এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা – সম্পূরক উদ্ভিদের যৌন জনন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

জীবনের প্রবমানতা হলো জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। জীবনের প্রবমানতার ফলে জীবের বংশগতিগত বৈশিষ্ট্যগুলি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়। জীবের এই বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে তারা পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে এবং টিকে থাকতে পারে।

জীবনের প্রবহমানতা – সম্পূরক উদ্ভিদের যৌন জনন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
Contents Show

আদর্শ ফুলের গঠনগত বিভিন্ন অংশসমূহের বর্ণনা দাও ও প্রত্যেকের কাজ লেখো।

আদর্শ ফুল একটি গুল্ম বা ছোট উদ্ভিদ। এর গঠনগত বিভিন্ন অংশ হল মধুকর্মক, ক্ষেত্রফলক, কর্ণফুল, পাতা, শাখা এবং ফুলের পালক ইত্যাদি। আদর্শ ফুলের প্রধান কাজ হল শুষ্কতা থেকে রক্ষা করা, বীজ প্রস্তুত করা, মধু উৎপাদন করা এবং পুষ্পকালে পরিচর্যা করা।

আদর্শ ফুলের গঠনগত বিভিন্ন অংশ ও তাদের কাজ

যে ফুলে পুষ্পাক্ষের ওপর চারটি স্তবক অর্থাৎ বৃতি, দলমণ্ডল, পুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবক বর্তমান, তাকে আদর্শ ফুল বলে। যেমন — জবা ফুল। আদর্শ ফুলের এই চারটি স্তবকের মধ্যে পুংস্তবক বা পুংকেশর চক্র এবং স্ত্রীস্তবক বা গর্ভকেশর চক্র জননে সাহায্য করে বলে এদের অত্যাবশ্যকীয় স্তবক বা জনন স্তবক বলে। আবার বৃতি ও দলমণ্ডল জননে অংশ নেয় না বলে এদের সাহায্যকারী স্তবক বলে। আদর্শ ফুলের গঠনগত বিভিন্ন অংশগুলি সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল।

আদর্শ ফুলের গঠনগত বিভিন্ন অংশ ও তাদের কাজ
  • বৃতি ফুলের একেবারে বাইরের দিকের স্তবককে বৃতি বলে। বৃত্তি সবুজ রঙের হয়।বৃতির এক-একটি ছোটো পাতার মতো অংশকে বৃত্যংশ বলে। অনেকক্ষেত্রে বৃতির নীচের দিকে সবুজ বর্ণের উপবৃতি থাকে।
  • কাজ 1. বৃতি কুঁড়ি অবস্থায় ফুলের অন্যান্য স্তবককে উষ্ণতা, ঠান্ডা, বৃষ্টি ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ প্রভৃতি থেকে রক্ষা করে। 2. সবুজ বৃতি সালোকসংশ্লেষে অংশগ্রহণ করে।
  • দলমণ্ডল বৃতির পরবর্তী অংশ বা ফুলের দ্বিতীয় স্তবককে দলমণ্ডল বলে। দলমণ্ডলের প্রতিটি অংশকে দলাংশ বা পাপড়ি বলে। এই দলাংশ বা পাপড়ি সাদা বা বিভিন্ন বর্ণের ও গন্ধহীন বা সুগন্ধযুক্ত হয়।
  • কাজ 1. কুঁড়ি অবস্থায় দলমণ্ডল ফুলের ভিতরের দিকের অপরিহার্য দুটি স্তবককে উষ্ণতা, ঠান্ডা, বৃষ্টি ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। 2. ফুলের এই অংশ বর্ণময় ও সুগন্ধযুক্ত হওয়ায় কীটপতঙ্গকে পরাগযোগের জন্য আকৃষ্ট করে।
  • পুংকেশর চক্র বা পুংস্তবক ফুলের তৃতীয় স্তবককে পুংকেশর চক্র বা পুংস্তবক বলে। এর প্রতিটি অংশকে বলে পুংকেশর। প্রতিটি পুংকেশরের দুটি অংশ বর্তমান — পুংদণ্ড ও পরাগধানী। পুংদণ্ডের মাথায় অবস্থিত থলির মতো অংশকে পরাগধানী এবং পরাগধানীর নীচের দণ্ডাকার অংশকে পুংদণ্ড বলে। পরাগধানীর ভিতরে অসংখ্য পরাগরেণু থাকে।
  • কাজ পুংস্তবকের পরাগধানী পরাগরেণু উৎপন্ন করে যৌন জননে সাহায্য করে।
  • গর্ভকেশর চক্র বা স্ত্রীস্তবক – ফুলের চতুর্থ স্তবককে গর্ভকেশর চক্র বা স্ত্রীস্তবক বলে। এটি একটি বা একাধিক গর্ভপত্র বা গর্ভকেশর নিয়ে গঠিত। প্রতিটি গর্ভপত্রের আবার তিনটি অংশ — ডিম্বাশয় বা গর্ভাশয়, গর্ভদণ্ড এবং গর্ভমুণ্ড। গর্ভদণ্ডের নীচের স্ফীত অংশকে গর্ভাশয়, গর্ভাশয়ের পরবর্তী সরু দণ্ডাকার অংশকে গর্ভদণ্ড ও গর্ভদণ্ডের মাথায় অবস্থিত গোলাকার অংশকে গর্ভমুণ্ড বলে।
  • কাজ 1. স্ত্রীস্তবক ডিম্বাণু উৎপন্ন করে নিষেকে সাহায্য করে। 2. ফল ও বীজ উৎপাদন করে।

ফুলকে পরিবর্তিত বিটপ বলা হয় কেন? সহকারী ও অত্যাবশ্যকীয় (অপরিহার্য) স্তবকের পার্থক্য লেখো।

ফুল হল একটি পরিবর্তিত বিটপ যা শাখার মাধ্যমে বীজ উৎপাদন করে এবং পুষ্পকালে আকর্ষণীয় দৃশ্য সৃষ্টি করে।

ফুল একটি পরিবর্তিত বিটপ

ফুলকে পরিবর্তিত বিটপ বলার কারণগুলি হল — 1. পত্রমুকুলের মতো পুষ্পমুকুলও পাতার কক্ষ থেকে বা কাণ্ডের শীর্ষ অঞ্চলের উৎপন্ন হয়। 2. পুষ্পাক্ষের ওপর ফুলের স্তবকগুলির সজ্জারীতি কাণ্ডের ওপরে পত্রবিন্যাসের মতো। 3. কাণ্ডের মতো পুষ্পাক্ষেও পর্ব ও পর্বমধ্য উপস্থিত। 4. বৃত্যংশ ও দলাংশ পাতার মতো শিরা উপশিরাযুক্ত হয়।

সহকারী ও অত্যাবশ্যকীয় (অপরিহার্য) স্তবকের পার্থক্য

বিষয়সহকারী স্তবকঅত্যাবশ্যকীয় (অপরিহার্য) স্তবক
1. জননকোশ উৎপন্ন করার ক্ষমতাজননকোশ উৎপন্ন করে না।পুং-জননকোশ বা পরাগরেণু এবং স্ত্রী জননকোশ বা ডিম্বাণু উৎপন্ন করে।
2. কাজপুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবককে সুরক্ষা দেয় ও পরাগমিলনে সাহায্য করে।জননে সরাসরি অংশগ্রহণ করে।
3. উদাহরণবৃতি ও দলমণ্ডল।পুংকেশর চক্র ও গর্ভকেশর চক্র।

স্বপরাগযোগ কাকে বলে? উদাহরণসহ লেখো। স্বপরাগযোগের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

স্বপরাগযোগ হল মানব দেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়া, যার মাধ্যমে শ্বাসকোশে রক্তের অক্সিজেন বিনিময় হয়।

স্বপরাগযোগ

কোনো ফুলের পুংকেশরের পরাগধানী থেকে পরাগরেণু সেই ফুলের বা সেই গাছের অন্য কোনো ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হওয়ার পদ্ধতিকে স্বপরাগযোগ বলে। যেমন — সন্ধ্যামালতী, শিম, ধুতরো, মটর ইত্যাদি উদ্ভিদে স্বপরাগযোগ ঘটে।

স্বপরাগযোগ

স্বপরাগযোগের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য

স্বপরাগযোগের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল — 1. এইজাতীয় পরাগযোগ সহবাসী উদ্ভিদে সম্পন্ন হয়। 2. এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ফুলের পরাগধানী ও গর্ভদণ্ড একই সময়ে পরিণত হয়। 3. এইজাতীয় পরাগযোগ একই ফুলেও ঘটে (অটোগ্যামি), আবার একই উদ্ভিদের দুটি ফুলের মধ্যেও সম্পন্ন হতে পারে (গেইটোনোগ্যামি)। 4. সাধারণত উভলিঙ্গ ফুলের ক্ষেত্রে স্বপরাগযোগ ঘটে। 5. এক্ষেত্রে ফুলের পরাগরেণুর অপচয় অনেক কম হয়। 6. এইজাতীয় পরাগযোগের ফলে সংশ্লিষ্ট উদ্ভিদ থেকে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উদ্ভিদ পাওয়া যায় না। 7. অপত্য উদ্ভিদের গুণগত মান একই থাকে অথবা কমতে থাকে। 8. এইপ্রকার পরাগযোগে সাধারণত কোনো বাহকের প্রয়োজন হয় না।

ইতর পরাগযোগ কাকে বলে? উদাহরণসহ লেখো। ইতর পরাগযোগের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি করো।

ইতর পরাগযোগ হল পারস্পরিক সংস্পর্শ ছাড়াও একটি জীবের সংসার পরিচালনা করা এবং জীবাশ্রয়ী সম্পর্ক তৈরি করা।

ইতর পরাগযোগ

কোনো একটি ফুলের পুংকেশরের পরাগধানী থেকে উৎপন্ন পরাগরেণু একই প্রজাতিভুক্ত বা অন্য প্রজাতিভুক্ত অপর একটি গাছে উৎপন্ন ফুলের গর্ভমুণ্ডে স্থানান্তরিত হওয়ার পদ্ধতিকে ইতর বা বিপরীত পরাগযোগ বলে। যেমন — তাল, পেঁপে, আম, পটল, কুমড়ো ইত্যাদি উদ্ভিদে ইতর পরাগযোগ ঘটে।

ইতর পরাগযোগ

ইতর পরাগযোগের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য

ইতর পরাগযোগে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। যথা — 1. একলিঙ্গ ফুলের ক্ষেত্রেই কেবল ইতর পরাগযোগ হয়। 2. এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ফুলগুলির বিষম পরিণতি দেখা যায়। অর্থাৎ, পুংস্তবক ও স্ত্রীস্তবক একসাথে পরিণত না হয়ে ভিন্ন সময়ে পরিণত হয়। 3. ফুলের গঠনগত প্রতিবন্ধকতার জন্য অনেকক্ষেত্রে ইতর পরাগযোগ সম্ভব হয় না। 4. এক ফুল থেকে অন্য ফুলে পরাগরেণুর স্থানান্তরণের জন্য বিভিন্ন বাহকের (বায়ু, জল, পতঙ্গ) প্রয়োজন হয়। 5. একই প্রজাতির বা অন্য প্রজাতির দুটি ভিন্ন বৈশিষ্ট্যযুক্ত উদ্ভিদের দুটি ভিন্ন ফুলের মধ্যে পরাগযোগ সম্পন্ন হয় বলে অপত্য উদ্ভিদে প্রকরণের সৃষ্টি হয়।

চিত্রসহ একটি সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক এবং নতুন উদ্ভিদ গঠন পদ্ধতি বর্ণনা করো।

সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক হল একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পুষ্পপ্রস্তর উৎপন্ন হয় এবং পুষ্পবিশিষ্ট ফল উৎপন্ন হয়।

সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক

সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক প্রক্রিয়া উন্নতমানের হয়। সপুষ্পক গুপ্তবীজী উদ্ভিদের নিষেক পদ্ধতির বিভিন্ন ধাপগুলি পরের পাতায় বিশদে বর্ণনা করা হল।

চিত্রসহ একটি সপুষ্পক উদ্ভিদের নিষেক এবং নতুন উদ্ভিদ গঠন পদ্ধতি বর্ণনা করো।
  1. পরাগরেণু সৃষ্টি ফুলের পুংকেশরের পরাগধানীর মধ্যে অবস্থিত পরাগরেণু মাতৃকোশ ডিপ্লয়োড (2n) প্রকৃতির হয়। এই পরাগরেণু মাতৃকোশের মিয়োসিস বিভাজনের ফলে অসংখ্য পরাগরেণু উৎপন্ন হয়, যেগুলি হ্যাপ্লয়েড (n) প্রকৃতির হয়ে থাকে।
  2. ডিম্বাণু বা স্ত্রীগ্যামেট সৃষ্টি উদ্ভিদের ফুলের ডিম্বাশয়ের মধ্যে এক বা একাধিক ডিম্বক বর্তমান। এই ডিম্বকের ভ্রুণস্থলীর মধ্যে পরিস্ফুটনের মাধ্যমে স্ত্রীগ্যামেট উৎপন্ন হয়।প্রাথমিক অবস্থায় ভ্রুণস্থলীর মধ্যে একটি হ্যাপ্লয়েড (n) নিউক্লিয়াস অবস্থান করে। এই নিউক্লিয়াসটি মাইটোসিস কোশ বিভাজনের দ্বারা বারবার বিভাজিত হয় এবং ৪টি হ্যাপ্লয়েড (n) নিউক্লিয়াস গঠন করে। এদের মধ্যে 3টি নিউক্লিয়াস ভ্রুণস্থলির এক মেরুতে একত্রে অবস্থান করে। এদের প্রতিপাদ কোশ (antipodal cells) বলে। অপর এটি নিউক্লিয়াস ভ্রুণস্থলীর বিপরীত মেরুতে আসে। এদের মধ্যে দুটি নিউক্লিয়াস সহকারী কোশ (synergids)-রূপে এবং একটি নিউক্লিয়াস ডিম্বাণু (egg) বা স্ত্রীগ্যামেট-রূপে অবস্থান করে। অবশিষ্ট যে 2টি নিউক্লিয়াস থাকে, তারা পরস্পর মিলিত হয়ে একটি নির্ণীত নিউক্লিয়াস (definitive nucleus, 2n) গঠন করে, যা ভ্রুণস্থলীর কেন্দ্রে অবস্থান করে।
  3. পরাগযোগ এই পর্যায়ে স্বপরাগযোগ বা বাহক দ্বারা ইতর -পরাগরেণু পরাগযোগের মাধ্যমে পুংকেশরের পরাগধানী থেকে পরাগরেণু, গর্ভকেশরের গর্তমুখে স্থানান্তিরত হয়। পরাগরেণু ফুলের গর্তমুন্ডে আবদ্ধ হওয়ার পর তা থেকে একটি পরাগনালী সৃষ্টি হয়। এই পরাগনালীর মাধ্যমে পরাগরেণু ডিম্বাশয়ে প্রবেশ করে।
  4. নিষেক ও জাইগোট গঠন পরাগরেণু পরাগনালীতে প্রবেশের পরে তার বিভাজন ও পরিস্ফুরণ ঘটে এবং ২টি হ্যাপ্লয়েড (n) পুংগ্যামেট উৎপন্ন হয়। এই পুংগ্যামেট দুটি পরাগনালীর অগ্রভাগে অবস্থান করে। পরাগনালী ক্রমশ দীর্ঘ হয় এবং তার অগ্রপ্রান্ত ডিম্বকরন্ধ্র বা ডিম্বকমূল বা ডিম্বকত্বক ভেদ করে ডিম্বকে প্রবেশ করে। পরাগনালী ডিম্বকরন্ধ্র ভেদ করে ডিম্বকে প্রবেশ করলে তাকে পোরোগ্যামি, ডিম্বকমূল ভেদ করে প্রবেশ করলে তাকে চ্যালাজোগ্যামি এবং ডিম্বকত্বক ভেদ করে প্রবেশ করলে তাকে মেসোগ্যামি বলে। পরাগনালী ভ্রূণস্থলীর প্রাচীর ভেদ করে ভ্রূণস্থলীতে প্রবেশ করে। ক্রমে পরাগনালীর অগ্রপ্রান্ত বিদীর্ণ হয়ে ২টি পুংগ্যামেট ভ্রূণস্থলীতে মুক্ত হয়। অবশেষে একটি পুংগ্যামেট ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়ে নিষেক ঘটায়, যার ফলস্বরূপ ডিপ্লয়েড (2n) ভ্ৰূণাণু বা জাইগোট গঠিত হয়।
  5. ভ্রূণ গঠন নিষিক্ত এককোশী ভ্রূণাণু বা জাইগোটটি বারবার বিভাজিত হয়ে বহুকোশী ভ্রুণ গঠন করে।
  6. ফল ও বীজ গঠন নিষেকের পরে ভ্রুণসহ ডিম্বক বীজে ও বীজসহ সমগ্র ডিম্বাশয় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে ফলে রূপান্তরিত হয়।
  7. বীজের অঙ্কুরোদ্‌গম এবং নতুন উদ্ভিদ গঠন বীজের মধ্যে ভবিষ্যতের গাছ বা ভ্রূণ অবস্থান করে। অনুকুল পরিবেশ, অর্থাৎ যথাযথ আলো, উয়তা, আর্দ্রতা, অক্সিজেন ও অভ্যন্তরীণ শর্তের উপস্থিতিতে বীজের অঙ্কুরোদ্‌গম ঘটে। এর ফলে বীজ থেকে নতুন অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়। ভ্রূণমুকুল নামক অংশ থেকে অপত্য উদ্ভিদের বিটপ এবং ভ্রূণমূল থেকে মূলতন্ত্র গঠিত হয়।

স্বপরাগযোগ ও ইতর পরাগযোগের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো।

স্বপরাগযোগ ও ইতর পরাগযোগের সুবিধা ও অসুবিধা

বিষয়স্বপরাগযোগইতর পরাগযোগ
এক্ষেত্রে বাহকের প্রয়োজনীয়তা না থাকায় পরাগযোগের নিশ্চয়তা বেশি। এক্ষেত্রে পরাগরেণুর অপচয় কম হয়।এক্ষেত্রে বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ, প্রকরণ ঘটে যা প্রতিকূল পরিবেশে অভিযোজিত হতে সাহায্য করে।
সুবিধাস্বপরাগযোগে উৎপন্ন বীজ তথা অপত্য উদ্ভিদ একই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হওয়ায় প্রজাতির বিশুদ্ধতা বজায় থাকে।ইতর পরাগযোগে উৎপন্ন বীজ তথা অপত্য উদ্ভিদ উন্নতমানের বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয় ও এদের বীজের অঙ্কুরণের হার বেশি হয়। 
নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত অপত্য উদ্ভিদ উৎপন্ন হতে পারে না। অর্থাৎ, প্রকরণ ঘটে না ফলে অবলুপ্তির সম্ভাবনা থাকে।ইতর পরাগযোগ বাহক-নির্ভর হওয়ায় এদের ক্ষেত্রে পরাগযোগের নিশ্চয়তা কম।
অসুবিধাস্বপারাগযোগে উৎপন্ন বীজ নিম্নমানের হয় ও অঙ্কুরণের হার কম হয়।ইতর পরাগযোগের ক্ষেত্রে পরাগরেণুর অপচয়ের মাত্রা অনেক বেশি হয়।

বিভিন্ন প্রকার বাহকের মাধ্যমে ইতর পরাগযোগ উদাহরণ সহযোগে ব্যাখ্যা দাও।

ইতর পরাগযোগের বিভিন্ন বাহক এবং উদাহরণ

বাহকব্যাখ্যাউদাহরণ 
বায়ুর মাধ্যমেবায়ুর মাধ্যমে সংঘটিত ইতর পরাগযোগকে বায়ু দ্বারা পরাগযোগ বা অ্যানিমোফিলি বলে। যেসব ফুলের পরাগযোগ বায়ুর মাধ্যমে ঘটে, তাদের বায়ুপরাগী ফুল বা অ্যানিমোফিলাস ফুল বলে। এই ফুলগুলি বর্ণহীন, গন্ধহীন, অনুজ্জ্বল ও ক্ষুদ্র হয়। ফুলে মকরন্দ থাকে না।ধান
জলের মাধ্যমেজলের মাধ্যমে সংঘটিত ইতর পরাগযোগকে জলের দ্বারা পরাগযোগ বা হাইড্রোফিলি বলে। যেসব| ফুলের পরাগযোগ জলের মাধ্যমে ঘটে, তাদের জলপরাগী ফুল বা হাইড্রোফিলাস ফুল বলে ফলুগুলি বর্ণহীন, গন্ধহীন, অনুজ্জ্বল ও ক্ষুদ্র হয়। পরাগযোগ জলের ওপরে ঘটলে (যেমন — পাতাঝাঝি) পরাগরেণু হালকা হয়, নতুবা তা ভারী হয়। পাতাঝাঝি
পতঙ্গের মাধ্যমেপতঙ্গের মাধ্যমে সংঘটিত ইতর পরাগযোগকে পতঙ্গের দ্বারা পরাগযোগ বা এন্টোমোফিলি বলে। যেসব ফুলের পরাগযোগ পতঙ্গের মাধ্যমে ঘটে, তাদের পতঙ্গ পরাগী ফুল বা এন্টোমোফিলাস ফুল বলে। এই ফুলগুলি উজ্জ্বল বর্ণের, মকরন্দযুক্ত ও সুমিষ্ট গন্ধযুক্ত হয়।আম
পাখির মাধ্যমেপাখির মাধ্যমে সংঘটিত ইতর পরাগযোগকে পাখির দ্বারা পরাগযোগ বা অরনিথোফিলি বলে। যেসব ফুলের পরাগযোগ পাখির মাধ্যমে ঘটে, তাদের পক্ষীপরাগী ফুল বা অরনিথোফিলাস ফুল বলে। এই ফুলগুলি আকারে বড়ো, উজ্জ্বল এবং মকরন্দযুক্ত হয়। অনেকক্ষেত্রে পরাগধানীগুলি পাখির খাদ্য হিসেবে গৃহীত হয়। তার ফলে পরাগযোগ ঘটে থাকে। শিমুল

ডিম্বক কী? লম্বচ্ছেদে ডিম্বকের চিহ্নিত চিত্রসহ গঠন বর্ণনা করো।

ডিম্বক হল একটি জীবাণুমুক্ত স্তনধারী প্রাণী, যার গর্তে শিশুরা প্রসব করে।

ডিম্বক

যে ত্বকবেষ্টিত গর্ভকেশরের অংশ থেকে বীজ গঠিত হয় ও যা স্ত্রীরেণুকে ধারণ করে, তাকে ডিম্বক বলে।

ডিম্বক কী লম্বচ্ছেদে ডিম্বকের চিহ্নিত চিত্রসহ গঠন বর্ণনা করো।

ডিম্বকের গঠন

ডিম্বকের বিভিন্ন অংশগুলি নীচে উল্লেখ করা হল।

  1. ডিম্বকবৃন্ত পরিণত ডিম্বকের একটি ছোটো বৃন্ত থাকে, যা ডিম্বককে অমরার সাথে সংযুক্ত রাখে একে ডিম্বকবৃন্ত বলে।
  2. ডিম্বকমূল ডিম্বকের যে অংশ থেকে ডিম্বকত্বক উৎপন্ন হয়, তাকে ডিম্বকমূল বলে।
  3. ডিম্বকনাভি ডিম্বকবৃত্তের সঙ্গে ডিম্বকমূলের সংযোগস্থলকে ডিম্বকনাভি বলে।
  4. ডিম্বকত্বক ডিম্বকের আবরণীকে ডিম্বকত্বক বলে।
  5. ভ্ৰূণপোষক কলা ডিম্বকত্বকের নীচে অবস্থিত যে কলা ডিম্বকের ভূণস্থলীকে ঘিরে রাখে, সেই কলাগুচ্ছকে ভ্ৰূণপোষক কলা বলে।
  6. ডিম্বকরন্ধ্র ডিম্বকত্বক ভ্রূণপোষক কলাকে সম্পূর্ণ- ভাবে আবৃত রাখে না। এই অনাবৃত অংশকে ডিম্বকরন্ধ্র বলে।
  7. ভূগস্থলী ভ্রূণপোষক কলার ভিতরে একটি বৃহৎ থলির মতো কোশ বর্তমান থাকে, যাকে ভ্রূণস্থলী বা ভ্রূণাধার বলে। এটি ডিম্বকের প্রধান কোশ। প্রতিটি ভ্রূণস্থলীতে ৪টি হ্যাপ্লয়েড (n) নিউক্লিয়াস বিশেষভাবে বিন্যস্ত থাকে, যার মধ্যে 3টি ডিম্বকরন্ধ্রের দিকে অবস্থিত। এদের একত্রে গর্ভযন্ত্র বলে। এই তিনটির মধ্যে একটিকে ডিম্বাণু ও বাকি দুটিকে সহকারী কোশ বলে। ভ্রূণস্থলীর মাঝে দুটি নিউক্লিয়াস যুক্ত হয়ে ডিপ্লয়েড (2n) ক্রোমোজোম-বিশিষ্ট নির্ণীত নিউক্লিয়াস গঠন করে। ডিম্বকরন্ধ্রের বিপরীত দিকে বর্তমান 3টি নিউক্লিয়াসকে একত্রে প্রতিপাদ কোশসমষ্টি বলে।

বায়ুপরাগী ফুলের ও জলপরাগী ফুলের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

বায়ুপরাগী ফুল হল একধরনের ফুল যা হাওয়ার মাধ্যমে বীজ বিতরণ করে এবং বাতাসে সুগন্ধ ছড়ায়।

বায়ুপরাগী ফুলের বৈশিষ্ট্য

বায়ুপরাগী ফুলের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল — 1. বায়ুপরাগী ফুল সাধারণত সাদা, অনুজ্জ্বল এবং ক্ষুদ্রাকার হয়। এইজাতীয় ফুল দুটি – আকর্ষী হয় না। 2. এইজাতীয় ফুলে মকরন্দ সঞ্চিত হয় না এবং ফুল সাধারণত গন্ধহীন হয়। 3. দীর্ঘ পুংদণ্ডের উপস্থিতির জন্য দোদুল্যমান পরাগধানী দলমণ্ডলের বাইরে বেরিয়ে আসে। 4. বায়ু দ্বারা বাহিত হবার সময় পরাগরেণু অপচয় হয়, তাই অধিক পরিমাণে পরাগরেণু উৎপন্ন হয়। 5. পরাগরেণু যাতে বাতাসে সহজে উড়তে পারে, তার জন্য পরাগ খুবই হালকা হয়।

বায়ুপরাগী ফুলের ও জলপরাগী ফুলের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

জলপরাগী ফুলের বৈশিষ্ট্য

জলপরাগী ফুলের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল — 1. জলপরাগী ফুলের আকৃতি ক্ষুদ্র হয় এবং ফুলগুলি অনুজ্জ্বল প্রকৃতির। 2. জলের তলায় যে ফুলের পরাগযোগ সম্পন্ন হয়, সেই ফুলের পরাগরেণু অপেক্ষাকৃত ভারী হয়। 3. রেণুগুলির বাইরের ত্বকে মোমজাতীয় পদার্থের আস্তরণ থাকে। 4. কিছুসংখ্যক জলপরাগী ফুলের গর্ভকেশর এবং পুংকেশর দলাংশ দিয়ে ঢাকা থাকে না। 5. পরাগরেণুগুলি ক্ষুদ্র হয় এবং সহজে জলের মাধ্যমে একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তরিত হতে পারে।

পতঙ্গপরাগী ফুল হল একধরনের ফুল যা রাতে উজ্জ্বল হয় এবং পতঙ্গের মাধ্যমে তাদের বীজ বিতরণ করে।

পতঙ্গপরাগী ও পাখিপরাগী ফুলের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

পতঙ্গপরাগী ফুলের বৈশিষ্ট্য

পতঙ্গপরাগী ফুলের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল — 1. পতঙ্গপরাগী ফুলগুলি সাধারণত বড়ো ও উজ্জ্বল বর্ণের হয়। 2. ফুলগুলি সুগন্ধযুক্ত হয় এবং ফুলে অনেক সময় মকরন্দ সঞ্চিত থাকে। 3. এইজাতীয় ফুলে পরাগরেণুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হয়। 4. পরাগরেণু অপেক্ষাকৃত বড়ো, আঠালো এবং খসখসে হয়, যাতে সহজে পতঙ্গের গায়ে আটকে যেতে পারে। 5. এইপ্রকার ফুলের গর্ভমুণ্ড সাধারণত ক্ষুদ্রাকার, আঠালো এবং খসখসে হয়।

পতঙ্গপরাগী ও পাখিপরাগী ফুলের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো ।

পাখিপরাগী ফুলের বৈশিষ্ট্য

পাখিপরাগী ফুলের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি হল — 1. এই ধরনের ফুলগুলি আকারে বেশ বড়ো হয়। 2. এই ফুলগুলির বর্ণ উজ্জ্বল প্রকৃতির হয়, এতে পাখিরা সহজে আকৃষ্ট হয়। 3. এইজাতীয় ফুলে যথেষ্ট পরিমাণে মকরন্দ সঞ্চিত থাকে। 4. অনেকক্ষেত্রে এই ফুলের পরাগধানীগুলি পাখির খাদ্য হিসেবে গৃহীত হয় ৷

উদ্ভিদের যৌন জনন একটি জটিল প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন উদ্ভিদের জন্ম হয়। যৌন জননের মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব, বৈচিত্র্য বৃদ্ধি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

Share via:

মন্তব্য করুন