নবম শ্রেণি – বাংলা – ভাঙার গান – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

Gopi

ভাঙার গান নবম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যপুস্তকের একটি বিখ্যাত কবিতা। এটি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা একটি বিদ্রোহী কবিতা। কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২১ সালের ১০ ডিসেম্বর সওগাত পত্রিকায়।

Table of Contents

কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, কবিতাটিতে ভাঙার মাধ্যমে নতুন সৃষ্টির বার্তা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, পুরাতন, জরাজীর্ণ, কলুষিত সবকিছু ভেঙে ফেলে নতুন, সুন্দর, মুক্ত সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে।

নবম শ্রেণি – বাংলা – ভাঙার গান – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

ভাঙার গান কবিতাটির পটভূমি উল্লেখ করে মমার্থ লেখো।

পটভূমি – ভাঙার গান গানটি কাজী নজরুল ইসলাম অসহযোগ আন্দোলনের পটভূমিতে রচনা করেছিলেন ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে।

বিদ্রোহের প্রকাশ – এই গানটিতে পরাধীন দেশমাতার শৃঙ্খলমোচনের কথা বিদ্রোহের ভঙ্গিতে প্রকাশিত হয়েছে। অত্যাচারী ইংরেজ শাসক স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কারারুদ্ধ করেছে। কবি সেই কারাগারের লৌহকপাট ভেঙে লোপাট করার ডাক দিয়েছেন।

বিপ্লবীদের আত্মবলিদান – ইংরেজের অত্যাচারে দেশমাতার পূজার বেদি রক্তে লাল হয়ে গেছে। বিদেশি শাসকরা স্বদেশপ্রেমীদের গলায় ফাঁসির দড়ি পরাতে চায়। কিন্তু তারা জানে না বিপ্লবী বীরদের মৃত্যু নেই, তাঁরা মৃত্যুঞ্জয়ী।

প্রলয়ের মাধ্যমে স্বাধীনতার আবাহন – রুদ্র মহেশ্বর বা খ্যাপা ভোলানাথের মতো প্রলয়নৃত্যে সমস্ত বাঁধ ভেঙে তরুণ দেশপ্রেমীরা স্বদেশকে মুক্ত করবেই। অর্থাৎ পরাধীনতার বন্ধন ছিন্ন হবে। তীব্র ঘৃণার পদাঘাতে ভেঙে পড়বে ভীমকারার তালা। গোটা দেশটাই আজ যেন এক কারাগার। সেই কারাগার থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন কবি। তিনি বিশ্বাস করেন, দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধ ভারতবাসী এভাবেই দেশমাতাকে সমস্ত বন্ধন থেকে মুক্ত করবে।

ভাঙার গান শীর্ষক গানটির নামকরণের তাৎপর্য আলোচনা করো।

কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাঙার গান শীর্ষক গানটি যে মূলগ্রন্থে সংকলিত সেটির নামও ভাঙার গান (১৯২৪)। অর্থাৎ কবিতাটি গ্রন্থের নামকবিতা।
শিরোনামের মধ্যে অনেক সময় কোনো সাহিত্যসৃষ্টির সারবস্তুর যে আভাস পাওয়া যায় তা এখানেও আছে। অসহযোগ আন্দোলনের সময় রচিত এ – গানে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে কারারুদ্ধ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মুক্তি তথা স্বদেশের মুক্তির দৃঢ়সংকল্প প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম পঙ্ক্তিতেই কবি ভাঙার কথা স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করেছেন —

কারার ওই লৌহ-কপাট/ ভেঙে ফেল, কররে লোপাট

আবার শেষের আগের পঙ্ক্তিতে বলেছেন –

লাথি মার, ভাঙরে তালা!

সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে কারার লৌহকপাট ভেঙে লোপাট করে, তার প্রাচীর ভেদ করে ধ্বংস নিশান ওড়ানোর ডাক দিয়েছেন কবি। তিনি চেয়েছেন ঈশানের মতো প্রলয় বিষাণ বাজিয়ে, ভোলানাথের মতো তাণ্ডবনৃত্যে শাসকের সমস্ত চক্রান্ত ধূলিসাৎ করে দিক নবযুগের নওজোয়ানেরা। বিদ্রোহের আগুনে এই বন্দিশালাকে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে, শুভ, সুন্দর, স্বাধীন দেশগঠনের জন্যই কবির এই ভাঙার ডাক।
সমগ্র গানটিতে ভাঙার কথা এত প্রবলভাবে আছে বলেই ভাঙার গান শিরোনামটি যথাযথ হয়ে উঠেছে।

ভাঙার গান পাঠ্যাংশে কবির যুগচেতনা ও স্বদেশভাবনা কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে আলোচনা করো।

কবির যুগচেতনা ও স্বদেশভাবনা – কাজী নজরুল ইসলাম যুগসচেতন কবি। তিনি স্বয়ং অন্যত্র বলেছেন —

বর্তমানের কবি আমি ভাই ভবিষ্যতের নই নবি।

অত্যাচারের বিরুদ্ধে আহরান – অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে রচিত ভাঙার গান – এ গানে কবি বিদ্রোহের বার্তা দিয়েছেন। এই গানে তৎকালীন অর্থাৎ বিশ শতকের দ্বিতীয়-তৃতীয় দশকের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ফুটে উঠেছে। স্বদেশের মুক্তিকামী বিপ্লবীদের কারারুদ্ধ করা, ফাঁসিতে ঝোলানো, ভয় দেখানো, অত্যাচার করা ইত্যাদির বিরুদ্ধে কবি দেশের তরুণসমাজকে বিদ্রোহ করার আহ্বান জানিয়েছেন। অত্যাচারী ইংরেজ শাসকের কারাগারের লৌহকপাট ভেঙে ফেলতে তরুণদের ডাক দিয়েছেন কবি।

স্বদেশমুক্তির আহবান – দেশমাতার বন্ধনমোচনের গান গেয়েছেন স্বদেশপ্রেমী নজরুল। অত্যাচারী বিদেশি শাসকদের হাতে বন্দি দেশজননী। তাঁকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র বিপ্লবীদের মধ্যে উৎসাহ জাগাতে কবি বলেছেন-

লাথি মার, ভাঙরে তালা! যত সব বন্দিশালায় –
আগুন জ্বালা, আগুন জ্বালা, ফেল উপাড়ি।

দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি আছেন যেসব বীরসন্তান, তাদের মুক্ত করতে হবে। শুধু তাই নয়, পুরো দেশটাই যেন এক কারাগার। সেখান থেকে মুক্তি দিতে হবে সমগ্র দেশবাসীকে। তাই কবি তরুণ দেশপ্রেমীদের কারার ওই লৌহ-কপাট ভেঙে ফেলার ডাক দিয়েছেন। এভাবেই আলোচ্য কবিতায় কবির স্বদেশ ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে।

ভাঙার গান পাঠ্যাংশে কবির বিদ্রোহী মনোভাবের কী পরিচয় পাও?

কবির মনোভাব – ভাঙার গান কবিতায় কবি নজরুলের সহজাত বিদ্রোহী মনোভাবের প্রকাশ দেখা যায়।

কারাগারের প্রাচীর ভেদও ধ্বংস নিশান – দেশের মুক্তিকামী জনগণের প্রতি বিদেশি শাসকদের ক্রমাগত নিপীড়ন কবিকে বিদ্রোহী করে তুলেছে। দেশমাতার শৃঙ্খলমোচনে ব্রতী বীর সন্তানরা অনেকেই কারাবন্দি। তাই তরুণ ঈশান – কে প্রলয়-বিষাণ বাজিয়ে কারাগারের প্রাচীর ভেদ করে ধ্বংস নিশান ওড়াতে বলেছেন তিনি।

বন্দিশালার দরজা উন্মোচন – খ্যাপা ভোলানাথের মতো প্রলয়-দোলা দিয়ে সজোরে হ্যাঁচকা টানে গারদগুলো ভেঙ্গে দেওয়ার ডাক দিয়েছেন কবি। দুন্দুভি ঢাক কাঁধে নিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য শাসকের হাড় হিম করা ভয়ংকর হাঁক ছাড়তে বলেছেন তিনি। কালবৈশাখী ঝড়ের শক্তিতে ভীমকারার ভিত্তি নাড়িয়ে দিতে পারবেন তরুণ দেশপ্রেমীরা, ঘৃণার লাথিতে ভেঙে ফেলবেন বন্দিশালার দরজা।

মানবতার হয় ঘোষণা – আত্মদান ও সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাঁরা মৃত্যুকে জীবনপানে ডাক দেবেন। বিপ্লবীদের বন্দি করে, তাদের ফাঁসি দিয়ে ইংরেজ সরকার মুক্ত স্বাধীন সত্যকে অর্থাৎ দেশের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে রোধ করতে পারবে না। মানবতার জয় হবেই। কবির বিদ্রোহী মনোভাব গভীর দেশপ্রেম ও মানবতাবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত। সমগ্র গানটিতে সেই বিদ্রোহের সুরই ধ্বনিত হয়েছে।

ভাঙার গান পাঠ্যাংশে কবি হিন্দু ও মুসলমান পুরাণ – প্রসঙ্গ কীভাবে এনেছেন? কবির অসাম্প্রদায়িক মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দাও।

হিন্দু ও মুসলমান পুরাণ-প্রসঙ্গ – হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই ভারতবর্ষে বাস করে। এদেশ উভয়েরই। দেশমাতা তখন বিদেশি রাজশক্তির দমনপীড়নে অত্যাচারিত ও অপমানিত। বিদ্রোহী মনোভাবের প্রকাশে ভাঙার গান – এ কবি হিন্দু-মুসলমান পৌরাণিক প্রসঙ্গের ব্যবহার করেছেন। পরাধীনতার বন্ধন থেকে স্বদেশকে মুক্ত করার জন্য কবি ভাঙার গান – এ হিন্দু পুরাণে উল্লিখিত মহাদেবের রুদ্র ও খ্যাপা স্বরূপের প্রসঙ্গ এনেছেন। তরুণ বিপ্লবীরা যেন শিবের মতো ধ্বংসের শিঙা বাজিয়ে ইংরেজদের শৃঙ্খল থেকে স্বদেশকে মুক্ত করেন — এই কামনায় কবি বলেছেন —

ওরে ও তরুণ ঈশান। / বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ।

একই উদ্দেশ্যে পুনরায় কবি বলেছেন —

ওরে ও পাগলা ভোলা/ দে রে দে প্রলয়-দোলা।

অন্যদিকে, ইসলাম পুরাণ অনুযায়ী হজরত মহম্মদের জামাতা চতুর্থ খলিফা আলির বলিষ্ঠ হৈদরী হাঁকের মতো ইংরেজদের ভয়ংকর ও জোরালো হাঁক দিতে বলেছেন তরুণ বিপ্লবীদের –

মার হাঁক হৈদরী হাঁক,/কাঁধে নে দুন্দুভি ঢাক।

কবির অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় – কবি নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক ও উদার মানবতাবাদী। আলোচ্য গানে এবং অসংখ্য গান – কবিতায় হিন্দু ও মুসলমান পুরাণ-প্রসঙ্গ ব্যবহার করে বারবার তিনি সম্প্রীতির বার্তা দিতে চেয়েছেন। আলোচ্য কবিতায় দুই সম্প্রদায়গত পুরাণ-প্রসঙ্গ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও তাঁর অসাম্প্রদায়িক মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় পাওয়া যায়।

ওরে ও তরুণ ঈশান এবং ওরে ও পাগলা ভোলা – পৃথক দুটি পঙ্ক্তিতে কবি শিবের প্রসঙ্গ এনেছেন কেন?

শিবের প্রসঙ্গ আনার কারণ – কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিভিন্ন রচনায় শিবের প্রসঙ্গ ব্যবহৃত হয়েছে। ভাঙার গান – এ দেবাদিদেব মহাদেব দুটি পঙ্ক্তিতে দুটি ভিন্ন নামে প্রাসঙ্গিকভাবে উপস্থিত। তৃতীয় পক্তিতে তিনি ঈশান এবং নবম পঙ্ক্তিতে ভোলা নামে উল্লিখিত হয়েছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর বিপ্লবীদের কবি রুদ্র ঈশানের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তরুণ দেশপ্রেমীরা শিবের মতো রুদ্রমূর্তি ধারণ করে প্রলয়ের শিঙা বাজিয়ে, ধ্বংসের নিশান উড়িয়ে কারাগারের প্রাচীর ভেঙে ফেলুক—এটাই কবির বাসনা।
খ্যাপা ভোলানাথের প্রলয়দোলার মতো হ্যাঁচকা টানে গারদগুলো ভেঙে ফেলতে বলেছেন কবি। অত্যাচারী ইংরেজ শাসকের কারাগারে বন্দি দেশমাতার সন্তানরা। পরাধীনতার কারাগারে গোটা দেশটাই বন্দি। প্রলয়ংকরী শিবশক্তিতে জেগে উঠে সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করতে হবে তরুণ দেশপ্রেমীদের। মহাদেব ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতা। তিনি অন্যায় ও অশুভের বিনাশ ঘটিয়ে ন্যায় ও শুভের প্রতিষ্ঠা করতে প্রচণ্ড রুদ্রমূর্তিতে আবির্ভূত হন। ক্ষিপ্ত ভোলানাথের মতোই তরুণরাও সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ শাসনকে ধ্বংস করে, অন্যায়-অত্যাচারের অবসান ঘটিয়ে নতুন রূপে সমাজ ও দেশকে গড়ে তুলবেন বলে কবি আশা করেন। এই কারণেই কবি শিবের প্রসঙ্গটি এনেছেন।

ভাঙার গান – এ কবির প্রতিবাদী ও স্বাধীন মনের পরিচয় কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে লেখো।

অথবা, ভাঙার গান কবিতাটিতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের যে তীব্রতা প্রকাশ পেয়েছে কবি মানসিকতার প্রেক্ষিতে তা আলোচনা করো।

প্রতিবাদী ভাবনা – নজরুল ইসলামের সৃষ্টির সিংহভাগ জুড়ে তাঁর বিদ্রোহী, প্রতিবাদী ও স্বাধীনচেতা সত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। ভাঙার গান – ও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানে কবির প্রতিবাদী সত্তা স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে। কবিতার প্রথম পঙ্ক্তিতেই তিনি বলেছেন —

কারার ওই লৌহ-কপাট/ ভেঙে ফেল, কররে লোপাট।

যে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ইংরেজ সরকার কারারুদ্ধ করেছে, লৌহকপাট ভেঙে তাঁদের মুক্ত করতে হবে। হ্যাঁচকা টানে গারদগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। লাথি মেরে ভাঙতে হবে বন্দিশালার তালা। ভীমকারার ভিত্তি নাড়িয়ে দিতে হবে। পরাধীন দেশে শাসক ইংরেজদের দমনপীড়নের বিরুদ্ধে কবি এমনই বলিষ্ঠ প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

স্বদেশমুক্তির ভাবনা – স্বদেশের স্বাধীনতার জন্য যাঁরা লড়াই করছেন, তাঁরা সবাই মুক্ত ও স্বাধীন সত্যের পূজারি। সেই সত্য – কে কেউ বন্দি করতে বা সাজা দিতে পারবে না। ব্যক্তির মৃত্যু হলেও বৈপ্লবিক আদর্শ অমর, সত্য অবিচল, মানবতার বিনাশ নেই। অত্যাচারী ইংরেজ শাসক স্বাধীনতার সংকল্পকে কোনোমতেই নষ্ট করতে পারবে। না। দেশপ্রেমীরা তরুণ ঈশানের মতো, পাগলা ভোলার মতো মনেপ্রাণে স্বাধীন। ইংরেজদের হটিয়ে সমস্তরকম বন্ধন থেকে স্বদেশকে মুক্ত করার স্বপ্ন দেখেছেন কবি। এভাবেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তাঁর স্বাধীন মনের পরিচয়।

ভাঙার গান কবিতাটিতে কবি নজরুলের কবি মানসিকতার যে পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে তা সংক্ষেপে লেখো।

কবি-মানসিকতা – কাজী নজরুল ইসলামের ভাঙার গান শাসক কবিতাটি স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ মানুষের প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধের আকাঙ্ক্ষাকেই যেন প্রকাশ করে। এই কবিতায় সাম্রাজ্যবাদী শ্রেণির প্রতি কবির বিদ্রোহী মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কারাগারের লৌহকপাটকে ভেঙে ফেলে সেখানে থাকা রক্ত জমাট/শিকল-পুজোর পাষাণ-বেদী – কে কবি ধ্বংস করতে বলেছেন। জেলখানার গারদগুলোয় হেঁচকা টান দিতে বলেছেন। আত্মদানের মধ্যে দিয়েই কবি চেয়েছেন জীবনকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠা করতে, বলেছেন — ডাক ওরে ডাক/ মৃত্যুকে ডাক জীবনপানে। কখনও বা বলেছেন বন্দিশালায় আগুন জ্বালিয়ে তাকে উপড়ে ফেলার জন্য।
এই আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে কবি নজরুলের শুধু দুঃসাহস নয়, বরং বিদ্রোহ, সত্য ও স্বাধীনতার প্রতি আনুগত্যও প্রকাশ পেয়েছে। আপসহীন প্রতিবাদী মানসিকতায় কবি শুধু বিদ্রোহের কথা বলেননি, স্বাধীনতার জয় ঘোষণা করেছেন। গাজনের বাজনা বাজিয়ে ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সৃষ্টির আগমনকে ঘোষণা করেছেন কবি। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সেখানে জীবনের নতুন অভিষেক ঘটবে। শাসক আর শাসিতের মধ্যেকার দূরত্ব মিটে যাবে। এভাবেই ভাঙার গান কবিতাটিতে নজরুলের স্বাধীনতাপ্রিয় বিদ্রোহী মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে।

ভাঙার গান – এর গঠনশৈলী বা আঙ্গিকশিল্প সম্পর্কে আলোচনা করো।

অথবা, ভাঙার গান কবিতায় কবির রচনাশৈলী কতটা আক্রমণাত্মক বিচার করো।

কবিতার গঠনশৈলী – কোনো কবিতার ভাবগত দিকের সঙ্গে গঠনগত দিকটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কবিতার ছন্দ-অলংকার শব্দ ব্যবহার ইত্যাদিকে মিলিতভাবে তার গঠনশৈলী বা আঙ্গিকশিল্প বলা হয়।
শব্দব্যবহার – আলোচ্য গানে কবির যে বিদ্রোহী ও প্রতিবাদী মনোভাব ব্যক্ত হয়েছে, তার সঙ্গে শব্দপ্রয়োগ অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ। লৌহ-কপাট – এর মতো তৎসম শব্দ ব্যবহারের পাশাপাশি কবি জোরসে, হেঁচকা টানের মতো চলিত শব্দগুচ্ছ প্রয়োগ করে বক্তব্যে বলিষ্ঠতা এনেছেন। লাথি মার, ভাঙরে তালা ইত্যাদি বাক্য বা বাক্যাংশে অত্যাচারী ইংরেজ শাসকের বিরুদ্ধে কবির ক্ষোভ ও ঘৃণা চমৎকার শিল্পসৌন্দর্যে প্রকাশিত হয়েছে।

চিত্রকল্প – তরুণ ঈশান, প্রলয়-বিষাণ, গাজনের বাজনা, পাগলা ভোলা, হৈদরী হাঁক ইত্যাদি পৌরাণিক ও লৌকিক প্রসঙ্গের মাধ্যমে কবি দারুণ চিত্রকল্প সৃষ্টির প্রয়াস দেখিয়েছেন।

ছন্দ – আলোচ্য গানটি দ্রুতলয়ের দলবৃত্ত ছন্দে লেখা এবং প্রত্যেক পর্বে প্রবল শ্বাসাঘাত বা ঝোঁক পড়েছে। এক পঙ্ক্তি অন্তর অন্ত্যমিল (বেদী/ভেদি) যেমন আছে, তেমনই আছে মধ্যমিল (ঈশান/বিষাণ)।
এ ছাড়া সমগ্র রচনাটির ভিতর ছোটো ছোটো উৎকৃষ্ট শৈল্পিক কাজও আছে — যা একজন অত্যন্ত দক্ষ ও সচেতন স্রষ্টার পরিচয় দেয়। তাই এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, আলোচ্য গঠনশৈলী বা আঙ্গিকশিল্প কবি নজরুলের স্বকীয়তার পরিচায়ক এবং তা খুবই উন্নতমানের।

ভাঙার গান কবিতাটি যুব সমাজকে জাগরিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ কবিতা। এটি যুব সমাজকে সচেতন করে তোলে এবং তাদেরকে প্রতিবাদী ও সংগ্রামী হতে অনুপ্রাণিত করে।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Tom Loses a Tooth

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

The North Ship

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer