মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা – জনন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Rahul

জীবনের প্রবাহমানতা হল জীববিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই অধ্যায়ে জীবের বংশগতি, বৈচিত্র এবং অভিযোজন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরের জীবন বিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য এই অধ্যায়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের দ্বিতীয় অধ্যায় “জীবনের প্রবহমানতা” অধ্যায়ের ‘জনন‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

জনন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
জনন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
Contents Show

জনন কী?

যে জৈবনিক পদ্ধতিতে জীব নিজ আকৃতি ও প্রকৃতিবিশিষ্ট এক বা একাধিক অপত্য জীব সৃষ্টির মাধ্যমে নিজের প্রজাতির অস্তিত্ব পৃথিবীতে বজায় রাখে, তাকে জনন বলে।

জননের সাধারণ বৈশিষ্ট্য লেখো।

জননের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

  1. মাইটোসিস, মিয়োসিস অথবা উভয় পদ্ধতিতেই কোশ বিভাজনের মাধ্যমে জননের বিভিন্ন পর্যায় সম্পন্ন হয়। জননকালে জননকোশ তথা গ্যামেট সৃষ্টি থেকে শুরু করে ভ্রুণের উৎপত্তি তথা অপত্য জীব সৃষ্টি, প্রতিক্ষেত্রেই কোশ বিভাজন ঘটে।
  2. জননের আণবিক ভিত্তি হল DNA -এর প্রতিলিপিকরণ বা রেপ্লিকেশন।
  3. জননকোশ বা গ্যামেট অথবা রেণু থেকে অপত্য জীব সৃষ্টি হয়।

জনন কত প্রকার ও কী কী?

জনন প্রধানত দুই-প্রকার, যথা – অযৌন জনন এবং যৌন জনন। এ ছাড়া অঙ্গজ বংশবিস্তার বা অঙ্গজ জনন ও অপুংজনি বা পার্থেনোজেনেসিস -এর সাহায্যেও জীবেরা জনন সম্পন্ন করে।

অযৌন জনন কাকে বলে?

যে জনন প্রক্রিয়ায় গ্যামেট উৎপাদন ছাড়াই শুধুমাত্র দেহকোশ বিভাজিত হয়ে অথবা রেণু উৎপাদনের মাধ্যমে জনিতৃ জীবের মতো অপত্য জীব সৃষ্টি হয়, তাকে অযৌন জনন বলে। যেমন – ঈস্ট -এর কোরকোদগম পদ্ধতি।

যৌন জনন কাকে বলে?

জনন কোশাধারে বা জনন অঙ্গে সৃষ্ট দুটি ভিন্ন জননকোশ, অর্থাৎ পুংগ্যামেট ও স্ত্রীগ্যামেটের মিলনের মাধ্যমে সংঘটিত উন্নততম জনন প্রক্রিয়াকে যৌন জনন বলে। যেমন – মানুষ, খরগোশ, হরিণ প্রভৃতি উন্নত প্রাণীর জনন।

অযৌন ও যৌন জননের এককদ্বয়ের নাম লেখো।

অযৌন জননের একক রেণু (উদ্ভিদ), যৌন জননের একক গ্যামেট (শুক্রাণু ও ডিম্বাণু)।

রেণু ও গ্যামেটের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

রেণু ও গ্যামেটের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়রেণুগ্যামেট
জনন পদ্ধতিঅযৌন জননের একক।যৌন জননের একক।
বিকাশ পদ্ধতিস্বয়ংসম্পূর্ণভাবে নিজে নিজেই নতুন জীব সৃষ্টি করে।অপর গ্যামেটের সঙ্গে নিষেকের পর নতুন জীব সৃষ্টি হয়।
অ্যালিল সংখ্যাহ্যাপ্লয়েড (n) বা ডিপ্লয়েড (2n) হতে পারে।গ্যামেট সর্বদা হ্যাপ্লয়েড (n) হয়।

যৌন জননের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

যৌন জননের দুটি বৈশিষ্ট্য হল –

  1. যৌন জননে দুইপ্রকার গ্যামেট, যথা – শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর মিলনের ফলে অপত্যের সৃষ্টি হয়।
  2. এইপ্রকার জননের মাধ্যমে ভেদ বা প্রকরণ সৃষ্টি হয়, যা নতুন প্রজাতি সৃষ্টিতে তথা জীবের বিবর্তনে সাহায্য করে।

সিনগ্যামি কী?

যে যৌন জননে জনন কোশাধার (gametangium) -এর বাইরে পুং ও স্ত্রীগ্যামেটের মিলন সম্পূর্ণভাবে এবং স্থায়ীরূপে সংঘটিত হয়, তাকে সিনগ্যামি বলে। যেমন – Chlamydomonas (ক্ল্যামাইডোমোনাস) -এ এই ধরনের জনন দেখা যায়।

আইসোগ্যামি কাকে বলে?

যে যৌন জননে পুংগ্যামেট ও স্ত্রীগ্যামেট অঙ্গসংস্থানগতভাবে ও শারীরবৃত্তীয়ভাবে একই রকমের হয়, তাদের মিলনকে আইসোগ্যামি বলে। যেমন – Chlamydomonas (ক্ল্যামাইডোমোনাস) নামক শৈবাল, Monocystis (মনোসিস্টিস) নামক প্রোটোজোয়া ইত্যাদিতে প্রধানত আইসোগ্যামি দেখা যায়।

আইসোগ্যামি-
আইসোগ্যামি-

অ্যানাইসোগ্যামি কাকে বলে?

যে যৌন জননে পুংগ্যামেট ও স্ত্রীগ্যামেটের, আকার, আয়তন ও আকৃতি সমান হয় না এবং গ্যামেটের মিলন জনন অঙ্গের বাইরে ঘটে, তাকে অ্যানাইসোগ্যামি বলে। যেমন – Chlamydomonas (ক্ল্যামাইডোমোনাস) নামক শৈবালে এই পদ্ধতি দেখা যায়।

অ্যানাইসোগ্যামি-
অ্যানাইসোগ্যামি-

উগ্যামি কাকে বলে?

যে যৌন জননে পুংগ্যামেটটি ক্ষুদ্র ও সচল প্রকৃতির হয়, এবং স্ত্রীগ্যামেটটি বড়ো ও নিশ্চল প্রকৃতির হয়, তাদের মিলনকে উগ্যামি বলে। যেমন – Oedogonium (ইডোগোনিয়াম) ও Volvox (ভলভক্স) নামক শৈবাল এবং উন্নতশ্রেণির সমস্ত উদ্ভিদ ও প্রাণী এইপ্রকার জনন সম্পন্ন করে।

উগ্যামি-
উগ্যামি-

যৌন জননের সুবিধাগুলি লেখো।

যৌন জননের সুবিধাগুলি হল –

  1. যৌন জননের মাধ্যমে পিতা-মাতার বহু গুণাবলী সন্তান-সন্ততির মধ্যে সঞ্চারিত হয়, ফলে তারা সহজেই নতুন পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়।
  2. যৌন জননের মাধ্যমে যে নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য জীবের উদ্ভব ঘটে, তাদের অভিব্যক্তি ঘটাও সম্ভব হয়।
  3. যৌন জননের মাধ্যমে পিতা-মাতার বৈশিষ্ট্যাবলী সন্তান-সন্ততির মধ্যে সঞ্চারিত হওয়ার ফলে পুরুষানুক্রমে বংশের ধারা অক্ষুণ্ণ থাকে।
  4. যৌন জননের ফলে যেসব জীব বংশবিস্তার করে তাদের কিছুসংখ্যক প্রতিনিধি যে কোনো রকম প্রতিকূল পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিয়ে পুনরায় বংশবিস্তার করে।

যৌন জননের অসুবিধাগুলি লেখো।

যৌন জননের অসুবিধাগুলি হল –

  1. এটি ধীর গতির প্রক্রিয়া তাই যৌন জননের মাধ্যমে বংশবিস্তারের জন্য বেশিমাত্রায় সময় ব্যয়িত হয়।
  2. এই পদ্ধতিতে দুটি ভিন্ন লিঙ্গের জীবের (পুরুষ ও স্ত্রী) প্রয়োজন হয়, যা সর্বদা পাওয়া নাও যেতে পারে।
  3. এই পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল ও অসংখ্য গ্যামেটের অপচয় ঘটে, ফলে সাফল্য লাভের সম্ভাবনাও কম থাকে।

অযৌন ও যৌন জননের মধ্যে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে পার্থক্য নিরূপণ করো। (1) জনিতৃ জীবের সংখ্যা (2) অপত্য জনুর প্রকৃতি।

বিষয়অযৌন জননযৌন জনন
জনিতৃ জীবের সংখ্যাএকটি।একটি বা দুটি।
অপত্য জনুর প্রকৃতিকোনো প্রকার প্রকরণ ঘটে না বলে তা জনিতৃ জনুর অনুরূপ হয়।প্রকরণ সৃষ্টি হয় বলে অপত্য জনুর মধ্যে যথেষ্ট বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়।

উদাহরণসহ অযৌন জননের দুটি পদ্ধতির নাম লেখো।

বিভাজন –

অধিকাংশ এককোশী জীবে মাইটোসিস বা অ্যামাইটোসিস কোশ বিভাজন পদ্ধতির দ্বারা দুই (দ্বিবিভাজন) বা দুইয়ের অধিক (বহুবিভাজন) নতুন অপত্য সৃষ্টি করার পদ্ধতিকে বিভাজন বলে। নীচে বিভাজন পদ্ধতির কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল।

  • অ্যামিবা –
    • দ্বিবিভাজন – অনুকূল পরিবেশে Amoeba (অ্যামিবার) নিউক্লিয়াসটি অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিতে দ্বিবিভাজিত হয়। এর সাইটোপ্লাজম বিভাজনরত নিউক্লিয়াসের লম্বতলে (90°) খাঁজ (furrow) সৃষ্টি করে বিভাজিত হয় ও দুটি অপত্য সৃষ্টি করে।
    • বহুবিভাজন – প্রতিকূল পরিবেশে Amoeba (অ্যামিবার) ক্ষণপদ বিনষ্ট হয় ও সিস্ট প্রাচীর (cyst wall) দ্বারা আবদ্ধ হয়। সিস্টের মধ্যে নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের বহুবিভাজন দ্বারা অসংখ্য ক্ষুদ্র স্পোর তৈরি হয়। এইপ্রকার বহুবিভাজনকে স্পোরুলেশন বলে। পরিবেশ অনুকূল হলে সিস্ট প্রাচীর বিদীর্ণ করে স্পোরগুলি মুক্ত হয় ও নতুন Amoeba (অ্যামিবা) সৃষ্টি করে।

কোরকোদগম –

যে বিশেষ ধরনের অযৌন জনন পদ্ধতিতে জনিতৃ জীবদেহের কোনো প্রবর্ধিত দেহাংশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিচ্যুত হয়ে অপত্য জীবদেহ সৃষ্টি করে তাকে কোরকোদগম বা বাডিং বলে। নীচে কোরকোদগম পদ্ধতির কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল।

  • ঈস্ট –
    • ঈস্ট মাতৃকোশের অসমান বিভাজনের ফলে ক্ষুদ্র প্রবর্ধকের মতো কোরক সৃষ্টি হয়, যার মধ্যে জনিতৃ নিউক্লিয়াস বিন্যস্ত থাকে। পরবর্তীকালে মাতৃদেহ থেকে কোরকটি বিচ্ছিন্ন হয় ও নতুন অপত্য ঈস্ট তৈরি করে। বিশেষ ক্ষেত্রে, টরুলা দশায় ঈস্টের কোরকটি টরুলেশন পদ্ধতিতে বার বার বিভাজিত হয়ে ছদ্ম মাইসেলিয়াম গঠন করে।

বিভাজন (fission) কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

বিভাজন –

অধিকাংশ এককোশী জীবে মাইটোসিস বা অ্যামাইটোসিস কোশ বিভাজন পদ্ধতির দ্বারা দুই (দ্বিবিভাজন) বা দুইয়ের অধিক (বহুবিভাজন) নতুন অপত্য সৃষ্টি করার পদ্ধতিকে বিভাজন বলে। নীচে বিভাজন পদ্ধতির কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল।

বিভাজনের উদাহরণ –

প্লাসমোডিয়াম – এক্ষেত্রে বহুবিভাজন দুটি দশায় ঘটে – সাইজন্ট এবং স্পোরন্ট। সাইজন্ট এবং স্পোরন্ট দশায় স্ত্রী Anopheles (অ্যানোফিলিস) মশার পাকস্থলীতে যথাক্রমে সাইজোগনি ও স্পোরোগনি নামক বহুবিভাজন দ্বারা অসংখ্য অপত্য Plasmodium (প্লাসমোডিয়াম) তৈরি হয়। সাইজোগনি এবং স্পোরোগনি দ্বারা সৃষ্ট অপত্য Plasmodium (প্লাসমোডিয়াম) -দের যথাক্রমে মেরোজয়েট ও স্পোরোজয়েট বলে।

বহুবিভাজন কাকে বলে?

এককোশী জীবকোশ যে অযৌন জনন পদ্ধতিতে বিভক্ত হয়ে বহুসংখ্যক অপত্য সৃষ্টি করে, তাকে বহুবিভাজন বলে। যেমন – Plasmodium (প্লাসমোডিয়াম), সাইজোগনি ও স্পেরোগনি দ্বারা অসংখ্য অপত্য Plasmodium (প্লাসমোডিয়াম) তৈরি করে।

বাডিং বা কোরকোদগম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

কোরকোদগম –

যে বিশেষ ধরনের অযৌন জনন পদ্ধতিতে জনিতৃ জীবদেহের কোনো প্রবর্ধিত দেহাংশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিচ্যুত হয়ে অপত্য জীবদেহ সৃষ্টি করে তাকে কোরকোদগম বা বাডিং বলে। নীচে কোরকোদগম পদ্ধতির কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল।

কোরকোদগমের উদাহরণ –

ঈস্ট মাতৃকোশের অসমান বিভাজনের ফলে ক্ষুদ্র প্রবর্ধকের মতো কোরক সৃষ্টি হয়, যার মধ্যে জনিতৃ নিউক্লিয়াস বিন্যস্ত থাকে। পরবর্তীকালে মাতৃদেহ থেকে কোরকটি বিচ্ছিন্ন হয় ও নতুন অপত্য ঈস্ট তৈরি করে। বিশেষ ক্ষেত্রে, টরুলা দশায় ঈস্টের কোরকটি টরুলেশন পদ্ধতিতে বার বার বিভাজিত হয়ে ছদ্ম মাইসেলিয়াম গঠন করে।

টরুলা দশা ও টবুলেশন কী?

ঈস্টের কোরকোদগম নামক অযৌন জনন পদ্ধতিতে নতুন উৎপন্ন কোরকটি মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বেই পুনরায় কোরক তৈরি করা শুরু করে এবং ছদ্ম মাইসেলিয়াম গঠন করে। এই অবস্থাটি টরুলা নামক জীবের মতো হওয়ায় একে টরুলা দশা বলা হয়। কোরকোদগম পদ্ধতিতে ছদ্ম মাইসেলিয়াম গঠনের মাধ্যমে জনন প্রক্রিয়াকে টরুলেশন বলে।

খন্ডীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

খন্ডীভবন –

যে অযৌন জনন পদ্ধতিতে জনিতৃ জীবের দেহ দুই বা ততোধিক খণ্ডে ভেঙে যায় ও প্রতিটি খণ্ড অপত্যের সৃষ্টি করে, তাকে খন্ডীভবন বলে।

খন্ডীভবনের উদাহরণ –

Spirogyra (স্পাইরোগাইরা) নামক শৈবালের সূত্রাকার দেহটি জলস্রোতের প্রভাবে বা আঘাতজনিত কারণে খণ্ডিত হয়ে যায়। প্রতিটি দেহাংশ মাইটোসিস কোশ বিভাজন পদ্ধতি দ্বারা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে নতুন অপত্য জীব সৃষ্টি করে।

পুনরুৎপাদন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

পুনরুৎপাদন –

যে অযৌন জনন পদ্ধতিতে জনিতৃ জীবের সামান্য দেহাংশ সম্পূর্ণ নতুন জীব সৃষ্টি করে, তাকে পুনরুৎপাদন বলে। এইপ্রকার অযৌন জনন পদ্ধতিকে মরফাল্যাক্সিস বলে। (পক্ষান্তরে, দেহের সামান্য অংশ বিচ্ছিন্ন হলে সেই হারানো দেহাংশ পুনঃস্থাপনকে বলে এপিমরফোসিস)।

পুনরুৎপাদনের উদাহরণ –

Planaria (প্ল্যানেরিয়া) নামক চ্যাপটা কৃমির কোশদেহের যে কোনো অংশ বিচ্ছিন্ন হলে, প্রতিটি বিচ্ছিন্ন অংশ থেকে নতুন অপত্যের সৃষ্টি হয়। Planaria (প্ল্যানেরিয়া) ছাড়া স্পঞ্জ, Hydra (হাইড্রা) -তেও পুনরুৎপাদন দেখা যায়।

স্পাইরোগাইরা ও প্ল্যানেরিয়ার অযৌন জনন কোন্ কোন্ পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়?

Spirogyra (স্পাইরোগাইরার) অযৌন জনন খন্ডীভবন পদ্ধতিতে ও Planaria (প্ল্যানেরিয়ার) অযৌন জনন পুনরুৎপাদন পদ্ধতিতে সম্পন্ন হয়।

চলরেণু বা জুস্পোর কাকে বলে?

উদ্ভিদের অযৌন জননের রেণুগুলি সিলিয়া বা ফ্ল্যাজেলাযুক্ত হলে তা গমনে সক্ষম হয়। এদের চলরেণু বা জুস্পোর বলে। যেমন – Volvox (ভলভক্স), Chlamydomonas (ক্ল্যামাইডোমোনাস) প্রভৃতি শৈবালের চলরেণু।

সোরাস ও অ্যাপ্লানোস্পোর কী ও তা কোথায় দেখা যায়?

সোরাস – ফার্ন ও ছত্রাকে যে গুচ্ছকার স্পোর বা রেণুপূর্ণ স্পোরানজিয়া বা রেণুস্থলী দেখা যায় তাকে সোরাস বলে। যেমন – Dryopteris (ড্রায়োপটেরিস) নামক ফার্ন।

অ্যাপ্পানোস্পোর – ছত্রাকে যে বিশেষ ফ্ল্যাজেলাবিহীন, প্রাচীরযুক্ত, হ্যাপ্লয়েড অচলরেণু দেখা যায় তাকে অ্যাপ্লানোস্পোর বলে। যেমন – Penicillium (পেনিসিলিয়াম), Agaricus (অ্যাগারিকাস)।

জাইগোস্পোর (zygospore) কাকে বলে?

নিম্নশ্রেণির জীবের দুটি গ্যামেটের সংযুক্তি পদ্ধতিতে মিলনের ফলে যে ডিপ্লয়েড কোশের সৃষ্টি হয়, তাকে জাইগোস্পোর বা ভ্রুণরেণু বলে। যেমন – Spirogyra (স্পাইরোগাইরার) দেহে জাইগোস্পোর দেখা যায়।

অঙ্গজ বংশবিস্তার বা অঙ্গজ জনন কাকে বলে?

অঙ্গজ বংশবিস্তার বা অঙ্গজ জনন –

যে অযৌন জনন পদ্ধতিতে উদ্ভিদেহের যে কোনো অঙ্গ বা তার অংশবিশেষ জনিতৃ উদ্ভিদদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোশ বিভাজন ও বৃদ্ধির দ্বারা নতুন অপত্যের সৃষ্টি করে, তাকে অঙ্গজ বংশবিস্তার বা অঙ্গজ জনন বলে।

প্রাকৃতিক উপায়ে অঙ্গজ বংশবিস্তার ঘটে, উদাহরণ দাও।

কান্ডের মাধ্যমে –

পরিবর্তিত কান্ডের দ্বারা অঙ্গজ জনন দু-ভাবে সম্পন্ন হয়। এগুলি হল –

  • অর্ধবায়বীয় কাণ্ডের সাহায্যে – কচুরিপানা উদ্ভিদের কাণ্ডে বায়ু ও জলের সংলগ্ন স্থান দিয়ে ছোটো অর্ধবায়বীয় কাণ্ড অনুভূমিকভাবে বিস্তৃত হয়। এইপ্রকার কাণ্ডকে খর্ব-ধাবক বলে। এই অংশ থেকে অস্থানিক মূল, কাণ্ড ও পাতা সৃষ্টি হয় ও পরে এই অংশে মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি করে।
  • মৃদ্‌গত কাণ্ডের সাহায্যে – আদা, পেঁয়াজ, আলু প্রভৃতি উদ্ভিদের কান্ড মাটির নীচে খাদ্য সঞ্চয় বা প্রতিকূল পরিবেশের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পরিবর্তিত হয়ে বিশেষ আকার ধারণ করে। একে মৃদ্‌গত কাণ্ড বলে। এই মৃদ্‌গত কাণ্ডের গা থেকে মুকুল উৎপন্ন হয় এবং উৎপন্ন মুকুল অঙ্গজ জননের মাধ্যমে নতুন উদ্ভিদের জন্ম দেয়। বিভিন্ন প্রকারের মৃদ্‌গত কাণ্ড হল – আলুর স্ফীতকন্দ, আদার গ্রন্থিকাণ্ড, পেঁয়াজের কন্দ এবং ওলের গুঁড়িকন্দ।

মিষ্টি আলুর মূল কী প্রকৃতির হয় ও তার কাজ কী?

মিষ্টি আলুর মূল রসালো প্রকৃতির কন্দাল মূল। এটি প্রকৃতপক্ষে অস্থানিক মূল। এটি খাদ্য সঞ্চয়ের ফলে স্ফীত হয়ে কন্দের আকার ধারণ করে। ব্রততী শ্রেণির উদ্ভিদের ক্ষেত্রে এই মূল উৎপন্ন হয়। এই মূল উদ্ভিদের অঙ্গজ বংশবিস্তারে সহায়তা করে।

অঙ্গজ জনন প্রক্রিয়া কোন্ উদ্ভিদে দেখা যায়?

কিছুকিছু উদ্ভিদে, যেমন – মিষ্টি আলু বা রাঙা আলু, পটল প্রভৃতি উদ্ভিদের রসালো মূল থেকে অস্থানিক মুকুল জন্মায়। একে মূলজ মুকুল বলে। পরে এই মুকুলসহ মূল খণ্ড খণ্ড করে মাটিতে রোপণ করলে নতুন উদ্ভিদ জন্মায়

একটি প্রাকৃতিক ও একটি কৃত্রিম অঙ্গজ জনন পদ্ধতির উদাহরণ দাও।

প্রাকৃতিক অঙ্গজ জনন পদ্ধতির একটি উদাহরণ হল – পত্রাশ্রয়ী মুকুল দ্বারা পাথরকুচির অঙ্গজ জনন।

কৃত্রিম অঙ্গজ জনন পদ্ধতির উদাহরণ হল – অণুবিস্তারণ বা মাইক্রোপ্রোপাগেশন।

জোড়কলম কাকে বলে?

যে কৃত্রিম অঙ্গজ জনন পদ্ধতিতে দুটি ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদকে বা উদ্ভিদের দুটি শাখাকে পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে কয়েক মাস রেখে দিলে সেই জোড়া অংশ মিশে যায় এবং নতুন ধরনের উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়, তাকে গ্রাফটিং বা জোড়কলম বলে। এই পদ্ধতিতে উন্নততর যে উদ্ভিদটিকে জোড়া লাগানো হয়, তাকে সিয়ন বলে এবং যার ওপর জোড়া লাগানো হয় তাকে স্টক বলে। সিয়ন সাধারণত স্টক অপেক্ষা উন্নতমানের হয়। সিয়ন ও স্টক -এর সংযোগস্থলটিকে মাটি দিয়ে আবৃত করে কাপড় বা খড়ের সাহায্যে বেঁধে দেওয়া হয়।

স্টক ও সিয়ন কাকে বলে?

গ্রাফটিং বা জোড়কলমের ক্ষেত্রে যে গাছের কাণ্ড কেটে ফেলে শুধু তার মূল অংশ ব্যবহৃত হয়, তাকে স্টক বলে। পক্ষান্তরে যে উন্নত ও অভিপ্রেত উদ্ভিদের শাখা স্টকের সঙ্গে সংযোজিত করা হয়, তাকে সিয়ন বলে।

ধান বা ভুট্টাগাছে (একবীজপত্রী) জোড়কলম বা গ্রাফটিং সম্ভব নয় ব্যাখ্যা করো।

একবীজপত্রী উদ্ভিদ, যেমন – ধান, গম, ভুট্টা, তাল বা নারকেল – এর ক্যামবিয়াম কলা থাকে না। ক্যামবিয়াম কলা বৃদ্ধি পেয়ে জোড়কলমে নতুন জাইলেম ও ফ্লোয়েম কলা সৃষ্টি করে দুটি উদ্ভিদের সংযোগ তৈরি করে। ক্যামবিয়াম কলা থাকে না বলে সমস্ত একবীজপত্রী উদ্ভিদের জোড়কলম সম্ভব হয় না।

স্টক, সিয়ন ও গ্রাফটিং শব্দগুলির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করো।

গ্রাফটিং বা জোড়কলম হল একপ্রকার কৃত্রিম অঙ্গজ জনন। এক্ষেত্রে একটি অভিপ্রেত উদ্ভিদের কাণ্ড বা শাখা অর্থাৎ সিয়ন নিয়ে, অপর একটি একই প্রজাতি বা সমগোত্রীয় কোনো উদ্ভিদের কাণ্ড বা শাখা কেটে অর্থাৎ স্টক, এর ওপর জুড়ে দেওয়া হয়।

কৃত্রিম অঙ্গজ জননের প্রয়োজন হয় কেন?

অথবা, কলম প্রস্তুতির সার্থকতা কী?

কৃত্রিম অঙ্গজ জননের প্রয়োজন হয়, কারণ –

  1. বীজবিহীন উদ্ভিদ, যেমন – কলা, আনারস, আঙুর প্রভৃতি উদ্ভিদের সহজে নতুন উদ্ভিদ করা যায়।
  2. নির্দিষ্ট ও অভিপ্রেত বৈশিষ্ট্যের উদ্ভিদ চারা তৈরি এই পদ্ধতিতে পাওয়া সম্ভব হয়।
  3. দ্রুত, কম খরচে চারা তৈরি প্রভৃতি কৃত্রিম অঙ্গজ জনন যেমন – কলম প্রস্তুতি, দ্বারা পাওয়া সম্ভব হয়।

অণুবিস্তারণ বা মাইক্রোপ্রোপাগেশন কাকে বলে?

মাইক্রোপ্রোপাগেশন বা অণুবিস্তারণ দ্বারা –

যে কৃত্রিম অঙ্গ জনন পদ্ধতিতে ল্যাবরেটরিতে কোশ, কলা বা অঙ্গ কর্ষণ মাধ্যমে পালন দ্বারা দ্রুত নতুন উদ্ভিদ তৈরি করা হয়, তাকে মাইক্রোপ্রোপাগেশন বা অণুবিস্তারণ বলে। এক্ষেত্রে উদ্ভিদের উপযুক্ত দেহাংশ বা এক্সপ্ল্যান্ট নির্বীজ করে পুষ্টি মাধ্যমে কর্ষণ করা হয়। এর ফলে নতুন চারাগাছ সৃষ্টি হয়। মূলত সজ্জা উদ্ভিদ (ornamental plant), যেমন – অর্কিড, কলাজাতীয় ফল উৎপাদক উদ্ভিদ, কফি, সেগুন প্রভৃতি অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন উদ্ভিদ প্রভৃতিতে অণুবিস্তারণ পদ্ধতির অধিক ব্যবহার হয়ে থাকে।

টোটিপোটেন্সি কী? একটি টোটিপোটেন্ট কোশের নাম লেখো।

টোটিপোটেন্সি –

বিচ্ছিন্ন দেহকোশের উপযুক্ত পরিবেশে সম্পূর্ণ জীবদেহে পরিণত হওয়ার ক্ষমতাকে টোটিপোটেন্সি বা পূর্ণত্বক্ষমতা বলে।

টোটিপোটেন্সি কোশের নাম –

একটি টোটিপোটেন্ট কোশের নাম হল স্টেম কোশ।

কলোজেনেসিস ও রাইজোজেনেসিস কী?

মাইক্রোপ্রোপাগেশন পদ্ধতিতে ক্যালাস কলা থেকে প্রাথমিক মূল বা বিটপ সৃষ্টি হওয়াকে বলা হয় অরগ্যানোজেনেসিস। ক্যালাস কলা থেকে প্রাথমিক বিটপ সৃষ্টি হওয়াকে বলে কলোজেনেসিস (caulogenesis) এবং প্রাথমিক মূল সৃষ্টি হওয়াকে বলে রাইজোজেনেসিস (rhizogenesis)।

প্রোপাগিউল (propagule) কাকে বলে?

মাইক্রোপ্রোপাগেশন বা অন্যান্য বংশবিস্তার পদ্ধতিতে যে উদ্ভিদ দেহাংশ থেকে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়, তাকে প্রোপাগিউল বলে। যেমন – কাণ্ড বা মুকুল। যৌন জননের ক্ষেত্রে বীজ হল প্রোপাগিউল।

ক্লোনিং কাকে বলে? তোমার জানা একটি ক্লোনিং পদ্ধতির নাম লেখো।

ক্লোনিং পদ্ধতি – অণুবিস্তারণ পদ্ধতিতে একটি উদ্ভিদ দেহাংশ থেকে অসংখ্য প্ল্যান্টলেট বা চারাগাছ ক্লোন করা হয়।

মাইক্রোপ্রোপাগেশনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

মাইক্রোপ্রোপাগেশনের দুটি বৈশিষ্ট্য হল –

  1. মাইক্রোপ্রোপাগেশন কলাকর্ষণ বা টিস্যু কালচার পদ্ধতির একটি বিশেষ প্রকার যার মাধ্যমে উদ্ভিদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়।
  2. এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভিদের পছন্দমাফিক ভ্যারাইটির দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটানো হয়।

কলাকর্ষণ বা টিস্যু কালচার কাকে বলে?

যে প্রযুক্তি পদ্ধতিতে জীবদেহ থেকে সংগৃহীত কলা, উপযুক্ত পুষ্টিমাধ্যমে জীবাণুমুক্ত পরিবেশে কর্ষণ করা হয়, তাকে কলাকর্ষণ বা টিস্যু কালচার বলে। মাইক্রোপ্রোপাগেশনে কলাকর্ষণ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।

বিশেষ কর্ষণ মাধ্যমে (culture medium) কোন্ কোন্ উদ্ভিদ হরমোন যুক্ত করা হয়?

বিশেষ কর্ষণ মাধ্যমে অক্সিন ও সাইটোকাইনিন হরমোন যুক্ত করা হয়। এই হরমোনগুলি বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রকরূপে ব্যবহৃত হয়।

এক্সপ্ল্যান্ট কী?

উদ্ভিদের যে বিশেষ ক্ষুদ্র অংশ অণুবিস্তারণের জন্য ব্যবহার করা হয়, তাকে এক্সপ্ল্যান্ট বলে। ভাজক কলাপূর্ণ অংশ, যেমন – অগ্রমুকুল, মূলাগ্র, কন্দজাতীয় অঙ্গ ইত্যাদি এক্সপ্ল্যান্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ক্যালাস কী?

জীবাণুমুক্ত এক্সপ্ল্যান্টকে টেস্টটিউবে কর্ষণ মাধ্যমে (culture media) রাখলে ধীরে ধীরে কোশ বিভাজন শুরু হয় এবং এক্সপ্ল্যান্টের কোশগুলি থেকে অবিভেদিত কোশসমষ্টির সৃষ্টি হয়, একেই ক্যালাস বলে। ক্যালাসের কোশগুলি টোটিপোটেন্ট প্রকৃতির হয় এবং তা থেকে সম্পূর্ণ উদ্ভিদ সৃষ্টি হতে পারে।

কর্ষণ দ্রবণটি কী কী দ্বারা প্রস্তুত করা হয়?

কর্ষণ দ্রবণে উপাদন হল –

  1. ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট – নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সালফার প্রভৃতি খনিজের লবণ।
  2. মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট – লোহা, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, বোরন, তামা ও মলিবডেনাম -এর লবণ ও কার্বন।
  3. শক্তি-উৎস – সুক্রোজ শর্করা, এ ছাড়াও গ্লুকোজ বা ফ্রুক্টোজ।
  4. ভিটামিন – থায়ামিন, নিকোটিনিক অ্যাসিড, বায়োটিন।
  5. নাইট্রোজেন সরবরাহকারী উপাদান (অ্যামিনো অ্যাসিড) – গ্লুটামিন, অ্যাসপারজিন ও অ্যাডিনিন।
  6. বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক উপাদান (হরমোন) – IAA, 2, 4-D, NAA (অক্সিন), 6 – বেনজিনঅ্যামিনোপিউরিন (সাইটোকাইনিন), GA3 (জিব্বেরেলিন) ও অ্যাবসিসিক অ্যাসিড।

মাইক্রোপ্রোপাগেশনে সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কেন সাবধানতা নিতে হয়?

মাইক্রোপ্রোপাগেশনে ব্যবহৃত কর্ষণ মাধ্যমের পরিপোষক অণুজীব, যেমন – ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের বৃদ্ধির পক্ষে অত্যন্ত সহায়ক। এই জীবাণুর সংক্রমণে নতুন উদ্ভিদ বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই সংক্রমণ রোধে সংক্রমণ রোধক, গ্লাভস ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

কলাকর্ষণ মাধ্যমে অধিক অক্সিন ও অধিক সাইটোকাইনিন ব্যবহারে কী সমস্যা দেখা দেয়? এই সমস্যার কীভাবে সমাধান সম্ভব?

সমস্যা –

অধিক অক্সিন ব্যবহারে অপত্য উদ্ভিদে মূলের অধিক বৃদ্ধি ঘটে। পক্ষান্তরে অধিক সাইটোকাইনিন ব্যবহারে অপত্য উদ্ভিদে মূলের বিটপের বৃদ্ধি বেশি হয়ে যায়।

সমাধান –

এই সমস্যা দূর করতে কর্ষণ মাধ্যমে প্রজাতির ওপর নির্ভর করে ওই হরমোন দুটির সঠিক মাত্রা নির্ধারণ করা দরকার।

মাইক্রোপ্রোপাগেশন বা কলাকর্ষণের সময় কী কী সমস্যা হতে পারে?

মাইক্রোপ্রোপাগেশন বা কলাকর্ষণের সময় যেসব সমস্যা হতে পারে, সেগুলি নিম্নরূপ –

  1. কর্ষণ মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া বা কৃত্রিম সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে এক্সপ্ল্যান্ট বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে।
  2. কলাকর্ষণে সময় আলো, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা সঠিক থাকা জরুরি।
  3. অতিরিক্ত জলজনিত কারণে অনেক সময় সৃষ্ট উদ্ভিদরা বিনষ্ট হয়। একে হাইপারহাইড্রিসিটি (hyperhydricity) বা ভিট্রিফিকেশন (vitrification) বলে।

মাইক্রোপ্রোপাগেশনের অসুবিধাগুলি উল্লেখ করো।

মাইক্রোপ্রোপাগেশনের অসুবিধাগুলি হল –

  1. মাইক্রোপ্রোপাগেশনে জিনগত প্রকরণ ঘটে না বলে উদ্ভিদটির অভিযোজন ক্ষমতা কম হয়।
  2. এটি অভিব্যক্তিতে সহায়তা করে না।

কিছু উদ্ভিদের ক্ষেত্রে অঙ্গজ জনন আবশ্যিক কেন?

অনুরূপ প্রশ্ন, উদ্ভিদদেহে প্রাকৃতিক অঙ্গজ জননের গুরুত্ব লেখো।

কিছু উদ্ভিদের ক্ষেত্রে অঙ্গজ জনন আবশ্যিক, কারণ –

  1. কলা, গোলাপ প্রভৃতি উদ্ভিদে যৌন জনন হয় না। এইসব ক্ষেত্রে অঙ্গজ জনন হল জননের একমাত্র উপায়।
  2. যৌন, অযৌন জনন সময়সাপেক্ষ জটিল ও বাহক নির্ভর, অন্য দিকে অঙ্গজ জনন সরল ও দ্রুত প্রজনন পদ্ধতি। তাই বহু উদ্ভিদ এই পদ্ধতিতে প্রজননে অভিযোজিত হয়।

জনুক্রম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

জনুক্রম –

যৌন জননকারী কোনো জীবের জীবনচক্রে হ্যাপ্লয়েড (n) ও ডিপ্লয়েড (2n) জনুর পর্যায়ক্রমিক আবর্তনকে জনুক্রম বলে।

উদাহরণ –

Dryopteris (ড্রায়োপটেরিস) বা ঢেঁকিশাক, Marsilea (মারসিলিয়া) বা সুসনি শাক, Equisetum (ইকুইজিটাম), Pteridium (টেরিডিয়াম) প্রভৃতি। ফার্ন, মসসহ যৌন জননকারী সকল উদ্ভিদ এবং Paramoecium (প্যারামেসিয়াম), Monocystis (মনোসিস্টিস) সহ যৌন জননকারী সকল জীব। (বিঃদ্রঃ অনেকসময় এই ফার্নগুলির নাম করে প্রশ্ন আসে, তাই নামগুলি জেনে রাখা ভালো।)

জনুক্রমে মিয়োসিসের গুরুত্ব লেখো।

জীবের জনুক্রমে ডিপ্লয়েড রেণুধর দশা (2n) ও হ্যাপ্লয়েড লিঙ্গধর দশা (n) পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়। রেণুস্থলীর রেণু মাতৃকোশে মিয়োসিস পদ্ধতিতে রেণু উৎপন্ন হয়ে লিঙ্গধর জনু সৃষ্টি হয়। লিঙ্গধর জনু হ্যাপ্লয়েড হয় বলেই তার পুং ও স্ত্রীজনন অঙ্গে যথাক্রমে হ্যাপ্লয়েড শুক্রাণু ও হ্যাপ্লয়েড ডিম্বাণু তৈরি হয়। তারা মিলিত হলে পুনরায় ভ্রুণ, তথা রেণুধর জনু সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ মিয়োসিস ঘটে বলেই জনুক্রম সম্ভব হতে পারে।

জনুক্রমের গুরুত্ব লেখো।

কোনো জীবের হ্যাপ্লয়েড ও ডিপ্লয়েড জনু চক্রাকারে আবর্তিত হলে তার জেনেটিক বস্তুর ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হয় জনুক্রমের মাধ্যমে।

স্পোরোফাইট কাকে বলে?

ফার্ন-জাতীয় উদ্ভিদে ডিপ্লয়েড জাইগোট মাইটোসিস পদ্ধতিতে বিভাজিত হয়ে যে বহুকোশী ডিপ্লয়েড উদ্ভিদ সৃষ্টি করে, তাকে স্পোরোফাইট বা রেণুধর উদ্ভিদ বলে।

গ্যামেটোফাইট কাকে বলে?

ফার্ন-জাতীয় উদ্ভিদের ডিপ্লয়েড উদ্ভিদে রেণু মাতৃকোশে মিয়োসিসের ফলে উৎপন্ন রেণু অঙ্কুরিত হয়ে যে বহুকোশী হ্যাপ্লয়েড উদ্ভিদ সৃষ্টি করে তাকে, গ্যামেটোফাইট বা লিঙ্গধর জনু বলে।

দ্বিবিভাজন ও বহুবিভাজনের পার্থক্য লেখো।

দ্বিবিভাজন ও বহুবিভাজনের পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়দ্বিবিভাজনবহুবিভাজন
পদ্ধতিজনিতৃ কোশের নিউক্লিয়াস একবার বিভাজিত হয়।জনিতৃ কোশের নিউক্লিয়াস বহুবার বিভাজিত হয়।
জনন সাফল্যদুটি অপত্য সৃষ্টি হয় বলে জননে সাফল্য সম্ভাবনা তুলনামূলক কম।বহুসংখ্যক অপত্য সৃষ্টি হয় বলে জননে সাফল্য সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি।
উদাহরণAmoeba (অ্যামিবা)।Paramoecium (প্যারামেসিয়াম), Plasmodium (প্লাসমোডিয়াম)।

শাখাকলম ও জোড়কলমের পার্থক্য লেখো।

শাখাকলম ও জোড়কলমের পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়শাখাকলমজোড়কলম
পদ্ধতিমূল, কাণ্ড বা পাতার অংশ কেটে মাটিতে রোপণের দ্বারা নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টির পদ্ধতি।একটি অভিপ্রেত উদ্ভিদের শাখা অন্য উদ্ভিদে সংযোজিত করে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টির পদ্ধতি।
প্রয়োজনীয় উদ্ভিদ সংখ্যাএকটি উদ্ভিদ।দুটি উদ্ভিদ (একটি স্টক ও একটি সিয়ন -এর জন্য)।

খণ্ডীভবন ও পুনরুৎপাদনের পার্থক্য লেখো।

খন্ডীভবন ও পুনরুৎপাদনের পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়খণ্ডীভবনপুনরুৎপাদন
বৈশিষ্ট্যবহুকোশী কিন্তু দেহ কলা বা অঙ্গে বিভেদিত নয় এমন জীবদেহে দেখা যায়।কলা বা অঙ্গে বিভেদিত এমন বহুকোশী জীবদেহে এই পদ্ধতিতে জনন সম্পন্ন হয়।
পদ্ধতিজীবদেহটি খণ্ডে বিভক্ত হলে প্রতিটি খণ্ডক নতুন জীবে পরিণত হয়।দেহাংশ খণ্ডে বিভক্ত হলে প্রতিটি খণ্ডক বাকি দেহাংশের উৎপত্তি ঘটায়।
উদাহরণSpirogyra (স্পাইরোগাইরা)।Planaria (প্ল্যানেরিয়া)।

প্রাকৃতিক অঙ্গজ জনন ও যৌন জননের পার্থক্য লেখো।

অথবা, (1) অপত্যের প্রকৃতি ও (2) সময়সীমা -এর ভিত্তিতে প্রাকৃতিক অঙ্গজ জনন ও যৌন জননের মধ্যে পার্থক্য কী?

প্রাকৃতিক অঙ্গজ জনন ও যৌন জননের পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়প্রাকৃতিক অঙ্গজ জননযৌন জনন
অপত্যের প্রকৃতিপ্রকরণ সৃষ্টি হয় না। ফলে অভিযোজন ক্ষমতা কম হয়।প্রকরণ সৃষ্টি হয়, ফলে পরিবেশে অভিযোজন ক্ষমতা বেশি হয়।
সময়সীমাএটি একটি দ্রুত সংঘটিত সরল পদ্ধতি।এটি সময় সাপেক্ষ ও জটিল পদ্ধতি।
জননের এককউদ্ভিদ দেহাংশ।জনন কোশ বা গ্যামেট।
জনিতৃ জীব সংখ্যাএকটি।দুইটি।

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের দ্বিতীয় অধ্যায় “জীবনের প্রবহমানতা” অধ্যায়ের ‘জনন‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

ভারতে খরা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়

ভারতে প্রায়ই খরা হয় কেন? ভারতে খরা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়?

ভারতের বন্যা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়

ভারতে প্রায়ই বন্যা হয় কেন? ভারতের বন্যা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়?

দশম শ্রেণি - বাংলা - নদীর বিদ্রোহ - পাঠ্যাংশের ব্যাকরণ

দশম শ্রেণি – বাংলা – নদীর বিদ্রোহ – পাঠ্যাংশের ব্যাকরণ

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

নবম শ্রেণি – বাংলা – কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণি বাংলা – কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি – বিষয়সংক্ষেপ

ভারতে প্রায়ই খরা হয় কেন? ভারতে খরা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়?