর্থাৎ, ইলেকট্রন -ve প্রান্ত থেকে +ve প্রান্তের দিকে যায় কিন্তু প্রবাহ +ve প্রান্ত থেকে -ve প্রান্তে যায়।
  • প্রবাহমাত্রা প্রাথমিক রাশি। এর মাত্রা ‘A’।
  • প্রবাহমাত্রা দুই প্রকার। যথা – সমমুখী প্রবাহ (DC current) ও পরিবর্তী প্রবাহ (AC current)। যে-কোনো কোশ থেকে সমমুখী প্রবাহ সৃষ্টি হয় যা সবসময় একই অভিমুখে যায় কিন্তু ডায়নামো থেকে AC প্রবাহ সৃষ্টি হয় যা নির্দিষ্ট সময় অন্তর দিকপরিবর্তন করে।

ওহমের সূত্র

উষ্ণতা ও অন্যান্য ভৌত অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে কোনো পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভবপার্থক্য ওর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহমাত্রার সমানুপাতিক হয়।

  • কোনো পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভবপার্থক্য VA​ − VB​ হলে এবং প্রবাহমাত্রা I হলে (VA​ − VB​​) ∝ I⋅R
  • R হল পরিবাহীতে তড়িৎপ্রবাহের পথে বাধা, যাকে রোধ বলা হয়। রোধকে পরিবাহীর দুই প্রান্তের মধ্যে বিভবপার্থক্য ও পরিবাহীতে প্রবাহমাত্রার অনুপাতের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়।
রোধের বর্তনী চিত্র
  • রোধের একক হল ওহম (Ω) বা ভোল্ট-অ্যাম্পিয়ার⁻¹।
  • রোধের মাত্রা হল ML2T−3A−2
  • রোধের অন্যোন্যক হল পরিবাহিতা। যারএকক হল ohm⁻¹ বা mho বা সিমেন্স (S)।
  • পরিবাহিতার মাত্রা হল M⁻¹L⁻²T³A²।
  • ওহমীয় পরিবাহীর ক্ষেত্রে V-I লেখচিত্র সরলরৈখিক। উদাহরণ – ধাতব পরিবাহী।
I-V লেখচিত্র (পরিবাহী)

যে সমস্ত পরিবাহী ওহমের সূত্র মেনে চলে না তাদের অ-ওহমীয় পরিবাহী বলে। এদের ক্ষেত্রে V-I লেখচিত্র সরলরৈখিক হয় না। যেমন – অর্ধপরিবাহী Ge, Si।

I-V লেখচিত্র (অর্ধপরিবাহী)

রোধের নির্ভরশীলতা

কোনো পরিবাহীর রোধ নির্ভর করে –

  • উষ্ণতার ওপর – উষ্ণতা বাড়লে পরিবাহীর রোধ বাড়ে। এক্ষেত্রে সম্পর্কটি হল Rt ​= R0​(1 + αt),
    • দৈর্ঘ্যের ওপর R ∝ L,
    • প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলের ওপর \(R\propto\frac1A\),
    • উপাদানের ওপর।
  • সমীকরণ হল \(R=\rho\cdot\frac1A\)​ [ρ হল রোধাঙ্ক]
  • কোনো পরিবাহীর আয়তন স্থির রেখে দৈর্ঘ্য n গুণ বৃদ্ধি করা হলে তার রোধ হবে n2 গুণ।

রোধাঙ্ক

কোনো পরিবাহীর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থচ্ছেদ একক হলে তার রোধকে রোধাঙ্ক বলে।

  • রোধাঙ্কের একক Ω⋅m বা Ω⋅cm।
  • এর মাত্রা হল ML3T−3A−2
  • রোধাঙ্ক নির্ভর করে উপাদানের ওপর এবং তাপমাত্রার ওপর।
  • রোধাঙ্কের অন্যোন্যক হল পরিবাহিতাঙ্ক। এর একক মো⋅মিটার⁻¹ (Ω⋅m−1)।
ρ-T লেখচিত্র (পরিবাহী)

অর্ধপরিবাহী

যে সমস্ত পদার্থের রোধ ও রোধাঙ্ক সুপরিবাহী ও অন্তরক পদার্থের অন্তবর্তী হয় তাদের অর্ধপরিবাহী বলে।

  • উদাহরণ হল জারমেনিয়াম (Ge) ও সিলিকন (Si)।
  • উষ্ণতা বাড়লে এদের রোধ ও রোধাঙ্ক কমে।
  • এদের ক্ষেত্রে রোধের উষ্ণতা গুণাঙ্ক ঋণাত্মক হয়।
ρ-T লেখচিত্র (অর্ধপরিবাহী)

অতিপরিবাহী

যে সমস্ত পরিবাহীর রোধ ও রোধাঙ্ক একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় শূন্য হয়ে যায় তাকে অতিপরিবাহী বলে।

সংকট তাপমাত্রায় রোধাঙ্ক শূন্য। উদাহরণ – 7K তাপমাত্রায় সিসা।

ρ-T লেখচিত্র (অতিপরিবাহী)

রোধের সমবায়

শ্রেণি সমবায় – একাধিক রোধকে শ্রেণি সমবায়ে যুক্ত করলে প্রতিটিতে প্রবাহ সমান হয় কিন্তু বিভব আলাদা হতে পারে।

  • তুল্যরোধ R = R1​ + R2​ + R3
  • তুল্যরোধের মান সমবায়ের সবচেয়ে বড়ো রোধের থেকেও বড়ো হয়।
রোধের শ্রেণি সমবায়

সমান্তরাল সমবায় – একাধিক রোধকে সমান্তরাল সমবায়ে যুক্ত করলে প্রতিটিতে প্রবাহ আলাদা হয় কিন্তু বিভব সমান থাকে।

  • তুল্যরোধ R হলে, \(\frac{1}{R} = \frac{1}{R_1} + \frac{1}{R_2} + \frac{1}{R_3}\)
  • তুল্যরোধের মান সমবায়ের ক্ষুদ্রতম রোধের থেকেও কম।
  • সমান্তরাল সমবায়ের প্রতিটি অংশের রোধ ও প্রবাহমাত্রার গুণফল সমান।
রোধের সমান্তরাল সমবায়

কোশ যুক্ত বর্তনী ও অভ্যন্তরীণ রোধ –

কোনো কোশের মধ্য দিয়ে প্রবাহ চলাকালীন কোশের ভিতরের উপাদানগুলি ওই প্রবাহে যে বাধা সৃষ্টি করে তাকে কোশের অভ্যন্তরীণ রোধ বলে।

  • কোনো কোশের সঙ্গে তার দিয়ে কোনো রোধ যুক্ত করলে তাকে বর্তনী বলে।
  • বর্তনীতে প্রবাহ অভ্যন্তরীণ রোধের মধ্য দিয়ে গেলে তার দুই প্রান্তে যে বিভব সৃষ্টি হয় তাকে নষ্ট ভোল্ট বলে। ∴ নষ্ট ভোল্ট = Ir
  • E তড়িচ্চালক বলের খানিকটা R রোধের মধ্য দিয়ে প্রবাহ যাওয়ার ফলে বিভব হিসেবে সৃষ্টি হয় ও বাকিটা r রোধের মধ্যে নষ্ট ভোল্ট হিসেবে ব্যয় হয়। ∴ E = V + Ir
বর্তনী

বিভিন্ন চিত্রে বিভব, তড়িচ্চালক বলের মধ্যে সম্পর্ক –

বিভিন্ন রোধের সমবায়ে বিভব ও তড়িৎচালক বল

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

তড়িৎপ্রবাহমাত্রার ȘI একক কী?

তড়িৎপ্রবাহমাত্রার SI একক হল কুলম্ব·সেকেন্ড⁻¹ বা অ্যাম্পিয়ার (A)।

1 emu = কত অ্যাম্পিয়ার?

1 emu = 10 অ্যাম্পিয়ার (10A)।

ওহমের সূত্রটি বিবৃত করো।

উষ্ণতা ও অন্যান্য ভৌত অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে কোনো পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভবপার্থক্য ওর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহমাত্রার সমানুপাতিক হয়।

পরিবাহীর রোধ কাকে বলে? এর SI একক কী?

কোনো পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভবপ্রভেদ এবং পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহমাত্রার অনুপাতকে ওই পরিবাহীর রোধ বলে। পরিবাহীর রোধ এর SI একক হল ওহম (Ohm)।

ওহমীয় ও অ-ওহমীয় পরিবাহীর উদাহরণ দাও।

ওহমীয় পরিবাহীর উদাহরণ হল ধাতব পরিবাহী। অ-ওহমীয় পরিবাহীর উদাহরণ হল অর্ধপরিবাহী Ge, Si।

EMF ও অভ্যন্তরীণ রোধের মধ্যে সম্পর্ক কী?

EMF ও অভ্যন্তরীণ রোধের মধ্যে সম্পর্ক হল – E = V + Ir

পরিবাহীর রোধ কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

পরিবাহীর রোধ সাধারণভাবে পরিবাহীর উপাদান, উষ্ণতা, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থচ্ছেদের ওপর নির্ভর করে। তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে পরিবাহীর রোধের ওপর আলোক, চৌম্বকক্ষেত্র ও চাপের প্রভাব দেখা যায়।

রোধাঙ্ক কাকে বলে? এর CGS ও SI একক কী?

কোনো পরিবাহীর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থচ্ছেদ একক হলে তার রোধকে রোধাঙ্ক বলে। রোধাঙ্কের SI একক হল ওহম-মিটার (Ω·m) এবং CGS একক হল ওহম-সেমি (Ω·cm)।

একটি করে অর্ধপরিবাহী ও অতিপরিবাহীর নাম বলো।

একটি অর্ধপরিবাহী নাম হল জারমেনিয়াম (Ge)। এবং অতিপরিবাহীর নাম হল 7K তাপমাত্রায় সিসা।

তুল্যরোধ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে শ্রেণি সমবায় ও সমান্তরাল সমবায়ের সূত্র দুটি বলো।

তুল্যরোধ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে শ্রেণি সমবায় সমবায়ের সূত্র – R = R1​ + R2​ + R3
তুল্যরোধ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সমান্তরাল সমবায়ের সূত্র \(\frac{1}{R} = \frac{1}{R_1} + \frac{1}{R_2} + \frac{1}{R_3}\)


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ “তড়িৎপ্রবাহ, ওহমের সূত্র ও রোধ” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই অংশটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “তড়িৎপ্রবাহ, ওহমের সূত্র ও রোধ” অংশটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের ষষ্ঠ অধ্যায় “চলতড়িৎ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই “তড়িৎপ্রবাহ, ওহমের সূত্র ও রোধ” অংশটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ব্রোমিনের সঙ্গে অ্যাসিটিলিনের যুত বিক্রিয়াটি উল্লেখ করো।

ব্রোমিনের সঙ্গে অ্যাসিটিলিনের যুত বিক্রিয়াটি উল্লেখ করো।

কার্যকরী মূলক বা ক্রিয়াশীল গ্রুপ কাকে বলে? কার্যকরী মূলক ও জৈব মূলকের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।

কার্যকরী মূলক বা ক্রিয়াশীল গ্রুপ কাকে বলে? কার্যকরী মূলক ও জৈব মূলকের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও।

একটি জৈব যৌগের আণবিক সংকেত C₂H₄O₂। যৌগটি জলে দ্রাব্য এবং যৌগটির জলীয় দ্রবণে NaHCO₃ যোগ করলে CO₂ নির্গত হয়। জৈব যৌগটিকে শনাক্ত করো। জৈব যৌগটির সঙ্গে ইথানলের বিক্রিয়া শর্ত ও সমিত রাসায়নিক সমীকরণসহ লেখো।

C₂H₄O₂ সংকেতের একটি জৈব যৌগ NaHCO₃-এর সাথে CO₂ গ্যাস দেয়। যৌগটি শনাক্ত করো ও ইথানলের সাথে এর বিক্রিয়ার শর্তসহ সমীকরণ দাও।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Life Science Suggestion 2026 – রচনাধর্মী প্রশ্ন

Madhyamik Life Science Suggestion 2026 – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

Madhyamik Life Science Suggestion 2026 – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – স্তম্ভ মেলাও

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – সত্য মিথ্যা