আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় ‘ভূ-গাঠনিক প্রক্রিয়া এবং পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ’ এর কিছু ভৌগোলিক কারণ ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

স্তূপ পর্বত ও গ্রস্ত উপত্যকা সর্বদা পাশাপাশি অবস্থান করে।
অথবা, “স্তূপ পর্বত ও গ্রস্ত উপত্যকা পরস্পর সন্নিহিত ভূমিরূপ”
ভূ-আলোড়নের ফলে সৃষ্ট টান ও সংকোচন বলের জন্য শিলাস্তরে ফাটল বা চ্যুতির সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি অবস্থিত দুটি চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ মহীভাবক আলোড়নের ফলে উপরে উঠে স্তূপ পর্বতের সৃষ্টি করে। এই পর্বত সৃষ্টির পর পর্বতের দুপাশের অংশগুলি অপেক্ষাকৃত নীচুতে অবস্থান করে। এই নীচু অংশ দুটি গ্রস্ত উপত্যকা-রূপে পরিচিত। যেমন – সাতপুরা স্তূপ পর্বতের দুই পাশে নর্মদা ও তাপ্তী নদী উপত্যকা দুটি গ্রস্ত উপত্যকা।
আবার, ভূ-আলোড়নের ফলে যদি দুটি চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ নীচে বসে যায়, তখন তাকে গ্রস্ত উপত্যকা বলে। এরূপ ক্ষেত্রে, ওই গ্রস্ত উপত্যকার দুপাশের উচ্চ অংশ দুটি স্তূপ পর্বত রূপে বিরাজ করে। যেমন – রাইন নদীর গ্রস্ত উপত্যকায় দুপাশে রয়েছে ফ্রান্সের ভোজ ও জার্মানির ব্ল্যাক ফরেস্ট স্তূপ পর্বত। সুতরাং বলা যায়, স্তূপ পর্বত সৃষ্টি হলে গ্রস্ত উপত্যকা সৃষ্টি হবে এবং গ্রস্ত উপত্যকা সৃষ্টি হলে স্তূপ পর্বত সৃষ্টি হবে। তাই, স্তূপ পর্বত ও গ্রস্ত উপত্যকা পাশাপাশি অবস্থান করে।
ভঙ্গিল পর্বতে জীবাশ্ম দেখা যায় ।
জীবাশ্ম = জীব + অশ্ম। জীব অর্থাৎ, যার জীবন আছে এবং অশ্ম শব্দের অর্থ শিলা বা প্রস্তর। কোনো জীবদেহ শিলায় পরিণত হলে, বা প্রস্তরীভূত হলে, তাকে জীবাশ্ম (Fossils) বলে।

সমুদ্রগর্ভে পলি জমে পাললিক শিলাস্তর গঠনের সময় সামুদ্রিক উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহাবশেষ চাপা পড়ে যায়। কোটি কোটি বছর ধরে পলিস্তরের চাপ ও ভূগর্ভের তাপে এই জীবদেহাবশেষগুলি প্রস্তরীভূত হয়ে জীবাশ্মে পরিণত হয়। অর্থাৎ, সমুদ্রগর্ভে পাললিক শিলাস্তরে জীবাশ্ম গঠিত হয়। পরবর্তীকালে, পাত সঞ্চারণের কারণে বা গিরিজনি আলোড়নের ফলে যখন সমুদ্রগর্ভের এই পাললিক শিলাস্তর ভাঁজ প্রাপ্ত হয়ে ভঙ্গিল পর্বত রূপে উপরে উঠে আসে তখন জীবাশ্মগুলি ওই পাললিক শিলায় গঠিত ভঙ্গিল পর্বতেই থেকে যায়। এই কারণে, ভঙ্গিল পর্বতে বিভিন্ন ধরনের জীবাশ্ম দেখা যায়।
নবীন ভঙ্গিল পর্বত অঞ্চলের গঠন কার্য এখনও চলছে – ব্যাখ্যা করো।
টার্শিয়ারি যুগে (6-7 কোটি বছর আগে) আলটাইড পর্বতশ্রেণির দক্ষিণে নতুনভাবে পর্বতশ্রেণি গঠিত হয়। ভূবিজ্ঞানীরা এদেরই নবীন ভঙ্গিল পর্বত বলেন। যেমন – হিমালয়,’ আল্পস্, রকি ও আন্দিজ। এই পর্বতগুলির গঠন কার্য শুরু হলেও এখনও এগুলির গঠনক্রিয়া চলছে কারণ –
- পাতের চলন – এই পর্বতগুলি সঞ্চরণশীল পাত সীমান্তে অবস্থিত। তাই মহাসাগরীয় পাত, মহাদেশীয় পাতের নীচে অনুপ্রবেশ করতে থাকায় এই পর্বতের গঠনকার্য এখনও অব্যাহত। যেমন – প্রশান্ত পাত আমেরিকা পাতের নীচে প্রবেশ করায় আন্দিজ পর্বতের উচ্চতা বছরে 2-3 সেমি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- কোমল ভূত্বক – এই অঞ্চলগুলি কোমল ও ভূত্বকের দুর্বল স্থান। তাই সংকোচনজনিত পার্শ্বচাপে ভূত্বক সহজে কুঞ্চিত হয়ে দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায়।
- আগ্নেয় ক্রিয়াকলাপ – এইরূপ পার্বত্য অঞ্চলে আগ্নেয় ক্রিয়াকলাপে অভ্যন্তরের শিলারাশি উত্তাপে প্রসারিত হয়। ফলে ওপরের পাললিক শিলা আয়তনে বৃদ্ধি পেয়ে ভঙ্গিল পর্বত গঠনের ধারা অবিরাম চলেছে।
হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে আগ্নেয়গিরি দেখা যায় না ।
হিমালয় পর্বত একটি নবীন ভঙ্গিল পর্বত। পৃথিবীর অন্যান্য নবীন ভঙ্গিল পর্বত যেমন – আন্দিজ, রকি পার্বত্য অঞ্চলে অসংখ্য আগ্নেয়গিরি আছে, কিন্তু হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে আগ্নেয়গিরি নেই কারণ –
দুটি সমধর্মী পাতের সংঘর্ষ – ভারতের উপদ্বীপীয় পাত ও ইউরেশীয় পাত, দুটি সমধর্মী অর্থাৎ সমান ঘনত্ব ও সম প্রকৃতিযুক্ত। এই দুই সমান ঘনত্বযুক্ত মহাদেশীয় পাতের সংঘর্ষের কারণে একটি পাত অপর একটি পাতের নীচে মৃদু বেঁকে প্রবেশ করেছে। ফলে এখানে পাতের গলনের পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি।
কঠিন পাতের স্তর – এই দুই মহাদেশীয় পাতের স্তর কঠিন হওয়ায় ভূ-অভ্যন্তরীণ ম্যাগমা বাইরে আসতে পারে না, তাই আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি হয়নি।
অভিসারী পাত সীমান্তে অবস্থিত – হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল অভিসারী পাত সীমান্তে অবস্থিত। কিন্তু অগ্ন্যুৎপাত সাধারণত প্রতিসারী পাত সীমান্তে বেশি ঘটে থাকে। সুতরাং, হিমালয় পর্বত অভিসারী পাত সীমান্তে অবস্থিত হওয়ায় হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে আগ্নেয়গিরি দেখা যায় না।
ভঙ্গিল পর্বতগুলি ভবিষ্যতে জীবাশ্ম জ্বালানির আধার’ –
জীবাশ্ম – ভূগর্ভে সুদীর্ঘকাল যাবৎ সংরক্ষিত কিন্তু এখন অস্তিত্ব নেই এমন উদ্ভিদ ও প্রাণীর আংশিক বা সামগ্রিক ছাপ অর্থাৎ, প্রস্তরীভূত অবস্থাকে জীবাশ্ম বা Fossil বলে। যেমন – হিমালয়, আন্দিজ পর্বতে উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবাশ্ম দেখা যায়।
‘জীবাশ্ম জ্বালানির আধার’ – ভঙ্গিল পর্বত গঠিত হয় পাললিক শিলা দ্বারা। পাললিক শিলাস্তরেই পৃথিবীর অধিকাংশ খনিজ সঞ্চিত হয়। কারণ –
- রাসায়নিক ও যান্ত্রিক প্রক্রিয়াকরণ – পলিস্তরে স্তরায়ণের সময় বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহ চাপা পড়ে। রাসায়নিক ও যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তা পরিবর্তিত হয়ে কার্বন বা কয়লা, আবার কখনো তরল অংশ খনিজ তেলে রূপান্তরিত হয়।
- তাপ ও চাপের প্রভাব – কাদা পাথর যান্ত্রিকভাবে সৃষ্ট হলে সেখানে প্রচুর প্রাণীদেহের সঞ্চয় হয়। তা পরবর্তীকালে তাপ ও চাপের প্রভাবে হাইড্রোকার্বনে পরিণত হয়, যা থেকে খনিজতেল নির্গত হয়। অর্থাৎ, পাললিক শিলাস্তরে জৈব ও রাসায়নিক প্রক্রিয়া অধিক ক্রিয়াশীল। তাই ভবিষ্যতে ভঙ্গিল পর্বতগুলিতে জীবাশ্ম জ্বালানির সঞ্চয় অধিক হবে এটাই স্বাভাবিক।
নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ ।
হিমালয়, আল্পস্, রকি, আন্দিজ প্রভৃতি নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চল অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ। কারণ –
- ধারাবাহিক গঠন প্রক্রিয়া – নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলগুলির গঠন প্রক্রিয়া আজও অব্যাহত। তাই অঞ্চলগুলিতে মাঝে মাঝে কম্পন সৃষ্টি হয়।
- পাত সঞ্চালন – দুটি পাতের পারস্পরিক সংঘর্ষের দরুন নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিকম্প সংগঠিত হয়।
- প্রবল পার্শ্বচাপ – প্রবল পার্শ্বচাপে পাললিক শিলায় ভাঁজ পড়ার সময় শিলার স্থিতিস্থাপকতা বিনষ্ট হলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।
- চ্যুতি সৃষ্টি – প্রবল পার্শ্বচাপে পর্বতের শিলায় ফাটল ধরে চ্যুতি সৃষ্টির সময় ভূমিকম্প হয়।
- ধস ও হিমানী সম্প্রপাত – সুউচ্চ পর্বতে ধস নামার সময় এবং হিমবাহ থেকে বরফের চাঁই খসে পড়ার সময় ভূমিকম্প ঘটে।

‘ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলে আগ্নেয় পদার্থ পরিলক্ষিত হয়’।
‘ভাঁজ’ বা ‘ভঙ্গ’ কথা থেকে ‘ভঙ্গিল’ কথাটির উৎপত্তি অর্থাৎ, কোমল পাললিক শিলাস্তরে প্রবল পার্শ্বচাপের ফলে ভঙ্গিল পর্বতের গঠন হয়।
পাতদ্বয়ের অভিসারী চলল – মহাদেশীয় পাত ও মহাসাগরীয় পাত যখন অভিসারী চলনের ফলে পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয়, তখন ব্যাসল্ট শিলা দ্বারা গঠিত ভারী মহাসাগরীয় পাতটি গ্রানাইট শিলা দ্বারা গঠিত হালকা মহাদেশীয় পাতের নীচে 45°-80° কোণে অনুপ্রবিষ্ট হয়। উভয় পাতের সংঘর্ষের ফলে মধ্যবর্তী সঞ্চিত পলিস্তরে ভাঁজ পড়ে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়। অনুপ্রবিষ্ট হওয়া মহাসাগরীয় পাতটি ভূগর্ভের তাপ ও চাপে গলে যায়, ফলে ম্যাগমা বাইরে বেরিয়ে আসে। অর্থাৎ, ভঙ্গিল পর্বত এবং নির্গত ম্যাগমা একত্রে ভূমিরূপ গঠন করে। সেই কারণে ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলে বিশেষত মহাদেশ ও মহাসাগরীয় পাত সীমানা অঞ্চলে আগ্নেয় পদার্থসমূহ পরিলক্ষিত হয়।
উদাহরণ – উত্তর আমেরিকা পাত (মহাদেশীয় পাত) ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাতদ্বয়ের মিলনে সৃষ্ট রকি পার্বত্য অঞ্চলে আগ্নেয় পদার্থ দেখা যায়।
দাক্ষিণাত্য মালভূমির চারদিকে বিভিন্ন পর্বত অবস্থান করলেও একে পর্বতবেষ্টিত মালভূমি বলে না।
দাক্ষিণাত্য মালভূমির চারদিকে বিভিন্ন পর্বত যেমন – উত্তরে সাতপুরা পর্বত, দক্ষিণে নীলগিরি পর্বত, পূর্বে পূর্বঘাট পর্বতমালা এবং পশ্চিমে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা অবস্থান করলেও একে পর্বতবেষ্টিত মালভূমি বলা হয় না, কারণ –
পর্যায়ক্রমে লাভা নিঃসরণের ফলে দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে ‘সিঁড়ি’র মতো ধাপ দেখা যায়। তাই একে ‘কানট্র্যাপ’ বলে। পর্বতবেষ্টিত মালভূমি হলে দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে এরূপ ধাপ দেখা যেত না।
গিরিজনি আলোড়নের ফলে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির সময় দুই বা ততোধিক পর্বতের মধ্যবর্তী অংশ উঁচু হয়ে পর্বতবেষ্টিত মালভূমির সৃষ্টি হয়। কিন্তু দাক্ষিণাত্য মালভূমি এরুপে সৃষ্টি হয়নি।
ক্রিটেসিয়াস যুগে দক্ষিণ ভারতের বিশাল অংশ জুড়ে বিদার অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে ভূঅভ্যন্তরের উত্তপ্ত ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠের বাইরে বেরিয়ে এসে লাভারূপে সঞ্চিত হয়ে দাক্ষিণাত্য মালভূমির সৃষ্টি হয়েছে। তাই এটি একটি লাভা মালভূমি।
পর্বতবেষ্টিত মালভূমিগুলি সাধারণত পাললিক শিলায় গঠিত হয়। কিন্তু দাক্ষিণাত্য মালভূমি আগ্নেয় শিলায় (ব্যাসল্ট) গঠিত।
ছোটোনাগপুর মালভূমিকে ‘ভারতের খনিজ ভাণ্ডার’ বলা হয়।
ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ অঞ্চল হল ছোটোনাগপুর মালভূমি। এখানকার আর্কিয়ান ও টার্শিয়ারি যুগের শিলাস্তরে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন খনিজ সম্পদ রয়েছে, যার পরিমাণ ভারতের মোট সঞ্চিত খনিজ সম্পদের প্রায় 40%। খনিজতেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস ছাড়া প্রায় সমস্ত ধরনের খনিজ সম্পদ, যেমন -কয়লা, অভ্র, তামা, বক্সাইট, আকরিক লোহা, গ্রাফাইট, চুনাপাথর, ম্যাঙ্গানিজ, ইউরেনিয়াম, ডলোমাইট, সিসা, ক্রোমাইট, চিনামাটি, ফেলসপার, ফায়ার ক্লে, অ্যামাটাইট, কায়নাইট প্রভৃতি যথেষ্ট পরিমাণে ছোটোনাগপুর অঞ্চলে পাওয়া যায়। এর মধ্যে ভারতের মোট সঞ্চয়ের প্রায় 70% কয়লা, 95% তামা, 52% অভ্র, 50% বক্সাইট এই অঞ্চলে সঞ্চিত আছে এবং ভারতের মোট উৎপাদনের প্রায় 40% কয়লা, 90% অভ্র, 50% তামা, 30% বক্সাইট, 34% গ্রাফাইট, 15% আকরিক লোহা এই অঞ্চল থেকে উত্তোলিত হয়। এই কারণেই ছোটোনাগপুর মালভূমিকে ‘ভারতের খনিজ ভাণ্ডার’ বলে।
লাভা গঠিত মালভূমিতে অবস্থিত পাহাড়ের মাথাগুলি চ্যাপটা হয়।
ভূ-গর্ভস্থ ম্যাগমা ভূ-পৃষ্ঠের কোনো ফাটলের মধ্য দিয়ে বিস্ফোরণ ছাড়াই অর্থাৎ, বিদার অগ্ন্যুৎপাতের মাধ্যমে (Fissure Eruption) লাভা আকারে বেরিয়ে এসে সঞ্চিত হয় এবং এভাবে ক্রমাগত লাভা সঞ্চয়ের মাধ্যমে যে মালভূমি সৃষ্টি হয় তাকে লাভা মালভূমি বলে। লাভা মালভূমির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এগুলির মাথা চ্যাপটা আকৃতির হয়। চ্যাপটাকৃতির প্রধান কারণ হল – ক্রমাগত লাভা সঞ্চয়ের ফলে এই জাতীয় মালভূমি সৃষ্টি হয়, ও ভূ-পৃষ্ঠের কোনো ফাটল বা ছিদ্রপথ দিয়ে তরল ক্ষারকীয় লাভা বেরিয়ে আসে। ক্ষারকীয় লাভা আম্লিক লাভা অপেক্ষা অধিক তরল প্রকৃতির, তাই এই জাতীয় লাভা যখন বিস্ফোরণ ছাড়া নির্গত হয় তখন তা অনেক দূর পর্যন্ত প্রসারিত হয়। ক্ষারীয় লাভার সান্দ্রতা কম হওয়ায় অর্থাৎ ঘনত্ব কম হওয়ায় তা অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে এবং পর্বতের চূড়ার আকৃতি ধারণ না করে চ্যাপটাকৃতির হয়। উপরিউক্ত কারণেই লাভা জাতীয় মালভূমিগুলির মাথা চ্যাপটাকৃতির হয়।
কেবলমাত্র আগ্নেয় পর্বতেই এক বা একাধিক জ্বালামুখ দেখা যায় ।
ভূ-অভ্যন্তরের জ্বলন্ত ম্যাগমা, গ্যাস, ছাই, কাদা ভূপৃষ্ঠের যে স্থান দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে তাকে জ্বালামুখ বলে। জ্বালামুখের চারপাশেই এইসকল পদার্থ সঞ্চিত হতে থাকে এবং কালক্রমে আগ্নেয় পর্বতের রূপ ধারণ করে। এই কারণেই আগ্নেয় পর্বতের মাথায় জ্বালামুখ দেখা যায়। যে সকল আগ্নেয় পর্বতের একটি মাত্র পথ দিয়ে অগ্ন্যুৎপাত হয় বা উত্তপ্ত ম্যাগমা বেরিয়ে আসে তাদের একটিমাত্র জ্বালামুখ থাকে আর যেসকল আগ্নেয় পর্বতে একাধিক পথ দিয়ে অগ্ন্যুৎপাত হয় তাদের একাধিক জ্বালামুখ থাকে। ভঙ্গিল পর্বত, স্তূপ পর্বত ও ক্ষয়জাত পর্বত সৃষ্টির ক্ষেত্রে কোনো পথ দিয়ে ভূ-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত ম্যাগমা বেরিয়ে আসে না, তাই কেবলমাত্র আগ্নেয় পর্বতেই এক বা একাধিক জ্বালামুখ দেখা যায়।
সব হোর্স্ট স্তূপ পর্বত হলেও, সব স্তূপ পর্বত হোর্স্ট নয় কেন – ব্যাখ্যা করো।
প্রবল ভূ-আলোড়নের ফলে দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ উল্লম্ব বা তির্যক যে-কোনো ভাবে উত্থিত হলেই তাকে স্তূপ পর্বত বলা হয়। কিন্তু, যখন চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ উল্লম্বভাবে উত্থিত হয়ে পর্বত গঠন করে, যার চারপাশে খাড়া ঢাল দেখা যায়, তখন তাকে হোর্স্ট বলে। অর্থাৎ, হোর্স্ট হল এক বিশেষ ধরনের স্তূপ পর্বত। পৃথিবীর বেশির ভাগ স্তূপ পর্বতই চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশের তির্যক বা হেলানো উত্থানের ফলে তৈরি হয়। তাই বলা যায় যে, সব হোর্স্ট স্তূপ পর্বত হলেও সব স্তূপ পর্বত হোর্স্ট নয়।
“প্রত্যেকটি শিল্ড অঞ্চলই মালভূমি কিন্তু প্রতিটি মালভূমি শিল্ড অঞ্চল নয়” – ব্যাখ্যা করো।
‘শিল্ড’ শব্দের অর্থ ‘বর্ম’ বা ‘ঢাল’। পৃথিবীর অতি প্রাচীন মালভূমি যেগুলি বর্মের মতো খুব কঠিন শিলায় গঠিত সেগুলিকে শিল্ড বলে। অর্থাৎ, প্রাচীন শিলায় গঠিত মালভূমিগুলিই শিল্ড নামে পরিচিত। কিন্তু, যে-সকল মালভূমি প্রাচীন শিলায় গঠিত নয়, পরবর্তী পর্যায়ে ভূ-আলোড়ন বা সঞ্চয়কাজ বা ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলি শিল্ড নয়। সুতরাং, বলা যায় প্রত্যেকটি শিল্ড অঞ্চল মালভূমি হলেও, প্রতিটি মালভূমি কিন্তু শিল্ড অঞ্চল নয়।
উদাহরণ – কানাডিয়ান শিল্ড, সাইবেরিয়ান শিল্ড হল মালভূমি। কিন্তু, পামির ও তিব্বত মালভূমি শিল্ড অঞ্চল নয়।
আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় ‘ভূ-গাঠনিক প্রক্রিয়া এবং পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ’ এর কিছু ভৌগোলিক কারণ ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি নবম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।