নমস্কার বন্ধুরা! আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা আলোচনা করবো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য ভূগোল বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে। এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে তোমরা ২০১৭ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভূগোলে যেসব প্রশ্ন এসেছিলো তার একটি স্পষ্ট ধারণা পাবে। মাধ্যমিক ২০১৭ সালের প্রশ্ন পরবর্তী বছরের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি তোমাদেরকে পরীক্ষার ধরণ, প্রশ্নের প্যাটার্ন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেবে। আশা করি এই আর্টিকেলটি তোমাদের মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে। তাহলে চলো শুরু করা যাক!
Madhyamik Geography Question Paper 2017 With Answer
বিভাগ – ক
১. বিকল্পগুলির থেকে সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করে লেখো : (১×১৪=১৪)
১.১ যে – প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি ভূপৃষ্ঠের ওপর কাজ করে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটায়, তাকে বলে —
(ক) বহির্জাত প্রক্রিয়া
(খ) অন্তর্জাত প্রক্রিয়া
(গ) গিরিজনি আলোড়ন
(ঘ) মহিভাবক আলোড়ন
উত্তর : (ক) বহির্জাত প্রক্রিয়া
১.২ লবণযুক্ত শিলাস্তরের ওপর নদীর প্রধান ক্ষয় প্রক্রিয়াটি হল —
(ক) অবঘর্ষ ক্ষয়
(খ) ঘর্ষণ ক্ষয়
(গ) জলপ্রবাহ ক্ষয়
(ঘ) দ্রবণ ক্ষয়
উত্তর : (ঘ) দ্রবণ ক্ষয়
১.৩ হেটেরোস্ফিয়ারের উচ্চতম স্তরটি হল —
(ক) হাইড্রোজেন স্তর
(খ) হিলিয়াম স্তর
(গ) পারমাণবিক অক্সিজেন স্তর
(ঘ) আণবিক নাইট্রোজেন স্তর
উত্তর : (ক) হাইড্রোজেন স্তর
১.৪ যে – যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর আদ্রতা পরিমাপ করা হয় —
(ক) থার্মোমিটার
(খ) ব্যারোমিটার
(গ) হাইগ্রোমিটার
(ঘ) অ্যানিমোমিটার
উত্তর : (গ) হাইগ্রোমিটার
১.৫ এল নিনোর প্রভাব দেখা যায় —
(ক) আটলান্টিক মহাসাগরে
(খ) প্রশান্ত মহাসাগরে
(গ) ভারত মহাসাগরে
(ঘ) সুমেরু মহাসাগরে
উত্তর : (খ) প্রশান্ত মহাসাগরে
১.৬ পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব যখন সবচেয়ে কম তখন যে-জোয়ার সৃষ্টি হয় তাকে বলে —
(ক) ভরা কোটাল
(খ) মরা কোটাল
(গ) পেরিজি জোয়ার
(ঘ) অ্যাপোজি জোয়ার
উত্তর : (গ) পেরিজি জোয়ার
১.৭ বর্জ্যব্যবস্থাপনার পদ্ধতিগুলি হল —
(ক) বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার
(খ) বর্জ্যের পুনর্নবীকরণ
(গ) বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাস
(ঘ) সবগুলিই প্রযোজ্য
উত্তর : (ঘ) সবগুলিই প্রযোজ্য
১.৮ ভারতের নবীনতম রাজ্যটি হল —
(ক) উত্তরাখণ্ড
(খ) তেলেঙ্গানা
(গ) ছত্তিশগড়
(ঘ) গোয়া
উত্তর : (খ) তেলেঙ্গানা
১.৯ উত্তর-পশ্চিম ভারতে গ্রীষ্মকালে যে ধূলিঝড় দেখা যায় তা হল —
(ক) কালবৈশাখী
(খ) আঁধি
(গ) পশ্চিমী ঝঞ্ঝা
(ঘ) লু
উত্তর : (খ) আঁধি
১.১০ ভারতে মৃত্তিকা সংরক্ষণে গৃহীত একটি পদ্ধতি হল —
(ক) জলসেচ
(খ) জুমচাষ
(গ) ফালিচাষ
(ঘ) পশুচারণ
উত্তর : (গ) ফালিচাষ
১.১১ ভারতে জোয়ার উৎপাদনে প্রথম স্থানাধিকারী রাজ্যটি হল —
(ক) মহারাষ্ট্র
(খ) উত্তরপ্রদেশ
(গ) বিহার
(ঘ) পশ্চিমবঙ্গ
উত্তর : (ক) মহারাষ্ট্র
১.১২ ভারতের ‘সিলিকন ভ্যালি’ বলা হয় —
(ক) চেন্নাইকে
(খ) বেঙ্গালুরুকে
(গ) কলকাতাকে
(ঘ) দিল্লিকে
উত্তর : (খ) বেঙ্গালুরুকে
১.১৩ ভারতের দীর্ঘতম জাতীয় সড়কটি হল —
(ক) 1 নং জাতীয় সড়ক
(খ) 2 নং জাতীয় সড়ক
(গ) 6 নং জাতীয় সড়ক
(ঘ) 7 নং জাতীয় সড়ক
উত্তর : (ঘ) 7 নং জাতীয় সড়ক
১.১৪ 15′ × 15′ অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাগত বিস্তারের ভূ-বৈচিত্রসূচক মানচিত্রের সংখ্যাসূচক স্কেল (RF) হল —
(ক) 1 : 2,50,000
(খ) 1 : 1,00,000
(গ) 1 : 50,000
(ঘ) 1 : 25,000
উত্তর : (গ) 1 : 50,000
বিভাগ – খ
২.১ নিম্নলিখিত বাক্যগুলি শুদ্ধ হলে পাশে ‘শু’ এবং অশুদ্ধ হলে পাশে ‘অ’ লেখো (যে-কোনো ৬ টি প্রশ্নের উত্তর দাও) : (১×৬=৬)
২.১.১ বার্খান বালিয়াড়ি থেকে সিফ বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয়।
উত্তর : শু।
২.১.২ ওজোনস্তরকে প্রাকৃতিক সৌরপর্দা বলা হয়।
উত্তর : শু।
২.১.৩ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে সাধারণত গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত হয়।
উত্তর : অ।
২.১.৪ সূর্য, চাঁদ ও পৃথিবীর সরলরৈখিক অবস্থানকে সিজিগি বলে।
উত্তর : শু।
২.১.৫ ভারতে অধিকাংশ ধান শীতকালে রবিশস্য হিসেবে চাষ করা হয়।
উত্তর : অ।
২.১.৬ ভারতের সর্বাধিক জনঘনত্বপূর্ণ রাজ্য হল পশ্চিমবঙ্গ।
উত্তর : অ।
২.১.৭ উপগ্রহ চিত্রে বিভিন্ন প্রতীকের সাহায্যে ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যগুলি বোঝানো হয়।
উত্তর : অ।
২.২ উপযুক্ত শব্দ বসিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করো (যে-কোনো ৬ টির উত্তর দাও) : (১×৬=৬)
২.২.১ বিভিন্ন ধরনের বহির্জাত শক্তির দ্বারা ভূমিভাগের সমতলীকরণ ঘটলে তাকে _____ বলে।
উত্তর : বিভিন্ন ধরনের বহির্জাত শক্তির দ্বারা ভূমিভাগের সমতলীকরণ ঘটলে তাকে পর্যায়ন বলে।
২.২.২ হিমবাহ ও জলধারা বাহিত নুড়ি, বালি, কাঁকর ইত্যাদি সঞ্চিত হয়ে দীর্ঘ সংকীর্ণ আঁকাবাঁকা শৈলশিরার মতো ভূমিরূপকে ______ বলে।
উত্তর : হিমবাহ ও জলধারা বাহিত নুড়ি, বালি, কাঁকর ইত্যাদি সঞ্চিত হয়ে দীর্ঘ সংকীর্ণ আঁকাবাঁকা শৈলশিরার মতো ভূমিরূপকে এসকার বলে।
২.২.৩ কোনো স্থানের উষ্ণতা-বৃষ্টিপাত লেখচিত্রে উষ্ণতার রেখাটি বৎসরের মধ্যভাগে নিম্নমুখী হলে স্থানটি________ গোলার্ধে অবস্থিত।
উত্তর : কোনো স্থানের উষ্ণতা-বৃষ্টিপাত লেখচিত্রে উষ্ণতার রেখাটি বৎসরের মধ্যভাগে নিম্নমুখী হলে স্থানটি দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত।
২.২.৪ পৃথিবীর ________ বলের প্রভাবে গৌণ জোয়ার সৃষ্টি হয়।
উত্তর : পৃথিবীর কেন্দ্রবিহমুখী বলের প্রভাবে গৌণ জোয়ার সৃষ্টি হয়।
২.২.৫ শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র (এয়ার কন্ডিশনার) ব্যবহারের ফলে বায়ুমন্ডলে ________ গ্যাস নির্গত হয়।
উত্তর : শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র (এয়ার কন্ডিশনার) ব্যবহারের ফলে বায়ুমন্ডলে ক্লোরোফ্লোরোকার্বোন গ্যাস নির্গত হয়।
২.২.৬ দেবপ্রয়াগে ভাগীরথী ও _________ নদীর মিলনে গঙ্গানদীর সৃষ্টি হয়েছে।
উত্তর : দেবপ্রয়াগে ভাগীরথী ও অলকানন্দা নদীর মিলনে গঙ্গানদীর সৃষ্টি হয়েছে।
২.২.৭ _______ শহরকে দক্ষিণ ভারতের ম্যানচেস্টার বলা হয়।
উত্তর : কোয়েম্বাটোর শহরকে দক্ষিণ ভারতের ম্যানচেস্টার বলা হয়।
২.৩ একটি বা দুটি শব্দে উত্তর দাও (যে – কোনো ৬ টি) : (১×৬=৬)
২.৩.১ যে উচ্চভূমি দুটি নদী ব্যবস্থাকে পৃথক করে তার নাম লেখো।
উত্তর : যে উচ্চভূমি দুটি নদী ব্যবস্থাকে পৃথক করে তার নাম জলবিভাজিকা।
২.৩.২ সম্পৃক্ত বায়ুর আপেক্ষিক আদ্রতা কত?
উত্তর : সম্পৃক্ত বায়ুর আপেক্ষিক আদ্রতা ১০০%
২.৩.৩ ক্রান্তীয় সমুদ্রে কোন ধরনের সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি হয়?
উত্তর : ক্রান্তীয় সমুদ্রে উষ্ণ সমুদ্রস্রোত ধরনের সমুদ্রস্রোত সৃষ্টি হয়।
২.৩.৪ প্লাস্টিক কোন ধরনের বর্জ্য?
উত্তর : প্লাস্টিক জৈব অভঙ্গুর উষ্ণ বর্জ্য ধরনের বর্জ্য।
২.৩.৫ ভারতের সর্বোচ্চ গিরিপথ কোনটি?
উত্তর : ডুংরি লা পাস বা মানা পাস হল উচ্চ উচ্চতার পার্বত্য গিরিপথ।
২.৩.৬ পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনা ব-দ্বীপে অবস্থিত।
২.৩.৭ ভারতের কোন মৃত্তিকা কার্পাস চাষের পক্ষে আদর্শ?
উত্তর : ভারতের কৃষ্ণ মৃত্তিকা মৃত্তিকা কার্পাস চাষের পক্ষে আদর্শ।
২.৩.৮ কোন সড়কপথের মাধ্যমে দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই ও কলকাতা যুক্ত হয়েছে?
উত্তর : সোনালী চতুর্ভুজ -এর মাধ্যমে সড়কপথের মাধ্যমে দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই ও কলকাতা যুক্ত হয়েছে।
২.৪ বামদিকের সঙ্গে ডানদিকের গুলি মিলিয়ে লেখো : (১×৪=৪)
বাম দিক | ডান দিক |
২.৪.১ ইসরো | ১. কেরল |
২.৪.২ ভেষানাদ | ২. ভারতের শুল্কমুক্ত বন্দর |
২.৪.৩ আধি | ৩. ভারতের রকেট উৎক্ষেপণ সংস্থা |
২.৪.৪ কান্ডালা | ৪. রাজস্থান |
উত্তর :
বাম দিক | ডান দিক |
২.৪.১ ইসরো | ৩. ভারতের রকেট উৎক্ষেপণ সংস্থা |
২.৪.২ ভেষানাদ | ১. কেরল |
২.৪.৩ আধি | ৪. রাজস্থান |
২.৪.৪ কান্ডালা | ২. ভারতের শুল্কমুক্ত বন্দর |
বিভাগ — গ
৩. নীচের প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষ্যণীয়) : (২×৬=১২)
৩.১ পাখির পায়ের মতো বদ্বীপ কীভাবে গঠিত হয়?
উত্তর : নদীর মোহনায়, সমুদ্রস্রোতের প্রভাব কম থাকলে নদীবাহিত পলি সঞ্চিত হয়। এর ফলে, নদী বক্ষে সঞ্চিত পদার্থ প্রধান নদীকে ছোটো ছোটো শাখানদীতে বিভক্ত করে এবং শাখানদীগুলির দুই তীর বরাবর পলি সঞ্চিত হয়। বিভক্ত অংশগুলি পাখির পায়ের আঙুলের মতো দীর্ঘ ও সংকীর্ণ আকারে সমুদ্রের দিকে অগ্রসর হয়। এইভাবে পাখির পায়ের মতো বদ্বীপ গঠিত হয়। উদাহরণ – আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি-মিসৌরি নদী-বদ্বীপ।
অথবা
বার্গস্রুন্ড কী?
উত্তর : হিমবাহ পার্বত্য উপত্যকা বেয়ে নামার সময়, অনেকসময় পর্বতের থেকে ফাঁক এর দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। হিমবাহ থেকে পর্বতের পাদদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত সুবিশাল (সুগভীর) ফাটলকে বার্গস্রুন্ড বলে।
তবে অনেকে মনে করেন আগের হিমবাহ ও নতুন হিমবাহের মধ্যে যে ফাঁক সৃষ্টি হয় তাকে বার্গমুণ্ড বলে। এটি পর্বতারোহীদের পক্ষে বিপজ্জনক।
৩.২ জেট বায়ুর দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তর : জেট বায়ু হল ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বস্তর দিয়ে উচ্চবেগে প্রবাহিত পশ্চিমা বায়ু।
এর ২টি বৈশিষ্ট্য হল –
- এই বায়ু ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বস্তর (7 – 14.5 km) দিয়ে প্রবাহিত হয়।
- এটি একপ্রকার জিওস্ট্রফিক বায়ু।
- এটি উচ্চবেগে প্রবাহিত হয়।
অথবা
বান ডাকা কী?
উত্তর : জোয়ারের সময় সমুদ্রের জল প্রবল বেগে নদীর মোহনা থেকে নদীপ্রবাহের বিপরীত মুখে নদীখাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। বর্ষাকালে ভরা কোটালের সময় সমুদ্রের জল স্ফীত হলে (৫-৮ মিটার উঁচু) নদী মোহনার মধ্য দিয়ে সশব্দে দ্রুতগতিতে নদী অভ্যন্তরে প্রবেশ করে প্রবল জলচ্ছ্বাস ঘটায়। একে বানডাকা বলে। নদী মোহনা ফানেলাকৃতি হলে, নদীর মোহনায় বালির চড়া থাকলে এবং নদীতে প্রবল জলস্রোত থাকলে বান খুব প্রবল হয়। উদাহরণ – হুগলি ও সুন্দরবনের নদনদী, টেমস নদী।
৩.৩ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ভরাটকরণ বলতে কী বোঝো?
উত্তর : দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরবসাগরীয় শাখা প্রচুর জলীয়বাষ্প নিয়ে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে কেরালার মালাবার উপকূলে পৌঁছায়। এই জলীয়বাষ্পপূর্ণ মৌসুমি বায়ু পশ্চিমঘাট পর্বতে বাধা পেয়ে হঠাৎ ঊর্ধ্বমুখী হয় এবং বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়। একেই মৌসুমি বিস্ফোরণ বা Burst of Monsoon বলে। এই বৃষ্টিপাতের ফলে ঐ অঞ্চলের তাপমাত্রা অনেকটা কমে যায়।
অথবা
বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার কাকে বলে?
উত্তর : এমন কিছু বর্জ্য দ্রব্য আছে যেগুলি পরিবর্তন না করে পুনরায় ব্যবহার করা যায়। যার ফলে বর্জ্যের পরিমান কমে এবং অর্থের সাশ্রয় হয় ও সম্পদ বাঁচে। একে বর্জ্যের পুনর্ব্যবহার বলে। উদাহরণ – (i) কাচকে পৃথক করে অ্যাসফাল্টের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। (ii) তরকারির খোসা, গোবর, মল-মূত্র, পচা ডাল পাতা ইত্যাদিকে গর্তের মধ্যে চাপ দিয়ে পচিয়ে জৈবসার তৈরী করে কৃষিক্ষেত্রে পুনরায় ব্যবহার করা যায়।
৩.৪ মৌসুমি বিস্ফোরণের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর : জুন মাসে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ভারতীয় উপমহাদেশে আসে এবং মুষলধারে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এই আকস্মিক বৃষ্টিপাত, যা নিম্নচাপ এবং দমকা বায়ু দ্বারা চিহ্নিত, “মৌসুমি বিস্ফোরণ” নামে পরিচিত। এটি মৌসুমী বায়ুর আগমনের সূচনা চিহ্নিত করে। প্রকৃতপক্ষে, মৌসুমি বায়ু আসার আগে হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে। কিন্তু যখন বায়ু সক্রিয়ভাবে ভূখণ্ডে প্রবেশ করে, তখনই তীব্র বৃষ্টিপাত এবং ঝড়ো হাওয়া “মৌসুমি বিস্ফোরণ” তৈরি করে।
অথবা
সামাজিক বনসৃজনের দুটি উদ্দেশ্য উল্লেখ করো।
উত্তর : দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতির উদ্দেশ্যে এবং বাস্তুতন্ত্র রক্ষার জন্য নির্দিষ্ট অরণ্যসীমার বাইরে বৃক্ষরোপণ করাই হল সামাজিক বনসৃজন।
এর দুটি উদ্দেশ্য হল –
- সেই অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতিসাধন।
- মৃত্তিকাক্ষয়, পরিবেশ দূষণ হ্রাস করা এবং বাস্তুতন্ত্রের অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা।
৩.৫ জীবিকা সত্তাভিত্তিক কৃষি বলতে কী বোঝো?
উত্তর : যে প্রকার কৃষিতে কৃষক নিজের জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে শস্য বা কৃষিজ ফসল উৎপাদন করে, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যসাধনী তেমন গুরুত্ব পায় না, তাকে জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি বলে। এটি ভারতীয় কৃষির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
অথবা
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর : মানুষের প্রয়োজনভিত্তিক নানান তথ্য বিভিন্ন উপায়ে মুহূর্তেই পৌঁছে দেবার কৌশলই হল তথ্যপ্রযুক্তি। এর মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহ, অন্বেষণ, পুনরুদ্ধার, পরিবর্তন, বিশ্লেষণ, সংরক্ষণ, পরিমার্জন, প্রেরণ ইত্যাদি হয়ে থাকে। অর্থাৎ তথ্যপ্রযুক্তি পরিসেবা সংক্রান্ত কাজকর্মকে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প বলে।
৩.৬ জিয়োস্টেশনারি উপগ্রহ কী?
উত্তর : যে সব কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর কোনো নির্দিষ্ট স্থানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পৃথিবীর আবর্তন গতির (২৪ ঘণ্টায়) সমান লয়ে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে, তাদের জিওস্টেশনারী উপগ্রহ বলে।
বৈশিষ্ট্য –
- এগুলি 36000 km উচ্চতায় অবস্থিত।
- এরা নিরক্ষীয় তলে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।
- পৃথিবীর অর্ধাংশের ছবি তুলতে পারে।
উদা – GOMS, GOES-W, GOES-E প্রভৃতি।
অথবা
দূর সংবেদন কী?
উত্তর : যখন ভূপৃষ্ঠের অন্তর্গত বস্তু বা বিষয়সমূহকে স্পর্শ না করে ভূপৃষ্ঠের অনেক উঁচু থেকে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরার সাহায্যে বিমান থেকে অথবা কৃত্রিম উপগ্রহে সংযুক্ত সেন্সরের মাধ্যমে তথ্যাবলি আহরণ করে ভূপৃষ্ঠে কম্পিউটারে পাঠানো হয় তখন এই ব্যবস্থাকে দূর সংবেদন বলে।
বিভাগ – ঘ
৪. সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষ্যণীয়) : (৩×৪=১২)
৪.১ মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজের প্রাধান্য দেখা যায় কেন?
উত্তর : মরু অঞ্চলে বায়ু প্রধানত ক্ষয়কার্য করে। বায়ু প্রধানত অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় মরু অঞ্চলে ক্ষয় করে।
মরু অঞ্চলে বায়ুর কাজের প্রাধান্যের কারণ –
(1) উদ্ভিদ শূন্যতা – মরু অঞ্চলে অত্যন্ত কম বৃষ্টিপাত হয় বলে, এখানে উদ্ভিদ প্রজাতি অত্যন্ত কম হয় এবং কিছু কিছু উদ্ভিদ (বাবলা, খেজুর) বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করে, তাই বায়ু দ্রুত গতিবেগে ক্ষয় করে।
(2) বাধাহীনতা – মরু অঞ্চল জনবিরল হওয়ায় বাতাস এখানে তীব্র গতিবেগে প্রবাহিত হয়। ফলে মৃত্তিকা ও শিলা দ্রুত ক্ষয় পায়।
(3) ঝোড়ো বাতাস – উদ্ভিদ ও বাড়ির অভাবের কারণে মরু অঞ্চলে বাতাস এর গতিবেগ অতি তীব্র হয়। ফলে শিলা সহজেই ক্ষয় পায়।
(4) উষ্ণ ও শুষ্ক বাতাস – মরু অঞ্চলে বাতাস অত্যন্ত উষ্ণ ও শুষ্ক প্রকৃতির হয়ে থাকে, ফলস্বরূপ তা মৃত্তিকা ও শিলাস্তরের ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে।
(5) শুষ্ক ও ঝুরঝুরে মাটি – দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে এই অঞ্চলের মাটি অতি শুষ্ক ও ঝুরঝুরে হয়। প্রবল বাতাসে তা সহজেই বাহিত হয়। এইভাবে 0.02mm – 0.05mm বিশিষ্ট বালুকণা বায়ুর কাজে সাহায্য করে।
অথবা
সমুদ্রবায়ু ও স্থলবায়ুর পার্থক্যগুলি আলোচনা করো।
উত্তর : সমুদ্রবায়ু ও স্থলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য –
সমুদ্রবায়ু | স্থলবায়ু |
দিনের বেলা প্রকৃতিগত কারণেই সমুদ্র অপেক্ষা স্থলভাগ বেশি উষ্ণ হয়। ফলে স্থলভাগে নিম্নচাপ (স্থানীয়ভাবে) ও জলভাগে অর্থাৎ সমুদ্রে উচ্চচাপ বিরাজ করে। ফলে উপকুল সংলগ্ন অঞ্চলে সমুদ্র থেকে বায়ু স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়। একে সমুদ্রবায়ু বলে। | সূর্যাস্তের পর সমুদ্র ও স্থলভাগ উভয়েই তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়। কিন্তু সমুদ্র অপেক্ষা স্থলভাগ দ্রুতহারে শীতল হয় বলে রাতের বেলা সমুদ্র উষ্ণ থাকে এবং সেখানে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় কিন্তু স্থলভাগ শীতল হওয়ায় সেখানে উচ্চচাপ সৃষ্টি হয়। ফলে স্থলভাগ থেকে বায়ু সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয়। একে স্থলবায়ু বলে। |
এই বায়ু দিনের বেলায় প্রবাহিত হয়। | এই বায়ু রাতের বেলায় প্রবাহিত হয়। |
মধ্যাহ্নের পর এই বায়ুর বেগ বেশি হয়। | ভোরবেলায় এই বায়ুর সর্বাধিক গতি দেখা যায়। |
এই বায়ুতে অধিক জলীয়বাষ্প থাকায় আর্দ্র হয়। | জলীয় বাষ্পের অভাবে এই বায়ু শুদ্ধ প্রকৃতির হয়। |
এই বায়ু নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলে স্থলভাগের প্রায় ১৫-২০ কি.মি অভ্যন্তরে এবং উদ্ভমন্ডলের প্রায় ৫০ কি.মি অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। | তুলনায় সামুদ্রিক অংশে স্থলবায়ুর প্রবাহ পথের পরিসর অনেকটাই কম। |
৪.২ জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য এবং জৈব অভঙ্গুর বর্জ্যের মধ্যে পার্থক্য করো।
উত্তর : জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য এবং জৈব অভঙ্গুর বর্জ্যের মধ্যে পার্থক্য –
বিষয় | জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য | জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য |
সংজ্ঞা | যেসব বর্জ্য পরিবেশে বিয়োজিত হয় এবং জীব ও প্রাণীদের কোনো ক্ষতিসাধন করে না, তাকে জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য বলে। | যেসব বর্জ্য পরিবেশে বিয়োজিত হয় না এবং প্রাণী তথা জীবদেহের ক্ষতি করে, তাকে জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য বলে। |
বিয়োজন | এই সমস্ত বর্জ্য পরিবেশে বিয়োজিত হয়। | এই সমস্ত বর্জ্য পরিবেশে অবিয়োজিত থাকে। |
জীবাণুর ক্রিয়া | এসব বর্জ্য জীবাণুর ক্রিয়ায় বিয়োজিত হয়। | জীবাণুর ক্রিয়ায় এরা প্রভাবহীন, বিয়োজিত হয় না। |
প্রভাব | প্রাণী ও জীবদেহের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়। | প্রাণী ও জীবদেহের সমূহ ক্ষতি করে। |
উদাহরণ | কাগজ, চট ইত্যাদি। | প্লাস্টিক, বোতল ইত্যাদি। |
অথবা
বর্জ্য কম্পোস্টিং পদ্ধতির প্রধান সুবিধাগুলি কী কী?
উত্তর : যে পদ্ধতিতে জৈব বর্জ্য পদার্থকে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা পচন ঘটিয়ে হিউমাসে পরিণত করা হয় তাকে কম্পোস্ট বা জৈব সার এবং পদ্ধতিটিকে কম্পোস্টিং বলা হয়। এই সুবিধাগুলি নিম্নরূপ –
- এই কম্পোস্ট বা জৈব সার জমিতে প্রয়োগ করা হলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
- এই পদ্ধতিতে মাটিতে 15-30 ফুট লম্বা গভীর খাত কাটা হয় এবং এতে প্রথমে সমস্ত জৈব বর্জ্য পদার্থ বিছিয়ে কয়েকটি স্তর গঠন করা হয় ও উপরে মাটির আস্তরণ দেওয়া হয়। ফলে পরিবেশ দূষণ হওয়ার সম্ভাবনা কম।
- এই সারের গুণমান রাসায়নিক সারের তুলনায় অনেক বেশি। কারণ এই পদ্ধতিতে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয় যা মশা, মাছির লার্ভা ও অন্যান্য জীবাণুকে নষ্ট করে দেয়। তাই কম্পোষ্ট সার জীবাণুমুক্ত সার।
৪.৩ পাঞ্জাব হরিয়ানা রাজ্যের কৃষি উন্নতির প্রধান তিনটি কারণ সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর : ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কৃষি উন্নত অঞ্চলটি হল পাঞ্জাব-হরিয়ানা অঞ্চল। Indian council of Agricultural Research শস্যের প্রকৃতি, কৃষিপদ্ধতি, বৈশিষ্ট্য প্রভৃতির ভিত্তিতে ভারতের কৃষি অঞ্চলকে চিহ্নিত করেছে। কৃষির আঞ্চলিকীকরণে পাঞ্জাব-হরিয়ানা- শুদ্ধ উত্তরাঞ্চল বা গম অঞ্চল রূপে চিহ্নিত হয়েছে। এই অঞ্চলের কৃষির উন্নতির প্রধান প্রধান কারণগুলি হল –
- বিস্তীর্ণ সমভূমি ও উর্বর মৃত্তিকা – সিন্ধুনদের পাঁচটি উপনদী যথা শতদ্রু, ইরাবতী, বিতস্তা, বিপাশা, চন্দ্রভাগা বিধৌত বিস্তীর্ণ সমভূমি এবং উর্বর পলি মৃত্তিকায় প্রচুর পরিমাণ শস্যের চাষ হয়। এই মাটির নীচে কাদার স্তর নেই। ফলে জল দাঁড়াতে পারে না যা গম চাষের উপযোগী। এছাড়াও এখানে প্রচুর পরিমাণে ধান, তুলো, আখ প্রভৃতি ফসল উৎপাদিত হয়।
