Madhyamik History Question Paper 2018 With Answer

Mrinmoy Rajmalla

এই ব্লগ পোস্টে, আমরা আসন্ন মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য ইতিহাস বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করার লক্ষ্যে ২০১৮ সালের মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র এবং উত্তর বিশ্লেষণ করবো। এই আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নের ধরণ, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু এবং পরীক্ষার সম্ভাব্য দিক সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবে। মাধ্যমিক ২০১৮ সালের ইতিহাস প্রশ্নপত্র শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি পরীক্ষকদের প্রশ্নপত্র তৈরির ধরণ ও পছন্দের বিষয়বস্তু সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা প্রদান করে।

Table of Contents

Madhyamik 2018 History Question Paper With Answer

বিভাগ – ক

১. সঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো : ১×২০=২০

১.১ ‘জীবনের ঝরাপাতা’ গ্রন্থটি হল একটি –

(ক) উপন্যাস

(খ) কাব্যগ্রন্থ

(গ) জীবনীগ্ৰন্থ

(ঘ) আত্মজীবনী

উত্তর : (ঘ) আত্মজীবনী।

১.২ ‘সোমপ্রকাশ’ ছিল একটি –

(ক) দৈনিক পত্রিকা

(খ) সাপ্তাহিক পত্রিকা

(গ) পাক্ষিক পত্রিকা

(ঘ) মাসিক পত্রিকা

উত্তর : (খ) সাপ্তাহিক পত্রিকা।

১.৩ ‘নীলদর্পণ’ নাটকের ইংরেজি অনুবাদের প্রকাশক ছিলেন –

(ক) কালীপ্রসন্ন সিংহ

(খ) মাইকেল মধুসূদন দত্ত

(গ) হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়

(ঘ) রেভাঃ জেমস লঙ

উত্তর : (ঘ) রেভাঃ জেমস লঙ।

১.৪ সতীদাহ প্রথা রদ হয় –

(ক) ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে

(খ) ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে

(গ) ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে

(ঘ) ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে

উত্তর : (খ) ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে।

১.৫ সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ প্রচার করেছিলেন –

(ক) বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী

(খ) স্বামী বিবেকানন্দ

(গ) শ্রীরামকৃষ্ণ

(ঘ) কেশবচন্দ্র সেন

উত্তর : (গ) শ্রীরামকৃষ্ণ।

১.৬ কোল বিদ্রোহ (১৮৩১-৩২) অনুষ্ঠিত হয়েছিল –

(ক) মেদিনীপুরে

(খ) ঝাড়গ্রামে

(গ) ছোটোনাগপুরে

(ঘ) রাঁচিতে

উত্তর : (গ) ছোটোনাগপুরে/(ঘ) রাঁচিতে।

১.৭ ভারতে প্রথম অরণ্য আইন পাস হয় –

(ক) ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে

(খ) ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে

(গ) ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে

(ঘ) ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে

উত্তর : (গ) ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে।

১.৮ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতার যুদ্ধ বলেছেন

(ক) রমেশচন্দ্র মজুমদার

(খ) সুরেন্দ্রনাথ সেন

(গ) বিনায়ক দামোদর সাভারকর

(ঘ) দাদাভাই নওরোজি

উত্তর : (গ) বিনায়ক দামোদর সাভারকর।

১.৯ ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অবসান ঘটে –

(ক) ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে

(খ) ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে

(গ) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে

(ঘ) ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে

উত্তর : (খ) ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে।

১.১০ ভারতসভার প্রথম সভাপতি ছিলেন –

(ক) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

(খ) আনন্দমোহন বসু

(গ) রেভাঃ কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়

(ঘ) শিবনাথ শাস্ত্রী

উত্তর : (গ) রেভাঃ কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়।

১.১১ বাংলা ভাষায় প্রথম ছাপা বই হল –

(ক) বর্ণপরিচয়

(খ) এ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গোয়েজ

(গ) মঙ্গল সমাচার মতিয়ের

(ঘ) অন্নদামঙ্গল

উত্তর : (খ) এ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গোয়েজ।

১.১২ ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’-এর যে বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন –

(ক) জগদীশচন্দ্র বসু

(খ) সি. ভি. রমন

(গ) প্রফুল্লচন্দ্র রায়

(ঘ) সত্যেন্দ্রনাথ বসু

উত্তর : (খ) সি. ভি. রমন।

১.১৩ বয়কট আন্দোলনের ফলে অর্থনৈতিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল –

(ক) বাংলার কৃষক শ্রেণি

(খ) মধ্যবিত্ত শ্রেণি

(গ) জমিদার শ্রেণি

(ঘ) ছাত্রসমাজ

উত্তর : (ক) বাংলার কৃষক শ্রেণি।

১.১৪ বাবা রামচন্দ্র কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন –

(ক) বিহারে

(খ) যুক্তপ্রদেশে

(গ) রাজস্থানে

(ঘ) মহারাষ্ট্রে

উত্তর : (খ) যুক্তপ্রদেশে।

১.১৫ রম্পা উপজাতীয় বিদ্রোহ সংঘটিত হয় –

(ক) মালাবার অঞ্চলে

(খ) কোঙ্কণ উপকূলে

(গ) উড়িষ্যায়

(ঘ) গোদাবরী উপত্যকায়

উত্তর : (ঘ) গোদাবরী উপত্যকায়।

১.১৬ ‘নারী কর্ম মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন –

(ক) ঊর্মিলা দেবী

(খ) বাসন্তী দেবী

(গ) কল্পনা দত্ত

(ঘ) লীলা রায় (নাগ)

উত্তর : (ক) ঊর্মিলা দেবী।

১.১৭ সূর্য সেন প্রতিষ্ঠিত বিপ্লবীদলের নাম ছিল –

(ক) অনুশীলন সমিতি

(খ) গদর দল

(গ) ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি

(ঘ) বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স

উত্তর : (গ) ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি।

১.১৮ দলিতদের ‘হরিজন’ আখ্যা দিয়েছিলেন –

(ক) জ্যোতিবা ফুলে

(খ) নারায়ণ গুরু

(গ) গান্ধীজি

(ঘ) ড. আম্বেদকর

উত্তর : (গ) গান্ধীজি।

১.১৯ স্বতন্ত্র ভাষাভিত্তিক অন্ধ্রপ্রদেশ গঠিত হয় –

(ক) ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে

(খ) ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে

(গ) ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে

(ঘ) ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে

উত্তর : (গ) ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে।

১.২০ গোয়া ভারতভুক্ত হয় –

(ক) ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে

(খ) ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে

(গ) ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে

(ঘ) ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে

উত্তর : (গ) ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে।

বিভাগ – খ

২. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (প্রতিটি উপবিভাগ থেকে অন্ততঃ ১টি করে মোট ১৬টি প্রশ্নের উত্তর দাও) : ১×১৬=১৬

উপবিভাগ : ২.১

২.১ একটি বাক্যে উত্তর দাও : ১×৪=৪

(২.১.১) ‘ভারতমাতা’ চিত্রটি কোন ঐতিহাসিক ঘটনার পটভূমিকায় অঙ্কিত?

উত্তর : ‘ভারতমাতা’ চিত্রটি স্বদেশি আন্দোলনের বা বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের পটভূমিকায় রচিত হয়।

(২.১.২) নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (১৯২০) কোথায় প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর : নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয় বোম্বাই-এ।

(২.১.৩) ফরোয়ার্ড ব্লক কোন বছর প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর : ফরোয়ার্ড ব্লক প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩রা মে।

(২.১.৪) মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তর : মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা – শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর।

উপবিভাগ : ২.২

২.২ সত্য বা মিথ্যা নির্ণয় কর : ১×৪=৪

(২.২.১) মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালিকে নৃত্যের বিষয়ে আগ্রহী করে তুলেছিলেন উদয়শংকর।

উত্তর : সত্য।

(২.২.২) ভারত সভা ইলবার্ট বিলের বিরোধিতা করেছিল।

উত্তর : মিথ্যা।

(২.২.৩) ফরাজি একটি প্রাচীন উপজাতির নাম।

উত্তর : মিথ্যা।

২.২.৪ বাংলায় লাইনো টাইপ প্রবর্তন করেন বিদ্যাসাগর।

উত্তর : মিথ্যা।

উপবিভাগ : ২.৩

২.৩ ‘ক’ স্তম্ভের সঙ্গে ‘খ’ স্তম্ভ মেলাও : ১×৪=৪

‘ক’ স্তম্ভ‘খ’ স্তম্ভ
(২.৩.১) জওহরলাল নেহরু(১) অসহযোগ আন্দোলন
(২.৩.২) বীরেন্দ্রনাথ শাসমল(২) পুনা চুক্তি (১৯৩২)
(২.৩.৩) কালীপ্রসন্ন সিংহ(৩) “লেটারস ফ্রম এ ফাদার টু হিজ ডটার”
(২.৩.৪) ড. আম্বেদকর(৪) হুতোম প্যাঁচার নকশা

উত্তর :

‘ক’ স্তম্ভ‘খ’ স্তম্ভ
২.৩.১ জওহরলাল নেহরু(৩) “লেটারস ফ্রম এ ফাদার টু হিজ ডটার”
২.৩.২ বীরেন্দ্রনাথ শাসমল(১) অসহযোগ আন্দোলন
২.৩.৩ কালীপ্রসন্ন সিংহ(৪) হুতোম প্যাঁচার নকশা
২.৩.৪ ড. আম্বেদকর(২) পুনা চুক্তি (১৯৩২)

উপবিভাগ : ২.৪

২.৪ প্রদত্ত ভারতবর্ষের রেখা মানচিত্রে নিম্নলিখিত স্থানগুলি চিহ্নিত ও নামাঙ্কিত করো। : ১×৪=৪

(২.৪.১) চুয়াড় বিদ্রোহের এলাকা।

(২.৪.২) মুণ্ডা বিদ্রোহের এলাকা।

(২.৪.৩) মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭) কেন্দ্র ঝাঁসি।

(২.৪.৪) দেশীয় রাজ্য জুনাগড়।

উত্তর :

ভারতবর্ষের রেখা মানচিত্রে নিম্নলিখিত স্থানগুলি চিহ্নিত ও নামাঙ্কিত করো।

উপবিভাগ : ২.৫

২.৫ নিম্নলিখিত বিবৃতিগুলির সঠিক ব্যাখ্যা নির্বাচন করো : ১×৪=৪

(২.৫.১) বিবৃতি : উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের ব্যাপ্তি ছিল খুবই সীমিত।

ব্যাখ্যা ১ : কারণ শুধুমাত্র গ্রাম বাংলায় নবজাগরণ হয়েছিল।
ব্যাখ্যা ২ : কারণ এই নবজাগরণ সীমিত ছিল শুধুমাত্র সাহিত্যের ক্ষেত্রে।
ব্যাখ্যা ৩ : কারণ এই নবজাগরণ শুধুমাত্র পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত প্রগতিশীল সমাজের মধ্যে সীমিত ছিল।

উত্তর : ব্যাখ্যা ৩ : কারণ এই নবজাগরণ শুধুমাত্র পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত প্রগতিশীল সমাজের মধ্যে সীমিত ছিল।

(২.৫.২) বিবৃতি : ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সরকার ‘তিন আইন’ পাস করে।

ব্যাখ্যা ১ : এই আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু- মুসলমান-খ্রিস্টান সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা।
ব্যাখ্যা ২ : এই আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ছিল জনগণের অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক উন্নতি সাধন করা।
ব্যাখ্যা ৩ : এই আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ছিল বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করা এবং বিধবাবিবাহ আইনসিদ্ধ করা।

উত্তর : ব্যাখ্যা ৩ : এই আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ছিল বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ করা এবং বিধবাবিবাহ আইনসিদ্ধ করা।

(২.৫.৩) বিবৃতি : বরীন্দ্রনাথ ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা পছন্দ করতেন না।

ব্যাখ্যা ১ : কারণ এই শিক্ষাব্যবস্থা ছিল ব্যয়সাপেক্ষ।
ব্যাখ্যা ২ : কারণ এই শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যম ছিল মাতৃভাষা।
ব্যাখ্যা ৩ : কারণ এই শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মনের বিকাশ ঘটাত না।

উত্তর : ব্যাখ্যা ৩ : কারণ এই শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মনের বিকাশ ঘটাত না।

(২.৫.৪) বিবৃতি : সরলাদেবী চৌধুরানি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

ব্যাখ্যা ১ : বিদেশি পণ্য বিক্রির জন্য।
ব্যাখ্যা ২ : আন্দোলনকারী মহিলাদের সাহায্যের জন্য।
ব্যাখ্যা ৩ : স্বদেশি পণ্য বিক্রির জন্য।

উত্তর : ব্যাখ্যা ৩ : স্বদেশি পণ্য বিক্রির জন্য।

বিভাগ – গ

৩. দু’টি অথবা তিনটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে-কোনো ১১টি) : ২×১১=২২

৩.১. পরিবেশের ইতিহাসের গুরুত্ব কী?

উত্তর : মানুষ পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার ও সংরক্ষণ এবং তার উপর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অপব্যবহার মানব সভ্যতাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার এবং লুণ্ঠন জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। তারই প্রতিক্রিয়ায় শুরু হয় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন। যেমন- চিপকো আন্দোলন, নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন। পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যেই ইতিহাসে পরিবেশের ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

৩.২. স্মৃতিকথা অথবা আত্মজীবনীকে কীভাবে আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদানরূপে ব্যবহার করা হয়?

উত্তর : ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে স্মৃতিকথা এবং আত্মজীবনীতে লেখকের ব্যক্তিগত আবেগ অপেক্ষা সমকালীন সমাজ সংস্কৃতির বস্তুনিষ্ঠ বিবরণই প্রধান বিবেচ্য। যেমন – সরলাদেবী চৌধুরানীর আত্মজীবনী ‘জীবনের ঝরাপাতা’ এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিকথা ‘জীবনস্মৃতি’-তে শুধু ঠাকুর পরিবারের কথা নয় সমকালীন বিশ শতকের কলকাতার সমাজ সংস্কৃতি এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বিবরণও পাওয়া যায়।

৩.৩. ‘মেকলে মিনিট’ কী?

উত্তর : ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। এমতাবস্থায়, জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি টমাস ব্যাবিংটন মেকলে পাশ্চাত্য শিক্ষার স্বপক্ষে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা সংক্রান্ত যে প্রতিবেদন পেশ করেন তা ‘মেকলে মিনিট’ নামে পরিচিত। মেকলের মতে- প্রাচ্য শিক্ষা নীতিহীন এবং দুর্নীতিগ্রস্ত। তাঁর মতে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের মাধ্যমে ইংরেজী শিক্ষার প্রসার ঘটবে এবং এই শিক্ষা সমাজের উঁচুতলা থেকে চুঁইয়ে পড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।

৩.৪ সমাজসংস্কারে নব্যবঙ্গদের ভূমিকা কী ছিল?

উত্তর : হিন্দু কলেজের শিক্ষক ডিরোজিও এবং তার অনুগামী ছাত্ররা যাঁরা ইয়ংবেঙ্গল নামে পরিচিত ছিলেন তাঁরা হিন্দু ধর্মের প্রচলিত কুসংস্কার ও ধর্মীয় সংকীর্ণতার বিরোধিতা করেছিলেন। এঁরা মূলত যুক্তিবাদী ও প্রগতিপন্থী ছিলেন। তাঁরা যেমন মূর্তি পূজা, উপবীত ধারণের বিরোধিতা করেছিলেন তেমন স্ত্রী শিক্ষার প্রসার, বাক্ স্বাধীনতার স্বপক্ষে সোচ্চার হয়েছিলেন।

৩.৫ দুদু মিঞা স্মরণীয় কেন?

উত্তর : ফরাজি আন্দোলনের অন্যতম নেতা দুদু মিঞা একদিকে যেমন জমিদার এবং মহাজনদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন অন্যদিকে বাংলার নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি প্রচলিত কর কাঠামো ও বে-আইনী কর আদায়ের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন এবং প্রচার করেন, “জমি যারা চাষ করে জমি তাদের”। তিনি বাংলার বেশ কিছু স্থানে অস্থায়ী সমান্তরাল প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করেছিলেন।

৩.৬ নীল বিদ্রোহে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকা কীরূপ ছিল?

উত্তর : ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর পত্রিকায় একদিকে নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন এবং অন্যদিকে নীলকর বিরোধী জনমত গঠনে প্রয়াসী হয়েছিলেন। সাধারণ কৃষকদের উপর নীলকর সাহেবদের অকথ্য অত্যাচার, দাদন প্রথা, উর্বর জমিতে বলপূর্বক নীলচাষে কৃষকদের বাধ্য করা প্রভৃতি বিষয় তাঁর পত্রিকায় বিস্তৃতভাবে তুলে ধরেন। তিনি তাঁর পত্রিকার মাধ্যমে নীলকর সাহেবদের অত্যচারের বিরুদ্ধে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে সংগঠিত করেন।

৩.৭ “মহারানির ঘোষণাপত্রে”র (১৮৫৮) মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পরিপ্রেক্ষিতে মহারানীর ঘোষণাপত্রের মূল উদ্দেশ্য ছিল কোম্পানীর অপশাসনের অবসান ঘটিয়ে ব্রিটিশ রাজশক্তি কর্তৃক ভারতের প্রত্যক্ষ শাসনভার গ্রহণ করা। দ্বিতীয়তঃ ব্রিটিশ সরকারের নতুন নীতি ও আদর্শের সঙ্গে ভারতবাসীর যোগসাধন ঘটানো।

৩.৮ ব্যঙ্গচিত্র কেন আঁকা হয়?

উত্তর : চিত্রশিল্পের অন্যতম শাখারূপে ব্যঙ্গচিত্রে মূলত তির্যক বা ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গীতে প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতি, ত্রুটিবিচ্যুতিকে মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়। অত্যন্ত সরস ভঙ্গীতে সমাজের পাশাপাশি রাজনীতি, অর্থনীতি এমনকি সংস্কৃতির ত্রুটিগুলিকে আক্রমণ করার হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর তৎকালীন ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা, ‘বাবু’ সমাজের ভণ্ডামি এবং ধর্মীয় দ্বিচারিতাকে তাঁর ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন।

৩.৯ বাংলার ছাপাখানার বিকাশে পঞ্চানন কর্মকারের ভূমিকা কী ছিল?

উত্তর : প্রথম বাংলাভাষার ছাপাখানার হরফ নির্মাণের অন্যতম রূপকার ছিলেন মিশনারি প্রেসের চার্লস উইলকিন্সের সহযোগী পঞ্চানন কর্মকার। বাংলা ভাষার সচল ধাতু হরফের ঢালাই ও ছেনিকাটা আকার নির্মাণে তিনি ছিলেন প্রধান রূপকার। এর মাধ্যমে অল্প সময়ে কম খরচে ছাপা শিল্পের ব্যবসায়িক বিকাশ ঘটেছিল। তিনি দেবনাগরী ভাষায় মার্জিত সংস্কৃত ব্যাকরণ ছাপার উদ্যোগ নেন।

৩.১০ বাংলার মুদ্রণের ইতিহাসে বটতলা প্রকাশনার গুরুত্ব কী?

উত্তর : কলকাতার আদি প্রকাশনা শিল্প ছিল আপার চিৎপুর রোডের বটতলা প্রকাশনা। এখানে মূলত হ্যান্ডমেড পেপারে ছাপচিত্রের মাধ্যমে স্বদেশী কারিগরেরা চটি বই, পুঁথি, পাঁচালী প্রকাশ করত। এখান থেকে অনুবাদ সাহিত্যও প্রকাশিত হত। উনিশ শতকের কলকাতা ও ‘বাবু’ সংস্কৃতি সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য এখান থেকে পাওয়া যায়।

৩.১১ ‘একা’ আন্দোলন শুরু হয় কেন?

উত্তর : ১৯২১-২২ খ্রিস্টাব্দে উত্তরপ্রদেশের বারাবাঁকি, সীতাপুর, বারাইচ অঞ্চলে মাদারি পাসির নেতৃত্বে ‘একা’ আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল। কৃষকেরা মূলত অত্যধিক রাজস্ব বৃদ্ধি, বাড়তি কর আদায়, জমি থেকে অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ, বেগার শ্রমদানের বিরুদ্ধে এই আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছিল।

৩.১২ বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলন কেন শুরু হয়?

উত্তর : ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকের কৃষকরা বৃহত্তর সত্যাগ্রহ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। নিম্নবর্ণের কৃষক কালিপরাজদের উপর উচ্চবর্ণের কৃষক উজলিপরাজদের অত্যাচারে কৃষকরা ক্ষুদ্ধ ছিল। এই প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ সরকার রাজস্বের পরিমাণ ২৭ থেকে ৩০ পর্যন্ত বৃদ্ধি করলে, আন্তর্জাতিক বাজারে তুলোর দাম পড়ে গেলে এবং জলসেচের সংকট দেখা দিলে কৃষকরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে।

৩.১৩ অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর : বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন থেকে ছাত্র সমাজকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য লর্ড কার্জনের শিক্ষা সচিব কার্লাইল ১৯০৫ সালের অক্টোবর মাসে যথাক্রমে কার্লাইল সার্কুলার, লিয়ন সার্কুলার, পেল্লার সার্কুলার জারি করেন। এর প্রত্যুত্তরে ছাত্রনেতা শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি গঠন করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল সরকারি বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত ছাত্রদের বিকল্প শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা এবং ছাত্রদের মধ্যে স্বদেশ প্রেম জাগ্রত করা।

৩.১৪ দীপালি সংঘ কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর : লীলা নাগ (রায়) ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে দীপালী সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন-একদিকে মেয়েদের শিক্ষিত, আত্মসচেতন ও স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে এবং অন্যদিকে স্বদেশ প্রেম ও বৈপ্লবিক চিন্তা-চেতনার উন্মেষ ঘটাতে। এই সংঘের সঙ্গে প্রথমদিকে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার যুক্ত ছিলেন।

৩.১৫ কী পরিস্থিতিতে কাশ্মীরের রাজা হরি সিং ভারত ভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন?

উত্তর : কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং ভারত বা পাকিস্তানে কোথাও যোগ না দিয়ে নিজেদের স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় রাখতে চেয়েছিলেন। এমতাবস্থায় পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী কাশ্মীরে আক্রমণ চালিয়ে এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে নিলে হরি সিং ভারতের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানি হানাদারদের পিছু হঠতে বাধ্য করে।

৩.১৬ রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন (১৯৫৩) কেন গঠিত হয়েছিল?

উত্তর : ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের দাবী ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই উঠতে শুরু করে। এই দাবীর যৌক্তিকতা বিচারের জন্য ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের উদ্যোগে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সৈয়দ ফজল আলির সভাপতিত্বে কে.এম. পানিক্কর ও হৃদয়নাথ কুঞ্জুরকে নিয়ে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন গঠিত হয়েছিল।

বিভাগ – ‘ঘ’

৪। সাত বা আটটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও। (প্রতিটি উপবিভাগ থেকে অন্ততঃ ১টি করে মোট ৬টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে) :

উপবিভাগ : ঘ.১

৪.১. “হুতোম পেঁচার নকশা” গ্রন্থে ঊনিশ শতকের বাংলার কীরূপ সমাজ চিত্র পাওয়া যায়?

উত্তর : উনিশ শতকের কলকাতা, কলকাতা তথা বাংলার তৎকালীন সমাজ এবং বাঙালিয়ানা-এই তিনটি বিষয় কালীপ্রসন্ন সিংহ রচিত ‘হুতোম প্যাঁচার নক্শা’-য় ব্যঙ্গাত্মক’ও তির্যক ভঙ্গীমায় ফুটে উঠেছে।

১৮৬২ তে গ্রন্থটির প্রথমভাগ ও ১৮৬৩ তে গ্রন্থটির দ্বিতীয় ভাগ এবং সর্বোপরি ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ গ্রন্থরূপে প্রকাশিত হয় ‘হুতোম প্যাঁচার নক্শা।’

গ্রন্থটির একদিকে চড়কপার্বন, রথযাত্রা, দুর্গাপূজা, বারোয়ারি পূজা-পার্বন যেমন স্থান পেয়েছে তেমনি আবার কলকাতার বাবু সমাজের ভণ্ডামি, বেপরোয়া জীবনের অন্ধকার দিক, ক্রিশ্চানি হুজুগ, মিউটিনি, লঙ সাহেব, লখনউ-এর বাদশাহ-এর কথাও এতে উঠে এসেছে।

কালীপ্রসন্ন সিংহ একদিকে ইংরেজি জানা নব্য বাবু ও অন্যদিকে গোঁড়া হিন্দু সমাজ উভয়ের জীবনের স্ববিরোধিতাকে তুলে ধরেছিলেন। কোন কোন ক্ষেত্রে এরা প্রগতিশীলতা অপেক্ষা ধর্মীয় গোঁড়ামিকে অধিকমাত্রায় প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তিনি গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে তৎকালীন সমাজকে বিশ্লেষণ করেন এবং বাবু সংস্কৃতির তীব্র সমালোচনা করে তৎকালীন শিক্ষিত বাঙালী সমাজকে সচেতন করতে তাঁর সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

কালীপ্রসন্ন সিংহ তাঁর ‘হুতোম প্যাঁচার নক্শা’-য় সমসাময়িক সমাজ ও কলকাতার ভোগবাদী নাগরিক জীবনের তীব্র সমালোচনা করলেও শালীনতার গণ্ডী অতিক্রম করেননি কখনোই। লেখকের রসবোধ, সাহিত্যগুণ এবং সমাজ সচেতনতাবোধ ‘হুতোম প্যাঁচার নক্শা’-কে কালোত্তীর্ণ করেছে। ‘হুতোম প্যাঁচার নক্সা’-কে উনিশ শতকের ইতিহাসে তৎকালীন সমাজচিত্রের একটি জীবন্ত দলিল বলা যায়।

৪.২. এদেশের চিকিৎসা-বিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিক্যাল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল?

উত্তর :

  • ভারতের সনাতনী চিকিৎসাবিদ্যার বিপ্রতীপে আধুনিক ও পাশ্চাত্য অভিমুখী চিকিৎসাবিদ্যার অধ্যয়ন ও অধ্যাপনার জন্যও ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন স্বয়ং বেন্টিঙ্ক সাহেব এবং ভূমিদান করেন মতিলাল শীল।
  • কলকাতা মেডিকেল কলেজ হল এশিয়ার দ্বিতীয় কলেজ যেখানে আধুনিক ইউরোপীয় চিকিৎসাবিদ্যা শেখানো হত। কলকাতা মেডিকেল কলেজে আধুনিক শল্য চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা ও রূপায়ণে উদ্যোগী হন এর প্রথম সুপারিন্টেন্ডেন্ট এম. জে. ব্রামলি।
  • কলকাতা মেডিকেল কলেজে শব ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে আধুনিক বিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্রের জয়যাত্রার সূচনা করেছিলেন মধুসূদন গুপ্ত ও তাঁর সহযোগীরা।
  • কলকাতা মেডিকেল কলেজের দ্বার সকল বর্ণের ছাত্রদের জন্য এমনকি মেয়েদের জন্যও উন্মুক্ত ছিল। কাদম্বিনী গাঙ্গুলী ছিলেন প্রথম মহিলা চিকিৎসক এবং পরবর্তীকালে ভার্জিনিয়া মেরী মিত্র ও বিধুমুখী বসু এখান থেকেই যোগ্যতার সঙ্গে চিকিৎসাবিদ্যায় উত্তীর্ণ হন। কলকাতা মেডিকেল কলেজ বাংলা তথা ভারতের চিকিৎসা বিদ্যার অগ্রগতির ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা করে।

উপবিভাগ : ঘ.২

৪.৩. কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন?

উত্তর : প্রথমে ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে এবং পরে ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ইংরেজ সরকার যে দুটি অরণ্য আইন প্রণয়ন করেছিল তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ঔপনিবেশিক স্বার্থ রক্ষা করা ও আধিপত্য স্থাপন করা।

  • ব্রিটিশ রাজকীয় নৌবাহিনীর সম্প্রসারণ এবং ভারতে রেলপথ বিস্তারের লক্ষ্যে কাঠের স্লিপার তৈরির জন্য ভারতে বনজ সম্পদের ওপর ঔপনিবেশিক সরকারের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছিল।
  • ভারতের সুবিস্তৃত বনাঞ্চলের জমিকে পরিষ্কার করে কৃষিযোগ্য করে তোলার উদ্দেশ্য যেমন ছিল তেমনি আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে ঝুম চাষের পরিবর্তে স্থায়ী কৃষিকাজে অভ্যস্ত করে তোলার তাগিদ ছিল।
  • ব্রিটিশ সরকারের কর্তাব্যক্তিদের মূল উদ্দেশ্য ছিল কৃষিজমির সম্প্রসারণ ঘটিয়ে রাজস্ব বৃদ্ধি এবং বনজ সম্পদকে বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহার করে আয় ও মুনাফা বৃদ্ধি করা।
  • এটাও ঠিক যে ব্রিটিশ সরকার ভারতের বনভূমিকে সংরক্ষিত অরণ্য, সুরক্ষিত অরণ্য এবং গ্রামীণ (অশ্রেণিভুক্ত) অরণ্য এই তিনটি ভাগে বিভক্ত করে বন সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে ঔপনিবেশিক স্বার্থ ও মুনাফা বজায় রাখতে গিয়ে অরণ্য আইন প্রয়োগের মাধ্যমে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর স্বাধিকার, জীবন ও জীবিকার মূলে কুঠারাঘাত করেছিল এবং যার ফলে গড়ে উঠছিল বিভিন্ন কৃষক ও উপজাতির বিদ্রোহ।

৪.৪. ১৮৫৭-এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণীর বিদ্রোহ বলা যায়?

উত্তর : ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সময় থেকেই ঐ বিদ্রোহের চরিত্র বা প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন ধারার ইতিহাসচর্চায় নানা ধরনের গবেষণালব্ধ মতামত পাওয়া যায়।

  • ডঃ সুরন্দ্রেনাথ সেন তাঁর ‘Eighteen Fifty Seven’ গ্রন্থে এবং ডঃ শশিভূষণ চৌধুরী তাঁর ‘Civil Rebellion in the Indian Mutiníes, 1857-59’ গ্রন্থে এই বিদ্রোহকে সামন্ত শ্রেণির বিদ্রোহ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁদের মতে ইংরেজ শাসন ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতি সামন্তপ্রভুদের মনে ভীতির সঞ্চার করেছিল এবং তাদের ক্ষমতা খর্ব করেছিল। তাদের হাতেই ছিল বিদ্রোহের নেতৃত্ব। দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে সামনে রেখে তারা পুরাতন রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর পুনঃপ্রবর্তন করতে চেয়েছিল। ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার-এর মতে ১৮৫৭-এর বিদ্রোহ ছিল ক্ষয়িষ্ণু অভিজাততন্ত্র ও মৃতপ্রায় সামন্তশ্রেণির ‘মৃত্যুকালীন আর্তনাদ’।
  • অধ্যাপক সুশোভন সরকার উপরোক্ত বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে – নানা সাহেব, লক্ষ্মীবাই, হজরৎমহল, কুনওয়ার সিং প্রমুখরা সামন্ত জমিদার ও তালুকদার হলেও তারা ছিলেন বিদ্রোহের স্বাভাবিক নেতা। ডঃ সরকার এই বিদ্রোহকে অনেকাংশে জাতীয় বিদ্রোহ হিসাবে দেখার পক্ষপাতী।
  • আমরা ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে যেমন সামন্তশ্রেণির নেতৃত্বদানের বিষয়টি অস্বীকার করতে পারি না তেমনি সৈনিক, কৃষক, কারিগর সহ সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান ও ভাবাবেগকেও অগ্রাহ্য করতে পারি না। প্রকৃতপক্ষে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ নানা সুরে বাঁধা ছিল যেখানে নানা ধরনের প্রতিরোধ নানারূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল।

উপবিভাগ : ঘ.৩

৪.৫. বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল?

উত্তর : গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য ছিলেন প্রথম বাঙালি মুদ্রণ ব্যবসায়ী, পুস্তক ব্যবসায়ী, প্রকাশক ও গ্রন্থকার। তাঁর নিবাস ছিল বর্ধমানের বহড়া গ্রামে। কাজের খোঁজে তিনি শ্রীরামপুর মিশনারিদের সংস্পর্শে আসেন।

শ্রীরামপুর মিশনেই গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের মুদ্রণ শিল্প এবং প্রকাশনার কাজে হাতে খড়ি হয়। শ্রীরামপুর মিশনের ছাপাখানার কম্পোজিটর, ফেরিস কোম্পানীর ছাপাখানায় মুদ্রাকর হিসাবে এবং এরপব উনিশ শতকের দ্বিতীয় দশকের গোড়ায় কলকাতায় এসে ব্যবসায়িক লক্ষ্যে ছাপাখানা খোলেন ও বই বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন এবং পরিশেষে কলকাতা থেকে প্রেস নিয়ে স্বগ্রাম বহড়ায় চলে আসেন।

গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের প্রেসের নাম ছিল ‘বাঙলা গেজেটি যন্ত্রালয়’। এখান থেকেই তিনি প্রকাশ করতেন সাপ্তাহিক ‘বাঙলা গেজেটি’ পত্রিকা। তাঁর প্রেস থেকে তাঁরই সম্পাদিত ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ সহ বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছিল। প্রথম সচিত্র বাংলা গ্রন্থ ‘অন্নদামঙ্গল’ প্রকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য্যের অবদান অনস্বীকার্য এবং তাঁর এই প্রেস থেকেই ছাপা হয়- ‘এ গ্রামার ইন ইংলিশ এন্ড বেঙ্গলি’, ‘গনিত নামতা’, ‘ব্যাকরণ লিখবার আদর্শ’, ‘হিতোপদেশ’, ‘দায়ভাগ’, ‘চিকিৎসার্ণব’ ইত্যাদি অন্যান্য গ্রন্থ।

৪.৬. শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কীভাবে একটি অগ্রণী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হ’ল?

উত্তর : ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৩৮ বছর বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনায় শ্রীরামপুর মিশনের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

  • ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশন ও প্রেসের প্রতিষ্ঠা হলেও শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশনের প্রাণপুরুষ উইলিয়াম কেরি এর দুবছর আগে থেকেই কাঠের মুদ্রণ যন্ত্র ও দেশীয় ভাষায় অর্থাৎ বাংলা হরফ সংগ্রহের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং ১৮০০-১৮১২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে সম্ভবত শ্রীরামপুর মিশন প্রেস লোহার মুদ্রন যন্ত্রও নিয়ে আসে।
  • মিশনারি জশুয়া মার্শম্যান, উইলিয়ম ওয়ার্ড এবং চার্লস গ্রান্ট প্রমুখদের সঙ্গে নিয়ে কেরি সাহেব বই ছাপার উদ্যোগ নেন এবং বই ছাপার ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ভূমিকা নেন ‘শ্রীরামপুর ত্রয়ী’।
  • শ্রীরামপুর মিশন থেকে প্রথম ছাপা বই ছিল বাইবেলের অনুবাদ ‘মঙ্গল সমাচার মতীয়ের রচিত’। প্রথম দিকে মিশন মূলত ধর্মীয় বই অনুবাদ করত এবং এখান থেকে ছাত্রদের জন্য অসংখ্য পাঠ্যপুস্তক, পত্রপত্রিকা যেমন – মাসিক পত্রিকা ‘দিগদর্শণ’, সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘সমাচার দর্পণ’ প্রভৃতি ছাড়াও অন্যান্য গ্রন্থ যেমন – মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার-এর ‘বত্রিশ সিংহাসন’, ‘রাজাবলি’, ‘প্রবোধচন্দ্রিকা’, রামরাম বসু রচিত ‘লিপিমালা’, ‘জ্ঞানোদয়’, হরপ্রসাদ রায়ের ‘পুরুষ পরীক্ষা’, কেরির ‘বাংলা ব্যাকারণ’, ‘ইঙ্গবঙ্গ অভিধান’ প্রভৃতি প্রকাশিত হয়।
  • প্রথমে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ ও কিছুটা পরে ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি-র সঙ্গে সহযোগী হিসাবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনায় শ্রীরামপুর মিশন উদ্যোগী হয়েছিল। একটিমাত্র কাঠের মুদ্রণযন্ত্রকে সম্বল করে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস তার যাত্রা শুরু করলেও ১৮২০ খ্রিঃ-এ মুদ্রণযন্ত্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১৮টি তে। ১৮০১ খ্রিঃ থেকে ১৮৩২ খিঃ-এর মধ্যে শ্রীরামপুর থেকে চল্লিশটি ভাষায় দু-লক্ষ বারো হাজার বই প্রকাশিত হয়েছিল।

উপবিভাগ : ঘ.৪

৪.৭. সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ : দেশ বিভাগ (১৯৪৭) জনিত উদ্বাস্ত সমস্যা।

উত্তর : ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের দেশভাগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতার প্রথম পাঁচ বছরে উদ্বাস্তু সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছিল। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু উত্তর ও পশ্চিম ভারতে মূলত পাঞ্জাবে আশ্রয় নিয়েছিল। অন্যদিকে পূর্বপাকিস্তান অধুনা বাংলাদেশ থেকে আগত উদ্বাস্তু ও শরণার্থীরা জীবন ও জীবিকার স্বার্থে আশ্রয় নিয়েছিল মূলত এপার বাংলা অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায়।

