মাধ্যমিক ইতিহাস – ইতিহাসের ধারণা – দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর

Sourav Das

ইতিহাসের ধারণা সাধারণত অতীতের ঘটনা, মানুষের ক্রিয়াকলাপ এবং সময়ের সাথে সাথে সামাজিক বিকাশের অধ্যয়ন এবং ব্যাখ্যাকে বোঝায়। এটি অতীতের একটি আখ্যান গঠনের জন্য প্রমাণের বিভিন্ন উত্স যেমন লিখিত রেকর্ড, নিদর্শন এবং মৌখিক ঐতিহ্যের পরীক্ষা জড়িত।

ইতিহাসবিদরা রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সহ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিহাসের অধ্যয়নের সাথে যোগাযোগ করে। তারা ঐতিহাসিক ঘটনাগুলির কারণ এবং প্রভাবগুলি বোঝার চেষ্টা করে এবং বিশ্লেষণ করে যে এই ঘটনাগুলি আজকে আমরা যে বিশ্বে বাস করি তাকে কীভাবে আকার দিয়েছে।

ইতিহাসের ধারণাটি ঐতিহাসিক স্মৃতির ধারণার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে আবদ্ধ এবং কীভাবে ব্যক্তি ও সমাজ তাদের অতীতকে স্মরণ করে এবং ব্যাখ্যা করে। ইতিহাসের অধ্যয়নের মাধ্যমে, আমরা মানুষের অভিজ্ঞতার জটিলতা এবং ইতিহাস জুড়ে চ্যালেঞ্জ ও সুযোগের প্রতি মানুষ যেভাবে সাড়া দিয়েছে তার অন্তর্দৃষ্টি পেতে পারি।

সামগ্রিকভাবে, ইতিহাসের ধারণাটি বর্তমানকে বোঝার জন্য এবং ভবিষ্যৎকে রূপ দেওয়ার জন্য অপরিহার্য, কারণ এটি আমাদের নিদর্শন এবং প্রবণতাগুলি সনাক্ত করতে, অতীতের ভুল থেকে শিখতে এবং ভবিষ্যতের জন্য নতুন সম্ভাবনার কল্পনা করতে সাহায্য করে।

মাধ্যমিক ইতিহাস – ইতিহাসের ধারণা – দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর (2)

খেলার ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

ভূমিকা – প্রাচীন গ্রিসে অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মাধ্যমে খেলাধূলার যে ঐতিহ্য শুরু হয়েছিল আজ তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, টেনিস, গল্ফ, পোলো প্রভৃতি খেলা। বিশ শতকের শেষ দুই দশক থেকে এই সমস্ত খেলা সম্পর্ক যে ইতিহাসচর্চা শুরু হয়েছে তা খেলার ইতিহাস নামে পরিচিত।

খেলার ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য খেলার ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্যগুলি হল —

উদ্ভব ও বিবর্তন বিভিন্ন ধর্মী খেলার উদ্ভব ও বিবর্তন কীভাবে হয়েছিল এবং এগুলির সঙ্গে যে দেশগুলি ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা জড়িয়ে ছিলেন তাঁদের চিহ্নিত করা।

সরঞ্জাম বিভিন্ন খেলার বিভিন্ন রকম সরঞ্জাম। এই সমস্ত সরঞ্জাম শিল্পবিপ্লবের পূর্বে কেমন ছিল এবং শিল্পবিপ্লবের পরে কেমন হল তা চিহ্নিত করাই এই ইতিহাসের একটি
বিশিষ্ট দিক।

ঔপনিবেশিক শাসনে সংহতি ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি তাদের উপনিবেশে ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, টেনিস খেলা চালু করে ঔপনিবেশিক শাসনে সংহতি আনতে চেয়েছিল। এপ্রসঙ্গে সাম্রাজ্যবাদী দেশ ইংল্যান্ড কর্তৃক উপনিবেশগুলিতে সংহতি প্রতিষ্ঠার জন্য ক্রিকেট খেলাকে ব্যবহার করার কথা বলা যায়।

খেলার ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

জাতীয়তাবাদের উন্মেষ খেলাকে কেন্দ্র করে দেশীয় জনগণের মধ্যে কিভাবে বিদেশী শাসনের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে তা ব্যাখ্যা করা এই ইতিহাসের একটি দিক।

উপসংহার খেলার ইতিহাসচর্চা কেবল খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। খেলার সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক,সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংস্কৃতি কিভাবে জড়িয়ে পড়ে তা অনুসন্ধান করাও এই ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য।

খাদ্যাভাসের ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।


ভূমিকা আধুনিক ইতিহাসচর্চার বৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চা।

খাদ্যাভাসের ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

রুচি ও সামর্থ্য মানুষের রুচি ও সামর্থ্য, আবহাওয়া ও জলবায়ু, ধর্মীয় রীতি ও বিধিনিষেধ কিভাবে মানুষের খাদ্যগ্রহণ ও খাদ্যাভাস গড়ে তোলে তা চিহ্নিত করা।

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণ এশিয়া-আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতিষ্ঠা হয়। ফলে শাসক ও শাসিত উভয়েরই খাদ্যাভ্যাসে কীভাবে পরিবর্তন এসেছিল তা চিহ্নিত করা।

খাদ্যগ্রহণ ও বর্জন স্বাধীন মানুষেরা কেন ও কিভাবে খাদ্য গ্রহণ-বর্জন করে তা তুলে ধরা এই ইতিহাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আবার ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনস্ত শাসিত ও শাসকদের খাদ্যগ্রহণ ও বর্জনকে তুলে ধরা এই ইতিহাসের আলোচ্য বিষয়।

খাদ্যাভ্যাস ও জাতীয়তাবাদ উপনিবেশের জনগণ দেশজ খাদ্যাভ্যাস সংস্কৃতিকে ব্যবহার করে বিদেশী শাসনের বিরুদ্ধে কিভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে তা ব্যাখ্যা করাও হল এই ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য

উপসংহার খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চার মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী খাবার সংক্রান্ত ইতিহাসও ফুটে ওঠে। পাশাপাশি হাজার হাজার বছরের খাবার প্রক্রিয়াকরণ ও হারিয়ে যাওয়া খাবারের রন্ধন প্রণালীও তুলে ধরা হয়েছে। খাদ্যাভ্যাস সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে কিভাবে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে তাও উপলব্ধি করা সম্ভব হয়েছে।

পোশাক পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চার মূল বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

ভূমিকা আধুনিক ইতিহাসচর্চার বৈচিত্র্যের একটি দিক হল পোশাক পরিচ্ছদের ইতিহাস। সভ্যতার বিকাশ ও বিবর্তনের সঙ্গে এই ইতিহাস খুব ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত।

পোশাক পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য পোশাক পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্যগুলি হল —

উদ্ভব ও বিবর্তন পোশাক-পরিচ্ছদের উদ্ভব ও তার বিবর্তনকে চিহ্নিত করে মানব সভ্যতার বিকাশে তার গুরুত্বকে তুলে ধরা। পোশাক কিভাবে কর্তৃত্ব ও আভিজাত্যের মাপকাঠি হয়ে উঠেছিল তা ব্যাখ্যা করা হল।

পোশাকের ভিন্নতা এই ইতিহাসচর্চায় শিল্প-বিপ্লবের পূর্বের এবং শিল্পবিপ্লব ও শিল্পবিপ্লবের উত্তর পর্বের পোশাকের ধরণ ও বিন্যাসকে চিহ্নিত করা হয়। সমাজের অভিজাত ও সাধারণ মানুষের পোশাকের ভিন্নতার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাও এই ইতিহাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

স্বাস্থ্যবিধি অষ্টাদশ ও উনিশ শতকে ইউরোপে বিশেষত ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সে নারী পোশাকের আঁটো সাটো ধরণ ও বাহুল্যতা ক্রমশই নারীদের শারীরিক অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই স্বাস্থ্যসম্মত পোশাকের উদ্ভব ও তার বিবর্তনকে চিহ্নিত করাও এই ইতিহাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

রাজনৈতিক তাৎপর্য আধুনিক বিশ্বে ঔপনিবেশিক শাসনপর্বে পাশ্চাত্য পোশাক কিভাবে উপনিবেশগুলিতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তার কারণ চিহ্নিত করার পাশাপাশি দেশজ পোশাক সংস্কৃতি কিভাবে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সংহতি দান করে তা খুঁজে দেখাও এই ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য।

উপসংহার এভাবে দেখা যায় পোষাক ইতিহাসের সঙ্গে সমাজ-সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক ইতিহাসও যুক্ত ছিল। তাই পোষাক ইতিহাসচর্চার ইতিহাস সামগ্রিক ইতিহাসে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

শিল্পচর্চার ইতিহাসের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করো।

ভূমিকা আধুনিক ইতিহাসচর্চার বৈচিত্র্যের এক বিশিষ্ট দিক হল শিল্পচর্চার ইতিহাস এবং এর অন্তর্গত হল সংগীত নৃত্য, নাটক ও চলচ্চিত্র।

ইতিহাসের শিল্পচর্চার বিভিন্ন দিক –

ইউরোপে রেনেসাঁস-এর সময়কাল থেকেই চলচ্চিত্র ব্যতীত অন্যান্য শিল্পচর্চার ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল ; এর বিভিন্ন দিকগুলি হল —

আকার বা ধরণ চিহ্নিতকরণ শিল্পচর্চার অন্তর্গত বিষয়গুলির উদ্ভব, ধরণ ও রীতির বিবর্তনকে চিহ্নিত করে এই বিষয়গুলির ইতিহাস নির্মাণ করা।

নান্দনিকতা সংগীত নৃত্য, নাটক ও চলচ্চিত্র – এর সঙ্গে যুক্ত নান্দনিকতার বিষয়টি শ্রোতা ও দর্শকদের চিত্ত বিনোদন করে। এভাবে শিল্পচর্চা কীভাবে সামাজিক ও মানসিক সংহতি গড়ে তুলেছিল তা চিহ্নিত করাই হল এই ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য।
নবান্ন নাটকের একটি দৃশ্য

প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব শিল্পচর্চাকে কেন্দ্র করে সংগীত কেন্দ্র, নৃত্যশালা, নাট্যকেন্দ্র বা রঙ্গমঞ্চ এবং সিনেমা হল গড়ে উঠেছে। এইরূপ প্রতিষ্ঠান ও কেন্দ্রগুলির পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করা ও তাঁদের অবদানের মূল্যায়ণ করাও এই ইতিহাসের এক বিশিষ্ট দিক।

রাজনৈতিক গুরত্ব সংগীত, নৃত্য, নাটক ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে একটি দেশের সাংস্কৃতিক সত্তা প্রকাশিত হয়। এই সত্তা কিভাবে একটি দেশের রাজনৈতিক সংহতি বা স্বাধীনতা সংগ্রামকে উজ্জীবিত করে তোলে তা চিহ্নিত করাও শিল্পচর্চার ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য।

উপসংহার শিল্পচর্চার সঙ্গে যুক্ত শিল্পী ও সংগঠনের অভিজ্ঞতা ও শিল্পচর্চা সম্পর্কিত পরীক্ষা নিরীক্ষার মূল্যায়ণ করার মাধ্যমে কলাকুশলীদের ইতিহাসও গড়ে ওঠে।

যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করো।

ভূমিকা আধুনিক ইতিহাসচর্চার বৈচিত্র্যের একটি দিক হল যানবাহন যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস। ১৯৬০-১৯৭০-এর দশকে এই ধরনের ইতিহাসচর্চার সূচনা হয়।

যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য – যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসের বৈশিষ্ট্যগুলি হল —

যানবাহন যোগাযোগ ব্যাবস্থা

পরিধি চাকার আবিষ্কারের মাধ্যমে সূচনা হয়েছিল যানবাহন-যোগাযোগের ব্যবস্থার ইতিহাস। যানবাহন মূলত তিন ধরনের যথা — জল, স্থল ও আকাশপথের যানবাহন। অন্যদিকে যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হল টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, চিঠিপত্র, রেডিয়ো, টিভি, ফ্যাক্স, মোবাইল ফোন প্রভৃতি।

উদ্ভব ও উন্নতি এই ইতিহাসচর্চায় যানবাহনের উদ্ভব ও তার বিবর্তন এবং যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ধরনকে চিহ্নিত করা হয়। এর পাশাপাশি যানবাহনের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সমসাময়িক সমাজের পাথর্ক্য ও অগ্রগতি চিহ্নিত করাও এই ইতিহাসচর্চার অন্যতম উদ্দেশ্য।

প্রাযুক্তিক উন্নতি যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মূলে থাকে প্রাযুক্তিক উন্নতি। তাই যানবাহনের প্রাযুক্তিক উন্নতি ও তার অগ্রগতিকে খুঁজে বের করাও এই ইতিহাসচর্চার বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

প্রভাব যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভাবকে চিহ্নিত করা এই ইতিহাসের অন্যতম দিক। বাণিজ্য, যাতায়াত, অভিপ্রয়াণ, সাম্রাজ্যবাদের প্রসার, নগরায়ণ ও পরিবেশ প্রভৃতি ক্ষেত্রে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভাবকে চিহ্নিত করাও এই ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য।

উপসংহার যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা আমাদের জীবনকে যেমন সহজ করে তুলেছে, যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাস একটি রাষ্ট্রে সংহতি ও জাতীয়তাবাদও যেমন সৃষ্টি করে তেমনি তা আন্তর্জাতিকতাবাদের বিকাশেও সাহায্য করে।

দৃশ্য শিল্পের ইতিহাস ও তার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করো।

ভূমিকা আধুনিক ইতিহাসচর্চার বৈচিত্র্যের একটি দিক হল দৃশ্য শিল্পের ইতিহাস এবং এর অন্তর্গত হল ছবি আঁকা ও ফটোগ্রাফি।

দৃশ্য শিল্পের ইতিহাস – মানুষ যখন তার ভাবাবেগ বা ভাবধারা প্রকাশের জন্য রং ও তুলির মাধ্যমে কোনো দৃশ্য ধরণ নির্মাণ করে তখন তা ছবি আঁকা বলে পরিগণিত হয়। অন্যদিকে ক্যামেরাম্যানের দ্বারা যখন কোনো বাস্তব জিনিসের ছবি তোলা হয় এবং অবিকল প্রতিকৃতি পাওয়া যায় তখন তা ফটোগ্রাফি নামে পরিচিত। খ্রিস্টপূর্ব ৮০০০ অব্দ থেকেই গুহাচিত্র অঙ্কনের মাধ্যমে ছবি আঁকার সূচনা হয় এবং ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাণিজ্যিকভাবে ফাটোগ্রাফির সূচনা হয়।

দৃশ্য শিল্পের ইতিহাস ও তার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করো।

দৃশ্য শিল্পের বৈশিষ্ট্য – দৃশ্য শিল্পের ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করলে দেখা যায় যে –

উদ্ভব ও বিবর্তন ছবি আঁকা ও ফটোগ্রাফির উদ্ভব এবং তার যুগ নির্ধারণ ও শ্রেণিবিভক্তিকরণের মাধ্যমে দৃশ্য শিল্পের ইতিহাস গড়ে ওঠে। এর মাধ্যমে মানুষ ও প্রকৃতি বা পরিবেশের সম্পর্ককে চিহ্নিত করা যায়।

সংস্কৃতিতে প্রভাব দৃশ্যশিল্প মানবসভ্যতা ও সংস্কৃতিতে কিভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল তা চিহ্নিত করা এই ইতিহাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

পৃষ্ঠপোষকতা দৃশ্য শিল্পের ইতিহাসে শিল্পী বা ক্যামেরাম্যানদের অভিজ্ঞতা এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতাকারীদের ইতিহাস অন্বেষণ করাও ওই ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য।

স্থাপত্য ইতিহাস বলতে কী বোঝায়?

ইতিহাস নির্মাণ স্থাপত্যগুলির মাধ্যমে অতীত ও ইতিহাস যুক্ত থাকে। তাই স্থাপত্যগুলির প্রতিষ্ঠাকাল থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত সময়ের ইতিহাস রচনায় এগুলির ভূমিকা তুলে ধরা হয়।

স্থাপত্যরীতি সব স্থাপত্য একইরকম দেখতে হয় না। প্রতিটির নির্মাণরীতিও পৃথক। তাই স্থাপত্যরীতির অন্বেষণ, বিবর্তন ও তার ধারাবাহিকতা তুলে ধরাও এই ইতিহাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এ প্রসঙ্গে ইউরোপের স্থাপত্যে ডোরীয় রীতি, গথিক রীতি, রোমান ও ভিক্টোরীয় রীতির কথা বলা যায়।

জাতীয় গর্ব বিভিন্ন দেশের সেরা স্থাপত্যগুলি সেই দেশের জাতীয় গর্ব এবং মর্যাদাবৃদ্ধিকারী বিষয়। তাই কিভাবে তা দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করে বা জাতীয় আন্দোলনে উৎসাহের সঞ্চার করে তা তুলে ধরাও এই ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য

উপসংহার এভাবে দেখা যায় যে, স্থাপত্য ইতিহাসচর্চার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতির ইতিহাসও জড়িয়ে থাকে। তাই স্থাপত্য ইতিহাস সামগ্রিক ইতিহাসের একটি বিশেষ অংশ।

স্থানীয়-ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করো।


ভূমিকা আধুনিক ইতিহাসচর্চার বিশেষ দিক হল স্থানীয় ইতিহাস। তবে স্থানীয় ইতিহাস বলতে বোঝায় ভৌগোলিকভাবে স্থানীয় প্রেক্ষিতে স্থানীয় সম্প্রদায় বা ব্যক্তি বা বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ইতিহাস।

