মুন্ডা বিদ্রোহ সম্পর্কে টীকা লেখো

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “মুন্ডা বিদ্রোহ – টীকা লেখো। নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “মুন্ডা বিদ্রোহ – টীকা লেখো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

মুন্ডা বিদ্রোহ - টীকা লেখো।

মুন্ডা বিদ্রোহ – টীকা লেখো।

কোম্পানির অপশাসন ও অর্থনৈতিক নীতির বিরুদ্ধে ভারতের বুকে যে অসংখ্য কৃষক-উপজাতি বিদ্রোহ সংঘঠিত হয়, মুন্ডা বিদ্রোহ ছিল সেগুলির মধ্যে অন্যতম।

মুন্ডা বিদ্রোহ - টীকা লেখো।

পরিচিতি –

ভারতের প্রাচীনতম আদিবাসী মুন্ডারা সাঁওতাল, কোল, ভূমিজ, হো প্রভৃতি বিভিন্ন উপ-সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল। ছোটোনাগপুর ও সন্নিহিত অরণ্য-অধ্যুষিত অঞ্চলে ছিল তাদের বসবাস।

বিদ্রোহের কারণ –

ইংরেজ-সৃষ্ট নব্য ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থায় মুন্ডাদের চিরাচরিত ‘খুঁৎকাঠি’ প্রথা বা জমির যৌথ মালিকানা ব্যবস্থায় ভাঙন ধরে। তাছাড়া ছোটোনাগপুর অঞ্চলে বহিরাগত ঠিকাদার, জমিদার, মহাজনদের আগমন এবং মুন্ডাদের চিরাচরিত সমাজব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ, তাদের বেগার শ্রমদানে বাধ্য করা, বলপূর্বক ধর্মান্তরকরণ প্রভৃতি মুন্ডাদের শেষপর্যন্ত বিদ্রোহের পথে চালিত করে।

বিদ্রোহের সূচনা ও প্রসার –

1899 খ্রিস্টাব্দে বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে বিদ্রোহের সূচনা হয়। অচিরেই রাঁচি, চক্রধরপুর প্রভৃতি অঞ্চলে বিদ্রোহের বিপুল বিস্তার ঘটে। সরকারি অফিস, থানা, জমিদারবাড়ির উপর আক্রমণ চলতে থাকে। প্রায় ছয় হাজার মুন্ডাকে নিয়ে বিরসা এক সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন।

অবসান –

বিপুল সম্ভাবনা জাগিয়ে শুরু হলেও শেষপর্যন্ত ব্রিটিশের চণ্ডনীতি এবং আধুনিক সমরাস্ত্রের অভাব বিদ্রোহী মুন্ডাদের পরাজয়কে সুনিশ্চিত করে তোলে। 1900 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বিদ্রোহের বেদনার্ত পরিসমাপ্তি ঘটে।

গুরুত্ব –

ব্যর্থতা সত্ত্বেও এই বিদ্রোহের প্রভাব ছিল সুদূর প্রসারী –

  • 1908 খ্রিস্টাব্দে ‘ছোটোনাগপুর প্রজাসত্ত্ব আইন’ পাস করে মুন্ডাদের ‘খুঁৎকাঠি প্রথা’ ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ ও বেগার খাটানোর প্রথা নিষিদ্ধ হয়।
  • এই বিদ্রোহের মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীন মুন্ডারাজ্য প্রতিষ্ঠা। ব্যর্থ হলেও এই বিদ্রোহ মুন্ডাদের রাজনৈতিক চেতনা জাগ্রত করতে সমর্থ হয়।
  • ব্যর্থতা সত্ত্বেও বিরসা মুন্ডা অনুগামীদের মধ্যে প্রশ্নাতীত আনুগত্য অর্জন করেন। তিনি ‘বিরসা ভগবান’ রূপে পূজিত হতে থাকেন।

মন্তব্য –

মুন্ডাদের আত্মত্যাগ, স্বাধীনতাস্পৃহা এবং মরণ-পণ সংগ্রাম ইতিহাসের এক উজ্জ্বল ইতিবৃত্ত।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

মুন্ডা বিদ্রোহ কী?

মুন্ডা বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ শাসন ও তাদের অর্থনৈতিক নীতির বিরুদ্ধে ছোটোনাগপুর অঞ্চলের মুন্ডা আদিবাসীদের সংগঠিত একটি বিদ্রোহ (1899-1900)। এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিরসা মুন্ডা।

মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান কারণ কী ছিল?

মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি হল –
1. ব্রিটিশ ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থায় মুন্ডাদের ঐতিহ্যবাহী ‘খুঁৎকাঠি প্রথা’ (যৌথ জমি মালিকানা) বিলুপ্ত করা।
2. বহিরাগত জমিদার, মহাজন ও ঠিকাদারদের শোষণ।
3. মুন্ডাদের জমি থেকে উচ্ছেদ ও জোরপূর্বক বেগার শ্রম দিতে বাধ্য করা।
4. ধর্মীয় ও সামাজিক হস্তক্ষেপ, বিশেষত খ্রিস্টান মিশনারিদের দ্বারা জোরপূর্বক ধর্মান্তর।

বিরসা মুন্ডা কে ছিলেন?

বিরসা মুন্ডা ছিলেন মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান নেতা। তিনি ‘বিরসা ভগবান’ নামে পূজিত হতেন এবং মুন্ডাদের ঐক্যবদ্ধ করে ব্রিটিশ ও জমিদারদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন।

মুন্ডা বিদ্রোহের ফলাফল কী ছিল?

মুন্ডা বিদ্রোহের ফলাফলগুলি হল –
1. বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও ব্রিটিশ সরকার 1908 সালে ‘ছোটোনাগপুর প্রজাসত্ত্ব আইন’ পাস করে মুন্ডাদের জমির অধিকার ফিরিয়ে দেয়।
2. বেগার প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়।
3. মুন্ডাদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।

মুন্ডা বিদ্রোহের গুরুত্ব কী?

মুন্ডা বিদ্রোহের গুরুত্বগুলি হল –
1. এটি আদিবাসী অধিকার রক্ষার প্রথম সংগঠিত আন্দোলনগুলির মধ্যে একটি।
2. বিরসা মুন্ডা পরবর্তীকালে আদিবাসী সমাজে এক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।
3. এই বিদ্রোহ পরবর্তীতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে আদিবাসী অংশগ্রহণকে অনুপ্রাণিত করে।

মুন্ডা বিদ্রোহ কোথায় সংঘটিত হয়েছিল?

মূলত ছোটোনাগপুর অঞ্চলে (বর্তমান ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও ছত্তিশগড়ের কিছু অংশ) রাঁচি, চক্রধরপুর প্রভৃতি এলাকায় এই বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে।

মুন্ডা বিদ্রোহের ঐতিহাসিক মূল্যায়ন কী?

এটি শুধু একটি আদিবাসী বিদ্রোহই নয়, বরং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে মুন্ডাদের সংঘর্ষ ভারতের উপজাতি সমাজের আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনচেতা মনোভাবকে তুলে ধরে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “মুন্ডা বিদ্রোহ – টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “মুন্ডা বিদ্রোহ – টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

রাশিবিজ্ঞান-গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান-কষে দেখি 26.4-মাধ্যমিক গণিত

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.4

রাশিবিজ্ঞান-গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান-কষে দেখি 26.3-মাধ্যমিক গণিত

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.3

রাশিবিজ্ঞান-গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান - কষে দেখি 26.2-মাধ্যমিক গণিত

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.2

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik Life Science Suggestion 2026 – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – স্তম্ভ মেলাও

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – সত্য মিথ্যা

Madhyamik Life Science Suggestion 2026 – শূন্যস্থান পূরণ

Madhyamik Life Science MCQ Suggestion 2026