  • নিরাপত্তাজনিত অভাব ধর্ম ও সংস্কৃতিগত সাদৃশ্য এবং বাংলা ভাষা স্বাচ্ছন্দ্যের দরুন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তুকে আশ্রয় এবং পুনর্বাসন দেওয়া ছিল খুবই কঠিন কাজ। বিপুল জনসংখ্যা, পরিকাঠামো জনিত সমস্যা, কিছুটা কেন্দ্রীয় স্তরের ঔদাসীন্য উদ্বাস্তু সমস্যাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছিল। বিপুল সংখ্যক শরণার্থী প্রাথমিকভাবে আশ্রয় নিয়েছিল স্টেশনে, ফুটপাতে, খোলা আকাশের নীচে এবং বিভিন্ন উদ্বাস্তু ক্যাম্পে। পরে অবশ্য ছিন্নমূল এইসব মানুষজন নিজ উদ্যোগে কলোনি গড়ে তোলেন আবার কোথাও বা সরকারি সাহায্যে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়।
  • উদ্বাস্তু মানুষদের অসহায়তা জীবনযন্ত্রণা, ভয়াবহ স্মৃতি এবং পূর্বতন গ্রাম বা শহরের মধুর স্মৃতি ধরা পড়েছে তাদের আত্মকথা, স্মৃতিকথা এবং সমসাময়িক সাহিত্যে। এই দেশভাগ, দাঙ্গা এবং অভিপ্রয়াণের জ্বলন্ত সাক্ষী ছিলেন যেসব নারীরা, তারাও তাদের ভয়াবহ স্মৃতি, যন্ত্রণা সর্বোপরি সংগ্রামকে কাগজে কলমে বা আলাপচারিতায় তুলে ধরেছেন।

৪.৮. হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি কীভাবে ভারতভুক্ত হয়েছিল?

উত্তর : স্বাধীনতার প্রাক্কালে দেশীয় রাজ্যগুলির মধ্যে হায়দ্রাবাদ সবচেয়ে বড় এবং সম্পদশালী দেশীয় রাজ্য ছিল। স্বাধীন ভারতের অখণ্ডতা রক্ষা ও নিরাপত্তার দিক থেকেও হায়দ্রাবাদ ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি হায়দ্রাবাদে নিজামের স্বৈরতন্ত্র এবং সামন্ততান্ত্রিক জুলুমের বিরুদ্ধে হায়দ্রাবাদের সাধারণ মানুষের প্রতিরোধ এবং গণতন্ত্রের প্রতি তীব্র আকুতি হায়দ্রাবাদের ভারত ভুক্তির বিষয়টি জোরালো করে তুলেছিল।

  • অন্যদিকে নিজামের ভারতবিরোধী অবস্থান মজলিস-ইতেহাদ-উল-মুসলিমিন এর মতো সংগঠনের তৎপরতা বৃদ্ধি সর্বোপরি গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষদের উপর নিজামের রাজাকার বাহিনীর তুমুল অত্যাচার হায়দ্রাবাদের ভারতভুক্তিকে অনিবার্য করে তুলেছিল।
  • এমতাবস্থায় ভারত সরকার প্রথমে অর্থনৈতিক অবরোধ করে এবং পরে নিরুপায় হয়ে মেজর জেনারেল জয়ন্তনাথ চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই সেপ্টেম্বর সামরিক অভিযান অপারেশন পোলো প্রেরণ করেন। ১৮ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি ভারতীয় সেনাবাহিনীর দখলে আসে। শেষ পর্যন্ত ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি হায়দ্রাবাদ আনুষ্ঠানিক ভাবে ভারতভুক্ত হয়।

বিভাগ – ‘ঙ

৫. পনেরো বা ষোলোটি বাক্যে যে-কোন একটি প্রশ্নের উত্তর : ৮×১=৮

৫.১ উনিশ শতকের বাংলায় সমাজসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজগুলির কীরূপ ভূমিকা ছিল?

উত্তর : ব্রাহ্মধর্ম ও ব্রাহ্মসমাজের প্রবর্তক রাজা রামমোহন রায়ের সমাজ সংস্কারের উদ্দেশ্য ছিল সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার যেমন – সতীদাহ, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, কৌলিন্য প্রথা, জাতিভেদ প্রথা প্রভৃতি অমানবিক প্রথার উচ্ছেদ সাধন এবং নারীশিক্ষার প্রসার, বিধবা বিবাহ প্রবর্তন, নারীজাতির সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি।

রামমোহনের মৃত্যুর (১৮৩৩ খ্রিঃ) পর বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে মতপার্থক্য তৈরি হলে ব্রাহ্মসমাজ তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

রামমোহনের মৃত্যুর পর ব্রাহ্মসমাজ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রামমোহন তাঁর ধর্মমতকে কোন বিশেষ সম্প্রদায় রূপে গড়ে তুলতে চাননি, কিন্তু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্মসমাজকে একটি বিশেষ সম্প্রদায় রূপে গড়ে তোলেন এবং ‘ব্রাহ্মধর্মের অনুষ্ঠান পদ্ধতি’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। দেবেন্দ্রনাথের উদ্যোগে স্থাপিত হয় ‘তত্ত্ববোধিনী সভা’ (১৮৩৯ খ্রিঃ), ‘তত্ত্ববোধিনী পাঠশালা’ (১৮৪০ খ্রিঃ) এবং প্রকাশিত হয় ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’ (১৮৪৩ খ্রিঃ)।

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় নারীশিক্ষা ও বিধবা বিবাহের পক্ষে এবং বহুবিবাহের বিরুদ্ধে প্রচার চালান। কিন্তু অচিরেই বেদের অভ্রান্ততা, ব্রাহ্ম আচার্যদের উপবিত ধারণ প্রভৃতি নানা প্রশ্নে মতপার্থক্য তৈরি হলে ১৮৬৬ খ্রিঃ ব্রাহ্মসমাজ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে কেশবচন্দ্র সেন ও তাঁর অনুগামীরা ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। দেবেন্দ্রনাথের ব্রাহ্মসমাজ ‘আদি ব্রাহ্মসমাজ’ নামে পরিচিত হয়।

কেশবচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে সমাজ সংস্কার আন্দোলন উনিশ শতকে এক নতুন মাত্রা পায় এবং তিনি ইন্ডিয়ান মিরর, বীমাবোধিনী পত্রিকায় নারীশিক্ষার প্রসার, নারী স্বাধীনতা, অসবর্ণ বিবাহ প্রভৃতির পক্ষে এবং বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রচার চালান। নারী কল্যাণের জন্য বামাবোধিনী (১৮৬৩ খ্রিঃ) ও ব্রাহ্মিকা সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন।

কেশবচন্দ্রের আন্দোলনের চাপে সরকার ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ‘তিন আইন’ পাশ করে- বাল্য বিবাহ ও বহুবিবাহ রদ, অসবর্ণ বিবাহকে আইন সিদ্ধ করে। ১৮৬০ খ্রিঃ ‘সঙ্গতসভা’ প্রতিষ্ঠা করে নিপীড়িত মানুষের সেবা ও ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে নৈশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে বয়স্কদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেন।

কিন্তু কেশবচন্দ্রের খিস্টপ্রীতি, চৈতন্যপ্রীতি, গুরুবাদ ও ভক্তিবাদে আকর্ষণ, হিন্দু রীতিতে নাবালিকা কন্যা সুনীতি দেবীর বিবাহ ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্ম সমাজের অভ্যন্তরে প্রবল দ্বন্দ্ব তৈরি করে। শিবনাথ শাস্ত্রী, আনন্দমোহন বসু, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখরা ১৮৭৮ খ্রিঃ ১৫ই মে ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্ম সমাজ থেকে বেরিয়ে গিয়ে ‘সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। বিভাজনের পর কেশবচন্দ্রের ব্রাহ্ম সমাজের নাম হয় নববিধান ব্রাহ্মসমাজ’।

‘সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের’ নেতা শিবনাথ শাস্ত্রী নারী শিক্ষা ও নারী স্বাধীনতা প্রভৃতি কাজে আত্মনিয়োগ করেন। বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে এবং বিধবা বিবাহের পক্ষে প্রচার চালান।

৫.২. মানুষ, প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তর : ব্রিটিশ ভারতে প্রচলিত ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার সলো শিক্ষার্থীর প্রাণের কোন সম্পর্ক ছিল না বলে রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন। তাঁর মতে দেশের সাধারণ মানুষ ও প্রকৃতিচর্চা ভিন্ন শিক্ষালাভ অসম্পূর্ণ।

রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন শিক্ষার মূল লক্ষ্য হবে শিশুর স্বাভাবিক বুদ্ধি ও কল্পনার অবাধ বিকাশ ঘটানো এবং সেই সঙ্গে। তার আত্মোপলব্ধি তৈরি করা। মানুষের মনের অভ্যন্তরের মানুষটিকে পরিচর্যা করে খাঁটি মানুষ বানানোর প্রচেষ্টাই শিক্ষা।

‘আশ্রমের রূপ ও বিকাশ’ নামক প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন – বই পড়াটাই শেখা এই ধারণা যেন ছাত্রের মধ্যে না জন্মায়, শিক্ষা হবে প্রতিদিনের জীবনযাত্রার একটি অঙ্গ, চলবে তার সঙ্গো একতালে এবং এক সুরে।

রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতির খোলামেলা পরিবেশে মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের পক্ষপাতি ছিলেন। তিনি মনে ক্যাতেন প্রকৃতির সংস্পর্শেই শিশুমনের সঠিক বিকাশ সম্ভব, কারণ শিশু শৈশবে মস্তিষ্কের চাইতে ইন্দ্রিয়ানুভূতির মাধ্যমে অধিক শিক্ষালাভ করে। তাই রবীন্দ্রনাথ শহরের কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ ত্যাগ করে প্রাকৃতিক পরিবেশে গাছতলায় শিক্ষা দানের কথা বলেন।

‘শিক্ষা সমস্যা’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বলেন – বিদ্যালয়ে অবশ্যই কিছুটা জমি থাকবে, যেখানে ছাত্ররা চাষের কাজে সাহায্যের সাথে গোপালনও করবে।

প্রাচীন ভারতের আশ্রাম ও গুরুকুলকে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক জীবনে আনতে চেয়েছিলেন, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপ পালিত হবে নিয়ম ও নিষ্ঠার সঙ্গে। আশ্রম ও গুরুকুলে থেকেও ছাত্ররা যাতে স্বাধীনতা বা মুক্তির স্বাদ এবং আত্মকর্তৃত্বের অধিকার পায় সেদিকেও তিনি দৃষ্টি দিয়েছিলেন।

মুক্ত চিন্তার বিকাশের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার মিলন’ শীর্ষক প্রবন্ধে পাশ্চাত্যের শিক্ষা ও আদর্শের সঙ্গো ভারতীয় আদর্শের সমন্বয়ের কথা বলেন। পাশ্চাত্য জগতের জ্ঞানভাণ্ডারকে আয়ও করার আহবান জানান।

উপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবল সমালোচনা করে রবীন্দ্রনাথ বিকল্প শিক্ষা-ধারণার প্রতিষ্ঠান গঠনের চিন্তাভাবনা করেন। পরিপূর্ণ মানবসত্তাকে লালন করে দেহ, মন ও আত্মার সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে শিশুকে জাতির উপযোগী দক্ষ ও কল্যাণকামী সদস্য হিসেবে গড়ে তোলার জন্য শান্তিনিকেতনের মধ্যে তিনি ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে ব্রহ্মবিদ্যালয় বা পাঠভবন স্কুল নির্মাণ করেন।

শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক বিদ্যালয় পাঠভবন-কে আরও বৃহত্তর রূপ দিতে রবীন্দ্রনাথ ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে একে মহাবিদ্যালয়ে পরিণত করেন। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার থেকে প্রাপ্ত অর্থে তিনি এটি গড়ে তোলেন। তিনি এর নাম দিয়েছিলেন বিশ্বভারতী। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার বিশ্বভারতীকে পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দিলে এর নাম হয় ‘বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়’।

বিশ্বভারতীতে কলাবিদ্যার পাশাপাশি অর্থশাস্ত্র, কৃষিতত্ত্ব, স্বাস্থ্যবিদ্যা, পল্লিউন্নয়ন সহ সমস্ত বাবহারিক বিজ্ঞানের পাঠদানের মাধ্যমে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের শিক্ষা সমন্বয় ঘটানো হয়।

৫.৩ বিংশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা আলোচনা করো।

উত্তর : রুশ বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মানবেন্দ্রনাথ রায়, অবনী মুখার্জী মহম্মদ আলি সহ ২৪ জন প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবীদের নিয়ে রাশিয়ার তাসখন্দে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই অক্টোবর ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’ গড়ে তোলেন, সম্পাদক হন মহম্মদ সিদ্দিকি। তবে ভারতের মাটিতে কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হয় ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে ডিসেম্বর উত্তর প্রদেশের কানপুরে, সম্পাদক হন সচিদানন্দ বিষ্ণু ঘাটে। দুবার জন্মের জন্য ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে ‘দ্বিজ’ বলা হয়।

কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হওয়ার সাথে সাথে ভারতের শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলন অন্যমাত্রা লাভ করে। তবে মানবেন্দ্রনাথ রায় কৃষক অপেক্ষা শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করতে বেশি আগ্রহী ছিলেন, কারণ জমির প্রতি কৃষকদের লোভকে তিনি পুঁজিবাদি মনোভাব বলে মনে করতেন।

ভারতে বামপন্থী আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল কৃষক ও শ্রমিক শোষণ বন্ধ করা, জমিদারি প্রথার বিলোপ, সাম্যবাদের প্রসার ঘটানো, কৃষক শ্রমিক সাধারণকে স্বাধীনতা আন্দোলনে শামিল করা এবং ব্রিটিশ অধীনতা মুক্ত পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করা।

বামপন্থীরা শ্রমিক ও কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে, বিভিন্ন পত্রপত্রিকা- সোসালিস্ট, ইনকিলাব, গণবাণী, লাঙল, লেবার কিষাণ গেজেট, কীর্তি প্রভৃতি প্রকাশ করেন এবং বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নও তৈরি হয় যেমন ‘গিরনি কামগড় ইউনিয়ন’।

শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করতে মাদ্রাজের সমুদ্রতটে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে সিঙ্গায়াভেল্লু চেট্টিয়ারের নেতৃত্বে প্রথম মে দিবস পালিত হয়। কৃষক ও শ্রমিকদের মধ্যে ঐক্য ঘটাতে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে কুতুবউদ্দিন আহমেদ, কাজী নজরুল ইসলাম, হেমন্ত সরকার, মুজাফফর আহমেদ, নলিনী গুপ্ত, ধরণী গোস্বামী প্রমুখরা ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি’ গড়ে তোলেন। এই দলই প্রথম প্রস্তাব গ্রহণ করে-সম্পূর্ণ স্বাধীনতা কংগ্রেসের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

বামপন্থীদের প্রভাবে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করে। ১৯২৮ খ্রিঃ ভারতে প্রায় ২০৩টি শ্রমিক ধর্মঘট হয় যাতে প্রায় ৫ লক্ষ শ্রমিক যোগ দেয়। ১৯২৯ খ্রিঃ বাংলার চটকলগুলিতে শ্রমিকরা সর্বাত্মক ধর্মঘটে নামে এবং দেড় লক্ষ শ্রমিক এতে যোগ দেয়।

বামপন্থীদের ব্যাপক প্রসার, শ্রমিক ও কৃষকদের মধ্যে তাদের প্রভাব এবং কলকারখানায় ক্রমাগত ধর্মগত ব্রিটিশ সরকারকে আতঙ্কিত করে তোলে। শ্রমিকদের থেকে কমিউনিস্টদের আলাদা করা এবং তাদের দমন করার জন্য সরকার ‘জননিরাপত্তা বিল’ পাশ করে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৩৩ জন কমিউনিস্ট নেতাকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে ‘মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা’ (১৯২৯ খ্রিঃ) শুরু করে।

১৯৩৪ খ্রিঃ ২৩শে জুলাই ব্রিটিশ সরকার ভারতে কমিউনিস্ট পার্টিকে বেআইনী ঘোষণা করলে বামপন্থীরা জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত গণ আন্দোলন গড়ে তোলার কর্মপন্থা গ্রহণ করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ বলে অভিহিত করে বামপন্থীরা এই যুদ্ধে ব্রিটেনের বিরোধিতা করে। কিন্তু জার্মানি রাশিয়া আক্রমণ করলে তারা ব্রিটেনের বিরোধিতা থেকে সরে আসে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে বামপন্থীরা নতুন উদ্যমে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নামে।

আজাদহিন্দ বাহিনীর সেনাপতি রশিদ আলির বিচার ও কারাদণ্ডকে কেন্দ্র করে তারা আন্দোলনে নামে এবং ১৯৪৬ খ্রিঃ ১২ই ফেব্রুয়ারি ‘রশিদ আলি দিবস’ পালন করে। স্বাধীনতার প্রাক্কালে কৃষক আন্দোলন তেভাগা ও তেলেঙ্গানা আন্দোলনেও তাদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তবে দেশভাগের ক্ষেত্রে বামপন্থীদের ভূমিকা ছিল জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী, যে কারণে তারা বিভিন্নভাবে সমালোচিত হন।

(কেবলমাত্র বহিরাগত পরীক্ষার্থীদের জন্য)

বিভাগ – চ

৬.১ একটি পূর্ণ বাক্যে উত্তর দাও যে কোন চারটি : ১×৪=৪

৬.১.১ আত্মীয় সভা কে প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তর : আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন – রাজা রামমোহন রায়।

৬.১.২ ‘হুল’ শব্দের অর্থ কি?

উত্তর : ‘হুল’ শব্দের অর্থ – ‘বিদ্রোহ’।

৬.১.৩ ভারত সভার একজন প্রতিষ্ঠাতার নাম লেখ।

উত্তর : ভারত সভার একজন প্রতিষ্ঠাতার নাম – সুরেন্দ্র নাথ ব্যানার্জি।

৬.১.৪ ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ কে প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তর : বসু বিজ্ঞান মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন – আচার্য জগদীশ চান্দ্রা বসু।

৬.১.৫ কে সর্দার উপাধিতে ভূষিত হন?

উত্তর : বল্লভভাই প্যাটেল সর্দার উপাধিতে ভূষিত হন।

৬.১.৬ গান্ধী বুড়ি কাকে বলা হয়?

উত্তর : মাতঙ্গিনী হাজরাকে গান্ধী বুড়ি বলা হয়।

৬.২ দুটি বা তিনটি বাক্যে নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও (যে কোন তিনটি) : ৩×২=৬

৬.২.১ মধুসূদন গুপ্ত স্মরণীয় কেন?

উত্তর : কলকাতা মেডিকেল কলেজে তিনি প্রথম শবব্যবচ্ছেদ করে ভারতীয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনার সূচনা করেন। এই সাহসী পদক্ষেপের জন্যেই তিনি আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন।

৬.২.২ কোল বিদ্রোহের (১৮৩১-৩২) কারণ কি?

উত্তর :

সুপ্রাচীন কাল থেকে, কোল উপজাতি, ভারতের প্রাচীনতম বাসিন্দাদের একটি, বর্তমান বিহারের সিংভূম, মানভূম ও ছোটনাগপুর অঞ্চলে বসবাস করত। উনিশ শতকে, ব্রিটিশ শাসন তাদের জীবনে হস্তক্ষেপ শুরু করে, যার ফলে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। এই অসন্তোষ অবশেষে ১৮৩১-৩২ সালে “কোল বিদ্রোহ” নামে পরিচিত এক সশস্ত্র বিদ্রোহে বিস্ফোরিত হয়।

বিদ্রোহের কারণ:

  • জমি দখল: ব্রিটিশরা কোলদের জমি দখল করে খনি ও বৃক্ষরোপণ স্থাপন করে।
  • অত্যাচারী কর: অত্যধিক কর আরোপ করা হয়েছিল, যা প্রায়শই সহিংসভাবে আদায় করা হত।
  • সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপর আক্রমণ: ব্রিটিশরা তাদের নিজস্ব আইন ও রীতিনীতি চাপিয়ে দেয়, কোলদের ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা উপেক্ষা করে।
  • জীবিকার উপর হুমকি: বন ও জঙ্গল, যা কোলদের জীবিকার মূল উৎস ছিল, তা ব্রিটিশদের দ্বারা ধ্বংস করা হয়।

৬.২.৩ ‘হিন্দু মেলা’ প্রতিষ্ঠার দুটি উদ্দেশ্য লেখ।

উত্তর : ‘হিন্দু মেলা’ প্রতিষ্ঠার দুটি উদ্দেশ্য হল –

  • সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে হিন্দুধর্মের অতীত গৌরবগাথা ছড়িয়ে দেওয়া।
  • দেশীয় ভাষাচর্চা করা ও জাতীয় প্রতীকগুলিকে মর্যাদা দেওয়া।

৬.২.৪ মোপলা বিদ্রোহ কেন হয়েছিল?

উত্তর : অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন মালাবার অঞ্চলের মুসলমান কৃষক সম্প্রদায় মোপলারা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। স্বরাজের স্বপক্ষে নেতাদের প্রচারের ফলে এই অশিক্ষিত মোপলাদের ধারণা হয় যে, দেশে স্বরাজ এসে গেছে। তারা নিজেদের অঞ্চলে জমিদারদের অধিকাংশই ছিলেন হিন্দু উচ্ছেদ করতে থাকায় মোপলা বিদ্রোহ সাম্প্রদায়িক রূপ ধারণ করে।

৬.২.৫ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার স্মরণীয় কেন?

উত্তর : প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ছিলেন একজন সাহসী ও দেশপ্রেমিক নারী। তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি মাষ্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে বিপ্লবী দলে যোগদান করেন এবং চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন অভিযানে অংশ নেন। তিনিই ছিলেন ভারতের মুক্তি সংগ্রামের প্রথম মহিলা শহীদ। তাই প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অবিসংবাদিত নায়িকা হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।

২০১৮ সালের মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নপত্র ছিল ভারসাম্যপূর্ণ এবং পাঠ্যক্রমের বিভিন্ন দিকগুলি অন্তর্ভুক্ত করেছিল। শিক্ষার্থীরা যদি এই প্রশ্নপত্রটি ভালোভাবে অনুশীলন করে, তাহলে তারা আসন্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারবে।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer