জীবনের প্রবাহমানতা হল জীববিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই অধ্যায়ে আমরা জীবের বংশগতি ও পরিবর্তনের বিষয়ে জানব। জীবের বংশগতি হল একটি জৈবিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে পিতামাতার বৈশিষ্ট্য তাদের সন্তানদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়। পরিবর্তন হল জীবের বৈশিষ্ট্যগুলিতে দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন।
ক্রোমোজোম কাকে বলে?
ইউক্যারিওটিক কোশের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত DNA অণু ও প্রোটিন দ্বারা গঠিত সুত্রাকার বা দণ্ডাকার আত্মপ্রজননশীল যে সজীব সংগঠন জীবের যাবতীয় বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারক, বাহক ও নিয়ন্ত্রকরূপে কাজ করে তাকে ক্রোমোজোম বলে।
ক্রোমোজোম কত প্রকার ও কী কী?
কাজের ভিত্তিতে ক্রোমোজোম প্রধানত দুই প্রকার – অটোজোম বা দেহ ক্রোমোজোম এবং সেক্স ক্রোমোজোম বা যৌন ক্রোমোজোম বা অ্যালোজোম।
অটোজোম বলতে কী বোঝ?
নিউক্লিয়াসে অবস্থিত দেহজ বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী ক্রোমোজোমগুলিকে অটোজোম বলে। মানুষের দেহকোশের 23 জোড়া ক্রোমোজোমের মধ্যে 22 জোড়া হল অটোজোম।
অ্যালোজোম বা সেক্স কোমোজোম বলতে কী বোঝ?
যেসব ক্রোমোজোম প্রাণীদেহের লিঙ্গ নির্ধারণ করে তাদের সেক্স ক্রোমোজোম বা অ্যালোজোম বলে। মানুষের দেহকোশে একজোড়া অ্যালোজোম বর্তমান। মানুষের অ্যালোজোম দুই প্রকার, যেমন — X এবং Y
সমসংস্থ বা হোমোলোগাস ক্রোমোজোম কাকে বলে?
ডিপ্লয়েড (2n) কোশে বিন্যস্ত সম-আকৃতি, সম দৈর্ঘ্য ও সমজিনসজ্জাবিশিষ্ট পিতা ও মাতা থেকে একটি করে পাওয়া মোট একজোড়া একই প্রকার ক্রোমোজোম জোড়াকে সমসংস্থ বা হোমোলোগাস ক্রোমোজোম বলে।
ক্রোমাটিড কাকে বলে?
কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় প্রতিটি ক্রোমোজোমে দুটি অনুদৈর্ঘ্য প্রতিসম অর্ধাংশ পাওয়া যায়। এরা ক্রোমোজোমের মাঝে অবস্থিত বিশেষ খাঁজ তথা সেন্ট্রোমিয়ার নামাক অংশে
পরস্পর যুক্ত থাকে। এদের প্রতিটিকে ক্রোমাটিড বলে।
নিউক্লিওটাইড কী?
DNA অণুতে একটি নাইট্রোজেন ঘটিত ক্ষারক, একটি ফসফেট ও একটি ডি-অক্সিরাইবোজ শর্করা দ্বারা গঠিত গঠনগত একককে নিউক্লিওটাইড বলে। [RNA অণুতেও নিউক্লিওটাইড থাকে। তবে সেখানে ডিঅক্সিরাইবোজের পরিবর্তে রাইবোজ শর্করা বর্তমান।]
নিউক্লিওসাইড কী?
DNA অণুতে একটি নাইট্রোজেন ঘটিত ক্ষারক ও একটি ডি-অক্সিরাইবোজ শর্করা দ্বারা গঠিত অংশকে নিউক্লিওসাইড বলে। [RNA অণুর নিউক্লিওসাইডে ডি-অক্সিরাইবোজ-এর পরিবর্তে রাইবোজ শর্করা থাকে।]
ক্রোমোমিয়ার কাকে বলে?
ক্রোমোজোমের ক্রোমোনিমা তন্তুর মধ্যে সমদূরত্বে অধিক কুণ্ডলিত হয়ে যে দানাদার গঠন থাকে, তাকে ক্রোমোমিয়ার বলে।
DNA-এর পুরো নাম কী? এটি কোথায় অবস্থিত?
DNA-এর সম্পূর্ণ নাম – ডি-অক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড।
অবস্থান – DNA প্রধানত নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোমে অবস্থিত। এ ছাড়া মাইটোকনড্রিয়া ও প্লাসটিডেও DNA উপস্থিত।
DNA-এর উপাদান কী?
DNA-এর উপাদানগুলি হল — 1. নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষারক অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, থাইমিন এবং সাইটোসিন, 2. ফসফেট এবং 3. শর্করা (ডি-অক্সিরাইবোজ শর্করা)।
জিন কী?
DNA অণুর যে গঠনগত ও কার্যগত একক প্রোটিন সংশ্লেষের সংকেত বহন করে, তাকে জিন বলে। জিনকে বংশগতির একক বলা হয়।
RNA-এর পুরো নাম কী? এটি কোথায় অবস্থিত?
RNA-এর সম্পূর্ণ নাম – রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড।
অবস্থান – RNA প্রধানত নিউক্লিয়াস ও রাইবোজোমে অবস্থিত।
RNA-এর উপাদান কী?
RNA-এর উপাদানগুলি হল – 1. নাইট্রোজেনযুক্ত ক্ষারক — অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, ইউরাসিল এবং সাইটোসিন, 2. ফসফেট এবং 3. শর্করা (রাইবোজ শর্করা)।
RNA কত প্রকার ও কী কী?
RNA তিন প্রকার, যথা — মেসোর RNA (mRNA), রাইবোজোমাল RNA (rRNA) এবং ট্রান্সফার RNA (tRNA)।
ক্রোমাটিন জালিকা কাকে বলে?
কোশের নিউক্লিয়াসের মধ্যে অবস্থিত নিউক্লিওপ্রোটিন দ্বারা গঠিত, ক্ষারীয় রঞ্জকে রঞ্জিত, প্যাঁচানো সূত্রাকার অংশকে ক্রোমাটিন জালিকা বলে।
ক্রোমাটিন জালিকার কাজ কী?
ক্রোমাটিন জালিকা জিন ধারণ করে। তাই ক্রোমাটিন জালিকা জীবকোশের বংশগত বস্তু বা জেনেটিক পদার্থের ধারক ও বাহক হিসেবে কাজ করে।
ইউক্রোমাটিন কাকে বলে?
ক্রোমাটিন তন্তুর যে অংশগুলি সক্রিয় জিনসম্পন্ন, কম কুণ্ডলীকৃত ও ক্ষারীয় রঙকে হালকাভাবে রঞ্জিত হয়, তাদের ইউক্রোমাটিন বলে। এই অংশ জিনগতভাবে সক্রিয় এবং RNA উৎপাদনে অংশগ্রহণ করে।
হেটেরোক্রোমাটিন কাকে বলে?
ক্রোমাটিন তন্তুর যে অংশগুলি স্বল্প জিনসমন্বিত, অধিক কুণ্ডলীকৃত এবং ক্ষারীয় রঙকে গাঢ়ভাবে রঞ্জিত হয়, তাদের হেটেরোক্রোমাটিন বলে। মূলত জিনের কাজ নিয়ন্ত্রণ করা ও ক্রোমোজোমের অখণ্ডতা বজায় রাখা এর কাজ।
লোকাস কী?
ক্রোমোজোমে প্রতিটি জিনের অবস্থান নির্দিষ্ট থাকে, অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট জিন একটি নির্দিষ্ট ক্রোমোজোমের একটি নির্দিষ্ট অংশে অবস্থান করে। ক্রোমোজোমের ওই নির্দিষ্ট অংশটিকে ওই বিশেষ ক্রোমোজোমের লোকাস বলে।
প্রাথমিক খাঁজ বলতে কী বোঝ?
সেন্ট্রোমিয়ার-যুক্ত ক্রোমোজোমের অরঞ্জিত সংকোচন স্থান, যেখানে ক্রোমোজোম বাহু ভাঁজ হয়, তাকে প্রাথমিক খাঁজ বা মুখ্য সংকোচন বলে।
গৌণ খাঁজ বলতে কী বোঝ?
ক্রোমোজোমে মুখ্য খাঁজ ছাড়াও এক বা একাধিক অরঞ্জিত অংশ থাকলে তাকে গৌণ খাঁজ বলা হয়। এই স্থানে নিউক্লিওলাস যুক্ত থাকে এবং স্থানটি নিউক্লিওলাসের গঠনে সাহায্য করে।
ইউক্রোমাটিন ও হেটেরোক্রোমাটিনের দুটি পার্থক্য লেখো।
ইউক্রোমাটিন ও হেটারোক্রোমাটিন এর পার্থক্য গুলি হল —
বিষয় | ইউক্রোমাটিন | হেটেরো- ক্রোমাটিন |
ইনটারফেজ অবস্থায় কুণ্ডলী | কম প্যাচানো কুণ্ডলী গঠন করে অবস্থান করে। | দৃঢ়ভাবে পেঁচিয়ে কুণ্ডলী গঠন করে অবস্থান করে। |
রঞ্জন | হালকাভাবে রঞ্জিত হয়। | সর্বদা গাঢ়ভাবে রঞ্জিত হয়। |
প্রাথমিক খাঁজ ও গৌণ খাঁজের পার্থক্যগুলি হল —
বিষয় | প্রাথমিক খাঁজ | গৌণ খাঁজ |
খাজের ধরন | ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার সংলগ্ন খাঁজ| | প্রাথমিক খাঁজ ছাড়া ক্রোমোজোমের অন্য খাঁজ| |
বেমের সঙ্গে সম্পর্ক | কোশ বিভাজনের সময়ে বেমতত্ত্বর সঙ্গে এটি আবদ্ধ হয়। | বেমতত্ত্বর সঙ্গে এটি সংযুক্ত হয় না। |
কাজ | সেন্ট্রোমিয়ার ধারণ করে। | নিউক্লিয়াস গঠন করে। |
হিস্টোন প্রোটিন কী?
DNA অণুর সঙ্গে যুক্ত থাকা প্রধান গঠনমূলক ক্ষারকীয় প্রোটিন হল হিস্টোন প্রোটিন। পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ হিস্টোন প্রোটিনের উপস্থিতি সম্পর্কে জানা গেছে। এগুলি হল — H1, H2A, H2B, H3 এবং H4|
নন্-হিস্টোন প্রোটিন কী?
DNA অণুর সঙ্গে যুক্ত থাকা আম্লিক প্রোটিন হল নন্-হিস্টোন প্রোটিন। এই প্রোটিনের কাজ হল জিনের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা।
স্থায়ী বা কস্টিটিউটিভ হেটেরোক্রোমাটিন কাকে বলে ,কোথায় দেখা যায়?
যে হেটেরোক্রোমাটিন সব কোশের নিউক্লিয়াসে সর্বদাই উপস্থিত থাকে, তাকে স্থায়ী বা কস্টিটিউটিভ হেটেরোক্রোমাটিন বলে। এই হেটেরোক্রোমাটিন সেন্ট্রোমিয়ার, টেলোমিয়ার, নিউক্লিওলার অরগানাইজার অংশে দেখা যায়।
অস্থায়ী বা ফ্যাকালটেটিভ হেটেরোক্রোমাটিন কাকে বলে ও এটি কোথায় দেখা যায়?
যে হেটেরোক্রোমাটিন বিশেষ কয়েকটি কোশে বা কোনো নির্দিষ্ট জীবদেহকোশে অল্প সময়ের জন্য উৎপন্ন হয়, তাকে অস্থায়ী ফ্যাকালটেটিড হেটেরোক্রোমাটিন বলে। মানুষের ক্ষেত্রে মহিলাদের দেহকোশের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত বারবডি হল অস্থায়ী হেটেরোক্রোমাটিন।
প্যাঁচানো হেটেরোক্রোমাটিন বলতে কী বোঝ?
যে হেটেরোক্রোমাটিন ইনটারফেজ দশায় প্যাচানো অবস্থায় থাকে এবং সব কোশে সমানভাবে উপস্থিত থাকে না, তাকে প্যাচানো হেটেরোক্রোমাটিন বলে। এইজাতীয় হেটেরোক্রোমাটিন জিনের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
হ্যাপ্লয়েড কোণ কী?
যে সকল জীবকোশে ডিপ্লয়েড সংখ্যার অর্ধেক ক্রোমোজোম থাকে, তাদের হ্যাপ্লয়েড কোশ বলে। উদাহরণ — মানুষের শুক্রাণু বা ডিম্বাণুতে ক্রোমোজোম সংখ্যা দেহকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেক হয়, এদেরকে হ্যাপ্লয়েড কোশ বলে, অর্থাৎ জননকোশ হল হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোমযুক্ত কোশ।
ডিপ্লয়েড কোশ কী?
যে সকল জীবকোশে বিভিন্ন রকমের ক্রোমোজোম জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে, তাদের ডিপ্লয়েড (2n) কোশ বা ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোমযুক্ত কোশ বলে।
44XY এবং 44XX ক্রোমোজোম বলতে কী বোঝ?
মানুষের ক্ষেত্রে 46টি ক্রোমোজোম থাকে। এর মধ্যে। পুরুষের দেহে 44টি অটোজোম এবং XY নামে দুটি যৌন ক্রোমোজোম এবং মহিলার দেহে 44টি অটোজোম এবং XX নামে দুটি যৌন ক্রোমোজোম থাকে। সুতরাং, 44A + XY বলতে পুরুষ ও 44A + XX বলতে মহিলাকে বোঝায়।
কোশ বিভাজন কাকে বলে?
যে পদ্ধতিতে একটি মাতৃকোশ বা জনিতৃ কোশ বিভাজিত হয়ে দুই বা ততোধিক নতুন অপত্য কোশ সৃষ্টি করে, তাকে কোশ বিভাজন বলে।
কোশ বিভাজন কত প্রকার ও কী কী?
কোশ বিভাজন তিন প্রকার, যথা — অ্যামাইটোসিস, মাইটোসিস ও মিয়োসিস। একটি মাতৃকোশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভাজিত হতে পারে।
প্রত্যেক প্রকার কোশ বিভাজনের উদাহরণ দাও।
1. অ্যামাইটোসিস — ঈস্ট, অ্যামিবা ইত্যাদিতে সম্পন্ন হয়।
2. মাইটোসিস — উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহকোশে সম্পন্ন হয়।
3. মিয়োসিস – উদ্ভিদ ও প্রাণীর জনন-মাতৃকোশে সম্পন্ন হয়।
কোশ বিভাজনের মূল তিনটি তাৎপর্য কী কী?
কোশ বিভাজনের প্রধান তিনটি তাৎপর্য হল — 1. কোশের সংখ্যাবৃদ্ধি, 2. প্রজননের জন্য জননকোশ গঠন এবং 3. আঘাত ও ক্ষতস্থান নিরাময়।
জীবদেহে কোশ বিভাজনের উদ্দেশ্য কী?
জীবদেহে কোশ বিভাজনের উদ্দেশ্য হল নতুন কোশ উৎপাদনের মাধ্যমে পরিস্ফুরণ ও প্রয়োজনে রূপান্তরের অবকাশ সৃষ্টি করে জীবদেহের দৈর্ঘ্য ও আয়তন বৃদ্ধি করা, ক্ষয়পূরণ করা এবং জননের আগে জননকোশ বা গ্যামেটের সৃষ্টি করা।
কোশ বিভাজনের সঙ্গে বৃদ্ধির সম্পর্ক লেখো।
মাইটোসিস কোশ বিভাজনে সৃষ্টি হওয়া অপত্য কোশগুলি পরিণত হলে ওই কোশগুলির পুনরায় মাইটোসিস বিভাজন ঘটে। সেইজন্য একদিকে যেমন বহুকোশী জীবের দেহে কোশের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, অপরদিকে কোশগুলি পুষ্টি সংগ্রহ করে আকারে ও আয়তনে বড়ো হয়। ফলে সামগ্রিকভাবে জীবদেহেরই বৃদ্ধি হয়। সেইজন্য বলা হয় মাইটোসিস বিভাজনের দ্বারা জীবদেহের আকার ও আয়তন বৃদ্ধি পায়। সুতরাং, মাইটোসিস বিভাজন হল কারণ এবং বৃদ্ধি হল তার ফল।
কোণচক্র কাকে বলে?
কোশ বিভাজনে নতুন কোশ সৃষ্টি থেকে পরবর্তী কোশ বিভাজন পর্যন্ত কোনো কোশে সংঘটিত ধারাবাহিক ছন্দোবদ্ধ ও চক্রাকার ঘটনাক্রমকে কোশচক্র বলে।
কোশচক্রের বিভিন্ন দশার নাম লেখো।
কোশচক্রের প্রধানত দুটি দশা, ইনটারফেজ বা অবিভাজন দশা ও মাইটোটিক বা বিভাজন দশা। ইনটারফেজ দশা আবার G1, S ও G2 নামক উপদশায় বিভক্ত। মাইটোটিক দশার দুটি পর্যায়, যথা — ক্যারিওকাইনেসিস ও সাইটোকাইনেসিস। ক্যারিওকাইনেসিসের চারটি দশা হল — প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ ও টেলোফেজ।
G0 দশা কাকে বলে?
কোশচক্রের যে নিষ্ক্রিয় দশায় প্রবেশ করলে কোশের বিভাজন বন্ধ হয়ে যায়, তাকে Go দশা বলে। সাধারণত G দশার মধ্যবর্তী কোনো এক নির্দিষ্ট বিন্দুতে কোশ G0 দশায় প্রবেশ করতে পারে।
কোশ বিভাজনে অংশগ্রহণকারী পাঁচটি কোশীয় অঙ্গাণুর নাম লেখো।
কোশ বিভাজনে অংশগ্রহণকারী পাঁচটি কোশীয় অঙ্গাণু হল নিউক্লিয়াস, সেন্ট্রোজোম ও মাইক্রোটিউবিউল, গলগি বডি, রাইবোজোম এবং মাইটোকনড্রিয়া।
ইনটারফেজ দশা কী?
কোশচক্রে একটি কোশ বিভাজনের শেষ এবং পরবর্তী কোশ বিভাজনের শুরুর অন্তর্বর্তী দীর্ঘস্থায়ী যে দশায় মাতৃকোশের মধ্যে পরবর্তী কোশ বিভাজনের প্রস্তুতি পর্ব চলে, তাকে ইনটারফেজ বা অন্তবর্তী দশা বলে।
কোশ বিভাজনের পূর্বে ইনটারফেজ কেন প্রয়োজন?
ইনটারফেজ দশায় কোশ পরবর্তী বিভাজনের জন্য প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করে, যেসব কারণের জন্য কোশ বিভাজনের পূর্বে ইনটারফেজ দশা প্রয়োজন হয়, তা হল – 1. এই দশায় DNA, প্রোটিন ও বিভিন্ন কোশীয় অঙ্গাণু দ্বিগুণিত হয়, যাতে বিভাজনের পরে সমরূপ কোশ পাওয়া যায়। 2. এই দশায় কোশ বিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সংশ্লেষিত ও সঞ্চিত হয়।
কোশ বিভাজনে নিউক্লিয়াস ও গলগি বডির ভূমিকা কী?
নিউক্লিয়াসের ভূমিকা – কোশ বিভাজনে নিউক্লিয়াসের গুরুত্ব অপরিসীম। নিউক্লিয়াসে অবস্থিত ক্রোমোজোম হল বংশগতি বৈশিষ্ট্যের বাহক। কোশ বিভাজনের সময়ে তা বিভাজিত হয়ে অপত্য নিউক্লিয়াসে প্রবেশ করে।
গলগি বডির ভূমিকা – উদ্ভিদকোশে কোশপ্রাচীর সৃষ্টিতে ফ্র্যাগমোপ্লাস্ট গঠনের জন্য গলগি বডির ক্ষরণ সহায়তা করে থাকে।
কোশ বিভাজনে সেন্ট্রোজোম এবং মাইক্রোটিউবিউলের ভূমিকা কী?
প্রাণীকোশের বিভাজনকালে বেম গঠনে সেন্ট্রোজোম বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মাইক্রোটিউবিউল বেমতত্ত্ব গঠনে সহায়তা করে। বেমতত্ত্ব, ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার সংলগ্ন হয়ে সংকোচন দ্বারা ক্রোমোজোমের আনাফেজ দশায় মেরু চলনে সাহায্য করে।
কোশ বিভাজনে রাইবোজোমের ভূমিকা কী?
রাইবোজোম কোশ বিভাজনের জন্য কোশের মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রোটিন সংশ্লেষে সাহায্য করে। এ ছাড়া প্রোটিন সংশ্লেষের জন্য প্রয়োজনীয় উৎসেচক সরবরাহ করে এবং ক্রোমোজোমের গঠনগত হিস্টোন ও নন্-হিস্টোন প্রোটিন সংশ্লেষে সাহায্য করে।
কোশ বিভাজনে মাইটোকনড্রিয়ার ভূমিকা কী?
মাইটোকনড্রিয়া হল কোশের শক্তিঘর। এটি কোশ বিভাজনের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি জোগায়। এ ছাড়া কোশচক্র নিয়ন্ত্রণে এর ভূমিকা রয়েছে।
মাইটোসিস কোশ বিভাজন কাকে বলে?
যে কোশ বিভাজন পদ্ধতিতে দেহকোশ বেমতন্তু গঠন দ্বারা একবার মাত্র বিভাজিত হয়ে সমসংখ্যক ও সমগুণসম্পন্ন ক্রোমোজোম-বিশিষ্ট একই বৈশিষ্ট্যের ও একই আকৃতির দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি করে, তাকে মাইটোসিস কোশ বিভাজন বলে।
মাইটোসিস পদ্ধতিতে কোশ বিভাজন কোথায় হয়?
1. উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঙ্গে এবং প্রাণীদের দেহকোশে মাইটোসিস হয়। 2. দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের গৌণ বৃদ্ধির সময়ে কাণ্ড ও মূলে মাইটোসিস হয়। 3. বিভিন্ন নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদ ও প্রাণীর অঙ্গজ ও অযৌন জননের সময়ে মাইটোসিস কোশ বিভাজন ঘটে। 4. উদ্ভিদ ও প্রাণীর ভ্রূণের পরিস্ফুটনের সময়ে মাইটোসিস ঘটে।
সাইটোকাইনেসিস কাকে বলে?
যে প্রক্রিয়ায় কোশের সাইটোপ্লাজম সমান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি করে, তাকে সাইটোকাইনেসিস বলে। এটি ক্যারিওকাইনেসিসের ঠিক পরেই ঘটে।
কোনো বহুকোষী জীবের দেহে মাইটোসিস বিভাজন বন্ধ হলে কী অসুবিধা ঘটবে?
কোনো বহুকোশী জীবের দেহে মাইটোসিস বিভাজন বন্ধ হলে – 1. দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ ঘটবে না। 2. অাজ জননে অসুবিধা হবে। 3. জীবদেহের ক্ষয়প্রাপ্ত ও মৃতকোশ পুনরায় নতুন কোশ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে না।
মাইটোসিসকে সমবিভাজন বা ইক্যুয়েশনাল বিভাজন বলে কেন?
মাইটোসিসে মাতৃকোশ ও উৎপন্ন অপত্য কোশগুলিতে ক্রোমোজোম সংখ্যা সমান হয়। এ ছাড়া ক্রোমোজোমগুলি আকৃতি ও গুণগত বিচারে মাতৃকোশের সমতুল হয় বলে মাইটোসিসকে সমবিভাজন বলে।
মাইটোসিস কোশ বিভাজনের কোন্ দশায় ক্রোমোজোমগুলি দুটি ক্রোমাটিডযুক্ত (দ্বিতন্ত্রীবিশিষ্ট) হয় এবং কোন্ দশায় ওইগুলি আবার একটি ক্রোমোজোমে (একতন্ত্রীবিশিষ্ট) পরিণত হয়ে থাকে?
কোশ বিভাজনের প্রোফেজ দশার শেষে ক্রোমোজোমগুলি দুটি ক্রোমাটিডযুক্ত (দ্বিতত্ত্বীবিশিষ্ট) হয় এবং অ্যানাফেজ দশায় এরা আবার একটি ক্রোমাটিডযুক্ত (একতন্ত্রীবিশিষ্ট) হয়।
মাইটোসিস কোশ বিভাজনের বিভিন্ন দশাগুলি কী কী?
মাইটোসিস কোশ বিভাজনের দুটি প্রধান পর্যায় হল — 1. ক্যারিওকাইনেসিস বা নিউক্লিয়াস বিভাজন এবং 2. সাইটোকাইনেসিস বা সাইটোপ্লাজমের বিভাজন। ক্যারিওকাইনেসিসের বিভিন্ন দশাগুলি — প্রোফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ ও টেলোফেজ।
উদ্ভিদ ও প্রাণীকোণের কোশ বিভাজনের সময়ে বেমতত্ত্ব কোথা থেকে গঠিত হয়?
উদ্ভিদকোশে সাইটোপ্লাজমীয় মাইক্রোটিউবিউল থেকে বেমতত্ত্ব গঠিত হয়।
প্রাণীকোশে সেন্ট্রোজোম থেকে বেমতত্ত্ব গঠিত হয়।
কোনো কোশে কোশে ক্যারিওকাইনেসিস হল কিন্তু সাইটোকাইনেসিস হল না- কোশটির কী অবস্থা হবে?
সাইটোকাইনেসিস না হলে কোশের নিউক্লিয়াসের সংখ্যা বাড়বে, কিন্তু কোশের সংখ্যা বাড়বে না। ফলে দ্বি- নিউক্লিয়াসযুক্ত অস্বাভাবিক কোশ সৃষ্টি হবে।
বিভাজিত হতে পারে না এমন দুটি প্রাণীকোশের নাম লেখো। স্টেমবডি কাকে বলে?
বিভাজিত হতে পারে না এমন দুটি প্রাণীকোশ হল — স্নায়ু কোশ এবং হৃদপেশি কোশ।
প্রাণীকোশ বিভাজনের অ্যানাফেজ দশায় বেমের মাঝে অবস্থিত ইনটারজোনাল তন্তুগুলিকে একত্রে স্টেমবডি বলে।
বেমতত্ত্ব কাকে বলে? এটি কত প্রকারের?
কোশ বিভাজনকালে বেম বা মাকুসংগঠক যে তত্ত্বগুলি ক্রোমোজোমীয় সংযুক্তি ও চলনে সহায়তা করে তাদের বেমতন্তু বলে।
বেমতত্ত্ব তিন প্রকারের, যথা — ক্রোমোজোমাল তত্ত্ব, অবিচ্ছিন্ন তত্ত্ব এবং ইনটারজোনাল তত্ত্ব।
একটি প্রাণীকোশে সেন্ট্রোজোম না থাকলে কোশ বিভাজনের ক্ষেত্রে কী ঘটবে?
প্রাণীকোশ বিভাজনের সময় সেন্ট্রোজোম বেমতত্ত্ব গঠনে সাহায্য করে এবং মাকুর মেরু সৃষ্টিতে অংশগ্রহণ করে। বেমতত্ত্বগুলি অ্যানাফেজ দশায় ক্রোমোজোমীয় চলন সম্পন্ন করলে ক্রোমোজোমগুলি মেরুবর্তী হয়। এর ফলে একটি কোশে টেলোফেজ দশায় দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস সৃষ্টি হতে পারে। অবশেষে সাইটোকাইনেসিস ঘটে এবং একটি মাতৃকোশ থেকে দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টি হতে পারে। সেইজন্য একটি প্রাণীকোশে সেন্ট্রোজোম না থাকলে কোশ বিভাজন সম্পন্ন হবে না।
কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় ক্রোমোজোমগুলি কোশের কোন্ অঞ্চলে সজ্জিত থাকে? ক্রোমাটিন কত প্রকার ও কী কী?
কোশ বিভাজনের মেটাফেজ দশায় ক্রোমোজোমগুলি কোশের বিষুব অঞ্চলে সজ্জিত থাকে।
ক্রোমাটিন দু-প্রকার, যথা — 1. ইউক্রোমাটিন এবং 2. হেটেরোক্রোমাটিন।
অঙ্কোজিন কাকে বলে?
স্বাভাবিক কোশকে ম্যালিগন্যান্ট কোশে পরিবর্তনের জন্য দায়ী জিন অর্থাৎ ক্যানসার সৃষ্টির জন্য দায়ী জিনাটি হল অঙ্কোজিন। অঙ্কোজিন কোনো কারসিনোজেনের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে (মিউটেশন) গেলে তা কোশচক্রের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ক্ষতিসাধন করে ও ক্যানসার সৃষ্টি করে।
টিউমার সাপ্রেসর জিন কী? উদাহরণ দাও।
যে জিনগুলি অঙ্কোজিনের কার্যকারিতা ব্যাহত করে টিউমার সৃষ্টিতে বাধা দেয়। তাদের টিউমার সাপ্রেসর জিন বলে।
উদাহরণ – PRB, p53 জিন। এই জিনগুলি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে কোশচক্রের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বিনষ্ট হয় ও ক্যানসার সৃষ্টি হয়।
ম্যালিগন্যান্ট টিউমার কাকে বলে?
কোনো কারণে কোশচক্র বিঘ্নিত হলে কোশ বিভাজন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। এর ফলে যে কোশপুঞ্জের সৃষ্টি হয়, তাকে টিউমার বলে। টিউমার কোশগুলি যদি প্রাণীদেহে রক্তবাহের মাধ্যমে দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং টিউমার সৃষ্টি করে, তখন তাকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বলে।
অ্যামাইটোসিস কাকে বলে?
বেম গঠন ছাড়াই মাতৃকোশের নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের সরাসরি বিভাজনের দ্বারা দুটি অপত্য কোশ সৃষ্টির অনুন্নত পদ্ধতিকে অ্যামাইটোসিস বলে।
অ্যামাইটোসিসের বৈশিষ্ট্য কী?
1. অ্যামাইটোসিসে নিউক্লীয় পর্দার বিলুপ্তি ঘটে না এবং বেমতত্ত্ব গঠিত হয় না। 2. এই বিভাজনের সময়ে কোশের নিউক্লিয়াসটি মাকু বা ডামবেলের আকার ধারণ করে এবং মাঝবরাবর স্থানে সংকুচিত হয় ও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুটি অপত্য কোশে পরিণত হয়।
মিয়োসিস কোশ বিভাজন বলতে কী বোঝ?
যে কোশ বিভাজন প্রক্রিয়ায় জীবের জনন-মাতৃকোশের নিউক্লিয়াসের পরপর দু-বার বিভাজন ঘটার ফলে জনন- মাতৃকোশের অর্ধেক সংখ্যক ক্রোমোজোমবিশিষ্ট ও জিনের পুনর্বিন্যাসযুক্ত চারটি পৃথক অপত্য জননকোশ বা গ্যামেটের সৃষ্টি হয়, তাকে মিয়োসিস কোশ বিভাজন বলে।
মিয়োসিস কোশ বিভাজনকে হ্রাসবিভাজন বলা হয় কেন?
মিয়োসিসে সৃষ্ট অপত্য কোশগুলি মাতৃকোশের তুলনায় অর্থ-সংখ্যক ক্রোমোজোমবিশিষ্ট হয় বলে মিয়োসিসকে হ্রাস- বিভাজন বলে।
বাইভ্যালেন্ট এবং টেট্রাড কাকে বলে?
মিয়োসিস-I কোশ বিভাজনের প্রোফেজ I-এর জাইগোটিন উপদশায় জোড়বদ্ধ সমসংস্থ ক্রোমোজোমকে বাইভ্যালেন্ট বলে। মিয়োসিস-1 কোশ বিভাজনের প্রোফেজ I-এর প্যাকাইটিন উপদশায় সমসংস্থ ক্রোমোজোম জোড়া বা বাইভ্যালেন্টের প্রতিটি ক্রোমোজোম বিভক্ত হয়ে দুটি করে ক্রোমাটিড গঠন করলে চারটি ক্রোমাটিডসহ বাইভ্যালেন্টকে টেট্রাড বলে।
কায়াজমা কী?
ক্রসিং ওভারের সময়ে বাইভ্যালেন্ট ক্রোমোজোম জোড়ার দুটি নন্-সিস্টার ক্রোমাটিডের একটি অপরটির ওপর দিয়ে যাবার সময়ে ক্রসিংওভার বিন্দুগুলিতে x আকৃতিবিশিষ্ট যে অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাদের কায়াজমা বলে (একবচনে কায়াজমাটা)। এদের গ্রিক বর্ণ কাই-এর মতো দেখায় বলে এরূপ নামকরণ করা হয়।
মাইটোটিক মিয়োসিস কাকে বলে?
মিয়োসিসের দ্বিতীয় বিভাজন (মিয়োসিস-II) দ্বারা প্রথম বিভাজনে (মিয়োসিস-I) উৎপন্ন হ্যাপ্লয়েড অপত্য কোশগুলি সমবিভাজিত হয়। এই কারণে মিয়োসিসের দ্বিতীয় বিভাজনকে মাইটোটিক মিয়োসিস বলা হয়।
মিয়োসিস I ও মিয়োসিস II-এর মধ্য পার্থক্য লেখো।
মিয়োসিস I ও মিয়োসিস II এর পার্থক্যগুলি হল —
বিষয় | মিয়োসিস I | মিয়োসিস II |
ক্রোমোজোম পৃথককরণ | সমসংস্থ ক্রোমোজোমের পৃথককরণ ঘটে। ফলে ক্রোমোজোম সংখ্যা হ্রাস পেয়ে অর্ধেক (n) হয়ে যায়। | n সংখ্যক ক্রোমোজোমের প্রতিটির ক্রোমাটিডের পৃথক্করণ ঘটে, যা পুনরায় ক্রোমোজোম তৈরি করে, ফলে ক্রোমোজোম সংখ্যা সমান থাকে। |
ক্রসিং ওভার | সম্পন্ন হয়। | সম্পন্ন হয় না। |
ইনটারকাইনেসিস কাকে বলে?
মিয়োসিস I এবং মিয়োসিস II-এর অন্তর্বর্তী ক্ষণস্থায়ী দশাকে ইনটারকাইনেসিস বলে। তবে এই দশায় ইনটারফেজের মতো DNA সংশ্লেষ ঘটে না।
মিয়োসিস I -এর প্রধান বৈশিষ্ট্য লেখো।
মিয়োসিস I-এ ক্রোমোজোমের ক্রসিং ওভার ঘটে ও তারা পৃথক হয়ে বিপরীত মেরুতে গমন করে এবং n সংখ্যক ক্রোমোজোমযুক্ত দুটি নিউক্লিয়াস সৃষ্টি করে।
মিয়োসিস II -এর প্রধান বৈশিষ্ট্য লেখো।
মিয়োসিস II প্রকৃতপক্ষে মাইটোসিসের অনুরূপ। এক্ষেত্রে n সংখ্যক ক্রোমোজোমবিশিষ্ট দুটি কোশ থেকে দুটি করে মোট চারটি অপত্য কোশ (n) উৎপন্ন হয়। এর অন্তর্গত অ্যানাফেজ II-তে ক্রোমাটিডের পৃথক্করণ ঘটে থাকে।
সিস্টার ক্রোমাটিড ও নন্-সিস্টার ক্রোমাটিড বলতে কী বোঝ?
কোশ বিভাজনের ইনটারফেজ দশায় DNA প্রতিলিপিকরণের জন্য প্রতিটি ক্রোমোজোম দুটি ক্রোমাটিড গঠন করে, যারা সেন্ট্রোমিয়ার অঞ্চলে পরস্পর যুক্ত থাকে। এই ক্রোমাটিড দুটিকে সিস্টার ক্রোমাটিড বলে। অপরপক্ষে একটি ক্রোমোজোমের প্রতিজোড়া ক্রোমাটিডকে তার সমসংস্থ ক্রোমোজোমের প্রতিজোড়া ক্রোমাটিডের সাপেক্ষে নন-সিস্টার ক্রোমাটিড বলে।
মিয়োসিস কোশ বিভাজনের দুটি তাৎপর্য উল্লেখ করো।
1. মিয়োসিস কোশ বিভাজনের ফলে ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুবক থাকে। 2. মিয়োসিসে জিনের পুনর্বিন্যাসের ফলে সৃষ্ট অপত্য কোশের মধ্যে নতুন বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়, একে প্রকরণ বলে। এই প্রকরণ জীবের বিবর্তনের সহায়ক।
একটি উদ্ভিদের দেহকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা| যদি 18 হয় তবে ওই উদ্ভিদের 1. মূলের কোশের, 2. সস্য নিউক্লিয়াসের এবং 3. নির্ণীত নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোম সংখ্যা কত হবে?
1. মূলের কোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা, 2n = 18, 2. সস্য নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোম সংখ্যা 3n = 27, 3. নির্ণীত বা ডেফিনিটিভ নিউক্লিয়াস ক্লোমোজোম সংখ্যা 2n = 18 হবে।
মানবদেহের একটি ডিপ্লয়েড (2n) কোশের নিউক্লিয়াসে 46টি ক্রোমোজোম আছে 1. একটি অপত্য কত দেহকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা হবে? 2. জননকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা কত হবে?
1. অপত্য দেহকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা, 2n = 46 এবং
2. জননকোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা, n = 23 হবে।
ক্রসিং ওভার কী?
মিয়োসিসের প্রথম প্রোফেজের প্যাকাইটিন উপদশায় বাইভ্যালেন্টের নন্-সিস্টার ক্রোমাটিডদ্বয়ের মধ্যে ক্রোমোজোমীয় অংশের পারস্পরিক বিনিময়ের মাধ্যমে নতুন জিনগত বিন্যাস সৃষ্টি হয়।এইভাবে ক্রোমোজোমীয় অংশের বিনিময় ঘটে নতুন জিন বিন্যাস সৃষ্টির ঘটনাকে ক্রসিংওভার বলে।এই পুনর্বিন্যাস জীবের মধ্যে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্যের আবির্ভাব ও জীবের বিবর্তনে সাহায্য করে।
মিয়োসিসে কতবার নিউক্লীয়-বিভাজন ঘটে? বিভাজনগুলির প্রকৃতি কীরূপ?
মিয়োসিসে দু-বার নিউক্লীয়-বিভাজন ঘটে।
এদের মধ্যে প্রথমটি হ্রাস-বিভাজনমূলক কিন্তু দ্বিতীয়টি সমবিভাজনমূলক।
একটি কোশের নিউক্লিয়াসে 24টি ক্রোমোজোম আছে। অপত্য কোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা কত হবে – 1. মাইটোসিস কোশ বিভাজনের পরে, 2. প্রথম মিয়োসিস বিভাজনের পরে, 3. দ্বিতীয় মিয়োসিস বিভাজনের পরে?
কোশের নিউক্লিয়াসে 24টি ক্রোমোজোম আছে। অপত্য কোশের ক্রোমোজোম সংখ্যা — 1. মাইটোসিস কোশ বিভাজনের পরে 24টিই থাকবে। 2. প্রথম মিয়োসিস বিভাজনের পরে 12টি হবে। 3. দ্বিতীয় মিয়োসিস বিভাজনের পরে 12টি হবে।
নিউক্লিওটাইড ও নিউক্লিওসাইডের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
নিউক্লিওটাইড ও নিউক্লিওসাইডের পার্থক্যগুলি হল —
বিষয় | নিউক্লিওসাইড | নিউক্লিওটাইড |
সংজ্ঞা | একটি পিরিমিডিন বা পিউরিন ক্ষারক, পেন্টোজ শর্করার সঙ্গে যুক্ত হলে তাকে নিউক্লিওসাইড বলে। | ফসফোরিক অ্যাসিডের সঙ্গে নিউক্লিওসাইড যুক্ত হলে, তাকে নিউক্লিওটাইড বলে। |
গঠনগত একক | নিউক্লিওসাইড হল DNA অথবা RNA-এর অসম্পূর্ণ গঠনগত একক। | নিউক্লিওটাইড হল DNA অথবা RNA- এর সম্পূর্ণ গঠনগত একক। |
মিয়োসাইট ও মিয়োস্পোর কী?
যেসব ডিপ্লয়েড কোশে মিয়োসিস ঘটেকোশ বিঝান তাদের মিয়োসাইট বলে। যেমন — স্পার্মাটোসাইট, উসাইট।
মিয়োসিস কোশ বিভাজনের ফলে সৃষ্ট হ্যাপ্লয়েড রেণুকে মিয়োস্পোর পলে।
কোশ বিভাজন হলো জীবের জীবনচক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কোশ বিভাজনের মাধ্যমে জীবের বৃদ্ধি ও বিকাশ, জনন প্রক্রিয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলির প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়।