ভারতের প্রকৃতিক পরিবেশ – ভারতের ভূপ্রকৃতি – রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

Rahul

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে আলোচনা করবো ভারতের প্রকৃতিক পরিবেশ – ভারতের ভূপ্রকৃতি – রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন নিয়ে। এই প্রশ্নগুলি দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় ভারতের ভূপ্রকৃতির প্রশ্ন ও উত্তর।

Table of Contents

চিত্রসহ হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টির কারণ আলোচনা করো।

হিমালয় পর্বতমালা সৃষ্টির কারণ-

হিমালয় বর্তমালার উৎপত্তি বা সৃষ্টির কারণ দুইভাবে ব্যাখ্যা করা যায় —

  • মহীখাত বা জিওসিনক্লাইন তত্ত্ব অনুসারে এবং
  • পাত-গাঠনিক বা প্লেট টেকটনিক তত্ত্ব অনুসারে।

মহীখাত বা জিওসিনক্লাইন তত্ত্ব অনুসারে

  • এখন যেখানে হিমালয়ের অবস্থান, প্রায় 6.5-7 কোটি বছর আগে সেখানে একটি অগভীর সাগর বা মহীখাত (geosyncline) ছিল, যার নাম টেথিস সাগর বা টেথিস জিওসিনক্লাইন।
  • টেথিস সাগরের উত্তরে আঙ্গারাল্যান্ড এবং দক্ষিণে গন্ডোয়ানাল্যান্ড নামে দুটি প্রাচীন ভূভাগ অবস্থিত ছিল।
  • এই ভূভাগ দুটিতে প্রবাহিত অসংখ্য নদনদী বাহিত পলি দ্বারা টেথিস সাগর ক্রমশ ভরাট হয়ে যায়।
  • টার্শিয়ারি যুগে ভূ-আন্দোলনের ফলে ওই ভূভাগ দুটি পরস্পরের কাছাকাছি আসতে থাকলে টেথিস সাগরে সঞ্চিত প্রস্তরীভূত পাললিক শিলাস্তরে প্রচণ্ড পার্শ্বচাপ পড়ে। এর ফলে ওই শিলাস্তরে ভাঁজের সৃষ্টি হয় ও তা ধীরে ধীরে ওপরে উঠে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালা হিমালয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
মহীখাত তত্ব অনুসারে হিমালয় পর্বতের উৎপত্তি

পাত-গাঠনিক বা প্লেট টেকটনিক তত্ত্ব অনুসারে –

  • পর্বত গঠন সম্পর্কিত সর্বাধুনিক এই তত্ত্ব অনুসারে ভূত্বক কতকগুলি চলমান পাত বা প্লেটের সমন্বয়ে (7টি প্রধান ও 20টি অপ্রধান) গঠিত। এগুলির মধ্যে ভারতীয় পাত এবং ইউরেশীয় পাতের সংঘর্ষের ফলেই হিমালয় পর্বতমালার সৃষ্টি হয়েছে।
  • পরস্পরের দিকে অগ্রসরমান এই দুটি পাতের মধ্যে ভারতীয় পাত বেশি গতিশীল হওয়ায় ধীরগামী ইউরেশীয় পাতের সঙ্গে এর প্রবল সংঘর্ষ হয় এবং এই সংঘর্ষে অপেক্ষাকৃত ভারী ভারতীয় পাতটি ভূগর্ভে প্রবেশ করতে থাকে। এর ফলে উভয় পাতের মধ্যবর্তী টেথিস মহীখাতে আগে থেকে সঞ্চিত স্তরীভূত পলিরাশিতে প্রবল চাপের ফলে ভাঁজের সৃষ্টি হয়ে হিমালয় পর্বতের উত্থান ঘটে। অন্যদিকে, ইউরেশীয় পাতের সম্মুখভাগ তিব্বত মালভূমি হিসেবে উঁচু হয়ে অবস্থান করে।
  • যেহেতু ভারতীয় পাতটি এখনও প্রতি বছর প্রায় 5.4 সেমি হারে উত্তরদিকে এগিয়ে চলেছে, তাই হিমালয় অঞ্চলে পাতজনিত সংঘর্ষ প্রক্রিয়াও এখনও কার্যকরী আছে এবং এর ফলে এখনও হিমালয়ের উত্থান ঘটে চলেছে।
পাতসংস্থান তত্ত্ব অনুসারে হিমালয় পর্বতের উৎপত্তি

ভারতের ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগগুলি উল্লেখ করে যে-কোনো একটি বিভাগ সম্পর্কে আলোচনা করো।

অথবা, ভারতের পার্বত্য অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির বিবরণ দাও।
অথবা, উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির বিবরণ দাও।

ভারতের ভূপ্রাকৃতিক বিভাগ

ভূপ্রকৃতি অনুসারে ভারতকে পাঁচটি প্রধান বিভাগে ভাগ করা যায়। বিভাগগুলি হল –

  • উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল,
  • উত্তরের সমভূমি অঞ্চল,
  • উপদ্বীপীয় মালভূমি অঞ্চল,
  • উপকূলের সমভূমি অঞ্চল এবং
  • দ্বীপ অঞ্চল।

উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল

ভূপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্য অনুসারে এই অঞ্চলটিকে দুটি উপবিভাগে ভাগ করা যায় –

  • হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল এবং
  • উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্যভূমি বা পূর্বাচল।
হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল

পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণি হিমালয়। কাশ্মীরের নাঙ্গা পর্বতশৃঙ্গ থেকে শুরু করে অরুণাচল প্রদেশের উত্তর-পূর্বদিকে অবস্থিত নামচাবারওয়া পর্বতশৃঙ্গ পর্যন্ত হিমালয়ের দৈর্ঘ্য প্রায় 2414 কিমি।

স্থানীয় বৈচিত্র্য অনুসারে দৈর্ঘ্য বরাবর হিমালয়ের তিনটি উপবিভাগ হল –

  • পশ্চিম হিমালয়,
  • মধ্য হিমালয় এবং
  • পূর্ব হিমালয়।
পশ্চিম হিমালয়

অবস্থান – পশ্চিমে নাঙ্গা পর্বতশৃঙ্গ থেকে পূর্বে ভারত-নেপাল সীমান্তের কালী নদী পর্যন্ত পশ্চিম হিমালয়ের বিস্তার। পশ্চিম হিমালয়ের দক্ষিণ থেকে উত্তরে চারটি পর্বতশ্রেণি দেখা যায়। যথা –

  • সর্বদক্ষিণে শিবালিক বা বহিঃহিমালয়, যার গড় উচ্চতা 600-1500 মিটার।
  • শিবালিকের উত্তরে রয়েছে পিরপাঞ্জাল, ধওলাধর, নাগটিববা ও মুসৌরি পর্বতশ্রেণি। এগুলি সম্মিলিতভাবে হিমাচল বা মধ্য হিমালয় নামে পরিচিত। হিমাচল হিমালয়ের গড় উচ্চতা 1500-4500 মিটার। শিবালিক এবং হিমাচল হিমালয়ের মধ্যবর্তী অংশে দুন, মারি, কাংড়া প্রভৃতি উপত্যকা দেখা যায়।
  • হিমাচল হিমালয়ের উত্তরে অবস্থান করছে হিমাদ্রি বা প্রধান হিমালয়। হিমালয়ের এই অংশের গড় উচ্চতা 6000 মিটার। প্রধান হিমালয়ে অবস্থান করছে সুউচ্চ শৃঙ্গগুলি, যেমন – নাঙ্গা পর্বত (8126 মি), কামেট (7756 মি), নন্দাদেবী (7816 মি), কেদারনাথ (6940 মি), চৌখাম্বা-বদরীনাথ (7138 মি) প্রভৃতি। পিরপাঞ্জাল ও প্রধান হিমালয়ের মধ্যে অবস্থান করছে বিখ্যাত কাশ্মীর উপত্যকা (‘ভূস্বর্গ’ বা ‘প্রাচ্যের নন্দনকানন’ নামে পরিচিত)।
  • প্রধান হিমালয়ের উত্তরে জাস্কর-দেওসাই পর্বত, লাদাখ রেঞ্জ ও কারাকোরাম পর্বতশ্রেণি একত্রে ট্রান্স বা টেথিস হিমালয় নামে পরিচিত। এই অংশের গড় উচ্চতাও 6000 মিটার। কারাকোরাম পর্বতের গডউইন অস্টিন বা K₂ (8611 মি) ভারতের উচ্চতম ও পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ। এ ছাড়া, গাশারব্রুম-I বা হিডেন (8068 মি), ব্রড (8047 মি), গাশারব্রুম-II (8035 মি) প্রভৃতি সুউচ্চ শৃঙ্গগুলিও কারাকোরাম পর্বতশ্রেণিতে অবস্থান করছে। ভারতের দীর্ঘতম হিমবাহ সিয়াচেন (76 কিমি)-সহ বিয়াফো, বালটরে প্রভৃতি হিমবাহ কারাকোরাম পর্বতশ্রেণিতে দেখা যায়।
মধ্য হিমালয় –

অবস্থান – মধ্য হিমালয় সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন রাষ্ট্র নেপালের অন্তর্গত। (এই অংশটি নেপালের অন্তর্গত হওয়ায় ভারতের ভূপ্রাকৃতিক বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করা হল না।)

জেনে রাখো

  • মধ্য হিমালয়ের সর্বদক্ষিণে শিবালিক, চুড়িয়া পাহাড় ও দুন্ডুয়া পাহাড় বহির্হিমালয়ের অংশরূপে অবস্থান করছে। মধ্য হিমালয় নেপালে মহাভারতলেখ পর্বত নামে পরিচিত। নেপালের সর্বউত্তরে রয়েছে হিমাদ্রি বা প্রধান হিমালয়।
  • পৃথিবীর উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টসহ অন্নপূর্ণা, ধবলগিরি প্রভৃতি বিখ্যাত শৃঙ্গ এখানে অবস্থিত।
  • কাঠমাণ্ডু ও পোখরা প্রভৃতি উপত্যকা, সুরয তাল, ফিউয়া তাল প্রভৃতি হ্রদ, লোৎসে গণেশ প্রভৃতি হিমবাহ এবং টিপটালা, উমবাক প্রভৃতি গিরিপথ এখানে দেখা যায়।
পূর্ব হিমালয় –

অবস্থান – নেপালের পূর্ব সীমা থেকে অরুণাচল প্রদেশের পূর্ব সীমা পর্যন্ত হিমালয় পার্বত্যভূমির নাম পূর্ব হিমালয়।

  • পূর্ব হিমালয়ের সর্বদক্ষিণে শিবালিক পর্বতশ্রেণির অংশরূপে অরুণাচল প্রদেশে ডাফলা, মিরি, আবোর প্রভৃতি পাহাড়গুলি দেখা যায়।
  • এই অংশে হিমালয়ের মধ্যভাগের শ্রেণিটি বিচ্ছিন্নভাবে দেখা যায়। যেমন – নেপাল-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তের সিঙ্গালিলা রেঞ্জ ও ভুটানের কৃষ্ণ পর্বত। সিঙ্গালিলা রেঞ্জের সান্দাকফু (3636 মি) পশ্চিমবঙ্গের উচ্চতম শৃঙ্গ। পূর্ব হিমালয়ের সবচেয়ে উত্তরের হিমাদ্রি হিমালয়ে বেশ কয়েকটি সুউচ্চ শৃঙ্গ চোখে পড়ে। এগুলি হল ভারত-নেপাল সীমান্তে ভারতের দ্বিতীয় তথা পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা (8598 মি)। এ ছাড়া, অরুণাচল-তিব্বত সীমান্তে অবস্থিত নামচাবারওয়া, ভুটানের কুলাকাংড়ি প্রভৃতি পর্বতশৃঙ্গ এই অংশে অবস্থিত।
  • নাথুলা গিরিপথ, চুম্বি, পারো, পুনখা, হা প্রভৃতি উপত্যকা, ছাঙ্গু হ্রদ এবং তিস্তা নদীর উৎপত্তিস্থল জেমু হিমবাহ এই অংশে দেখা যায়।
উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্যভূমি বা পূর্বাচল
  • উত্তর-পূর্ব ভারতে, বিশেষত অরুণাচল, অসম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং অসমের কাছাড় জেলার মধ্য দিয়ে 1800 থেকে 4000 মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট পাটকই, নাগা, লুসাই প্রভৃতি পর্বতশ্রেণি বিস্তৃত হয়েছে। এই অঞ্চলটি পূর্বাচল নামে পরিচিত।
  • অরুণাচল প্রদেশের মিশমি পর্বতশ্রেণির দাফাবুম পূর্বাচলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
ভারতের ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগগুলি উল্লেখ-মাধ্যমিক ভূগোল

কী কী পর্বতশ্রেণি নিয়ে হিমালয় পর্বতমালা গঠিত? পর্বতশ্রেণিগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

অথবা, প্রস্থবরাবর হিমালয়ের পর্বতশ্রেণিগুলির বর্ণনা করো।
অথবা, হিমালয়ের উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত পর্বতশ্রেণিগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।

হিমালয়ের সমান্তরাল পর্বতশ্রেণি –

পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালা হিমালয়ে প্রস্থ বরাবর উত্তর-দক্ষিণে চারটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণি রয়েছে। এগুলি হল —

  • টেথিস হিমালয় বা ট্রান্স হিমালয়,
  • হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয়,
  • হিমাচল বা মধ্য হিমালয় বা অবহিমালয় এবং
  • শিবালিক বা বহিঃহিমালয়।

টেথিস হিমালয় –

  • হিমালয়ের সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত টেথিস হিমালয় পর্বতশ্রেণিটি ধীরে ধীরে তিব্বত মালভূমিতে গিয়ে মিশেছে।
  • আজ থেকে প্রায় 7 কোটি বছর আগে প্রথম বারের প্রবল ভূ-আলোড়নের সময় টেথিস হিমালয়ের সৃষ্টি হয়।
  • এই পর্বতশ্রেণিটি প্রায় 40 কিমি চওড়া ও এর গড় উচ্চতা প্রায় 3000-4300 মিটার।
  • জাস্কর-দেওসাই পর্বত এই হিমালয়ের প্রধান অংশ। জাস্কর-এর উচ্চতম শৃঙ্গ হল লিওপারগেল (7420 মি)।
  • ভারতীয় অংশে টেথিস পর্বত প্রায় ক্ষয়ে গিয়ে বিশালাকৃতির মালভূমিতে পরিণত হয়েছে।
  • এই পর্বতশ্রেণির দৈর্ঘ্য প্রায় 1000 কিমি।
  • এই পর্বতশ্রেণির অধিকাংশই তিব্বতে অবস্থিত এবং ভারতে জম্মু-কাশ্মীর প্রদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয়

  • প্রায় 7 কোটি বছর আগে ‘টেথিস হিমালয়’ সৃষ্টির সময় হিমাদ্রি’রও উত্থান ঘটেছিল।
  • হিমালয় পর্বতের এই অংশটি বছরের অধিকাংশ সময়ই বরফে ঢেকে থাকায় একে হিমাদ্রি বা হিমগিরি বলা হয়।
  • টেথিস হিমালয়ের দক্ষিণে গড়ে 6000 মিটার উঁচু ও প্রায় 50 কিমি প্রশস্ত যে সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণিটি দেখা যায় তার নাম হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয়।
  • হিমালয়ের বিখ্যাত শৃঙ্গগুলি এখানেই অবস্থিত, যেমন — এভারেস্ট (পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ, উচ্চতা (8848 মি), কাঞ্চনজঙ্ঘা (8598 মি), ধবলগিরি (8172 মি), নাঙ্গা (8126 মি), অন্নপূর্ণা (8078 মি), নন্দাদেবী (7816 মি) প্রভৃতি। এই পর্বতশ্রেণি অতি প্রাচীন রূপান্তরিত ও পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত।

হিমাচল বা মধ্য হিমালয় –

  • প্রায় 2 কোটি বছর আগে পরবর্তী প্রবল ভূ-আলোড়নের সময় হিমাদ্রির দক্ষিণে হিমাচল পর্বতশ্রেণির সৃষ্টি হয়।
  • দক্ষিণে শিবালিক পাহাড় ও উত্তরে হিমাদ্রি হিমালয়ের মধ্যে হিমাচল হিমালয় প্রসারিত হয়েছে। এই পর্বতশ্রেণি 1500 থেকে 4500 মিটার উঁচু ও 60-80 কিমি প্রশস্ত।
  • পিরপাঞ্জাল, ধওলাধর, নাগটিব্বা প্রভৃতি পর্বতশ্রেণি এখানে দেখা যায়।
  • এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গগুলি হল কেদারনাথ (7188 মি), চৌখাম্বা-বদরীনাথ (7138 মি), ত্রিশুল (7120 মি) প্রভৃতি।
  • এই অংশে অনেক উপত্যকা দেখা যায়, যেমন — কুলু, কাংড়া প্রভৃতি। 6. হিমাচলের নদী উপত্যকাগুলি খুব গভীর ও গিরিখাত বিশিষ্ট।

শিবালিক বা বহিঃহিমালয়

  • প্রায় 70 লক্ষ বছর আগে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে শেষ প্রবল ভূ-আলোড়নের সময় শিবালিক পর্বতশ্রেণির সৃষ্টি হয়।
  • শিবালিক পর্বতশ্রেণি গড়ে 600 থেকে 1500 মিটার উঁচু এবং 10 থেকে 50 কিমি চওড়া।
  • মুসৌরি, জম্মু, ডাফলা, মিরি, আবোর প্রভৃতি পাহাড় এখানে অবস্থিত।
  • এই পর্বতশ্রেণি বিভিন্ন উপত্যকা (বা, দুন) ও গিরিখাত দ্বারা মধ্য হিমালয় থেকে বিচ্ছিন্ন।

পশ্চিম হিমালয়ের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করো।

পশ্চিম হিমালয়ের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য –

অবস্থান – জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তের নাঙ্গা পর্বত থেকে নেপালের পশ্চিম সীমায় অবস্থিত কালী নদী পর্যন্ত বিস্তৃত অংশকে বলা হয় পশ্চিম হিমালয়। এর তিনটি ভাগ —

  • কাশ্মীর হিমালয়,
  • হিমাচল হিমালয় বা পাঞ্জাব হিমালয় এবং
  • কুমায়ুন হিমালয়।
পশ্চিম হিমালয়ের অবস্থান

কাশ্মীর হিমালয় –

  • এই অংশটি জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে অবস্থিত।
  • কাশ্মীর হিমালয়ের দক্ষিণে পরপর পিরপাঞ্জাল, জম্মু ও পুঞ্জ পাহাড় অবস্থিত। এই পাহাড় প্রধানত বেলেপাথর ও শেল দিয়ে গঠিত।
  • এই হিমালয়ের উত্তর অংশটিতে অনেক উপত্যকা ও দুন দেখা যায়। যেমন — কাশ্মীর উপত্যকা ও উধমপুর দুন প্রভৃতি।
  • পিরপাঞ্জাল পর্বতশ্রেণি কাশ্মীর উপত্যকাকে ভারতের অন্যান্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। কেবলমাত্র বানিহাল ও পিরপাঞ্জাল গিরিপথ দুটি দিয়ে কাশ্মীর উপত্যকায় প্রবেশ করা যায়।
  • হিমবাহ সৃষ্ট ডাল, উলার, আনছার, নাগিন প্রভৃতি হ্রদ এই উপত্যকায় দেখা যায়।
  • কাশ্মীর উপত্যকার পূর্ব থেকে দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত হয়েছে হারামোশ ও জাস্কর পর্বতশ্রেণি।
  • কাশ্মীরের সিন্ধু উপত্যকার উত্তরভাগে ভারতের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কারাকোরাম পর্বতশ্রেণির গডউইন অস্টিন বা K2 (8611 মি) অবস্থিত। এই পর্বতের অন্যান্য শৃঙ্গ হল গাশারব্রুম বা হিডনপিক, ব্রডপিক, গাশারব্রুম-II প্রভৃতি। এই পর্বতে অবস্থিত সিয়াচেন (76 কিমি) হল ভারতের দীর্ঘতম ও বৃহত্তম হিমবাহ।
  • কারাকোরামের দক্ষিণে লাদাখ পর্বতশ্রেণি অবস্থিত। এর পূর্বদিকে ভারতের সর্বোচ্চ লাদাখ মালভূমি অবস্থিত। এর গড় উচ্চতা প্রায় 3500 মি।
  • জোজিলা ও বানিহাল হল কাশ্মীর হিমালয়ের প্রধান গিরিপথ।

হিমাচল হিমালয় বা পাঞ্জাব হিমালয় –

  • হিমালয়ের যে অংশ হিমাচল প্রদেশে অবস্থিত তাকে হিমাচল হিমালয় বলা হয়।
  • এই অঞ্চলের উত্তরে 5000 থেকে 6000 মিটার উঁচু হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয় পর্বতশ্রেণি অবস্থিত।
  • হিমাদ্রির দক্ষিণে মধ্য হিমালয়ের চারটি পর্বতশ্রেণি — ধওলাধর, পিরপাঞ্জাল, জাস্কর, নাগটিব্বা ও মুসৌরি অবস্থিত। এদের মধ্যে পিরপাঞ্জাল পর্বতশ্রেণির শৃঙ্গগুলি প্রায়ই তুষারাবৃত থাকে। এই পর্বতশ্রেণিগুলির গড় উচ্চতা 1500 4500 মিটারের মধ্যে।
  • সবচেয়ে দক্ষিণে আছে শিবালিক পর্বতশ্রেণি। এর গড় উচ্চতা 600-1500 মি।
  • এই অংশেও অনেক পার্বত্য উপত্যকা দেখা যায়, যেমন — লাহুল, স্পিতি, কুলু, কাংড়া প্রভৃতি।

কুমায়ুন হিমালয় –

  • উত্তরাখণ্ড রাজ্যে হিমালয়ের যে অংশটি বিস্তৃত, তার নাম কুমায়ুন হিমালয়।
  • মধ্য হিমালয় পর্বতশ্রেণির উত্তরে কতকগুলি বিখ্যাত তুষারাবৃত শৃঙ্গ আছে, যেমন — নন্দাদেবী (7816 মি), গঙ্গোত্রী (6614 মি), কেদারনাথ (7188 মি), কামেট (7756 মি), ত্রিশূল (7120 মি) প্রভৃতি।
  • এই অঞ্চলের দক্ষিণ ভাগে শিবালিক পর্বতশ্রেণির মধ্যে কতকগুলি বিখ্যাত উপত্যকা বা দুন আছে, যেমন — দেরাদুন, চৌখাম্বা, কোটা পাতিয়া প্রভৃতি।
  • এই অংশে বিস্তৃত নাগটিব্বা ও মুসৌরি পর্বতের পূর্বাংশে অনেকগুলি হ্রদ দেখা যায়। যেমন — নৈনিতাল, ভীমতাল, সাততাল প্রভৃতি।
  • এখানে গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে যথাক্রমে গঙ্গা ও যমুনা নদীর উৎপত্তি হয়েছে।

পূর্ব হিমালয়ের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করো।

পূর্ব হিমালয়ের ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য –

অবস্থান – নেপালের পূর্ব সীমায় সিঙ্গালিলা পর্বতশ্রেণি থেকে অরুণাচল প্রদেশের পূর্ব সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত, তাকে পূর্ব হিমালয় অঞ্চল বলা হয়। স্থানীয় বৈশিষ্ট্য অনুসারে পূর্ব হিমালয় অঞ্চলকে তিনটি ক্ষুদ্রতর অঞ্চলে ভাগ করা যায়, এগুলি —

  • সিকিম- দার্জিলিং হিমালয়,
  • ভুটান হিমালয় এবং
  • অরুণাচল হিমালয় ৷
পূর্ব হিমালয়ের ভূপ্রকৃতি

সিকিম-দার্জিলিং হিমালয় –

  • সিকিমের পশ্চিমদিকে দার্জিলিং-নেপাল সীমান্তে সিঙ্গালিলা পর্বতশ্রেণি থেকে পূর্বদিকে ডানকিয়া পর্বতশ্রেণি পর্যন্ত বিস্তৃত হিমালয়ের অংশকে সিকিম-দার্জিলিং হিমালয় বলা হয়।
  • সিঙ্গালিলা পর্বতশ্রেণির পশ্চিম সীমায় ভারতের দ্বিতীয় তথা পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা অবস্থিত।
  • ডানকিয়া পর্বতশ্রেণিতে আছে বিখ্যাত নাথুলা ও জেলেপ লা গিরিপথ যার সাহায্যে তিব্বতের চুম্বি উপত্যকার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। ‘মিরিক’ দার্জিলিং হিমালয়ে ও ‘ছাঙ্গু’ সিকিম হিমালয়ে অবস্থিত দুটি বিখ্যাত পার্বত্য হ্রদ।
  • দার্জিলিং-এর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শৃঙ্গ [পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ সান্দাকফু (3636 মি), ফালুট (3596 মি) ও সবরগ্রাম (3,543 মি)] সিঙ্গালিলায় অবস্থিত।

ভুটান হিমালয় –

  • হিমালয়ের যে অংশ ভুটানের অন্তর্গত তাকে বলা হয় ভুটান হিমালয় (স্থানীয় নাম মাসাং কিডু)।
  • এই অংশেও অনেকগুলি সুউচ্চ শৃঙ্গ আছে, যেমন — কুলা কাংড়ি (7554 মি), চোমোলহরি (7314 মি) প্রভৃতি।

অরুণাচল হিমালয় –

  • হিমালয়ের যে অংশটি অরুণাচল প্রদেশে অবস্থিত তাকে অরুণাচল হিমালয় বলা হয়।
  • অরুণাচল প্রদেশে হিমালয়ের তিনটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণি — শিবালিক, হিমাচল এবং হিমাদ্রিকে লক্ষ করা যায়।
  • অরুণাচল প্রদেশের উত্তর-পূর্বে (তিব্বতে) সুউচ্চ নামচাবারওয়া (7756 মি) পর্বতশৃঙ্গ অবস্থিত।
  • এই শৃঙ্গের পূর্বদিকে আছে ‘সাংপো গিরিখাত’ (Tsangpo gorge)।
  • অরুণাচল হিমালয় থেকে তুলংলা, ডোমলা, ঠগলা, কায়লা প্রভৃতি গিরিপথের সাহায্যে তিব্বতে যাওয়া যায় এবং বুমলা, বোমডিলা প্রভৃতির মাধ্যমে ভুটান হিমালয়ে যাওয়া যায়।

উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চল বা পূর্বাচল

অবস্থান – ভারতের উত্তর-পূর্বদিকে পূর্ব হিমালয়ের অনুচ্চ পর্বতশ্রেণি এবং উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ দিকে প্রসারিত হিমালয়ের বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন শাখা-পর্বতশ্রেণি ও পাহাড় নিয়ে গঠিত অঞ্চলকে উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চল বা পূর্বাচল বলা হয়। অরুণাচল প্রদেশের দক্ষিণাংশ, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং অসমের কাছাড় জেলা জুড়ে বিস্তৃত এই পার্বত্য অঞ্চল পশ্চিমে মেঘালয় মালভূমির সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে।

ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য –

  • অরুণাচল প্রদেশের পাটকই ও মিশমি পাহাড় উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত। মিশমির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ দাফাকুম উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য অঞ্চলেরও সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গ।
  • পাটকই পাহাড় আরও দক্ষিণে নাগাল্যান্ডের মধ্যে প্রসারিত বরাইল পাহাড়ের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। বরাইল পাহাড় আরও পূর্বদিকে প্রসারিত হয়ে কোহিমা পাহাড় এবং নাগা পাহাড়ের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। কোহিমা পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল জাপভো (2995 মি) এবং নাগা পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ সারামতি (3926 মি)। বরাইল পাহাড়ের একটি অংশ অসমের কাছাড় হয়ে মেঘালয় মালভূমির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। মেঘালয় মালভূমির উল্লেখযোগ্য অংশ হল — গারো, খাসি ও জয়ন্তিয়া পাহাড়।
  • নাগাল্যান্ডের দক্ষিণ দিকে পাহাড়গুলির উচ্চতা ক্রমশ হ্রাস পেয়েছে। মণিপুরে এই ধরনের অনুচ্চ পাহাড় শ্রেণির মাঝে একটি সুন্দর উপত্যকার সৃষ্টি হয়েছে। এর নাম ইম্ফল উপত্যকা। এর মাঝখানে রয়েছে লোকটাক হ্রদ।
  • মণিপুরের অনুচ্চ পাহাড়গুলি অবশেষে মিজোরামে লুসাই বা মিজো পাহাড়ের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। লুসাই পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ নউজুয়ারনো (2140 মি)।
  • ত্রিপুরায় লুসাই পাহাড়ের সঙ্গে সমান্তরালভাবে অবস্থিত ছয়টি প্রায় সমান্তরাল পাহাড়শ্রেণি (স্থানীয় নাম ‘টাং’) দেখা যায়। এগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ হল জাম্পুইটাং। জাম্পুই-এর বেতালিং শিব (960 মি) ত্রিপুরার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
পূর্বাচলের ভূপ্রকৃতি

উত্তর-পূর্বের পার্বত্য অংশ আরাকানইয়োমা পর্বতশ্রেণির অংশ হিসেবে আরও দক্ষিণে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চল হয়ে মায়ানমারে প্রবেশ করেছে।

ভারতীয় জনজীবনে হিমালয়ের প্রভাব বর্ণনা করো।

ভারতীয় জনজীবনে হিমালয়ের প্রভাব –

ভারতের জনজীবনে হিমালয়ের গুরুত্ব অপরিসীম —

জলবায়ুগত প্রভাব –

  • এই পর্বতমালা ভারতের উত্তর ও পূর্বদিকে প্রাকৃতিক প্রাচীরের (natural barrier) মতো বিরাজ করায় শীতকালে মধ্যএশিয়ার তীব্র ঠান্ডা বায়ুকে ভারতে প্রবেশ করতে বাধা দেয়, এজন্য উত্তর ভারত প্রচণ্ড ঠান্ডা থেকে রক্ষা পায়।
  • গ্রীষ্মকালীন দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হিমালয়ে বাধা পায় বলে সারা ভারতে বৃষ্টিপাত হয়।

ভূমিরূপগত প্রভাব –

  • সুউচ্চ হিমালয়ের বিভিন্ন হিমবাহ থেকে গঙ্গা, যমুনা, তিস্তা প্রভৃতি বহু বরফগলা জলে পুষ্ট নদীর সৃষ্টি হয়েছে। এইসব নদী পার্বত্য প্রবাহে বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্যপূর্ণ ভূমিরূপ গঠন করেছে, যেমন — গিরিখাত, জলপ্রপাত প্রভৃতি।
  • হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল থেকে পলি বয়ে এনে নদীগুলি উত্তর ভারতে বিস্তীর্ণ উর্বর সমভূমির সৃষ্টি করেছে। ফলে এই সমভূমি অঞ্চলে কৃষিকার্য ও পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এখানে জনবসতির ঘনত্ব বেশি।

অর্থনৈতিক প্রভাব –

  • পার্বত্য অঞ্চলের নদীগুলি খরস্রোতা এবং সারাবছর বরফগলা জল পায় বলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযোগী।
  • পশ্চিম হিমালয়ের বিক্ষিপ্ত অল্পবিস্তৃত তৃণভূমিগুলি মেষপালন এবং বিস্তীর্ণ সরলবর্গীয় অরণ্যগুলি কাষ্ঠ সম্পদের জন্য বিখ্যাত।
  • পার্বত্য ঢালে প্রচুর পরিমাণে ভেষজ উদ্ভিদ, চা, সিঙ্কোনা এবং বিভিন্ন ফল (আপেল, কমলালেবু প্রভৃতি) উৎপন্ন হয়।
  • এখানকার জলবায়ু সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি (যেমন — ঘড়ি), শাল, কার্পেট, সূক্ষ্ম কারুশিল্প ও মৃৎশিল্প নির্মাণের পক্ষে বিশেষভাবে উপযোগী।
  • হিমালয়ের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক আসেন যা হোটেল শিল্প তথা পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটিয়েছে।

সাংস্কৃতিক প্রভাব –

  • পার্বত্য অঞ্চলে পৃথক পৃথক সামাজিক গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। এদের প্রত্যেকের নিজস্ব ঐতিহ্যবিশিষ্ট সভ্যতা গড়ে উঠেছে।
  • প্রাচীনকাল থেকেই হিমালয় পর্বতমালা প্রাচীরের মতো অবস্থান করে বহিঃশত্রুর হাত থেকে ভারতকে রক্ষা করে এসেছে (কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া), যা ভারতের নিজস্ব সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য গড়ে তুলতে ও বজায় রাখতে সাহায্য করেছে।

গাঙ্গেয় সমভূমির অবস্থান এবং ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

গাঙ্গেয় সমভূমির অবস্থান –

পশ্চিমে যমুনা নদী, দক্ষিণ-পূর্বদিকে গঙ্গার মোহানা, উত্তরে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল এবং দক্ষিণে উপদ্বীপীয় মালভূমি — –এর মধ্যবর্তী বিশাল সমতল, অঞ্চলটির নাম গাঙ্গেয় সমভূমি। উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে বিস্তৃত এই সমভূমির মোট আয়তন প্রায় 3 লক্ষ 75 হাজার বর্গকিমি।

গাঙ্গেয় সমভূমির ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য –

এই সমভূমি অঞ্চলটিকে স্থানীয় বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য অনুসারে তিনটি উপ-অঞ্চলে ভাগ করা যায়।

উচ্চ গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল –

  • অঞ্চলটি পশ্চিমে যমুনা নদী থেকে পূর্বে এলাহাবাদ পর্যন্ত প্রসারিত।
  • পশ্চিমে অঞ্চলটির গড় উচ্চতা 220 মি এবং পূর্বে 100 মি।
  • অঞ্চলটি উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্বে ঢালু। উত্তরাংশে সংকীর্ণ ভাবর ও তরাইভূমি দেখা যায়।
  • এই অঞ্চলের প্রাচীন পলি দ্বারা গঠিত মৃত্তিকা ভাঙ্গর নামে ও নবীন পলি দ্বারা গঠিত মৃত্তিকা খাদার নামে পরিচিত।

মধ্য গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল –

অঞ্চলটি এলাহাবাদ থেকে পূর্বদিকে বিহারের পূর্ব সীমা পর্যন্ত প্রসারিত। প্লাবনভূমি, স্বাভাবিক বাঁধ, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ প্রভৃতি এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য।

  • পূর্বদিকে এর উচ্চতা ক্রমহ্রাসমান (প্রায় 35 মি)।
  • এই অঞ্চলটির পূর্বাংশ বিহার রাজ্যে এবং পশ্চিমাংশ উত্তরপ্রদেশের মধ্যে অবস্থিত।
  • অঞ্চলটির পশ্চিমদিকে রাজমহল পাহাড় আছে।
  • শিবালিকের পাদদেশে প্রস্তরময়, নুড়ি ও বালিপূর্ণ ভূমিভাগ ভাবর নামে পরিচিত।
  • ভাবরের দক্ষিণে জঙ্গলময়, জলাকীর্ণ, অপেক্ষাকৃত সূক্ষ্ম পলি ও বালি দ্বারা গঠিত অঞ্চলকে তরাই বলা হয়।

নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল –

  • ভারতে এই অংশটি বিহারের পূর্ব সীমা থেকে হুগলি নদীর মোহানা পর্যন্ত বিস্তৃত।
  • এই অংশটিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় — 1. উত্তরবঙ্গের সমভূমি (হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে উৎপন্ন গঙ্গা-পদ্মার উপনদীগুলি দ্বারা গঠিত), 2. রাঢ় সমভূমি (ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে উৎপন্ন গঙ্গার উপনদীগুলি দ্বারা গঠিত) ও 3. বদ্বীপ সমভূমি (গঙ্গা-পদ্মা ও তার শাখাপ্রশাখা নদীগুলি দ্বারা গঠিত)।
  • বদ্বীপ সমভূমির তিনটি অংশ হল — 1. মৃতপ্রায় বদ্বীপ, 2. পরিণত বদ্বীপ ও 3. সক্রিয় বদ্বীপ।
গাঙ্গেয় সমভূমির অবস্থান

ভারতের পাঞ্জাব সমভূমি ও ব্রহ্মপুত্র সমভূমি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

পাঞ্জাব সমভূমি

পাঞ্জাব সমভূমিবিস্তার –

উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের পশ্চিমাংশের নাম পাঞ্জাব সমভূমি। অঞ্চলটি যমুনা নদীর পশ্চিম দিক থেকে প্রসারিত হ পাকিস্তানের বেশ কিছু অংশ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। দিল্লি, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা এই অঞ্চলের অন্তর্গত।

পাঞ্জাব সমভূমিবৈশিষ্ট্য –

  • সিন্ধুর উপনদী শতদ্রু, বিপাশা, ইরাবতী ও চন্দ্রভাগা পলি সঞ্চয় করে এই সমভূমিটি তৈরি করেছে। এখানকার, নদীতীরবর্তী নতুন পলিগঠিত স্থানসমূহকে বলা হয় বেট। নদী থেকে দূরবর্তী প্রাচীন পলিময় অংশকে বলা হয় বাগর।
  • সমভূমিটির গড় উচ্চতা 200-240 মিটার।
  • এই অংশে পাঁচটি দো-আব দেখা যায়। এগুলি হল — 1. বিস্ত-জলন্ধর দোয়াব, 2. বারি দোয়াব, 3. রেচনা দোয়াব, 4. চাজ দোয়াব এবং 5. সিন্ধু-সাগর দোয়াব। 6. পাঞ্জাব সমভূমির উঁচু পলিময় ঢিবিগুলিকে বলা হয় ধায়া।
পাঞ্জাব সমভূমির অবস্থান

ব্রষ্মপুত্র সমভূমি

ব্রষ্মপুত্র সমভূমির বিস্তার –

640 কিমি দীর্ঘ ও 90-100 কিমি প্রশস্ত ব্রক্ষ্মপুত্র উপত্যকা পূর্বে সদিয়া থেকে পশ্চিমে ধুবড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত। এর আয়তন প্রায় 56 হাজার বর্গকিমি। অসমের সমতলভূমি এর অন্তর্গত।

ব্রষ্মপুত্র সমভূমির বৈশিষ্ট্য –

  • উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণে পর্বত-ঘেরা এই সমভূমিটি দীর্ঘ ও সংকীর্ণ এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমে ঢালু।
  • পূর্বদিকে সমভূমির উচ্চতা প্রায় 130 মিটার এবং পশ্চিমে প্রায় 30 মিটার।
  • ব্রক্ষ্মপুত্র এবং তার বিভিন্ন উপনদীর পলি জমে এই সমভূমি তৈরি হয়েছে। পলি সমৃদ্ধ বলে এখানকার মাটি খুব উর্বর।
  • সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় ব্রক্ষ্মপুত্র নদ তার গতিপথে বহু বালুচর সৃষ্টি করেছে। এরকমই একটি বালুচরের নাম মাজুলি। এর আয়তন আগে 926 বর্গকিমি ছিল, কিন্তু ক্ষয়ের ফলে এখন তা 614 বর্গকিমিতে পৌঁছেছে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম নদী-দ্বীপ।
ব্রহ্মপুত্র সমভূমির অবস্থান

রাজস্থান সমভূমির অবস্থান ও ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করো। রাজস্থান সমভূমিকে কী কী বিভাগে ভাগ করা যায়?

রাজস্থান সমভূমির অবস্থান –

উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশ এই সমভূমির অন্তর্গত। এই অঞ্চলটি পাঞ্জাব সমভূমির দক্ষিণদিক থেকে আরাবল্লি পর্বতের পশ্চিমদিক পর্যন্ত ও রাজস্থানের পশ্চিমাংশ জুড়ে অবস্থিত। এই অঞ্চলটি আসলে ধর মরুভূমি।

রাজস্থান সমভূমির ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য –

  • পরিপূর্ণভাবে বালুময় এই অঞ্চলটির উচ্চতা পূর্বে আরাবল্লী পর্বতের পাদদেশে গড়ে 350 মি ও পশ্চিমে পাকিস্তান সীমানার 150 মি।
  • বহু সিফ ও বারখান বালিয়াড়ি এখানে দেখা যায়।
  • অনেক লবণাক্ত ছোটো হ্রদ বা ধান্দ বা প্লায়া (যেমন — দিদওয়ানা, কুচামন, সারগল) এবং অনেক লবণাক্ত বড়ো হ্রদ বা বোলসন (যেমন — সম্বর) এখানে দেখা যায়।
  • এ ছাড়া, জয়সলমীরের কাছের সমভূমিতে কয়েকটি ছোটো ছোটো পাহাড় দেখা যায়।
  • এই অঞ্চলে অনেক চলমান বালিয়াড়ি বা থ্রিয়ান দেখা যায়।
  • এখানকার জলবায়ু খুবই চরম প্রকৃতির এবং গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত 12 সেমির কম।
  • এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য নদী হল লুনি।
  • রাজস্থান সমভূমির মধ্যে কোথাও কোথাও প্রস্রবণ দেখতে পাওয়া যায়।
  • প্রস্রবণের নিকটবর্তী ভূমি কিছুটা উর্বর হওয়ায় এখানে খেজুর, পামজাতীয় গাছ ও তৃণভূমি জন্মায়। এই স্থানকে বলা হয় মরূদ্যান। 
  • এখানকার সম্বর হ্রদ হল রাজস্থান সমভূমির বৃহত্তম হ্রদ।

রাজস্থান সমভূমির ভূপ্রাকৃতিক বিভাগ – ভূপ্রকৃতি অনুসারে রাজস্থান সমভূমিকে পাঁচটি অংশে ভাগ করা যায় —

  • মরুস্থলী,
  • বাগর,
  • রোহি,
  • থালি এবং
  • ভাঙর।
ভূপ্রাকৃতিক বিভাগঅবস্থান
মরুস্থলীরাজস্থান সমভূমির একেবারে পশ্চিমে বালি, পাথর, বালিয়াড়ি, প্রভৃতি দ্বারা গঠিত অংশকে বলা হয় মরুস্থলী। এখানকার অস্থায়ী বা চলমান বালিয়াড়িগুলিকে ধ্রিয়ান বলা হয়।
বাগরমরুস্থলীর পূর্বদিকে লুনি নদী অববাহিকার সমতল মরুপ্রায় (semidesert) তৃণভূমি (স্তেপ জাতীয়) অঞ্চলের নাম বাগর। এই অংশে কিছু প্লায়া (স্থানীয় নাম ‘সর’) দেখা যায়।
রোহিবাগর-এর পূর্বাংশে আরাবল্লি থেকে আগত ছোটো ছোটো নদী দ্বারা সৃষ্ট উর্বর প্লাবনভূমির নাম রোহি।
থালিলুনি নদীর উত্তরাংশে স্থায়ী বালিয়াড়ি সমন্বিত বালুময় অঞ্চলের নাম থালি।
ভাঙরপাঞ্জাব সমভূমির দক্ষিণে মরুস্থলীর সীমান্ত বরাবর প্রাচীন পলিময় অঞ্চলের নাম ভাঙর।
রাজস্থান সমভূমির অবস্থান ও ভূপ্রাকৃতিক বিভাগ

দাক্ষিণাত্য মালভূমির অন্তর্গত উল্লেখযোগ্য পর্বত শ্রেণিগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

দাক্ষিণাত্য মালভূমির অন্তর্গত উল্লেখযোগ্য পর্বত শ্রেণি

সাতপুৱা-মহাদেৱ-মহাকাল পর্বতশ্রেণি –

  • নর্মদা নদী উপত্যকার দক্ষিণ সীমা বরাবর পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত হয়েছে সাতপুরা-মহাদেব-মহাকাল পর্বত। সাতপুরার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ধূপগড় (1350 মি)।
  • মহাদেব পর্বতে চুনাপাথরের গুহা দেখা যায়।
  • মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকণ্টক (1057 মি)।
  • সাতপুরা একটি হোস্ট (স্তূপ) জাতীয় পর্বত ও এর দু-পাশের নর্মদা ও তাপ্তী নদীর উপত্যকা দুটি গ্রাবেনজাতীয় (গ্রস্ত উপত্যকা)।

অজন্তা পর্বতশ্রেণি –

সাতপুরার দক্ষিণে লাভা গঠিত অজন্তা পর্বতশ্রেণি পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত। এই পর্বতশ্রেণিটি ক্রমাগত ক্ষয়ের ফলে ব্যবচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।

পশ্চিমঘাট বা সহ্যাদ্রি পর্বতশ্রেণি –

  • দাক্ষিণাত্য মালভূমির পশ্চিম সীমায় পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণি (দৈর্ঘ্য প্রায় 1600 কিমি এবং গড় উচ্চতা প্রায় 1200 মি) অবস্থিত।
  • এই পর্বতের পশ্চিমের ঢাল খুব খাড়া হলেও পূর্বদিকে তা ধাপে ধাপে নেমে মালভূমিতে মিশেছে।
  • অগস্ত্যকূটম (1868 মি) এই পর্বতের একটি উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ। এ ছাড়া এখানে কলসুবাই, মহাবালেশ্বর, সালেহর প্রভৃতি পর্বতশৃঙ্গও দেখা যায়।
  • এই পর্বতশ্রেণির দুটি প্রধান গিরিপথ বা গ্যাপ (gap) হল — নাসিকের কাছে অবস্থিত থলঘাট এবং পুনের কাছে অবস্থিত ভোরঘাট।
  • পশ্চিমঘাট পর্বতের দক্ষিণাংশ গ্র্যানাইট নিস শিলা দ্বারা গঠিত হওয়ায়, এখানকার পাহাড়ের চূড়াগুলি গোলাকার।

নীলগিরি-আনাইমালাই-কার্ডামম-পালনি পর্বতশ্রেণি –

  • পশ্চিমঘাট পর্বত দক্ষিণে নীলগিরি পর্বতে মিলিত হয়েছে। নীলগিরির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ দোদাবেতা (2637 মি)
  • নীলগিরির দক্ষিণে পালঘাট গিরিপথ অবস্থিত।
  • এই গিরিপথের দক্ষিণে ঘন অরণ্যে ঢাকা আনাইমালাই, কার্ডামম ও পালনি পর্বতশ্রেণি দেখা যায়।
  • আনাইমালাই পর্বতের আনামুদি বা আনাইমুদি (2695 মি) দক্ষিণ ভারতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।

পূর্বঘাট পর্বতশ্রেণি –

  • দাক্ষিণাত্য মালভূমির পূর্ব সীমায় পূর্ব উপকূলের সমান্তরালে উত্তর-দক্ষিণে পূর্বঘাট পর্বতশ্রেণি বিস্তৃত।
  • এই পর্বতশ্রেণি খুবই বিচ্ছিন্ন এবং এর উচ্চতাও অনেক কম গড়ে 600 মি)।
  • নান্নামালাই, ভেলিকোণ্ডা, পলকোণ্ডা, সেভরয়, পচামালাই, জাভাদি প্রভৃতি কয়েকটি বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের সমন্বয়ে পূর্বঘাট পর্বতমালা গঠিত।
  • গোদাবরী ও মহানদীর মাঝখানে অবস্থিত পূর্বঘাটের উত্তরাংশ বেশ উঁচু। এর স্থানীয় নাম মহেন্দ্রগিরি। পূর্বঘাটের অন্য কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পাহাড় পাহাড় হল — নাল্লামালাই, পচামালাই, ভেলিকোন্ডা প্রভৃতি।
  • এই পর্বতশ্রেণির সবচেয়ে উঁচু অংশ হল আরমাকোন্ডা (1680 মি)।

ভারতের পূর্ব উপকূলভূমি ও পশ্চিম উপকূলভূমির তুলনা করো।

পূর্ব উপকূলভূমি এবং পশ্চিম উপকূলভূমির তুলনা

পার্থক্যের বিষয়পূর্ব উপকূলভূমি (বঙ্গোপসাগর-সংলগ্ন)পশ্চিম উপকূলভূমি (আরব সাগর-সংলগ্ন)
প্রশস্ততাপূর্ব উপকূলভূমি বেশ প্রশস্ত (গড়ে 100 কিমি)। পশ্চিম উপকূলভূমি খুব সংকীর্ণ। গোয়াতে সর্বনিম্ন 1 কিমি বা আরও কম থেকে মালাবার উপকূলে সর্বোচ্চ 80 কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।
উচ্চতাসমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই উপকূলভূমির উচ্চতা কম।সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই উপকূলভূমি অনেক উঁচু।
বালিয়াড়িউপকূলের প্রায় সর্বত্র বালিয়াড়ি আছে। শুধু দক্ষিণাংশে বালিয়াড়ি আছে।
উপকূলের প্রকৃতিদক্ষিণাংশ ছাড়া উপকূলরেখা অভগ্ন, এজন্য বন্দরের সংখ্যা কম।উপকূলরেখা প্রায় সর্বত্রই ভগ্ন বলে বন্দরের সংখ্যা বেশি।
প্রবাহিত নদীসমূহএই সমভূমির ওপর দিয়ে মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী প্রভৃতি বড়ো বড়ো নদী প্রবাহিত হয়েছে এবং নদীগুলির মোহানাও প্রশস্ত।নেত্রাবর্তী, সরাবতী, পেরিয়ার প্রভৃতি ছোটো ছোটো নদী এই সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এবং নদীগুলির মোহানাও সংকীর্ণ।
বদ্বীপনদীর মোহানাগুলিতে বড়ো বড়ো বদ্বীপ আছে।নেত্রাবতী নদীর মোহানায় একটি ছোটো বদ্বীপ ছাড়া আর কোনো নদীর মোহানায় বদ্বীপ নেই।
হ্রদ ও উপহ্রদের উপস্থিতিউপকূলের বিভিন্ন অংশে হ্রদ ও উপহ্রদ আছে। যেমন — চিলিকা, কোলেরু, পুলিকট প্রভৃতি।একমাত্র দক্ষিণাংশ ছাড়া উপকূলভূমির কোথাও হ্রদ বা উপহ্রদ নেই। যেমন — ভেমবানাদ, পোনমুদি, অষ্টমুদি প্রভৃতি।
মৃত্তিকার উর্বরতা ও কৃষিতে ভূমিকামৃত্তিকা উর্বর এবং উপকূলভূমির সর্বত্রই কৃষিতে সমৃদ্ধ।মৃত্তিকা কম উর্বর (কোঙ্কন ও মালাবার ছাড়া), তাই কৃষিকাজও উন্নত নয়।
বৃষ্টিপাতের পরিমাণবৃষ্টিপাত মাঝারি ধরনের।বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি।
শিল্পে ভূমিকাপূর্ব উপকূলভূমি শিল্পে সমৃদ্ধ।দু-একটি স্থান ছাড়া শিল্পের বিকাশ লক্ষণীয় নয়।
যোগাযোগ ব্যবস্থাচওড়া উপকূলভূমির জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত।সংকীর্ণ উপকূলভূমির জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ততটা উন্নত নয়।

দাক্ষিণাত্য মালভূমির অবস্থান ও ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করো।

দাক্ষিণাত্য মালভূমির অবস্থান –

উপদ্বীপীয় মালভূমি’র মূল ভূখণ্ডটির নাম দাক্ষিণাত্য মালভূমি। উত্তরে বিন্ধ্য পর্বত, দক্ষিণে কন্যাকুমারী, পূর্বে পূর্বঘাট পর্বতমালা বা মলয়াদ্রি এবং পশ্চিমে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা বা সহ্যাদ্রি-র মধ্যবর্তী অংশে দাক্ষিণাত্য মালভূমি বিস্তৃত। মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরালা ও তামিলনাড়ু রাজ্যের মালভূমি এই অঞ্চলের অন্তর্গত।

দাক্ষিণাত্য মালভূমির ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য –

  • এই অঞ্চলটি পৃথিবীর প্রাচীনতম ভূভাগ বা শিল্ড (shield) মালভূমির অংশ।
  • অঞ্চলটি প্রাচীন গ্রানাইট, নিস প্রভৃতি আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা দ্বারা গঠিত।
  • কোটি কোটি বছর ধরে ক্ষয় হওয়ার ফলে দাক্ষিণাত্য মালভূমির অনেক অংশ সমপ্রায়ভূমি এবং ব্যবচ্ছিন্ন মেসা (mesa) ও বিউট (butte) ভূভাগে পরিণত হয়েছে।
  • সমগ্ৰ মালভূমি পশ্চিম থেকে পূর্বে ঢালু এবং উত্তরাংশের তুলনায় দক্ষিণাংশ ক্রমশ উঁচু।
  • মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশে লাভা গঠিত ডেকান ট্র্যাপ (deccan trap) অঞ্চল দেখা যায়। ‘ট্র্যাপ’ (trap) শব্দটির অর্থ ‘সিঁড়ি’। মহারাষ্ট্র মালভূমি নামে পরিচিত এই মালভূমির শীর্ষদেশ চ্যাপটা, ঢাল যথেষ্ট খাড়াই এবং দুই পার্শ্বভাগ ধাপ সমন্বিত।
  • ডেকান ট্র্যাপের দক্ষিণে কর্ণাটক মালভূমি অংশে যে অনুচ্চ প্রায় সমতল শীর্ষভাগযুক্ত অঞ্চল দেখা যায় তা ময়দান এবং ময়দানের দক্ষিণে যথেষ্ট উঁচু ও পাহাড় সমন্বিত যে অঞ্চল দেখা যায় তা মালনাদ নামে পরিচিত।
  • ত্রিভুজাকৃতি এই মালভূমি তিনদিকে পর্বতবেষ্টিত। এগুলির মধ্যে উত্তরে আছে সাতপুরা-মহাদেব-মহাকাল-অজন্তা পর্বতশ্রেণি, পশ্চিমে আছে পশ্চিমঘাট বা সহ্যাদ্রি পর্বতমালা এবং পূর্বে আছে পূর্বঘাট বা মলয়াদ্রি পর্বতমালা।
  • পশ্চিমঘাট পর্বতমালার দক্ষিণ প্রান্তে আনাইমালাই পর্বত অবস্থিত। এই পর্বতের আনাইমুদি (2695 মি) দাক্ষিণাত্য মালভূমির উচ্চতম শৃঙ্গ ৷
দক্ষিণাত্যের মালভূমির অবস্থান ও ভূতাত্ত্বিক গঠন

পশ্চিম উপকূলের সমভূমির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

পশ্চিম উপকূলের সমভূমি

পশ্চিম উপকূলের সমভূমির অবস্থান ও পরিচয় –

  • উত্তরে কচ্ছের রান অঞ্চল থেকে দক্ষিণে কন্যাকুমারী পর্যন্ত পশ্চিম উপকূল সমভূমি বিস্তৃত।
  • পূর্ব সীমায় আছে পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণি এবং পশ্চিম সীমায় আরব সাগর।
  • পূর্ব উপকূলের সমভূমির তুলনায় এই সমভূমিটি বেশ সংকীর্ণ।
  • উত্তরে কচ্ছের রান অঞ্চল থেকে দক্ষিণে সমভূমিটি ক্রমশ সংকীর্ণ হয়েছে।
  • এখানে নদী বদ্বীপ নেই বললেই চলে।
পশ্চিম উপকূলের সমভূমি

উপ-অঞ্চল ও ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য –

পশ্চিম উপকূলের সমভূমি অঞ্চলকে চারটি অংশে ভাগ করা যায় –

গুজরাত উপকূলের সমভূমি –
  • পশ্চিম উপকূলের উত্তরাংশের নাম গুজরাত উপকূলের সমভূমি।
  • অঞ্চলটি উত্তরে গুজরাত রাজ্যের কচ্ছ ও কাথিয়াবাড় উপদ্বীপ থেকে দক্ষিণে মহারাষ্ট্রের উত্তর সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত।
  • কচ্ছ উপদ্বীপে আছে এক বিস্তীর্ণ অগভীর লবণাক্ত জলাভূমি বা রান। এর উত্তর ভাগের নাম বৃহৎ রান এবং দক্ষিণ ভাগের নাম ক্ষুদ্র রান।
  • কাথিয়াবাড় উপদ্বীপটি যথেষ্ট প্রশস্ত ও মাঝখানটি উঁচু। ওই অংশে গিরনার ও গির নামে দুটি পাহাড় আছে।
  • সবরমতী, মাহী, নর্মদা, তাপ্তী প্রভৃতি পশ্চিমবাহিনী নদী দ্বারা বিপুল পরিমাণ পলিরাশি বাহিত হয়ে খাম্বাত উপসাগরে অবক্ষেপিত হওয়ায় এই সমভূমির সীমানা ক্রমশ পশ্চিমদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কোঙ্কন উপকূলের সমভূমি –
  • মহারাষ্ট্রের উত্তর সীমা, অর্থাৎ সুরাতের কিছুটা দক্ষিণ থেকে গোয়া পর্যন্ত কোঙ্কন উপকূল সমভূমি বিস্তৃত।
  • সমভূমিটি খুব সংকীর্ণ এবং ভগ্ন। অধিকাংশ জায়গায় এই সমভূমি পাথর দ্বারা গঠিত। ঔ স্থানে স্থানে কাদাগুতি পাওয়া যায়।
  • স্থানে স্থানে ছোটো ছোটো বালিয়াড়ি, কাদাগঠিত নিম্নসমভূমি, জলাভূমি, বালুকাময়য় তটভূমি, সামুদ্রিক চড়া এবং লাভা গঠিত পাহাড় প্রভৃতি কোঙ্কন উপকূলের সমভূমিতে বৈচিত্র্যপূর্ণ করে তুলেছে।
র্ণাটক উপকূলের সমভূমি –
  • গোয়ার দক্ষিণে কারওয়ার উপকূল থেকে কান্নানোর পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল কৰ্ণাটক বা কারওয়ার উপকূলের সমভূমি নামে পরিচিত।
  • এর দৈর্ঘ্য প্রায় 225 কিমি।
  • এই উপকূলও বেশ সংকীর্ণ, তবে ম্যাঙ্গালোরের পর থেকে অংশটি কিছুটা চওড়া।
  • উপকূলের স্থানে স্থানে বালুকাময় তটভূমি আছে, কোনো কোনো স্থানে আবার পশ্চিমঘটি পর্বতমালা সমুদ্রের তীর পর্যন্ত নেমে এসেছে।
  • ম্যাঙ্গালোরের কাছে নেত্রাবতী নদীর মোহানায় এই উপকূলের একমাত্র বদ্বীপ দেখতে পাওয়া যায়।
  • স্থানে স্থানে ছোটো ছোটো বালিয়াড়ি, কাদাগঠিত নিম্নসমভূমি, ছোটো ছোটো উপহ্রদ, সঙ্কীর্ণ নদী উপত্যকা এবং পশ্চিমঘাট পর্বতের পাদদেশবর্তী ল্যাটেরাইট গঠিত নিম্ন মালভূমি হল কর্ণাটক উপকূলের উল্লেখযোগ্য ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য।
মালাবার উপকূলের সমভূমি – 
  • কান্নানোর থেকে একেবারে দক্ষিণে কন্যাকুমারী পর্যন্ত মালাবার উপকূলের সমভূমি বিস্তৃত।
  • কোঙ্কন ও কর্ণাটক উপকূলের তুলনায় এই উপকূল বেশ চওড়া, গড়ে 25 কিমি।
  • এখানকার উপকূলভূমিতে অনেক বালিয়াড়ি, জলাভূমি, হ্রদ ও উপহ্রদ বা লেগুন আছে। উপকূলের নিস্তরঙ্গ জলাভূমি ব্যাকওয়াটার্স নামে পরিচিত। স্থানীয় অধিবাসীরা উপহ্রদগুলিকে কয়াল বলে, যেমন — কোচিনের কাছে ভেমবানাদ কয়াল এবং কোল্লামের কাছে অষ্টমুদি কয়াল বিখ্যাত।

ভারতের ভূপ্রাকৃতিক বিভাগগুলি চিত্রের মাধ্যমে দেখাও (বর্ণনা নিষ্প্রয়োজন)।

ভারতের ভূপ্রাকৃতিক বিভাগ

ভারতের ভূ-প্রাকৃতিক বিভাগ

উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির বিবরণ দাও।

অথবা, ভারতের যে-কোনো একটি প্রাকৃতিক বিভাগের ভূপ্রকৃতির বিবরণ দাও।

উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি

উত্তরে হিমালয় পার্বত্যভূমি এবং দক্ষিণে উপদ্বীপীয় মালভূমির মধ্যবর্তী এলাকায় গঙ্গা, সিন্ধু, ব্রহ্মপুত্র এবং এদের বিভিন্ন উপনদী ও শাখানদীগুলি পলি সঞ্চয় করে যে বিস্তৃত সমতলভূমি গঠন করেছে তাকে বলা হয় উত্তরের সমভূমি অঞ্চল। স্থানীয় বৈচিত্র্য অনুসারে এই সুবিস্তৃত অঞ্চলটিকে চারটি উপ-অঞ্চলে ভাগ করা যায়- 

  • রাজস্থান সমভূমি
  • পাঞ্জাব বা শতদ্রু সমভূমি
  • গঙ্গা সমভূমি
  • অসম বা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা

রাজস্থান সমভূমি –

  • আরাবল্লি পর্বতের পশ্চিমে রাজস্থানের মধ্য ও পশ্চিমাংশের রুক্ষ ও শুষ্ক বালিপূর্ণ মরুময় সমতল এলাকাটি রাজস্থান সমভূমি নামে পরিচিত। এর পশ্চিম ভাগের বিস্তীর্ণ এলাকা মরুস্থলী নামে পরিচিত। এটি থর মরুভূমির অংশরূপে পাকিস্তানের মধ্যে বিস্তৃত হয়েছে।
  • মরুস্থলীর প্রস্তরময় অঞ্চলের নাম হামাদা। সমান্তরাল বালিয়াড়িগুলির মধ্যবর্তী অবনমিত অংশে বায়ুপ্রবাহের অপসরণজনিত কারণে সৃষ্ট গহ্বরে ধান্দ নামক হ্রদ দেখা যায়।
  • সমভূমির পূর্বভাগের অপেক্ষাকৃত কম বালুময় তৃণভূমি বাগর নামে পরিচিত। এখান দিয়ে লুনি নদী প্রবাহিত হয়েছে।
  • বাগর-এর পূর্বাংশে আরাবল্লি থেকে আগত ছোটো ছোটো নদী তাদের দু-পাশে পলি সঞ্চয় করে যে প্লাবনভূমির সৃষ্টি করেছে, সেগুলিকে বলা হয় রোহি।
  • জয়সলমীরের কাছের সমভূমিতে কয়েকটি ছোটো-ছোটো পাহাড় দেখা যায়।
  • থর মরুভূমির নীচু অংশে এবং জয়সলমীর শহরে কয়েকটি লবণাক্ত জলের হ্রদ দেখা যায়। এদের স্থানীয়ভাবে রান বলে। এখানকার সম্বর হ্রদ হল সমগ্র রাজস্থান সমভূমির বৃহত্তম হ্রদ।
  • উর্বর মৃত্তিকাযুক্ত অঞ্চলে কিছু পরিমাণ খেজুর, পামজাতীয় গাছ ও তৃণ জন্মায়। এই অঞ্চলটিকে মরূদ্যান বলে।

পাঞ্জাব সমভূমি –

  • রাজস্থান সমভূমির উত্তর-পূর্বে এবং যমুনা নদীর পশ্চিমে যে বিস্তৃত সমতল এলাকা আছে তাকে বলা হয় পাঞ্জাব সমভূমি। এই সমভূমি পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও দিল্লির অন্তর্গত।
  • সিন্ধুর উপনদী শতদ্রু, বিপাশা, ইরাবতী ও চন্দ্রভাগা পলি সঞ্চয় করে এই উর্বর সমভূমিটি তৈরি করেছে।
  • সমগ্র সমভূমিটির গড় উচ্চতা প্রায় 200-240 মি।
  • এর দক্ষিণ, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাংশে আরাবল্লি পর্বতের ক্ষয়ীভূত অংশবিশেষ ছড়িয়ে রয়েছে।

গঙ্গা সমভূমি –

  • গঙ্গা সমভূমি উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে বিস্তৃত।
  • পশ্চিমে যমুনা নদী থেকে শুরু করে পূর্বে গঙ্গা বদ্বীপ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এই সমতলভূমিটি গঙ্গা এবং তার বিভিন্ন উপনদী ও শাখানদীর পলি সঞ্চয়ের দ্বারা সৃষ্ট হয়েছে।
  • এই সমভূমির নদীতীরবর্তী কোনো কোনো এলাকায় প্লাবনভূমি, স্বাভাবিক বাঁধ, অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ প্রভৃতি দেখা যায়।
  • সমগ্র এলাকাটি পশ্চিম থেকে পূর্বে বা দক্ষিণ-পূর্বে ঢালু।
  • এখানকার নতুন পলিগঠিত এলাকাসমূহকে বলা হয় খাদার এবং পুরোনো পলিগঠিত এলাকাগুলিকে বলা হয় ভাঙ্গর।
  • সমভূমির উত্তর প্রান্তে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত নুড়ি ও বালিপূর্ণ সচ্ছিদ্র সংকীর্ণ অংশকে বলা হয় ভাবর।
  • ভাবর-এর দক্ষিণে জলাভূমিপূর্ণ, বন্যাপ্রবণ এবং জঙ্গলে ঢাকা যে সমতল ক্ষেত্রটি আছে তার নাম তরাইভূমি।
  • গঙ্গা সমভূমির দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে বঙ্গোপসাগর-সংলগ্ন এলাকায় গঙ্গা বদ্বীপ গড়ে উঠেছে।
  • গঙ্গা সমভূমিকে তিনভাগে ভাগ করা যায় – 1. উচ্চ-গঙ্গা সমভূমি (গঙ্গা সমভূমির উত্তরপ্রদেশের অংশ), 2. মধ্য-গঙ্গা সমভূমি (উত্তরপ্রদেশের পূর্বাংশ এবং বিহারের উত্তরাংশের সমভূমি) এবং 3. নিম্ন-গঙ্গা সমভূমি (দার্জিলিং ও পুরুলিয়া বাদে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ)।
উত্তরের সমভূমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির বিবরণ দাও।

অসম বা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা –

  • অসম রাজ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের দুপাশে যে সংকীর্ণ সমতলক্ষেত্রটি আছে তার নাম ব্রহ্মপুত্র সমভূমি।
  • সমভূমিটি প্রায় 700 কিমি দীর্ঘ এবং গড়ে ৪০ কিমি প্রশস্ত।
  • সমভূমিটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে ঢালু এবং এর ওপর দিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ বিনুনির মতো প্রবাহিত হয়েছে।
  • এখানে ব্রহ্মপুত্রের গতিপথে অসংখ্য বালুচর বা দ্বীপ গঠিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে মাজুলি দ্বীপটি বিশ্বের বৃহত্তম নদীদ্বীপ।

ভারতের প্রাচীন মালভূমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির বর্ণনা করো।

প্রাচীন মালভূমি অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি –

ভারতের প্রাচীন মালভূমির দুটি অংশ –

  • মূল ভূভাগ এবং
  • বিচ্ছিন্ন ভূভাগ।

মূল ভূভাগ –

উত্তরে বিন্ধ্য, সাতপুরা-মহাদেব-মহাকাল, পশ্চিমে সহ্যাদ্রি, পূর্বে মলয়াদ্রি এবং দক্ষিণে নীলগিরি ও আনাইমালাই পর্বতশ্রেণিসমূহের মধ্যে উপদ্বীপীয় মালভূমির মূল ভূভাগ অবস্থিত।

ভারতের প্রাচীন মালভূমি অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য –

  • এই মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশে লাভাজাত শিলা দ্বারা আবৃত মহারাষ্ট্র মালভূমি দেখা যায়, যা ডেকান ট্র্যাপ নামেও পরিচিত।
  • দক্ষিণাংশে কর্ণাটক রাজ্যের গ্র্যানাইট ও নিস পাথরে গঠিত মালভূমিকে বলে কর্ণাটক মালভূমি। এই মালভূমির পশ্চিমঘাট পর্বত-সংলগ্ন উঁচু পাহাড়ি ভূমিকে বলা হয় মালনাদ এবং পূর্বাংশের উন্মুক্ত সমতল এলাকাটির নাম ময়দান।
  • এই মালভূমির উত্তর-পূর্বাংশের নাম ছোটোনাগপুর মালভূমি। এখানকার সর্বোচ্চ অংশ হল পাট অঞ্চল গড় উচ্চতা প্রায় (1100 মি)। এখানে পরেশনাথ, দলমা, রাজমহল প্রভৃতি পাহাড় দেখা যায়। অঞ্চলটি খনিজ সম্পদে খুবই সমৃদ্ধ।
  • উপদ্বীপীয় মালভূমির উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত বা মধ্য ভারতের উচ্চভূমি অংশে মালব মালভূমি, বুন্দেলখণ্ড মালভূমি, রেওয়া মালভূমি প্রভৃতি অবস্থিত।
  • এই মালভূমির পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য এলাকা হল — ছত্তিশগড় অঞ্চল, দণ্ডকারণ্য এলাকা, তামিলনাড়ু মালভূমি প্রভৃতি।

বিচ্ছিন্ন ভূভাগ –

উপদ্বীপীয় মালভূমির একটি বিচ্ছিন্ন অংশের নাম মেঘালয় মালভূমি।

উপদ্বীপীয় মালভূমির বৈশিষ্ট্য –

  • এখানে গারো, খাসি, জয়ন্তিয়া ও মিকির পাহাড় অবস্থিত। শিলং শৃঙ্গ (1961 মি) মেঘালয় মেঘালয় মালভূমির উচ্চতম শৃঙ্গ।
  • মেঘালয় মালভূমি হল দাক্ষিণাত্য মালভূমির একটি বিচ্ছিন্ন অংশ।
  • এখানকার গড় উচ্চতা 900 মিটার।
  • এই মালভূমির উত্তরে শিলং পাহাড় ও শিলং শৃঙ্গ, উত্তর-পূর্বে মিকিরের পাহাড়ি অঞ্চল, মধ্যভাগ খাসি জয়ন্তিয়া পাহাড় এবং দক্ষিণে চেরা মালভূমি অবস্থিত।

ভূপ্রকৃতির দিক থেকে হিমাদ্রি হিমালয়ের গুরুত্ব উল্লেখ করো।

হিমাদ্রি হিমালয়ের ভূপ্রাকৃতিক গুরুত্ব –

ভারতের উত্তর সীমায় হিমালয় পর্বতমালা উত্তর-দক্ষিণে চারটি প্রায়-সমান্তরাল পর্বতশ্রেণি নিয়ে গঠিত। এগুলি হল —

  • শিবালিক বা বহিঃহিমালয়,
  • হিমাচল বা মধ্য হিমালয়,
  • হিমাদ্রি বা উচ্চ হিমালয় এবং
  • টেথিস বা ট্রান্স হিমালয় পর্বতশ্রেণি

ভূপ্রকৃতির দিক থেকে হিমাদ্রির গুরুত্ব অপরিসীম।

  • জলবায়ুগত গুরুত্ব – হিমাদ্রির গড় উচ্চতা প্রায় 6000 মিটার এবং প্রসার (চওড়া) প্রায় 120 থেকে 190 কিলোমিটার। এটি উঁচু প্রাকৃতিক প্রাচীরের মতো ভারতের উত্তরে দণ্ডায়মান থাকায় শীতকালে উত্তরদিক থেকে আগত শীতল সাইবেরীয় বাতাস এই পর্বতে বাধা পায়। আবার দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এখানেই বাধাপ্রাপ্ত হয়ে মৌসুমি বৃষ্টি ঘটাতে সাহায্য করে।
  • সর্বোচ্চ শৃঙ্গসমূহের অবস্থান – মাউন্ট এভারেস্ট (উচ্চতা ৪848 মিটার* পৃথিবীর উচ্চতম শৃঙ্গ), কাঞ্চনজঙ্ঘা (8598 মি), মাকালু (8481 মি), ধবলগিরি (8172 মি), নাঙ্গা পর্বত (8126 মি), নন্দাদেবী (7816 মি) প্রভৃতি বরফাবৃত শৃঙ্গসমূহ হিমাদ্রিতেই অবস্থিত।
  • হিমবাহ ও নিত্যবহ নদীর সৃষ্টি – অধিক উচ্চতা (প্রায় 6000 মি) এবং কম উন্নতার কারণে এখানে অনেক হিমবাহের সৃষ্টি হয়েছে (গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, জেমু প্রভৃতি)। এগুলি থেকে আবার বহু নিত্যবহ নদীর সৃষ্টি হয়েছে যা জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, জলসেচ তথা কৃষির উন্নতিতে সাহায্য করেছে।
  • যোগাযোগ ব্যবস্থায় সহায়তা – হিমাদ্রির উচ্চ অংশে অনেকগুলি গিরিপথ আছে। যেমন — বরলাচা লা, সিপকিলা, জোজিলা, লিপুলেখ, নাথুলা, জেলেপ লা প্রভৃতি। এইসব গিরিপথ হিমালয়ের উত্তর ও দক্ষিণ অংশের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষায় সহায়তা করে।
  • উর্বর মৃত্তিকার উৎসস্থল – হিমাদ্রির বিভিন্ন অংশ থেকে উৎপন্ন অসংখ্য নদনদীর পলি সঞ্চয়ের মাধ্যমেই উত্তর ভারতে বিস্তীর্ণ পলিগঠিত সমভূমি গঠিত হয়েছে।
  • পর্যটন শিল্পের প্রসারে সহায়তা – হিমাদ্রি পর্বতশ্রেণির প্রাকৃতিক পরিবেশ অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও মনোরম। ফলে এখানে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটেছে।
  • সামরিক গুরুত্ব – এই পর্বতশ্রেণি প্রাকৃতিক বাধারূপে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে ভারতকে অনেকাংশে রক্ষা করে।
  • অন্যান্য গুরুত্ব – সরলবর্গীয় বনভূমির কাষ্ঠ সম্পদ আহরণ, পশুপালন, সূক্ষ্ম শিল্পের বিকাশ (শাল উৎপাদন) প্রভৃতি ক্ষেত্রে হিমাদ্রির ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে আলোচনা করবো ভারতের প্রকৃতিক পরিবেশ – ভারতের ভূপ্রকৃতি – রচনাধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন নিয়ে। এই প্রশ্নগুলি দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় ভারতের ভূপ্রকৃতির প্রশ্ন ও উত্তর।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer