মাধ্যমিক ভূগোল – বায়ুমণ্ডল – বায়ুর চাপ বলয় ও বায়ুপ্রবাহ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

Souvick

আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল” -এর “বায়ুর চাপ বলয় ও বায়ুপ্রবাহ” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

মাধ্যমিক ভূগোল - বায়ুমণ্ডল - বায়ুর চাপ বলয় ও বায়ুপ্রবাহ - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর
Contents Show

বায়ুর উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ কীভাবে নির্ণয় করা হয়?

বায়ুর চাপের পরিমাণ ব্যারোমিটার যন্ত্রে 986 মিলিবার থেকে 1013 মিলিবার হলে তাকে সাধারণ বায়ুচাপ ধরা হয়। 986 মিলিবারের কম চাপযুক্ত বায়ু হল নিম্নচাপ এবং 1013 মিলিবারের বেশি চাপযুক্ত বায়ু হল উচ্চচাপবিশিষ্ট বায়ু।

বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ নির্ণয় করা হয় কীভাবে?

অথবা, অ্যানিমোমিটার কাকে বলে?

বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ পরিমাপ করার জন্য যে যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয় তার নাম অ্যানিমোমিটার। এই যন্ত্রে একটি লম্বা দণ্ডের মাথায় চারটি বাটি লাগানো থাকে। আর দণ্ডের নীচের দিকে ঘড়ির মতো একটি যন্ত্র থাকে। বায়ুর বেগে দণ্ডটিসহ যখন বাটিগুলি ঘোরে, তখন নীচের ওই যন্ত্রে বায়ুর গতিবেগ সূচিত হয়।

বায়ুচাপ মাপার যন্ত্রগুলির নাম করো।

ব্যারোমিটারের সাহায্যে বায়ুর চাপ মাপা হয়। এ ছাড়া ফটিন -এর ব্যারোমিটার, অ্যানিরয়েড ব্যারোমিটার, ব্যারোগ্রাফ ও অন্যান্য অত্যাধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুচাপ মাপা হয়।

ডোলড্রাম বলতে কী বোঝ?

নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর বেশি উষ্ণতা থাকে বলে বায়ু অনবরত উষ্ণ ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায়। এজন্য এখানে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বায়ুর প্রবাহ বা গতি বোঝা যায় না। ফলে সর্বদা ভূপৃষ্ঠ-সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলে শান্তভাবে বিরাজ করে। তাই নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলের অপর নাম নিরক্ষীয় শান্তবলয় বা ডোলড্রাম।

কোরিওলিস বল কাকে বলে?

আবর্তন গতির জন্য পৃথিবীতে একটি কেন্দ্রাতিগ বা কেন্দ্রবহির্মুখী শক্তি সৃষ্টি হয়, যার প্রভাবে পৃথিবীর সব প্রবহমান পদার্থেরই দিকবিক্ষেপ ঘটে। 1835 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি অঙ্কশাস্ত্রবিদ গাসপার্ড গুস্তাভ কোরিওলিস পৃথিবীর আবর্তনঘটিত এই শক্তি বা বলের তত্ত্বটি আবিষ্কার করেন বলে একে কোরিওলিস বল নামে অভিহিত করা হয়। এই বলের প্রভাবে পৃথিবীর সব পদার্থই পৃথিবী থেকে ছিটকে বেরিয়ে যেতে চায়। তবে তার মধ্যে বেশিরভাগ পদার্থই এই বলকে এড়িয়ে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে পৃথিবীপৃষ্ঠে আটকে থাকলেও বায়ুপ্রবাহ, সমুদ্রস্রোত প্রভৃতি প্রবহমান বস্তুসমূহের দিকবিক্ষেপ ঘটে। কোরিওলিস বলের জন্যই এরকমটি ঘটে।

সমচাপ রেখা কী?

কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ভূপৃষ্ঠের ওপর সমান বায়ুচাপবিশিষ্ট জায়গাগুলিকে মানচিত্রে যে রেখার সাহায্যে যুক্ত করা হয়, তাকে সমচাপ রেখা বলে। মানচিত্রে সমচাপ রেখা টানার সময় উচ্চস্থানের বায়ুর চাপকে সমুদ্রপৃষ্ঠের বায়ুর চাপে রূপান্তরিত করে নেওয়া হয়।

জেট বায়ু কী?

ঊধর্ব ট্রপোস্ফিয়ারে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত অত্যন্ত দ্রুতগতিসম্পন্ন, সংকীর্ণ, সর্পিলাকার বায়ুকে জেট বায়ু বলে। এর গতিবেগ 100-500 কিমি/ঘণ্টা। জেট বায়ু দু-প্রকারের – মেরুদেশীয় জেট বায়ু ও উপক্রান্তীয় জেট বায়ু।

আয়ন বায়ু কাকে বলে?

আয়ন কথাটি অর্থ – ‘আয়ন’ কথাটির অর্থ ‘পথ’।

আয়ন বায়ুর ধারণা – উভয় গোলার্ধের উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে যে বায়ু সারাবছর ধরে নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট পথে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়, সেই বায়ুকে বলা হয় আয়ন বায়ু।

আয়ন বায়ুর অন্য নাম – আগেকার দিনে নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত এই বায়ুপ্রবাহের সাহায্যে পালতোলা জাহাজে বাণিজ্য করার সুবিধা হত বলে এই বায়ুপ্রবাহের নাম হয় বাণিজ্য বায়ু।

প্রত্যয়ন বায়ু কাকে বলে?

প্রধানত পৃথিবীর আবর্তন গতির প্রভাবে দুই মেরুবৃত্ত প্রদেশে দুটি নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে। বায়ুর চাপের সমতা রক্ষার জন্য উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে বায়ু সারাবছর ধরে নিয়মিতভাবে ওই দুই মেরুবৃত্ত প্রদেশের দিকে ছুটে যায়। এভাবে সৃষ্টি হয় পশ্চিমা বায়ু। যেহেতু আয়ন বায়ুর গতিপথের ঠিক বিপরীত দিকে এই পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয়, তাই এই পশ্চিমা বায়ুকেই প্রত্যয়ন বায়ু বলে।

প্রবল পশ্চিমা বায়ু কী?

উত্তর গোলার্ধে স্থলভাগ বেশি থাকে বলে বায়ু প্রবাহিত হওয়ার সময় বেশি বাধা পায়। কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগের পরিমাণ বেশি থাকে বলে এই বায়ু প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়। তাই দক্ষিণ গোলার্ধের পশ্চিমা বায়ুকে প্রবল পশ্চিমা বায়ু বলে।

গর্জনশীল চল্লিশা কী?

দক্ষিণ গোলার্ধে 40° অক্ষাংশের পর স্থলভাগ বিশেষ না থাকায় পশ্চিমা বায়ুর গতির ওপর ঘর্ষণজনিত বাধা কম পড়ে। এজন্য দক্ষিণ গোলার্ধে 40° থেকে 50° অক্ষাংশের মধ্যে বিস্তৃত জলরাশির ওপর দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু সারাবছরই, সশব্দে প্রবলবেগে এবং অপ্রতিহতভাবে চলাচল করে। প্রবল বেগে প্রবাহিত হয় বলে এই অক্ষাংশের দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ুকে গর্জনশীল চল্লিশা বলে।

নিয়ত বায়ু কী?

সারাবছর নির্দিষ্ট দিকে, নির্দিষ্ট গতিতে, নিয়মিতভাবে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে নিয়ত বায়ু বলে। পৃথিবীতে স্থায়ী বায়ুচাপ বলয়গুলি থেকে নিয়ত বায়ু উৎপন্ন হয়। নিয়ত বায়ু তিন ধরনের। যথা –

  1. আয়ন বায়ু,
  2. পশ্চিমা বায়ু ও
  3. মেরু বায়ু।

মৌসুমি বায়ু কাকে বলে?

আরবি শব্দ ‘মৌসিম’ -এর বাংলা প্রতিশব্দ ‘মৌসুমি’, যার অর্থ ‘ঋতু’। স্থলভাগ ও জলভাগের মধ্যে বায়ুর উষ্ণতা ও বায়ুচাপের পার্থক্যজনিত কারণে যে সাময়িক বায়ু নির্দিষ্ট ঋতুতে নির্দিষ্ট দিক থেকে প্রবাহিত হয়, তাকে মৌসুমি বায়ু বলে।

ভারতীয় উপমহাদেশে গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়।

মৌসুমি বায়ুকে ঋতুভিত্তিক বায়ু বলে কেন?

‘মৌসিম’ কথার অর্থ ঋতু। ভারতে গ্রীষ্মে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। ঋতুভেদে এই দুটি বায়ুর চরিত্রগত পার্থক্য থাকে বলে এদের ঋতুভিত্তিক বায়ু বলে।

ঘূর্ণবাত কী?

ঘূর্ণবাত হল এক প্রকার আকস্মিক বা অনিয়মিত বায়ু। কোনো স্বল্প পরিসর স্থানে শক্তিশালী নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হলে পার্শ্ববর্তী উচ্চচাপযুক্ত অঞ্চল থেকে শীতল বায়ু ছুটে এসে ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপ কেন্দ্রে প্রবেশ করে। একে ঘূর্ণবাত বলে। ঘূর্ণবাত দু-প্রকার –

  1. ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত এবং
  2. নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত বা মধ্য অক্ষাংশীয় ঘূর্ণবাত।

ঘূর্ণবাতের চক্ষু কী?

ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রকে ঘূর্ণবাতের চক্ষু বলে। চক্ষুকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণবাতের বাতাস ঘুরতে থাকে। চক্ষুর ব্যাস সাধারণত 30-65 কিমি পর্যন্ত হলেও ক্ষুদ্রাকৃতি চক্ষুর ব্যাস 20 কিমি হয়। ঘূর্ণবাতের সর্বত্র ঝড় বৃষ্টিপাত হলেও চক্ষু স্থানটি শান্ত ও মেঘহীন হয়।

চিনুক কী?

চিনুক শব্দের অর্থ অর্থ – ইংরেজি ‘chinook’ শব্দের অর্থ তুষার ভক্ষক বা তুষার খাদক।

চিনুক যেখানে দেখা যায় – চিনুক একপ্রকার উষ্ণ স্থানীয় বায়ু। উত্তর আমেরিকার রকি পার্বত্য অঞ্চলের পূর্ব ঢাল বেয়ে যে উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ু প্রেইরি সমভূমিতে নেমে আসে, তার নাম চিনুক।

চিনুকের প্রভাব – উত্তর আমেরিকায় শীতকালে রকি পর্বতের পূর্ব ঢাল বেয়ে যে উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ু নীচের দিকে নামে তার প্রভাবে পর্বতের পাদদেশসহ সমগ্র প্রেইরি অঞ্চলের তুষার গলে যায়। এজন্য এই বায়ুর নামকরণ হয়েছে চিনুক। এই তুষারগলা জলে ভূমি সিক্ত হয় বলে প্রেইরি অঞ্চলে বিস্তীর্ণ তৃণভূমি সৃষ্টি হয়েছে।

ফন কী?

ফনের ধরন – ফন একধরনের উষ্ণ স্থানীয় বায়ু।

ফনের অবস্থান – ইউরোপের আল্পস পর্বতের অনুবাত ঢাল বেয়ে রাইন নদী উপত্যকার দিকে এই বায়ু প্রবাহিত হয়।

ফনের প্রভাব –

  • উষ্ণ-আর্দ্র বায়ু আল্পস পর্বতগাত্র অবলম্বন করে ক্রমশ ওপরে ওঠার সময় শীতল ও ঘনীভূত হয়, এর ফলে পর্বতের প্রতিবাত চাল অঞ্চলে বৃষ্টি ও তুষারপাত হয়।
  • ওই বায়ু আল্পস পর্বত অতিক্রম করে যখন নীচের সংকীর্ণ রাইন নদী উপত্যকায় নামতে থাকে, তখন সংকোচনের জন্য বায়ুর চাপ বেড়ে যায় বলে তা ক্রমশ উষ্ণ এবং শুষ্ক হতে থাকে।
  • ফন বায়ুর আগমনের ফলে বায়ুর উষ্ণতা কয়েক মিনিটের মধ্যে 14°C পর্যন্ত বেড়ে যায়। এর ফলে তুষার ও বরফ গলে যায় এবং কখনো-কখনো দাবানলের সৃষ্টি হয়।

সিরোক্কো কী?

সিরোক্কোর ধরন ও অবস্থান – সাহারা মরুভূমির উষ্ণ, শুষ্ক এবং ধুলো ভরতি এই স্থানীয় বায়ুকে সিরোক্কো বলে।

সিরোক্কোর প্রভাব –

  • সিরোক্কো বায়ু উত্তর আফ্রিকার উপকূলে শুষ্ক ধূলিপূর্ণ অবস্থা, কিন্তু ইউরোপে শীতল ও আর্দ্র আবহাওয়ার সৃষ্টি করে।
  • ইটালি, সিসিলি দ্বীপে এই বাতাস জলপাই বাগানের খুব ক্ষতি করে।
  • এই বায়ু মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

লু কাকে বলে?

উত্তর-পশ্চিম ভারতের একপ্রকার স্থানীয় বায়ুর নাম ‘লু’। গ্রীষ্মকালে মে-জুন মাসে দিনেরবেলা উত্তর-পশ্চিম ভারতের স্থলভাগ প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয়। ওই উষ্ণ ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরের বায়ুও প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয় এবং দুপুর ও অপরাহ্নের দিকে প্রবল বেগে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালভাবে প্রবাহিত হয়। এই উষ্ণ, শুষ্ক ও ঝোড়ো বায়ুপ্রবাহকেই স্থানীয় অধিবাসীরা বলে ‘লু’।

আঁধি কী?

আঁধির ধারণা – পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান ও পাঞ্জাবে বসন্তের শেষদিকে যে ধুলোর ঝড় দেখা যায়, তাকে আঁধি বলে।

আঁধির নামকরণের সার্থকতা – এই ঝড়ের আগমনে যেন আঁধার নেমে আসে, তাই একে আঁধি বা কালো ঝড় বলে। আঁধি ঘন্টায় প্রায় 70-100 কিমি গতিবেগে বিপুল পরিমাণ ধুলিরাশি উড়িয়ে নিয়ে চলে।

আঁধির প্রভাব –

  • এই ধূলিঝড়ে ছিটেফোঁটার মতো খুব সামান্য বৃষ্টি হয়।
  • আঁধি প্রবাহিত হলে তাপমাত্রা কিছুটা কমে যায়।

হারিকেন বলতে কী বোঝ?

অত্যন্ত শক্তিশালী এক বিশেষ ধরণের ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতকে হারিকেন বলে। পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ ও ক্যারিবিয়ান সাগরে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত হারিকেন নামে পরিচিত। ঘন্টায় 140 কিলোমিটারের বেশি গতিবেগসম্পন্ন এই ঘূর্ণবাতের ব্যাস প্রায় 650 কিলোমিটার এবং এর কেন্দ্রে থাকে একটি ‘চোখ’ বা গভীর নিম্নচাপযুক্ত অঞ্চল।

টর্নেডো কী?

ভূপৃষ্ঠ থেকে ঊর্ধ্বদিকে প্রসারিত ফানেল -এর মতো আকৃতির মেঘ থেকে যে প্রবল ঝড়ের উৎপত্তি হয়, তাকে টর্নেডো বলে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে টর্নেডোকে টুইস্টার বলা হয়। টর্নেডোর বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

  • এই প্রকার ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় 500 কিমি বা তার বেশি হয়।
  • টর্নেডোর কেন্দ্রাঞ্চলের ব্যাস 100-500 মিটার পর্যন্ত হয়।
  • টর্নেডোকে এককভাবে আবার একাধিক টর্নেডোর সম্মিলনে গঠিত টর্নেডো পরিবার হিসেবেও দেখা যায়। 
  • টর্নেডোর প্রভাবে একটি ক্ষুদ্র অঞ্চলে ভয়ংকর ক্ষয়ক্ষতি ঘটে।

মিস্ট্রাল বায়ু কোথায় দেখা যায়?

শীতকালে ইউরোপের আল্পস পর্বত থেকে ফ্রান্সের রোন নদীর উপত্যকা দিয়ে ভূমধ্যসাগরের অভিমুখে একধরনের শীতল, শুষ্ক বায়ু চলাচল করে। এর নাম মিস্ট্রাল।

বোরা বায়ু কী?

শীতকালে উত্তর ইটালি এবং অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের পূর্ব উপকূলে যে শীতল ক্যাটাবেটিক বায়ু প্রবাহিত হয় তার নাম বোরা। এই বায়ু ঘণ্টায় 100 কিমিরও বেশি গতিবেগে প্রবাহিত হয়। বোরা বায়ু মেঘমুক্ত এবং ঠান্ডা আবহাওয়ার সৃষ্টি করে।

আবহাওয়া ও জলবায়ু বলতে কী বোঝায়?

আবহাওয়া – কোনো নির্দিষ্ট স্থানের কোনো নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুর উষ্ণতা, বায়ুর চাপ, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুর আর্দ্রতা, আকাশে মেঘের অবস্থা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রভৃতি উপাদানের অবস্থাকে আবহাওয়া বলা হয়। অর্থাৎ আবহাওয়া হল বায়ুমণ্ডলের সাময়িক অবস্থা, যা বায়ুমণ্ডলের কতকগুলি উপাদানের ওপর নির্ভরশীল।

জলবায়ু – কোনো বিশাল অঞ্চলের কমপক্ষে 35 বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থাকে জলবায়ু বলা হয়। সুতরাং, জলবায়ু হল আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্যসমূহের দীর্ঘকালীন গড় অবস্থা।

আয়ন বায়ুর অপর নাম বাণিজ্যিক বায়ু কেন?

‘আয়ন’ কথাটির অর্থ পথ। আগেকার দিনে পালতোলা বাণিজ্য-জাহাজ এই আয়ন বায়ুপ্রবাহের সাহায্যে নির্দিষ্ট পথে চলাচল করে বাণিজ্য করত বলে এই বায়ুর নাম হয়েছে বাণিজ্য বায়ু।

প্রতীপ ঘূর্ণবাত কাকে বলে?

হিমমণ্ডল ও নাতিশীতোষ্ণমণ্ডলের বায়ু শীতল হয়ে উচ্চচাপ কেন্দ্র গঠন করলে, সেখান থেকে বায়ু অধোগামী ও বহির্মুখী হয়ে অপেক্ষাকৃত কম বায়ুচাপযুক্ত অঞ্চলের দিকে ঘুরতে ঘুরতে ছুটে যায়। ঘূর্ণায়মান এইরূপ বায়ুপ্রবাহকে প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে। এই ঘূর্ণবাতের গতি উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণাবর্তে বা ঘড়ির কাঁটার গতির দিকে, আর দক্ষিণ গোলার্ধে বামাবর্তে বা ঘড়ির কাঁটার গতির বিপরীত দিকে থাকে।

পার্বত্য বায়ু কাকে বলে?

অর্থ – গ্রিক শব্দ ‘Kata baino’ -র অর্থ হল ‘to go down’ বা ‘নীচের দিকে নামা’।

পার্বত্য বায়ু সৃষ্টির কারণ – পার্বত্য অঞ্চলে রাতেরবেলা তাপ বিকিরণের ফলে উপত্যকার দুই পাশের ঢাল বেয়ে উপরস্থ শীতল ও ভারী বায়ু নীচের দিকে নেমে আসে ও উপত্যকার তলদেশে অবস্থান করে। এই বায়ুকে পার্বত্য বায়ু বা নিম্নঢালবাহী বায়ু বা ক্যাটাবেটিক বায়ু বলে।

উপত্যকা বায়ু বলতে কী বোঝ?

অর্থ – গ্রিক শব্দ ‘Anabatikos’ -র অর্থ হল ‘rising’ বা ‘ওপরের দিকে ওঠা’।

উপত্যকা বায়ু সৃষ্টির কারণ – দিনেরবেলায় সূর্যরশ্মির প্রভাবে উপত্যকার দুই পাশের উপরস্থ বায়ু উষ্ণ ও হালকা হয় এবং উপত্যকার দুই ঢাল অনুসরণ করে নীচের দিক থেকে ওপরের দিকে প্রবাহিত হয়। এই প্রকার বায়ুকে উপত্যকা বায়ু বা ঊর্ধ্বঢালবাহী বায়ু বা অ্যানাবেটিক বায়ু বলে। উপত্যকা বায়ুপ্রবাহের ফলে পর্বতের শীর্ষদেশে স্তূপ মেঘের সৃষ্টি হয়।

উপত্যকা বায়ু বলতে কী বোঝ?

জেট বায়ুর দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

ঊর্ধ্ব ট্রপোস্ফিয়ার দিয়ে পশ্চিম থেকে পূর্বে চলাচলকারী বায়ুস্রোত জেট বায়ু নামে পরিচিত। এই বায়ুর দুটি বৈশিষ্ট্য হল –

  • জেট বায়ু অত্যন্ত দ্রুতগামী বায়ু। এই বায়ু ঘণ্টায় 100-400 কিমির অধিক গতিবেগে প্রবাহিত হয়।
  • এই বায়ু অত্যন্ত সংকীর্ণ এবং আঁকাবাঁকা পথে অগ্রসর হয়।

বাইস ব্যালট সূত্র কী?

উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে বাইস ব্যালট (Buys Ballot) নামে একজন ওলন্দাজ বিজ্ঞানী বায়ুচাপের তারতম্য ও বায়ুপ্রবাহের মধ্যে এক সম্পর্ক নির্ধারণ করে একটি সূত্র প্রদান করেন। এই সূত্রানুযায়ী উত্তর গোলার্ধে বায়ুপ্রবাহের দিকে পিছন করে দাঁড়ালে ডানদিকের তুলনায় বামদিকে বায়ুর চাপ কম অনুভূত হয় এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঠিক এর বিপরীত অবস্থা দেখা যায়। এটিই বাইস ব্যালট সূত্র (Buys Ballot’s law) নামে পরিচিত।

জলস্তম্ভ ও বালিস্তম্ভ কী?

জলস্তম্ভ – ঘূর্ণবাত যখন সমুদ্রের ওপর দিয়ে অগ্রসর হয়, তখন অনেকসময় ওই ঘূর্ণবাত সমুদ্রের জলরাশিকে এমনভাবে আকর্ষণ করে যে, জলরাশি স্তম্ভের মতো উঁচুতে উঠে পড়ে। একে বলা হয় জলস্তম্ভ।

বালিস্তম্ভ – মরুভূমির ওপর দিয়ে ঘূর্ণবাত অগ্রসর হলে, সেই জায়গার বালিকণাকে আকর্ষণ করে ওপরের দিকে তুলে ফেলে। একে বলা হয় বালিস্তম্ভ।

সাময়িক বায়ু কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

দিনের বিভিন্ন সময়ে বা বছরের বিভিন্ন ঋতুতে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা এবং চাপের পার্থক্যের জন্য সাময়িকভাবে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে সাময়িক বায়ু বলা হয়। উদাহরণ –

  1. সমুদ্রবায়ু,
  2. স্থলবায়ু এবং
  3. মৌসুমি বায়ু।

স্থলবায়ু কাকে বলে?

স্থলবায়ু একপ্রকার সাময়িক বায়ু। জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দ্রুত উষ্ণ হয় এবং শীতলও হয় তাড়াতাড়ি। এর ফলে স্থলভাগ ও জলভাগের মধ্যে তাপমাত্রার তারতম্য হয়। যেমন – রাত্রিবেলা স্থলভাগ দ্রুত তাপবিকিরণ করে যখন ঠান্ডা হয়ে যায়, জলভাগ তখনও উষ্ণ থাকে। এর ফলে জলভাগে নিম্নচাপ ও স্থলভাগে উচ্চচাপ বিরাজ করে। তখন, স্থলভাগ থেকে ঠান্ডা ও ভারী বায়ু উষ্ণ জলভাগের দিকে ছুটে যায়। স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে ছুটে আসায় এই বায়ুকে বলা হয় স্থলবায়ু।

সমুদ্রবায়ু কাকে বলে?

সমুদ্রবায়ু একধরনের সাময়িক বায়ু। সমুদ্র-সংলগ্ন অঞ্চলে জলভাগ ও স্থলভাগের মধ্যে তাপমাত্রার তারতম্যে এই বায়ুর উৎপত্তি হয়। দিনেরবেলায় জলভাগ অপেক্ষা স্থলভাগ বেশি উত্তপ্ত হওয়ায় স্থলভাগের ওপর নিম্নচাপ ও জলভাগের ওপর উচ্চচাপ বিরাজ করে। তখন বায়ুচাপের সমতা রক্ষার জন্য জলভাগের ওপর থেকে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা ও ভারী বায়ু স্থলভাগের দিকে ছুটে আসে। সমুদ্র থেকে স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয় বলে একে সমুদ্রবায়ু বলা হয়।

জিওস্ট্রফিক বায়ু বলতে কী বোঝ?

ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বাংশে গড়ে প্রায় 10-12 কিলোমিটারের মধ্যে সমচাপরেখার সাথে সমান্তরালে প্রবাহিত বায়ুকে জিওস্ট্রফিক বায়ু বলে। সাধারণত বায়ুচাপের ঢালের বল ও কোরিওলিস বলের মধ্যে নিখুঁত ভারসাম্য হলে জিও স্ট্রফিক বায়ুর সৃষ্টি হয়।


আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল” -এর “বায়ুর চাপ বলয় ও বায়ুপ্রবাহ” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Categories -
Please Share This Article

Related Posts

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026

Madhyamik Life Science Suggestion 2026

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026 – রচনাধর্মী প্রশ্ন

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026 – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026 – সত্য মিথ্যা