এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় ও মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় সৃষ্টির কারণ লেখো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় ও মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় সৃষ্টির কারণ লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুর চাপ বলয় ও বায়ুপ্রবাহ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় ও মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় সৃষ্টির কারণ লেখো।
পৃথিবীকে পূর্ব-পশ্চিমে বেষ্টন করে বলয়াকারে এক-একটি প্রায় সমচাপযুক্ত অঞ্চল অবস্থান করে, একে বায়ুচাপ বলয় বলে। সমগ্র পৃথিবীতে সাতটি বায়ুচাপ বলয় দেখা যায়। সেগুলি হল –
(1) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় –
অবস্থান – নিরক্ষরেখার দুপাশে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে 0°-5° বা 10° অক্ষরেখার মধ্যে বিস্তৃত অঞ্চলে এই নিম্নচাপ বলয়টি অবস্থান করে।
নিম্নচাপ সৃষ্টির কারণ –
- এই অঞ্চলে সারাবছর সূর্যরশ্মি প্রায় লম্বভাবে পড়ে বলে অধিক উষ্ণতায় এখানকার বায়ু সর্বদা পরিচলন পদ্ধতিতে ঊর্ধ্বমুখী হয়।
- এখানে স্থলভাগ অপেক্ষা জলভাগের বিস্তার বেশি থাকায় প্রখর সূর্যতাপের কারণে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং হালকা বলে সহজেই তা ওপরে উঠে প্রসারিত হয়। ফলে চাপ কম হয়।
- নিরক্ষীয় অঞ্চলে পৃথিবীর আবর্তন বেগ সবচেয়ে বেশি হওয়ায় ঊর্ধ্বমুখী উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু এখান থেকে উত্তর ও দক্ষিণে দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলের দিকে ছিটকে যায়। ফলে নিম্নাংশে বায়ুর ঘনত্ব কমে যায়, নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।
(2) ও (3) কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় –
অবস্থান – উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের 25°-35° অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে যথাক্রমে কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় দুটি অবস্থান করে।
উচ্চচাপ সৃষ্টির কারণ –
- নিরক্ষীয় অঞ্চলের উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু হালকা হয়ে ওপরে উঠলে পৃথিবীর আবর্তনের প্রভাবে তা উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ছিটকে যায় এবং ক্রমশ শীতল ও ভারী হয়ে দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলে নেমে আসে ফলে এই অংশে বায়ুর ঘনত্ব বেড়ে উচ্চচাপ সৃষ্টি হয়।
- সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলের শীতল ও ভারী বায়ু কোরিওলিস বলের প্রভাবে বিক্ষিপ্ত হয়ে দুই ক্রান্তীয় অঞ্চলে নেমে আসে। ফলে এখানে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়।
- উত্তর গোলার্ধে 25°-35° অক্ষাংশের মধ্যে দুটি উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়ের বায়ু নিম্নমুখী হওয়ায় এর কোনো পার্শ্বপ্রবাহ থাকে না এবং ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে কোনো বায়ু প্রবাহিত না হওয়ায় এক ধরনের শান্ত ভাব বিরাজ করে। এই অঞ্চলকে উপক্রান্তীয় শান্ত বলয় বা অশ্ব অক্ষাংশ বলে।
(4) ও (5) সুমেরু ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় –
অবস্থান – উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের 60° থেকে 70° অক্ষরেখার মধ্যে যথাক্রমে সুমেরু ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় দুটি অবস্থান করে।
নিম্নচাপ সৃষ্টির কারণ –
- মেরু অঞ্চলের তুলনায় এই দুই অঞ্চলের উষ্ণতা বেশি হয়। ফলে এই অঞ্চলের বায়ু হালকা ও প্রসারিত হয়ে ওপরে ওঠে এবং নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।
- পৃথিবীর আবর্তন বেগ এই অংশে মেরু অঞ্চলের তুলনায় বেশি হওয়ায় ঊর্ধ্বগামী বায়ু উত্তর ও দক্ষিণে বিক্ষিপ্ত হয়ে যায় ফলে এখানে বায়ুর পরিমাণ বা ঘনত্ব কমে যায় এবং নিম্নচাপ বিরাজ করে।
(6) ও (7) সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় –
অবস্থান – উভয় গোলার্ধের 80° থেকে 90° অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অঞ্চলে যথাক্রমে সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় নামক বায়ুমণ্ডলের সর্বাধিক গভীর উচ্চচাপ বলয় দুটি অবস্থান করে।
উচ্চচাপ সৃষ্টির কারণ –
- মেরু অঞ্চলে সারাবছর সূর্যকিরণ তির্যকভাবে পতিত হওয়ায় প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে এখানকার বায়ু সর্বদা শীতল ও ভারী হয়।
- সূর্যরশ্মির প্রখরতা কম থাকায় এই অঞ্চলে বাষ্পীভবনের পরিমাণ তথা বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুব কম থাকে ফলে বায়ু ভারী ও উচ্চচাপযুক্ত হয়।
- পৃথিবীর আবর্তনের কারণে মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চল থেকে বায়ুর কিছু অংশ মেরু অঞ্চলে নেমে আসে এবং বায়ুর ঘনত্ব ও চাপ বৃদ্ধি করে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় কী?
নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় হল পৃথিবীর নিরক্ষরেখার কাছে (0°-5° বা 10° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে) অবস্থিত একটি নিম্নচাপ অঞ্চল। এখানে বায়ু উষ্ণ ও হালকা হয়ে ঊর্ধ্বমুখী হয়, ফলে বায়ুর চাপ কমে যায়।
নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় সৃষ্টির প্রধান কারণ কী?
1. সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে বলে বায়ু উত্তপ্ত ও হালকা হয় এবং ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহের সৃষ্টি করে।
2. পৃথিবীর দ্রুত আবর্তনের কারণে বায়ু উত্তর ও দক্ষিণে সরে যায়, ফলে নিম্নস্তরে বায়ুর ঘনত্ব কমে।
3. জলীয় বাষ্পের আধিক্য বায়ুকে আরও হালকা করে, ফলে চাপ কমে।
মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় কী?
মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় হল উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে (80°-90° অক্ষাংশে) অবস্থিত উচ্চচাপ অঞ্চল। এখানে বায়ু অত্যন্ত শীতল ও ভারী হয়, ফলে চাপ বেশি থাকে।
মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় সৃষ্টির কারণ কী?
1. মেরু অঞ্চলে সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পড়ে বলে বায়ু শীতল ও ভারী হয়।
2. বাষ্পীভবন কম হওয়ায় বায়ু শুষ্ক ও ঘন হয়, ফলে চাপ বৃদ্ধি পায়।
3. মেরুবৃত্তীয় অঞ্চল থেকে শীতল বায়ু নেমে এসে চাপ বাড়ায়।
উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় (অশ্ব অক্ষাংশ) কী?
কর্কটীয় (25°-35° উত্তর) ও মকরীয় (25°-35° দক্ষিণ) অক্ষাংশে অবস্থিত উচ্চচাপ বলয়কে উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় বা অশ্ব অক্ষাংশ বলে। এখানে বায়ু নিম্নমুখী হয়, ফলে কোনো পার্শ্বপ্রবাহ থাকে না এবং শান্ত অবস্থা বিরাজ করে।
মেরুবৃত্তীয় নিম্নচাপ বলয় কেন সৃষ্টি হয়?
1. মেরু অঞ্চলের তুলনায় এখানে উষ্ণতা বেশি, ফলে বায়ু হালকা হয়ে ঊর্ধ্বমুখী হয়।
2. পৃথিবীর আবর্তনের প্রভাবে বায়ু বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়, ফলে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় ও মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় সৃষ্টির কারণ লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় ও মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় সৃষ্টির কারণ লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুর চাপ বলয় ও বায়ুপ্রবাহ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন