আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের নবম অধ্যায় ‘মানচিত্র ও স্কেল’ এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

পৃথিবীর মানচিত্রে আমাদের দেশকে ছোটো দেখায় কিন্তু এশিয়ার মানচিত্রে বেশ বড়ো দেখায় কেন?
একই ক্ষেত্রমানের কাগজে পৃথিবীর ও এশিয়ার মানচিত্র অঙ্কন করলে পৃথিবীর মানচিত্রে ভারতকে ছোটো এবং এশিয়ার মানচিত্রে ভারতকে বড়ো দেখায়। কারণ –

বিশাল পৃথিবীকে দেখানোর সময় সকল মহাসাগর, মহাদেশ, দেশ দেখানো হয়। সেজন্য বড়ো স্কেল ব্যবহার করে এদের আকৃতি ছোটো করে মানচিত্রের মধ্যে ধরাতে হয়। তাই পৃথিবীর মানচিত্রে ভারতের আকৃতি ছোটো দেখায়।

অপরদিকে পৃথিবীর সমস্ত মহাসাগর, মহাদেশ বাদ দিয়ে কেবলমাত্র এশিয়া মহাদেশের মানচিত্র অঙ্কন করার সময় অপেক্ষাকৃত ছোটো স্কেল ব্যবহার করা যায়। তাই এখানে দেশগুলি পৃথিবীর মানচিত্রের তুলনায় বড়ো করে দেখানো সম্ভব হওয়ায় ভারতের আকৃতিও বড়ো দেখায়।
মানচিত্রে স্কেলের ব্যবহারগুলি কী কী?
অথবা, মানচিত্র আঁকার জন্য স্কেলের প্রয়োজন হয় কেন?
মানচিত্রে স্কেলের কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার দেখা যায়, যেমন –
- কোনো মানচিত্রে ব্যবহৃত স্কেলের দ্বারা ভূমিভাগের দূরত্বের সঠিক পরিমাপ পাওয়া সম্ভব হয়।
- সমগ্র মানচিত্রের আয়তন নির্ণয়ে মানচিত্র স্কেলের সাহায্য নেওয়া হয়।
- মানচিত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন নদ-নদী, সড়কপথ, রেলপথ প্রভৃতির দৈর্ঘ্য মানচিত্র স্কেলের মাধ্যমে পাওয়া যায়।
- কোনো স্থানের মানচিত্রকে প্রয়োজন অনুসারে আয়তনে ছোটো বা বড়ো করার কাজে মানচিত্র স্কেলের প্রয়োজন হয়।
- ভূপৃষ্ঠের কোনো স্থানের জরিপ (Survey) কার্যে মানচিত্র স্কেলের সাহায্য নেওয়া হয়।
মানচিত্রে স্কেলের ব্যবহার ও গুরুত্ব লেখো।
স্কেলের ব্যবহার ও গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন –
- পৃথিবী ও তার যে-কোনো অংশের মানচিত্র আঁকতে স্কেল অপরিহার্য।
- মানচিত্রের আয়তন বা ক্ষেত্রমান পরিমাপ করতে স্কেল ব্যবহৃত হয়।
- মানচিত্রের ওপর বিভিন্ন স্থানগুলির পারস্পরিক দূরত্ব নির্ণয় করে ভূপৃষ্ঠে ওই স্থানগুলির মধ্যেকার প্রকৃত দূরত্ব জানতে স্কেলের ব্যবহার অপরিহার্য।
- মানচিত্রে রেলপথ, সড়কপথ, নদী প্রভৃতির দৈর্ঘ্য নির্ণয়ে স্কেল গুরুত্বপূর্ণ।
- সুবিধা মতো মানচিত্রের আয়তন ছোটো বড়ো করার কাজে স্কেলের ব্যবহার অতি আবশ্যক।
- জরিপ কাজের সময় স্কেল ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- বিভিন্ন ভৌগোলিক তথ্যকে মাপচিত্রের (কার্টোগ্রাম) মাধ্যমে উপস্থাপন করতে স্কেল অপরিহার্য।
- বাড়ি, অফিস, শপিং মল, আবাসন প্রভৃতির নকশা বা ব্লু প্রিন্ট তৈরি করতে স্কেল অতি গুরুত্বপূর্ণ।
টেপোগ্রাফিকাল মানচিত্রে স্কেলগুলিকে ছকের মাধ্যমে দেখাও।
টেপোগ্রাফিকাল মানচিত্রে স্কেলগুলিকে ছকের মাধ্যমে দেখানো হল –
বর্তমানে ভারতীয় জরিপ বিভাগ মেট্রিক পদ্ধতিতে থিমেটিক মানচিত্র প্রকাশ করে। মাপগুলিকে নীচের ছকে দেখানো হল –
শিট নাম | বিস্তৃতি | স্কেল (CGS) | RF | সূচক |
মিলিয়ন শিট | 4° × 4° | 1 cm = 10 cm | 1 : 10,00,000 | 74 |
ডিগ্রি শিট | 1° × 1° | 1 m = 2.5 cm | 1 : 2,50,000 | 74 J |
½ ডিগ্রি/½ ইঞ্চি শিট | 30′ × 30′ | 1 cm = 1 km | 1 : 1,00,000 | 74 J/SE |
ইঞ্চি শিট | 15′ × 15′ | 2 cm = 1 km | 1 : 50,000 |
গ্লোব ও মানচিত্রের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো।
গ্লোব ও মানচিত্রের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ –
সুবিধাসমূহ –
- গ্লোব – গ্লোবের মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবীর আকৃতি দেখা সম্ভব।
- মানচিত্র – মানচিত্র থেকে কোনো দেশ বা মহাদেশের বিভিন্ন বিষয়ের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়।
- গ্লোব – পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশ ও মহাসাগরগুলির আকৃতি ও পারস্পরিক অবস্থান জানা যায় গ্লোবের সাহায্যে।
- মানচিত্র – মানচিত্রের সাহায্যে যে-কোনো দুটি স্থানের মধ্যবর্তী দূরত্ব সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব।
- গ্লোব – গ্লোব ঘোরালে পৃথিবীর আবর্তন গতির ধারণা পাওয়া যায়।
- মানচিত্র – মানচিত্র ভাঁজ করে সহজেই বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া যায়।
অসুবিধাসমূহ –
- গ্লোব – গ্লোব থেকে কোনো মহাদেশ বা দেশ সম্বন্ধে খুব বেশি তথ্য জানা যায় না।
- মানচিত্র – মানচিত্রের মাধ্যমে পৃথিবীর গোলকাকার আকৃতি দেখানো সম্ভব হয় না।
- গ্লোব – গ্লোব থেকে সাধারণত কোনো দুটি স্থানের সঠিক দূরত্ব জানা খুবই কঠিন।
- মানচিত্র – মানচিত্র পাঠের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন মানচিত্র পাঠ সকলের দ্বারা সম্ভব নয়।
- গ্লোব – গ্লোব বেশ ভারী হওয়ায় সব সময় সব জায়গায় বয়ে নিয়ে যাওয়া অসুবিধাজনক।
- মানচিত্র – নির্ভুল মানচিত্র অঙ্কন অত্যন্ত জটিল ও কঠিন কাজ।
বিবৃতিমূলক স্কেলের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো।
সুবিধাসমূহ –
- এই স্কেলে অঙ্ক কষার জটিলতা নেই।
- এই স্কেল বোঝা খুব সহজ বলে মানচিত্র পাঠে অনভিজ্ঞ লোকেরও কোনো অসুবিধা হয় না।
- CGS ও FPS যে-কোনো একটি ইউনিটেই এটি প্রকাশ করা যায়।
- গাণিতিক পদ্ধতি দ্বারা ছবি আঁকার জটিলতা নেই।
- মাপজোখ, ভৌগোলিক যন্ত্রপাতি ইত্যাদির দরকার হয় না এই স্কেল প্রকাশ করার জন্য।
- মানচিত্রের দূরত্ব ও ভূমিভাগের দূরত্বের মধ্যে সহজে তুলনা করা যায়।
অসুবিধাসমূহ –
- বিভিন্ন ভাষাভাষীর মানুষের পক্ষে এটি বোঝা কষ্টকর কারণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন একক থাকে।
- মানচিত্রটি বড়ো বা ছোটো করার সঙ্গে সঙ্গে স্কেলটি বড়ো বা ছোটো হয় না।
- CGS পদ্ধতি থেকে FPS পদ্ধতিতে বা উলটোটা রূপান্তর করা কষ্টকর।
- স্কেলটি সংখ্যায় প্রকাশিত হয় বলে চোখে দেখে স্কেল অনুধাবন করার সমস্যা দেখা দেয়।
ভগ্নাংশসূচক স্কেল বা RF স্কেলের সুবিধা ও অসুবিধা-গুলি লেখো।
সুবিধাসমূহ –
- এককমুক্ত হওয়ায় এই স্কেলকে বিশ্বের যে-কোনো দেশের দৈর্ঘ্যের এককে প্রকাশ করা যায়।
- পৃথিবীতে এই স্কেলের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি।
- এই স্কেল থেকে সহজে বিবৃতিমূলক অথবা রৈখিক স্কেল তৈরি করা যায়।
- এই স্কেল ব্যবহার করে অঙ্কনজনিত ত্রুটি দূর করা যায়।
অসুবিধাসমূহ –
- মানচিত্র বড়ো বা ছোটো করতে হলে তার সাপেক্ষে RF -কেও বড়ো বা ছোটো করে নিতে হয়।
- গাণিতিক হিসাব না জানলে এই স্কেল ব্যবহার করা অসুবিধাজনক।
- স্কেলটি সংখ্যায় প্রকাশিত হয় বলে চোখে দেখে স্কেল অনুধাবন করা অসুবিধাজনক।
- একক মাত্রাহীন হওয়ায় এক একক থেকে আর এক এককে রূপান্তর করা কষ্টসাধ্য।
- একমাত্র অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাই এই স্কেল ব্যবহার করতে পারেন।
রৈখিক স্কেলের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো।
সুবিধাসমূহ –
- মানচিত্র পাঠকরা সহজেই রেখার মাপের সঙ্গে মানচিত্রের তুলনা করে বাস্তব দূরত্ব সম্পর্কে ধারণা লাভকরেন।
- মানচিত্রের ক্ষুদ্র দূরত্বও সহজে গৌণ বিভাগের দ্বারা নির্ণয় ও প্রকাশ করা যায়।
- মানচিত্রের স্কেল ও ক্ষেত্রফলের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় থাকে।
- মানচিত্র বড়ো বা ছোটো হলে এই স্কেলও বড়ো বা ছোটো হয়।
- এই স্কেল বোঝা ও অঙ্কন সকলের পক্ষে সুবিধাজনক।
অসুবিধাসমূহ –
- এই স্কেল অঙ্কন করতে জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধানের প্রয়োজন হয়।
- পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দৈর্ঘ্যের বিভিন্ন একক ব্যবহার করা হয় বলে কোনো নির্দিষ্ট এককে প্রকাশিত স্কেলটি সেই দেশের লোকেরাই বুঝতে পারবে যারা দৈর্ঘ্যের ওই এককটি ব্যবহার করে। অন্যদের কাছে এটি বুঝতে সমস্যা সৃষ্টি করবে।
- মুখ্য বিভাগের সঙ্গে গৌণ বিভাগের সঠিক সম্পর্ক নির্ণয় করতে হয় যা সকলের পক্ষে বোঝা কঠিন।
Class 9 Geography All Chapter Notes
আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের নবম অধ্যায় ‘মানচিত্র ও স্কেল’ এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি নবম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।