মাধ্যমিক ভূগোল – ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ – ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ – দীর্ঘধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

Souvick

আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “দীর্ঘধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

মাধ্যমিক ভূগোল - ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ - ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ - দীর্ঘধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
Contents Show

ভারতে স্বাভাবিক উদ্ভিদের বণ্টন জলবায়ুর দ্বারা কীভাবে প্রভাবিত হয় তা আলোচনা করো।

ভারতে স্বাভাবিক উদ্ভিদের বণ্টনে জলবায়ুর প্রভাব –

ভারতে স্বাভাবিক উদ্ভিদের বণ্টন উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, সূর্যকিরণ, আর্দ্রতা ইত্যাদি জলবায়ুগত উপাদানগুলি দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভারতের বিভিন্ন অংশে এই জলবায়ুগত উপাদানগুলির তারতম্যের ফলে পাঁচ প্রকার স্বাভাবিক উদ্ভিদ দেখা যায়। এই প্রকারভেদটি হল –

  1. ক্রান্তীয় বৃষ্টি-অরণ্য বা চিরসবুজ অরণ্য, 
  2. পর্ণমোচী অরণ্য,
  3. ক্রান্তীয় কাঁটাজাতীয় অরণ্য,
  4. পার্বত্য অরণ্য এবং
  5. মরু উদ্ভিদ।

নীচে ভারতের জলবায়ুর সঙ্গে স্বাভাবিক উদ্ভিদের বণ্টনের সম্পর্ক আলোচনা করা হল।

ক্রান্তীয় বৃষ্টি-অরণ্য বা চিরসবুজ অরণ্য –

ভারতে বার্ষিক 250 সেমি বা তার বেশি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে ক্রান্তীয় বৃষ্টি-অরণ্য দেখা যায়। কারণ –

  • এই অঞ্চলে সারাবছর ধরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং বার্ষিক উষ্ণতার গড় থাকে প্রায় 27°C। এরূপ উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় অত্যন্ত দীর্ঘ (30-35 মিটার) চিরসবুজ গাছের অরণ্য জন্মায়। ঘন অরণ্যে সূর্যালোক পাওয়ার আশায় গাছগুলি ঊর্বদিকে ক্রমশ বেড়ে ওঠে।
  • এই অরণ্যের গাছগুলি থেকে সারাবছর ধরে অল্প অল্প করে পাতা ঝরে পড়ে। তাই এই অরণ্যের গাছগুলি কখনই সম্পূর্ণরূপে পত্রশূন্য হয়ে পড়ে না ও অরণ্য চিরসবুজ দেখায়।
  • চিরসবুজ অরণ্যের গাছগুলিতে অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত বড়ো বড়ো পাতা থাকে। পাতার এই ছিদ্রপথ দিয়ে গাছে সঞ্চিত অতিরিক্ত জল বাষ্পমোচন প্রক্রিয়ায় নির্গত হয়।
  • অতিরিক্ত উষ্ণতা ও আর্দ্রতার কারণে চিরসবুজ অরণ্যের গাছগুলির কাঠ অত্যন্ত শক্ত ও ভারী হয়।
  • অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের জন্য অরণ্যের তলদেশের মাটি নরম থাকে এবং অধিমূল গাছগুলিকে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করে।

পর্ণমোচী অরণ্য –

ভারতে বার্ষিক 100-150 সেমি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে পর্ণমোচী বা পাতাঝরা অরণ্য দেখা যায়। কারণ –

  • এই অরণ্যাঞ্চলে বৃষ্টিপাত সম্পূর্ণরূপে ঋতুভিত্তিক। শীতকালে বৃষ্টিপাতের অভাবে গাছে সঞ্চিত জল বাষ্পমোচন প্রক্রিয়ায় পাতা দিয়ে যাতে বেরোতে না পারে সেই কারণে অধিকাংশ গাছই পত্রশূন্য হয়ে পড়ে। তাই, এই অরণ্যকে পর্ণমোচী বা পাতাঝরা অরণ্য বলে।
  • উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া বিরাজমান থাকায় এই বনভূমিতে শক্ত ও ভারী কাঠের গাছ জন্মায়।
  • ক্রান্তীয় বৃষ্টি-অরণ্যের তুলনায় এখানে উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত উভয়ই কম বলে পর্ণমোচী অরণ্য সামান্য হালকা ও গাছগুলির উচ্চতাও কম হয়।

ক্রান্তীয় কাঁটাজাতীয় অরণ্য –

ভারতে বার্ষিক 50 সেমি থেকে 75 সেমি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে ক্রান্তীয় কাঁটাজাতীয় অরণ্য দেখা যায়। কারণ –

  • বৃষ্টিপাতের স্বল্পতার জন্য এই অরণ্য খুবই হালকা। এ ছাড়া, বাষ্পমোচন রোধ করার জন্য এখানকার গাছে কাঁটাও জন্মায়।
  • স্বল্প বৃষ্টিপাত ও অধিক উষ্ণতার জন্য এখানে খর্বাকৃতি গাছ ও ঝোপ দেখা যায়।

পার্বত্য অরণ্য –

যেখানে স্বল্প উষ্ণতা পরিলক্ষিত হয় সেই সকল অঞ্চলে পার্বত্য অরণ্য দেখা যায়। কারণ – 

  • শীতল আবহাওয়ার জন্য পার্বত্য অরণ্যের গাছগুলির কাঠ নরম ও হালকা হয়।
  • গাছের পাতায় তুষার যাতে জমতে না পারে তার জন্য পাতাগুলি কোণবিশিষ্ট ও ছুঁচালো হয়। গাছগুলির আকৃতি অনেকটা মোচার মতো হয়।
  • গাছগুলিতে কাণ্ডের বহু ওপর থেকে ডালপালা নির্গত হয়।

মরু উদ্ভিদ –

বার্ষিক 50 সেমি-র কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে মরু উদ্ভিদ জন্মায়। কারণ –

  • বৃষ্টিপাতের স্বল্পতার জন্য মরু অঞ্চলে কাঁটাযুক্ত জেরোফাইট শ্রেণির উদ্ভিদ জন্মায়। পাতার বদলে কাঁটা থাকায় বাষ্পমোচন প্রক্রিয়ায় গাছগুলিতে সঞ্চিত জল নির্গত হতে পারে না।
  • প্রচণ্ড উষ্ণতার জন্য উদ্ভিদের কাণ্ড পুরু ছাল দিয়ে ঢাকা এবং মোমজাতীয় পদার্থে আবৃত থাকে।
  • মৃত্তিকার উপরিস্তরে জল না থাকায় গাছের শিকড় মাটির বহু গভীরে প্রবেশ করে।
  • মরু অঞ্চলের জলবায়ু উদ্ভিদ জন্মানোর অনুকূল নয়। তাই মরু অঞ্চলে উদ্ভিদ খুব একটা দেখা যায় না।

ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ করো।

ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ –

  1. ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য
  2. ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য
  3. ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদ
  4. পার্বত্য উদ্ভিদ
  5. ম্যানগ্রোভ অরণ্য

ক্রান্তীয় চিরহরিৎ অরণ্য –

  • আঞ্চলিক বণ্টন – আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিমঢাল, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্স প্রভৃতি অঞ্চলে।
  • বৈশিষ্ট্য
    • বাতাসে সারাবছর আর্দ্রতা বেশি থাকে বলে গাছের পাতা একসাথে ঝরে যায় না। তাই গাছগুলি চিরসবুজ হয়।
    • গাছগুলি খুব কাছাকাছি গড়ে ওঠে।
    • অরণ্যের ভূমি সারাবছর স্যাঁতসেঁতে থাকে।
    • গাছগুলি ঘন সন্নিবিষ্টভাবে থাকে বলে সূর্যের আলো অনেকসময় মাটি পর্যন্ত পৌঁছায় না।
    • গাছগুলি খুব লম্বা এবং ডালপালাযুক্ত হয়।
    • গাছের গুঁড়ি খুব শক্ত এবং পাতাগুলি বড়ো হয়।
  • প্রধান উদ্ভিদ – শিশু, গর্জন, তুন, পুন, গোলাপকাঠ, বিশপকাঠ, রবার, পাম প্রভৃতি।
  • ব্যবহার এই অরণ্যের কাঠ শিল্পে খুব বেশি ব্যবহৃত হয় না। তবে বাড়ি নির্মাণ, রেলের কামরা, স্লিপার ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয়।

ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য –

  • আঞ্চলিক বণ্টন – ভারতের সবচেয়ে বেশি স্থান জুড়ে রয়েছে এই জাতীয় অরণ্য। মোট অরণ্যের 27 ভাগ আর্দ্র পর্ণমোচী এবং 29 ভাগ রয়েছে শুষ্ক পর্ণমোচী অরণ্য। অসম সমভূমি, পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র সমভূমি ও মালভূমি অঞ্চল, ছোটোনাগপুর মালভূমি, ওডিশা, হিমালয়ের পাদদেশে, বিহার, পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বঢাল, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র, তামিলনাডু, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশের বিভিন্ন স্থানে এই বনভূমি রয়েছে।
  • বৈশিষ্ট্য –
    • বসন্তকালে গাছের পাতা সব একসাথে ঝরে পড়ে। তাই এই অরণ্যের নাম পর্ণমোচী অরণ্য কোনো কোনো অঞ্চলে একই প্রজাতির গাছ একসাথে অবস্থান করে।
    • উদ্ভিদগুলির ঘনত্ব কম।
    • গাছের কাঠ খুব শক্ত এবং মূল্যবান।
    • গাছগুলি বহুডালপালাযুক্ত, 
    • বৃক্ষগুলিতে বর্ষবলয় পরিষ্কার করে বোঝা যায়।
    • এই অরণ্যে কাঠ সংগ্রহ করা সবচেয়ে সুবিধাজনক।
  • প্রধান উদ্ভিদ – শাল, সেগুন, মহুয়া, শিরিষ, আম, জাম, কাঁঠাল, বট, পলাশ প্রভৃতি।
  • ব্যবহার – এই বনভূমির কাঠের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। বাড়িঘরের জানলা, দরজা, নৌকা, জাহাজ, সেতু নির্মাণ এবং জ্বালানি কাঠ হিসেবে এর ব্যবহার খুব বেশি।

ক্রান্তীয় মরু উদ্ভিদ –

  • আঞ্চলিক বণ্টন – রাজস্থান, কচ্ছ ও কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ, দাক্ষিণাত্য মালভূমির বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে মরু এবং মরুপ্রায় উদ্ভিদ জন্মায়।
  • বৈশিষ্ট্য –
    • মরু অরণ্য কখনোই ঘন বা নিবিড় হয় না। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে।
    • জলের অভাবে গাছের পাতাগুলি কাঁটায় রূপান্তরিত হয়।
    • গাছের শিকড় খুব লম্বা হয়।
    • উদ্ভিদের পাতা সরু এবং ছুঁচোলো হয়।
    • গাছগুলি ঝোপঝাড়যুক্ত হয়।
    • উদ্ভিদ দেহে জল ধরে রাখার জন্য কোনো কোনো গাছের কাণ্ড ও পাতায় শাঁস থাকে।
  • প্রধান উদ্ভিদ – ক্যাকটাস, ফণীমনসা, বাবলা, খেজুর, খয়ের প্রভৃতি।
  • ব্যবহার – এখানকার গাছ কেবল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 

পার্বত্য উদ্ভিদ –

  • আঞ্চলিক বণ্টন – ভারতের পার্বত্য উদ্ভিদ দুই ধরনের –
    • দক্ষিণ ও মধ্য ভারতের পার্বত্য উদ্ভিদ – পশ্চিমঘাট, পূর্বঘাট, নীলগিরি, বিন্ধ্য, সাতপুরা, মহাদেব, মহাকাল প্রভৃতি পর্বতে এই ধরনের উদ্ভিদ দেখা যায়।
    • হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের উদ্ভিদ – হিমালয়ের পূর্বদিকে পশ্চিমদিক অপেক্ষা বেশি অরণ্যের সমাবেশ রয়েছে।
  • বৈশিষ্ট্য –
    • 1000-1500 মিটার উচ্চতায় চিরহরিৎ বনভূমি রয়েছে। এর ওপরে রয়েছে আর্দ্র নাতিশীতোষ্ণ বনভূমি।
    • উদ্ভিদসমূহ – ম্যাগনোলিয়া, লরেন্স, এলম, সিঙ্কোনা প্রভৃতি।
      • পূর্ব হিমালয়ের 2000 মিটার পর্যন্ত উচ্চতায় বেশি উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের কারণে শাল, সেগুন, গর্জন প্রভৃতি চিরহরিৎ গাছ জন্মায়।
      • পশ্চিম হিমালয়ের 1000-2000 মিটার উচ্চতায় পাইন বনভূমি সৃষ্টি হয়েছে।
      • পূর্ব হিমালয়ে 1000-2500 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত অংশে মিশ্র অরণ্য এবং 4000 মিটার পর্যন্ত অংশে সরলবর্গীয় অরণ্য রয়েছে। এর ওপরে রয়েছে আল্পীয় তৃণভূমি।
  • প্রধান উদ্ভিদ – দেবদারু, ওক, ম্যাপল, বার্চ, ফার, স্প্রুস, উইলো প্রভৃতি।
  • ব্যবহার – বাড়িঘর নির্মাণ, ভেষজ ওষুধ তৈরি, জ্বালানি কাঠ এবং আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। সরলবর্গীয় গাছ থেকে কাগজের মণ্ড তৈরি হয়। এ ছাড়া দিয়াশলাই তৈরি, কাঠের বাড়ি নির্মাণ ও আসবাবপত্র তৈরিতে এই অরণ্যের কাঠ ব্যবহৃত হয়।

ম্যানগ্রোভ অরণ্য –

  • আঞ্চলিক বণ্টন – পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে গঙ্গানদীর বদ্বীপ, মহানদী, কৃষ্ণা, কাবেরীর বদ্বীপ অঞ্চলে ও আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের বহু অংশে ম্যানগ্রোভ অরণ্য রয়েছে।
  • বৈশিষ্ট্য –
    • গাছগুলির উচ্চতা কম।
    • এদের পাতা পুরু।
    • এরা শ্বাসমূলের সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায়।
    • গাছগুলিতে ঠেসমূল থাকে।
    • এদের পাতাগুলি মোমজাতীয় পদার্থের প্রলেপ দিয়ে ঢাকা থাকে।
  • উদ্ভিদসমূহ – সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া, হেঁতাল, হোগলা ও অন্যান্য।
  • ব্যবহার – সুন্দরী গাছ থেকে ভালো নৌকা হয়। গোলপাতা, হোগলা প্রভৃতি উদ্ভিদের পাতা ঘর ছাইতে কাজে লাগে। সুন্দরবনের অরণ্য থেকে প্রচুর, মধু, মোম এবং জ্বালানিকাঠ সংগ্রহ করা হয়।
ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদের অঞ্চলভিত্তিক বণ্টন

ভারতে বনভূমি সংরক্ষণ প্রয়োজনীয় কেন?

অথবা, ভারতে বনভূমি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কেন?

ভারতে বনভূমি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা –

পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ স্থানে বনভূমি থাকা প্রয়োজন। বনভূমি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাগুলি হল –

  • পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা – বর্তমানে পরিবেশদূষণের মাত্রা দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বনভূমি সংরক্ষণ ও নতুন বনভূমি সৃষ্টি করলে পরিবেশ দূষণের মাত্রা হ্রাস পাবে ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকবে।
  • জলবায়ুর পরিবর্তন রোধ করা – বনভূমি বায়ুর আর্দ্রতাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে যা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নির্ধারণে ও নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বর্তমানে বায়ুতে দূষিত পদার্থ বৃদ্ধি পাওয়াতে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। এই ভয়াবহ ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে হলে বনভূমি সংরক্ষণ ভীষণ প্রয়োজন।
  • খরা ও ভূমিক্ষয় রোধ – বনভূমির অভাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে যা পরোক্ষভাবে খরার সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া, বনভূমি না থাকায় মৃত্তিকার আস্তরণ আলগা হয়ে মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। খরা ও মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করতে বনভূমি সংরক্ষণ প্রয়োজন।
  • মরুভূমির প্রসার রোধ করা – বনভূমির উপস্থিতি মৃত্তিকা ক্ষয় বন্ধ করে মরুভূমির প্রসার রোধ করতে সাহায্য করে।
  • অরণ্যজাত সম্পদের জোগান অব্যাহত রাখা – বনভূমি থেকে আমরা নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিস, যেমন – কাঠ ও অন্যান্য উপজাত দ্রব্য (যেমন – মধু, ধূপ, ভেষজ উদ্ভিদ প্রভৃতি) পেয়ে থাকি। এইসব সম্পদের জোগান বজায় রাখার জন্য বনভূমি সংরক্ষণ করা উচিত।

অরণ্য ধ্বংসের কারণগুলি আলোচনা করো।

অরণ্য ধ্বংসের কারণ –

ভারতে অরণ্য ধ্বংসের কারণগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় –

  1. প্রাকৃতিক কারণ এবং
  2. মানুষের ক্রিয়াকলাপ।

প্রাকৃতিক কারণ –

যেসব প্রাকৃতিক কারণে ভারতে অরণ্যভূমি ধ্বংস হয়, সেগুলি হল –

  • দাবানল – গাছের শুকনো পাতায় ঘর্ষণ লেগে বা বজ্রপাতের মাধ্যমে অরণ্যে বিধ্বংসী আগুন লাগে, যাকে দাবানল বলে। ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলের অনেক অরণ্য এইভাবে ধবংস হয়েছে।
  • ঝড়ঝঞ্ঝা – টর্নেডো বা সাইক্লোনের মতো বিধ্বংসী ঝড়ের প্রকোপে অরণ্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
  • ভূমিধস – ভূমিধস অরণ্য বিনাশের অন্যতম কারণ। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের বহু অরণ্য ভূমিধসের জন্য ধ্বংস হয়ে গেছে।
  • আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত – আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলেও বহু অরণ্য ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আন্দামানের উত্তরে ব্যারেন দ্বীপে অগ্ন্যুৎপাতের কারণে অরণ্যের যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
  • কীটপতঙ্গের আক্রমণ – কীটপতঙ্গের ও পঙ্গপালের আক্রমণে উত্তর-পশ্চিম ভারতের বহু অরণ্য যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মানুষের ক্রিয়াকলাপের ফলে অরণ্যের বিনাশ –

  • নির্বিচারে গাছ কাটা – কাঠের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে নির্বিচারে গাছ কাটা হয় এবং এর ফলে অরণ্য ধ্বংস হয়।
  • বনভূমিকে কৃষিভূমিতে রূপান্তর – ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বিপুল পরিমাণ খাদ্য ও অন্যান্য ফসলের চাহিদা মেটাতে অরণ্যভূমি ধ্বংস করে কৃষিভূমিতে পরিণত করার ফলে অরণ্যের পরিমাণ ক্রমশই কমে আসছে।
  • জনবসতির বিস্তার – দ্রুত বর্ধমান জনসংখ্যার প্রয়োজনীয় বাসস্থান ও রাস্তাঘাটের চাহিদা পূরণের জন্য প্রতি বছর ব্যাপকভাবে অরণ্য বিনষ্ট করা হয়।
  • স্থানান্তর কৃষি – উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির পার্বত্য অঞ্চলে স্থানান্তর কৃষির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অরণ্য ধ্বংস হয়।
  • জ্বালানির চাহিদা – গৃহস্থালির জ্বালানির চাহিদা মেটানোর জন্য অরণ্য ধ্বংস করা হয়।
  • পশুচারণ ক্ষেত্রের সম্প্রসারণ – গুজরাত, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র প্রভৃতি রাজ্যের বহু জায়গায় অরণ্যভূমি পরিষ্কার করে নতুন নতুন পশুচারণ ক্ষেত্র গড়ে তোলা হয়েছে এবং বহু সংরক্ষিত অরণ্যেও পশুচারণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এসবের ফলেও অরণ্যের বিনাশ ঘটে চলেছে।

ভারতে অরণ্যকে কী কী ভাবে ব্যবহার করা হয়?

অরণ্য একটি জাতীয় সম্পদ। একে নানাভাবে ব্যবহার করা যায় –

প্রত্যক্ষ ব্যবহার –

  • জ্বালানি কাঠ – ভারতের সংগৃহীত কাঠের অধিকাংশই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সুতরাং ভারতে রান্না এবং তাপভিত্তিক নানা প্রকল্পে অরণ্যের প্রত্যক্ষ ব্যবহার রয়েছে।
  • চেরাই কাঠের ব্যবহার – অরণ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের শক্ত কাঠ পাওয়া যায়। সেই কাঠ চেরাই করে আসবাব, বাড়ি, নৌকা, জাহাজ, রেলের স্লিপার, কামরা, বাস, ট্রাক প্রভৃতি তৈরি এবং খেলাধুলো ও অন্যান্য কাজে চেরাই কাঠ ব্যবহার করা হয়।
  • বনজ সম্পদের ব্যবহার – ভারতে প্রাপ্ত সরলবর্গীয় গাছ থেকে রজন, তারপিন তেল পাওয়া যায়। অসমের ধুনো গাছ থেকে ধুনো, অগুর গাছের রস থেকে অপুর পাওয়া যায়। অরণ্য থেকে দারুচিনি, মশলা, এলাচ, নানা ধরনের ফল, তেজপাতা ইত্যাদি পাওয়া যায়। ভারতের প্রায় 35 লক্ষ মানুষ অরণ্যের ওপর নির্ভরশীল এবং সরকারি আয়ের প্রায় 2 শতাংশ অরণ্য থেকে আসে।

পরোক্ষ ব্যবহার –

অরণ্য ভূমিক্ষয় রোধ করে, জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ, বায়ুতে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড -এর ভারসাম্য রক্ষা, মরুভূমির প্রসার রোধ করতে সাহায্য করে। দূষণমুক্ত পরিবেশ গঠন, পর্যটন শিল্পের প্রসার প্রভৃতি নানা কর্মে অরণ্যকে পরোক্ষভাবে ব্যবহার করা হয়।

ভারতের দুই প্রকার স্বাভাবিক উদ্ভিদ অঞ্চলের বণ্টন ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

ভারতে স্বাভাবিক উদ্ভিদের বণ্টনে জলবায়ুর প্রভাব –

ভারতে স্বাভাবিক উদ্ভিদের বণ্টন উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, সূর্যকিরণ, আর্দ্রতা ইত্যাদি জলবায়ুগত উপাদানগুলি দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভারতের বিভিন্ন অংশে এই জলবায়ুগত উপাদানগুলির তারতম্যের ফলে পাঁচ প্রকার স্বাভাবিক উদ্ভিদ দেখা যায়। এই প্রকারভেদটি হল –

  1. ক্রান্তীয় বৃষ্টি-অরণ্য বা চিরসবুজ অরণ্য, 
  2. পর্ণমোচী অরণ্য,
  3. ক্রান্তীয় কাঁটাজাতীয় অরণ্য,
  4. পার্বত্য অরণ্য এবং
  5. মরু উদ্ভিদ।

নীচে ভারতের দুই প্রকার স্বাভাবিক উদ্ভিদ অঞ্চলের বণ্টন ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হল –

ক্রান্তীয় বৃষ্টি-অরণ্য বা চিরসবুজ অরণ্য –

ভারতে বার্ষিক 250 সেমি বা তার বেশি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে ক্রান্তীয় বৃষ্টি-অরণ্য দেখা যায়। কারণ –

  • এই অঞ্চলে সারাবছর ধরে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং বার্ষিক উষ্ণতার গড় থাকে প্রায় 27°C। এরূপ উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় অত্যন্ত দীর্ঘ (30-35 মিটার) চিরসবুজ গাছের অরণ্য জন্মায়। ঘন অরণ্যে সূর্যালোক পাওয়ার আশায় গাছগুলি ঊর্বদিকে ক্রমশ বেড়ে ওঠে।
  • এই অরণ্যের গাছগুলি থেকে সারাবছর ধরে অল্প অল্প করে পাতা ঝরে পড়ে। তাই এই অরণ্যের গাছগুলি কখনই সম্পূর্ণরূপে পত্রশূন্য হয়ে পড়ে না ও অরণ্য চিরসবুজ দেখায়।
  • চিরসবুজ অরণ্যের গাছগুলিতে অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত বড়ো বড়ো পাতা থাকে। পাতার এই ছিদ্রপথ দিয়ে গাছে সঞ্চিত অতিরিক্ত জল বাষ্পমোচন প্রক্রিয়ায় নির্গত হয়।
  • অতিরিক্ত উষ্ণতা ও আর্দ্রতার কারণে চিরসবুজ অরণ্যের গাছগুলির কাঠ অত্যন্ত শক্ত ও ভারী হয়।
  • অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের জন্য অরণ্যের তলদেশের মাটি নরম থাকে এবং অধিমূল গাছগুলিকে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করে।

পর্ণমোচী অরণ্য –

ভারতে বার্ষিক 100-150 সেমি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে পর্ণমোচী বা পাতাঝরা অরণ্য দেখা যায়। কারণ –

  • এই অরণ্যাঞ্চলে বৃষ্টিপাত সম্পূর্ণরূপে ঋতুভিত্তিক। শীতকালে বৃষ্টিপাতের অভাবে গাছে সঞ্চিত জল বাষ্পমোচন প্রক্রিয়ায় পাতা দিয়ে যাতে বেরোতে না পারে সেই কারণে অধিকাংশ গাছই পত্রশূন্য হয়ে পড়ে। তাই, এই অরণ্যকে পর্ণমোচী বা পাতাঝরা অরণ্য বলে।
  • উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া বিরাজমান থাকায় এই বনভূমিতে শক্ত ও ভারী কাঠের গাছ জন্মায়।
  • ক্রান্তীয় বৃষ্টি-অরণ্যের তুলনায় এখানে উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত উভয়ই কম বলে পর্ণমোচী অরণ্য সামান্য হালকা ও গাছগুলির উচ্চতাও কম হয়।

ভারতে কীভাবে অরণ্য সংরক্ষণ করা যায়?

অথবা, অরণ্য সংরক্ষণের পদ্ধতিগুলি আলোচনা করো।

ভারতে অরণ্য সংরক্ষণের পদ্ধতি –

2013 সালে ভারতে বনাবৃত ভূমির পরিমাণ ছিল 21.23 শতাংশ। এ ছাড়া মোট উদ্ভিদ আচ্ছাদনের পরিমাণ ছিল 24.01 শতাংশ (সূত্র – Indian State of Forest Report ’13)। অথচ সমগ্র ভূমির আয়তনের 33 শতাংশ বনভূমি থাকা বাঞ্ছনীয়। তাই নানা পদ্ধতিতে বর্তমানে অরণ্য সংরক্ষণ করা যায় –

  • অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃক্ষচ্ছেদন রোধ – অপ্রয়োজনীয় বৃক্ষচ্ছেদন রোধ করতে হবে। বনভূমি ও যে-কোনো স্থান থেকে গাছ কাটা নিষিদ্ধ করতে হবে। অরণ্যের বাস্তুতন্ত্রের কথা মাথায় রেখেই বৃক্ষচ্ছেদন করতে হবে।
  • অপরিণত বৃক্ষচ্ছেদন হ্রাস – গাছ কাটার খুব প্রয়োজন হলে কেবলমাত্র পরিণত বৃক্ষই যেন ছেদন করা হয়। অপরিণত এবং চারাগাছের প্রতি সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে এবং তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।
  • জ্বালানি কাঠের পরিবর্তে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি – গ্রাম এবং শহরে কোথাও যাতে কাঠকে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার না করা হয় তার দিকে লক্ষ রাখতে হবে। কাঠের পরিবর্তে কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস, ঘুটে, জৈবগ্যাস, তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস, সৌর উনুন, বিদ্যুৎচালিত উনুন ইত্যাদি বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। এতে অরণ্য এবং গাছ সুরক্ষিত থাকবে।
  • দাবানল প্রতিরোধ – বনভূমিতে আগুন লাগলে তাকে দাবানল বলে। নানা কারণে ঘন বনভূমিতে দাবানল তৈরি হয়। দাবানল যাতে না লাগে তার দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে এবং দাবানল লাগলে যাতে দ্রুত তা প্রতিরোধ করা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ – অরণ্যকে রক্ষা করার জন্য পশুচারণ ক্ষেত্র নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। অরণ্যভূমিতে পশুর দল চারাগাছ খেয়ে ফেলে এবং গাছকে নষ্ট করে দেয়। তাই পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
  • বনসৃজন ও পুনর্বনসৃজন – যেসব স্থান উদ্ভিদহীন সেখানে নতুন করে বনসৃজন করা যেতে পারে এবং বনভূমিতে যেখানে পশুচারণের ফলে বা মানুষের নিজের প্রয়োজনে অরণ্যচ্ছেদনের ফলে গাছের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছে সেখানে পুনর্বনসৃজন ঘটিয়ে অরণ্য পুনরুদ্ধার করা যেতে পারে।
  • মানুষের অংশগ্রহণ – বর্তমানে উদ্ভিদের স্বল্পতার জন্য মানুষই দায়ী। তাই পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় সকলের সহযোগিতায় সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বনসংরক্ষণ কর্মসূচিকে এগিয়ে নিতে হবে। সেজন্য যৌথ বন পরিচালনা (joint-forest management) ব্যবস্থাপনা একটি পুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে।
  • অসুস্থ বৃক্ষের রোগ প্রতিরোধ – অনেকগাছ কীটপতঙ্গের আক্রমণে মারা যায়। নানাপ্রকার রোগব্যাধি, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে অরণ্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই গাছকে সুস্থ-সবল রাখতে প্রয়োজনে কীটনাশক, জৈব ওষুধ ব্যবহার করতে হবে, বৃক্ষ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে প্রতিনিয়ত নজরদারি চালাতে হবে।
  • অরণ্য সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে কর্মসূচি গ্রহণ – বর্তমানে অরণ্য সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। 5 জুন দিনটিকে ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। এবং ওই দিন নিয়মানুয়ী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ ছাড়া বছরের বিভিন্ন সময়ও অরণ্য সংরক্ষণের বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

প্লাবন খাল ও নিত্যবহ খালের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

প্লাবন খাল ও নিত্যবহ খালের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল – 

ভিত্তিপ্লাবন খালনিত্যবহ খাল
সংজ্ঞাকোনোরূপ বাঁধ বা জলাধার নির্মাণ না করে সেচের জন্য যখন নদী থেকে সরাসরি খাল কাটা হয়, তখন তাকে প্লাবন খাল বলে।নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে জলাধার নির্মাণ করে সেখান থেকে যখন খাল কাটা হয়, তখন তাকে নিত্যবহ খাল বলে।
বৈশিষ্ট্যনদীতে জলের পরিমাণ বাড়লে তবেই খালে জল আসে।সারাবছর জলাধারে জল থাকে বলে খালেও বারো মাস জল আসে।
প্রকৃতিএগুলি অস্থায়ী প্রকৃতির খাল।এগুলি স্থায়ী প্রকৃতির খাল।
গুরুত্বএই প্রকার খালের মাধ্যমে কেবলমাত্র বর্ষাকালে বা প্লাবনের সময় জল পাওয়া যায়। শুষ্ক ঋতুতে এই খালে কোনো জল থাকে না। তাই কৃষিকাজে এর গুরুত্ব কম।এই ধরনের খাল থেকে কৃষিকাজের জন্য সারাবছর জল পাওয়া যায় বলে এর গুরুত্ব বেশি।
অঞ্চলদক্ষিণ ভারতের নদীগুলি বর্ষার জলে পুষ্ট বলে প্লাবন খাল দক্ষিণ ভারতে বেশি দেখা যায়।তুষার গলা জলে পুষ্ট বলে উত্তর ভারতের নদীগুলি নিত্যবহ এবং নদীগুলির ওপর বাঁধ দিয়ে অনেক জলাধারও নির্মাণ করা হয়েছে। এজন্য উত্তর ভারতে নিত্যবহ খাল বেশি।
উদাহরণমহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা ও কাবেরী নদীর বদ্বীপে অনেক প্লাবন খাল আছে।উত্তরপ্রদেশের উচ্চগঙ্গা ও নিম্নগঙ্গা খাল, সারদা খাল, পাঞ্জাবের পশ্চিম যমুনা খাল, শিরহিন্দ খাল প্রভৃতি নিত্যবহ খাল।

জল সংরক্ষণের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি সম্পর্কে লেখো। 

জল সংরক্ষণের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হল –

  1. বৃষ্টির জল সংরক্ষণ এবং
  2. জলবিভাজিকা উন্নয়ন।

বৃষ্টির জল সংরক্ষণ –

বৃষ্টির জল জলের স্বাভাবিক জোগান বজায় রাখতে আমাদের বিশেষ সাহায্য করে। তাই বৃষ্টির জল বিভিন্ন প্রকার আধারে ব্যবহারযোগ্যভাবে মজুত করা যায়। এজন্য –

  • শহরাঞ্চলে বাড়ির ছাদে পতিত বৃষ্টির জল পাইপের মাধ্যমে পাশের জলাধারে সঞ্চয় করে রাখা যায় বা পাত কুয়াতে পাঠিয়ে ভূগর্ভস্থ জলভাণ্ডারকে রিচার্য করা যায়। আবার 
  • গ্রামাঞ্চলে মাঠের মধ্যে দিয়ে নালি পথে প্রবাহিত বৃষ্টির জলধারাকে কোনো জলাধারের সঙ্গে সংযুক্ত করে জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যায়। এইভাবে বৃষ্টির জল ব্যবহার তথা সংরক্ষণের পদ্ধতিকে রেনওয়াটার হারভেস্টিং নামে অভিহিত করা হয়।

জলবিভাজিকা উন্নয়ন –

জলবিভাজিকা উন্নয়ন বলতে বোঝায় নদীর ধারণ অববাহিকার সার্বিক ও বিজ্ঞানসম্মত উন্নয়ন। এর পদ্ধতিগুলি হল –

  • ভূমিক্ষয় নিবারণ ও বৃষ্টিপাতের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য জলবিভাজিকা অঞ্চলে অরণ্য গড়ে তুলতে হবে।
  • বর্ষার প্রারম্ভে সমগ্র অঞ্চলের মাটি কর্ষণের মাধ্যমে মাটিকে ঝুরঝুরে করে রাখতে হবে, তাহলে মাটি বেশি পরিমাণে বৃষ্টির জল শোষণ করতে পারবে।
  • জলবিভাজিকার ঢালু ভূমিতে ধাপ তৈরি করে রাখলে জলপ্রবাহের গতিবেগ ও ক্ষয়ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং ধাপগুলিতে জল সঞ্চিত হতে পারে।
  • বড়ো বড়ো বাঁধের পরিবর্তে ছোটো ছোটো বাঁধ নির্মাণ করলে জল সংরক্ষণে সুবিধা হয়।

ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব সম্পর্কে লেখো।

ভারতের ওপর দিয়ে গ্রীষ্মকালে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালে শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। ভারতের জলবায়ু প্রায় সম্পূর্ণরূপেই এই দুই মৌসুমি বায়ুর প্রভাবাধীন। যেমন-

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাব –

  • ভারত মহাসাগর তথা বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের ওপর দিয়ে ছুটে আসা আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে বর্ষাকালের আবির্ভাব ঘটে।
  • ভারতে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের শতকরা প্রায় 70 ভাগ এই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবেই হয়ে থাকে।

উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাব –

  • ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি মাসে মধ্য এশিয়ার বরফাবৃত শীতল স্থলভাগের ওপর সৃষ্ট উচ্চচাপ থেকে শীতল ও শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু দক্ষিণের উষ্ণ ভারত মহাসাগরের দিকে ছুটে যায়। এই বায়ুর প্রভাবে তখন সমগ্র দেশেরই তাপমাত্রা যথেষ্ট হ্রাস পায়। ভারতের বার্ষিক জলবায়ুর এই সময়টিকে তাই শীতকাল বলা হয়।
  • উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু শুষ্ক বলে তখন দেশের অধিকাংশ স্থানে বৃষ্টিপাত হয় না, শান্ত আবহাওয়া বিরাজ করে। তবে এই বায়ু বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় কিছুটা জলীয়বাষ্প গ্রহণ করে বলে তামিলনাড়ুর উপকূলে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়।

ঋতুচক্র সৃষ্টিতে প্রভাব –

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাবর্তনের সময় অনুসরণ করে ভারতের বার্ষিক জলবায়ুকে চারটি ঋতুতে ভাগ করা হয়। যথা –

  1. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন-পূর্ব সময়কাল বা গ্রীষ্মকাল।
  2. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনকাল বা বর্ষাকাল।
  3. দক্ষিণ মৌসুমি বায়ুর প্রত্যাবর্তনকাল বা শরৎকাল এবং
  4. উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর সময়কাল বা শীতকাল।

আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের স্বাভাবিক উদ্ভিদ” বিভাগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ “দীর্ঘধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক (দশম শ্রেণী) পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Categories -
Please Share This Article

Related Posts

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – মানচিত্র চিহ্নিতকরণ

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল - উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র - সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল – উপগ্রহ চিত্র ও ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026

Madhyamik Life Science Suggestion 2026

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026 – রচনাধর্মী প্রশ্ন

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026 – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

Madhyamik Physical Science Suggestion 2026 – সত্য মিথ্যা