নীল বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত সমাজের মনোভাব কীরূপ ছিল?

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নীল বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত সমাজের মনোভাব কীরূপ ছিল? নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “নীল বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত সমাজের মনোভাব কীরূপ ছিল?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

নীল বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত সমাজের মনোভাব কীরূপ ছিল?

নীল বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত সমাজের মনোভাব কীরূপ ছিল?

নীল বিদ্রোহ মূলত কৃষক বিদ্রোহ হলেও কলকাতার শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজের মধ্যে তা প্রবল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।

পত্র-পত্রিকায় প্রতিবাদ –

নীলচাষিদের প্রতি নীলকরদের অবর্ণনীয় নির্যাতনের প্রতিকারের উদ্দেশ্যে দেশের শিক্ষিত সমাজ এগিয়ে আসে। নীলকরদের অত্যাচারের কথা সর্বপ্রথম 1822 খ্রিস্টাব্দে ‘সমাচার চন্দ্রিকা’য় প্রকাশিত হয়। 1849 খ্রিস্টাব্দে অক্ষয়কুমার দত্ত তাঁর ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকায় এই বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেন। পরবর্তীকালে গিরিশচন্দ্র ঘোষ, শিশিরকুমার ঘোষ, দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ প্রমুখ নীলচাষিদের সমর্থনে নিয়মিত সংবাদ প্রকাশ করেন। এই প্রসঙ্গে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ এর কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়, যা নীলচাষিদের মুখপত্রে পরিণত হয়েছিল।

রঙ্গমঞ্চে প্রতিবাদ –

বাঙালির রঙ্গমঞ্চেও সেদিন লেগেছিল প্রতিবাদের সুর। নীলচাষিদের উপর নীলকর সাহেবদের অকথ্য অত্যাচার তথা নীল বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে কোম্পানির কর্মচারী দীনবন্ধু মিত্র রচনা করেন ‘নীলদর্পন’।

নীলচাষিদের করুণ কাহিনি শ্বেতাঙ্গ সমাজের কাছে তুলে ধরতে মাইকেল মধুসূদন গোপনে এর ইংরেজি অনুবাদ করেন এবং ভারত প্রেমিক খ্রিস্টান পাদ্রী জেমস লঙ্ তা নিজের নামে প্রকাশ করে শ্বেতাঙ্গ সমাজের কাছে নীলচাষিদের অশ্রুসজল কাহিনি তুলে ধরেন। কিন্তু স্বার্থবিরোধী হওয়ায় নীলকররা লঙ্ সাহেবের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করে। মামলায় লঙ্ সাহেবের একমাসের কারাদণ্ড ও হাজার টাকা জরিমানা হয়।

মন্তব্য –

নীলবিদ্রোহেই সর্বপ্রথম বাংলার গ্রামীণ সমাজের সাথে শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণির আত্মিক যোগাযোগ স্থাপিত হয়। বস্তুতপক্ষে অনেকক্ষেত্রেই তারা আন্দোলনে পরোক্ষ নেতৃত্ব দেন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

নীল বিদ্রোহ কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

নীল বিদ্রোহ (1859-1860) ছিল বাংলার কৃষকদের নীলকর ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে একটি বড় আন্দোলন। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি ছিল ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে প্রথম সংগঠিত কৃষক বিদ্রোহ এবং শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজের সমর্থন পেয়েছিল।

নীল বিদ্রোহে শিক্ষিত সমাজের ভূমিকা কী ছিল?

শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজ নীলচাষীদের পক্ষে সোচ্চার হয়েছিলেন। তারা পত্রিকা, নাটক ও জনমত গঠনের মাধ্যমে নীলকরদের অত্যাচারের কথা প্রকাশ করে ব্রিটিশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।

কোন পত্রিকাগুলো নীল বিদ্রোহের সমর্থনে লেখালেখি করেছিল?

যে পত্রিকাগুলো নীল বিদ্রোহের সমর্থনে লেখালেখি সেগুলি হল –
1. সমাচার চন্দ্রিকা (1822 সালে প্রথম নীলকরদের অত্যাচারের খবর প্রকাশ করে)।
2. তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা (অক্ষয়কুমার দত্ত নীলচাষীদের অবস্থা নিয়ে লেখেন)।
3. হিন্দু প্যাট্রিয়ট (হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় এটি নীলচাষীদের মুখপত্রে পরিণত হয়)।

নীলদর্পণ নাটকের ভূমিকা কী ছিল?

দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকে নীলকরদের অত্যাচারের চিত্র ফুটে উঠেছিল। মাইকেল মধুসূদন দত্ত এটির ইংরেজি অনুবাদ করেন, যা পাদ্রী জেমস লং প্রকাশ করেছিলেন। এর ফলে নীলকররা লং -এর বিরুদ্ধে মামলা করে, কিন্তু নীলচাষীদের দুর্দশা আন্তর্জাতিক স্তরে আলোচিত হয়।

জেমস লং -এর ভূমিকা কী ছিল?

জেমস লং নীলদর্পণ -এর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করে নীলকরদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন। এর ফলে তাঁকে জরিমানা ও কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়, কিন্তু নীল বিদ্রোহের পক্ষে বিশ্বজনমত তৈরি হয়।

নীল বিদ্রোহের ফলাফল কী ছিল?

নীল বিদ্রোহের ফলাফলগুলি হল –
1. নীল কমিশন গঠন (1860)।
2. নীলচাষীদের কিছু অধিকার দেওয়া হয়।
3. বাংলার গ্রামীণ ও শহুরে সমাজের মধ্যে ঐক্য গড়ে ওঠে।

নীল বিদ্রোহ কেন বাংলার ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ?

এটি ছিল প্রথমবারের মতো যখন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি কৃষকদের পক্ষে সরব হয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে জাতীয় আন্দোলনের ভিত্তি তৈরি করে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নীল বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত সমাজের মনোভাব কীরূপ ছিল?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “নীল বিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত সমাজের মনোভাব কীরূপ ছিল?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

বীণা দাস বিখ্যাত কেন? বীনা দাস সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

বীণা দাস বিখ্যাত কেন? বীনা দাস সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

রশিদ আলি দিবস কেন পালিত হয়েছিল? রশিদ আলি দিবস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

রশিদ আলি দিবস কেন পালিত হয়? রশিদ আলি দিবস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

বীণা দাস বিখ্যাত কেন? বীনা দাস সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

রশিদ আলি দিবস কেন পালিত হয়? রশিদ আলি দিবস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

জৈব ভঙ্গুর ও জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য কাকে বলে? জৈব ভঙ্গুর ও জৈব অভঙ্গুর বর্জ্যের মধ্যে পার্থক্য

বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

বিষাক্ত বর্জ্য ও বিষহীন বর্জ্য কাকে বলে? বিষাক্ত বর্জ্য ও বিষহীন বর্জ্যের মধ্যে পার্থক্য