আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের সপ্তম অধ্যায় ‘ভারতের সম্পদ (প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তি সম্পদ) ’ এর পার্থক্যধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের সম্পদ (প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তি সম্পদ) প্রচলিত (Conventional) এবং অপ্রচলিত (Non-Conventional) শক্তির পার্থক্য আলোচনা করো। বিষয় প্রচলিত শক্তি (Conventional) অপ্রচলিত শক্তি (Non-Conventional) সংজ্ঞা পৃথিবীতে জ্ঞাতব্য যে-সকল শক্তিসম্পদ দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে, তাদের প্রচলিত শক্তি বলে। পৃথিবীতে যে-সকল শক্তির ব্যবহার বর্তমানে বিশেষ না হলেও ভবিষ্যতে এটি মাত্রাধিক ব্যবহৃত হবে, তাদের অপ্রচলিত শক্তি বলে। ব্যবহারের ক্ষেত্র এই শক্তিকে সর্বস্তরে ব্যবহার করা যায় বলে বাণিজ্যিক গুরুত্ব অপরিসীম। এই শক্তিকে সর্বস্তরে ব্যবহার করা যায় না বলে। বাণিজ্যিক গুরুত্ব কম। উৎপাদন ক্ষমতা ও উৎপাদন ব্যয় এই শক্তির উৎপাদন ক্ষমতা যেমন বেশি তেমনই উৎপাদন ব্যয়ও বেশি। এই শক্তির উৎপাদন ক্ষমতা যেমন কম তেমনই উৎপাদন ব্যয়ও কম। বণ্টন এই শক্তি সম্পদের উৎসগুলি পৃথিবীতে বিভিন্ন স্থানে অসমভাবে বণ্টিত। এই শক্তি সম্পদগুলি পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র ও সহজে পাওয়া যায়। প্রকৃতি জলবিদ্যুৎ ব্যতীত অন্যান্য প্রচলিত শক্তি অপুনর্ভব এবং এদের সঞ্চয় সীমিত। এই শক্তি সম্পদ পুনর্ভব ও নবীকরণযোগ্য। দূষণ জলবিদ্যুৎ ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় পরিবেশ দূষণ ঘটে। এই শক্তি ব্যবহারে পরিবেশ দূষিত হয় না, তাই এদের পরিবেশবান্ধব শক্তি বলে। ব্যবহার এই শক্তির ব্যবহার ক্রমশ কমিয়ে বিকল্প দ্রব্য ব্যবহারের চেষ্টা চলছে। এই শক্তি প্রচলিত শক্তির বিকল্প ও পরিপূরক হয়ে উঠছে। উৎস দুর্গম অঞ্চলে খনিজ শক্তির উৎসের জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। দুর্গম অঞ্চলেও বিকল্প প্রাকৃতিক শক্তির উৎসের অভাব হয় না। দুর্ঘটনার সম্ভবনা এই শক্তি উৎপাদনের সময় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেশি। এই শক্তি উৎপাদনের সময় দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কম।
উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থার তুলনামূলক বিবরণ দাও। বিষয় উত্তর ভারতের জলবিদ্যুৎ দক্ষিণ ভারতের জলবিদ্যুৎ বন্ধুর ভূপ্রকৃতি হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের বন্ধুর ভূপ্রকৃতির খরস্রোতা নদী জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সহায়ক। পশ্চিমঘাট পর্বত ও দাক্ষিণাত্য মালভূমির বন্ধুর ভূপ্রকৃতির খরস্রোতা নদীগুলি জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আদর্শ। জলের জোগান নদীগুলি বরফগলা জলে পুষ্ট হওয়ায় সারা বছরই জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। এখানকার নদীগুলি বৃষ্টির জলে পুষ্ট বলে সারা বছর জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে অসুবিধা হয়। বন্যার প্রভাব বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে এখানকার নদীগুলিতে বন্যা দেখা দেয়। ফলে, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়। এখানকার নদীগুলিতে বন্যার প্রকোপ কম হওয়ায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয় না। প্রাকৃতিক বিপর্যয় হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে প্রায়শই ভূমিকম্প, ধস, তুষারপাত ঘটায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। দক্ষিণ ভারতের নদী অববাহিকায় এরূপ প্রাকৃতিক বিপর্যয় তেমন না ঘটায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদন সহজসাধ্য। নদীর গতি উত্তর ভারতের নদীগুলির বেশিরভাগ গতিপথ সমভূমির ওপর দিয়ে হওয়ায় মন্থর গতির জন্য জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হয়। এখানকার নদীগুলি উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত খরস্রোতা হওয়ায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সুবিধা হয়। শিলার কাঠিন্য সমভূমির কোমল শিলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এখানকার নদীতে প্রচুর পলি, বালি থাকে যা জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটায়। মালভূমির কঠিন শিলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এখানকার নদীতে তেমন পলি, বালি থাকে না, ফলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন সহজসাধ্য হয়। বিকল্প শক্তির জোগান উত্তর ভারতে কয়লা, খনিজ তেলের প্রাচুর্য বেশি হওয়ায় জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের গুরুত্ব কম। দক্ষিণ ভারতে কয়লা, খনিজ তেল তেমন পাওয়া যায় না, তাই জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
তাপবিদ্যুৎ, জলবিদ্যুৎ ও পারমাণবিক বিদ্যুতের তুলনামূলক আলোচনা করো। বিষয় তাপবিদ্যুৎ (Thermal power) জলবিদ্যুৎ (Hydroelectric) পারমাণবিক বিদ্যুৎ (Nuclear power) কাঁচামাল তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল হল কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস। জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন খরস্রোতা নদী বা বেগবতী জলপ্রবাহ। এই বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাঁচামাল হল ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম প্রভৃতি। কাঁচামালের প্রকৃতি গচ্ছিত ও ক্ষয়িষ্ণু প্রকৃতির সম্পদ। প্রবহমান সম্পদ। গচ্ছিত ও ক্ষয়িষ্ণু সম্পদ। অবস্থান উৎসের কাছে কিংবা দূরবর্তী কোনো স্থানে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা যায়। খরস্রোতা নদীর তীরেই এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়। কাঁচামালের উৎস অঞ্চল থেকে যে-কোনো দূরত্বে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা যায়। উৎপাদন ব্যয় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রাথমিক ব্যয় কম হলেও পৌনঃপুনিক ব্যয় বেশি। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রাথমিক ব্যয় বেশি কিন্তু পৌনঃপুনিক ব্যয় কম। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রাথমিক ব্যয় বেশি কিন্তু পৌনঃপুনিক ব্যয় কম। ব্যবহার ভারতের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের 72% তাপবিদ্যুৎ, অর্থাৎ এর ব্যবহার অনেক বেশি। মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের 26% জলবিদ্যুৎ, অর্থাৎ ব্যবহার তুলনামূলক কম। মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের 2% পারমাণবিক বিদ্যুৎ, অর্থাৎ ব্যবহার অনেক কম। দূষণ এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি থেকে পরিবেশ ব্যাপকভাবে দূষিত হয়। জলবিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনে পরিবেশ দূষণ হয় না। পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরিবেশে তেজস্ক্রিয় দূষণ ঘটে।
Class 9 Geography All Chapter Notes আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের সপ্তম অধ্যায় ‘ভারতের সম্পদ (প্রচলিত ও অপ্রচলিত শক্তি সম্পদ) ’ এর পার্থক্যধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি নবম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।