রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন?

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন?
Contents Show

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন মূলত একজন কবি, কিন্তু মানবজীবনের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে রবীন্দ্র প্রতিভার ছোঁয়া লাগেনি। শিক্ষা সম্পর্কেও রবীন্দ্রনাথের ছিল স্বতন্ত্র চিন্তাভাবনা। ঔপনিবেশিক শিক্ষার এক বলিষ্ঠ বিকল্প হিসেবে কবিগুরু বৈদিক শিক্ষাচিন্তার আদর্শ তুলে ধরেছেন।

ঔপনিবেশিক শিক্ষা-ব্যবস্থার সমালোচনা

ঔপনিবেশিক শিক্ষা-ব্যবস্থার পদ্ধতিগত ত্রুটি –

স্কুল জীবনে শিক্ষক মহাশয়দের শিক্ষাদান পদ্ধতি কবিগুরুর মনঃপূত ছিল না। তাঁর মতে বিদ্যালয় কারখানার মতো। শিক্ষার্থীরা যন্ত্র, যন্ত্রাংশ এবং শিক্ষকগণ এই কারখানার অংশ। সকাল 10 টা 30 মিনিটে ঘণ্টা পড়ার মধ্য দিয়ে এই কারখানা খোলে, আবার বিকাল 4-টের ঘণ্টা পড়ার মধ্য দিয়ে এই কারখানা বন্ধ হয়ে যায়।

ঔপনিবেশিক শিক্ষা-ব্যবস্থার মুক্ত চিন্তার পরিপন্থী –

পাশ্চাত্যের ‘কেরানি ‘তৈরির শিক্ষা’ কবিগুরুর মনঃপূত হয়নি। ‘তোতাকাহিনী’ শীর্ষক একটি ছোটোগল্পে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে নীরস ও যান্ত্রিক পড়াশোনার ভারে তোতাপাখির (অর্থাৎ ছাত্রের) করুণ অপমৃত্যু ঘটছে। চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তিনি একটি ‘খোপওয়ালা বড়োবাক্স’ বলে অভিহিত করেছেন।

ঔপনিবেশিক শিক্ষা-ব্যবস্থার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অবহেলিত –

রবীন্দ্র রচনাবলির 14 নং খণ্ডে শিক্ষার সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন – “আমরা ইংরেজি বিদ্যালয়ে পড়েই চলেছি, যেখানে আদর্শ সকল দৃশ্যমান। এই শিক্ষা দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে অবহেলা করেই চলেছে।”

ঔপনিবেশিক শিক্ষা-ব্যবস্থার মন্তব্য-

শিক্ষা-দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ঔপনিবেশিক শিক্ষা-ব্যবস্থার কঠোর সমালোচক ছিলেন। রবীন্দ্র-শিক্ষানীতিতে প্রকৃতির কোলে শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশের কথা বলা হয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষার কেরানি গড়ার কল ভেঙে সজীব মানুষ গড়তে 1901 খ্রিস্টাব্দে তিনি বোলপুর-সন্নিকটস্থ ভুবনডাঙার মাঠে গড়ে তোলেন সজীব মানুষ গড়ার আধুনিক তপোবন-ব্রহ্মচর্যাশ্রম। 1921 খ্রিস্টাব্দে কবি একে মহাবিদ্যালয়ে পরিণত করেন, নাম দেন ‘বিশ্বভারতী’।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেন ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছিলেন?

রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল যান্ত্রিক, মুক্তচিন্তার বিরোধী এবং ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন। এটি কেরানি তৈরি করার জন্য ডিজাইন করা একটি ব্যবস্থা যা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও স্বাধীন চিন্তাকে দমন করে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে স্কুল কীসের সাথে তুলনীয়?

তিনি স্কুলকে একটি কারখানার সাথে তুলনা করেছেন যেখানে শিক্ষার্থীরা যন্ত্র, শিক্ষকরা যন্ত্রাংশ এবং প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে এই কারখানা চালু ও বন্ধ হয়।

‘তোতাকাহিনী’ গল্পটি কী বোঝায়?

‘তোতাকাহিনী’ গল্পটির মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছেন কীভাবে যান্ত্রিক ও নীরস পড়াশোনার চাপে ছাত্রদের (তোতাপাখির প্রতীকী রূপে) সৃজনশীলতা ও জীবনীশক্তি নষ্ট হয়ে যায়।

রবীন্দ্রনাথের মতে ঔপনিবেশিক শিক্ষার প্রধান ত্রুটি কী ছিল?

রবীন্দ্রনাথের মতে ঔপনিবেশিক শিক্ষার প্রধান ত্রুটিগুলো ছিল –
1. ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতি অবহেলা।
2. প্রকৃতি ও মুক্ত পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্নতা।
3. সৃজনশীলতার পরিবর্তে মুখস্থবিদ্যার উপর জোর।
4. ব্যক্তিত্বের সার্বিক বিকাশের অভাব।

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা দর্শনের বিকল্প কী ছিল?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রস্তাব করেছিলেন –
1. প্রকৃতির কোলে মুক্ত পরিবেশে শিক্ষা।
2. ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে সংযুক্ত শিক্ষা।
3. হাতে-কলমে ও জীবনমুখী শিক্ষা।
4. শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশ।

বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার পিছনে রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশ্য কী ছিল?

1901 সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রহ্মচর্যাশ্রম (পরবর্তীতে বিশ্বভারতী) ছিল ঔপনিবেশিক শিক্ষার বিকল্প – একটি এমন শিক্ষাকেন্দ্র যেখানে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সমন্বয়ে, প্রকৃতির মধ্যে মুক্তভাবে শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ সম্ভব হবে।

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা চিন্তা আজকের প্রেক্ষাপটে কতটা প্রাসঙ্গিক?

আজও তাঁর চিন্তা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, বিশেষত যখন –
1. শিক্ষা ব্যবস্থা হয়ে পড়েছে পরীক্ষাকেন্দ্রিক।
2. সৃজনশীলতা ও সমালোচনামূলক চিন্তা উপেক্ষিত।
3. প্রকৃতি ও মানবিক মূল্যবোধ থেকে শিক্ষা বিচ্ছিন্ন।
4. স্থানীয় সংস্কৃতি ও বিশ্বদর্শনের মধ্যে ভারসাম্যের অভাব।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায় “বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল? বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজের সীমাবদ্ধতা কী?

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারী সমাজের অংশগ্রহণ ও সীমাবদ্ধতা লেখো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে বাংলার ছাত্র সমাজ কীরূপ ভূমিকা পালন করেছিল?

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে বাংলার ছাত্র সমাজ কীরূপ ভূমিকা পালন করেছিল?

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে নারী সমাজের অংশগ্রহণ ও সীমাবদ্ধতা লেখো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে বাংলার ছাত্র সমাজ কীরূপ ভূমিকা পালন করেছিল?

পরিবেশের ওপর বর্জ্য পদার্থের প্রভাব লেখো।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি সম্পর্কে টীকা লেখো।