আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে দেখবো যে সমুদ্রস্রোত এবং সমুদ্রতরঙ্গ – এর মধ্যে পার্থক্য এই প্রশ্ন দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায়ের প্রশ্ন। সমুদ্রস্রোত এবং সমুদ্রতরঙ্গ – এর মধ্যে পার্থক্য – আপনি পরীক্ষার জন্য তৈরী করে গেলে আপনি লিখে আস্তে পারবেন।
সমুদ্রস্রোত
সমুদ্রস্রোত হল সমুদ্রের জলরাশির নিয়মিত, নির্দিষ্ট দিকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রবাহ। এই প্রবাহ সাধারণত একমুখী হয় এবং বায়ুপ্রবাহের প্রভাবে সৃষ্ট হয়। সমুদ্রজলের ঘনত্ব বেশি হওয়ায় বায়ুপ্রবাহের তুলনায় সমুদ্রস্রোতের গতিবেগ খুবই কম, ঘন্টায় মাত্র ৫ – ১০ কিলোমিটার।
সমুদ্রস্রোত দুই ধরনের – পৃষ্ঠস্রোত ও অন্তঃস্রোত। পৃষ্ঠস্রোত সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, আর অন্তঃস্রোত সমুদ্রের ৪০০ মিটার গভীর অংশের মধ্য দিয়ে চলাচল করে। উষ্ণ স্রোত উষ্ণ অঞ্চল থেকে শীতল অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়, আর শীতল স্রোত উল্টো দিকে প্রবাহিত হয়।
সমুদ্রস্রোতের নামকরণ করা হয় সেগুলি যে দিকে প্রবাহিত হয় সেই দিক অনুসারে অথবা যে দেশের পাশ দিয়ে চলে যায় তার নামানুসারে। উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত এমনই এক উদাহরণ, যেখানে দিক নির্দেশ করে নামকরণ করা হয়েছে। আবার কুরোশিও স্রোতের নামকরণ করা হয়েছে জাপানের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার কারণে।
সমুদ্রস্রোত পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উষ্ণ স্রোত বরফাচ্ছন্ন অঞ্চলকে উষ্ণ করে এবং শীতল স্রোত উষ্ণ অঞ্চলের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়। এছাড়াও, সমুদ্রস্রোত জলজ প্রাণীদের বাসস্থান এবং মাছ ধরার ক্ষেত্র নির্ধারণে সহায়ক হয়। উল্লেখযোগ্য কিছু সমুদ্রস্রোত হল উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত, দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত, কুরোশিও স্রোত, গাল্ফ স্ট্রিম, পেরু স্রোত ও বেঙ্গুয়েলা স্রোত।
সমুদ্রতরঙ্গ
সমুদ্রে যখন ঢেউ ওঠে, তখন জলরাশি কোনো দিকে প্রবাহিত না হয়ে একই স্থানে ওঠানামা করে। এই জলকণার উলম্ব ঘূর্ণন তৈরি করে আলোড়ন, যাকেই আমরা সমুদ্রতরঙ্গ বলি।
বিজ্ঞানী আর্থার হোমস অনুসারে, “সমুদ্রতরঙ্গে জল স্থানান্তরিত হয় না, বরং তরঙ্গের আকার সামনের দিকে এগিয়ে যায়।”
সমুদ্রতরঙ্গের সৃষ্টি – প্রবল বায়ুপ্রবাহ সমুদ্র জলপৃষ্ঠের সাথে সংঘর্ষ করে তরঙ্গ তৈরি করে। এই তরঙ্গ সম্মুখতরঙ্গ বা সোয়াশ নামে পরিচিত যখন এগুলো বেগে সৈকতভূমিতে আছড়ে পড়ে।
তরঙ্গের প্রত্যাবর্তন – তরঙ্গের জলরাশি যখন সৈকতের ঢাল বরাবর পুনরায় সমুদ্রে ফিরে যায়, তাকে অন্তঃতরঙ্গ বা ব্যাকওয়াশ বলে।
সমুদ্রস্রোত এবং সমুদ্রতরঙ্গ – এর মধ্যে পার্থক্য
সমুদ্রস্রোত এবং সমুদ্রতরঙ্গের পার্থক্যগুলি হল —
বিষয় | সমুদ্রস্রোত | সমুদ্রতরঙ্গ |
চলন | সমুদ্রস্রোত সমুদ্রজলের পৃষ্ঠদেশ বরাবর একমুখী চলন। | সমুদ্রতরঙ্গ সমুদ্রপৃষ্ঠের জলরাশির পর্যায়ক্রমিক ওঠানামা। |
স্থায়িত্ব | সমুদ্রস্রোত স্থায়ী এবং নিয়মিতভাবে প্রবাহিত হয়। | এটি সাময়িক এবং অনিয়মিত। কেবল বায়ুপ্রবাহের ওপর নির্ভরশীল। |
তাপমাত্রা | তাপমাত্রা অনুযায়ী সমুদ্রস্রোত দু-রকমের হয়। যথা — উষ্ণ এবং শীতলস্রোত। | তাপমাত্রার ভিত্তিতে সমুদ্রতরঙ্গের আলাদা কোনো বিভাজন নেই। |
নিয়ন্ত্রণ | সমুদ্রস্রোত যে অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চলের ভূমিরূপকে নিয়ন্ত্রণ করে। | সমুদ্রতরঙ্গ উপকূলের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে। |
সমুদ্রস্রোত এবং সমুদ্রতরঙ্গ – এর মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। এই পার্থক্যগুলো জানা দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অধ্যয়ন করে সমৃদ্ধ হলাম। তবে আরও বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করা থাকলে খুব ভালো হতো।