ক্ষিতীশের রাগটা মুহূর্তে অবাক হয়ে যায়। — ক্ষিতীশের এই মনোভাবের পরিবর্তনের কারণ আলোচনা করো।

“ক্ষিতীশের রাগটা মুহূর্তে অবাক হয়ে যায়।” এই উক্তিটি দশম বাংলা সহায়ক পাঠ কোনি উপন্যাস থেকে নেওয়া হয়েছে।”ক্ষিতীশের রাগটা মুহূর্তে অবাক হয়ে যায়।” — ক্ষিতীশের এই মনোভাবের পরিবর্তনের কারণ আলোচনা করো। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যান্ত গুরুত্তপূর্ণ। কোনি উপন্যাসের এই রচনাধর্মী প্রশ্নটি তৈরী করে গেলে মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় একটি ৫ নম্বরের পাওয়া যেতে পারে।


জুপিটার ক্লাব থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর ক্ষিতীশ কোনিকে একজন দক্ষ সাঁতারু হিসেবে গড়ে তুলে জুপিটারকে প্রতিশোধ নেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু চরম দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করা কোনির কাছে সাঁতারের চেয়ে খাবারই ছিল অধিক গুরুত্বপূর্ণ। একদিন ক্ষিতীশের তিরস্কারে বিরক্ত হয়ে কোনি জল থেকে উঠে পড়ে এবং সাঁতারের পর খাবারের প্রতিশ্রুতি পেয়েই সে আবার জলে নামতে রাজি হয়। বিকেলের অনুশীলনে সে আবার অনুপস্থিত থাকে।

পরদিন সকালে কোনি যখন আধঘণ্টা দেরিতে অনুশীলনে আসে, তখন ক্ষিতীশ রেগে যান। কিন্তু ক্ষিতীশ কিছু বলার আগেই কোনি দাবি জানায় যে, খাবারের বদলে তাকে রোজ এক টাকা করে দেওয়া হোক। তার এই কথায় দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার যে সুপ্ত ইচ্ছা ছিল, খিদের যন্ত্রণাকে ভুলে যাওয়ার জন্য যে প্রাণপণ চেষ্টা ছিল – তা রাগের বদলে ক্ষিতীশকে বিস্মিত করে বেশি। যদিও মৌখিকভাবে ক্ষিতীশ রাগেরই প্রকাশ ঘটান এবং সাঁতার শেখানোর জন্য এক টাকা করে দিতে হবে, এটা যে তাঁর পিতৃদায় নয় তা স্পষ্ট করে দেন। কিন্তু কোনিও ছিল বেপরোয়া – “অত খাটাবেন আর খেতে দেবেন না?” কোনির এ কথা শুনে ক্ষিতীশ হেসে ফেলেন। এর মধ্য দিয়ে দুজনের যেন এক নিঃশব্দ বোঝাপড়া হয়ে যায়।

ক্ষিতীশের রাগটা মুহূর্তে অবাক হয়ে যায়। — ক্ষিতীশের এই মনোভাবের পরিবর্তনের কারণ আলোচনা করো।

“ক্ষিতীশের রাগটা মুহূর্তে অবাক হয়ে যায়।” — ক্ষিতীশের এই মনোভাবের পরিবর্তনের কারণ আলোচনা করো।

ক্ষিতীশের মনোভাব পরিবর্তনের কারণ –

  • জুপিটারকে উপযুক্ত জবাব – জুপিটার থেকে বিতাড়িত ক্ষিতীশ চেয়েছিলেন সাঁতারু হিসেবে কোনিকে গড়ে তুলে জুপিটারকে উপযুক্ত জবাব দিতে। কিন্তু প্রথমদিকে চরম দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করা কোনির কাছে সাঁতার ততটাও গুরুত্ব পায়নি।
  • কোনিকে প্রতিশ্রুতিদান – একদিন ক্ষিতীশের তিরস্কারে বিরক্ত হয়ে কোনি জল থেকেই উঠে পড়ে। সাঁতারের পরে খাবার পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়ে তবেই সে আবার জলে নামতে রাজি হয়। তবে বিকেলের অনুশীলনে সে আবার অনুপস্থিত থাকে।
  • নিঃশব্দ বোঝাপড়া – পরদিন সকালে কোনি যখন আধঘণ্টা দেরিতে অনুশীলনে আসে, স্বভাবতই ক্ষিতীশ রেগে যান। কিন্তু ক্ষিতীশ কিছু বলার আগেই কোনি দাবি জানায় যে, খাবারের বদলে তাকে যেন রোজ এক টাকা করে দেওয়া হয়। তার এই কথায় দারিদ্র্যের মোকাবিলা করার যে সুপ্ত ইচ্ছা ছিল, খিদের যন্ত্রণাকে ভুলে যাওয়ার জন্য যে প্রাণপণ চেষ্টা ছিল-তা রাগের বদলে ক্ষিতীশকে বিস্মিত করে বেশি। যদিও মৌখিকভাবে ক্ষিতীশ রাগেরই প্রকাশ ঘটান। সাঁতার শেখানোর জন্য এক টাকা করে দিতে হবে, এটা যে তাঁর পিতৃদায় নয় তা তিনি স্পষ্ট করে দেন। কিন্তু কোনিও ছিল বেপরোয়া – অত খাটাবেন আর খেতে দেবেন না? কোনির এ কথা শুনে ক্ষিতীশ হেসে ফেলেন। এর মধ্য দিয়ে দুজনের যেন এক নিঃশব্দ বোঝাপড়া হয়ে যায়।

আরও পড়ুন, তোর আসল লজ্জা জলে, আসল গর্বও জলে। — কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উপসংহারে বলা যায়, কোনির দারিদ্র্য ও ক্ষিতীশের তীব্র আকাঙ্ক্ষা দুটোই এই গল্পের মূল চালিকাশক্তি। কোনি শুধু একজন দক্ষ সাঁতারু হতে চায় না, সে চায় দারিদ্র্যের শেকল ভেঙে বেরিয়ে আসতে। ক্ষিতীশ শুধু কোনিকে একজন ভালো সাঁতারু হিসেবে গড়ে তুলতে চায় না, সে চায় জুপিটার ক্লাবের ঔদ্ধত্যের জবাব দিতে। এই দুই মানুষের আকাঙ্ক্ষা একত্রিত হয়ে গল্পের মূল দ্বন্দ্ব তৈরি করে।

কোনির দাবি ক্ষিতীশকে বিস্মিত করে। ক্ষিতীশ বুঝতে পারে যে কোনি শুধু খাবারের জন্য সাঁতার কাটতে চায় না, সে চায় তার জীবনে কিছু একটা অর্জন করতে। ক্ষিতীশ কোনির এই ইচ্ছাকে সম্মান করে এবং তাকে সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এই গল্পের মাধ্যমে লেখক দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার মানুষের ইচ্ছাশক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। লেখক দেখিয়েছেন যে কীভাবে দারিদ্র্যের মধ্যেও একজন মানুষ তার স্বপ্ন পূরণের জন্য লড়াই করতে পারে।

Share via:

মন্তব্য করুন