আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় ‘ভূ-গাঠনিক প্রক্রিয়া এবং পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ’ এর কিছু সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই অধ্যায়ের মূল ধারণাগুলো থেকে পরীক্ষায় প্রায়শই প্রশ্ন আসে।

আলাস্কার কাটমাই পর্বতকে ‘Valley of thousands Smokes’ বলা হয় -এর মানে কী?
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার কাটমাই পর্বতটি একটি শিল্ড বা স্ট্র্যাটো আগ্নেয়গিরি। এই আগ্নেয় পর্বতটি সম্পূর্ণরূপে পাইরোক্লাসটিক শিলা দ্বারা গঠিত। 1912 সালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলে এই আগ্নেয়গিরির কেন্দ্রীয় জ্বালামুখটি অবনমিত হয়ে ক্যালডেরার সৃষ্টি হয়। পরবর্তী পর্যায়ে এই আগ্নেয়গিরির অসংখ্য ছিদ্রপথ দিয়ে জলীয়বাষ্প, ছাই ও অন্যান্য গ্যাস যেমন কার্বন ডাইঅক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড ইত্যাদি ঘন ধোঁয়ার আকারে নির্গত হতে থাকে এবং এই পর্বতের উপত্যকা অঞ্চলটি প্রায় 40 মাইল বর্গকিলোমিটার জুড়ে আবৃত হয়।
ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট চ্যুতিরেখা বরাবর অসংখ্য ফিউমারোল (Fumaroles) অবস্থান করায়, নির্গত হয় ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডলী। বহু বছর ধরে এই আগ্নেয়গিরির ফিউমারোলগুলি থেকে লাভার পরিবর্তে বেরিয়ে আসছে ঘন ধোঁয়া – তাই এই অঞ্চলের নাম হয়েছে ‘Valley of thousands Smokes’।
ভঙ্গিল পর্বতের বৈশিষ্ট্য লেখো।
ভঙ্গিল পর্বতের (Fold Mountain) বৈশিষ্ট্য –
- সৃষ্টি – পৃথিবীর যাবতীয় ভঙ্গিল পর্বত গিরিজনি আলোড়নে সৃষ্ট অনুভূমিক পার্শ্বচাপের ফলে পলিস্তরে ভাঁজ খেয়ে সৃষ্টি হয়েছে।
- শিলা – প্রধানত পাললিক শিলা দ্বারা ভঙ্গিল পর্বত গঠিত হয়। তবে অনেক সময় ম্যাগমা অনুপ্রবেশের ফলে আগ্নেয়শিলা এবং প্রবল চাপের কারণে কিছু রূপান্তরিত শিলাও দেখা যায়।
- ভাঁজ – প্রবল পার্শ্বচাপের কারণে এই পর্বতে ঊর্ধ্বভঙ্গ, অধোভঙ্গ, প্রতিসম ভাঁজ, অপ্রতিসম ভাঁজ, ন্যাপ প্রভৃতি ভাঁজ দেখা যায়।
- উচ্চতা – অন্যান্য পর্বত অপেক্ষা ভঙ্গিল পর্বতের উচ্চতা বেশি। এই পর্বতে অসংখ্য সুউচ্চ শৃঙ্গ দেখা যায়।
- বিস্তৃতি – সুবিশাল অঞ্চল জুড়ে এই পর্বত বিস্তৃত। এর প্রস্থ অপেক্ষা দৈর্ঘ্য অনেক বেশি।
- জীবাশ্ম – পাললিক শিলা দ্বারা সৃষ্টি হওয়ায় ভঙ্গিল পর্বতে জীবাশ্ম দেখা যায়।
- বিভাগ – সময়কাল অনুসারে ভঙ্গিল পর্বত দুই প্রকার। যথা –
- প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত (আরাবল্লি)
- নবীন ভঙ্গিল পর্বত (হিমালয়)।
- ভূমিকম্প – নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চল ভূমিকম্প প্রবণ।
ভঙ্গিল পর্বতে কয় প্রকার ভাঁজ দেখা যায় প্রত্যেক প্রকারের সংজ্ঞা দাও?
ঊর্ধ্বভঙ্গ (Anticline) – অনুভূমিক পার্শ্বচাপের ফলে সঞ্চিত পলিরাশি বা শিলাস্তরে ভাঁজ খেয়ে পর্বতের যে অংশ উত্তল ভাবে অবস্থান করে, তাকে ঊর্ধ্বভঙ্গ বলে।
উদাহরণ – ভঙ্গিল পর্বতের শৈলশিরা।
অধোভঙ্গ (Syncline) – অনুভূমিক পার্শ্বচাপের ফলে ভাঁজের যে অংশ অবতল হয়ে অবস্থান করে, সেই অংশকে অধোভঙ্গ বলে।
উদাহরণ – ভঙ্গিল পর্বতের উপত্যকা অধোভঙ্গের উদাহরণ।
প্রতিসম ভাঁজ (Symmetrical Fold) – ভঙ্গিল পর্বতের ভাঁজের দু-দিকের পার্শ্বচাপ সৃষ্টিকারী বল সমান হলে ভাঁজের দু-দিকের বাহু সমান কোণে দুদিকে হেলে থাকে, এই ধরনের ভাঁজকে প্রতিসম ভাঁজ বলে। এক্ষেত্রে ভাঁজের দুদিকের বাহুর দৈর্ঘ্য সমান হয়।

অপ্রতিসম ভাঁজ (Asymmetrical Fold) – অন্যদিকে ভাঁজের দু-দিকের পার্শ্বচাপ সৃষ্টিকারী বল একপাশের থেকে অন্য পাশে বেশি হলে অর্থাৎ, পার্শ্বচাপ সৃষ্টিকারী বল অসমান হলে ভাঁজের অক্ষতল হেলে যায়, একে অপ্রতিসম ভাঁজ বলে। এক্ষেত্রে দুদিকের বাহুর দৈর্ঘ্য অসমান হয়।
ন্যাপ (Nappe) – ভাঁজের অক্ষতল বরাবর যখন ভাঁজের একটি বাহু অন্য বাহুর উপর উঠে যায় এবং শায়িত অবস্থায় অবস্থান করে, তখন তাকে শায়িত ভাঁজ (Recumbent fold) বলে। পার্শ্বচাপ বেশি হলে শায়িত ভাঁজের একটি বাহু অক্ষতল বরাবর বহুদূরে সরে যায়, তখন তাকে ন্যাপ (Nappe) বলে।
অ্যাপালেশিয়ান পর্বতের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করো।
প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত – ভূবিজ্ঞানীদের মতে হিমালয়, আল্পস্ প্রভৃতি নবীন ভঙ্গিল পর্বতগুলি সৃষ্টি হওয়ার আগে বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর অনেক ভঙ্গিল পর্বত গঠিত হয়েছিল, তাদেরকে প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত বলা হয়।
উত্তর আমেরিকার অ্যাপালেশিয়ান পার্বত্য অঞ্চলটি প্রকৃতপক্ষে একটি প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বতমালা।
উৎপত্তি – ভূতাত্ত্বিক সময়ের হিসেবে ‘প্যালিওজোইক’ যুগের প্রায় 22-32 কোটি বছর আগে ‘কার্বোনিফেরাস’ উপযুগে ভূত্বকে আলটাইড (হারসিনিয়ান) ভাঁজ পড়ে সৃষ্টি হয় অ্যাপালেশিয়ান পর্বতমালা। উত্তর আমেরিকার পূর্বদিকের উচ্চভূমির দক্ষিণের অংশে রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে নদী, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয় ও আবহবিকারের ফলে এই পর্বতটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে একটি উচ্চভূমিতে পরিণত হয়েছে। অ্যাপালেশিয়ান পর্বতমালাকে এখন ভঙ্গিল পর্বত থেকে সৃষ্ট ক্ষয়জাত পর্বতের উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
আরাবল্লী পর্বতের বৈশিষ্ট্য গুলি লিখো?
- আরাবল্লি শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ‘শৃঙ্গশ্রেণি’।
- ভারতের উত্তর-পশ্চিমে গুজরাট, রাজস্থান, হরিয়ানা ও দিল্লি এই চারটি রাজ্যের মধ্যে বিস্তৃত।
- আরাবল্লি পর্বত ভারতের প্রাচীনতম ভঙ্গিল পর্বত যা বর্তমানে ক্ষয়জাত পর্বতে পরিণত হয়েছে।
- প্রি-ক্যামব্রিয়ান যুগে সৃষ্ট এই পর্বতটি উত্তরে দিল্লির রাইসেনা হিল থেকে দক্ষিণে গুজরাটের আমেদাবাদের কাছে পালানপুর পর্যন্ত প্রায় 692 কিমি বিস্তৃত।
- এর গড় উচ্চতা 400 মিটার থেকে 600 মিটার।
- আবু পাহাড়ের গুরুশিখর (1,722 মিটার) হল আরাবল্লি পর্বতের সর্বোচ্চশৃঙ্গ।
- আরাবল্লি পার্বত্য অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য নদীগুলি হল মাহী, লুনী, বান্দী, জোজরী, সুকরী, বানাস, পার্বতী প্রভৃতি।
মহীভাবক ও গিরিজনি আলোড়ন বলতে কী বোঝ?
মহীভাবক আলোড়ন (Epeirogenic Movement) –
অর্থ – ‘মহী’ = মহাদেশ এবং ‘ভাবক’ = উদ্ভব অর্থাৎ মহীভাবক = মহাদেশের উদ্ভব। মহীভাবকের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Epeirogenic’ এসেছে গ্রিক শব্দ ‘Epiros’ = ‘মহাদেশ’ এবং ‘Genesis’ = সৃষ্টি বা গঠন থেকে অর্থাৎ Epeirogenic = মহাদেশের সৃষ্টি বা উদ্ভব।
সংজ্ঞা – যে ভূ-আলোড়নের প্রভাবে উত্থান ও অবনমনের মধ্য দিয়ে মহাদেশের গঠন নির্ধারিত হয়, তাকে মহীভাবক আলোড়ন (Epeirogenic Movement) বলে।

বৈশিষ্ট্য –
- এই আলোড়ন ভূপৃষ্ঠে উল্লম্বভাবে অর্থাৎ, পৃথিবীর ব্যাসার্ধ বরাবর কাজ করে।
- এই আলোড়নে শিলাস্তরের উত্থান বা অবনমন ঘটে, প্রসারণ বা সংকোচন ঘটে না।
- এর প্রভাব সাধারণত স্থানীয়ভাবে ঘটে থাকে।
শ্রেণিবিভাগ – মহীভাবক আলোড়ন দুই প্রকার। যথা –
- ঊর্ধ্বমুখী আলোড়ন
- নিম্নমুখী আলোড়ন।
সৃষ্ট ভূমিরূপ – স্তূপ পর্বত, গ্রস্ত উপত্যকা, মালভূমি, সাগর, ভূগুতট, চ্যুতি প্রভৃতি ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়। যেমন -ভারতের সাতপুরা স্তূপ পর্বত ও নর্মদা নদী উপত্যকা, উত্তর আমেরিকার হাডসন উপসাগর প্রভৃতি সৃষ্টি হয়েছে।
গিরিজনি আলোড়ন (Orogenic Movement) –
অর্থ – ‘গিরি’ = পর্বত এবং ‘জনি’ = উৎপত্তি বা গঠন অর্থাৎ, গিরিজনি = পর্বত গঠন। গিরিজনির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Orogenic’ এসেছে গ্রিক শব্দ ‘Oros’ = পর্বত এবং Genesis = সৃষ্টি বা গঠন থেকে। অর্থাৎ, Orogenic = ‘পর্বত গঠন’।
সংজ্ঞা – যে আলোড়নের প্রভাবে শিলাস্তরে ভাঁজ পড়ে গিরি বা পর্বত বিশেষত ভঙ্গিল পর্বত গঠিত হয়, তাকে বলে গিরিজনি আলোড়ন (Orogenic Movement)।

বৈশিষ্ট্য –
- এই আলোড়ন ভূপৃষ্ঠে অনুভূমিকভাবে অর্থাৎ, পৃথিবীর স্পর্শক বরাবর ক্রিয়া করে।
- এই আলোড়নে শিলার অনুভূমিক সরণ ঘটে।
- সাধারণত, বিশাল অঞ্চল জুড়ে এই আলোড়নের প্রভাব দেখা যায়।
শ্রেণিবিভাগ – এই আলোড়ন দুই প্রকার। যথা –
- সংনমন বা সংকোচন
- টান বা প্রসারণ
সৃষ্ট ভূমিরূপ – সংকোচনের ফলে শিলাস্তরে ভাঁজ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি হয় এবং প্রসারণের ফলে চ্যুতি সৃষ্টি হয়। যেমন – হিমালয়, আল্পস্, রকি, আন্দিজ প্রভৃতি ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি হয়েছে।
আগ্নেয় পর্বতের (Volcanic Mountain) বৈশিষ্ট্য লেখো।
আগ্নেয় পর্বতের বৈশিষ্ট্য –
- সৃষ্টি – মূলত পাতের সঞ্চালন, ভূ-আলোড়ন কিংবা ভূপৃষ্ঠের ফাটল সৃষ্টির দ্বারা ভূ-অভ্যন্তরীণ গলিত পদার্থ উৎক্ষিপ্ত হয়ে আগ্নেয় পর্বত সৃষ্টি হয়।
- অবস্থান – ভূপৃষ্ঠের দুর্বল অংশ বা পাতসীমানা বরাবর আগ্নেয় পর্বত দেখা যায়।
- গাঠনিক উপাদান – আগ্নেয়শিলা, ভস্ম, সিন্ডার প্রভৃতি দ্বারা এই পর্বত গঠিত হয়।
- আকৃতি – আগ্নেয় পর্বত সাধারণত শঙ্কু বা মোচাকৃতির হয়। তবে গম্বুজাকৃতিরও হয়ে থাকে।
- জ্বালামুখ – এই পর্বতে এক বা একাধিক ম্যাগমা নির্গমন পথ বা জ্বালামুখ থাকে।
- উচ্চতা – উচ্চতা মাঝারি প্রকৃতির। তবে সক্রিয় আগ্নেয় পর্বতের উচ্চতা ক্রমশ বাড়তে থাকে।
- ঢাল – এই পর্বতের চারপাশের ঢাল বেশ খাড়া হয়।
- ভূমিকম্প – অগ্ন্যুৎপাতের সময় আগ্নেয় পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়।
পৃথিবীর আগ্নেয় পর্বতগুলির অবস্থান বা বণ্টন আলোচনা করো।
পৃথিবীর সমস্ত আগ্নেয় পর্বতগুলির মধ্যে অধিকাংশই প্রধানত তিনটি বলয়ের মধ্যে অবস্থান করছে। যথা –

- প্রশান্ত মহাসাগরীয় অগ্নিবলয় – পৃথিবীর প্রায় 70% আগ্নেয় পর্বত প্রশান্ত মহাসাগরকে ঘিরে বলয়ের আকারে অবস্থান করছে। প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূল বরাবর উত্তরে আলাস্কা থেকে রকি, আন্দিজ হয়ে দক্ষিণে হর্ন অন্তরীপ পর্যন্ত প্রায় 106টি আগ্নেয়গিরি রয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আকোনকাগুয়া, কটোপ্যাক্সি, পিলি, ওরিজাবা প্রভৃতি। আবার, প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূল বরাবর উত্তরে বেরিং প্রণালী থেকে কামচাটকা, শাখালিন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া হয়ে দক্ষিণে নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত প্রায় 304টি আগ্নেয়গিরি অবস্থিত। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ফুজিয়ামা, বাটুর, ক্রাকাতোয়া, কিলাউইয়া, ইরেবাস, রুয়াপেহু প্রভৃতি।
- মধ্যমহাদেশীয় বলয় – এটি উত্তর মহাসাগরের আইসল্যান্ড থেকে শুরু করে স্কটল্যান্ড, আজোর দ্বীপপুঞ্জ হয়ে দক্ষিণে গিনি উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানকার উল্লেখযোগ্য আগ্নেয় পর্বত হল ভিসুভিয়াস, স্ট্রম্বলি প্রভৃতি।
- মধ্য আটলান্টিক শৈলশিরা বলয় – আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্য ভাগ দিয়ে উত্তরে আইসল্যান্ড থেকে দক্ষিণে বুভেট পর্যন্ত বিস্তৃত শৈলশিরা বরাবর প্রতিসারী পাতসীমানায় বহু আগ্নেয় পর্বত দেখা যায়। যেমন- মাদিরা, হেলগাফেল, হেকলা প্রভৃতি।
- অন্যান্য আগ্নেয় পর্বত- এই তিনটি বলয় ছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য আগ্নেয় পর্বতগুলি হল হাওয়াই দ্বীপের মৌনালোয়া, মৌনাকিয়া, ভারতের ব্যারেন, নারকোনডাম, আন্টার্কটিকার ইরিবাস প্রভৃতি।
‘প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা’ (Pacific ring of fire) বলতে কী বোঝো?
অথবা, প্রশান্ত মহাসাগরের উভয়পাশে বা মহাসাগরকে ঘিরে আগ্নেয়গিরি অবস্থান করছে কেন?
সংজ্ঞা – মেখলা’ শব্দের অর্থ ‘কোমর বন্ধনী’। প্রশান্ত মহাসাগরকে বলয় বা কোমর বন্ধনীর মতো ঘিরে পৃথিবীর প্রায় 70% আগ্নেয়গিরি অবস্থান করছে। তাই একে ‘প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা’ বলে।
বিস্তার – এই আগ্নেয় মেখলা বা বলয়টি প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণে হর্ন অন্তরীপ থেকে শুরু করে আন্দিজ ও রকি পর্বতমালা হয়ে আলাস্কার মধ্য দিয়ে বেঁকে পশ্চিম উপকূল বরাবর কামচাটকা, শাখালিন, জাপান, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ ও ইন্দোনেশিয়া হয়ে দক্ষিণে নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত।
সৃষ্টির কারণ – মূলত প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল বরাবর অভিসারী পাত সীমান্তের অবস্থানের জন্য এই আগ্নেয় মেখলা সৃষ্টি হয়েছে। পূর্ব উপকূলে আমেরিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাতের সংঘর্ষের কারণে এবং পশ্চিম উপকূলে এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া পাতের সঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাতের সংঘর্ষের কারণে আগ্নেয়গিরিগুলি গড়ে উঠেছে।
উল্লেখযোগ্য আগ্নেয়গিরি – প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলের উল্লেখযোগ্য আগ্নেয়গিরিগুলি হল আকোনকাগুয়া, কটোপ্যাক্সি, পিলি, ওরিজাবা প্রভৃতি এবং পশ্চিম উপকূলের উল্লেখযোগ্য আগ্নেয়গিরিগুলি হল ফুজিয়ামা, বাটুর, ক্রাকাতোয়া, কিলাউইয়া, ইরেবাস প্রভৃতি।

মালভূমির বৈশিষ্ট্য লেখো।
মালভূমির বৈশিষ্ট্য-
- উচ্চতা – মালভূমি সাধারণত সমুদ্রতল থেকে 300 মিটারের বেশি উঁচু হয়, তবে পর্বতবেষ্টিত মালভূমির উচ্চতা অনেক বেশি হয়। যেমন – পামির মালভূমির উচ্চতা প্রায় 4,873 মিটার।
- ঢাল – মালভূমি চারপাশে খাড়া ঢালযুক্ত হয়।
- শীর্ষদেশ – মালভূমির শীর্ষদেশ বা উপরিভাগ অসমতল তরঙ্গায়িত প্রকৃতির হয়।
- আকৃতি – মালভূমির আকৃতি অনেকটা টেবিলের মতো। তাই একে ‘টেবিল ল্যান্ড’ বলে।
- বিস্তার – মালভূমিগুলি বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করে।
- গঠনকারী শিলা – মালভূমিগুলি সাধারণত আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা দ্বারা গঠিত হয়।
- পাহাড় – অনেক মালভূমির উপরে ছোটো ছোটো পাহাড় দেখা যায়। যেমন – ছোটোনাগপুর মালভূমির পরেশনাথ পাহাড়।
- খনিজ সম্পদ – অধিকাংশ মালভূমি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হয়।
প্রশান্ত মহাসাগরের কোন কোন অঞ্চলে কয়টি করে আগ্নেয় পর্বত রয়েছে তা একটি ছকের মাধ্যমে দেখাও?
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে আগ্নেয়গিরির সংখ্যা –
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল | ছোটো/বড়ো আগ্নেয় পর্বতের সংখ্যা |
দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল | 163 |
জাপান অঞ্চল | 49 |
দক্ষিণ আমেরিকা প্রশান্ত অঞ্চল | 41 |
আলাস্কা অঞ্চল | 36 |
স্তূপ পর্বতের (Block Mountain) বৈশিষ্ট্য লেখো।
স্তূপ পর্বতের বৈশিষ্ট্য –
- সৃষ্টি – দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ উত্থিত হলে কিংবা, দুটি সমান্তরাল চ্যুতির দুই পার্শ্বস্থ অংশ বসে গেলে স্তূপ পর্বত সৃষ্টি হয়।
- প্রযুক্ত বল – স্তূপ পর্বত গঠনে অনুভূমিক ও উল্লম্ব বল পরস্পর কাজ করে।
- পর্বত শীর্ষ – স্তূপ পর্বতের শীর্ষভাগ চ্যাপটা প্রকৃতির হয়ে থাকে।
- উচ্চতা – স্তূপ পর্বতের উচ্চতা মাঝারি হয়।
- ঢাল – প্রায় প্রতিটি স্তূপ পর্বত খাড়া ঢালবিশিষ্ট হয়।
- বিস্তৃতি – স্তূপ পর্বত দীর্ঘ অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত হয় না।
গ্রস্ত উপত্যকা ও র্যাম্প উপত্যকা কী?
টান বা প্রসারণের ফলে সৃষ্ট দুটি সমান্তরাল স্বাভাবিক চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ বসে গিয়ে গ্রস্ত উপত্যকার সৃষ্টি হয়। কিন্তু অপর দিকে সংকোচন বা সংনমনের ফলে সৃষ্ট দুটি বিপরীত চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ বসে গিয়ে র্যাম্প উপত্যকা সৃষ্টি হয়। যেমন – ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা।
গ্রস্ত উপত্যকা ও গ্রাবেন কী?
গ্রস্ত উপত্যকাকে জার্মানিতে গ্রাবেন (Graben) বলে। তবে, স্তুপ পর্বতের যে-কোনো পাশেই সৃষ্ট উপত্যকা গ্রস্ত উপত্যকা, কিন্তু গ্রাবেন হল দুটি স্তূপ পর্বতের মাঝে সৃষ্ট উপত্যকা। গ্রস্ত উপত্যকার তুলনায় গ্রাবেন -এর গভীরতা কম।
ক্ষয়জাত পর্বত বা অবশিষ্ট পর্বতের (Residual Hill) বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
ক্ষয়জাত পর্বতের বৈশিষ্ট্য –
- গঠন – বহির্জাত বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কার্যের ফলে এই পর্বত গঠিত হয়।
- গঠনকারী শিলা – প্রধানত প্রাচীন ও কঠিন আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা দ্বারা এই পর্বত গঠিত।
- উচ্চতা – এই পর্বতের উচ্চতা বেশি হয় না। ক্ষয়কার্যের ফলে এর উচ্চতা ক্রমশ হ্রাস পায়।
- শীর্ষদেশ – এই পর্বতের শীর্ষদেশ ছুঁচোলো বা তীক্ষ্ণ নয়, অনেকটা গোলাকার বা গম্বুজের ন্যায়।
- বয়স – ক্ষয়জাত পর্বতগুলি বয়সে প্রাচীন।
- ঢাল ও বন্ধুরতা – পর্বতের চারপাশের ঢাল ও পার্বত্য ভূমির বন্ধুরতা কম হয়।
উচ্চ মালভূমির উচ্চতা 3000 মিটারের বেশি হওয়া সত্ত্বেও এদের পর্বত না বলে মালভূমি বলা হয় কেন?
সংজ্ঞা অনুসারে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 1000 মিটারের বেশি উঁচু ভূমিরূপকে পর্বত বলে। কিন্তু পৃথিবীতে বেশ কিছু উচ্চ মালভূমি বিশেষত পর্বতবেষ্টিত মালভূমি আছে যাদের উচ্চতা 3000 মিটারের বেশি। যেমন – পামির মালভূমি (4,878 মি.), তিব্বত মালভূমি (3,655 মি.), লাদাখ মালভূমি (3,500 মি.) প্রভৃতি। এত উঁচু ভূমিভাগ হওয়া সত্ত্বেও এগুলি পবর্ত না বলে মালভূমি বলা হয় কারণ -এই ভূমিভাগগুলির উপরিভাগ মালভূমির ন্যায় সমতল বা ঈষৎ তরঙ্গায়িত। ভূমিভাগগুলি পর্বতের মতো অত্যন্ত বন্ধুর নয়। পর্বতের মতো একাধিক সুউচ্চ শৃঙ্গ এই ভূমিভাগুলিতে দেখা যায় না। এই উচ্চ ভূমিভাগগুলির চারপাশ মালভূমির ন্যায় খাড়া ঢাল বিশিষ্ট। সর্বোপরি এই ভূমিভাগগুলির আকৃতি টেবিলের মতো।
এই সকল বৈশিষ্ট্যের জন্য এই উচ্চ ভূমিভাগগুলিকে পর্বত না বলে মালভূমি বলা হয়।
সমভূমির (Plains) বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
সমভূমির বৈশিষ্ট্য –
- উচ্চতা – সমভূমি সাধারণত সমুদ্র সমতল থেকে 300 মিটারের কম উচ্চতাবিশিষ্ট হয়।
- বিস্তার – বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সমভূমিগুলি অবস্থান করে। পৃথিবীর স্থলভাগের অর্ধেকের বেশি অংশ সমভূমির অন্তর্গত।
- বন্ধুরতা – সমভূমি বন্ধুর প্রকৃতির নয়। এর উপরিভাগ সমতল প্রকৃতির।
- ঢাল – সমভূমি মৃদু ঢালযুক্ত হয়। সমভূমি ধীরে ধীরে ঢালু হয়ে সমুদ্রতলের সঙ্গে মিশে যায়।
- গঠন – পৃথিবীর অধিকাংশ সমভূমি পলি সঞ্চয়ের ফলে গঠিত হলেও ভূ-আন্দোলন ও ক্ষয়কার্যের ফলেও কিছু সমভূমি গঠিত হয়েছে।
- পরিলক্ষিত অঞ্চল – পৃথিবীর অধিকাংশ সমভূমি অঞ্চল নদী অববাহিকা অথবা সমুদ্র উপকূলে বিরাজ করছে।
আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের চতুর্থ অধ্যায় ‘ভূ-গাঠনিক প্রক্রিয়া এবং পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ’ এর কিছু সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি নবম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।