জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় একটি অপরিহার্য প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও তন্ত্রসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধিত হয়। এই সমন্বয়ের ফলে জীবদেহ সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারে এবং জীবন ধারন করতে পারে।
মানবমস্তিষ্কের যে-কোনো পাঁচটি অংশের নাম, অবস্থান ও মানবদেহে এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলি লেখো।
মানবমস্তিষ্কটি মানুষের মানসিক এবং শারীরিক কার্যকলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি চিন্তা, মনোবীজ্ঞান, স্মৃতি, ধারণা এবং স্বচেতন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, এবং সাধারণ শারীরিক কাজের জন্য মানসিক প্রেরণ ও নিয়ন্ত্রণ করে।
মানবমস্তিষ্কের পাঁচটি অংশের নাম, অবস্থান ও মানবদেহের এদের ভূমিকা মানবমস্তিষ্কের অংশের নাম
নাম | অবস্থান | ভূমিকা |
1. সেরিব্রাল কর্টেক্স | সেরিব্রাম বা গুরুমস্তিষ্কের অন্তর্গত দুটি সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ারের মেনিনজেস- এর নীচে অবস্থিত। | 1.দর্শন, স্বাদ, ঘ্রাণ, গরম, ঠান্ডা প্রভৃতির নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে।2. বুদ্ধি, স্মৃতি, বিচার, পরিকল্পনা ইত্যাদি উচ্চ মানসিক গুণাবলীর নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। |
2. থ্যালামাস | মস্তিষ্কের তৃতীয় নিলয়ের উভয় পাশে অবস্থিত। | 1.চাপ, তাপ, দর্শন, বেদনা প্রভৃতি সংজ্ঞাবহ উদ্দীপনা বিশ্লেষিত করে গুরুমস্তিষ্কে প্রেরণ করে অর্থাৎ রিলে কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। 2. নিদ্রা ও জাগরণ নিয়ন্ত্রণ করে। |
3. হাইপোথ্যালামাস | থ্যালামাসের নীচে তৃতীয় ভেন্ট্রিলের অঙ্গদেশে অবস্থিত। | 1. ক্ষুধা, তৃয়া, নিদ্রা, দৈহিক উষ্ণতা, মানসিক উত্তেজনা প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে। 2.অগ্র পিটুইটারির হরমোন ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে ও পশ্চাৎ পিটুইটারি নিঃসৃত হরমোনের সংশ্লেষ ঘটায়। |
4. মধ্যমস্তিষ্ক | অগ্র ও পশ্চাদ্মস্তিষ্কের মাঝামাঝি অংশে অবস্থিত। | 1.অগ্র ও পশ্চাদ্মস্তিষ্কের কাজের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে। 2 মধ্যমস্তিষ্কের টেকটাম দর্শন ও শ্রবণ প্রতিবর্তের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। |
5. লঘুমস্তিষ্ক | মস্তিষ্কের চতুর্থ নিলয়ের পৃষ্ঠদেশে, গুরুমস্তিষ্কের নীচে অবস্থিত। | 1.প্রধান কাজ হল দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে। 2.পেশির টান ও হাত-পায়ের ঐচ্ছিক চলন নিয়ন্ত্রণ করে। |
অ্যাক্সন ও ডেনড্রন-এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
স্নায়ুতন্ত্র অ্যাক্সন হল শরীরের স্নায়ুগুলির কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে শারীরিক ক্রিয়া পরিবর্তন করার জন্য ব্যবহৃত পদক্ষেপ। ডেনড্রন হল একটি উন্নত শক্তিশালী স্নায়ুতন্ত্র অ্যাক্সন, যা মানব শরীরের স্নায়ুগুলি আদৌ তন্দ্রাকারক করে এবং মাথা, হাত, পা এবং শরীরের অন্যান্য অংশগুলির নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় করে।
অ্যাক্সন ও ডেনড্রন-এর পার্থক্য
বিষয় | অ্যাক্সন | ডেনড্রন |
1. কার্যগত প্রকৃতি | চেষ্টীয় অংশ (প্রেরক)। | সংজ্ঞাবহ অংশ (গ্রাহক)। |
2. শাখাপ্রশাখার উপস্থিতি | এটি সাধারণত শাখাহীন । | এটি শাখাপ্রশাখাযুক্ত। |
3. মায়েলিন আবরণীর উপস্থিতি | উপস্থিত। | অনুপস্থিত। |
4. সোয়ান কোশের উপস্থিতি | উপস্থিত। | অনুপস্থিত। |
5. নিস্ল দানার উপস্থিতি | অনুপস্থিত। | উপস্থিত। |
6. র্যানভিয়ারের পর্বের উপস্থিতি | উপস্থিত। | অনুপস্থিত। |
7. কাজ | স্নায়ুস্পন্দন প্রেরণ করা। | স্নায়ুস্পন্দন গ্রহণ করা। |
সংজ্ঞাবহ, আজ্ঞাবহ এবং মিশ্র স্নায়ুর মধ্যে পার্থক্য লেখো। সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া ও অর্জিত প্রতিবর্ত ক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য লেখো।
সংজ্ঞাবহ, আজ্ঞাবহ এবং মিশ্র স্নায়ুর মধ্যে পার্থক্য হল, সংজ্ঞাবহ স্নায়ুগুলি চেতনামুলক নিয়ন্ত্রণে অবস্থিত থাকে এবং অন্য দিকে আজ্ঞাবহ স্নায়ুগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হয়। মিশ্র স্নায়ুগুলি হল যেখানে সংজ্ঞাবহ এবং আজ্ঞাবহ স্নায়ুগুলি সমন্বয় করে ব্যবহার করা হয়।
সংজ্ঞাবহ, আজ্ঞাবহ এবং মিশ্র স্নায়ুর মধ্যে পার্থক্য
বিষয় | সংজ্ঞাবহ স্নায়ু | আজ্ঞাবহ স্নায়ু | মিশ্র স্নায়ু |
1. সংগঠক স্নায়ুর প্রকৃতি | অন্তর্মুখী। | বহির্মুখী। | উভমুখী। |
2. উদ্দীপনা পরিবহণের অভিমুখ | গ্রাহক থেকে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের দিকে। | কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে কারকের দিকে। | উভয় দিকে। |
3. উদাহরণ | অলফ্যাক্টরি, অপটিক, অডিটরি ইত্যাদি। | হাইপোগ্লসাল, ট্রক্লিয়ার ইত্যাদি। | ট্রাইজেমিনাল, ফেসিয়াল, ভেগাস ইত্যাদি। |
সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া ও অর্জিত প্রতিবর্ত ক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য
বিষয় | সহজাত প্রতিবর্ত ক্রিয়া | অর্জিত প্রতিবর্ত ক্রিয়া |
1. ক্রিয়াশীলতার উদ্ভব | সহজাত বা জন্মগত। | ধারাবাহিক অভ্যাস। |
2. স্থায়িত্ব | স্থায়ী। | অস্থায়ী। |
3. শর্তাধীনতা | শর্ত নিরপেক্ষ। | শর্তাধীন। |
4. উদাহরণ | শিশুর স্তন্যদুগ্ধ পান করা ৷ | সাইকেল চালানো। |
মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ডের পার্থক্য লেখো।
মস্তিষ্ক হল মানুষের মুখ্য মনোভাব এবং বিচারের কেন্দ্র, যা সংজ্ঞায়িত মস্তিষ্ক পার্টিগুলি থেকে গঠিত হয়।
সুষুম্নাকাণ্ড হল মানব শরীরের মধ্যবর্তী একটি নদীপথ বা শক্তির চালক, যা বিভিন্ন চক্রের মাধ্যমে প্রাণিমালা বা প্রাণি শক্তির পরিচালনা করে।
মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ডের পার্থক্য
বিষয় | মস্তিষ্ক | সুষুম্নাকাণ্ড |
1. অবস্থান | কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের অগ্রবর্তী স্ফীত অংশ যা করোটির ভিতরে অবস্থান করে। | কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের মস্তিষ্ক পরবর্তী সরু রজ্জুর মতো অংশ যা মেরুদণ্ড গহ্বরে বিন্যস্ত থাকে। |
2. গঠন উপাদান | মস্তিষ্কের বাইরে ধূসর বস্তু ও ভিতরের দিকে শ্বেত বস্তু বিন্যস্ত থাকে। | সুষুম্নাকাণ্ডের বাইরে শ্বেত বস্তু ও ভিতরের দিকে ধূসর বস্তু বিদ্যমান। |
3. স্নায়ুসংখ্যা | মস্তিষ্ক থেকে 12 জোড়া করোটি স্নায়ু নির্গত হয়। | সুষুম্নাকাণ্ড থেকে 31 জোড়া সুষুম্নাস্নায়ু নির্গত হয়। |
4. কাজ | বুদ্ধি, আবেগ, দেহ ভারসাম্য প্রভৃতি কাজের নিয়ন্ত্রক। | পরিবেশগত সমন্বয় ও প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় অংশ নেয়। |
রড কোশ ও কোন কোশের পার্থক্য লেখো ।
রড কোশ হল মানব শরীরের স্নায়ুগুলির একটি সংগ্রহস্থল, যা শরীরের নিয়ন্ত্রণপূর্ণ ক্রিয়াকলাপ এবং স্বাস্থ্য প্রদান করে।
কোন কোশ হল মানব শরীরের স্থায়ী স্তরের সেল বা অংশ, যা নির্দিষ্ট কাজ পালন করে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের গঠন ও প্রদর্শনে মূল ভূমিকা পালন করে।
রড কোশ ও কোন কোশের পার্থক্য
বিষয় | রডকোশ | কোন কোশ |
1. গঠন | চোখের রেটিনা স্তরে অবস্থিত দণ্ডাকৃতি আলোক সংবেদী কোশ। | চোখের রেটিনা স্তরে বিন্যস্ত শঙ্কু আকৃতির আলোক সংবেদী কোশ। |
2. রঙ্গক | রড কোশে রোডপ্সিন নামক রঙ্গক থাকে। | কোন কোশে আয়োডপ্সিন নামক রঙ্গক থাকে। |
3. অবস্থান | সাধারণত রেটিনার পরিধিতে অবস্থিত। | সাধারণত রেটিনার কেন্দ্রের দিকে বিন্যস্ত থাকে। |
4. সংখ্যা | রডকোশের সংখ্যা রেটিনাতে অনেক বেশি (12.5 কোটি) | কোন কোশের সংখ্যা রেটিনাতে অনেক কম (70 লক্ষ)। |
5. কাজ | মৃদু আলোতে দেখতে সহায়তা করে, বর্ণ নিরূপণে ভূমিকা নেই। | উজ্জ্বল আলোতে দেখতে সাহায্য করে। বর্ণ নিরূপণে ভূমিকা রয়েছে। |
আরও পড়ুন,
- মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদেহে সাড়া প্রদানের একটি প্রকার হিসেবে গমন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদের সাড়া প্রদান ও ভৌত সমন্বয়-স্নায়ুতন্ত্র – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
- মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান-জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় – প্রাণীদেহে সাড়া প্রদান ও রাসায়নিক সমন্বয়-হরমোন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
মানব মস্তিষ্ক হল আমাদের শরীরের একটি জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি আমাদের শরীরের সমস্ত ক্রিয়াকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং আমাদের জীবনকে সম্ভব করে তোলে।