আজকে আমরা এই আর্টিকেলে সংলাপ রচনা নিয়ে আলোচনা করব। সংলাপ হল কথোপকথনের লিখিত রূপ, যেখানে একাধিক ব্যক্তি একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। সংলাপ রচনা মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এই সংলাপ রচনা গুলি মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে গেলে, তোমরা অবশই মাধ্যমিক পরীক্ষায় সংলাপ রচনা লিখে আস্তে পারবে।
সংলাপ হল কথোপকথন। কোনো একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে একাধিক ব্যক্তির মধ্যে যে কথোপকথন কল্পনা করা হয় তারই লিখিত রূপ হল সংলাপ। নাটকের সংলাপ রচনার সঙ্গে কাল্পনিক সংলাপ রচনার কিছুটা পার্থক্য আছে। নাটকীয় সংলাপে চরিত্রের আচরণগত নির্দেশও থাকে। কিন্তু কাল্পনিক সংলাপে বিষয়কেন্দ্রিক আলোচনাই প্রধান।
সংলাপ রচনা
- সংলাপ রচনার জন্য প্রথমে দেওয়া বিষয়টিকে মনে মনে ভালো করে ভেবে নেওয়া দরকার। বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকলে কথোপকথনের মাধ্যমে তা তুলে ধরা কঠিন হয়ে পড়ে।
- সংলাপের ভাষা হবে সহজসরল। মৌখিক ভাষার স্বাভাবিকতা বজায় রাখার দিকে নজর দিতে হবে।
- সংলাপ হবে চরিত্র অনুযায়ী। অর্থাৎ কল্পিত চরিত্রের বয়স, জীবিকা, সামাজিক অবস্থান প্রভৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তার সংলাপ তৈরি করতে হবে।
- কাল্পনিক সংলাপে নাটকীয়তা সৃষ্টির সুযোগ নেই ঠিকই, কিন্তু সংলাপের মাধ্যমে সামান্য পরিমাণে নাটকীয় রস সৃষ্টি করতে পারলে ভালো হয়। এতে কথোপকথন অনেকটা স্বাভাবিক ও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে।
- কোনো একটি চরিত্র একটানা অনেকক্ষণ কথা বললে একঘেয়ে লাগতে পারে। সেজন্য একটি নির্দিষ্ট চরিত্রের সংলাপ যাতে বেশি বড়ো না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
- প্রয়োজনবোধে সংলাপের মধ্যে প্রবাদ-প্রবচন, বাগধারা বা বিশিষ্টার্থক শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে তা যেন কখনোই অকারণ বা অপ্রাসঙ্গিক প্রয়োগ না হয়।
- সংলাপ একাধিক ব্যক্তির মধ্যে নিছক উক্তি-প্রত্যুক্তি কিংবা খোশগল্প নয়। এটি আসলে কোনো একটি বিষয়ের আলোচনা বা পর্যালোচনা। তাই বিষয় থেকে সরে গিয়ে অবান্তর কথোপকথন উচিত নয়।
সাম্প্রদায়িক হানাহানি বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে কথোপকথন।
অমিত – কিরে কাল আমাদের পাড়ার দুর্গাপুজো কেমন লাগল?
সুজয় – খুব ভালো, সবথেকে অবাক লাগল কত ভিন্নধর্মের মানুষও পুজো প্যান্ডেলে এসেছিলেন।
অমিত – সারা পৃথিবীজুড়ে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়েছে, তার বিরুদ্ধেই শান্তির বার্তা দিতেই ওরা এসেছিলেন। প্রত্যেকেই সেজন্য সাদা পোশাক পরে এসেছিলেন।
সুজয় – বা! দারুণ ব্যাপার তো! এরকম চেষ্টাই তো পৃথিবীতে শান্তি আনবে। দ্যাখ, প্রত্যেক ধর্মই তো আসলে মানবতার কথা বলে। খুব সাধু উদ্যোগ। সত্যি বলতে কী, আমার বেশ গর্ববোধ হচ্ছে এই ভেবে যে, পুজো কমিটির মধ্যে না থাকলেও আমিও এই পাড়ার একজন সদস্য।
অমিত – ঠিক বলেছিস। আমাদের পাড়া বলেই কিন্তু এই সংহতি সম্ভব হল। কারণ, সত্যি এমন বহু ঘটনা আজও ধর্মের নামে ঘটে চলেছে যা ভাবলে সত্য মানুষ হিসেবে লজ্জাই হয়।।
সুজয় – কিন্তু তারই মধ্যে আমাদের পাড়ার মতো জায়গাও তো রয়েছে, যেখানে এই অকারণ হানাহানির ছবিটা সরিয়ে দিয়ে আমরা একজোট হয়ে দাঁড়াতে পারি। এইটুকু দিয়েই শুরু, এই এক পা, এক পা করেই আমরা ঠিক লক্ষ্যে পৌঁছে যাব। ধর্ম যার যার নিজের, কিন্তু উৎসব তো সবার, তাই না?
ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি সংলাপ।
দীপংকর – খেয়াল করেছিস, আমাদের স্কুলের পাশে একটা শপিং মল তৈরি হচ্ছে?
জয় – বাবা! সে আবার দেখিনি? লোকজনের ভিড়ের ঠেলায় তো সবাই অস্থির হয়ে যাচ্ছে!
দীপংকর – সে তো হবেই। আসল ব্যাপারটা হল, মানুষ এখন বিলাস-আবাসে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। কিছু মানুষের হাতে টাকাও আছে প্রচুর। এ এক অদ্ভুত সময়-তুই একইসঙ্গে খবরের কাগজে কৃষকের আত্মহত্যার খবরও শুনবি, আবার নামিদামি জায়গায় একটু মজা করার সুখ কেনার জন্য তিনগুণ বেশি খরচা করার মতো লোকেরও অভাব দেখতে পাবি না।
জয় – হ্যাঁ। এই কারণেই আমাদের সমাজে গরিব-বড়োলোকের তফাৎটা এত বেশি।
দীপংকর – এদিকে দ্যাখ, বেকারত্বের হার বাড়ছে, বাড়ছে মানুষের দারিদ্র্য। সমাজে অপরাধও বাড়ছে।
জয় – আর একটা কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি, যতদিন না অর্থনৈতিক অবস্থা পাল্টাচ্ছে, ততদিন এই ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে আমাদের রক্ষা পাওয়ার উপায় নেই।
দীপংকর – এ অবস্থা থেকে মুক্তির আশা আদৌ আছে কি না সেটাই তো এখন বিশাল বড়ো প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়িয়ে। কারণ, স্বাধীনতার পর থেকে এই সামাজিক রীতিটি একই রয়ে গেছে। গরিব আরও গরিব হয়েছে, বড়োলোক হয়েছে আরও বড়োলোক।
বাংলা ভাষার স্বার্থে নতুন বাংলা বানানবিধির প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে শিক্ষক ও ছাত্রের সংলাপ।
অমল – স্যার, আপনি আমাদের খাতায় ‘বন্দী’ বানানটা কেটে ‘বন্দি’ করে দিয়েছেন। কিন্তু ‘বন্দী’ বানানটায় কী ভুল আছে?
শিক্ষক – হ্যাঁ, অমল। এই বানানটা ভুল। একসময়ে অবশ্য তোমার লেখা ওই বানানটাই ঠিক বলে মানা হত। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির প্রচলিত বানানবিধি অনুযায়ী, ‘বন্দি’ বানানটাই ঠিক। ‘বন্দী’ বলতে বোঝানো হয় বন্দনাকারীকে। যেমন ধরো ওই কবিতার লাইনটা অমনি বন্দিল বন্দী, করি বীণাধ্বনি।
অমল – কিন্তু স্যার, এই বানানবিধিই বা কেন আমাদের মেনে চলতে হবে?
শিক্ষক – এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আসলে, প্রতিটি ভাষার ক্ষেত্রেই একটা উপভাষাকে মান্য ভাষা বলে মেনে চলতে হয়। নইলে বিশৃঙ্খলা হবে, যে যার ইচ্ছামতো ভাষার প্রয়োগ করবে। ফলে নিজেদের মধ্যে কথা বলার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা না হলেও বৃহত্তর ক্ষেত্রে তা হতে পারে। সাহিত্য, প্রতিবেদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভাষার একটি নমুনাকে যদি সকলের সামনে তুলে ধরতে হয়, তখন তো একটা সর্বজনগ্রাহ্য চেহারা প্রয়োজন। নইলে প্রত্যেকে যে যার নিজের মতো করে আলাদা আলাদা রকমে তার মানে বুঝবে অথবা বুঝবে না। বানানের ক্ষেত্রেও তাই একইরকমভাবে একটা সমতা রাখা প্রয়োজন। তাই এই বানানবিধি গড়ে তোলা হয়েছে।
অমল – হ্যাঁ, একটি বানানবিধি যে বানান ব্যবহারে সমতা আনে, তা সত্যি। তা ছাড়া, বাংলা ভাষাকে বিশ্বের দরবারে একটি আদর্শ চেহারা দিতে হলে এই বানানবিধি খুবই জরুরি, তা আমিও স্বীকার করছি।
সাহিত্যপাঠের উপযোগিতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ।
সুরেশ – কী এত পড়িস বল তো? যখনই তোর বাড়িতে আসি, কিছু না কিছু পড়তেই থাকিস। স্কুলের বইও তো সেগুলো নয়, তাহলে?
বিজয় – আচ্ছা, তোর কি মনে হয়, পাঠ্যবই ছাড়া পৃথিবীতে আর কোনো কিছুই পড়ার নেই?
সুরেশ – না, ঠিক তা বলিনি। তবে স্কুলের পড়াতে সাহায্য করে, এমন কিছু পড়লেই তো পারিস। বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী পড়ে তোর কী হবে? এ তো পরীক্ষাতেও আসবে না।
বিজয় – এ বিষয়ে তোর সঙ্গে আমার মতের মিল না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবু বলি, পড়াশোনার জন্য নির্দিষ্ট বইপত্রও তো মাঝে মাঝে ক্লান্তি আনতে পারে, কিন্তু নিজের পছন্দের বই পড়লে এক অনাবিল আনন্দ পাওয়া যায়।
সুরেশ – কিন্তু এ তো নেহাতই বিনোদন! এ থেকে তো তোকে জীবনে কেউ কোনোদিন কোনো প্রশ্ন করবে না!
বিজয় – সেটাই তো মজা! অবসর পেলেই গল্পের বই পড়া আসলে এক মানসিক তৃপ্তি এনে দেয়। কারণ, এই ধরনের পড়ার পিছনে কোনো চাপ কাজ করে না! সেই পড়া থেকে কেউ প্রশ্ন করবেন না, কোনো উত্তর বলতে বা লিখতে হবে না, তাই ভুল হওয়ার অথবা নম্বর না পাওয়ার কোনো ব্যাপারই নেই।
সুরেশ – কিন্তু এতে তোর আসল লাভের লাভ কিছু হচ্ছে কি?
বিজয় – এই লাভের ধারণাটা এক-একজনের কাছে এক-একরকম। আমার ধারণা, এই সিলেবাসের বাইরে পড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠার মাধ্যমে ধৈর্য আর সাহিত্যবোধ দুটোই গড়ে ওঠে। এমনকি মৌলিক গল্পরচনার প্রতিভার প্রকাশও ঘটতে পারে। বানান, বাক্যগঠন ইত্যাদি দেখতে দেখতে সামগ্রিকভাবে ভাষার ওপরে দখল তৈরি হয়ে যায় অজান্তেই। তাই না?
সুরেশ – হ্যাঁ, সেটা অবশ্য তুই ঠিকই বলেছিস। আর প্রচুর অজানা তথ্য যে জানা যায়, সেটাও ঠিক। সাহিত্য পড়ার যে এতরকম উপযোগিতা থাকতে পারে, তুই না বললে আমার কাছে তা স্পষ্ট হত না।
সমাজগঠনে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা প্রসঙ্গে দুই শিক্ষকের মধ্যে কথোপকথন।
প্রথম শিক্ষক – শুনেছেন, আমাদের স্কুলের চার ছাত্র মিলে পথশিশুদের সাক্ষরতা প্রকল্পে একটি ছোট্ট স্কুল তৈরি করেছে?
দ্বিতীয় শিক্ষক – শুনেছি তো বটেই, গতকাল নিজের চোখে দেখতেও গিয়েছিলাম। সন্ধ্যাবেলায় যখন জানবাজারের লোহাপট্টির দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যায়, তখন সেই বন্ধ দোকানের ফাঁকা চাতালে বসে ওদের ক্লাস। আমাদেরই ছাত্র, এত ভালো কাজ করছে, দেখলেও ভালো লাগে!
প্রথম শিক্ষক – সত্যি! ওরাই তো আমাদের ভবিষ্যৎ! দেশের উন্নয়নের কাজও শুরু করতে হবে ওদেরকেই। শুধু শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, কৃষি, বাসস্থান, কর্মসংস্থান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার প্রয়োগ, ভূমিবন্টন, স্বাস্থ্য, প্রাকৃতিক সম্পদ, মানবিক অধিকারের ব্যবস্থা, সমবায় নীতি, সংস্কৃতি, খেলা, চিকিৎসা, সামাজিক স্বাস্থ্য, রাজনৈতিক সংস্কারসাধন-সব তো ওদেরই হাতে।
দ্বিতীয় শিক্ষক – আরে দাঁড়ান, দাঁড়ান! আপনি তো বিশাল লম্বা ফর্দ ধরিয়ে দিলেন। কিন্তু ওরা তো একেবারেই শিক্ষানবিশ। তাই ওরা শুধু গোড়াপত্তনটুকুই করবে। কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা, গাছ কাটা, পশুপাখি হত্যা করা, পুকুর বোজানো ইত্যাদি অন্যায়ের বিরুদ্ধে তারা যেমন জনসাধারণকে বোঝাতে পারে, তেমনই উপযুক্ত শিক্ষাগ্রহণ করে দেশের বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য, সমাজসেবা ইত্যাদি কাজেও আত্মনিয়োগ করতে পারে। তবে এ বিষয়ে তাদের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য প্রাথমিক সাহায্যটুকু করার দায়িত্ব কিন্তু আমাদেরই।
প্রথম শিক্ষক – সে তো বটেই! ওদেরকে শিক্ষিত করে তোলার মাধ্যমেই তো বাকিদের শিক্ষিত করে তোলার লক্ষ্যে এগোনো সম্ভব!
দ্বিতীয় শিক্ষক – হ্যাঁ! আর এ কথা মানতেই হবে, যে, দেশের ছাত্রসমাজ দেশ সম্পর্কে যত সচেতন, সেই দেশের উন্নতিও সেই পরিমাণে হয়ে থাকে। দ্যাখো, আমরা ভাগ্যবান ও যে এই ছাত্রদের গড়ে তোলায় আমাদেরও একটা ভূমিকা আছে।
প্রতিযোগিতার ভালোমন্দ নিয়ে দুই ব্যক্তির মধ্যে সংলাপ।
প্রথম ব্যক্তি – কাল শুনলাম আমাদের পাড়ার একটি ছেলে মাধ্যমিকে খুব ভালো ফল না করতে পেরে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিল। তুমি কিছু শুনেছ?
দ্বিতীয় ব্যক্তি – হ্যাঁ, কথাটা সত্যি। এত খারাপ লাগছে ঘটনাটা শুনে! এই বাচ্চাগুলোর কথা ভেবে সিত্যই কষ্ট হয়! ছোট্ট থেকেই ওদের মাথায় একেবারে গেঁথে দেওয়া হয়েছে যে, সবাইকে টপকে প্রথম হতে হবে। এই প্রচণ্ড মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। যার ফলেই ঘটছে এইসব ঘটনা।
প্রথম ব্যক্তি – কিন্তু দেখুন প্রতিযোগিতা বিষয়টা তো সবক্ষেত্রেই খারাপ এমন নয়। তাকে ভুল ক্ষেত্রে এবং ভুল উপায়ে চাপিয়ে দেওয়ার ফলেই সমস্যা বাধে। ভেবে দ্যাখো, ডারউইনের ‘যোগ্যতমের উদবর্তন তত্ত্ব’-এর কথা। প্রতিযোগিতা যখন বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় অঙ্গ তখন তা বাধ্যতামূলক। কারণ, প্রতিযোগিতাই ব্যক্তির ভিতরের প্রতিভাকে বের করে আনে। মানুষকে সচেতন এবং দায়িত্বশীল করে তোলে।
দ্বিতীয় ব্যক্তি – হ্যাঁ, কিন্তু বর্তমান সমাজব্যবস্থায় এই চরম প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করতে গিয়ে মানুষ ভয়ংকর চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। বিশেষত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই জেতার জন্য তাড়না ও চাপ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। তখন ব্যর্থতার হতাশা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার অজস্র নজিরও দেখা যায়।
প্রথম ব্যক্তি – আসলে আধুনিক ভোগবাদী সমাজে মানুষের এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা, সাধ আর সাধ্যের মধ্যে বিশাল ফারাক তৈরি করে দেয়। তীব্র হতাশা নিয়ে আসে সামাজিক মর্যাদারক্ষার এই প্রতিযোগিতা, তার ফলে এই সব দুর্ঘটনা ঘটে যায়।
দ্বিতীয় ব্যক্তি – প্রতিযোগিতার প্রচণ্ড চাপ সহ্য করতে না পেরে এরকম ঘটনা হয়তো আরও ঘটবে, কিন্তু আমাদের কিছুই করার থাকবে না।
ডেঙ্গুর বাহক মশার বিনাশের উপায় সম্বন্ধে একজন শহরবাসী ও একজন গ্রামবাসী বন্ধুর মধ্যে সংলাপ।
দেবব্রতবাবু – আরে! কেমন আছেন প্রকাশবাবু?
প্রকাশবাবু – আর থাকা! ডেঙ্গু যেভাবে ছড়াচ্ছে তাতে আর ক-দিন বেঁচে থাকব কে জানে?
দেবব্রতবাবু – সে কী! আপনাদের শহরেও ডেঙ্গু! ডেঙ্গুর ভয়ে আমাদের তো গ্রামছাড়া হওয়ার জোগাড়। আমার ছোটো ছেলেটারও আজ কয়েকদিন হল ডেঙ্গু হয়েছে, চিকিৎসা চলছে।
প্রকাশবাবু – অ্যাঁ, বলেন কী! এখানেও!
দেবব্রতবাবু – হ্যাঁ, গ্রামে তো ডেঙ্গু হবেই। জলনিকাশের ভালো ব্যবস্থা নেই, যেখানে-সেখানে পচা ডোবা, বড়ো বড়ো পুকুরগুলো সংস্কারের অভাবে কচুরিপানায় ভরতি, রাস্তা আর বাড়ির আশেপাশেও খানাখন্দে জল জমে থাকে। এসব থেকেই তো মশা হয়।
প্রকাশবাবু – তবে মশা মানেই ডেঙ্গু, এ কথা বলা বোধহয় ঠিক হবে না দেবব্রতবাবু। কিউলেক্স নামে এক ধরনের স্ত্রী মশা হল এই রোগের জীবাণুর বাহক। মজার ব্যাপার কী জানেন, এই কিউলেক্স মশার বাড়বাড়ন্তের জন্য নোংরা জল বা আবর্জনা যতটা দায়ী, তার থেকেও বেশি দায়ী কোথাও অনেকদিন ধরে জমে থাকা স্থির স্বচ্ছ জল। ডেঙ্গুর মশারা জমে থাকা পরিষ্কার জলেই ডিম পাড়তে ভালোবাসে।
দেবব্রতবাবু – এই মশার হাত থেকে বাঁচতে গেলে কী করা যায় বলুন তো?
প্রকাশবাবু – প্রাথমিকভাবে, জনগণের মধ্যে সচেতনতা জাগিয়ে তোলা দরকার। যদি অন্যরা কথাটা কানেই না-তোলে, শুধু আমি আপনি মিলে উদ্যোগ নিয়ে তো কিছুই করে উঠতে পারব না। পরিস্থিতি যেমনকে তেমনই থাকবে। তবে আমাদের দিক থেকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। জল একেবারেই জমিয়ে রাখা চলবে না।
দেবব্রতবাবু – হ্যাঁ, পাশাপাশি দরকার সরকারি স্তরে বৃহত্তর কর্মসূচি। সরকারি ভাবে ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে কীভাবে লড়াই করা যাবে, তা নিয়ে প্রচার চালাতে হবে। আর এই মশাদের আক্রমণ মূলত সকালে। তাই সেই বুঝেই চলাফেরাটা করা উচিত।
প্রকাশবাবু – হ্যাঁ, ডেঙ্গুর মোকাবিলা করতে হলে কিউলেক্স মশার ধ্বংসই সবার আগে প্রয়োজন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ছাত্রসমাজের ভূমিকা সম্পর্কে শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে কাল্পনিক সংলাপ।
শিক্ষক – অজিতেশ, ভূমিকম্পের জন্য নেপালে স্কুলের তরফ থেকে যে ত্রাণ পাঠানো হবে, তার তালিকা তৈরি হয়েছে?
ছাত্র – হ্যাঁ স্যার, শুকনো খাবার আর জামাকাপড় কালকেই পাঠানো হবে। এ ছাড়া জলের প্যাকেট আর কম্বলও পাঠানো হচ্ছে।
শিক্ষক – আর-একটা কথা মনে রেখো অজিতেশ, এই যে কাজটা করছ, এটা কিন্তু শুধু স্কুলের উদ্যোগে বা আমাদের নির্দেশে করছ না। করছ, তার কারণ তোমরা ছাত্র। তোমরাই দেশের ভবিষ্যৎ, তোমরাই ভাবী নাগরিক। তাই, দেশের ও দশের যে-কোনো সমস্যার সমাধানে কিংবা উন্নয়নমূলক কাজে তোমাদের একটা বড়ো দায়িত্ব থেকে যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগও তার মধ্যে অন্যতম।
ছাত্র – সে তো নিশ্চয়ই। আর আমরা যাতে দক্ষতার সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করতে পারি, সেজন্য তো আমাদেরকে স্কুলের তরফ থেকে যথাযথ প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষক – তোমাদের পাশে থেকে তোমাদের ঠিক পথে এগিয়ে দেওয়াই আমাদের কাজ। নিছক প্রশিক্ষণ নিয়েই মাঠে নেমে পড়া যায় না। ছাত্র হাতেকলমে করলে তবেই কাজ শিখতে পারা যায়।
ছাত্র – তা ছাড়া, পড়ে পড়ে মার খাওয়াটা তো মানুষের ধর্মও নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষকে সাময়িকভাবে বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত করে তোলে ঠিকই, কিন্তু শেষপর্যন্ত সে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে থেকে উঠে দাঁড়াবার চেষ্টাও করে। আমাদের উচিত ওদের পাশে থাকা।
শিক্ষক – হ্যাঁ, বিধ্বস্ত মানুষরা চেষ্টা তো করবেই। মানুষের ধর্মই। কিন্তু এই উঠে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে দেশের তরুণরাই অন্যতম সহায়, সে-কথা ভুলে যেও না।
অরণ্যসংরক্ষণের উপযোগিতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ।
কৌশিক – দেখলি, আমাদের স্কুলের সামনের এত বড়ো বকুল গাছটা কেটে ফেলা হল! শুনলাম ওখানে ফ্ল্যাট বানানো হবে।
অভীক – আর বলিস না! মনটা এত খারাপ লাগছে, যে ওদিকে আর তাকাতেই পারছি না। সেই কোন্ ছোট্টবেলায় প্রথম স্কুলে আসার দিনটা থেকে গাছটার সঙ্গে বন্ধুত্ব, চেনাশোনা। মনে আছে, ছুটির পরে ওই বিশাল গাছটার নীচে বাঁধানো বেদিটায় চড়ে কত খেলেছি।
কৌশিক – আধুনিক আর উন্নত হতে হতে মানুষ যেন ভুলেই গিয়েছে গাছের অবদান। সবদিকে উন্নয়নের নামে নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে, প্রকৃতির সাথে আমাদের যোগাযোগ ক্রমশই কমে আসছে।
অভীক – কেউ একবার অন্তত এটাও তো ভেবে দেখুক যে, এতে ক্ষতি শেষপর্যন্ত নিজেদেরই হয় বা হচ্ছে। এই ভয়ানক লোভে মানুষ নিজের সভ্যতাকেই ধ্বংস করছে! পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়ছে, মেরুপ্রদেশের বরফ গলে যাচ্ছে, বেড়ে যাচ্ছে পৃথিবীর জলস্তর, নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য-গাছপালা কমে যাওয়ায় অতিবেগুনি রশ্মিও প্রভাব ফেলছে পরিবেশের ওপরে। সবমিলিয়ে নানান অসুখবিসুখের প্রকোপও বেড়েই চলেছে।
কৌশিক – শুধু তা-ই নয়, তুই কি জানিস, বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো দেশের আয়তনের তুলনায় অরণ্যের পরিমাণ যখন ৩৫ শতাংশের নীচে নেমে যাবে, তখনই সেই দেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। ভারত-সহ পৃথিবীর বহু দেশই এখন এই সমস্যার সম্মুখীন।
অভীক – আসলে কী বল তো, ‘একটি গাছ একটি প্রাণ’-এই বাক্যটিকে নিছক স্লোগান নয়, জীবনযাপনের এক অনিবার্য শর্ত করে তুলতে হবে। নইলে এই ভয়ানক ধ্বংসের হাত থেকে কোনোক্রমেই মুক্তি পাওয়া যাবে না।
ভবিষ্যতে কী নিয়ে পড়া যায়-সেই আলোচনা প্রসঙ্গে দুই বন্ধুর কাল্পনিক কথোপকথন।
মিত্রা – আচ্ছা, মাধ্যমিকের পর কী নিয়ে পড়বি ভেবে রেখেছিস কিছু?
বৃন্দা – আমার বাবা-মায়ের ইচ্ছা আমি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করি। ফলে আমাকে সায়েন্স নিয়েই পড়তে হবে।
মিত্রা – ‘পড়তে হবে’-এভাবে বলছিস কেন? তুইও কি তাই চাস না?
বৃন্দা – না রে, আমার বরাবরের শখ সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করার। যদি আমাকে আমার ইচ্ছেমতো পড়তে দেওয়া হত, তাহলে আমি নিশ্চয়ই সাহিত্য বিভাগের কোনো একটা বিষয়ই বেছে নিতাম।
মিত্রা – সে কী! তুই তোর নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা অনুযায়ী পড়তে পারবি না কেন? দ্যাখ বৃন্দা, এই সিদ্ধান্তটা কিন্তু জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সিদ্ধান্ত। এর ওপরেই নির্ভর করছে তুই ভবিষ্যতে কী নিয়ে পড়াশোনা করবি, কোন্ দিকে এগোবি, এমনকি তোর পেশা কী হতে চলেছে-সব।
বৃন্দা – বুঝতে পারছি। কিন্তু বিজ্ঞান শাখায় আমার পরীক্ষার ফলাফল বরাবরই বেশ ভালো হয়। তাই বাবা-মাও আর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।
মিত্রা – কিন্তু এটা তো ঝুঁকিই নেওয়া হয়ে যাচ্ছে, তাই না? তুই পড়তে ভালোবাসিস একটা বিষয়, তোকে পড়তে হবে অন্য আর-একটা বিষয়-এটা কি ঝুঁকি নয়?
বৃন্দা – হ্যাঁ, কিন্তু ওঁদের মতে, চাকরির বাজারে যে পরিমাণ মন্দা, তাতে নাকি সায়েন্স পড়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
মিত্রা – এখন আর চাকরি সম্পর্কে সেই পুরোনো ধারণা নিয়ে পড়ে থাকার কোনো অর্থ হয় না। বিভিন্ন বিষয়ের সংখ্যা বেড়েছে, বেড়ে গেছে বিবিধ গবেষণার সুযোগও। তাই এই ভয়টা অমূলক। কিন্তু নিজের পড়ার বিষয়টার প্রতি যদি তোর ভালোবাসাই না থাকে, তবে সেটা নিয়ে এগোবি কী করে?
বৃন্দা – দেখি, বাবা-মাকে এটাই বোঝাতে হবে যে, শুধু চাকরি পাওয়ার জন্যই নয়, ভালোবেসেও বিষয়টি পড়তে হয়। নইলে সায়েন্স নিয়ে পড়ে ফল খারাপ হলে চাকরি পেতেও সমস্যাই হবে।
সর্বজনীন দুর্গাপুজোর ব্যয়বহুল আড়ম্বরের পক্ষে ও বিপক্ষে দুই বন্ধুর কাল্পনিক সংলাপ।
সুদীপ – কোথায় যাচ্ছিস সুশান্ত?
সুশান্ত – আজ থেকে আমাদের সর্বজনীন দুর্গাপুজোর চাঁদা তোলা শুরু হবে। মান্তুদার বাড়ির সামনে তাই হাজির হতে হবে দশটার মধ্যে। গতবারে বাজেট ছিল দেড় লাখ, এবারে মিটিংয়ে ঠিক হয়েছে দু-লাখ খরচ হবে।
সুদীপ – কিন্তু এত আড়ম্বর করে পুজো করার কোনো মানে হয় না। এই খরচের টাকাটা তো তুলবি আমাদেরই মতো সাধারণ মানুষের কাছ থেকে।
সুশান্ত – পাড়ায় আড়ম্বর করে পুজো হবে, প্যান্ডেলে বাহার থাকবে, আলোকসজ্জার চমক থাকবে তার আর্থিক চাপ তো পাড়ার লোককে সহ্য করতেই হবে।
সুদীপ – লোকে কষ্ট স্বীকার করে আড়ম্বর চায় না। শুধু উৎসবের জন্য, আমোদের জন্য এই খরচ অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়।
সুশান্ত – কিন্তু মানুষের জীবনে উৎসবের প্রয়োজনীয়তা কি তুই অস্বীকার করতে পারবি?
সুদীপ – উৎসবের প্রয়োজন তো অবশ্যই আছে, কিন্তু উৎসবকে যে ব্যয়বহুল হতে হবে, তার তো কোনো যুক্তি নেই। দুর্গাপুজো ব্যাপারটাই মানুষের কাছে একটা বিশেষ আনন্দ-উৎসবের প্রতীক। সেখানে আড়ম্বর না থাকলেও মানুষ প্রাণের আবেগে মেতে উঠবে।
সুশান্ত – আড়ম্বর থাকলে আরও বেশি করে মাততে পারবে।
সুদীপ – সত্যিই কি পারবে? এই ধর তোদের চাপে পড়ে সাধ্যের বাইরে চাঁদা দিতে বাধ্য হয় যারা, তারা কি কখনও মনেপ্রাণে এই উৎসবকে উৎসব বলে মানতে পারবে?
সুশান্ত – লোকে এত খরচ করে ভালো ভালো মন্দির বানায় কেন তবে?
সুদীপ – হ্যাঁ, ওইসব মন্দিরে মানুষের টাকার অহংকার যতটা প্রকাশ পায়, ভক্তির প্রকাশ ততটা থাকে না। বরং এসবে রেষারেষি আরও বেড়ে যায়।
পরিবেশদূষণ ও সভ্যতার সংকট বিষয়ে দুই ছাত্রবন্ধুর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ।
সুভাষ – ভাইকে সঙ্গে নিয়ে কোথায় গিয়েছিলি রাতুল? বেড়াতে?
রাতুল – না, না, বেড়াতে নয়, ডাক্তারবাবুর কাছে। আজ ক-দিন ধরে ও কানে ভালো শুনতে পাচ্ছে না।
সুভাষ – কানের আর কী দোষ? দিনরাত কানের ওপর শব্দের যে অত্যাচার চলছে, তাতে সকলেরই এই সমস্যা হতে পারে। কিন্তু আমরা এই শব্দদূষণ কিছুতেই বন্ধ করতে পারছি না।
রাতুল – শুধু শব্দদূষণের কথাই বা বলছিস কেন? প্রতি মুহূর্তে আরও কত রকমের দূষণ ঘটে চলেছে, ভেবে দ্যাখ।
সুভাষ – ঠিকই, বায়ুদূষণ, জলদূষণ , ভূমিদূষণ, সর্বত্রই তো দূষণ।
রাতুল – যানবাহন, কলকারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে বাতাস, পানীয় জলের উৎসগুলিতে মিশছে কলকারখানা থেকে নির্গত দূষিত বর্জ্য পদার্থ কিংবা বিভিন্ন কীটনাশক রাসায়নিক পদার্থ।
সুভাষ – এই কীটনাশক রাসায়নিকের ব্যবহার মাটিকেও তো দূষিত করছে।
রাতুল – নিশ্চয়ই। কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ কিংবা দুষিত আবর্জনাও মাটির স্বাভাবিক উর্বরতাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। সবচেয়ে ক্ষতি করছে বোধহয় প্লাস্টিকজাত আবর্জনা।
সুভাষ – মানুষ নিজেই তো এর জন্য অনেকটা দায়ী।
রাতুল – একেবারে খাঁটি কথা, একদিকে সে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে চরম উন্নতি ঘটিয়ে চলেছে, আর-এক দিকে সে ডেকে আনছে নিজের সর্বনাশ।
সুভাষ – দূষণরোধের ক্ষেত্রে গাছপালার একটা বড়ো ভূমিকা আছে। অথচ গাছপালা কেটে, বড়ো বড়ো অরণ্য ধ্বংস করে মানুষ বোধহয় পৃথিবীকে মরুভূমি বানিয়ে ফেলতে চায়। তবে আশার কথা, পৃথিবীজুড়ে পরিবেশ নিয়ে চিন্তাভাবনাও শুরু হয়েছে। এমনকি পরিবেশবিদ্যাকে এখন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবশ্যিক পাঠ্য বিষয় করে তোলা হচ্ছে।
রাতুল – কিন্তু শুধু আলোচনা বা পাঠ্যস্তরে কোনো বিষয়কে রেখে দিলেই চলবে না। চাই পরিবেশ ও পরিবেশদূষণ সম্পর্কে যথার্থ চেতনা, পরিবেশকে রক্ষা করার আন্তরিক উদ্যোগ।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি-এ বিষয়ে দুই বন্ধুর সংলাপ।
শুভ – কীরে সপ্তর্ষি, তোর বাজারের ব্যাগটা এত ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কেন?
সপ্তর্ষি – ফাঁকা ফাঁকা লাগবে না? বাজারে সব জিনিসের দর এত বেশি যে, ব্যাগভরতি বাজার করা আর হবে না। দিনকে দিন দাম যেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মাছ-মাংসের দিকে তাকাতে তো রীতিমতো ভয় করে। সবজি-বাজারে ঢুকেও স্বস্তি নেই।
শুভ – কিন্তু এভাবে যদি জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকে, তাহলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকাটাই তো সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।
সপ্তর্ষি – বিলাসদ্রব্যের দাম বাড়ুক ক্ষতি নেই। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র-চাল, ডাল, আটা, তেল, নুনের দাম যদি নাগালের বাইরে চলে যায় তাহলে তো আর কোনো পথ নেই। জামাকাপড়ের দাম কেমন বেড়েছে দেখেছিস?
শুভ – জামাকাপড়, জুতো, ওষুধ-কোনটা বাড়েনি বল?
সপ্তর্ষি – প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যেভাবে বাড়ছে, সেইভাবে তো মানুষের উপার্জন বাড়ছে না। মুশকিলটা এখানেই বেশি। অথচ সরকার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টাকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না।
শুভ – কিছু অসাধু ব্যবসায়ীও অনেক সময় বাজারে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়।
সপ্তর্ষি – হ্যাঁ, সে তো আছেই। লাভের জন্য এ কায়দা তো চলেই আসছে।
শুভ – আমাদের কি কিছুই করার নেই?
সপ্তর্ষি – নিশ্চয়ই আছে। নানাভাবে মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে। সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। যাই হোক, এখন আসি রে। আমি বাজার নিয়ে না ফিরলে মা রান্না বসাতে পারবে না।
সমাজে এখনও নারী দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক-এই বিতর্কিত বিষয় নিয়ে দুই বন্ধুর সংলাপ।
তাপস – কী এত মন দিয়ে পড়ছিস শুভম?
শুভম – আরে! তাপস যে! আয় আয়। এই একটা প্রবন্ধ পড়ছিলাম, ‘নারীমুক্তি ও আধুনিক সমাজ’।
তাপস – ওঃ, এই এক হয়েছে আজকাল! নারী-মুক্তি, নারী-স্বাধীনতা, নারীর মর্যাদা, নারীর অধিকার-নারীবাদী চিন্তাভাবনা যেন একটা ফ্যাশনে দাঁড়িয়ে গেছে।
শুভম – কেন এ কথা বলছিস?
তাপস – বলছি এ কারণে যে, পুরুষের মতোই সমাজে আজ নারীর সমান অধিকার, সমান মর্যাদা।
শুভম – সত্যিই কি তাই?
তাপস – নিশ্চয়ই। সাধারণ চাকরিবাকরির কথা না হয় বাদই দিলাম; শিল্পে, সাহিত্যে, দর্শনে, বিজ্ঞানে, রাজনীতিতে সর্বত্রই তো নারীবাহিনীর জয়যাত্রা রে! আমাদের এক বঙ্গললনা তো অ্যান্টার্কটিকা অভিযানেও অংশ নিয়েছে। কাজেই এ যুগে নারীর মর্যাদা, মুক্তি-এসব নিয়ে আন্দোলন ফ্যাশন নয় তো কী?
শুভম – আসলে তুই তেমন করে ভাবছিসই না। একেবারে জন্মের সময় থেকেই মেয়েরা এই সমাজে অবহেলিত, অবাঞ্ছিতও। হিসাব কষলেই দেখা যায় আজও বেশিরভাগ বাবা-মা কন্যাসন্তান চায় না, পুত্রসন্তান চায়। পাত্রীর রূপ-গুণ-চাকরি-সবকিছু না হলে চলে না কিন্তু পাত্রের শুধু আর্থিক সংগতি থাকলেই হল। একজন বিপত্নীক পুরুষ যত সহজে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিয়ে করে, আইন থাকা সত্ত্বেও একজন বিধবার পক্ষে কাজটা তত সহজ হয় না।
তাপস – তুই তাহলে বলতে চাস আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এখনও অনেকটাই পুরুষ-প্রভাবিত?
শুভম – আশ্চর্য হলেও এটাই বাস্তব তাপস। খেয়াল করে দ্যাখ, এখনও বহু আবেদনপত্রে বাবার নাম, স্বামীর নাম উল্লেখ করতেই হবে। ছেলেকে স্কুলে ভরতি করতে গেলে পিতৃপরিচয়কেই গুরুত্ব দেওয়া হয়।
তাপস – তোর সঙ্গে কথা বলে এখন আমার মনে হচ্ছে, সত্যিই এ বিষয়ে ভাবতে হবে।
নতুন পাঠ্যসূচির উপযোগিতা নিয়ে দুই অভিভাবকের মধ্যে সংলাপ রচনা করো।
১ম অভিভাবক – কী সমরেশবাবু, সাতসকালে হন্তদন্ত হয়ে চললেন কোথায়?
২য় অভিভাবক – আর বলবেন না, যাচ্ছি ছেলের বাংলা প্রজেক্টের জন্য খাতা কিনতে। সত্যি বুঝি না বাপু, এইসব করে ভাষাশিক্ষায় কীসের যে উন্নতি হবে।
১ম অভিভাবক – না সমরেশবাবু, আমার মনে হয় আপনার কোথাও একটু ভুল হচ্ছে। আপনি কি এই প্রজেক্টের বিষয়গুলো দেখেছেন?
২য় অভিভাবক – হ্যাঁ, দেখলাম তো! মডেল নির্মাণ, সমীক্ষা, প্রকৃতিপাঠ, সমীক্ষণ, সৃষ্টিশীল রচনা, শিখন সামগ্রীর সহায়তায় মূল্যায়ন। কিন্তু এসব কী কাজে যে লাগবে!
১ম অভিভাবক – বুঝতে পারছেন না? ধরুন, ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতাটা; সৈয়দ আলাওলের পদ্মাবতী কাব্য থেকে নেওয়া। মধ্যযুগের রচনা, ভাষার সঙ্গে এখনকার বাংলা ভাষার দুস্তর ফারাক। তা ‘সমীক্ষা’ অংশে যদি ছাত্ররা অপ্রচলিত শব্দগুলো চিহ্নিত করে উৎস নির্দেশ করতে শেখে, প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে পারে-তবে আদতে ভাষা সম্পর্কে তাদের পড়াশুনোর উপায়টা অনেক বেশি বৈজ্ঞানিক হয় না কি?
২য় অভিভাবক – এটা অবশ্য ঠিকই বলেছেন অনিলবাবু। আমিও দেখছিলাম বটে, ‘অসুখী একজন’ নামে একটা কবিতা আছে ওদের পাঠ্য-চিলির কবি পাবলো নেরুদার লেখা। গুজরাতি লেখক পান্নালাল প্যাটেলের ছোটোগল্প ‘অদল বদল’-ও রয়েছে। সত্যিই এর মাধ্যমে তো ওদের সর্বভারতীয় সাহিত্য এবং বিদেশি সাহিত্য সম্পর্কেও একটা ধারণা গড়ে উঠছে।
১ম অভিভাবক – তাহলেই বুঝুন! আসলে নতুন মানেই তাকে সন্দেহের চোখে দেখার ধারণাটা আমাদেরই আগে বদলে ফেলতে হবে। নইলে আমাদের ছেলেমেয়েদের মধ্যেও সংশয় থেকে যাবে।
রক্তদান শিবিরের আয়োজন উপলক্ষ্যে দুই নাগরিকের মধ্যে কাল্পনিক সংলাপ রচনা করো।
সমীরবাবু – কী ব্যাপার মুক্তিবাবু? কাল তো রবিবার! ছুটির দিন! তাহলে আজও এত ব্যস্ত হয়ে ছুটোছুটি করছেন যে!
মুক্তিপদবাবু – সে কী সমীরবাবু! আপনি তো দেখছি কিছুই জানেন না! কাল তো এখানে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে! আপনি আসবেন কিন্তু!
সমীরবাবু – না বাপু, আমি ওসবের মধ্যে নেই। এমনিতে টাকাপয়সা দিয়ে কোনো সাহায্য লাগলে বলুন, কিন্তু রক্ত দিতে পারব না।
মুক্তিপদবাবু – সমীরবাবু, আপনি নিশ্চয় জানেন যে, রক্তদান অমূল্য। টাকাপয়সা দিয়ে এর বিকল্প হয় না। আর সবচেয়ে বড়ো কথা, আপনি একজন সুস্থ, সবল, শিক্ষিত মানুষ। রক্ত দিলে শরীরের ক্ষতি হয়-এই ভুল ধারণা থেকে মানুষকে বের করে আনার জন্য কোথায় আপনি চেষ্টা চালাবেন, তা না, উলটে আপনি নিজে এ কথা বলছেন?
সমীরবাবু – আমি তো তা-ই জানতাম।
মুক্তিপদবাবু – ভুল জানতেন। রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলে, রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ঠিক থাকলে, নিয়মিত কোনো ওষুধ খেতে না হলে এবং কোনো রক্তবাহিত অসুখ না থাকলে যে কেউ রক্ত দিতে পারেন। সেই রক্তের ঘাটতি মিটিয়ে নতুন রক্ত তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া আমাদের দেহে সঙ্গে সঙ্গেই চালু হয়ে যায়।
সমীরবাবু – কিন্তু কার রক্তচাপ কত, তা বোঝা যাবে কীভাবে?
মুক্তিপদবাবু – আমরা এই শিবিরে একটি মেডিকেল টিম রাখছি, যেখানে পাঁচ জন ডাক্তার থাকবেন। তাঁরাই রক্তদাতাকে পরীক্ষা করবেন এবং সংগৃহীত রক্ত যথাযথ সংরক্ষণ করা হচ্ছে কি না তা-ও দেখবেন। তাহলে আর কোনো ভয় নেই তো?
সমীরবাবু – নাঃ। আপনার কথায় আমার ভুল ধারণাটা কেটে গেল। কাল আমি ঠিক আসব রক্ত দিতে।
গণতন্ত্রী ভারত বনাম সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা করো।
নিখিল – মনে আছে, আজ কত তারিখ?
দেবাশিস – হ্যাঁ, ২৬ নভেম্বর-সেই মুম্বই হানার দুঃস্বপ্ন আরও একটা বছর পুরোনো হয়ে গেল।
নিখিল – কিন্তু আমরা যারা সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত একটা দুনিয়ার স্বপ্ন দেখি, তাদের কাছে এই দিনগুলো আলাদা তাৎপর্য নিয়ে আসে। শান্তিপ্রিয় সমস্ত ভারতবাসীর কাছে শপথ নেওয়ার দিন হয়ে দাঁড়ায়।
দেবাশিস – সত্যি, আমি বুঝি না, সারা পৃথিবীতে ধর্মের নামে যে ধ্বংসলীলা, এতে কার, কী উদ্দেশ্য সফল হতে পারে?
নিখিল – বিষয়টা আসলে শুধু ধর্মীয় বা ব্যক্তিগত গোঁড়ামির সংকীর্ণতায় আর আটকে নেই। পারস্পরিক অসহনশীলতা ক্রমশ একটা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। বাবরি মসজিদ ধ্বংস, গুজরাত দাঙ্গা থেকে শুরু করে মুম্বই হামলা প্রত্যেকটা ঘটনা লক্ষ করলেই কথাটা বুঝবি।
দেবাশিস – কিন্তু, ভারতের ইতিহাস তো কখনোই ধর্মান্ধতাকে সমর্থন করে না।
নিখিল – নিশ্চয়ই আমাদের দেশ সর্ব ধর্মকে গ্রহণ করেছে। ধর্মাচরণে অধিকার দিয়েছে।
দেবাশিস – ঠিক। আমাদের দেশ সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক একটি দেশ। একে রক্ষা করতে গেলে ধর্মীয় উগ্রতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই হবে।
মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের উপযোগিতা বিষয়ে দুই শিক্ষকের সংলাপ।
কৌশিকবাবু – অভিরূপবাবু, আজ তো ক্লাস ইলেভেনে বাংলা খাতা দেখালেন; কেমন ফল করেছে ছেলেরা?
অভিরূপবাবু – একেবারেই ভালো না। দু-তিন জন বাদে বাকিদের অবস্থা ভয়াবহ। আসলে শুধু বিষয় নয়, ভাষা হিসেবেও এখনকার প্রজন্ম বাংলাকে গুরুত্বই দেয় না।
কৌশিকবাবু – ঠিকই বলেছেন। আমাদের স্কুলের কথাই ধরুন। বাংলা বাদ দিয়ে বাদবাকি সমস্ত বিষয়ই প্রত্যেকে ইংরেজিতে পড়ে, ভবিষ্যতেও পড়বে। তাই খামোখা বাংলা পড়ে বা বাংলায় কোনো বিষয় পড়ে কী লাভ-শুধু এই চিন্তাই তারা করে।
অভিরূপবাবু – শুধু পরীক্ষাব্যবস্থা নয়, গোটা শিক্ষাব্যবস্থাই এর জন্য দায়ী। উচ্চতর ক্ষেত্রে গবেষণা কিংবা পঠনপাঠন বাংলা মাধ্যমে করলে প্রভূত সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, সেটা ইংরেজিতে করলে সুফল মেলে-এই ধারণা যত দিন যাচ্ছে তত বদ্ধমূল হচ্ছে।
কৌশিকবাবু – বিজ্ঞানের ছাত্র এবং শিক্ষক হিসেবে আমারও একই অভিজ্ঞতা। লেখাপড়ার উপকরণ, বইপত্র-সবকিছুই ইংরেজিনির্ভর। তাই বিজ্ঞানে আগ্রহী, এমন মেধাবী ছেলেমেয়েরা শুধু ইংরেজি ভাষায় দুর্বল বলে গবেষণা থেকে পিছিয়ে আসে।
অভিরূপবাবু – এই ধারণা ভাঙতে আমাদেরই এগিয়ে আসা উচিত। মাতৃভাষায় পাঠ্যবই, গবেষণামূলক নিবন্ধ লিখতে হবে, আরও বেশি করে বিদেশি রচয়িতাদের রচনা অনুবাদ করতে হবে। তাতে করে ভাষা-সাহিত্য-বিজ্ঞান-সব কিছুই উপকৃত হবে।
বাংলা শিশু ও কিশোর সাহিত্যের বিভিন্ন চরিত্র নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা করো।
অজন্তা – আচ্ছা অরুন্ধতী, এবারের শুকতারাটা পড়লি?
অরুন্ধতী – হ্যাঁ, এবারের বাঁটুল আর বাহাদুর বেড়ালের কারসাজি একেবারে মনমাতানো। পত্রিকাটা হাতে পেলেই মেজাজ ভালো হয়ে যায়। আর কিশোর ভারতী? সেটা পড়েছিলি?
অজন্তা – পড়ব না আবার? বই খুলেই আগে দেখেছি নন্টে-ফন্টে বনাম কেল্টুদার সেই চিরকালীন ধুমধাড়াক্কা লড়াই। অন্যদিকে হাঁদা-ভোঁদাও অবশ্য এবারে পিসেমশাইকে ভালোই নাকানিচোবানি খাইয়েছে।
অরুন্ধতী – সত্যি, এখনকার কথা যদি ছেড়েও দিই, তবুও বাংলা সাহিত্য এর আগেও একাধিক অসামান্য চরিত্র পেয়েছে, যাদের উপস্থিতিতে কিশোর সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে।
অজন্তা – সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা যেমন, তেমনই প্রেমেন্দ্র মিত্রের ঘনাদা। কল্পবিজ্ঞানের জগতে কিন্তু ঘনাদা এক অন্য দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
অরুন্ধতী – আর টেনিদা? টেনিদাকে ভুললে চলবে? প্যালা, ক্যাবলা আর হাবুলকে ঘিরে টেনিদার অসামান্য সব কাণ্ডকারখানা, তেমনই অসাধারণ সংলাপ।
অজন্তা – আর-একটা কথা, ফেলুদার কথা বললেই সার দিয়ে আরও যে কত গোয়েন্দা চরিত্রের গল্প মনে পড়ে যায়! শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশ, নলিনী দাশের গোয়েন্দা গন্ডালু, নীহাররঞ্জন গুপ্তর কিরীটী, সমরেশ মজুমদারের অর্জুন, ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়ের পাণ্ডব গোয়েন্দা, লীলা মজুমদারের গুপি-পানু-ছোটোমামা—সবমিলিয়ে কিশোর সাহিত্য একেবারে জমজমাট।
অরুন্ধতী – সেইজন্যই তো, এসব চরিত্র বাংলার চিরকালীন সৃষ্টি।
ছাত্রজীবন থেকেই গ্রন্থাগার ব্যবহার অভ্যেস করা উচিত-এ-বিষয়ে দুই বন্ধুর কথোপকথন রচনা করো।
পিয়ালী – জানিস, গতকাল মালদহের জেলা লাইব্রেরিতে কার্ড করিয়ে এলাম। তোর সেখানে মেম্বারশিপ কার্ড করানো আছে?
তনুজা – অবশ্যই। স্কুলের লাইব্রেরিতে তো আর সব ধরনের বই পাওয়া যায় না। বিশেষ করে পড়ার বাইরের বইগুলি পেতে হলে তো পাড়ার লাইব্রেরিই ভরসা।
পিয়ালী – আসলে আমার মনে হয়, ছাত্রজীবন থেকেই সিলেবাসের বাইরের পড়াগুলির একটা অভ্যেস শুরু করা প্রয়োজন। নিয়মিত লাইব্রেরি গেলে এর পাশাপাশি দেশ-বিদেশের কত জার্নাল, একাধিক খবরের কাগজের সুলুকসন্ধানও মিলবে।
তনুজা – চিন্তাভাবনাকে পাঠক্রমে আটকে রাখা ঠিক নয়। বিশেষত, আমরা যারা উঠতি প্রজন্ম তাদের সাম্প্রতিক জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্যের পরীক্ষানিরীক্ষা, নিত্যনতুন উদ্ভাবন ও আবিষ্কার বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকা প্রয়োজন।
পিয়ালী – স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আমাদের বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিটিও নতুন করে সাজানো প্রয়োজন। নতুন যেসমস্ত বই প্রকাশিত হচ্ছে সেগুলি যাতে এখানে রাখা হয়, তার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
তনুজা – লেখাপড়া মানে তো শুধুই নম্বর পাওয়া নয়, চেষ্টা করতে হবে ধারণা ও জ্ঞানকে যতদূর সম্ভব বিস্তৃত করার। গ্রন্থাগার আমাদের সেই সুযোগ দেয়। অজস্র বই সেখানে। নিজেদের পছন্দমতো আমরা বেছে নিয়ে পড়তে পারি। মানুষের অন্যতম বন্ধু যে বই, তাকে আরও বেশি করে, নিজের করে পেতে পারি।
দুঃস্থ, মেধাবী ছাত্রদের বিনামূল্যে পুস্তক বিতরণ উপলক্ষ্যে দুই নাগরিকের মধ্যে কথোপকথন লেখো।
অভ্রনীল – সুমনবাবু, আপনাদের পাড়ার ক্লাব নেতাজি সংঘ আগামীকাল সন্ধেবেলা বিচিত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে না? আপনি থাকছেন তো সেখানে?
সুমন – অবশ্যই। অনুষ্ঠানের শেষে ক্লাবের তরফ থেকে মালদহ জেলার দুঃস্থ, মেধাবী মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে। আমিই এই আয়োজনের মুখ্য উদ্যোক্তা বলতে পারেন। শেষপর্যন্ত থাকবেন কিন্তু।
অভ্রনীল – সে তো বটেই। এত মহৎ উদ্দেশ্যর কথা ভেবেছেন ভেবেই ভীষণ ভালো লাগছে। ভাবুন তো, জেলারই কত ছেলেমেয়ে প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও আর্থিক দুরবস্থার কারণে মাঝপথে লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। টাকাপয়সা না থাকায় বই কিনতে পারছে না এমন ছেলেমেয়ে এখনও দেখতে পাওয়া যায়।
সুমন – সে-সমস্ত কথা ভেবেই তো এই আয়োজন। এ-ব্যাপারে আর্থিক সাহায্য করেছেন মালদহ রামকৃষ্ণ মিশনের সেক্রেটারি মহারাজ, জেলাশাসক, মালদহ কলেজের অধ্যক্ষ প্রমুখ। তাঁরা না থাকলে আমাদের এই প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হত।
অভ্রনীল – ছাত্রছাত্রীদের থেকে সাড়া কেমন পাচ্ছেন?
সুমন – ইতিমধ্যে প্রায় দু-শোর বেশি ছাত্রছাত্রী নাম লিখিয়ে গেছে। আজ শেষ দিন। আশা করছি, এই সংখ্যাটি আরও বাড়বে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, প্রকাশনালয়ও আমাদের সাহায্য করেছে বিনামূল্যে বই দিয়ে। আজও আমরা বইপত্র সংগ্রহ করব। আশা করছি আমাদের এই আয়োজন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।
অভ্রনীল – অবশ্যই হবে। দরকার পড়লে আমিও যথাসম্ভব সাহায্য করব। আমাদের সকলের উদ্যোগ ছাড়া এ-ধরনের পদক্ষেপ কখনোই সম্পূর্ণ হতে পারে না।
সুমন – ধন্যবাদ দাদা। আগামীকাল সন্ধেবেলা দেখা হচ্ছে তাহলে।
দেশভ্রমণের উপযোগিতা বিষয়ে দুই বন্ধুর কথোপকথন লেখো।
দিওতিমা – কী রে, রাজস্থান থেকে কবে ফিরলি?
শৌভিক – গতকাল রাতে। উফ্, যা ঘুরলাম না! হাওয়ামহল, পুষ্কর লেক, মাউন্ট আবু-প্রায় গোটা রাজস্থানের উল্লেখযোগ্য জায়গাগুলি দিন পনেরো ধরে চষে বেড়িয়েছি।
দিওতিমা – সত্যিই, আমাদের ব্যক্তিত্ব ও মনের বিকাশে দেশভ্রমণ অপরিহার্য। এখন পড়াশোনা, সিলেবাস আর পরীক্ষার চাপে অবসর খুঁজে পাওয়াই ভার।
শৌভিক – তবে আমার মনে হয় বছরে অন্তত একবার কি দু-বার একটু দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়া উচিত। যাত্রাপথ, বেড়ানোর স্থানের সৌন্দর্য দেখে আমাদের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার বিকশিত হয়। লেখাপড়ার চাপ থেকেও সাময়িক মুক্তি পাওয়া যায়।
দিওতিমা – কত বিচিত্র মানুষ, তাদের জীবন-জীবিকা, পোশাক-আশাক, খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে ধারণা অর্জন করি আমরা। মোটকথা আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়ে। বাস্তব জগৎ থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি, আর ক্লান্ডি, একঘেয়েমিও কাটিয়ে উঠতে পারি।
শৌভিক – শেকসপিয়র বলেছিলেন না, Home keeping youths ever having homely withs, কথাটা একেবারে সত্যি। সাধারণত বই পড়ে আমরা যে ধারণা অর্জন করি সেসব পরোক্ষ জ্ঞান; দেশভ্রমণের মাধ্যমেই আমরা প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ করি। ভ্রমণের ফলেই কোনো জিনিস আমাদের মনে স্থায়ীভাবে স্মৃতির আকারে জমা হয়ে থাকে। এর ফলেই আমাদের মন প্রসারিত হয়, চিন্তা-চেতনা বিকাশ লাভ করে।
দিওতিমা – ঠিকই বলেছিস। মাধ্যমিক দেওয়ার পর আমি ভেবেই রেখেছি কাশ্মীর বেড়াতে যাব। তুইও ফের তখন নতুন কোনো জায়গা থেকে ঘুরে আসতে পারিস।
শৌভিক – আমরাও কাশ্মীর যাব ঠিক করেছি। ভালোই হল, একসঙ্গে যাওয়া যাবে।
ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটা কাল্পনিক সংলাপ রচনা।
শুভদীপ – সায়ন, আনন্দপুরী স্কুলের ঘটনাটা শুনলি?
সায়ন – কোন্ ঘটনাটা বলত? ওই অলোক স্যারের ঘটনাটা।
শুভদীপ – হ্যাঁ।
সায়ন – সত্যি রে, ছাত্র হিসেবে মুখ কালো হয়ে গেল আমাদের। পরীক্ষায় নকল করতে বাধা দিয়েছেন বলে ছাত্রদের হাতে এই অপমান!
শুভদীপ – দ্যাখ, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, কাগজ খুললেই দেখবি –
সায়ন – শিক্ষকদের সাথে ছাত্রদের সম্পর্কটা যেন কীরকম হয়ে গিয়েছে। শ্রদ্ধাবোধ, সম্মান দেখানো-বিষয়গুলো ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে।
শুভদীপ – বাবার কাছে শুনছিলাম, ওনাদের সময়ে সবাই শিক্ষকদের কীরকম ভয় করতেন, মেনে চলতেন।
সায়ন – হ্যাঁ, আমার বাবাও বলতেন যে, বাবা-মায়ের পরেই ওঁদের জীবনে ছিল শিক্ষকের স্থান।
শুভদীপ – তবে আমার কী মনে হয় জানিস তো, গোটা সমাজেই কেমন একটা অসহিষ্নুতা, বিশৃঙ্খলা এসে গিয়েছে। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কেও সেটাই প্রভাব ফেলছে।
সায়ন – হয়তো। তবে এই অবস্থা না পালটালে খুবই শিগগিরি গোটা শিক্ষাব্যবস্থাটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
শুভদীপ – একদম ঠিক বলেছিস।
ফুটপাথ আর পায়ে চলার পথ নয়-এ বিষয়ে দুই সহযাত্রীর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ রচনা।
প্রদীপবাবু – কী হল দীনেশবাবু, হাতে ব্যান্ডেজ কেন?
দীনেশবাবু – আর দাদা, কপালে থাকলে যা হয়! গড়িয়াহাটে অটোর ধাক্কা, হুমড়ি খেয়ে পড়লাম।
প্রদীপবাবু – নিশ্চয়ই রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন।
দীনেশবাবু – হাঁটছিলাম না, দাদা হাঁটতে বাধ্য হয়েছিলাম। গড়িয়াহাটে ফুটপাথ বলে কিছু আছে? সবই তো হকারদের দখলে।
প্রদীপবাবু – ঠিক ঠিক। এ এক সমস্যা। গড়িয়াহাট কেন যাদবপুর, শিয়ালদহ, হাতিবাগান-এ গোটা কলকাতার সমস্যা।
দীনেশবাবু – প্রশাসনও এ ব্যাপারে চূড়ান্ত নির্বিকার। অথচ আমরা পড়ি আছাড় খেয়ে।
প্রদীপবাবু – একেবারেই করছে না তা ঠিক না, কয়েক বছর আগে আপনার মনে আছে কিনা জানি না, কলকাতা পুরসভা গড়িয়াহাটে হকার উচ্ছেদের চেষ্টা করেছিল। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হয়।
দীনেশবাবু – হ্যাঁ, হ্যাঁ, মনে আছে। কিন্তু লাভজনক হবে না বলে অনেকেই নতুন জায়গায় যায়নি। কিছুদিন পরেই আবার ফিরে আসে।
প্রদীপবাবু – প্রশাসনও বেশি কিছু বলে না, অনেক লোকের রুটি রুজির ব্যাপার তো!
দীনেশবাবু – এই হল আমাদের সমস্যা। জনগণের স্বার্থে যে ঠিক কোনটা-হকারের না পথচারীর-কে ঠিক করবে?
প্রদীপবাবু – হাঃ হাঃ! চলুন না রেগে ফুটপাথের এক কাপ চা হয়ে যাক।
নিরাপত্তা প্রসঙ্গে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা করো।
বৃষ্টি – কাল স্কুলের সামনে অ্যাকসিডেন্টটা দেখলি।
প্রতাপ – ইশ! কী ভয়ানক! বাচ্চাটাকে একেবারে পিষে দিয়ে গেল!
বৃষ্টি – বেপরোয়া গাড়ি চালানো যে আরও কত প্রাণ কেড়ে নেবে।
প্রতাপ – আমি সেদিন কাগজে দেখছিলাম। বছরে প্রায় দেড় লক্ষের কাছাকাছি লোক ভারতে পথ দুর্ঘটনায় মারা যায়।
বৃষ্টি – কত পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ, কত প্রচার হল-কিছুতেই তো কিছু হয় না।
প্রতাপ – মানুষের সচেতনতাটা খুব দরকার। নিয়ম মেনে রাস্তা পারাপার, গাড়ি বেপরোয়াভাবে না চালানো, সিগন্যাল মেনে চলা-এসব খুব দরকার।
বৃষ্টি – অনেক ড্রাইভারই অ্যালকোহলিক থাকে। তাছাড়া খেয়াল কর আমাদের দেশে গাড়ি কেনার সময় সবাই তেল সাশ্রয়ী গাড়ির দিকে ঝোঁকে, কম দামের এইসব গাড়িতে সেফটি ফিচার্স কিন্তু অনেক কম থাকে। ছোটোখাটো দুর্ঘটনাও বড়ো হয়ে দেখা দেয়।
প্রতাপ – সবসময় গাড়ি বা ড্রাইভার নয়, রাস্তাঘাটও দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফুটপাথ ক্রমশ দখল হয়ে যাওয়াটাও দুর্ঘটনার একটা কারণ।
বৃষ্টি – সকলে মিলে সচেতন হলেই একমাত্র এই বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
চলভাষের ভালোমন্দ নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ রচনা করো।
সুযশ – কী রে আবির, নতুন ফোন পেলি নাকি?
আবির – নারে ভাই, আজ গানের ক্লাস থেকে ফিরতে দেরি হবে বলে মা নিজের ফোনটা আমাকে দিয়েছে।
সুযশ – তাই বল। তুই তো এতদিন মোবাইল-বিরোধী ছিলিস।
আবির – না, মোবাইল-বিরোধী ঠিক না, মোবাইলে অতিরিক্ত নির্ভরতার বিরোধী আমি।
সুযশ – কিন্তু দ্যাখ, এই যে কাকিমা তোর হাতে মোবাইল দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকছেন যে তোর খবরাখবর ঠিকঠাক পাবেন। এ তো মোবাইলের জন্য। তারপর ধর ভিডিয়ো গেমস, গান শোনা, সিনেমা-বিনোদনের কত ব্যবস্থা।
আবির – ওটাই তো সর্বনাশ করল রে! অ্যাডিকশন তৈরি করে দিচ্ছে। পড়াশোনা ফেলে বন্ধুগুলো মোবাইল ঘেঁটে যাচ্ছে দিনরাত-দেখছিস তো চারপাশে।
সুযশ – ভালো দিকটাও দ্যাখ। যেখানে খুশি নেট দুনিয়ায় চল-সব তথ্য যখন তখন হাতের মুঠোয়। এমনকি আস্ত একটা ডিকসশনারিও রাখা যায় ফোনে। কত সময় বাঁচে বল তো।
আবির – আমি তো ভালোটাকে অস্বীকার করছি না, কিন্তু মোবাইলের নেশায় কত দুর্ঘটনা, কত মৃত্যু ঘটছে। তা ছাড়া আমার তো মনে হয় ব্যক্তিগত জীবনে নানা সমস্যা তৈরি করে মোবাইল। আমার কথা বলা অন্যের অসুবিধা করছে কি না অনেক সময়েই খেয়াল থাকে না।
সুযশ – আসলে কে কীভাবে মোবাইল ব্যবহার করবে, সেটাই আসল। ওখানেই যত সমস্যা।
আবির – আমিও তাই মনে করি।
বৃক্ষরোপণের উপযোগিতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ রচনা করো।
অথবা, বৃক্ষরোপণ-উপযোগিতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ রচনা করো।
কৌশিক – দেখলি, আমাদের স্কুলের সামনের এত বড়ো বকুল গাছটা কেটে ফেলা হল! শুনলাম ওখানে ফ্ল্যাট বানানো হবে।
অভীক – আর বলিস না! মনটা এত খারাপ লাগছে, যে ওদিকে আর তাকাতেই পারছি না। সেই কোন্ ছোট্টবেলায় প্রথম স্কুলে আসার দিনটা থেকে গাছটার সঙ্গে বন্ধুত্ব, চেনাশোনা। মনে আছে, ছুটির পরে ওই বিশাল গাছটার নীচে বাঁধানো বেদিটায় চড়ে কত খেলেছি।
কৌশিক – সভ্যতার গর্বে উন্মত্ত মানুষ যেন ভুলেই গিয়েছে গাছের অবদান। নগরায়ণের এই হামলে পড়া নেশায় তরাই থেকে সুন্দরবন-সর্বত্রই চলেছে অরণ্যনিধনের এই যজ্ঞ।
অভীক – কেউ একবার অন্তত এটাও তো ভেবে দেখুক যে, এতে ক্ষতি শেষপর্যন্ত নিজেদেরই হয় বা হচ্ছে। এই ভয়ানক লোভে মানুষ নিজের সভ্যতাকেই ধ্বংস করছে! পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়ছে, মেরুপ্রদেশের বরফ গলে যাচ্ছে, বেড়ে যাচ্ছে পৃথিবীর জলস্তর, নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য-গাছপালা কমে যাওয়ায় অতিবেগুনি রশ্মিও প্রভাব ফেলছে পরিবেশের ওপরে। সবমিলিয়ে নানান অসুখবিসুখের প্রকোপও বেড়েই চলেছে।
কৌশিক – শুধু তা-ই নয়, তুই কি জানিস, বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো দেশের আয়তনের তুলনায় অরণ্যের পরিমাণ যখন ৩৫ শতাংশের নীচে নেমে যাবে, তখনই সেই দেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে। ভারত-সহ পৃথিবীর বহু দেশই এখন এই সমস্যার সম্মুখীন।
অভীক – আসলে কী বল তো, ‘একটি গাছ একটি প্রাণ’-এই বাক্যটিকে নিছক স্লোগান নয়, জীবনযাপনের এক অনিবার্য শর্ত করে তুলতে হবে। নইলে এই ভয়ানক ধ্বংসের হাত থেকে কোনোক্রমেই মুক্তি পাওয়া যাবে না।
নারীস্বাধীনতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে কাল্পনিক সংলাপ রচনা করো।
সুমিতা – আজ নাকি বিশ্ব নারী দিবস?
দীপা – মনে হয়, তাই-ই। সেইজন্য আমাদের পাড়ার ক্লাবে অনুষ্ঠান হচ্ছে।
সুমিতা – কী হয় বল তো নারী দিবস পালন করে? নারীরা তো গৃহকোণে বন্দি। কবে তারা সংসারের জেলখানা থেকে মুক্তি পাবে?
দীপা – মুক্তির পথ হল লেখাপড়া শেখা। আজও মেয়েদের চলাফেরার রাস্তা মসৃণ নয়। অফিস, আদালত, স্কুল, কলেজ-সব জায়গায় তারা পুরুষের অধীন।
সুমিতা – কিন্তু নারীকে স্বাধীনতা না-দিলে তো সমাজ কখনও এগোবে না। কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন – এই বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, / অর্ধেক তার সৃজিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
দীপা – সে-কথা আর কে মানে বল! স্বামী বিবেকানন্দও তো বলেছেন – ভারতের দুর্দশার অন্যতম কারণ হল নারীজাতির প্রতি অবহেলা।
সুমিতা – তবে আমার মতে, নারীকেই বেরিয়ে আসতে হবে পুরুষের কারাগার থেকে। শিক্ষা ও সাহসে পুরুষের সমকক্ষ হতে হবে। অংশগ্রহণ করতে হবে বিভিন্ন সামাজিক কাজে।
দীপা – তবে বর্তমানে দেশের প্রশাসনে নারীদের অংশগ্রহণ আবশ্যিক হয়েছে। বিশেষ সংরক্ষণব্যবস্থা নারীকে অনেক সুযোগ করে দিয়েছে।
সুমিতা – তবুও নারী দুর্বল। একজন পুরুষ ট্রেনে-বাসে নির্ভয়ে একা একা যাতায়াত করতে পারে। কিন্তু নারীর পক্ষে তা সম্ভব নয়। খবরের কাগজ খুললেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
দীপা – আমার মনে হয়, পাড়ায় পাড়ায় নারীবাহিনী গড়ে তুলে এসবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। পণপ্রথা যে আজও বেঁচে আছে, তার কারণ নারীর দুর্বলতা। নারী বিদ্রোহিনী হয়ে উঠলে এই প্রথারও অবলুপ্তি ঘটবে।
সুমিতা – তাহলে চল, আমরা স্কুলজীবন থেকেই শপথ নিই, দেশ ও দশের কাজে পুরুষের মতো আমরাও অংশগ্রহণ করব। পুরুষতন্ত্র বলে কিছু মানব না। আমাদের একটাই ‘তন্ত্র’ হবে-সেটি হল ‘মানবতন্ত্র’।
দীপা – চল, তাহলে আজ থেকেই এই ভাবনা নিয়ে জীবনযাত্রা শুরু করি।
কুসংস্কার প্রতিরোধে বিজ্ঞান মনস্কাতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে কাল্পনিক সংলাপ রচনা করো।
বৃষ্টি – কিরে মেঘা, হাসপাতালের সামনে আজ খুব ভিড় দেখলাম।
মেঘা – আরে একজন লোককে সাপে কামড়ে ছিল-লোকটি মারা গিয়েছে বলে হাসপাতালে ভাঙচুড় হল।
বৃষ্টি – কেন চিকিৎসা কি ঠিকঠাক হয়নি!
মেঘা – আরে চিকিৎসা হবে কি! শুনলাম তো লোকটাকে যখন আনা হয়েছে তখনই তার মরোমরো অবস্থা। ওঝার কাছে একদিন ফেলে রেখেছিল।
বৃষ্টি – তাহলে আর রুগি বাঁচবে কী করে।
মেঘা – আমাদের দেশের এই হল মুশকিল। মানুষ এখনও সচেতন হল না। কুসংস্কার একেবারে মনে বাসা বেঁধে আছে।
বৃষ্টি – সর্বত্র। নাহলে চ্যানেলে চ্যানেলে জ্যোতিষীর ছয়লাপ হয়।
মেঘা – কত সর্বস্বান্ত হওয়া, কত মৃত্যু আরও যে অপেক্ষা করে আছে! মানুষ আর কবে বুঝবে!
আশা করি, আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের সংলাপ রচনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে পেরেছে। এই আর্টিকেলে আমরা সংলাপ রচনার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছি, যেমন সংলাপ রচনার সংজ্ঞা, ধরন, উপাদান, লেখার নিয়ম এবং উদাহরণ।
আপনারা যদি এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে নিয়মিত অনুশীলন করেন, তাহলে অবশ্যই মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফল করতে পারবেন।