স্থানীয়-ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন দিক – স্থানীয় ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন দিককে এভাবে চিহ্নিত করা যায়, –

স্থানীয় বিষয় এই ধরনের ইতিহাসচর্চায় দেশ বা ব্যাপক এলাকার পরিবর্তে ক্ষুদ্র এলাকাকে চিহ্নিত করে সেই স্থানের ইতিহাস অন্বেষণ করা হয়। এভাবে স্থানীয় ইতিহাসসমূহের সমন্বয়ে দেশের ইতিহাস গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয

যৌগিক পরস্পরা স্থানীয় জনশ্রুতি, মিথ বা অতিকথা, মৌখিক পরম্পরাকে ভিত্তি করে স্থানীয় ইতিহাস রচনা করা হয়। কারণ অনেকক্ষেত্রেই স্থানীয় ইতিহাস অলিখিত থাকে এবং এজন্যই মৌখিক পরম্পরার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

স্থানীয় ইতিহাসের চর্চা উনিশ শতকের ইংল্যান্ডে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর বা শহরের ইতিহাস রচনার মাধ্যমে স্থানীয় ইতিহাস রচনা শুরু হয়। পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াতেও এই ধরনের ইতিহাস রচনা শুরু হয়।

সমাজের ক্ষুদ্র ইতিহাস স্থানীয় ইতিহাস রচনাকালে স্থানীয় সমাজের ক্ষুদ্র সম্প্রদায় বা ব্যক্তি বা পরিবারের ইতিহাসকে তুলে ধরে এলাকার গুরুত্ব চিহ্নিত করা হয়। তাই এই ইতিহাস হল বৃহত্তর সমাজের ক্ষুদ্র ইতিহাস।

নারী ইতিহাসের চর্চার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

ভূমিকা – আধুনিক ইতিহাসচর্চার বৈচিত্র্যের একটি আলোড়নকারী ইতিহাসচর্চা হল নারী – ইতিহাসচর্চা। প্রচলিত ইতিহাসে নারীর ভূমিকা বা অধিকারের যথাযথ মূল্যায়নের প্রয়োজনে নারীর গুরুত্বকে তুলে ধরে শুরু হওয়া ইতিহাসচর্চাই হল নারী ইতিহাসচর্চা।

নারী ইতিহাসের চর্চার বৈশিষ্ট্যসমূহ –

নারী ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

পুরুষকেন্দ্রিক ইতিহাস সংশোধন – সভ্যতার ইতিহাসে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের ভূমিকাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পুরুষ ঐতিহাসিকরা যুদ্ধ, প্রশাসন, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতিতে পুরুষদের ভূমিকাকে বা অবদানকে বেশি করে চিহ্নিত করেছেন। নারীরা উপেক্ষিত হয়েছে। তাই উপেক্ষিত নারীদের ইতিহাস উদ্ধারের জন্য ইতিহাসকে নতুনভাবে বিশ্লেষণ করাই হল এই ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য।

অধিকার ও সমতা প্রতিষ্ঠা – এই ইতিহাসচর্চার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল — নারীর অধিকার এবং নারী-পুরুষ সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বপ্রথম লেখালেখি করেন ইংল্যান্ডের মেরী ওলস্টনস্ক্রাফট।

নারীর অংশগ্রহণ – নারী ইতিহাসের বিশিষ্ট দিক হল বিভিন্ন সামাজিক প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ, নারী পোশাক, কর্মসংস্থান, ধর্মকর্ম, গার্হস্থ্য ও শিল্পোৎপাদন কর্মের ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণকে চিহ্নিত করা।

সভ্যতার অগ্রগতির মাপকাঠি – কোনো দেশের সভ্যতা ও সমাজে নারীর অবস্থান ও মর্যাদার উপর সেই সভ্যতা কতটা আধুনিক তা প্রমাণ করে। তাই নারী ইতিহাস হয়ে উঠেছে সভ্যতার অগ্রগতির মাপকাঠি।

উপসংহার – উপরোক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় যে, নারী ইতিহাসচর্চা হল এক ধরনের সংশোধনবাদী ইতিহাসচর্চা। তবে এই ইতিহাসচর্চার ফলে ইতিহাস বিকৃতির সম্ভাবনা ও রয়েছে।

মাধ্যমিক ইতিহাসের পাঠ্যক্রম হল একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষামূলক হাতিয়ার যা শিক্ষার্থীদের অতীতের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে এবং বর্তমান বিশ্বকে বোঝার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং জ্ঞান অর্জন করতে সাহায্য করতে পারে।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer