মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – পরিবেশ তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ – পরিবেশদূষন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

Rahul

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের একটি মূল বিষয় হলো পরিবেশ তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ। এই বিষয়টি পরিবেশের প্রাকৃতিক সম্পদগুলি সংক্রান্ত জ্ঞান এবং তাদের সংরক্ষণ পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে বিবেচনা করে। এটি পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান যেমন জল, বায়ু, মাটি এবং বাণিজ্যিক সম্পদ নির্মাণে কীভাবে ব্যবহৃত হয়, সংরক্ষণ করা যায় এবং তাদের ব্যবহার এবং অস্তিত্ব সম্পর্কে শিক্ষা দেয়।

Table of Contents

পরিবেশদূষণ হলো একটি সমস্যা যা পরিবেশ বা পৃথিবীর সম্পদের অপচয় এবং অপ্রচলিতির ফলে ঘটে। এটি মানুষের বিভিন্ন কারণে উদ্ভূত হয়, যেমন কারখানা ও বাণিজ্যিক কারখানা থেকে তৈল পদার্থ, নগরবাসীদের পাইপ পদার্থ, পরিবহন ইঞ্জিন ধ্বংস পদার্থ ইত্যাদি।

পরিবেশদূষণ কাকে বলে?

পরিবেশে যখন প্রাণী ও উদ্ভিদজগতের অস্তিত্বের পক্ষে ক্ষতিকর বস্তুর উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়, সেই অবস্থাকে পরিবেশদূষণ বলে।

দূষক কাকে বলে?

যে সকল পদার্থের উপস্থিতি পরিবেশে অবাঞ্ছিত পরিবর্তন নিয়ে আসে এবং যার ফলে সমগ্র জীবজগৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাকে দূষক বলে। যেমন — ধুলো-বালি, ময়লা, আবর্জনা, CO2, NO2, SO2, . সিসা, পারদ ইত্যাদি।

বাস্তুবিজ্ঞানী ওডাম পরিবেশের দূষণকারী পদার্থকে কত ভাগে ভাগ করেছেন ও কী কী?

বাস্তুবিজ্ঞানী ওডাম (1983) পরিবেশের দূষণকারী পদার্থকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যথা — জৈব ভঙ্গুর দূষক ও জৈব-অভঙ্গুর দূষক।

জৈব-অভঙ্গুর দূষক বলতে কী বোঝ?

যে জটিল দূষণকারী পদার্থগুলি সহজে সরল পদার্থে রূপান্তরিত না হওয়ার ফলে পরিবেশে জমা হতে থাকে ও জৈব- রাসায়নিক চক্রে আবর্তিত হতে থাকে, তাদের জৈব-অভঙ্গুর দূষক বলে। যেমন — DDT, পলিথিন ইত্যাদি।

জৈব ভঙ্গুর দূষক বলতে কী বোঝ?

যে জটিল দূষণকারী পদার্থগুলি ব্যাকটেরিয়া, অণুজীব প্রভৃতি দ্বারা বিয়োজিত হয়ে সরল পদার্থে পরিণত হয়, তাকে জৈব ভঙ্গুর দূষক বলে। যেমন — গৃহস্থালির বর্জ্য, আবর্জনা ইত্যাদি।জৈব ভঙ্গুর দূষক বলতে কী বোঝ

দূষণের প্রকারভেদগুলি কী কী?

পরিবেশের উপাদান অনুযায়ী দূষণ প্রধানত চার প্রকার, যথা — বায়ুদূষণ, জলদূষণ, মৃত্তিকাদূষণ ও শব্দদূষণ।

বায়ুদূষণ কাকে বলে?

প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট কারণে, বায়ুমণ্ডলের মধ্যে যখন দূষিত ধোঁয়া, গ্যাস, বাষ্প প্রভৃতি অনিষ্টকর উপাদানের সমাবেশ ঘটে বা স্বাভাবিকের তুলনায় তাদের পরিমাণ বেড়ে যায়, যার ফলে মানুষ, জীবজন্তু ও উদ্ভিদজগতের ক্ষতি সাধিত হয়, তখন তাকে বায়ুদূষণ বলে।

প্রাথমিক বা প্রধান বায়ুদূষক কাকে বলে?

যেসব বায়ুদূষক কোনো প্রাকৃতিক ঘটনায় অথবা মনুষ্যজনিত কারণে সরাসরি উৎপন্ন হয়, সেগুলিকে প্রাথমিক বায়ুদূষক বলে। এই দূষকগুলি হল – CO2, SO2, ভাসমান বস্তুকণা (SPM), ট্রোপোস্ফিয়ারিক ওজোন ইত্যাদি।

গৌণ বায়ুদূষক কাকে বলে?

সূর্যালোকের উপস্থিতিতে অথবা অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন প্রাথমিক বায়ুদূষক পদার্থ যখন নিজেদের মধ্যে বিক্রিয়া করে আরও জটিল ও বেশি ক্ষতিকর বায়ুদূষক সৃষ্টি করে তখন সেগুলিকে গৌণ বায়ুদূষক বলে। যেমন — সালফিউরিক অ্যাসিড, ধোঁয়াশা, PAN (peroxy acetyl nitrate) ইত্যাদি।

দূষিত বায়ু কাকে বলে?

যে বায়ুতে বেশি মাত্রায় কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইডসমূহ, ধূলিকণা এবং হাইড্রোজেন সালফাইড ইত্যাদি গ্যাস উপস্থিত থাকে এবং যা মানুষ ও পরিবেশের ক্ষতি করে, তাকে দূষিত বায়ু বলে।

দূষণমুক্ত বায়ু কাকে বলে?

যে বায়ুতে দূষক পদার্থ থাকলেও তার মাত্রা খুব বেশি থাকে না, মানুষের সহন ক্ষমতার মধ্যে থাকে ও কোনো ক্ষতি হয় না, তাকে দূষণমুক্ত বায়ু বলে।

মনুষ্যসৃষ্ট বায়ুদূষক কাকে বলে?

মানুষের কার্যকলাপের ফলে সৃষ্ট বর্জ্য পদার্থ থেকে উৎপন্ন দূষক পদার্থ যা বায়ুকে দূষিত করে, তাকে মনুষ্যসৃষ্ট বায়ুদূষক বলে। যেমন — কারখানা থেকে নির্গত কয়লার ধোঁয়া।মনুষ্যসৃষ্ট বায়ুদূষক কাকে বলে

প্রাকৃতিক বায়ুদূষক কাকে বলে?

প্রাকৃতিক উৎস থেকে যেসব দূষক পদার্থ উৎপন্ন হয়ে বায়ুকে দূষিত করে, তাদের প্রাকৃতিক বায়ুদূষক বলে। যেমন — ফুলের রেণু, জলাভূমির মিথেন গ্যাস ইত্যাদি।

গ্রিনহাউস প্রভাব বলতে কী বোঝ?

বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2), নাইট্রাস অক্সাইড (N2O), মিথেন (CH4), ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC), জলীয় বাষ্প ইত্যাদি গ্যাস তাপ বিকিরণে বাধা দেওয়ার ফলে তাপ বারবার এই গ্যাসীয় আস্তরণে প্রতিফলিত হয়ে পৃথিবীপৃষ্ঠে ফিরে আসে, যার ফলে পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। এই ঘটনাকে গ্রিনহাউস প্রভাব বলে।

অম্লবৃষ্টি (acid rain) বলতে কী বোঝ?

বাতাসে ভাসমান সালফার ডাইঅক্সাইড এবং নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড গ্যাস বৃষ্টির জল বা তুষার বা শিশিরের সঙ্গে বিক্রিয়া করে সালফিউরিক অ্যাসিড এবং নাইট্রিক অ্যাসিডরূপে পৃথিবীতে নেমে এসে মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে। এই ঘটনাকে অম্লবৃষ্টি বলে।

PAN কীভাবে সৃষ্টি হয়?

সূর্যালোকের উপস্থিতিতে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড, হাইড্রোকার্বনের বিক্রিয়ায় পারক্সি-অ্যাসিটাইল নাইট্রেট বা PAN- তৈরি হয়। এটির প্রভাবে চোখ জ্বালা, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ প্রভৃতি উপসর্গ দেখা যায়।

ইউডেফিক জীবাণু কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

যেসব জীবাণু মাটিতে বসবাস করে এবং অনেক রোগের সংক্রমণ ঘটায়, তাদের ইউডেফিক প্যাথোজেন বলে।
উদাহরণ অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস।

রোডেন্টিসাইড কাকে বলে?

যেসব রাসায়নিক পদার্থ মেঠো ইঁদুর বা রোডোন্ট বর্গের প্রাণীদের বিনাশ করে তাদের রোডেন্টিসাইড বলে। যেমন — এনডিন, সোডিয়াম আরসেনাইট প্রভৃতি।

অ্যাসিড বৃষ্টির রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলি সংক্ষেপে উল্লেখ করো।

1. NOx + H20→HNO3
2. 2SO2 + O2→2SO3, SO3 + H2O→H2SO4 উৎপন্ন নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) ও সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4) বৃষ্টির সঙ্গে মিশে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে।

অ্যাসিড বৃষ্টিতে তাজমহল বা অন্য মার্বেল রচিত স্থাপত্যের ক্ষতি হয় কীভাবে?

মার্বেল, চুনাপাথর প্রভৃতি প্রকৃতপক্ষে হল ক্যালশিয়াম কার্বনেট (CaCO3)। এটি অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে সালফেট বা নাইট্রেট যৌগ উৎপন্ন করে যা স্থাপত্যের উজ্জ্বলতা ম্লান করে দেয়। এ ছাড়া পাথর ক্ষয়ে সৌন্দর্যহানি ঘটে, যাকে স্টোন লেপ্রসি বলে।

কৃষিক্ষেত্রে বর্জ্যে উপস্থিত পদার্থের নাম লেখো।

কৃষিক্ষেত্রে বর্জ্যে উপস্থিত পদার্থ হল — 1. DDT, BHC প্রভৃতি কীটনাশক। 2. বিভিন্ন প্রকার নাইট্রেট ও ফসফেটজাতীয় সার।

কৃষিক্ষেত্রে বর্জ্য বহির্গমন (agricultural run off) বলতে কী বোঝ?

কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত সার, বিভিন্ন প্রকার আগাছানাশক ও কীটনাশক, মাটি, ফসলজাত বর্জ্য বৃষ্টির জল বা চাষের অতিরিক্ত জলের সাথে মিশে কৃষিক্ষেত্র থেকে নির্গত হয়ে যায়। একেই কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য বহির্গমন (agricultural run off) বলা হয়।

বায়ুতে কার্বন ডাইঅক্সাইড বৃদ্ধির দুটি কারণ উল্লেখ করো।

বায়ুতে কার্বন ডাইঅক্সাইড বৃদ্ধির দুটি কারণ হল – 1 প্রচুর পরিমাণে কয়লা, পেট্রোলিয়াম বা খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার ও 2. নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংস।বায়ুতে কার্বন ডাইঅক্সাইড বৃদ্ধির দুটি কারণ উল্লেখ করো।

যানবাহনের পরিত্যক্ত ধোঁয়া কীভাবে বায়ুদূষণ ঘটায়?

যানবাহনের পরিত্যক্ত ধোঁয়াতে প্রচুর পরিমাণে কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ প্রভৃতি থাকে। এই উপাদানগুলিই বায়ুদূষণ ঘটায়। মোট বায়ুদূষণের প্রায় 40 শতাংশ যানবাহনের ধোঁয়া থেকে ঘটে।

পরিবেশে মিথেনের পরিমাণ কীভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে?

জৈব পদার্থের দহন, জলাভূমিতে জৈব পদার্থের পচন, খনি থেকে কয়লা উত্তোলন প্রভৃতির ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাইস গ্যাস, মিথেনের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শিল্প, কলকারখানা, যানবাহন ইত্যাদি থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া পরিশোধন করতে ব্যবহৃত দুটি যন্ত্রের নাম লেখো।

শিল্প, কলকারখানা, যানবাহন ইত্যাদি থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া পরিশোধনে ব্যবহৃত হয় এমন দুটি যন্ত্রের নাম হল — ইলেকট্রোস্ট্যাটিক প্রেসিপিটেটর ও ক্যাটালাইটিক কনভার্টার।

অ্যারোসল কী?

আমাদের চারপাশের বাতাসে বিভিন্ন ধরনের কঠিন অথবা জলীয় পদার্থের সূক্ষ্ম কণিকা কোলয়েড-রূপে ভাসমান অবস্থায় থাকে। এদের অ্যারোসল বলে। এদের ব্যাস 1 মাইক্রনের কম হয়। যেমন — ধুলো, ধোঁয়া, কুয়াশা ও বাষ্প।

ধোঁয়াশা কী?

বাতাসে নাইট্রোজেনের অক্সাইড এবং হাইড্রোকার্বনের সাথে সূর্যরশ্মির আলোকরাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটলে যে ধোঁয়াটে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে ধোঁয়াশা (smog) বলে। ধোঁয়াশা হল ধোঁয়া এবং কুয়াশার সংমিশ্রণ।

জলদূষণ কাকে বলে?

প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট কারণে জলে অবাঞ্ছিত, দূষিত বা বিষাক্ত পদার্থ মেশার ফলে জলের বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে এবং তার ফলস্বরূপ সেটি মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর পানের অযোগ্য ও জলজ জীবের বসবাসের অযোগ্য হলে, তাকে জলদূষণ বলে।

জলদূষণ কত প্রকারের হয়?

জলদূষণ প্রধানত পাঁচ প্রকারের হয়, যথা — 1. ভূনিম্নস্থ জলদূষণ, 2. সমুদ্রের জলদূষণ, 3. নদীর জলদূষণ, 4. হ্রদের জলদূষণ এবং 5. পুকুরের ও অন্যান্য জলাশয়ের জলদূষণ।

জলদূষণের দুটি কারণ লেখো।

জল দূষণের দুটি কারণ হল — 1. কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য – কৃষি- জমি থেকে সেচের জল, বৃষ্টির জল বা তুষারপাতের জলের সঙ্গে দূষকের নির্গমনকে কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য বলে। পেস্টনাশক, সার, কঠিন বর্জ্য হল এর ক্ষতিকর উপাদান। 2. জলজ জীবাণু – মূলত পানীয় জলে কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় রোগসৃষ্টিকারী জীবাণু সংক্রমিত হলে জলদূষণ ঘটে।

ইউট্রোফিকেশন কাকে বলে?

জলদূষণজনিত কারণে জলাশয়ে অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদান সৃষ্টির মাধ্যমে প্ল্যাঙ্কটনের সংখ্যার অত্যধিক বৃদ্ধি ঘটে, যার ফলে জলের গুণমানের ঘাটতি দেখা যায়, একে ইউট্রোফিকেশন বলে।ইউট্রোফিকেশন কাকে বলে

জীববিবর্ধন কাকে বলে?

যে পদ্ধতিতে পরিবর্তনহীন বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে এবং প্রতিটি খাদ্যস্তরের অন্তর্ভুক্ত জীবদেহে এর ঘনত্বের পরিমাণ পর্যায়ক্রমে বহুগুণ বৃদ্ধি পায়, তাকে জীববিবর্ধন বলে। একে বায়োম্যাগনিফিকেশন-ও বলা হয়।

কলেরা রোগ সংক্রমণ কীভাবে ঘটে?

পানীয় ও ভৌমজলে কলেরার জীবাণু সংক্রমিত হলে কলেরা রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগে ডায়েরিয়া ও পাতলা পায়খানা হয় এবং রোগির দেহ জলশূণ্য হয়ে পড়ে।

টাইফয়েড রোগ সংক্রমণ পদ্ধতি ও এর রোগ লক্ষণ কী কী?

সংক্রমণ পদ্ধতি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগির মল ও বমি থেকে পানীয় জলে সালমোনেল্লা টাইফির জীবাণু মিশে গেলে রোগটি পানীয় জলের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
রোগলক্ষণ এই রোগে তীব্র জ্বর, মাথা ও পেটে ব্যথা হয়।

ইউট্রোফিকেশনে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন হ্রাস পায় কেন?

জলে অতিরিক্ত শৈবালের বৃদ্ধির ফলে তাদের বিয়োজনের মাত্রাও বৃদ্ধি পায় বলে জলের সমস্ত অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়ে যায়। ব্যাকটেরিয়া জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন ব্যবহার করে মৃত শৈবালের বিয়োজন বা ডিকম্পোজিশন ঘটায়। ফলে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন মাত্রা হ্রাস পায়।

ইউট্রোফিক জলাশয়ের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

ইউট্রোফিক জলাশয়ের দুটি বৈশিষ্ট্য হল — 1. জলে শৈবালের অতিরিক্ত বৃদ্ধি ঘটে আলগাল ব্লুম সৃষ্টি হয় ও জলাশয়ের বর্ণ সবুজ হয়ে যায়। 2. জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন মাত্রা হ্রাস পায়।

জলের ভৌতদূষণ বলতে কী বোঝ?

বিভিন্ন প্রকার দূষিত বর্জ্য পদার্থ জলে মিশলে জলের ভৌত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ জলের বর্ণ অস্বচ্ছ হয়ে যায় ও তাতে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় ও বিস্বাদ হয়ে পড়ে ও জল ব্যবহারের অযোগ্য হয়। একে জলের ভৌতদূষণ বলে।

মাটির পারমাণবিক দূষণ কীভাবে ঘটে?

পারমাণবিক বিস্ফোরণ ও পারমাণবিক চুল্লী থেকে নির্গত বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় উপজাত দ্রব্যের ফলে মাটির দূষণ ঘটে। তেজস্ক্রিয় উপজাত দ্রব্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রেডিয়াম- 106, প্রোমেথিয়াম-144

জৈব অক্সিজেন চাহিদা বা BOD বলতে কী বোঝ?

কাগজ শিল্প, খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ শিল্প, চর্মশিল্প প্রভৃতির উপজাত দ্রব্য ও গৃহস্থালির উপজাত দ্রব্যে প্রচুর পরিমাণে জৈব পদার্থ থাকে। এগুলি জলে মিশে বিভিন্ন অণুজীবের সংখ্যার অত্যধিক বৃদ্ধি ঘটায়। এতে জলে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পায়। এর ফলস্বরূপ জলে অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এই ঘটনাকে জৈব অক্সিজেন চাহিদা বা BOD (biological oxygen demand) বলে।

মাটিদূষণ বা স্থলদূষণ কাকে বলে?

প্লাস্টিক, পলিথিন, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, আগাছানাশক, দৈনন্দিন আবর্জনা, কলকারখানার বর্জ্য পদার্থের অবিয়োজিত বা অর্ধবিয়োজিত অংশ ইত্যাদি মিশলে মাটির গুণাবলি এবং পুষ্টিমূল্য নষ্ট হয়, যার ফলে মানুষ ও পরিবেশের ক্ষতি হয়, তাকে মাটিদূষণ বা স্থলদূষণ বলে।

মাটিদূষণের প্রধান কারণগুলি কী?

মাটিদূষণের প্রধান কারণ হল — 1. জীবাণু – পৌরবর্জ্য, হাসপাতালের বর্জ্য, পশুপালনজাত বর্জ্যতে অবস্থিত জীবাণুগুলি প্রত্যক্ষভাবে বা ভেক্টর বা বাহক দ্বারা মানবদেহে রোগ সংক্রমণ ঘটায়। 2. রাসায়নিক – রাসায়নিক সার, পেস্টনাশক ও শিল্পজাত রাসায়নিক দ্বারা মাটিদূষণ ঘটে থাকে।

কোন্ ধরনের কীটনাশক অধিকমাত্রায় মৃত্তিকা দূষণ ঘটায়?

ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বন-জাতীয় কীটনাশক, যেমন — DDT, BHC, অ্যালড্রিন প্রভৃতি অধিকমাত্রায় মৃত্তিকাদূষণ ঘটায়।
কোন্ ধরনের কীটনাশক অধিকমাত্রায় মৃত্তিকা দূষণ ঘটায়

জৈবসঞ্চয়ন কাকে বলে?

যে পদ্ধতিতে দূষক উপাদানগুলি জীবদেহ থেকে রেচনের মাধ্যমে নির্গত না হয়ে দেহে সঞ্চিত হয়, তাকে জৈবসঞ্চয়ন বলে।

ফ্লাই অ্যাশ কী?

বিভিন্ন কলকারখানা, বিশেষ করে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে ধোঁয়ার সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে যে পোড়া কয়লার ছাই ও কয়লার গুঁড়ো বের হয়, তাকে ফ্লাই অ্যাশ বলে।

ফ্লাই অ্যাশ কী উপায়ে মাটির দূষণ ঘটায়?

ফ্লাই অ্যাশ মাটির ওপর একটি আস্তরণ তৈরি করে যার মাধ্যমে জমির উর্বরতা হ্রাস করে এবং মাটির দূষণ ঘটায়।

কোন্ কোন্ ধাতু বেশি পরিমাণে মৃত্তিকাদূষণ ঘটায়?

বিভিন্ন ধাতব শিল্প থেকে সিসা, তামা, দস্তা, পারদ, নিকেল, ক্রোমিয়াম প্রভৃতি ধাতু নির্গত হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে ধাতুজনিত মৃত্তিকাদূষণ ঘটায়।

কীটনাশক দ্রব্যের মাধ্যমে কোন্ কোন্ ধাতু মৃত্তিকাদূষণ ঘটায়?

বিভিন্ন কীটনাশক দ্রব্যে তামা, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম ও পারদ যৌগরূপে উপস্থিত থাকে। সেগুলির প্রয়োগে মাটিতে ধাতুজনিত দূষণের সৃষ্টি হয়।

মাটিদূষণের ফলাফল কী?

মাটিদূষণের  ফলে — 1. টিটেনাস, গ্যাস-গ্যাংগ্রিন, অ্যাসপারজিলোসিস প্রভৃতি রোগ দেখা যায়। 2. খাদ্যশৃঙ্খল বরাবর ক্রমক্ষয়হীন দূষকগুলি ক্রমশ উপপুষ্টিস্তরে সঞ্চিত হয় এবং বিষক্রিয়া ঘটিয়ে থাকে।মাটিদূষণের ফলাফল কী

পুনঃচক্র (recycle) বলতে কী বোঝ?

যে পদ্ধতিতে বর্জ্য পদার্থকে গলিয়ে বা ভেঙে সেটির পুনর্নির্মাণ করে আবার ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়, তাকে পুনঃচক্র বলে।

শব্দদূষণ বলতে কী বোঝ?

উচ্চ প্রাবল্য ও উচ্চ তীব্রতা সহনসীমার ঊর্ধ্বের সুরবর্জিত কর্কশ যে শব্দ মানবদেহে ক্ষতিকর ও অবাঞ্ছনীয় পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে, তাকে শব্দদূষণ বলে। যেমন — বাজির শব্দ, মাইক্রোফোনের উচ্চ শব্দ, যানবাহনজাত তীব্র শব্দ ইত্যাদি।

শ্রবণযোগ্য বা শ্রুতিগোচর শব্দ কাকে বলে?

যেসব শব্দতরঙ্গের কম্পাঙ্ক 20 Hz থেকে 20,000 Hz- এর মধ্যে হয়, তাদের শ্রুতিগোচর শব্দ বলে। 20 Hz-এর কম এবং 20,000 Hz-এর বেশি কম্পাঙ্কের শব্দ আমাদের শ্রবণেন্দ্রিয় গ্রহণ করতে অক্ষম।

বেল এবং ডেসিবেল কী?

বেল এবং ডেসিবেল হল শব্দের প্রাবল্য নির্দেশক একক। শব্দের প্রাবল্য বোঝাতে বেল (Bel) এবং সাধারণভাবে এর এক দশমাংশ, ডেসিবেল (dB) ব্যবহার করা হয়।
বেল এবং ডেসিবেল কী

শ্রবণেন্দ্রিয়ের অবসাদ বলতে কী বোঝ?

90 ডেসিবেলের বেশি মাত্রায় শব্দ আমাদের কানে এসে পৌঁছলে সেটি শ্রবণ অঙ্গকে সাময়িকভাবে অকেজো করে তোলে এবং মানসিক অবসাদে ভোগে। এই ঘটনাকে শ্রবণেন্দ্রিয়ের অবসাদ বলা হয়।

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ যানবাহনজনিত শব্দদূষণের মাত্রা কত নির্ধারণ করেছে?

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ যানবাহনজনিত শব্দদূষণের মাত্রা 70 dB নির্ধারণ করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বহু শহরে যানবাহনজনিত শব্দদূষণের মাত্রা এর থেকে অনেক বেশি।

PM 10 ও PM 2.5 বলতে কী বোঝ?

PM10 বাতাসে ভাসমান যে কণাদূষকের ব্যাস 10μm- এর কম হয়, তা তাদের PM10 বলে। যেমন — ধূলিকণা অ্যাসবেস্টস কণা প্রভৃতি।
PM2.5 বাতাসে ভাসমান যে কণাদূষকের ব্যাস 2.5m এর কম, তাদের PM 2.5μmবলে। যেমন — ডিজেল পারটিকুলেট ম্যাটার (DPM)।

PM 10 3 PM 2.5-এর ক্ষতিকর প্রভাব কী কী?

PM10-এর ক্ষতিকর প্রভাব এই কণাগুলি কাশি, গলাজ্বালা, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা সৃষ্টি করে।
PM2.5-এর ক্ষতিকর প্রভাব এই কণাগুলি আকারে ক্ষুদ্র বলে ফুসফুসে অ্যালভিওলাই-স্তর পর্যন্ত পৌঁছে যায়, ফলে তা PM10-থেকে অধিক ক্ষতিসাধন করে। এগুলি রক্তবাহ রোগ, ক্যানসার, হাঁপানি সৃষ্টি করে।

মাস্কিং প্রভাব কাকে বলে?

শব্দদূষণের ফলে সৃষ্ট সুরবর্জিত শব্দের উপস্থিতিতে অন্যান্য প্রয়োজনীয় শব্দের শ্রবণে বাধার সৃষ্টি হয়। একে মাস্কিং প্রভাব (masking effect) বলে।

আরো পড়ুন, মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – পরিবেশ তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ – পরিবেশদূষন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

পরিবেশ ও তার সম্পদ সংরক্ষণের পর এবং পরিবেশদূষণ নির্বাচনের মাধ্যমে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রায়োগিক জ্ঞান নির্মাণ করেছে। পরিবেশ সংরক্ষণ ও পরিবেশদূষণ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রাকৃতিক সম্পদগুলির অবলম্বনে সঠিক প্রবণতা ও সচেতনতা উত্পন্ন করতে পারে। এছাড়াও, পরিবেশদূষণ এবং তার প্রতিটি প্রভাবের পরিচিতি করে শিক্ষার্থীরা একটি পরিসংখ্যানিক মনোযোগ ও সামরিক পরিকল্পনা উত্পন্ন করতে পারে। তাদের বিচারশক্তি ও বিজ্ঞানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরিবেশ ও সম্পদ সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগী হতে পারে এবং পরিবেশদূষণ নিয়ে বিভিন্ন উপায়ে প্রতিষ্ঠিত পরিবেশ রক্ষার কর্মসূচির অংশীদার হতে পারে।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer