নদী ও হিমবাহ উভয়ই ভূমিরূপ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নদী মূলত বৃষ্টিপাত ও তুষার গলনের ফলে সৃষ্ট জলের প্রবাহকে বোঝায়, অন্যদিকে হিমবাহ হল বরফ ও তুষার দ্বারা গঠিত একটি বিশাল ভূমিভাগ। নদী ও হিমবাহের কাজের মধ্যে কিছু মূল পার্থক্য রয়েছে,
নদী প্রবাহপথে বাঁধা পেলে, বাঁধাকে অতিক্রম করবার জন্য এঁকে-বেঁকে প্রবাহিত হয়। হিমবাহ প্রবাহপথে বাঁধা পেলে, বাঁধা অতিক্রম করার জন্য বাঁধাকে ক্ষয় করে সোজা পথে অগ্রসর হয়। ভূমির ঢাল, শিলার প্রকৃতি, জলের পরিমাণ প্রভৃতির ওপর নদীর কাজ নির্ভর করে। হিমবাহের কার্য নির্ভর করে প্রধানত বরফের পরিমাণ ও শিলার প্রকৃতির ওপর।
নদী ও হিমবাহের কার্যের তুলনা —
বিষয় | নদীর কার্য | হিমবাহের কার্য |
ভূমিরূপের প্রাচীনত্ব | নদী দ্বারা গঠিত ভূমিরূপগুলো বয়সে প্রাচীন। | হিমবাহ গঠিত ভূমিরূপগুলি নদী দ্বারা গঠিত ভূমিরূপগুলোর চেয়ে বয়সে নবীন। |
কার্য প্রক্রিয়া | নদীর ক্ষয়কার্য 5টি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। যথা — 1. ঘর্ষণ ক্ষয়, 2. অবঘর্ষ ক্ষয়, 3. জলপ্রবাহ ক্ষয়, 4. বুদ্বুদ ক্ষয় ও 5. দ্রবণ ক্ষয়। | হিমবাহের ক্ষয়কার্য 2টি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। যথা – 1. উৎপাটন ক্ষয় ও 2. অবঘর্ষ ক্ষয়। |
কার্যের ভিত্তি | নদীর কার্য নির্ভর করে ভূমির ঢাল, শিলার প্রকৃতি এবং নদীর জলের পরিমাণের ওপর। | হিমবাহের কার্য নির্ভর করে প্রধানত বরফের পরিমাণ ও শিলার প্রকৃতির ওপর। |
উপত্যকার আকৃতি | পার্বত্য অঞ্চলে নদী উপত্যকা ‘V’ – আকৃতির হয়। তবে ‘I’ – আকৃতিরও উপত্যকা দেখা যায়। | হিমবাহের উপত্যকা ‘U’- আকৃতির হয়। |
সৃষ্ট পদার্থের আকৃতি | নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট পদার্থগুলি গোলাকার এবং মসৃণ হয়। | হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট পদার্থগুলির নির্দিষ্ট কোনো আকার নেই এবং এগুলি এবড়োখেবড়ো হয়। |
গতিপথের বিভাজন | নদীর সমগ্র গতিপথকে তিনটি অংশে ভাগ করা যায় — উচ্চগতি, মধ্যগতি ও নিম্নগতি। | নদীর গতিপথের মতো হিমবাহের গতিপথের কোনো নির্দিষ্ট বিভাগ নেই। |
বাহিত পদার্থের সঞ্চয়স্থল | আকৃতি ও আয়তন অনুসারে নদীবাহিত পদার্থগুলি নদীর গতিপথের নির্দিষ্ট অংশে (মূলত সমভূমি অঞ্চল ও মোহানার নিকট) কিছু কিছু পরিমাণে সঞ্চিত হয়। | হিমবাহ-বাহিত দ্রব্যগুলি তার গতিপথের বিভিন্ন অংশে একসঙ্গেই সঞ্চিত হয়। |
ক্ষয়কার্যের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ | নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে গিরিখাত, জলপ্রপাত, মন্থকূপ, V – আকৃতির উপত্যকা প্রভৃতির সৃষ্টি হয়। | হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে U-আকৃতির উপত্যকা, করি, এরিটি, পিরামিড চূড়া, ঝুলন্ত উপত্যকা, রসে মতানে, ক্র্যাগ অ্যান্ড টেল প্রভৃতির সৃষ্টি হয়। |
সঞ্চয়কার্যের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ | নদীর সঞ্চয়কার্যের ফলে প্লাবনভূমি, স্বাভাবিক বাঁধ, বদ্বীপ প্রভৃতির সৃষ্টি হয়। | হিমবাহের সঞয়কার্যের ফলে গ্রাবরেখা, কেম, ড্রামলিন, এসকার প্রভৃতি গঠিত হয়। |
কার্যস্থল | নদীর কার্য শুষ্ক মরু অঞ্চল এবং হিমশীতল অঞ্চল ছাড়া ভূপৃষ্ঠের সর্বত্রই দেখা যায়। হিমরেখার নীচ থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা পর্যন্ত নদীর কার্য দেখা যায়। | হিমবাহের কার্য শুধুমাত্র সুউচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে এবং শীতল মেরু অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ। কেবলমাত্র হিমরেখার ঊর্ধ্বে হিমবাহের কার্য দেখা যায়। |
আরও পড়ুন – হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও
নদী ও হিমবাহ উভয়ই ভূমিরূপ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নদীর ক্ষয়কার্য ও সঞ্চয়কার্যের ফলে সমভূমি, ময়দান, পললশঙ্কু, বদ্বীপ প্রভৃতি ভূমিরূপ গঠিত হয়। হিমবাহের ক্ষয়কার্য ও সঞ্চয়কার্যের ফলে U – আকৃতির উপত্যকা, করি, এরিটি, পিরামিড চূড়া, ঝুলন্ত উপত্যকা, রসে মতানে, ক্র্যাগ অ্যান্ড টেল প্রভৃতি ভূমিরূপ গঠিত হয়।