- উচ্চফলনশীল বীজের রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার – পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় ব্যবহৃত উচ্চফলনশীল গমবীজ হল সোনারা 64, কল্যাণ সোনা প্রভৃতি। এছাড়া এখানে কৃষিজমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে মাটিতে প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম ও ফসফেটের আধিক্য থাকে। ফলে ফসলের মান উন্নত হয়। এছাড়া কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে পোকার আক্রমণ ও উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধ করে ফসলের গুণগত মান বৃদ্ধি করা হয়।
- আধুনিক কৃষি পদ্ধতি – পাঞ্জাব হরিয়ানায় সবুজ বিপ্লবের পর থেকেই আধুনিক কৃষিপদ্ধতির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ব্যাপক হারে। মহিষ ও লাঙলের পরিবর্তে উন্নতমানের ট্র্যাক্টর দিয়ে জমি কর্ষন করায় সময়ের অনেক সাশ্রয় হয়। হেক্টর প্রতি ফসল উৎপাদনও অনেক বৃদ্ধি পায়। সেকারণে এই অঞ্চল হেক্টর প্রতি উৎপাদনে ভারতের মধ্যে অগ্রগণ্য।
এছাড়া ভাকরা-নাঙ্গাল প্রকল্প, সুলভ শ্রমিক, ব্যাপক চাহিদা, মূলধনের প্রাচুর্য, কঠোর পরিশ্রমী মনোভাব, উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা প্রভৃতি কারণে এখানে কৃষির উন্নতি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
অথবা
ভারতের নগর ও নগরায়ণের প্রধান তিনটি সমস্যা উল্লেখ করো।
উত্তর : বর্তমানে ভারতের অন্যতম সমস্যা হল নগরায়ণ, এর ফলে আমরা নানা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছি।
ভারতের নগরায়ণের প্রধান 3 টি সমস্যা হল –
- অপরিকল্পিত নগরায়ণ – ভারতের অধিকাংশ নগর অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত। ভারতের প্রায় 27.72% মানুষ প্রথম শ্রেণির নগরে বাস করে। এদের 40% Million city-এর অধিবাসী। ফলস্বরূপ নগরে অত্যধিক জনসংখ্যার চাপের ফলে নিকাশি, যোগাযোগ, পরিবহন ইত্যাদিতে নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দিচ্ছে।
- মানুষের শহরমুখী প্রবণতা – শেষ ১টি census অনুযায়ী (1971-2011) গ্রামের জনসংখ্যার হার হল 81.10%, 78%, 74%, 72.20%, 68.80%। অপরদিকে শহরের জনসংখ্যার হার হল 19.9%, 22%, 26%, 27.80%, 31.20%। জীবিকার খোঁজে শহরে মানুষের আগমনে শহরে-নগরে জনবিস্ফোরণ ঘটছে।
- যানজট সৃষ্টি – বিভিন্ন নগরে অবিবেচনাপ্রসূত বসতি নির্মাণ, জনবিস্ফোরণ ও যানবাহনের অতিবৃদ্ধির ফলে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এটি নগরায়ণের অন্যতম সমস্যা, কারণ যানজটে পড়লে কোনো জরুরী কার্যে পৌঁছনো অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
৪.৪ উপগ্রহ চিত্রের প্রধান তিনটি ব্যবহার ও আলোচনা করো।
উত্তর : মহাকাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে কৃত্রিম উপগ্রহ দ্বারা Remote sensing প্রক্রিয়ায় ভূ-পৃষ্ঠীয় উপাদানসমূহের তোলা ছবি হল উপগ্রহ চিত্র।
উপগ্রহ চিত্রের এটি ব্যবহার হল –
- সম্পদ নিরীক্ষণ – ভূ-পৃষ্ঠের কোন্ স্থানে সম্পদ রয়েছে তা নির্ধারণে এবং সম্পদের প্রকৃতি নির্ধারণে উপগ্রহ চিত্র ব্যবহৃত হয়। সমুদ্রের তলার সম্পদ ও জলসম্পদ নির্ধারণেও উপগ্রহ চিত্র গুরুত্বপূর্ণ।
- আবহাওয়া নির্ধারণ – ভূ-পৃষ্ঠের কোনো স্থানের আবহাওয়ার প্রকৃতি, ঝড়ের গতিবিধি, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নির্ধারণে উপগ্রহ চিত্র ব্যবহৃত হয়। যেমন – METEOSAT, MET-OP ইত্যাদি।
- কৃষিজমির ক্ষেত্রে – কৃষিক্ষেত্রেও উপগ্রহ চিত্রের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। কৃষিজমির বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ, ফসল নির্বাচন তথা ফসলের প্রকৃতি নির্বাচনে উপগ্রহ চিত্র ব্যবহৃত হয়।
উদাহরণ – LANDSAT সিরিজের উপগ্রহ চিত্র
অথবা
ভূ-বৈচিত্রসূচক মানচিত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের স্কেলের উল্লেখ করো।
উত্তর : ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র কতকগুলি নির্দিষ্ট স্কেল ও অনুপাতের ভিত্তিকে আঁকা হয়। এই মানচিত্রে ব্যবহৃত স্কেলগুলি হল –
শিট | বিস্তৃতি | RF স্কেল | মেট্রিক স্কেল |
মিলিয়ন শিট | 4° × 4° | 1 : 1,000,000 | 1 সেমিতে 10 কিমি |
ডিগ্রি শিট | 1° × 1° | 1 : 250,000 | 1 সেমিতে 2.5 কিমি |
1/2 ইঞ্চি শিট | 30′ × 30′ | 1 : 1,00,000 | 1 সেমিতে 1 কিমি |
ইঞ্চি শিট | 15′ × 15′ | 1 : 50,000 | 1 সেমিতে 1/2 কিমি |
নতুন সিরিজ শিট | 7’30” × 7’30” | 1 : 25,000 | 1 সেমিতে 1/4 কিমি |
বিভাগ – ঙ
৫.১ যে – কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও (দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে চিত্রাঙ্ককন আবশ্যিক নয়) : (৫×২=১০)
৫.১.১ শুষ্ক অঞ্চলে বায়ু ও জলধারার মিলিত কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি চিত্র-সহ বর্ণনা করো।
উত্তর : শুষ্ক অঞ্চলে অর্থাৎ মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলে প্রাকৃতিক শক্তি হিসেবে বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে জলধারাও সম্মিলিতভাবে ভূমির পরিবর্তন ঘটায়। কারণ মরু অঞ্চলে বৃষ্টিপাত খুব কম হলেও যখন হয় তখন স্বল্প সময়ে তীব্রভাবে হয়। বায়ু ও জলধারায় নিলিত কার্যে সৃষ্টি ভূমিরূপগুলি হল –
- পেডিমেন্ট – মরুভূমিতে উচ্চভূমি থেকে পাদদেশের দিকে মৃদু ঢালযুক্ত (ঢাল) ভূমিকে পেডিমেন্ট বলে। পেডিমেন্ট ক্ষয় ও সঞ্চয়কার্যের সম্মিলিত ফল। পেডিমেন্টের পশ্চাতে অনুচ্চ টিলাকে ইনসেলবার্জ বলে।
- বাজাদা – পেডিমেন্টের ওপর দিয়ে প্রবাহিত জলধারার সঙ্গে বয়ে আসা নুড়ি, কাঁকর, বালি, পলি প্রভৃতি ঢালের নীচে সঞ্চিত হয়ে ত্রিকোণাকার পললব্যজনী সৃষ্টি করে। এই ধরনের অনেকগুলি ভূমি পরস্পরযুক্ত হয়ে যে বৃহৎ আকারে পলিভূমির সৃষ্টি করে তাকে বাজাদা বলা হয়।
- প্লায়া – মরুভূমিতে পাহাড়ে ঘেরা মধ্যভাগে বা কোনো নিম্নভূমিতে জল জমে লবণাক্ত অগভীর হ্রদ সৃষ্টি হলে তাকে প্লায়া বলে। দঃ আমেরিকায় এই হ্রদগুলিকে স্যালিনা, অস্ট্রেলিয়ার প্যান আরব অঞ্চলে শট্ বলা হয়।
- ওয়াদি – মরু অঞ্চলে হঠাৎ বৃষ্টি ও ফলস্বরূপ বন্যার কারণে স্বল্পমেয়াদি নদীর সৃষ্টি হয়। জল নেমে গেলে শুষ্ক নদীখাতের সৃষ্টি হয়। এই শুদ্ধ নদী খাতগুলিকে ওয়াদি বলে।
৫.১.২ বায়ুমন্ডলে উষ্ণতার তারতম্যের প্রধান তিনটি কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা উল্লম্ব ও অনুভূমিকভাবে বণ্টিত। বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বিভিন্ন কারণে পরিবর্তিত হয়।
বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতার তারতম্যের 3টি কারণ হল –
(i) অক্ষাংশ – পৃথিবী অক্ষাংশের তারতম্যের ভিত্তিতে বিভিন্নভাগে বিভক্ত। অক্ষাংশের তারতম্যের কারণে সূর্যরশ্মির পতনকোণের তারতম্য ঘটে। যেমন – সূর্যরশ্মি নিরক্ষীয় অঞ্চলে লম্বভাবে আপতিত হয়। ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে উষ্ণতা বেশি হয়। আবার উচ্চ অক্ষাংশীয় অঞ্চলে সূর্যরশ্মির পতনকোণ বেশি হয় অর্থাৎ সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে আপতিত হয়। এছাড়া নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্যরশ্মিকে বায়ুমণ্ডলের কম পথ অতিক্রম করতে হয় কিন্তু উচ্চ অক্ষাংশ যুক্ত অঞ্চলে অনেক বেশি পথ অতিক্রম করতে হয় বলে সেখানে সূর্যরশ্মির তাপ কম হয়।
উদাহরণ – নিরক্ষীয় অঞ্চলে (Brazil) গড় উষ্ণতা 27°C কিন্তু হিমমণ্ডলে তা হয় হিমাঙ্কের নীচে।
(ii) উচ্চতা – ভূ-পৃষ্ঠে সমুদ্রসমতল থেকে প্রতি 1km উচ্চতা বৃদ্ধিতে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা 6.4°C হারে হ্রাস পায়। একে তাপমাত্রার স্বাভাবিক হ্রাস বলে। তাই সমুদ্রসমতল অপেক্ষা উঁচু স্থানে গেলে উয়তা কম হয়। এছাড়াও পার্বত্য উপত্যকা অঞ্চলে শীতে রাত্রে বৈপরীত্য উত্তাপ দেখা যায়। সেক্ষেত্রে পর্বতের উপরের শীতল বায়ু উপত্যকায় নেমে আসে ও উপত্যকার উষ্ণ বায়ু পর্বতের ঢালে অবস্থান করে।
উদাহরণ – নিরক্ষরেখাতে অবস্থান সত্ত্বেও মাউন্ট কিলিমান্ডারোর চূড়া সর্বদা বরফাচ্ছাদিত থাকে।
(iii) সমুদ্রস্রোত – সমুদ্রস্রোতও উষ্ণতার অন্যতম নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে কোনো অঞ্চলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় এবং তা বরফাবৃত বন্দরকে বরফমুক্ত করে ও হিমশৈলকে গলিয়ে দেয়। আর, শীতল সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে কোনো অশালের শীতলতা বাড়ে। শীতল সমুদ্রস্রোত বন্দরকে বরফাবৃত করে ও হিমশৈল বয়ে আনে।
উদাহরণ – উষ্ণ উপসাগরীয় জোতের প্রভাবে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিম উপকূল বরফমুক্ত হয় কিন্তু শীতল স্রোতের প্রভাবে ব্রিটিশ দ্বীপপূণ্ডের পূর্বভাগ বরফাবৃত থাকে।
৫.১.৩ পৃথিবীব্যাপী সমুদ্রস্রোতের প্রভাবগুলি আলোচনা করো।
উত্তর :
সমুদ্রস্রোতের প্রভাবগুলি হল –
(A) জলবায়ুর ওপর প্রভাব –
(i) উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের প্রভাব – উষ্ণ সমুদ্রস্রোত যে অঞ্চলের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চলের উষ্ণতার বৃদ্ধি ঘটায়। এটি যদি কোনো বরফযুক্ত বন্দরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়, তবে তাকে বরফমুক্ত করে তোলে।
যেমন – উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে ব্রিটিশ দ্বীপ পুঞ্জের পশ্চিমভাগ বরফমুক্ত থাকে।
(ii) শীতল সমুদ্রস্রোতের প্রভাব – শীতল সমুদ্রস্রোত কোনো অঞ্চলের শীতলতা বৃদ্ধি করে। যদি কোনো বন্দরের পাশ দিয়ে শীতল স্রোত প্রবাহিত হয়, তবে তার উষ্ণতা হ্রাস পায়। এটি হিমশৈলও বয়ে আনে। যেমন – শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে কানাডার নৈন শহরের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে থাকে।
(iii) অধঃক্ষেপণ – উষ্ণ স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু অধিক জলীয়বাষ্প ধারণ করে এবং বৃষ্টিপাত ঘটায়, আবার শীতল স্রোতের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু শুষ্ক হয়, তাই তা বৃষ্টিপাত ঘটায় না।
উদাহরণ – উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের প্রভাবে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিম দিকে বৃষ্টি হয়। শীতল কামচাটকা স্রোতের প্রভাবে উঃ-পূঃ এশিয়ায় তুষারপাত ঘটে।
(iv) দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সৃষ্টি – যে সীমানায় উষ্ণ স্রোত ও শীতল স্রোত পরস্পর মিলিত হয় সেখানে ঘন কুয়াশা ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করে। যেমন – নিউ ফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে হিমপ্রাচীর দেখা যায়।
(v) এল-নিনো – 4-7 বছর অন্তর পেরু, ইকুয়েডর-এর পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরে শীতল পেরু স্রোতের বদলে উষ্ণ স্রোতের আবির্ভাব ঘটে। এর ফলে পেরু, ইকুয়েডর অঞ্চলে বন্যা ঘটে ও অন্যান্য স্থানে খরা হয়। এতে পেরুর আবহাওয়ার অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে।
(B) মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়ার ওপর প্রভাব –
(i) পরিবহন – উষ্ণ স্রোতের অনুকূলে জাহাজ ও নৌপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এইজন্যই আটলান্টিক মহাসাগর পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জল পরিবহন ক্ষেত্র। আবার শীতল স্রোতের সাথে আগত হিমবাহ ও শীতলতার কারণে সেই অঞ্চল পরিবহন অযোগ্য।
(ii) মগ্নচড়া – যে সব স্থানে শীতল স্রোতের সাথে উষ্ণ স্রোতের মিলন ঘটে, সেইখানে শীতল স্রোতের বয়ে আনা হিমশৈল উরু স্রোতের সংস্পর্শে গলে যায়। হিমশৈল বাহিত নুড়ি, বালি, কাঁকড় সমুদ্রগর্ভে সঞ্চিত হয়ে মগ্নচড়া সৃষ্টি করে। এটি প্ল্যাংটনের অনুকূল পরিবেশ। এই প্ল্যাঙ্কটন মাছের প্রধান খাদ্য। তাই এই অঞ্চল উন্নত মৎসকেন্দ্ররূপে বিকশিত হয়।
উদাহরণ – Grand Bank মগ্নচড়া উন্নত মৎসক্ষেত্র।
বিপদ – শীতল স্রোতের সাথে ভেসে আসা হিমশৈল জাহাজের ক্ষতি করে ও প্রাণহানি ঘটায়। 1912 সালে Titanic হিমশৈলের আঘাতে ডুবে যায়।
৫.১.৪ বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর :
বিশ্ব উষ্ণায়ণের প্রভাব –
বিশ্ব উষ্ণায়ণের জন্য পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় জীবজগত ও পরিবেশের উপর এর এক সুদূর প্রসারি ক্ষতিকারক প্রভাব দেখা যায়। যেমন –
- মেরু অঞ্চলের বরফের গলন ও পার্বত্য হিমবাহের গলন – বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে মেরু অঞ্চলের (গ্রিণল্যান্ড, অ্যান্টার্কটিকা) সঞ্চিত বরফ স্তূপের গলন শুরু হয়েছে এবং পার্বত্য হিমবাহগুলির বরফের আয়তন ক্রমশ কমছে। সমীক্ষাতে দেখা গেছে গঙ্গোত্রী হিমবাহের গলন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
- সমুদ্র জলের উচ্চতা বৃদ্ধি – গ্রিণহাউস গ্যাসের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য মেরু অঞ্চলে ও পার্বত্য অঞ্চলের বরফ বেশি পরিমাণে গলে গিয়ে সমুদ্রে জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি করে। ফলে সমুদ্রের দীপগুলির অস্তিত্ব অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
- সমুদ্র জলের উচ্চতা বৃদ্ধি – গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য মের অঞ্চলে ও পার্বত্য অঞ্চলের বরফ বেশি পরিমাণে গলে গিয়ে সমুদ্রে জলভলের উচ্চতা বৃদ্ধি করে। ফলে সমুদ্রের দীপগুলির অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
- অধঃক্ষেপণের প্রকৃতি পরিবর্তন – বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য বিভিন্ন উৎসের জল অধিকতর দ্রুত ও বেশি পরিমাণে বাষ্পীভূত হচ্ছে, তার ফলে বৃষ্টিপাত বা অধঃক্ষেপণের পরিমাণ সামগ্রিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাষ্পীভবন বৃদ্ধির ফলে কোথাও প্রবল বর্ষণ আবার কোথাও খরা হচ্ছে। ইউরোপের বহু জায়গায় তুষারপাত কমে গেছে আবার কোথাও অল্প সময়ে খুব বেশি তুষারপাত হচ্ছে। ঘূর্ণবাতের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
- কৃষি পদ্ধতির পরিবর্তন – বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে খরা ও বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষি পদ্ধতির পরিবর্তন হচ্ছে। বর্ষার সময় খরার ফলে খারিফ চাষ ব্যাহত হচ্ছে। আবার স্বল্প বৃষ্টি ও অনিয়মিত বৃষ্টির জন্য ফল-ফুলের চাষ নষ্ট হচ্ছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনে চাষযোগ্য জমিতে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ও আগাছার উপদ্রব বাড়ছে যা শস্য উৎপাদনের বৃদ্ধিকে ব্যাহত করছে।
- এল নিনো ও পৃথিবীব্যাপী তার প্রভাব – দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে পেরুর উপকূলে শীতল পেরু স্রোতের পরিবর্তে অস্থায়ী উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের আবির্ভাবের ঘটনাকে ‘এল-নিনো’ বলে।
বিজ্ঞানীদের অনুমান, যে বছর এল নিনো প্রবাহিত হয় সে বছর দক্ষিণ এশিয়াতে পূবালি জেটবায়ু দু-ভাগ হয়ে পড়ায় প্রত্যাগমনকারী মৌসুমি বায়ু কিছুটা দুর্বল হয়ে ভারতবর্ষে দেরিতে প্রবেশের ফলে খরা সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি 2009 খ্রিস্টাব্দে EL-Nino-এর প্রভাবে ভারতের 250টি জেলায় খরার সৃষ্টি হয়েছে।
৫.২ যে-কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও : (৫×২=১০)
৫.২.১ ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের সমভূমির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য আলোচনা করো।
উত্তর : উপদ্বীপীয় ভারতকে পূর্ব ও পশ্চিমে বেষ্টন করে আছে উপকূলীয় সমভূমি। উত্তরে গুজরাটের কচ্ছের রান থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারিকা অন্তরীপ পর্যন্ত পশ্চিম উপকূলের সমভূমি এবং ওড়িশার সুবর্ণরেখা নদীর মোহানা থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারিকা অন্তরীপ পর্যন্ত পূর্ব উপকূলের সমভূমি বিস্তৃত।
ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের সমভূমির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য –
ভিত্তি | পূর্ব উপকূলের সমভূমি | পশ্চিম উপকূলের সমভূমি |
উৎপত্তি | ভূ-আন্দোলনের ফলে ভূভাগ বসে গিয়ে এই সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে। | নদী ও সমুদ্রের মিলিত কার্যের ফলে এই সমভূমি সৃষ্টি হয়েছে। |
বিস্তার | উপকূলভাগ অনেক সংকীর্ণ, গড়ে 10-25 কি.মি.। | উপকূলভাগ বেশ প্রশস্ত, গড়ে 100-130 কি.মি.। |
উচ্চতা | গড় উচ্চতা যথেষ্ট বেশি। | হ্রদ ও উপহ্রদের সংখ্যা বেশি। |
হ্রদ ও উপহ্রদ | হ্রদ ও উপহ্রদের সংখ্যা বেশি। | হ্রদ ও উপহ্রদের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। |
ভূমির ঢাল | সমভূমির ঢাল যথেষ্ট বেশি। | সমভূমির ঢাল মৃদু। |
জলবায়ু ও স্বাভাবির উদ্ভিদ | দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু পশ্চিমঘাট পর্বতে বাধাপ্রাপ্ত হয় প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। ফলে এখানে চিরহরিৎ অরন্যের সৃষ্টি হয়েছে। | এই উপকূলে বছরে দুবার বৃষ্টিপাত হলেও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম। ফলে এখানে পর্ণমোচী অরণ্যের সমাহার ঘটেছে। |
৫.২.২ ভারতে ইক্ষুচাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের বর্ণনা দাও।
উত্তর : ইক্ষু হল ভারতের অন্যতম একটি কৃষিজ ফসল। ইক্ষু উৎপাদনে উত্তর প্রদেশ প্রথম ও মহারাষ্ট্র দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে।
ভারতে ইক্ষুচাষের অনুকূলে প্রাকৃতিক পরিবেশগুলি হল –
(i) উষ্ণতা – ইক্ষুচাষের জন্য 20°C-30°℃ উষ্ণতা প্রয়োজন, তবে 30°C এর বেশি উষ্ণতাতেও ইক্ষুচাষ হয়।
(ii) বৃষ্টিপাত – ইক্ষুভাষের জন্য প্রায় 75-150 cm বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। 75 cm এর কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে জলসেচের সাহায্যে চাষ করা হয়।
(iii) আবহাওয়ার অন্যান্য অবস্থা –
- ইক্ষু চাষের জন্য কমপক্ষে 200টি তুহিন মুক্ত দিনের প্রয়োজন।
- সামুদ্রিক ঢাবণাক্ত বায়ু ইক্ষুগাছে রসের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
- ইক্ষুচাষের ক্ষেত্রে রোপণের সময় শীতল আর্দ্র আবহাওয়া প্রয়োজন। পরিমিত দীর্ঘকালীন বৃষ্টি না হলে আখে (ইক্ষু) রস হ্রাস পায়।
(iv) ভূমির প্রকৃতি – আখচাষে উত্তম জলনিকাশী ব্যবস্থাযুক্ত চালুজমির প্রয়োজন। আখ গাছের গোড়ায় জল জমলে তা গাছের ক্ষতি করে। তাই আখচাষে জলনিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত ঢালুজমি দরকার।
(v) মৃত্তিকা – ইক্ষু চাষের ক্ষেত্রে উর্বর চুন ও লবণ সমৃদ্ধ দোআঁশ মৃত্তিকা উপযোগী। এই মাটিতে আখ চাষ ভালো হয়।
৫.২.৩ পশ্চিম ভারতে পেট্রোরসায়ন শিল্পের উন্নতির কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : পেট্রোরসায়ন শিল্প হল ভারতের অন্যতম বৃহৎ ও উদীয়মান শিল্প। এই শিল্প পশ্চিমভারতের বিভিন্ন স্থানে যেমন – জামনগর, মুম্বই, ট্রন্সে, ভারুচ, ভদোদরা, হাজিরা ইত্যাদি স্থানে বিকশিত হয়েছে।
পশ্চিমভারতে পেট্রোরসায়ন শিল্পের কেন্দ্রীভবনের কারণ –
(i) কাঁচামালের সহজলভ্যতা – পশ্চিম ভারতে বিভিন্ন স্থান যেমন – কাম্বে, আঙ্কেলেশ্বর, মুম্বাই হাই, বাসিন, কাল্লোল প্রভৃতি স্থানে যথেষ্ট পরিমাণে পেট্রোরসায়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল-খনিজ তেল পাওয়া যায়।
(ii) তৈল শোধনাগারের উপস্থিতি – এই অঞ্চলে যথেষ্ট তৈল শোধনাগার উপস্থিত- জামনগর (বৃহত্তম), ট্রন্সে (2টি)। এই তৈল শোধনাগার থেকে খনিজ তেল সংশ্লেষ করে বিভিন্ন অনুসারী দ্রব্য উৎপাদন করা হয়।
(iii) বিদ্যুতের প্রাচুর্য – পশ্চিম ভারতে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। ভীরা, ভীবপুরী, উকাই প্রভৃতি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র; নাসিক, ধুবরান প্রভৃতি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও কাকরাঝাড়, তারাপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুতের অভাব হয় না।
(iv) বন্দরের নৈকট্য – পশ্চিম ভারতে উপস্থিত বিভিন্ন বন্দর (যেমন – মুম্বই, নভসেবা, কান্ডালা ইত্যাদি) এর উপস্পিতি এবং তার আবা দ্রব্য আমদানি বা রপ্তানি করতে সুবিধা হয়।
(v) অন্যান্য কারণ –
- উন্নত পরিকাঠামো ব্যবস্থা
- কোঙ্কন রেলওয়ের প্রসার
- NH-31. NH-33, ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবস্থান।
- মূলধনের প্রাচুর্য
- পশ্চিম ভারতে উৎপাদিত দ্রব্যের ব্যাপক চাহিদার ফলে পেট্রোরসায়ন শিল্প সেখানে কেন্দ্রীভূত হয়েছে।
৫.২.৪ ভারতের জনসংখ্যা বন্টনের তারতম্যের পাঁচটি কারণ আলোচনা করো।
উত্তর : ভারতে জনসংখ্যার বণ্টন সর্বত্র সমান নয়, কোথাও বেশি কোথাও কম। জনসংখ্যা বন্টনের তারতম্যের কারণগুলিকে প্রধান তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় – (ক) প্রাকৃতিক কারণ, (খ) অর্থনৈতিক কারণ এবং (গ) সামাজিক কারণ ও সাংস্কৃতির কারণ।
(ক) প্রাকৃতিক কারণ –
(i) ভূ-প্রকৃতি ও নদনদী – উত্তর ভারতের সমভূমি ও উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চলের সমতল ভূমি ও উর্বর মৃত্তিকার জন্য কৃষি, শিল্প ও পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত। তাই এখানকার জনবসতি ঘন।
অপরদিকে, পার্বত্য অঞ্চল উঁচু ও খাড়াঢাল বিশিষ্ট হওয়ায় কৃষি ও শিল্পে অনুন্নত। তাই জনবসতি বিরল। এছাড়া, দক্ষিণের মালভূমি অঞ্চলে ভূমির উচ্চতা মধ্যম প্রকারের হওয়ায় জনবসতি মাঝারি।
(ii) ভারতের সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র ও গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী প্রভৃতি নদীর উর্বর উপত্যকা কৃষি ও শিল্পে উন্নত এবং পানীয় জল সরবরাহের সুবিধার জন্য ঘন জনবসতিপূর্ণা। তাছাড়া নদী জলপথগুলি পরিবহণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে বলে, নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলি ঘনবসতিপূর্ণ।
(iii) জলবায়ু, মৃত্তিকা ও বনভূমি – অগ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু প্রভৃতি রাজ্যে অনুকূল জলবায়ুর জন্য লোকবসতি ঘন।
অপরদিকে, রাজস্থানের মরু অঞ্চলে বা গুজরাটের কচ্ছ অঞ্চলে চরম জলবায়ুর জন্য লোকবসতি কম।
নদী উপত্যকায় উর্বর মৃত্তিকায় এবং মহারাষ্ট্রের কৃষ্ণ মৃত্তিকায় কৃষিকার্যের জন্য লোকবসতি ঘন।
ঘন অরণ্যাবৃত পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢাল এবং পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে লোকবসতি কম।
(খ) অর্থনৈতিক কারণ –
(i) কৃষি ও শিল্প সমতল ভূমি, উর্বর মৃত্তিকা ও জলসেচের সুবিধার জন্য গঙ্গা, গোদাবরী, কাবেরী নদী অববাহিকায় নিবিড় জনবসতি গড়ে উঠেছে।
ভারতের শিল্প শহর ও শহরাঞ্চলগুলিতে যেমন, দুর্গাপুর-আসানসোল, মুম্বাই-পুনে প্রভৃতি অত্যন্ত ঘনবসতি পূর্ণ।
(ii) যোগাযোগ ব্যবস্থা – উন্নত সড়ক ও রেল পরিসেবার জন্য উত্তর ভারতে জনসংখ্যা বেশি।
(iii) খনিজ সম্পদ – খনি অঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেশি হওয়ায় জনবসতি বেশি হয়।
(গ) সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণ –
(1) নগরায়ন, (2) জ্ঞান, বিদ্যা, প্রযুক্তির উন্নতি, (3) সরকারি নীতি, (4) শিক্ষা ও ধর্ম প্রভৃতি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কারণও ভারতের জনবণ্টনের তারতম্যকে নিয়ন্ত্রণ করে।
উপরোক্ত করণগুলি সম্মিলিতভাবে ভারতের জনসংখ্যা বণ্টনের তারতম্যকে নিয়ন্ত্রণ করে।
বিভাগ – চ
৬. প্রশ্নপত্রের সাথে প্রদত্ত ভারতের রেখা-মানচিত্রে নিম্নলিখিতগুলি উপযুক্ত প্রতীক ও নামসহ চিহ্নিত করে মানচিত্রটি উত্তরপত্রের সঙ্গে জুড়ে দাও : (১×১০=১০)
- ৬.১ নীলগিরি পর্বত;
- ৬.২ তাপ্তি নদী;
- ৬.৩ বছরে দু-বার বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চল;
- ৬.৪ পূর্ব ভারতের একটি ল্যাটেরাইট মৃত্তিকাযুক্ত অঞ্চল;
- ৬.৫ পশ্চিম ভারতের একটি মিলেট উৎপাদক অঞ্চল;
- ৬.৬ ভারতের বৃহত্তম পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্র;
- ৬.৭ ভারতের সর্বাধিক জনঘনত্বপূর্ণ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল
- ৬.৮ ভারতের হাইটেক বন্দর;
- ৬.৯ পূর্বভারতের একটি মহানগর;
- ৬.১০ দক্ষিণ ভারতের একটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর।
উত্তর :
আজকের আর্টিকেলে, আমরা মাধ্যমিক পরীক্ষার পুরাতন বছরের প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক পরীক্ষায় কেমন প্রশ্ন আসে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন।
বিশেষ করে, আমরা Madhyamik Geography Question Paper 2017 With Answer নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক ২০১৭ সালের প্রশ্নগুলি পরবর্তী বছরের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আশা করি, এই আর্টিকেলটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাদের সহায়ক হবে।