আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের অষ্টম অধ্যায় ‘পশ্চিমবঙ্গ (প্রাকৃতিক পরিবেশ) ’ এর পার্থক্যধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
পশ্চিমবঙ্গ (প্রাকৃতিক পরিবেশ) – পার্থক্যধর্মী প্রশ্নোত্তর উত্তরবঙ্গ (North Bengal) ও দক্ষিণবঙ্গের (South Bengal) নদীগুলির মধ্যে পার্থক্য লেখো। বিষয় উত্তরবঙ্গের নদী (Rivers of North Bengal) দক্ষিণবঙ্গের নদী (Rivers of South Bengal) নদীর উৎসস্থল হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল। ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চল (ভাগীরথী ছাড়া)। নদীর জলের উৎস হিমবাহ থেকে সৃষ্ট বলে বরফগলা জলেই পুষ্ট। বেশিরভাগ নদীই বৃষ্টির জলে পুষ্ট। সুন্দরবন অঞ্চলের নদীগুলি জোয়ারের জলে পুষ্ট। স্রোত এই নদীগুলি যথেষ্ট খরস্রোতা। নদীগুলিতে কম স্রোত থাকে। বহমানতা এইগুলি নিত্যবহ নদী। বেশিরভাগই অনিত্যবহ নদী। কার্যের প্রকৃতি পার্বত্য অঞ্চলের নদী খরস্রোতা বলে ক্ষয়কার্যের ক্ষমতা বেশি। নদীগুলি সমভূমি অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার জন্য সঞ্চয় ক্ষমতা বেশি। মোহানার প্রকৃতি মোহানা সেরকম প্রসারিত নয়। নদীগুলি মোহানার কাছে বেশ প্রশস্ত। প্রবাহের দিক উত্তরবঙ্গের নদীগুলি দক্ষিণবাহিনী। এই নদীগুলি পূর্ববাহিনী ও দক্ষিণ-পূর্ববাহিনী। নদী উপত্যকা এই নদীগুলির উপত্যকা অত্যন্ত গভীর ও সংকীর্ণ। এখানকার নদীগুলির উপত্যকা অগভীর ও চওড়া। গতিপথ পরিবর্তন প্রায়ই উত্তরবঙ্গের নদীগুলির গতিপথ পরিবর্তন হয়। দক্ষিণবঙ্গের নদীগুলির গতিপথ তেমন পরিবর্তিত হয় না। উদাহরণ তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকা, মহানন্দা প্রভৃতি। ভাগীরথী-হুগলি, দামোদর, অজয়, কংসাবতী, মাতলা, গোসাবা প্রভৃতি।
ল্যাটেরাইট (Laterite Soil) ও পডসল মৃত্তিকা (Podsol Soil) -এর পার্থক্য লেখো। বিষয় ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা (Laterite Soil) পডসল মৃত্তিকা (Podsol Soil) অবস্থান পুরুলিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমানের মালভূমি অংশে এই মাটি দেখা যায়। দার্জিলিং, কালিম্পং ও জলপাইগুড়ি জেলার পার্বত্য অঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়। জলবায়ু এই প্রকার মাটি উষ্ণ প্রকৃতির বা চরমভাবাপন্ন জলবায়ু অঞ্চলে গড়ে ওঠে। এই ধরনের মাটি শীতল নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে গড়ে ওঠে। গঠন প্রক্রিয়া ক্রান্তীয় অঞ্চলে ভৌত ও রাসায়নিক আবহবিকারে খনিজগুলি বিয়োজিত হয়ে এই মাটির সৃষ্টি হয়। সরলবর্গীয় উদ্ভিদের ফুল, ফল, পাতা প্রভৃতি জৈব পদার্থ পচে এই প্রকার মাটির উপরিস্তর গঠিত হয়। উপাদান এই মাটিতে লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। জৈব পদার্থের পরিমাণ খুবই কম। পডসল মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে। তেমনি মাটির উপরিস্তর সিলিকা সমৃদ্ধ থাকে। বর্ণ ল্যাটেরাইট মৃত্তিকায় লোহার পরিমাণ বেশি থাকায় রং লাল হয়। এই মাটিতে সিলিকার পরিমাণ বেশি থাকায় রং ধূসর বা বাদামি হয়। উর্বরতা এই মাটি চাষের ক্ষেত্রে খুবই অনুপযোগী অর্থাৎ উর্বরতা খুবই কম। পডসল মৃত্তিকার উর্বরতা ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার তুলনায় সামান্য বেশি। উৎপন্ন ফসল জলসেচের মাধ্যমে ধান, আলু তৈলবীজ প্রভৃতি উৎপাদিত হয়। চা, কমলালেবু, সিঙ্কোনা, স্কোয়াশ (সবজি) চাষ ভালো হয়।
লোহিত মাটি (Red Soil) ও ল্যাটেরাইট মাটি (Laterite Soil) -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো। বিষয় লোহিত মাটি (Red Soil) ল্যাটেরাইট মাটি (Laterite Soil) উৎপত্তি স্বল্প বৃষ্টিপাত ও অধিক উষ্ণতায় রাসায়নিক বিয়োজনের ফলে এই মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়। অধিক বৃষ্টিপাত জনিত কারণে ধৌত প্রক্রিয়ায় এই মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়। আদি শিলা প্রধানত গ্রানাইট ও নিস জাতীয় আগ্নেয় শিলা থেকে এই মৃত্তিকার উৎপত্তি ঘটে। প্রধানত ব্যাসল্ট জাতীয় আগ্নেয় শিলা থেকে এই মৃত্তিকার উৎপত্তি ঘটে। জলবায়ু স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় জলবায়ুতে এই মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়। অধিক বৃষ্টিপাত ও অধিক উষ্ণতাযুক্ত আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ুতে এই মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়। উর্বরতা উর্বরতা অপেক্ষাকৃত বেশি। উর্বরতা অপেক্ষাকৃত কম। উৎপন্ন ফসল জোয়ার, বাজরা, রাগি, তৈলবীজ। কাজুবাদাম, ধান, ট্যাপিওকা, চা।
ভাঙ্গর (Bhangar) ও খাদার (Khadar) -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো। বিষয় ভাঙ্গর (Bhangar) খাদার (Khadar) অপর নাম প্রাচীন পলিমাটিকে ভাঙ্গর বলে। নবীন পলিমাটিকে খাদার বলে। প্রকৃতি মোটা দানাযুক্ত পলি দ্বারা গঠিত, এঁটেল প্রকৃতির হয়। সূক্ষ্ম দানাযুক্ত পলি দ্বারা গঠিত, এঁটেল থেকে বেলে প্রকৃতির হয়। পলিসঞ্চয় নতুন করে পলির সঞ্চয় আর ঘটে না। প্রতি বছর নতুন পলির সঞ্চয় ঘটে। উচ্চতা এই অঞ্চল অপেক্ষাকৃত উঁচু। এই অঞ্চল অপেক্ষাকৃত নীচু। উর্বরতা অপেক্ষাকৃত কম উর্বর মাটি। অত্যন্ত উর্বর মাটি। উৎপন্ন ফসল ধান, তৈলবীজ, লঙ্কা। ধান, পাট, আখ, আলু।
পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলের জলবায়ু ও মালভূমি অঞ্চলের জলবায়ুর পার্থক্য লেখো। বিষয় পার্বত্য অঞ্চলের জলবায়ু মালভূমি অঞ্চলের জলবায়ু প্রকৃতি পার্বত্য অঞ্চলের জলবায়ু আর্দ্র শীতল নাতিশীতোষ্ণ প্রকৃতির। মালভূমি অঞ্চলের জলবায়ু চরমভাবাপন্ন প্রকৃতির। উষ্ণতা গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা 16°C এবং শীতকালীন গড় উষ্ণতা 2°C–8°C গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা 45°C এবং শীতকালীন গড় উষ্ণতা 10°C। বৃষ্টিপাত এখানকার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত 300 সেমি। এখানকার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত 100–125 সেমি। প্রধান বৈশিষ্ট্য পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে কম তাপমাত্রা এবং সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত এই অঞ্চলে দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ও সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত এই অঞ্চলে দেখা যায়। বৃষ্টিপাতের ধরন এই অঞ্চলে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটে। এই অঞ্চলে পরিচলন বৃষ্টিপাত ঘটে। তুষারপাত শীতকালে তুষারপাত ঘটে থাকে। এই অঞ্চলে কখনও তুষারপাত ঘটে না।
পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য অঞ্চলের ও উপকূল অঞ্চলের জলবায়ুর পার্থক্য লেখো। বিষয় পার্বত্য অঞ্চলের জলবায়ু উপকূল অঞ্চলের জলবায়ু অবস্থান শিলিগুড়ি মহকুমা বাদে সমগ্র দার্জিলিং, কালিম্পং ও জলপাইগুড়ি জেলার উত্তর ও উত্তর-পূর্বাংশে এই জলবায়ু দেখা যায়। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি মহকুমার দক্ষিণাংশের বালিয়াড়ি অঞ্চলে এই জলবায়ু দেখা যায়। জলবায়ুর প্রকৃতি এই অঞ্চলের জলবায়ু শীতল প্রকৃতির। জলবায়ু সমভাবাপন্ন প্রকৃতির। গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা 14°C–18°C। গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা 25°C–30°C। শীতকালীন উষ্ণতা শীতকালীন গড় উষ্ণতা 2°C–8°C। শীতকালীন গড় উষ্ণতা 12°C-18°C। বৃষ্টিপাত বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত 300 সেমি। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত প্রায় 150-200 সেমি। তুষারপাত শীতকালে মাঝে মধ্যে তুষারপাত ঘটে। তুষারপাত কখনোই হয় না। কুয়াশা বছরের বেশিরভাগ সময় কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে। শীতকালে মাঝে মধ্যে কুয়াশা দেখা যায়। বৃষ্টিপাতের ধরন এই অঞ্চলে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়। এই অঞ্চলে মূলত পরিচলন ও ঘূর্ণবাত জনিত বৃষ্টি ঘটে। ঘূর্ণবাত এই অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব তেমন লক্ষ করা যায় না। এখানে ঘূর্ণবাতের বিধ্বংসী প্রভাব লক্ষ করা যায়। আপেক্ষিক আর্দ্রতা বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা সারাবছর বেশি। এখানে বর্ষাকালে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি এবং শীতকালে কম।
Class 9 Geography All Chapter Notes আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের অষ্টম অধ্যায় ‘পশ্চিমবঙ্গ (প্রাকৃতিক পরিবেশ) ’ এর পার্থক্যধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি নবম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।