এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

জীবের বৈশিষ্ট্য পিতামাতা থেকে সন্তানদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়। এই বৈশিষ্ট্যগুলি জীবের জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। জিন হল DNA-এর একটি ক্ষুদ্র অংশ যা একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী। এই অধ্যায়ে, আমরা কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ সম্পর্কে আলোচনা করব।

Table of Contents

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ 2

মানুষের সেক্স ক্রোমোজোম বাহিত এবং অটোজোম বাহিত দুটি করে বংশগত রোগের নাম লেখো।

মানুষের সেক্স ক্রোমোজোম বাহিত দুটি বংশগত রোগ হল — 1. হিমোফিলিয়া এবং 2. বর্ণান্ধতা।
মানুষের অটোজোম বাহিত দুটি বংশগত রোগ হল — 1. থ্যালাসেমিয়া এবং 2. অ্যালবিনিজম।

থ্যালাসেমিয়া বলতে কী বোঝ?

থ্যালাসেমিয়া হল অটোজোম বাহিত এক ধরনের বংশগত রোগ, যা হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিন-পেপটাইড শৃঙ্খলের অস্বাভাবিক গঠনের ফলে সৃষ্টি হয়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হিমোগ্লোবিন গঠিত হয় না বা হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ হ্রাস পায়,লোহিত রক্তকণিকা ক্ষুদ্র হয় এবং এর আয়ু কম (RBC-র গড় আয়ু 120 দিন)—ফলে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা দেখা দেয়।

থ্যালাসেমিয়া মেজর বলতে কী বোঝ?

হিমোগ্লোবিনোপ্যাথির কারণে হিমোগ্লোবিনের α এবং β শৃঙ্খল দুটির প্রত্যেকটিই মিউটেশনের জন্য সম্পূর্ণরূপে গঠিত না হলে যে রোগ সৃষ্টি হয়, তাকে থ্যালাসেমিয়া মেজর বলে।

থ্যালাসেমিয়া মাইনর বলতে কী বোঝ?

হিমোগ্লোবিনোপ্যাথির কারণে হিমোগ্লোবিনের α বা β শৃঙ্খল দুটির মধ্যে যে-কোনো একটি শৃঙ্খল মিউটেশনের জন্য সম্পূর্ণরূপে গঠিত না হলে যে রোগ সৃষ্টি হয়, তাকে থ্যালাসেমিয়া মাইনর বলে।

হিমোফিলিয়া রোগ বলতে কী বোঝ?

মানুষের X ক্রোমোজোম বাহিত প্রচ্ছন্ন জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যে বংশগত রোগের ফলে ক্ষতস্থানে রক্ত তঞ্চিত হয় না, তাকে হিমোফিলিয়া বলা হয়। সাধারণত রক্তে তঞ্চন ফ্যাক্টর VIII বা IX-এর অভাবে এই ধরনের রোগ সৃষ্টি হয়।

হিমোফিলিয়া রোগ কত প্রকারের হয় ও কী কী?

হিমোফিলিয়া রোগ প্রধানত দু-প্রকারের হয়। যথা — হিমোফিলিয়া A এবং হিমোফিলিয়া B। এ ছাড়াও হিমোফিলিয়া C নামক অপর একপ্রকার হিমোফিলিয়া দেখা যায়।

হিমোফিলিয়া A রোগের কারণ কী?

X ক্রোমোজোমের একটি জিনের প্রচ্ছন্ন পরিব্যক্তি ঘটলে থ্রম্বোপ্লাস্টিন বা তঞ্চন ফ্যাক্টর VIII বা অ্যান্টিহিমোফিলিক ফ্যাক্টর (AHF) সৃষ্টি হয় না। এর ফলে রক্ততঞ্চন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং হিমোফিলিয়া A রোগ হয়।

হিমোফিলিয়া A রোগটি পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি প্রকাশিত হয় কেন?

হিমোফিলিয়া A রোগের জন্য দায়ী প্রচ্ছন্ন জিনটি Xক্রোমোজোমে অবস্থিত হওয়ায় এবং পুরুষদের একটিমাত্র X ক্রোমোজোম থাকায়, পুরুষদের ক্ষেত্রে এই রোগটি বেশি প্রকাশিত হয়।

মহিলারা হিমোফিলিয়া A রোগের বাহক হয় কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত হয় না কেন?

মহিলাদের ক্ষেত্রে দুটি X ক্রোমোজোম থাকে। একটি X ক্রোমোজোমে এই রোগের জন্য দায়ী প্রচ্ছন্ন জিনটি উপস্থিত থাকলেও, অন্য X ক্রোমোজোমটি স্বাভাবিক হওয়ায় তারা এই রোগের বাহক হয় কিন্তু এই রোগে সাধারণত আক্রান্ত হয় না। অর্থাৎ রোগটি সাধারণত মহিলাদের দ্বারা সঞ্চারিত হয় কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রকাশিত হয়।

হিমোফিলিয়া A রোগীদের দেহের কোন্ কোন্ স্থানে অত্যধিক রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে?

হিমোফিলিয়া A রোগীদের দেহের অস্থিসন্ধি, পেশি, মিউকাস পর্দা, পরিপাকনালী, মূত্রনালী, মস্তিষ্ক প্রভৃতি অংশে অত্যধিক রক্তক্ষরণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

হিমোফিলিয়া B রোগের কারণ কী?

X ক্রোমোজোমের একটি জিনের প্রচ্ছন্ন পরিব্যক্তি ঘটলে ফ্যাক্টর IX বা ক্রিস্টমাস ফ্যাক্টর স্বাভাবিকের তুলনায় কম তৈরি হয় বা একদমই তৈরি হয় না। এর ফলে রক্ত তরিত হতে পারে না এবং হিমোফিলিয়া B রোগ হয়।

হিমোফিলিয়া B-কে ক্রিস্টমাস হিমোফিলিয়া বলার কারণ কী?

স্টিফেন ক্রিস্টমাস নামে একজন রোগীর দেহে হিমোফিলিয়া, B রোগ প্রথম ধরা পড়ে। সেই কারণে একে ক্রিস্টমাস হিমোফিলিয়া বলা হয়।

ক্রিস-ক্রস উত্তরাধিকার কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

ক্রিস-ক্রস উত্তরাধিকার যখন পিতার বংশগত বৈশিষ্ট্য পুত্রে প্রকাশিত না হয়ে, কন্যার মাধ্যমে বাহিত হয়ে পৌত্রে প্রকাশিত হয় বা মাতার বৈশিষ্ট্য পুত্রের মধ্য দিয়ে বাহিত হয়ে নাতনিতে প্রকাশিত হয়, তাকে ক্রিস-ক্রস উত্তরাধিকার বলে।
উদাহরণ বর্ণান্ধতা, হিমোফিলিয়া প্রভৃতি লিঙ্গ সংযোজিত প্রচ্ছন্ন জিনগুলির বংশগত প্রবাহ – বর্ণান্ধ পিতা → বাহক কন্যা → বর্ণান্ধ পৌত্র।

জেনেটিক কাউন্সেলিং বা সুপ্রজনন মন্ত্রণা বা জিনগত পরামর্শ কাকে বলে?

কোনো ব্যক্তির পরিবারের জিনগত রোগের ইতিহাস বিশ্লেষণ ও জেনেটিক পরীক্ষানিরীক্ষার দ্বারা ভবিষ্যৎ সন্তানের জিনগত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা নির্ধারণ করা বা জিনগত রোগবিহীন সুস্থ সন্তানলাভে সাহায্য করার প্রক্রিয়াকে জেনেটিক কাউন্সেলিং বলা হয়।

জেনেটিক কাউন্সেলিং কেন গুরুত্বপূর্ণ? অথবা জিনগত পরামর্শদানের সুবিধাগুলি কী কী?

জেনেটিক কাউন্সেলিং-এর গুরুত্ব হল — 1. জিনগত পরামর্শ বিবাহের পরে জিনগত রোগাক্রান্ত শিশুর জন্ম প্রতিরোধ করে। 2. জেনেটিক কাউন্সেলিং শিশুর জিনগত রোগের সম্ভাবনা নির্ণয় ও তার মোকাবিলায় সঠিক পন্থা অবলম্বনে সাহায্য করে। 3. ভ্রুণ বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাব্য কারণ নির্ণয় ও সুস্থ শিশুর জন্মগ্রহণে জিনগত পরামর্শ সাহায্য করে।

বর্ণান্ধতা কাকে বলে?

X ক্রোমোজোম সংযোজিত প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত যে বংশগত রোগে মানুষ প্রধানত লাল ও সবুজ অথবা নীল বর্ণ শনাক্ত করতে পারে না, সেই রোগকে বর্ণান্ধতা বলে।

হাইড্রপস ফিটালিস কী?

ভ্রুণের দেহে তরল জমে মাতৃগর্ভে থাকাকালীনই নষ্ট হয়ে যায় বা জন্মানোর কয়েকদিন বাদেই মারা যায়, এই ঘটনাকে হাইড্রপস ফিটালিস বলে। থ্যালাসেমিয়া রোগে চারটি গ্লোবিন শৃঙ্খলই বিনষ্ট হলে এই ঘটনা ঘটে।

মানুষের মধ্যে অনেক ধরনের জিনগত রোগ দেখা যায়। এই রোগগুলির কারণ হল জিনের অস্বাভাবিকতা। জিনগত রোগের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। জিনগত রোগ প্রতিরোধ করা কঠিন, তবে এটি সম্ভব।

Share via:

মন্তব্য করুন