মাধ্যমিক ভূগোল – ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ – ভারতের শিল্প – ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

Souvick

আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের ষষ্ঠ অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের শিল্প” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

মাধ্যমিক ভূগোল - ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ - ভারতের শিল্প - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর
Contents Show

ভারতীয় অর্থনীতিতে লোহা ও ইস্পাত শিল্প কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ভারতের বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে লোহা ও ইস্পাত ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। নানা কারণে ভারতীয় অর্থনীতিতে লোহা ও ইস্পাত শিল্পের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণগুলি হল –

  • ভারতের মতো বৃহৎ জনসংখ্যার এবং বৈচিত্র্যময় ভূপ্রকৃতির দেশে বাসস্থান নির্মাণ, পরিবহণের জন্য রেলপথ ও সেতু নির্মাণ, যানবাহন নির্মাণ, শিল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় সামগ্রী নির্মাণের জন্য অন্যতম মূল উপাদানই হল লোহা ও ইস্পাত। লোহা ও ইস্পাতের এই বিপুল চাহিদাই হল লোহা ও ইস্পাত শিল্পের ভিত্তিস্তম্ভ।
  • এটি বৃহৎ শিল্প হওয়ায় লোহা ও ইস্পাত শিল্পের মাধ্যমে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
  • লোহা ও ইস্পাত শিল্পে উৎপন্ন সামগ্রী রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। এইসব কারণে ভারতে লোহা ও ইস্পাত শিল্পের গুরুত্ব সীমাহীন। 

ভারতের কোথায় কোথায় লোহা ও ইস্পাত কারখানা আছে?

ভারতে মূল লোহা ও ইস্পাত সংস্থাগুলি হল স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (SAIL), রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগম লিমিটেড (RINL), টাটা স্টিল লিমিটেড ও জিন্দাল পাওয়ার অ্যান্ড স্টিল লিমিটেড। নীচের সারণিতে সংস্থাগুলির অধীনস্থ গুরুত্বপূর্ণ কারখানাগুলির অবস্থান উল্লেখ করা হল –

সংস্থাকারখানা
স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (SAIL)ভিলাই স্টিল প্লান্ট (ছত্তিশগড়); দুর্গাপুর স্টিল প্লান্ট, ইন্ডিয়ান আয়রন অ্যান্ড স্টিল প্লান্ট (পশ্চিমবঙ্গ); রৌরকেলা স্টিল প্লান্ট (ওডিশা); বোকারো স্টিল প্লান্ট (ঝাড়খণ্ড)।
বিশ্বেশ্বরায়া আয়রন অ্যান্ড স্টিল লিমিটেড (কর্ণাটক); দুর্গাপুর অ্যালয় স্টিল প্লান্ট (পশ্চিমবঙ্গ); সালেম স্টিল প্লান্ট (তামিলনাড়ু)।
রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগম লিমিটেড (RINL)বিশাখাপত্তনম স্টিল প্লান্ট (অন্ধ্রপ্রদেশ)।
টাটা স্টিল লিমিটেডটাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি (ঝাড়খণ্ড)।
জিন্দাল পাওয়ার অ্যান্ড স্টিল লিমিটেডবিজয়নগর স্টিল প্লান্ট (কর্ণাটক)।

লোহা ও ইস্পাত কারখানা স্থাপনের জন্য কী ধরনের সুবিধার প্রয়োজন?

লোহা ও ইস্পাত কারখানা স্থাপনের জন্য নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি থাকা প্রয়োজন –

  • লোহা ও ইস্পাত শিল্পের জন্য কাঁচামাল হিসেবে আকরিক লোহা, কয়লা, চুনাপাথর, ডলোমাইট, ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি দ্রব্যের প্রয়োজন হয়। সেজন্য খনি অঞ্চলের কাছাকাছি কারখানাগুলি স্থাপন করা হয়।
  • এই শিল্পে প্রচুর পরিমাণ জলের প্রয়োজন হয়। সেজন্য নদী বা হ্রদের নিকটবর্তী স্থান এই শিল্পস্থাপনের পক্ষে আদর্শ।
  • পর্যাপ্ত বিদ্যুতের সুবিধাযুক্ত স্থান এই শিল্পস্থাপনের সহায়ক হয়।
  • ইস্পাত উৎপাদনে প্রচুর দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। তাই সুলভে প্রচুর দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায় এমন স্থানই শিল্পটি স্থাপনের পক্ষে আদর্শ।
  • কাঁচামাল আমদানি ও পণ্য রপ্তানির জন্য উন্নত পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থাযুক্ত স্থান এই শিল্পস্থাপনের জন্য প্রয়োজন।

দুর্গাপুরকে ‘ভারতের বুর’ বলা হয় কেন?

জার্মানির বিখ্যাত রাইন নদীর ডানতীরের ক্ষুদ্র উপনদীর নাম রুর। বুর উপত্যকায় উন্নতমানের কয়লা পাওয়া যায়। এই কয়লাখনিকে কেন্দ্র করে রুর উপত্যকার নিকটবর্তী অঞ্চলে বড়ো বড়ো লোহা ও ইস্পাত, ভারী যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন প্রভৃতি কারখানা গড়ে উঠেছে। এই সমগ্র অঞ্চলটি রুর শিল্পাঞ্চল নামে খ্যাত। ভারতেও একইরকমভাবে দামোদর উপত্যকার নিকটবর্তী রানিগঞ্জ, অণ্ডাল, দিশেরগড় প্রভৃতি খনিকে কেন্দ্র করে দুর্গাপুরে লোহা ও ইস্পাত, ভারী যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক সার প্রভৃতির কারখানা নির্মিত হয়েছে। এজন্য দুর্গাপুরকে ‘ভারতের রুর’ বলা হয়।

ভারতে কার্পাসবয়ন শিল্পের তিনটি সমস্যা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।

ভারতের কার্পাসবয়ন শিল্পের তিনটি প্রধান সমস্যা হল –

  1. দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলোর অভাব – দীর্ঘ আঁশের উৎকৃষ্ট মানের তুলো ভারতে বেশি উৎপন্ন হয় না, তাই বিদেশ থেকে তা আমদানি করতে হয়। ফলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
  2. পুরাতন যন্ত্রাংশ – ভারতের অধিকাংশ বস্ত্র কারখানার যন্ত্রপাতি পুরোনো। ফলে উন্নতমানের জামাকাপড় তৈরি করা সম্ভব হয় না এবং উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যায়।
  3. পরিচালন ব্যবস্থার ত্রুটি ও শ্রমিক অসন্তোষ – সাম্প্রতিককালে পরিচালন ব্যবস্থার ত্রুটি ও শ্রমিক অসন্তোষের জন্য অনেক বস্ত্র কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প কোথায় গড়ে ওঠে?

ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প গড়ে ওঠার কারণগুলি হল –

  • ভারী ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে সাধারণত ইস্পাত বেশি ব্যবহার করা হয়। এজন্য লোহা ও ইস্পাত কারখানার কাছাকাছি এলাকায় এই শিল্প গড়ে উঠতে পারে।
  • পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত হলে লোহা ও ইস্পাত কারখানা থেকে দূরবর্তী এলাকাতেও এই শিল্প গড়ে উঠতে দেখা যায়। এ ছাড়াও
  • বিদ্যুৎশক্তির সহজলভ্যতা,
  • উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যার প্রাপ্তিযোগ্যতা,
  • উৎপাদিত সামগ্রী বাজারজাত করার সুযোগসুবিধা প্রভৃতি বিষয়ের সুবিধা থাকলে সেখানে এই শিল্প গড়ে ওঠে।

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে পেট্রোরসায়ন শিল্পের উন্নতির তিনটি কারণ ব্যাখ্যা করো।

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে পেট্রোরসায়ন শিল্পের উন্নতির তিনটি কারণ হল –

  • কাঁচামালের প্রাচুর্য – পেট্রোরসায়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল ন্যাপথা। অপরিশোধিত খনিজ তেল শোধন করার সময় উপজাত দ্রব্য হিসেবে ন্যাপথা পাওয়া যায়। পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্র ও গুজরাত রাজ্যে একাধিক তেলশোধনাগার গড়ে উঠেছে। এই শোধনাগারগুলি থেকে সংগৃহীত ন্যাপথা এই শিল্প গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।
  • উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা – পশ্চিম ভারতের উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা এই শিল্পের উন্নতির পক্ষে সহায়ক হয়েছে। উন্নত রেলপথ, সড়কপথ ও জলপথ থাকায় বড়ো বড়ো কন্টেনারে করে পেট্রোরসায়ন পণ্য পরিবহণ করা সহজ হয়।
  • মূলধনের সহজলভ্যতা – পেট্রোরসায়ন একটি মূলধন-নিবিড় শিল্প। পশ্চিম ভারতে মূলধনের সহজলভ্যতাও এই শিল্প বিকাশে সহায়ক হয়েছে।

পেট্রোরসায়ন শিল্প সম্পর্কে যা জানো লেখো।

যে শিল্পে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন উপজাত দ্রব্যকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন রাসায়নিক ও যৌগিক (Chemical and Compounds) পদার্থ উৎপাদন করা হয়, তাকে পেট্রোরসায়ন শিল্প বলে। এই শিল্পের প্রধান কাঁচামালগুলি হল – ন্যাপথা, প্রোপেন, বিউটেন, ইথেন, মিথেন, হেক্সেন, পেনটেন, বেনজল, বিউটাডিন, ইথানল, প্রোপিলিন প্রভৃতি। এই শিল্পের প্রধান উৎপাদিত দ্রব্যগুলি হল – কৃত্রিম তন্তু (পলিয়েস্টার, নাইলন প্রভৃতি), প্লাস্টিক, রং, কৃত্রিম রবার, কীটনাশক, আঠা, ওষুধ, সুগন্ধি দ্রব্য প্রভৃতি।

পেট্রোরসায়ন কারখানায় যে অগণিত সামগ্রী উৎপন্ন হয় সেইসব সামগ্রীর ওপর ভিত্তি করে বহু অনুসারী শিল্প (subsidiary industries বা downstream industries) গড়ে ওঠে। এজন্যই বর্তমানে পেট্রোরসায়ন শিল্পকে আধুনিক শিল্পদানব বলা হয়।

শিল্পস্থাপনে পরিবহণের ভূমিকা কতখানি?

উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা ছাড়া শিল্প গড়ে তোলা অসাধ্য ব্যাপার। শিল্প কারখানায় কাঁচামাল এবং কারখানার যন্ত্রপাতি আনা, শক্তিসম্পদ আনা, শ্রমিকদের যাতায়াত, শিল্পজাত দ্রব্য বাজারে পাঠানো ইত্যাদির জন্য সুলভ এবং উন্নতমানের পরিবহণ ব্যবস্থা থাকা জরুরি। যেখানে শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল এবং শিল্পজাত দ্রব্য পরিবহণ করার খরচ সবচেয়ে কম, সেখানেই শিল্পস্থাপন করা সবচেয়ে লাভজনক। অনেকসময় দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত দুটি কাঁচামাল উৎপাদন কেন্দ্রকে মধ্যবর্তী কোনো জায়গায় এনে সেখানে শিল্প গড়ে তোলা হয়। এতে পরিবহণ ব্যয় কম হয়।

পশ্চিম ভারতে পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের অধিক উন্নতির কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।

পশ্চিম ভারতে পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের অধিক উন্নতির কারণগুলি হল –

  • কাঁচামালের প্রাচুর্য – পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের সর্বপ্রধান কাঁচামাল ন্যাপথা। অপরিশোধিত খনিজ তেল শোধন করার সময় একটি উপজাত দ্রব্য হিসেবে ন্যাপথা পাওয়া যায়। মিথেন, ইথেন, প্রোপেন, বিউটেন; পেনটেন, হেক্সেন প্রভৃতি প্রাকৃতিক গ্যাসও এই শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্র ও গুজরাত রাজ্যে মোট পাঁচটি তেলশোধনাগার গড়ে উঠেছে। এই শোধানাগারগুলি থেকে সংগৃহীত ন্যাপথা এই শিল্প গড়ে তুলতে সাহায্য করেছ।
  • উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা – পশ্চিম ভারতের উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা এই শিল্পের উন্নতির পক্ষে সহায়ক হয়েছে। উন্নত রেলপথ, সড়কপথ ও জলপথ থাকায় বড়ো বড়ো কন্টেনারে করে পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য পরিবহণ করা সম্ভব হয়।
  • মূলধনের সহজলভ্যতা – পেট্রোকেমিক্যাল একটি মূলধন-নিবিড় শিল্প। পশ্চিম ভারতে মূলধনের সহজলভ্যতাও এই শিল্প বিকাশে সহায়ক হয়েছে।
  • দক্ষ শ্রমিক প্রাপ্তির সুবিধা – পশ্চিম ভারতে স্থাপিত হয়েছে অসংখ্য কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে দক্ষ শ্রমশক্তি পাওয়া যায়।

ভারতের কোথায় কোথায় রেলইঞ্জিন শিল্প গড়ে উঠেছে?

রেলইঞ্জিন এবং যন্ত্রপাতি নির্মাণ শিল্পে ভারত একটি উন্নত দেশ। নীচের সারণিতে ভারতে অঞ্চলভিত্তিক রেলইঞ্জিন এবং তার আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি নির্মাণ কারখানাগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল –

অঞ্চলস্থান এবং উল্লেখযোগ্য তথ্য
পূর্বাঞ্চল1. চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস্ [CLW] (চিত্তরঞ্জন – পশ্চিমবঙ্গ) – ডিজেল ও বৈদ্যুতিক রেলইঞ্জিন নির্মাণ;
2. জেসপ অ্যান্ড কোম্পানি (দমদম – পশ্চিমবঙ্গ) – EMU নির্মাণ;
3. টাটা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড লোকোমোটিভ কোম্পানি (জামশেদপুর – ঝাড়খণ্ড) – মিটার গেজ বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন নির্মাণ।
উত্তরাঞ্চল4. ডিজেল লোকোমোটিভ ওয়ার্কস্ [DLW] (বারাণসী – উত্তরপ্রদেশ) – ডিজেল রেলইঞ্জিন নির্মাণ;
5. ডিজেল লোকো মডার্নাইজেশন ওয়ার্কস্ (পাতিয়ালা – পাঞ্জাব) – ডিজেল ইলেকট্রিক ইঞ্জিনের আধুনিকীকরণ ও
6. রেল কোচ ফ্যাক্টরি (কাপুরথালা – পাঞ্জাব) – রেল কোচ, DMU এবং EMU নির্মাণ।
মধ্যাঞ্চল7. ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেড (BHEL] (ভোপাল – মধ্যপ্রদেশ) – উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক রেলইঞ্জিন ও ব্যাটারি চালিত রেলইঞ্জিন নির্মাণ;
8. রেল স্প্রিং কারখানা (গোয়ালিয়র – মধ্যপ্রদেশ) – নানা ধরনের স্প্রিং নির্মাণ।
দক্ষিণাঞ্চল9. হুইল অ্যান্ড অ্যাক্সেল প্ল্যান্ট (বেঙ্গালুরু – কর্ণাটক) – ওয়াগনের চাকা, অ্যাক্সেল, DMU এবং EMU নির্মাণ;
10 ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি (চেন্নাই – তামিলনাড়ু) – EMU, DMU, MEMU ও METRO -র ইঞ্জিন এবং কোচ নির্মাণ।
ভারতের রেলইঞ্জিন ও কোচ নির্মাণ শিল্প

কাঁচামালভিত্তিক শিল্পের শ্রেণিবিভাগ করো।

কাঁচামালের উৎস অনুসারে শিল্পকে চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায় –

  1. কৃষিভিত্তিক শিল্প – এই ধরনের শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হল বিভিন্ন কৃষিজ ফসল। বিভিন্ন কৃষিজাত দ্রব্য যেমন – পাট, তুলো, শন প্রভৃতি থেকে পাটশিল্প, বস্ত্রবয়ন শিল্প গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া, আখ থেকে চিনি শিল্প এবং ফলপ্রক্রিয়াকরণ শিল্পও কৃষিভিত্তিক শিল্পের উদাহরণ।
  2. প্রাণীজভিত্তিক শিল্প – এই শিল্প নির্মাণের জন্য বিভিন্ন প্রাণীজ দ্রব্যের ওপর নির্ভর করতে হয়, যেমন – মাংস সংরক্ষণ শিল্প, দুগ্ধ শিল্প, চামড়া শিল্প প্রভৃতি এই জাতীয় শিল্প।
  3. বনজভিত্তিক শিল্প – বিভিন্ন বনজ সম্পদকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে এই শিল্প গড়ে ওঠে। গুরুত্বপূর্ণ বনজভিত্তিক শিল্পগুলি হল – কাগজ শিল্প, আসবাবপত্র নির্মাণ শিল্প, রেশম শিল্প ইত্যাদি।
  4. খনিজভিত্তিক শিল্প – খনি থেকে উত্তোলিত নানা ধরনের খনিজ পদার্থকে যে শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় তাকে খনিজভিত্তিক শিল্প বলে। যেমন – লোহা ও ইস্পাত শিল্প, সিমেন্ট শিল্প, তামা নিষ্কাশন শিল্প, অ্যালুমিনিয়াম শিল্প প্রভৃতি।

বিশুদ্ধ কাঁচামালভিত্তিক শিল্পকে শিকড় আলগা শিল্প বলে কেন?

প্রকৃতি অনুসারে শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালকে দুটি বিভাগে ভাগ করা যায় – বিশুদ্ধ কাঁচামাল (তুলো, পাট প্রভৃতি) এবং অবিশুদ্ধ কাঁচামাল (আখ, আকরিক লোহা প্রভৃতি)। এর মধ্যে যখন নির্দিষ্ট ওজনের কাঁচামাল থেকে একই ওজনের পণ্য উৎপাদিত হয়, তাকে বিশুদ্ধ কাঁচামাল বলে। এখানে কাঁচামাল এবং উৎপাদিত পণ্যের ওজনের অনুপাত 1:1। যেমন এক টন তুলো থেকে এক টন সুতো এবং এক টন সুতো থেকে এক টন বস্ত্র উৎপাদিত হয় অর্থাৎ তুলো, সুতো এবং বস্ত্র-তিনটির ওজনই এক থাকে। যেহেতু এখানে কাঁচামালের ওজন এবং উৎপাদিত পণ্যের ওজন একই থাকে, তাই কারখানায় কাঁচামাল আনা বা কারখানা থেকে উৎপাদিত পণ্য বাজারে প্রেরণের জন্য পরিবহণ ব্যয়ও একই হয়। তাই বিশুদ্ধ কাঁচামালভিত্তিক শিল্পগুলি কাঁচামালের উৎসের কাছে বা বাজারের কাছে বা অন্য যে-কোনো সুবিধাজনক স্থানে গড়ে উঠতে পারে। আর এজন্যই এগুলিকে শিকড় আলগা শিল্প বলে।


আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের ষষ্ঠ অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের শিল্প” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Categories -
Please Share This Article

Related Posts

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026

Madhyamik Life Science Suggestion 2026

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026 – রচনাধর্মী প্রশ্ন

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026 – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026 – সত্য মিথ্যা