আজকে আমরা এই আর্টিকেলে মাধ্যমিক পরীক্ষার পুরাতন বছরের প্রশ্ন ও তাদের উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই আর্টিকেলের সাহায্যে শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক পরীক্ষায় আগের বছর কী প্রশ্ন এসেছিল তা সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পাবে। এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌত বিজ্ঞান প্রশ্নপত্র ২০২০-এর উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। মাধ্যমিক ২০২০-এর প্রশ্নগুলি শিক্ষার্থীদের পরের বছরের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি তোমরা মাধ্যমিক ভৌত বিজ্ঞান পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে মাধ্যমিক ভৌত বিজ্ঞান প্রশ্নপত্র ২০২০-এর উত্তর দেখে পরীক্ষা দিতে যাবে।
‘ক’ – বিভাগ
1. বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্ন। প্রতিটি প্রশ্নের নীচে উত্তর হিসেবে চারটি করে বিকল্প দেওয়া আছে। যেটি ঠিক সেটি লেখো :
1.1 নিচের কোন গ্যাসটি ওজোন স্তরে ওজোন ক্ষয়ে সহায়তা করে না?
(a) NO
(b) NO2
(c) CFC
(d) CO2
উত্তরঃ (d) CO2
1.2 11.2 লিটার কোনো আদর্শ গ্যাসের জন্য STP-তে PV এর মান কত?
(a) 2RT
(b) RT
(c) 0.5RT
(d) 11.2RT
উত্তরঃ (c) 0.5RT
1.3 নিচের রাসায়নিক সমীকরণ অনুযায়ী CH4 + 2O2 → CO2 + 2H2O 10 মোল CH4 পোড়াতে STP-তে কত আয়তন O2 লাগবে?
(a) 448L
(b) 224L
(c) 44.8L
(d) 22.4L
উত্তরঃ (a) 448L
1.4 নিচের পদার্থগুলির মধ্যে কোনটির তাপ পরিবাহিতা সর্বাধিক?
(a) রূপা
(b) হীরা
(c) তামা
(d) অ্যালুমিনিয়াম
উত্তরঃ (b) হীরা
1.5 একটি লাল ও একটি বেগুনি বর্ণের আলোকরশ্মি বায়ু মাধ্যম থেকে একই কোণে একটি প্রিজমের অপতলে আপতিত হয়ে যথাক্রমে r ও v প্রতিসরণ কোণ উৎপন্ন করলে নিচের কোনটি ঠিক?
(a) r = v
(b) r = 1/v
(c) r > v
(d) r < v
উত্তরঃ (c) r > v
1.6 একটি বিন্দু আলোক উৎস একটি অবতল দর্পণের বক্রতা কেন্দ্রে স্থাপিত হলে, এই উৎস থেকে দর্পণে আপতিত ও দর্পণ থেকে প্রতিফলিত রশ্মির মধ্যে চ্যুতিকোণ হল
(a) 0°
(b) 180°
(c) 90°
(d) 360°
উত্তরঃ (a) 0°
1.7 তড়িৎ আধান সংক্রান্ত কুলম্বের সূত্রটি প্রযোজ্য যখন দুটি আধানের
(a) একটি বিন্দু, একটি গোলকাকৃতি
(b) দুটিই গোলকাকৃতি
(c) একটি বিন্দু, অন্যটি বিস্তৃত
(d) দুটিই বিন্দু
উত্তরঃ (d) দুটিই বিন্দু
1.8 ফিউজ তারের বৈশিষ্ট্য হল
(a) রোধ উচ্চ, গলনাঙ্ক উচ্চ
(b) রোধ নিম্ন, গলনাঙ্ক নিম্ন
(c) রোধ নিম্ন, গলনাঙ্ক উচ্চ
(d) রোধ উচ্চ, গলনাঙ্ক নিম্ন
উত্তরঃ (d) রোধ উচ্চ, গলনাঙ্ক নিম্ন
1.9 α-কণায় উপস্থিত
(a) একটি প্রোটন, একটি নিউট্রন
(b) একটি প্রোটন
(c) দুটি প্রোটন, দুটি নিউট্রন
(d) একটি ইলেকট্রন
উত্তরঃ (c) দুটি প্রোটন, দুটি নিউট্রন
1.10 নিচের কোন ধর্মটি মৌলদের পর্যায়গত ধর্ম নয়?
(a) ঘনত্ব
(b) গলনাঙ্ক
(c) স্ফুটনাঙ্ক
(d) তেজস্ক্রিয়তা
উত্তরঃ (d) তেজস্ক্রিয়তা
1.11 নিচের কোন যৌগটির মধ্যে কোনো অণুর অস্তিত্ব নেই?
(a) হাইড্রোজেন ক্লোরাইড
(b) ক্যালশিয়াম অক্সাইড
(c) মিথেন
(d) অ্যামোনিয়া
উত্তরঃ (b) ক্যালশিয়াম অক্সাইড
1.12 Cu তড়িৎদ্বার ব্যবহার করে CuSO4 দ্রবণের তড়িৎবিশ্লেষণের ক্ষেত্রে নিচের কোন বিবৃতিটি ঠিক?
(a) ক্যাথোডের ভর কমে
(b) অ্যানোডের ভর বাড়ে
(c) দ্রবণে CuSO4 এর গাঢ়ত্ব কমে
(d) দ্রবণে CuSO4 এর গাঢ়ত্ব অপরিবর্তিত থাকে
উত্তরঃ (d) দ্রবণে CuSO4 এর গাঢ়ত্ব অপরিবর্তিত থাকে
1.13 সোডিয়াম নাইট্রোপ্রুসাইডের ক্ষারীয় জলীয় দ্রবণে H2S গ্যাস চালনা করলে কী রঙ উৎপন্ন হয়?
(a) বেগুনি
(b) কমলা
(c) গাঢ় নীল
(d) সবুজ
উত্তরঃ (a) বেগুনি
1.14 লোহার আকরিক রেড হিমাটাইটের সংকেত হল
(a) FeO
(b) Fe2O3
(c) Fe3O4
(d) FeCO3
উত্তরঃ (b) Fe2O3
1.15 নিচের কোন যৌগটির সঙ্গে জলীয় NaHCO3 এর বিক্রিয়ায় CO2 উৎপন্ন হয়?
(a) CH3CH2OH
(b) CH3CHO
(c) CH3COCH3
(d) CH3COOH
উত্তরঃ (d) CH3COOH
‘খ’ বিভাগ
2. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষ্যণীয়) :
2.1 কোল-বেড থেকে কোন জ্বালানি গ্যাস আহরণ করা হয়?
উত্তর: কোল-বেড থেকে মিথেন (CH₄) জ্বালানি গ্যাস আহরণ করা হয়।
অথবা
বায়ুতে উপস্থিত একটি গ্যাসের নাম বলো, যেটির পরিমাণ বাড়লে বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটে।
উত্তর: বায়ুতে উপস্থিত একটি গ্যাসের নাম হলো কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂), এটির পরিমাণ বাড়লে বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটে।
2.2 একটি শক্তি উৎসের নাম লেখো যেটি স্থিতিশীল বৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা যায়।
উত্তর: একটি শক্তি উৎসের নাম হলো সৌর শক্তি, এটি স্থিতিশীল বৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা যায়।
2.3 নিচের বিবৃতিটি সত্য না মিথ্যা লেখো:
নির্দিষ্ট উষ্ণতা ও চাপে কোনো আবদ্ধ পাত্রে রক্ষিত গ্যাসের মধ্যে অণুগুলির বেগ সমান।
উত্তর: মিথ্যা।
2.4 চার্লস সূত্র অনুসারে V বনাম T লেখচিত্রের প্রকৃতি কী?
উত্তর: চার্লস সূত্র অনুসারে V বনাম T লেখচিত্রের প্রকৃতি হলো মূল বিন্দুগামী সরলরৈখিক।
2.5 নিচের বিবৃতিটি সত্য না মিথ্যা লেখো:
তামা, ইন্ডার ও লোহার মধ্যে লোহার রৈখিক প্রসারণ গুণাঙ্ক সর্বনিম্ন।
উত্তর: মিথ্যা।
অথবা
আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্কের একক কী?
উত্তর: আয়তন প্রসারণ গুণাঙ্কের S.I. একক হলো K⁻¹ এবং C.G.S. একক হলো °C⁻¹।
2.6 গোলীয় দর্পণের মেরু বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: কোনো গোলীয় দর্পণের মধ্যবিন্দুকে ওই দর্পণটির মেরু বলে।
2.7 X-রশ্মির একটি ব্যবহার লেখো।
উত্তর: X-রশ্মির একটি ব্যবহার হলো দাঁতের ছবি তোলার জন্য। এছাড়া, হাড়ের ছবি তোলার জন্যও ব্যবহার করা হয়।
2.8 এমন একটি যন্ত্রের নাম বলো যেখানে তড়িৎশক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
উত্তর: এমন একটি যন্ত্রের নাম হলো বিদ্যুৎ মোটর, এখানে তড়িৎশক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
2.9 গৃহস্থালির বর্তনীতে লাইভ তার ছাড়া বাকি তার দুটি কী কী?
উত্তর: গৃহস্থালির বর্তনীতে লাইভ তার ছাড়া বাকি তার দুটি হলো নিউট্রাল এবং আর্থ।
2.10 পারমাণবিক চুল্লিতে কোন ধরনের নিউক্লিয় বিক্রিয়ার সাহায্যে শক্তি উৎপাদিত হয়?
উত্তর: পারমাণবিক চুল্লিতে নিউক্লিয় বিভাজন বিক্রিয়ার সাহায্যে শক্তি উৎপাদিত হয়।
অথবা
একটি প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় মৌলের উদাহরণ দাও।
উত্তর: একটি প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় মৌলের উদাহরণ হলো ইউরেনিয়াম।
2.11 বামস্তম্ভের সঙ্গে ডানস্তম্ভের সামঞ্জস্য বিধান করো :
বামস্তম্ভ | ডানস্তম্ভ |
2.11.1 একটি ইউরেনিয়ামোত্তর মৌল | (a) ক্রিপটন। |
2.11.2 একটি অভিজাত মৌল | (b)পচুনিয়ামন |
2.11.3 ধাতুটির অক্সাইডের কার্বন বিজারণ দ্বারা প্রস্তুত করা হয় | (c) কপার |
2.11.4 ধাতু সংকর পিতলে যে ধাতুটির শতকরা পরিমাণ অন্য ধাতুটির শতকরা পরিমাণ থেকে বেশি | (d) জিঙ্ক |
উত্তরঃ
বামস্তম্ভ | ডানস্তম্ভ |
2.11.1 একটি ইউরেনিয়ামোত্তর মৌল | (b)নেপচুনিয়ামন |
2.11.2 একটি অভিজাত মৌল | (a) ক্রিপটন। |
2.11.3 ধাতুটির অক্সাইডের কার্বন বিজারণ দ্বারা প্রস্তুত করা হয় | (d) জিঙ্ক |
2.11.4 ধাতু সংকর পিতলে যে ধাতুটির শতকরা পরিমাণ অন্য ধাতুটির শতকরা পরিমাণ থেকে বেশি | (c) কপার |
2.12 ক্লোরোফর্ম ও সোডিয়াম ক্লোরাইডের মধ্যে কোনটি জলে দ্রবীভূত হয় না?
উত্তর: ক্লোরোফর্ম ও সোডিয়াম ক্লোরাইডের মধ্যে ক্লোরোফর্ম জলে দ্রবীভূত হয় না।
2.13 তড়িৎবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশিত করা হয় এমন একটি ধাতুর নাম বলো।
উত্তর: তড়িৎবিশ্লেষণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশিত করা হয় এমন একটি ধাতুর নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম।
অথবা
পিতলের চামচের ওপর সিলভারের তড়িৎলেপনে অ্যানোডটি কী?
উত্তর: পিতলের চামচের ওপর সিলভারের তড়িৎলেপনে অ্যানোডটি হলো সিলভার।
2.14 তড়িৎবিশ্লেষণের সময় কোন শক্তি রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়?
উত্তর: তড়িৎবিশ্লেষণের সময় তড়িৎশক্তি রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়।
2.15 উপযুক্ত লিটমাস কাগজের সাহায্যে দেখাও যে অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ ক্ষারীয় প্রকৃতির।
উত্তর: এক্ষেত্রে লাল লিটমাস কাগজ অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণে ডোবালে নীল হয়ে যাবে। এভাবে প্রমাণ করা যাবে যে অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ ক্ষারীয় প্রকৃতির।
অথবা
শূন্যস্থান পূরণ করো:
NaOH + H₂S → _______ + H₂O উত্তর: NaOH + H₂S → NaHS + H₂O
2.16 ইউরিয়ার একটি ব্যবহার লেখো।
উত্তর: ইউরিয়ার একটি ব্যবহার হলো কৃষিকাজে সার হিসাবে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে।
2.17 প্রপানোন (propanone) এর গঠন সংকেত লেখো।
অথবা
ভোলার সর্বপ্রথম অজৈব যৌগ থেকে একটি জৈব যৌগ পরীক্ষাগারে প্রস্তুত করেন। জৈব যৌগটি কী?
উত্তর: ভোলার সর্বপ্রথম অজৈব যৌগ থেকে একটি জৈব যৌগ পরীক্ষাগারে প্রস্তুত করেন। জৈব যৌগটি হলো ইউরিয়া।
2.18 একটি বায়োডিগ্রেডেবল প্রাকৃতিক পলিমারের উদাহরণ দাও।
উত্তর: একটি বায়োডিগ্রেডেবল প্রাকৃতিক পলিমারের উদাহরণ হলো প্রোটিন, স্টার্চ এবং সেলুলোজ।
‘গ’ বিভাগ
3. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষ্যণীয়) :
3.1 বায়ুমণ্ডলের স্তরগুলির মধ্যে কোনটিতে চাপ সবথেকে বেশি কারণ সহ লেখো।
উত্তরঃ বায়ুমণ্ডলকে কয়েকটি স্তরে ভাগ করা হয়, যার মধ্যে ট্রপোস্ফিয়ার, স্ট্রাটোস্ফিয়ার, মেসোস্ফিয়ার, থার্মোস্ফিয়ার এবং এক্সোস্ফিয়ার অন্তর্ভুক্ত। এই স্তরগুলোতে চাপ, ঘনত্ব এবং তাপমাত্রার পার্থক্য থাকে।
ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে বায়ুর চাপের অতিরিক্ত প্রভাব কারণ –
- প্রায় 75% গ্যাসীয় উপাদানের উপস্থিতি – অধিক গ্যাসীয় উপাদান বায়ুর ঘনত্ব বাড়ায়।
- জলীয় বাষ্পের অধিক উপস্থিতি – বায়ু মণ্ডলের প্রায় 99% জলীয় বাষ্প এই স্তরে থাকে, যা চাপ বাড়ানোর কারণ হতে পারে।
- ঘনত্বের অনুপ্রবেশ – এই স্তরে বায়ুর ঘনত্ব অন্যান্য স্তরের চেয়ে বেশি, যা চাপ বাড়ায়।
3.2 27°C উষ্ণতায় ও 700mmHg চাপে 32g O2 ও 44g CO2 গ্যাস দ্বারা অধিকৃত আয়তনের অনুপাত নির্ণয় করো। (C = 12, O = 16)
উত্তরঃ
সমাধান,
এক্ষেত্রে, T = 27°C = (27 + 273)K = 300K
দেওয়া আছে, P = 700mmHg
O2 এর আণবিক গুরুত্ব = (16 × 2) = 32
∴ \(O_2\) এর মোল সংখ্যা (n) = \(\frac{32}{32}\) = 1
এখন PV = nRT
∴ 700 × V = 1 × R × 300
∴ V = \(\frac{3R}7\)
আবার, CO2 এর আণবিক গুরুত্ব = (12 + 32) = 44
∴ \(CO_2\) এর মোল সংখ্যা (n) = \(\frac{44}{44}\) = 1
এখন PV = nRT
∴ 700 × V = 1 × R × 300
বা, V = \(\frac{3R}7\)
∴ গ্যাস দুটির আয়তনের অনুপাত = \(\frac{3R}7:\frac{3R}7\) = 1 : 1
অথবা
নির্দিষ্ট ভরের একটি গ্যাস – 13°C উষ্ণতায় 520cm2 আয়তন অধিকার করে। চাপ অপরিবর্তিত রেখে গ্যাসটিকে উত্তপ্ত করলে গ্যাসের আয়তন বেড়ে 700cm3 হয়। গ্যাসটির অন্তিম উষ্ণতা কত ডিগ্রি সেলসিয়াস?
উত্তরঃ
সমাধান,
এক্ষেত্রে T1 = ( -13 + 273)K = 260K
V1 = 520cm3
V2 = 700cm3
এখন চার্লস-এর সূত্র থেকে পাই,
\(\frac{V_1}{T_1}=\frac{V_2}{T_2}\\\)বা, \(\frac{520}{260}=\frac{700}{T_2}\)
বা, 520 × T2 = 700 × 260
বা, \(T_2=\frac{700\times260}{520}\)
বা, T2 = 350
∴ 350K = (350 – 273)°C = 77°C
∴ গ্যাসটির অন্তিম উষ্ণতা 77°C
3.3 একটি সরল ক্যামেরা দ্বারা গঠিত প্রতিবিম্বের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তরঃ একটি সরল ক্যামেরা দ্বারা গঠিত প্রতিবিম্বের দুটি বৈশিষ্ট্য হল – সদ, অবশীর্ষ, খর্বকার।
অথবা
অসীমে অবস্থিত কোনো বিস্তৃত বস্তুর অবতল দর্পণ কর্তৃক গঠিত প্রতিবিম্ব দর্পণের সামনে কোথায় গঠিত হবে? প্রতিবিম্বটির একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তরঃ অসীমে অবস্থিত কোনো বিস্তৃত বস্তুর অবতল দর্পণ কর্তৃক গঠিত প্রতিবিম্ব ফোকাসে গঠিত হবে। প্রতিবিম্বটির একটি বৈশিষ্ট্য – সদ, অবশীর্ষ, অত্যন্ত ক্ষুদ্র বা বিন্দু সদৃশ।
3.4 তড়িৎচালক বল ও বিভব প্রভেদের মধ্যে একটি সাদৃশ্য ও একটি বৈসাদৃশ্য উল্লেখ করো।
উত্তরঃ তড়িৎচালক বল ও বিভব প্রভেদের মধ্যে একটি সাদৃশ্য – উভয়ই ভোল্ট (V) এককে পরিমাপ করা হয়।
তড়িৎচালক বল ও বিভব প্রভেদের মধ্যে একটি বৈসাদৃশ্য – যখন বর্তনী খোলা থাকে, তখন তড়িৎ-কোষের দুই মেরুর বিভব-প্রভেদকে কোষের তড়িৎচালক বল বলা হয়। যখন বর্তনী সংযুক্ত থাকে, তখন তড়িৎ-কোষের দুই মেরুর মধ্যে বিভব-প্রভেদকে কোষের বিভব-প্রভেদ বলা হয়।
3.5 একটি আয়নীয় যৌগের উদাহরণ দিয়ে দেখাও যে এর আয়নগুলি অষ্টক নীতি মান্য করে না।
উত্তরঃ সমস্ত আয়নীয় যৌগের উপাদান আয়নগুলির যোজ্যতা-কক্ষে 8 টি ইলেকট্রনের উপস্থিতি তথা অষ্টক পূর্তির দ্বারা যৌগগুলির স্থায়িত্ব ব্যাখ্যা করা যায় না। উদাহরণস্বরূপ, ক্ষার ধাতু Li দ্বারা গঠিত LiH যৌগে Li+ আয়নের যোজ্যতা-কক্ষে 2টি ও H– আয়নের যোজ্যতা-কক্ষে 2টি ইলেকট্রন আছে। এক্ষেত্রে অষ্টক নীতি মান্য হয় না।
অথবা
সোডিয়াম ক্লোরাইডের গলনাঙ্ক গ্লুকোজের গলনাঙ্ক থেকে অনেক বেশি কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
কঠিন এবং তরল অবস্থা: কঠিন অবস্থায়, পরমাণুগুলো একে অপরের খুব কাছে থাকে এবং সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো থাকে। তরল অবস্থায়, পরমাণুগুলোর মধ্যে দূরত্ব বেশি থাকে এবং তারা একে অপরের সাথে অপেক্ষাকৃত স্বাধীনভাবে স্পন্দিত হয়।
গ্লুকোজ (C6H12O6): গ্লুকোজ অণুতে, কার্বন-কার্বন (C-C) এবং কার্বন-হাইড্রোজেন (C-H) পরমাণুগুলো সমযোজী বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে। এছাড়া, কার্বন-অক্সিজেন (C-O) বন্ধন দুটি ভাগে বিভক্ত – একটি সিগমা (σ) বন্ধন এবং একটি দুর্বল পাই (π) বন্ধন। H-C=O গ্রুপটি অ্যালডিহাইড গ্রুপ নামে পরিচিত।
NaCl: NaCl-এ, সোডিয়াম (Na) এবং ক্লোরিন (Cl) পরমাণু আয়নিক বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে। আয়নিক বন্ধন ইলেকট্রোস্ট্যাটিক আকর্ষণ দ্বারা গঠিত হয়, যা সমযোজী বন্ধনের তুলনায় অনেক শক্তিশালী।
গলনাঙ্ক: গলনাঙ্ক হলো যে তাপমাত্রায় একটি পদার্থ কঠিন থেকে তরল অবস্থায় পরিণত হয়। আয়নিক বন্ধনযুক্ত পদার্থের গলনাঙ্ক সমযোজী বন্ধনযুক্ত পদার্থের তুলনায় অনেক বেশি কারণ আয়নিক বন্ধন ভাঙতে বেশি শক্তির প্রয়োজন।
গ্লুকোজ, যার সমযোজী বন্ধন রয়েছে, তার গলনাঙ্ক 146°C। অন্যদিকে, NaCl, যার আয়নিক বন্ধন রয়েছে, তার গলনাঙ্ক 801°C।
কঠিন অবস্থায়, পরমাণুগুলো একে অপরের কাছে থাকে, তরল অবস্থায় দূরত্ব বেশি থাকে। সমযোজী বন্ধন দ্বারা যুক্ত পরমাণুগুলো আয়নিক বন্ধনযুক্ত পরমাণুগুলোর তুলনায় সহজেই আলাদা হয়। এই কারণেই আয়নিক বন্ধনযুক্ত পদার্থের গলনাঙ্ক সমযোজী বন্ধনযুক্ত পদার্থের তুলনায় বেশি হয়।
3.6 দেখাও যে F আয়নীয় বন্ধন গঠন করে Na এর সঙ্গে, কিন্তু সমযোজী বন্ধন গঠন করে H এর সঙ্গে। (H, F ও Na এর পারমাণবিক সংখ্যা যথাক্রমে 1, 9 ও 11)
উত্তর: Na পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস – K = 2 ,L = 8, M = 1 এবং F পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাস – K = 2, L = 7। একটি Na পরমাণু যখন একটি F পরমাণুর সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, তখন Na পরমাণুটি তার সর্ববহিঃস্থ কক্ষের একটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে Na+ ক্যাটায়নে পরিণত হয় ও নিকটবর্তী নিষ্ক্রিয় মৌল Ne এর ইলেকট্রন বিন্যাস (K = 2, L = 8) লাভ করে। অন্যদিকে, F পরমাণু Na পরমাণু দ্বারা বর্জিত একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে F– অ্যানায়নে পরিণত হয় ও নিকটবর্তী নিষ্ক্রিয় মৌল Ne এর ইলেকট্রন বিন্যাস লাভ করে। এরপর বিপরীতধর্মী Na+ ও F– স্থির তাড়িতিক আকর্ষণ বলের মাধ্যমে পরস্পর যুক্ত হয়ে আয়নীয় যৌগ NaF গঠন করে।
HF অনু গঠনের সময় H ও F পরমাণুর (2, 7) যোজ্যতা – কক্ষ থেকে 1 টি করে ইলেকট্রন এসে 1 টি ইলেকট্রন জোড় গঠিত হয়। এই ইলেকট্রন জোড়কে উভয় পরমাণুই সমভাবে ব্যবহার করে। ফলে H পরমাণু, He পরমাণুর এবং F পরমাণু, Ne পরমাণুর সুস্থিত ইলেক্ট্রন বিন্যাস লাভ করে। H ও F পরমাণু সমযোজী বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে HF অনু গঠন করে।
3.7 1100°C উষ্ণতায় উত্তপ্ত ক্যালশিয়াম কার্বাইড এর ওপর দিয়ে নাইট্রোজেন গ্যাস চালনা করলে কী ঘটে সমিত রাসায়নিক সমীকরণ সহ লেখো।
উত্তরঃ যখন 1100°C তাপমাত্রায় ক্যালসিয়াম কার্বাইডের উপর নাইট্রোজেন গ্যাস চালনা করা হয়, তখন ক্যালসিয়াম সায়ানামাইড (CaNCN) এবং ধূসর কার্বন উৎপন্ন হয়, যাকে নাইট্রোলিম বলা হয়।
আপনার লেখায় কয়েকটি বানান ও বিরাম চিহ্নের ভুল রয়েছে। সংশোধিত লেখাটি হলো:
3.8 থার্মিট পদ্ধতিতে ফেরিক অক্সাইড থেকে ধাতব আয়রন উৎপন্নের বিক্রিয়াটির সমীকরণ লেখো। এই পদ্ধতিটির একটি প্রয়োগ উল্লেখ করো।
উত্তরঃ থার্মিট পদ্ধতিতে ফেরিক অক্সাইড থেকে ধাতব আয়রন উৎপন্নের বিক্রিয়াটির সমীকরণটি হল – Fe₂O₃ + 2Al → 2Fe(গলিত) + Al₂O₃
থার্মিট পদ্ধতিটি ধাতু উৎপাদন এবং যন্ত্রপাতির মেরামতে ব্যবহৃত হয়, আতশবাজি ও বিস্ফোরক তৈরির জন্যও।
অথবা
CuSO₄ এর জলীয় দ্রবণে এক টুকরো ধাতব আয়রন যোগ করলে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে সেটির সমীকরণ লেখো। এই বিক্রিয়া থেকে ধাতুদের সক্রিয়তা শ্রেণিতে Cu ও Fe এর আপেক্ষিক অবস্থান সম্বন্ধে কী জানা যায়?
উত্তরঃ CuSO₄ এর জলীয় দ্রবণে এক টুকরো ধাতব আয়রন যোগ করলে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে সেটির সমীকরণ হল – Fe + CuSO₄ → FeSO₄ + Cu ↓
এই বিক্রিয়া থেকে ধাতুদের সক্রিয়তা শ্রেণিতে Cu ও Fe এর আপেক্ষিক অবস্থান হল – এই বিক্রিয়ায়, লোহা (Fe) তামা (Cu) – এর চেয়ে বেশি সক্রিয় ধাতু। তাই, লোহা (Fe) তামা (Cu) কে প্রতিস্থাপন করে।
3.9 নীচের যৌগগুলি থেকে একটি সমগণীয় শ্রেণির সদস্যদের বেছে নিয়ে তাদের আণবিক ওজনের ঊর্ধ্বক্রমে পরপর সাজাও : CH₃COOH, CH₃CH₂OH, CH₃OCH₃, CH₃OH, C₂H₄, C₂H₆, CH₃CH₂CH₂OH, C₃H₄
উত্তরঃ সমগনীয় শ্রেণীর সদস্য গুলি হল – CH₃CH₂OH, CH₃OH, CH₃CH₂CH₂OH
এই যৌগ গুলিকে ঊর্ধ্বক্রমে সাজালে হয় – CH₃OH, CH₃CH₂OH, CH₃CH₂CH₂OH
অথবা
কার্যকরী গ্রুপ বলতে কী বোঝায় একটি উদাহরণ সহ লেখো।
উত্তরঃ কার্যকরী গ্রুপ, যাকে কার্যকরী মূলকও বলা হয়, হলো জৈব যৌগের অণুতে উপস্থিত সক্রিয় পরমাণু বা পরমাণু গুচ্ছ যা ঐ যৌগের প্রকৃতি ও রাসায়নিক ধর্মকে নিয়ন্ত্রণ করে।
উদাহরণ – জৈব এসিডের কার্যকরী মূলক হলো কার্বক্সিল মূলক (-COOH)।
‘ঘ’ – বিভাগ
4. নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (বিকল্প প্রশ্নগুলি লক্ষ্যণীয়) :
4.1 অ্যাভোগ্যাড্রো সূত্রটি বিবৃত করো। কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতা ও চাপে বাস্তব গ্যাসগুলির মোলার আয়তন (V/n) প্রায় সমান এবং STP তে এর সীমান্ত মান 22.4 L mol⁻¹। এই পরীক্ষালব্ধ তথ্য থেকে কীভাবে অ্যাভোগ্যাড্রো সূত্রে উপনীত হওয়া যায়?
উত্তরঃ
অ্যাভোগ্যাড্রো সূত্রটি হল – একই চাপ ও উষ্ণতায় সম-আয়তনবিশিষ্ট সকল গ্যাসেই (মৌলিক বা যৌগিক) সমান সংখ্যক অণু বর্তমান।
কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতা ও চাপে যে-কোনো গ্যাসীয় পদার্থের (মৌলিক বা যৌগিক) 1 মোল অণুর আয়তনকে মোলার আয়তন বলে। মোলার আয়তনের মান গ্যাসীয় পদার্থের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে না। উষ্ণতা ও চাপ নির্দিষ্ট থাকলে বিভিন্ন বাস্তব গ্যাসের মোলার আয়তনের মান প্রায় সমান হয়। n মোল কোনো গ্যাসের আয়তন হলে মোলার V আয়তন হবে V/n। যেহেতু উষ্ণতা ও চাপের পরিবর্তনের ফলে গ্যাসীয় পদার্থের আয়তন পরিবর্তিত হয়, তাই উষ্ণতা ও চাপের পরিবর্তনের ফলে মোলার আয়তনও পরিবর্তিত হয়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, প্রমাণ উষ্ণতা ও চাপে অর্থাৎ STP-তে যে-কোনো গ্যাসীয় পদার্থের মোলার আয়তনের মান প্রায় সমান এবং এর সীমান্ত মান 22.4 L mol⁻¹ বা 22400 mL। এই আয়তনকে STP-তে গ্যাসের মোলার আয়তন বলে। সুতরাং, STP-তে 22.4 L আয়তনের সকল গ্যাসে অণুর সংখ্যা সমান। পরীক্ষালব্ধ এই ফল থেকে বিজ্ঞানী অ্যাভোগ্যাড্রো গ্যাসীয় পদার্থের আয়তন ও অণু সংক্রান্ত তাঁর বিখ্যাত মতবাদ জানান। এই মতবাদ অ্যাভোগ্যাড্রো প্রকল্প নামে পরিচিত।
4.2 A ও B পরস্পর বিক্রিয়া করে নিচের রাসায়নিক সমীকরণ অনুযায়ী C উৎপন্ন করে: 2A + B → 2C
A, B ও C যথাক্রমে তিনটি গ্যাসীয় পদার্থের সংকেত। A ও B এর বাষ্পঘনত্ব যথাক্রমে 32 ও 16। C এর বাষ্পঘনত্ব নির্ণয় করো।
উত্তর:
সমাধান:
দেওয়া আছে, A ও B এর বাষ্পঘনত্ব যথাক্রমে 32 ও 16।
∴ A ও B এর আণবিক ভর যথাক্রমে 64 এবং 32।
∵ কোনো পদার্থের আণবিক ভর তার বাষ্পঘনত্বের দ্বিগুণ।
ধরি, C গ্যাসীয় পদার্থের বাষ্পঘনত্ব x
∴ C এর আণবিক ভর 2x
যেহেতু, 2A + B = 2C
2 × 64 = 128 গ্রাম
A গ্যাসের সঙ্গে 32 গ্রাম B গ্যাস মিশ্রিত হয়ে 4x গ্রাম C গ্যাস উৎপন্ন হয়।
∴ 128 + 32 = 4x
বা, 4x = 160
বা, x = 160/4
বা, x = 40
∴ C গ্যাসের বাষ্পঘনত্ব 40
অথবা
নীচের রাসায়নিক সমীকরণ অনুযায়ী 2ZnS + 3O2 → 2ZnO + 2SO2 100 মোল ZnS থেকে (i) কত গ্রাম ZnO এবং (ii) কত মোল SO2 উৎপন্ন হবে? (Zn = 65.5, S = 32, O = 16)
উত্তরঃ
(i) 2ZnS + 3O2 → 2ZnO + 2SO2
∴ 2 মোল ZnS থেকে পাওয়া যায় 2 মোল ZnO
∴ 100 মোল ZnS থেকে পাওয়া যায় 100 মোল ZnO
1 মোল ZnO = (65.5 + 16) = 81.5 গ্রাম ZnO
∴ 100 মোল ZnO = (100 × 81.5) গ্রাম ZnO
= 8150 গ্রাম ZnO
∴ 100 মোল ZnO থেকে পাওয়া যায় 8150 গ্রাম ZnO
(ii) 2ZnS + 3O2 → 2ZnO + 2SO2
∴ 2 মোল ZnS থেকে পাওয়া যায় 2 মোল SO2
∴ 1 মোল ZnS থেকে পাওয়া যায় 1 মোল SO2
∴ 100 মোল ZnS থেকে পাওয়া যায় 100 মোল SO2
4.3 তাপ প্রয়োগে তরলের আয়তন, প্রসারণের একটি উদাহরণ দাও। একটি কঠিন পদার্থের ক্ষেত্রফল T1K উষ্ণতায় A1 sqm. ও T2K উষ্ণতায় A2 sqm। ওই কঠিন পদার্থটির ক্ষেত্র প্রসারণ গুণাঙ্কের গাণিতিক রূপটি একক সহ লেখো।
উত্তরঃ তাপ প্রয়োগে তরলের আয়তন, প্রসারণের একটি উদাহরণ হল – থার্মোমিটার।
একটি কঠিন পদার্থের ক্ষেত্রফল T1K উষ্ণতায় A1 sqm. ও T2K উষ্ণতায় A2 sqm।
ধরি, T2 > T1
∴ ক্ষেত্র প্রসারণ গুণাঙ্ক =
∴ β = \(\frac{A_2-A_1}{A_1\times\left(T_2-T_1\right)}\)
∴ ক্ষেত্র প্রসারণ গুণাঙ্কের একক = °C-1 (C.G.S) বা K-1 (SI)
অথবা
কঠিন পদার্থের মধ্যে দিয়ে তাপের পরিবহন কোন তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে লেখো।
উত্তরঃ কঠিন পদার্থের মধ্যে দিয়ে তাপের পরিবহন যে তিনটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে সেগুলি হল – পদার্থের বেধ, প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল, উপাদানের ওপর, যখন সময় অপরিবর্তিত থাকে।
- পদার্থের বেধ – কঠিন পদার্থের মধ্যে দিয়ে তাপ পরিবহনের পরিমাণ সেই পদার্থের বেধের সাথে ব্যাস্তানুপাতিকভাবে সম্পর্কিত।
- প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল – কঠিন পদার্থের মধ্যে দিয়ে তাপ পরিবহনের পরিমাণ সেই পদার্থের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলের সাথে সমানুপাতিকভাবে সম্পর্কিত।
- উপাদান – কোন পদার্থের মধ্যে দিয়ে কতটা তাপ প্রবাহিত হবে তা নির্ধারণ করে সেই পদার্থের উপাদানের ওপর। অর্থাৎ কোনো পদার্থের তাপ পরিবাহিতাঙ্ক ওই পদার্থের উপাদানের ওপর নির্ভরশীল।
4.4 আলোকের বিচ্ছুরণ কী? একটি কাচফলকের ওপর 45° কোণে আপতিত সাদা আলোর প্রতিসরণের পর কাচফলকের ভেতরে বিচ্ছুরণ হবে কী?
উত্তরঃ বহুবর্ণী বা কোনো যৌগিক আলোকরশ্মি কোনো প্রতিসারক মাধ্যমের মধ্য দিয়ে গেলে বিভিন্ন বর্ণে ভেঙে যায়। এই ঘটনাকে আলোর বিচ্ছুরণ বলা হয়।
একটি কাচফলকের ওপর 45° কোণে আপতিত সাদা আলোর প্রতিসরণের পর কাচফলকের ভেতরে বিচ্ছুরণ হবে।
4.5 একটি প্রিজমের প্রধান ছেদ একটি সমবাহু ত্রিভুজ। ওই প্রিজমের একটি প্রতিসারক তলে 30° কোণে আনত একটি রশ্মি যদি অন্য প্রতিসারক তল থেকে 45° কোণে নির্গত হয় তাহলে চ্যুতি কোণ কত?
উত্তরঃ
প্রিজমের প্রধান ছেদ একটি সমবাহু ত্রিভুজ।
∴ A = 60°
আপাতন কোণ (i1) = 30°, প্রতিসরণ কোণ (i2) = 45°
চ্যুতি কোণ = (i1 + i2) – A
= 30° + 45° – 60°
= 15°
অথবা
বায়ুমাধ্যমে কোনো আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য 6000Å হলে 1.5 প্রতিসরাঙ্ক বিশিষ্ট কোনো মাধ্যমে ওই আলোর বেগ ও তরঙ্গদৈর্ঘ্য কত হবে?
উত্তরঃ
বায়ু মাধ্যমের তরঙ্গদৈর্ঘ্য (l) = 6000Å
অপর একটি মাধ্যমের প্রতিসারঙ্ক (μ) = 1.5
ধরাযাক ওই মাধ্যমের তরঙ্গদৈর্ঘ্য = l1Å
সূত্রানুসারে,
\(\lambda_1=\frac\lambda\mu=\frac{6000}{1.5}=4000\\\)∴ λ1 = 4000Å
ধরা যাক, অপর মাধ্যমের গতিবেগ (v) মিটার/সেকেন্ড
∴ v = \(\frac c\mu\) [যেখানে c হল শূন্য মাধ্যমে আলোর বেগ]
বা, v = \(\frac{3\times10^8}{1.5}\) [যেহেতু c = 3 × \(10^8\) মিটার/সেকেন্ড]
বা, v = 2 × 108
∴ ওই মাধ্যমে আলোর বেগ 2 × 108 মিটার/সেকেন্ড।
4.6 সমান দৈর্ঘ্যের দুটি ধাতব পরিবাহী A ও B এর রোধাঙ্ক যথাক্রমে 1.6 × 10-8Ωm এবং 3.2 × 10-8Ωm। পরিবাহীদুটিকে আলাদাভাবে একই বিভব প্রভেদে যুক্ত করা হল। এদের প্রস্থচ্ছেদের অনুপাত কী হলে এদের প্রতিটির মধ্যে প্রবাহমাত্রা একই হবে?
উত্তরঃ
ধরি, পরিবাহী দুটির প্রতিটির বিভব প্রভেদ = V ভোল্ট
এবং প্রতিটির মধ্য দিয়ে প্রবাহমাত্রা = I অ্যাম্পিয়ার এবং প্রতিটির দৈর্ঘ্য = l মিটার।
প্রথম পরিবাহীর প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল = \(A_1\) বর্গ মিটার এবং রোধাঙ্ক \(ρ_1\) হলে এর রোধ \(R_1=\frac{\rho_1l\;}{A_1}\)
দ্বিতীয় পরিবাহীর প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল = \(A_2\) বর্গ মিটার এবং রোধাঙ্ক = \(ρ_2\) হলে এর রোধ \(R_2=\frac{\rho_2l\;}{A_2}\)
এখন প্রথম পরিবাহীর ক্ষেত্রে, V = IR1 এবং দ্বিতীয় পরিবাহীর ক্ষেত্রে V = IR2
∴ IR1 = IR2
⇒ R1 = R2
⇒ \(\frac{\rho_1l\;}{A_1}=\frac{\rho_2l\;}{A_2}\)
⇒ \(\frac{\rho_1\;}{A_1}=\frac{\rho_2\;}{A_2}\)
⇒ \(\frac{A_1\;}{A_2}=\frac{\rho_1\;}{\rho_2}\)
⇒ \(\frac{A_1\;}{A_2}=\frac{1.6\times10^{-8}\;}{3.2\times10^{-8}}\)
∴ A1 : A2 = 1 : 2
∴ প্রস্থচ্ছেদের অনুপাত 1 : 2 হলে প্রবাহমাত্রা সমান হবে।
অথবা
দুটি 10 ওহম রোধকে শ্রেণী সমবায়ে যুক্ত করে সমবায়টি একটি 20 ওহম রোধের সাথে সমান্তরাল সমবায়ে যোগ করা হল। অন্তিম সমবায়ের তুল্যরোধ নির্ণয় করো।
উত্তরঃ
এক্ষেত্রে R1 = 10ohm, R2 = 10ohm এবং R3 = 20ohm
R1 এবং R2 রোধ দুটি শ্রেণি সমবায় যুক্ত আছে।
∴ তুল্য রোধ (R4) = R1 + R2 = (10 + 10)ohm = 20ohm
R3 এবং R4 সমান্তরাল সমবায় যুক্ত আছে এবং এদের তুল্য রোধ R হলে
\(\frac1R=\frac1{R_3}+\frac1{R_4}\\\)বা, \(\frac1R=\frac1{20}+\frac1{20}\)
বা, \(\frac1R=\frac2{20}\)
বা, \(\frac1R=\frac1{10}\)
বা, R = 10
∴ অন্তিম সমবায়ের তুল্য রোধ 10 ohm
4.7 তড়িৎক্ষমতা বলতে কী বোঝায়? একটি বাল্বের রেটিং লেখা আছে 220V – 100W – এর অর্থ কী?
উত্তরঃ
একটি তড়িৎ যন্ত্রের সময়ের সাপেক্ষে বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যয়ের হারকে তড়িৎক্ষমতা বলা হয়। কোনো বৈদ্যুতিক বাতির রেটিং 220V-100W লেখা থাকলে বোঝা যায়, বাতিটির দু-প্রান্তের বিভবপ্রভেদ 220V হলে বাতিটি সবচেয়ে উজ্জ্বলভাবে জ্বলবে এবং বাতিটি প্রতি সেকেন্ডে 100j তড়িৎশক্তি ব্যয় করবে।
4.8 তেজস্ক্রিয় রশ্মি পরমাণুর কোন্ অংশ থেকে নির্গত হয়? তেজস্ক্রিয় রশ্মিগুলির মধ্যে কোনটির ভেদন ক্ষমতা ও কোনটির আয়নায়ন ক্ষমতা সর্বাধিক?
উত্তরঃ
তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয় পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে। তেজস্ক্রিয় রশ্মিগুলির মধ্যে ভেদন ক্ষমতা সর্বাধিক ক্ষমতা সর্বাধিক – গামা(γ) রশ্মির ও আয়নায়ন ক্ষমতা সর্বাধিক আলফা(α) রশ্মির।
4.9 হাইড্রোজেনের ধর্মের সঙ্গে গ্রুপ 1 মৌলগুলির একটি ধর্মের ও গ্রুপ 17 মৌলগুলির দুটি ধর্মের বৈসাদৃশ্যের উল্লেখ করো।
উত্তরঃ
হাইড্রোজেনের ধর্মের সঙ্গে গ্রুপ 1 মৌলগুলির একটি ধর্মের বৈসাদৃশ্য হল –
বিষয় | হাইড্রোজেনের ধর্ম | গ্রুপ 1 মৌল |
উষ্ণতা | সাধারণ উষ্ণতায় গ্যাসীয় মৌল। | সাধারণ উষ্ণতায় কঠিন মৌল। |
হাইড্রোজেনের ধর্মের সঙ্গে গ্রুপ 17 মৌলগুলির দুটি ধর্মের বৈসাদৃশ্য হল –
বিষয় | হাইড্রোজেন | গ্রুপ 17 মৌল |
তড়িৎ | তড়িৎ – ধনাত্বক মৌল । | তড়িৎ – ঋনাত্বক মৌল । |
ইলেকট্রনের উপস্থিতি | একমাত্র কক্ষে 1 টি করে ইলেকট্রন থাকে। | সর্ববহিস্থ কক্ষে 7 টি করে ইলেকট্রন থাকে। |
4.10 নির্দেশমতো সাজাও : (a) দীর্ঘ পর্যায় সারণির গ্রুপ 1 এর অন্তর্গত Na(11), K(19), Li(3), Rb(37) কে পরমাণু ব্যাসার্ধের নিম্নক্রম অনুযায়ী (b) দীর্ঘ পর্যায় সারণির গ্রুপ 16 এর অন্তর্গত S(16), O(8), Te(52), Se(34) কে তড়িৎঋণাত্মকতার ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (c) দীর্ঘ পর্যায় সারণির গ্রুপ 2 এর অন্তর্গত Ca(20), Be(4), Sr(38), Mg(12) কে বিজারণ ক্ষমতার নিম্নক্রম অনুযায়ী। (মৌলগুলির চিহ্নের পাশে প্রথম ব্র্যাকেটের মধ্যে মৌলগুলির পারমাণবিক সংখ্যা দেওয়া হয়েছে)
উত্তরঃ
(a) দীর্ঘ পর্যায় সারণির গ্রুপ 1 এর অন্তর্গত Na(11), K(19), Li(3), Rb(37) কে পরমাণু ব্যাসার্ধের নিম্নক্রম অনুযায়ী সাজালে পাই – Rb(37) > K(19) > Na(11) > Li(3)
(b) দীর্ঘ পর্যায় সারণির গ্রুপ 16 এর অন্তর্গত S(16), O(8), Te(52), Se(34) কে তড়িৎঋণাত্মকতার ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী সাজালে পাই – Te(52) < Se(34) < S(16) < O(8)
(c) দীর্ঘ পর্যায় সারণির গ্রুপ 2 এর অন্তর্গত Ca(20), Be(4), Sr(38), Mg(12) কে বিজারণ ক্ষমতার নিম্নক্রম অনুযায়ী সাজালে পাই – Be(4) < Mg(12) < Ca(20) < Sr(38)
4.11 অ্যামোনিয়াকে বায়ুর অক্সিজেন দ্বারা জারণ ঘটিয়ে কীভাবে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদন করা হয় অনুঘটকের নাম ও শর্ত উল্লেখ সহ লেখো। বিক্রিয়াটির সঠিক রাসায়নিক সমীকরণও লেখো।
উত্তরঃ
শুষ্ক ও বিশুদ্ধ অ্যামোনিয়া এবং ধূলিকণা মুক্ত বায়ুর মিশ্রণকে (1:7.5 আয়তন অনুপাতে) 5-7 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে ও 700-800°C উষ্ণতায় উত্তপ্ত প্ল্যাটিনাম বা প্ল্যাটিনাম-রেডিয়াম ধাতু সংকর নির্মিত তারজালির মধ্য দিয়ে অতি দ্রুত প্রবাহিত করা হয়। অনুঘটক ও গ্যাস মিশ্রণের সংস্পর্শ কাল 0.0014 সেকেন্ডের বেশি হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। এর ফলে অ্যামোনিয়া বায়ুর অক্সিজেন দ্বারা জারিত হয়ে নাইট্রিক অক্সাইড (NO) উৎপাদন করে। বিক্রিয়াটি উভমুখী ও তাপ উৎপাদক।
বিক্রিয়াটির সঠিক রাসায়নিক সমীকরণ হল –
\(\text{4NH}_3(g) + \text{5O}_2(g) \rightleftharpoons \text{4NO}(g) + \text{6H}_2\text{O} + 216\text{kcal}\)4.12 দুটি ভিন্ন জৈব যৌগ A ও B একই আণবিক সংকেত, C2H6O, সম্পন্ন। A ধাতব সোডিয়ামের সঙ্গে বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে কিন্তু B ধাতব সোডিয়ামের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না। A ও B যৌগদুটির গঠন সংকেত লেখো। A এর সঙ্গে ধাতব সোডিয়ামের বিক্রিয়ার সঠিক রাসায়নিক সমীকরণ লেখো।
উত্তরঃ
A ও B উভয় যৌগের একই আণবিক সংকেত C2H6O সম্পন্ন। সুতরাং A যৌগটি হবে ইথাইল অ্যালকোহল (CH3CH2OH) ও B যৌগটি হবে ডাইমিথাইল ইথার (CH3OCH3)। A ও B এর গঠন সংকেত হল –
A যৌগ অর্থাৎ ইথাইল অ্যালকোহল এর সঙ্গে ধাতব সোডিয়ামের বিক্রিয়ার সঠিক রাসায়নিক সমীকরণটি হবে –
\( \text{2CH}_3\text{CH}_2\text{OH} + \text{2Na} \rightarrow \text{2CH}_3\text{CH}_2\text{ONa} + \text{H}_2(g)\)ইথিলিনে হাইড্রোজেন সংযোজন বিক্রিয়ার শর্ত উল্লেখ করো। বিক্রিয়াটির সঠিক রাসায়নিক সমীকরণ লেখো। সিএনজি (CNG) র একটি ব্যবহার উল্লেখ করো।
উত্তরঃ
ইথিলিনের হাইড্রোজেন সংযোজন বিক্রিয়ার শর্ত –
সাধারণ চাপ ও উষ্ণতায় প্ল্যাটিনাম, প্যালাডিয়াম বা র্যানি নিকেল অনুঘটকের উপস্থিতিতে বা 200-300°C উষ্ণতায় নিকেল অনুঘটকের উপস্থিতিতে হাইড্রোজেন, ইথিলিনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন ইথেন উৎপন্ন হয়।
বিক্রিয়া –
এই শর্তগুলোতে, হাইড্রোজেন (H2) ইথিলিনের (C2H4) সাথে যুক্ত হয়ে সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন ইথেন (C2H6) উৎপন্ন করে।
সঠিক সমীকরণ –
\(\text{C}_2\text{H}_4 + \text{H}_2 \rightarrow \text{C}_2\text{H}_6 \)সিএনজির ব্যবহার –
উচ্চ তাপমাত্রা – CNG অন্যান্য জ্বালানির তুলনায় অনেক বেশি তাপ উৎপন্ন করে, যা এটিকে একটি উৎকৃষ্ট জ্বালানি করে তোলে।
কম দূষণ – যানবাহনে CNG ব্যবহার করলে পরিবেশ দূষণের পরিমাণ সবচেয়ে কম হয়।
পরিবহন ব্যবস্থায় ব্যবহার – CNG বাস, ট্যাক্সি, অটোরিকশা সহ বিভিন্ন গণপরিবহন ব্যবস্থায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এতক্ষণ আমাদের সাথে থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার পুরাতন প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করার জন্য তোমাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। আশা করি, তোমরা আজকের এই লেখাটি থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছো এবং আগামী পরীক্ষার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে। মনে রেখো, পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। তোমাদের জন্য রইলো অনেক শুভকামনা। আগামী দিনগুলো উজ্জ্বল হোক, সফলতায় ভরে উঠুক তোমাদের জীবন। হাসিখুশি থাকো, মন দিয়ে পড়াশোনা করো, আর সবচেয়ে বড় কথা, নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখো।