আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের নবম অধ্যায় ‘মানচিত্র ও স্কেল’ এর রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

মানচিত্র বিবর্তনের ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
পৃথিবীর সম্পূর্ণ বা কিছু অংশের প্রকাশ যখন কোনো সমতল ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট স্কেল বা মান অনুসারে করা হয়, তখন তাকে মানচিত্র বলে। এই মানচিত্র বিবর্তনের ইতিহাস প্রায় 4000 বছরেরও বেশি পুরানো।
প্রাচীনতম মানচিত্র –
নৃতত্ত্ববিদদের মতে মার্সাল দ্বীপপুঞ্জের অধিবাসীদের সমুদ্র চার্ট, এস্কিমো ও রেড ইন্ডিয়ানদের অঙ্কিত মানচিত্র, পেরুর আজটেক সভ্যতার অধিবাসীদের অঙ্কিত গ্রামের নাম লেখা মানচিত্র অত্যন্ত প্রাচীন। তবে ব্যাবিলনে পাওয়া আনুমানিক 2500 খ্রিস্টপূর্বাব্দে পোড়ামাটির ফলকে অঙ্কিত ইউফ্রেটিস নদী উপত্যকার মানচিত্রটি পৃথিবীর প্রাচীনতম মানচিত্র বলে মনে করা হয়। এছাড়া মিশরের ফ্যারাও দ্বিতীয় রামসেস (1333-1300 খ্রিস্টপূর্বাব্দ) জমির খাজনা আদায়ের জন্য জমি জরিপ করে মানচিত্র অঙ্কন করান। আবার, ফিনিশীয়রা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে ভূমধ্যসারের তীরবর্তী বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের নানা মানচিত্র অঙ্কন করেন।
এইসকল প্রাচীন মানচিত্রগুলিকে সঠিক অর্থে মানচিত্র রূপে চিহ্নিত করা যায় না। পরবর্তীকালে বিভিন্ন ভৌগোলিকদের অঙ্কিত মানচিত্র থেকে তার প্রমাণ মেলে।
মানচিত্র বিবর্তনে ভৌগোলিকদের অবদান –
- অ্যানাক্সিমেন্ডার (610-546 খ্রিঃ পৃঃ) – বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক অ্যানাক্সিমেন্ডার সর্বপ্রথম বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে নির্দিষ্ট স্কেল অনুসারে অক্ষরেখা-দ্রাঘিমারেখার সাহায্যে পৃথিবীর মানচিত্র অঙ্কন করেন।
- হেক্যাটিয়াস (550-476 খ্রিঃ পৃঃ) – ভূগোলের জনকরূপে পরিচিত এই গ্রিক পণ্ডিত পৃথিবীর বর্ণনামূলক মানচিত্র অঙ্কন করেন এবং অ্যানাক্সিমেন্ডারের মানচিত্রের উৎকর্ষসাধন করেন।
- হেরোডোটাস (485-425 খ্রিঃ পৃঃ) – ইতিহাসের জনক হেরোডোটাসও ছিলেন বিখ্যাত মানচিত্র বিশারদ। তিনি তাঁর মানচিত্রে পৃথিবীকে ইউরোপ, এশিয়া ও লিবিয়া-এই তিন মহাদেশে ভাগ করেন।
- এরাটোসথেনিস (276-194 খ্রিঃ পূঃ) – এরাটোসথেনিস অঙ্কিত সাতটি অক্ষরেখা ও সাতটি দ্রাঘিমারেখা সমন্বিত গোলাকার পৃথিবীর মানচিত্রটি সে যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানচিত্র।
- হিপারকাস (190-120 খ্রিঃ পূঃ) – প্রথম মানচিত্র অভিক্ষেপের ধারণা দেন, যা মানচিত্র অঙ্কন বিদ্যায় নতুন যুগের সূচনা করে।
- স্ট্যাবো (64 খ্রিঃ পূঃ-20 খ্রিঃ) – বিখ্যাত রোমান ভৌগোলিক স্ট্যাবো পৃথিবীকে পাঁচটি জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত করে মানচিত্র অঙ্কন করেন।
- পম্পোনিয়াস মেলা – 43 খ্রিস্টাব্দে রোমান ভৌগোলিক পি মেলা গোলাকার পৃথিবীর মানচিত্র অঙ্কন করেন।
- টলেমি – 150 খ্রিস্টাব্দে গ্রিক দার্শনিক টলেমি তাঁর ‘জিওগ্রাফিয়া’ (Geographia) গ্রন্থে একটি পৃথিবীর মানচিত্র ও 26টি আঞ্চলিক মানচিত্র অঙ্কন করেন।
- ফি সুই – চিনের মানচিত্র বিদ্যার জনক হলেন ফি সুই। তিনি 267 খ্রিস্টাব্দে সিল্কের কাপড়ের ওপর চিনের রাজনৈতিক মানচিত্র অঙ্কন করেন। চিনে প্রথম কাগজ আবিষ্কার হওয়ার পর এখানে মানচিত্র অঙ্কন বিদ্যায় জোয়ার আসে।
- আল ইদ্রিসি (1099 খ্রিঃ-1161 খ্রিঃ) – আরবীয় মানচিত্র বিশারদ আল ইদ্রিসির অঙ্কিত পৃথিবীর মানচিত্রটি বিশেষভাবে বিখ্যাত। পরবর্তীকালে ক্রিস্টোফার কলম্বাস, আমেরিগো ভেসপুচি, ভাস্কোদাগামা, কুক, ম্যাগেলান, বার্থালোমিউ দিয়াজ প্রমুখ দুঃসাহসিক নাবিকদের আবিষ্কার ও অনুসন্ধানের যুগে মানচিত্র বিদ্যার অবিশ্বাস্য উন্নতি শুরু হয়। 1636 খ্রিস্টাব্দে জি মার্কেটর এবং হন (Hondt) সর্বপ্রথম একগুচ্ছ মানচিত্র সংবলিত বই প্রকাশ করেন, যার নাম দেন অ্যাটলাস (Atlas)। ভারতের মানচিত্র বিদ্যার জনক হলেন জেমস রেনেল। তিনি 1783 সালে প্রথম ভারতের মানচিত্র অঙ্কন করেন। সবশেষে বলা যায় আধুনিক যন্ত্রপাতি তথা উপগ্রহ চিত্রের সাহায্যে মানচিত্র অঙ্কন শুরু হওয়ার পর থেকে মানচিত্র বিদ্যায় সর্বাধুনিক যুগের সূচনা হয়েছে।

মানচিত্র কাকে বলে? মানচিত্রের শ্রেণিবিভাগ লেখো।
মানচিত্র – পৃথিবীতে কোনো স্থানের কিংবা কোনো বস্তুসমূহের অবস্থানগত সম্পর্কের দৃষ্টিগ্রাহ্য রূপ হল মানচিত্র। একটি নির্দিষ্ট স্কেলে যে-কোনো সমতল কাগজের উপর অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখা দ্বারা পৃথিবীর কোনো অংশকে সঠিক দিক অনুসারে উপস্থাপন করলে, তাকে মানচিত্র (মান + চিত্র) বলে। প্রসঙ্গত, এই মানচিত্রের একমাত্রিক, দ্বিমাত্রিক, ত্রিমাত্রিক রূপ থাকে।
ক্ষুদ্র স্কেল মানচিত্র কাকে বলে? বিভিন্ন প্রকার ছোটো স্কেল মানচিত্রের তিন পরিচয় দাও।
ছোটো স্কেল মানচিত্র – যে-সমস্ত মানচিত্র (পৃথিবীর মহাদেশের মানচিত্র) বিশাল অঞ্চলকে ছোটো করে দেখানোর উদ্দেশ্যে অঙ্কন করা হয়, সেগুলিকে ছোটো স্কেল মানচিত্র বলে। যেমন – 1 সেমি মানচিত্র দূরত্ব = 250 কিমি বাস্তব দূরত্ব -এই স্কেলে অঙ্কিত মানচিত্র। এই মানচিত্র থেকে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না।
ছোটো স্কেল মানচিত্রের প্রকারভেদ –
ছোটো স্কেল মানচিত্রগুলি বিভিন্ন ধরনের হয়। যথা –
- অ্যাটলাস মানচিত্র (Atlas Map) – সমগ্র পৃথিবী বা কোনো মহাদেশ বা দেশের বিভিন্ন ভৌগোলিক বিষয়গুলিকে ছোটো স্কেলে অঙ্কন করে বই -এর আকারে যে মানচিত্র তৈরি করা হয়, তাকে অ্যাটলাস মানচিত্র বলে। ‘Times Survey Atlas of the world’ সংস্থাটি অ্যাটলাস মানচিত্র প্রস্তুত করে থাকে। এই মানচিত্র চার প্রকার। যথা –
- স্কুল অ্যাটলাস।
- উন্নততর অ্যাটলাস।
- আঞ্চলিক অ্যাটলাস।
- জাতীয় অ্যাটলাস।
- দেয়াল মানচিত্র (Wall Map) – দেয়ালে টাঙাবার জন্য সমগ্র পৃথিবী বা বিভিন্ন দেশ মহাদেশের যে মানচিত্র অঙ্কন করা হয়, তাকে দেয়াল মানচিত্র (Wall Map) বলে। এই মানচিত্র প্রাকৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক হয়ে থাকে। 1 ইঞ্চিতে 100 বা 200 মাইল প্রভৃতি স্কেলে এই মানচিত্র অঙ্কন করা হয়।
- আন্তর্জাতিক মানচিত্র (International Map) – 1 : 1000000 স্কেল অনুসারে আন্তর্জাতিক মানচিত্র অঙ্কন করা হয়। পৃথিবীতে এই মানচিত্রের সংখ্যা 2222টি।
- বিমান চালনা সংক্রান্ত মানচিত্র (Aeronautical Map) – পৃথিবীর বিমান পথগুলিকে যে মানচিত্রের সাহায্যে দেখানো হয় তাকে বিমান চালনা সংক্রান্ত মানচিত্র বা অ্যারোনটিক্যাল ম্যাপ বলে।
- নৌ-চালনা সংক্রান্ত মানচিত্র (Navigational Map) – সমুদ্রপথে জাহাজ চলাচলের সুবিধার জন্য যে মানচিত্র প্রস্তুত করা হয় তাকে নৌ-চালনা সংক্রান্ত মানচিত্র বলে। এই মানচিত্রের সাহায্যে সমুদ্রপথ, সমুদ্রের গভীরতা, সমুদ্র স্রোত, জোয়ারভাটা, লাইট হাউস, মগ্নচড়া প্রভৃতি তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
বড়ো স্কেল মানচিত্র কাকে বলে? বিভিন্ন প্রকার বড়ো স্কেল মানচিত্রের পরিচয় দাও।
বড়ো স্কেল মানচিত্র – যে-সমস্ত মানচিত্র পৃথিবীর কোনো ছোটো অঞ্চল (গ্রাম, শহর) দেখানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়, তাকে বড়ো স্কেল মানচিত্র বলে। যেমন – 1 সেমি মানচিত্র দূরত্ব = 2 কিমি বাস্তব দূরত্ব –এই স্কেলে অঙ্কিত মানচিত্র। এই মানচিত্র থেকে অনেক বেশি বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়।
বড়ো স্কেল মানচিত্রের প্রকারভেদ –
বড়ো স্কেল মানচিত্রগুলি বিভিন্ন প্রকারের হয়। যথা –
- মৌজা মানচিত্র (Cadastral Map) – প্রধানত ভূমির দাগনম্বর অনুযায়ী যে মানচিত্র প্রস্তুত করা হয় তাকে মৌজা মানচিত্র বা ক্যাডাস্ট্রাল ম্যাপ বলে। এই মানচিত্র সাধারণত 16 ইঞ্চিতে 1 মাইল এই স্কেলে অঙ্কন করা হয়।
- ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র (Topographical Map) – কোনো একটি স্থানের সঠিক অবস্থান, আয়তন এবং প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়গুলি বিভিন্ন প্রচলিত প্রতীক চিহ্ন দ্বারা চিত্রায়িত করে তৈরি মানচিত্রকে ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র বা টোপোগ্রাফিকাল ম্যাপ বলে। গ্রিক শব্দ ‘Topos’ -এর অর্থ ‘স্থান’ এবং ‘Grapho’ -এর অর্থ ‘আঁকা’। সাধারণত 1 : 2,50,000, 1 : 50,000, 1 : 25,000 স্কেলে এই মানচিত্র অঙ্কন করা হয়।
- নীল নকশা (Blue Print Map) – সাধারণত বাড়িঘর, অট্টালিকা, শহর, নগর, শিল্পকারখানা, পার্ক, গ্যালারি প্রভৃতি পরিকল্পিতভাবে নির্মাণের জন্য নীল রঙের কাগজের ওপর যে নকশা তৈরি করা হয় তাকে নীল নকশা বা ব্লুপ্রিন্ট বলে।
- এলাকা মানচিত্র (Area Map) – কোনো নির্দিষ্ট এলাকাকে যখন মানচিত্রে দেখানো হয় তখন তাকে এলাকা মানচিত্র বলে।
- থানা মানচিত্র (Thana Map) – কোনো থানার অন্তর্গত সমস্ত অঞ্চলকে দেখানোর জন্য যে মানচিত্র প্রস্তুত করা হয় তাকে থানা মানচিত্র বলে।
প্রাকৃতিক মানচিত্র কাকে বলে? বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক মানচিত্রের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
সাধারণত যে-সকল বিষয়ভিত্তিক মানচিত্রে প্রাকৃতিক বিষয়গুলিকে দেখানো হয় তাকে প্রাকৃতিক মানচিত্র বলে। নিম্নে বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক মানচিত্রের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হল –
- ভূপ্রাকৃতিক মানচিত্র (Relief Map) – যে প্রাকৃতিক মানচিত্রে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন ভূমিরূপ যেমন – পর্বত, মালভূমি, পাহাড়, সমভূমি, পর্বতশৃঙ্গ, উপত্যকা, পর্বতমালা, জলনির্গম প্রণালী ইত্যাদি প্রকাশ করা হয়, তাকে ভূপ্রাকৃতিক মানচিত্র বলে। এই মানচিত্র পাঠ করে আমরা ওই অঞ্চলের জনবসতির ধরন, রাস্তাঘাট, রেলপথ নির্মাণের স্থান ইত্যাদি নির্বাচন করতে পারি, ওই অঞ্চলে জমির ব্যবহার সংক্রান্ত তথ্য পেয়ে থাকি।
- মৃত্তিকা মানচিত্র (Soil Map) – সমগ্র পৃথিবী বা কোনো দেশের বিভিন্ন গুণসম্পন্ন মৃত্তিকার অবস্থান দেখানোর জন্য যে মানচিত্র প্রস্তুত করা হয় তাকে মৃত্তিকা মানচিত্র বলে। এই মানচিত্র থেকে কোনো অঞ্চলের কৃষিকাজ ও স্বাভাবিক উদ্ভিদের ধারণা পাওয়া যায়।
- জলবায়ু মানচিত্র (Climatic Map) – সমগ্র পৃথিবী বা কোনো দেশের বিভিন্ন জলবায়ু অঞ্চলের বিন্যাস যে মানচিত্রে দেখানো হয় তাকে জলবায়ু মানচিত্র বলে। এই মানচিত্র থেকে কোনো অঞ্চলের জলবায়ুর প্রকৃতি জানা যায়।
- উদ্ভিদ মানচিত্র (Vegetation Map) – সমগ্র পৃথিবী বা কোনো দেশের স্বাভাবিক উদ্ভিদের প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে যে মানচিত্র প্রস্তুত করা হয় তাকে উদ্ভিদ মানচিত্র বলে।
- ভূতাত্ত্বিক মানচিত্র (Geological Map) – বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক যুগের শিলার ধরন, ভাঁজ, চ্যুতি, ফাটল প্রভৃতি যে মানচিত্রে দেখানো হয় তাকে ভূতাত্ত্বিক মানচিত্র বলে।
- আবহ মানচিত (Weather Map) – কোনো স্থানের নির্দিষ্ট দিনের বিশেষ একটি সময়ের উষ্ণতা, আর্দ্রতা, বায়ুচাপ, বৃষ্টিপাত, মেঘাচ্ছন্নতা, বায়ুপ্রবাহের দিক, বায়ুর বেগ প্রভৃতি প্রচলিত প্রতীক চিহ্নের মাধ্যমে যে মানচিত্রে দেখানো হয়, তাকে আবহ মানচিত্র বলে।
- জ্যোতিষ্ক মানচিত্র (Astronomical Map) – মহাকাশের বিভিন্ন নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ নক্ষত্রমণ্ডল প্রভৃতির অবস্থান ও পারস্পরিক দূরত্ব যে মানচিত্রে দেখানো হয় তাকে জ্যোতিষ্ক মানচিত্র বলে। NASA, ISRO প্রভৃতি সংস্থা এই মানচিত্র প্রস্তুত করে।
প্রাচীন মানচিত্র কোথায় তৈরি করা হয়?
প্রাচীন মানচিত্র তৈরি করা হয় ব্যাবিলনে (আধুনিককালে ইরাক), যেখানে মানচিত্রগুলি তৈরি হয় মাটির পাত (Clay tablets) দিয়ে। এটি প্রায় 2500 খ্রিস্টপূর্বে তৈরি হয়েছিল।
সাংস্কৃতিক মানচিত্র কাকে বলে? বিভিন্ন প্রকার সাংস্কৃতিক মানচিত্রের পরিচয় দাও।
সাধারণত যে-সকল বিষয়ভিত্তিক মানচিত্রে প্রাকৃতিক বিষয় ব্যতীত অন্যান্য বিভিন্ন মানচিত্র বিষয় দেখানো হয় তাকে সাংস্কৃতিক মানচিত্র বলে। নিম্নে বিভিন্ন প্রকার সাংস্কৃতিক মানচিত্রের বর্ণনা দেওয়া হল –
- সামাজিক মানচিত্র (Social Map) – যে মানচিত্রের মাধ্যমে মানব সমাজের বিভিন্ন জাতি, উপজাতি, সম্প্রদায়, ভাষা, ধর্ম, উৎসব-অনুষ্ঠান, সামাজিক সংঘ প্রভৃতি সম্বন্ধে তথ্য সরবরাহ করা হয়, তাকে সামাজিক মানচিত্র বলে।
- অর্থনৈতিক মানচিত্র (Economic Map) – অর্থ উপার্জনের উৎসগুলির ওপর ভিত্তি করে যেসব মানচিত্র তৈরি করা হয়, তাকে অর্থনৈতিক মানচিত্র (Economic Map) বলে। কৃষিজ, খনিজ, বনজ ও শিল্পজ দ্রব্যগুলির উৎপাদন কেন্দ্রের বণ্টন, সেগুলির সঙ্গে ভোগকেন্দ্রের যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভৃতি দেখানো হয় অর্থনৈতিক মানচিত্রে।
- রাজনৈতিক মানচিত্র (Political Map) – যে সাংস্কৃতিক মানচিত্রে কোনো দেশের প্রশাসনিক সীমারেখা দেওয়া থাকে, তাকে রাজনৈতিক মানচিত্র বলে। একে প্রশাসনিক মানচিত্রও (Adminis-trative Map) বলে। এই মানচিত্রে সাধারণত দেশের রাজ্য সীমা, জেলা সীমা ইত্যাদি দেখানো থাকে। আবার, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দুটি দেশের সীমারেখাও রাজনৈতিক ম্যাপে দেখানো হয়। রাজনৈতিক মানচিত্র যে-কোনো দেশের ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক কার্যকলাপ দেখানোর জন্য মূল মানচিত্র (Base Map) হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- ঐতিহাসিক মানচিত্র (Historical Map) – প্রাচীন রাজ্যের সীমানা, ঐতিহাসিক স্থান, ঘটনা প্রভৃতি যে মানচিত্র থেকে জানা যায় তাকে ঐতিহাসিক মানচিত্র বলে। যেমন – সম্রাট অশোকের সাম্রাজ্যের মানচিত্র, মোঘল সাম্রাজ্যের মানচিত্র প্রভৃতি।
- সামরিক মানচিত্র ( Military Map) – দেশের সৈন্যবাহিনীর প্রয়োজনে যে মানচিত্র প্রস্তুত করা হয় তাকে সামরিক মানচিত্র বলে।
- ভূমি ব্যবহার মানচিত্র (Land Map) – কোনো দেশ বা অঞ্চলের মোট ভূমিভাগের কতটা অংশ কী কী কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে তা যে মানচিত্রে দেখানো হয় তাকে ভূমি ব্যবহার মানচিত্র বলে। এই মানচিত্র থেকে কোনো দেশ বা অঞ্চলের কৃষিভূমি, বনভূমি, জনবসতি, পতিত জমি প্রভৃতির পরিমাণ জানা যায়।
- বণ্টন মানচিত্র (Distribution Map) – যে মানচিত্রে বিভিন্ন দ্রব্যের (যেমন – কৃষি ফসল, শিল্পজাত দ্রব্য প্রভৃতি) বণ্টন দেখানো হয় তাকে বণ্টন মানচিত্র বলে।
- পরিবহণ ও যোগাযোগ মানচিত্র (Transport & Communication Map) – সমগ্র পৃথিবী বা কোনো দেশের জলপথ, বিমানপথ, সড়কপথ টেলিগ্রাফ লাইন প্রভৃতির বিন্যাস দেখিয়ে যে মানচিত্র প্রস্তুত করা হয় তাকে পরিবহণ ও যোগাযোগ মানচিত্র বলে।
মানচিত্রের অপরিহার্য উপাদানগুলি সম্পর্কে লেখো।
যেসব জিনিস দিয়ে মানচিত্র তৈরি হয় সেগুলিকে মানচিত্রের উপাদান বলে। ছকের মাধ্যমে মানচিত্রের উপাদানগুলি দেখানো হল –
উপাদান | বর্ণনা |
কাগজ | মানচিত্র অঙ্কনের সময় উন্নতমানের কাগজ ব্যবহার না করলে তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। |
স্কেল | নির্দিষ্ট স্কেল অনুসারে মানচিত্র অঙ্কিত হয়। তাই মানচিত্র থেকে কোনো দুই স্থানের দূরত্ব সহজে জানা যায়। |
প্রতীক চিহ্ন | মানচিত্রে পর্বত, হ্রদ, নদী রেলপথ, সড়কপথ, সীমারেখা, মন্দির, মসজিদ, বসতি প্রভৃতি দেখাবার জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রতীক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। |
দিক নির্দেশ | কাগজের ওপরের অংশে উত্তর দিক রেখে সাধারণত মানচিত্র অঙ্কন করা হয়। এক্ষেত্রে \( \overset N\uparrow \) এমন প্রতীক চিহ্নের মাধ্যমে উত্তর দিক নির্দেশ করা হয়। |
শিরোনাম | যে বিষয় বা এলাকার মানচিত্র অঙ্কন করা হয় তা বোঝানোর জন্য মানচিত্রের ওপরের দিকে শিরোনাম দেওয়া হয়। |
নির্দেশিকা | মানচিত্রে ব্যবহৃত প্রতীক চিহ্ন, রং, বিভিন্ন অক্ষরের অর্থ বোঝানোর জন্য নির্দেশিকা থাকে। |
বহিঃসীমা রেখা | তৈরি মানচিত্রের চারদিকে সরু ও মোটা রেখা দিয়ে বহিঃসীমা রেখা আঁকা হয়। |
অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখা | কোনো স্থানের সঠিক অবস্থান মানচিত্রে দেখানোর জন্য অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখা দ্বারা উৎপন্ন ছক অত্যাবশ্যকীয়। |

ভূ-বৈচিত্র্যসূচক বা টোপোগ্রাফিকাল মানচিত্র কাকে বলে? এই মানচিত্রের বৈশিষ্ট্য লেখো। এই মানচিত্র পাঠের উদ্দেশ্য বা প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করো।
সংজ্ঞা – গ্রিক শব্দ ‘Topos’ -এর অর্থ ‘স্থান’ এবং ‘Grapho’ -এর অর্থ ‘আঁকা’। এই দুই শব্দের মিলনে সৃষ্টি হয়েছে Topographical অর্থাৎ, কোনো একটি স্থানের সঠিক অবস্থান, আয়তন এবং প্রাকৃতিক (ভূ-প্রকৃতি, নদ-নদী, স্বাভাবিক উদ্ভিদ) ও সাংস্কৃতিক (পরিবহণ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, জনবসতি প্রভৃতি) বিষয়গুলি বিভিন্ন প্রচলিত প্রতীকচিহ্ন দ্বারা চিত্রায়িত করে যে মানচিত্র তৈরি করা হয়, তাকে ভূ-বৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র বা টপোগ্রাফিকাল মানচিত্র বলে। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ভূ-দৃশ্যগুলি হল ভূ-প্রকৃতি, নদ-নদী ও জল নির্গম প্রণালী, স্বাভাবিক উদ্ভিদ এবং সাংস্কৃতিক ভূ-দৃশ্যগুলি হল যোগাযোগ ব্যবস্থা, জনবসতি, মন্দির, মসজিদ, বাজার ইত্যাদি।

বৈশিষ্ট্য –
- স্কেল – এই মানচিত্র কতকগুলি সুনির্দিষ্ট স্কেল অনুসারে আঁকা হয়। যেমন – 1 : 50000, 1 : 250000 প্রভৃতি।
- বিস্তার – এই মানচিত্রের নির্দিষ্ট অক্ষাংশগত ও দ্রাঘিমাগত বিস্তার থাকে।
- প্রতীক চিহ্ন – প্রচলিত নির্দিষ্ট প্রতীক চিহ্ন (Conventional Signs) ও রঙের সাহায্যে এই মানচিত্রের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়গুলি চিত্রায়িত করা হয়।
- সূচক সংখ্যা – প্রত্যেক টোপো মানচিত্রের একটি নির্দিষ্ট সূচক সংখ্যা থাকে। যেমন – \( 72\frac B4,\;73\frac B{16} \) প্রভৃতি।
- উপাদান – এই মানচিত্রে ভূ-প্রকৃতি, নদ-নদী, স্বাভাবিক উদ্ভিদ প্রভৃতি প্রাকৃতিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, জনবসতি প্রভৃতি সাংস্কৃতিক উপাদান উপস্থাপন করা হয়।
- প্রকাশনা – ভারতবর্ষে Survey of India এই মানচিত্র প্রস্তুত করে ও প্রকাশ করে।
টপোগ্রাফিকাল মানচিত্র পাঠের উদ্দেশ্য –
টোপোগ্রাফিকাল মানচিত্র পাঠের কতগুলি উদ্দেশ্য আছে। যথা –
- নির্দিষ্ট স্থানের ভূ-প্রকৃতি, নদ-নদী, স্বাভাবিক উদ্ভিদ ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিষয়গুলি এবং সড়কপথ, রেলপথ, জনবসতি ইত্যাদি সাংস্কৃতিক বিষয়গুলি সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করা।
- প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানের পারস্পরিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করে সমস্যা চিহ্নিত করা।
- নির্দিষ্ট অঞ্চলের বিভিন্ন সম্পদের সমীক্ষা করা।
- সামরিক ক্ষেত্রে নানান উদ্দেশ্য সাধন করা।
- আঞ্চলিক উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ ও রূপায়ণের চেষ্টা করা প্রভৃতি।
মৌজা বা ক্যাডাস্ট্রাল মানচিত্র (Cadastral Map) বলতে কী বোঝো?
শব্দের উৎস – ফরাসি শব্দ ‘ক্যাডাস্ট্রা’ (Cadastre) থেকে ‘ক্যাডাস্ট্রাল’ কথাটি এসেছে। ক্যাডাস্ট্রা -এর অর্থ হল কোনো একটি অঞ্চলের সম্পত্তির নথিভুক্তকরণ (Register of the Territorial Property)।
সংজ্ঞা – প্রধানত ভূমির দাগ নম্বর অনুযায়ী যে মানচিত্র প্রস্তুত করা হয়, তাকে মৌজা বা ক্যাডাস্ট্রাল মানচিত্র বলে।
বৈশিষ্ট্য –
- মৌজা মানচিত্রে দেশের সমস্ত জমির আইনি নথিভুক্তকরণ করা হয় যাতে সরকারের রাজস্ব, খাজনা আদায়ে সুবিধা হয়।
- এই মানচিত্র বড়ো স্কেলে অঙ্কন করা হয় বলে যে-কোনো জমির পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিমাপ করা সম্ভব হয়।
- শহরাঞ্চলে প্রতিটি বাড়ির নকশা (Plan) এই মানচিত্রে দেখানো হয়।
- গ্রাম বা শহরের ভূমি ব্যবহার মানচিত্র প্রস্তুতিতে মৌজা মানচিত্র খুবই উপযোগী।
- ভারতে এই মানচিত্র 16 ইঞ্চিতে 1 মাইল এরূপ বড়ো স্কেলে সাধারণত অঙ্কন করা হয়।

ভারতের একটি রাজনৈতিক মানচিত্র এবং মানচিত্রে ব্যবহৃত নির্দেশিকাসমূহ –

মানচিত্র তৈরি করার পদ্ধতিগুলি কী কী?
নির্দিষ্ট প্রতীক চিহ্ন, সংকেত লেখা ইত্যাদি ব্যবহার করে মানচিত্র তৈরি করা হয়। মানচিত্র প্রস্তুত করার পদ্ধতিগুলি হল –
- জমি জরিপ করে মানচিত্র প্রস্তুতিকরণ – কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি (যেমন – ফিতে, চেন, প্রিজমেটিক কম্পাস, থিয়োডোলাইট ইত্যাদি) ব্যবহার করে জমি জরিপ করে স্কেল অনুযায়ী ওই অঞ্চলের মানচিত্র অঙ্কন করা হয়।
- আলোকচিত্র থেকে মানচিত্র প্রস্তুতিকরণ – সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের ফটোগ্রাফ বা বিমান থেকে নেওয়া আলোকচিত্র থেকে স্টিরিওস্কোপ যন্ত্রের দ্বারা ত্রিমাত্রিক দৃশ্যকে দ্বিমাত্রিকে পরিণত করা হয়। তারপর তা থেকে মানচিত্র প্রস্তুত করা হয়।
- রিমোট সেন্সিং থেকে মানচিত্র প্রস্তুতিকরণ – বর্তমানে মানচিত্র প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি সবচেয়ে আধুনিক, নির্ভুল ও তথ্যনির্ভর। এক্ষেত্রে কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত ছবি, তথ্যের সাহায্যে কম্পিউটারের মাধ্যমে মানচিত্র তৈরি করা হয়।
- অন্যান্য পদ্ধতি –
- কোনো অঞ্চলে সমীক্ষালব্ধ তথ্য কম্পিউটারে সরবরাহ করে নির্দিষ্ট সফটওয়ারের সাহায্যে মানচিত্র প্রস্তুত করা হয়।
- আবার বিভিন্ন প্রজেকশানের (Projection) দ্বারা হাতেও মানচিত্র অঙ্কন করা যায়। তবে এক্ষেত্রে মানচিত্র প্রস্তুতিতে ত্রুটির সম্ভাবনা বেশি।
মানচিত্রের গুরুত্ব ও ব্যবহারগুলি লেখো।
মানচিত্রের গুরুত্ব – প্রাচীনকালে সমুদ্র যাত্রা, নতুন দেশ আবিষ্কার থেকে শুরু করে বর্তমানে কোনো দেশের ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক তথ্য বিশ্লেষণ, দেশের উন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণ সব কাজেই মানচিত্র সমান গুরুত্বপূর্ণ।
মানচিত্রের ব্যবহার –
- অবস্থান সম্পর্কে ধারণা লাভ – মানচিত্র পাঠের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অবস্থান সম্পর্কে বিশেষভাবে জানা সম্ভব হয়। যেমন – ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্র থেকে সমগ্র ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের কয়েকটি বিশেষ স্থানের অবস্থান সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। সমুদ্রপথ এবং বায়ুপথের দিক নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও অবস্থান নির্ণয়ে মানচিত্র ব্যবহৃত হয়।
- দূরত্ব নির্ণয় – প্রতিটি মানচিত্রই নির্দিষ্ট একটি স্কেল অনুযায়ী অঙ্কন করা হয়। কাজেই এই নির্দিষ্ট মানচিত্রে অবস্থানরত যে-কোনো স্থানের রৈখিক দূরত্ব থেকে ভূমিভাগের দূরত্ব নির্ণয় করা সম্ভবপর হয়।
- প্রাকৃতিক উপাদানগুলি শনাক্তকরণ ও বিশ্লেষণ – মানচিত্র পাঠের দ্বারা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি, মৃত্তিকা, স্বাভাবিক উদ্ভিদ, নদ-নদী প্রভৃতির বণ্টন সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়। তাই ওই সকল উপাদানগুলি শনাক্ত করে যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করা যায়।
- আর্থসামাজিক দিক পরিবেশন – মানচিত্রের মাধ্যমে পৃথিবীর অঞ্চলভেদে কৃষি, শিল্প, জনসংখ্যা, অর্থনীতি, সামাজিক রীতিনীতি প্রভৃতি তুলে ধরা হয় বলে এটি বিভিন্ন অঞ্চল বা দেশের আর্থসামাজিক দিক পরিবেশন করে।
- জরিপে সুবিধা – মানচিত্র গ্লোবের তুলনায় যথেষ্ট হালকা ও বহনযোগ্য হওয়ায় যে-কোনো ভৌগোলিক ক্ষেত্রে জরিপের সময় এটি সহজেই ব্যবহার করা হয়।
- শিক্ষা সহায়ক উপাদান – মানচিত্র পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক বিশ্ব সম্পর্কে ধারণা ও জ্ঞানের পরিধি অনেক বৃদ্ধি পায়। শিক্ষাক্ষেত্রে মানচিত্রের ব্যবহার বহুবিধ।
- এছাড়া, পর্যটন শিল্পে এবং পর্যটকদের কাছে।
- দেশের প্রতিরক্ষা, প্রশাসনিক এবং সামরিক প্রয়োজনে মানচিত্র অবশ্য ব্যবহার্য।
ভূগোল শিক্ষায় মানচিত্রের গুরুত্ব লেখো।
ভূগোল শিক্ষার ক্ষেত্রে মানচিত্রের গুরুত্ব অপরিসীম।
- প্রাকৃতিক মানচিত্র থেকে শিক্ষার্থীরা পাহাড়, পর্বত, মালভূমি, সমভূমি, সাগর, মহাসাগর, হ্রদ, নদী, মরুভূমি, বনভূমি প্রভৃতির সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করবে।
- জলবায়ু বা আবহাওয়া মানচিত্র দেখে শিক্ষার্থীরা উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি, উচ্চচাপ ও নিম্নচাপের অবস্থান, বায়ুপ্রবাহের দিক প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে।
- উদ্ভিদ মানচিত্র দেখে জলবায়ু ও স্বাভাবিক উদ্ভিদের সম্পর্কের বিষয়টি সহজেই বুঝতে পারবে।
- রাজনৈতিক মানচিত্র থেকে দেশের সীমানা, রাজ্যের সীমানা, শহর, বন্দরের অবস্থান জানতে পারবে।
- টোপোগ্রাফিকাল বা ভূ-সংস্থানিক মানচিত্র দেখে শিক্ষার্থীরা ভূমির উচ্চতা, ঢালের প্রবণতা, বসতিবিন্যাস, সড়কপথ, রেলপথ প্রভৃতি যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবে।
- মৌজা মানচিত্র দেখে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জমির সীমানা, রাস্তা, পুকুর, বসতি, মন্দির, মসজিদ, গির্জা, সেতু প্রভৃতির অবস্থান জানতে পারবে।
- অর্থনৈতিক মানচিত্র (খনিজ, শিল্প, কৃষি) দেখে কোনো দেশের অর্থনৈতিক সম্পদের অবস্থান ও বণ্টন সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা পাবে।
- আকাশ মানচিত্র দেখে বিভিন্ন জ্যোতিষ্কের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা জন্মাবে।
মোটকথা, মানচিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে ভূগোলের আলোচ্য বিষয়গুলি পড়লে শিক্ষার্থীরা অতি সহজেই তা বুঝতে পারবে।
স্কেল (Scale) কাকে বলে? স্কেলের শ্রেণিবিভাগ করো এবং বিভিন্ন প্রকার স্কেলের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
স্কেল (Scale) – মানচিত্রে দুটি স্থানের দূরত্ব এবং বাস্তবে ভূপৃষ্ঠে ওই দুটি স্থানের দূরত্বের অনুপাতকে স্কেল বলে।
সূত্র – স্কেল = মানচিত্রের দূরত্ব : ভূপৃষ্ঠের দূরত্ব
বা,শ্রেণিবিভাগ – নিম্নে ছকের মাধ্যমে স্কেলের শ্রেণিবিভাগ দেখানো হল –

বিভিন্ন প্রকার স্কেল –
মানচিত্রে উপস্থাপন ও প্রকাশভঙ্গি অনুসারে স্কেল প্রধানত তিনপ্রকার। যথা –
- বিবৃতিমূলক স্কেল।
- ভগ্নাংশসূচক স্কেল।
- লৈখিক স্কেল।
বিবৃতিমূলক স্কেল – মানচিত্রে স্কেলকে ভাষায় বা লিখিত বিবৃতির মাধ্যমে প্রকাশ করা হলে তাকে বিবৃতিমূলক স্কেল বলে। যেমন – 2 সেন্টিমিটার 1 কিলোমিটার অথবা 1 ইঞ্চিতে 1 মাইল।
ভগ্নাংশসূচক স্কেল – মানচিত্রের দূরত্ব ও ভূমির দূরত্বের অনুপাতকে ভগ্নাংশের আকারে প্রকাশ করলে তাকে ভগ্নাংশসূচক স্কেল বলে। এক্ষেত্রে ভগ্নাংশের ‘লব’ সর্বদা মানচিত্রের দূরত্ব ও ‘হর’ সর্বদা ভূপৃষ্ঠের দূরত্ব নির্দেশ করে এবং ‘লব’ 1 দ্বারা সূচিত হয়। লব ও হর উভয়কেই একই একক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। যেমন – RF = 1 : 50000
লৈখিক স্কেল – মানচিত্রে স্কেল যখন রেখার সাহায্যে এঁকে দেখানো হয় তখন তাকে লৈখিক স্কেল বলে। যেমন –

লৈখিক স্কেল মূলত তিনপ্রকার। যথা –
- রৈখিক স্কেল – যখন একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের সরলরেখাকে কয়েকটি মুখ্য ও গৌণভাগে ভাগ করে স্কেল প্রদর্শন করা হয় তখন তাকে রৈখিক স্কেল বলে। ইহা দুপ্রকার, যথা –
- সরল রৈখিক স্কেল – একটিমাত্র সরলরেখার সাহায্যে এই স্কেল প্রদর্শন করা হয়।
- তুলনামূলক রৈখিক স্কেল – যখন পাশাপাশি দুটি সরলরৈখিক স্কেলকে দুটি পৃথক এককের (কিমি ও মাইল) সাহায্যে প্রকাশ করে তাদের মধ্যে তুলনা করা হয় তখন তাকে তুলনামূলক রৈখিক স্কেল বলে।
- ডায়াগোনাল স্কেল – সূক্ষ্মমান পাঠ করার জন্য রৈখিক স্কেলের গৌণভাগের মানকে ক্ষুদ্রতম এককে ভাগ করে যে বিশেষ ধরনের স্কেল গঠন করা হয় তাকে ডায়াগোনাল স্কেল বলে।
- ভার্নিয়ার স্কেল – মূল স্কেলের গায়ে লেগে থাকা সরণযোগ্য স্বতন্ত্র যে স্কেলটির সাহায্যে মূল স্কেলের ক্ষুদ্রতম ভাগের ভগ্নাংশ মানকে নির্ভুলভাবে পরিমাপ করা হয় তাকে ভার্নিয়ার স্কেল বলে।
Class 9 Geography All Chapter Notes
আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের নবম অধ্যায় ‘মানচিত্র ও স্কেল’ এর রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি নবম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।