আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের অষ্টম অধ্যায় ‘পশ্চিমবঙ্গ (অবস্থান ও প্রশাসনিক বিভাগ)’ এর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটি কীভাবে গঠিত হয়?
অথবা, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নাম ‘পশ্চিমবঙ্গ’ হল কেন?
1947 সালের 15 আগস্ট ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পূর্বে ‘পশ্চিমবঙ্গ’ নামে কোনো রাজ্য ছিল না। তখন অবিভক্ত বাংলা ‘বঙ্গদেশ’ নামে পরিচিতি ছিল। স্বাধীনতার সময় এই বঙ্গদেশ দ্বিখন্ডিত হয় এবং একটি অংশ ‘পশ্চিমবঙ্গ’ নামে ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়। বঙ্গদেশের পশ্চিমের অংশবিশেষ নিয়ে এই রাজ্য গঠিত হয় বলে এর নাম (পশ্চিম + বঙ্গ) ‘পশ্চিমবঙ্গ’।
পশ্চিমবঙ্গের অক্ষাংশগত ও দ্রাঘিমাগত অবস্থান লেখো।
অক্ষাংশগত অবস্থান – দক্ষিণে 21°31′ উত্তর অক্ষাংশ থেকে উত্তরে 27°14′ উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত।
দ্রাঘিমাগত অবস্থান – পশ্চিমে 85°91′ পূর্ব দ্রাঘিমা থেকে পূর্বে 89°93′ পূর্ব দ্রাঘিমা পর্যন্ত বিস্তৃত।
পশ্চিমবঙ্গের কোন্ কোন্ জেলার মধ্য দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা (23½° উঃ) বিস্তৃত?
কর্কটক্রান্তিরেখা (23½° উত্তর) পশ্চিমবঙ্গের প্রায় মাঝ বরাবর পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান ও নদিয়া জেলার ওপর দিয়ে বিস্তার লাভ করেছে।
পশ্চিমবঙ্গের চতুঃসীমা লেখো।
পশ্চিমবঙ্গ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সীমানা দ্বারা পরিবেষ্টিত।
- উত্তরে আছে সিকিম রাজ্য ও ভুটান দেশ।
- উত্তর-পূর্বে আছে অসম রাজ্য।
- পূর্বে আছে বাংলাদেশ।
- উত্তর-পশ্চিমে আছে নেপাল দেশ।
- পশ্চিমে আছে বিহার ও ঝাড়খণ্ড রাজ্য।
- দক্ষিণ-পশ্চিমে আছে ওড়িশা রাজ্য এবং দক্ষিণ সীমানায় আছে বঙ্গোপসাগর।
অর্থাৎ, পশ্চিমবঙ্গের তিন দিক স্থলভাগ ও একদিক জলভাগ দ্বারা বেষ্টিত। এরূপ অবস্থানকে উপদ্বীপীয় অবস্থান বলা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের আয়তন ও জনসংখ্যা কত?
পশ্চিমবঙ্গের আয়তন – প্রায় 88,752 বর্গকিমি। আয়তনের দিক থেকে ভারতে পশ্চিমবঙ্গের স্থান ত্রয়োদশ।
পশ্চিমবঙ্গের জলসংখ্যা – 2011 সালের জনগণনা অনুসারে পশ্চিমবঙ্গের মোট জনসংখ্যা 9 কোটি 13 লক্ষ 47 হাজার 736 জন।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর-দক্ষিণে ও পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তার কত?
উত্তর-দক্ষিণে বিস্তার – পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে দার্জিলিং জেলার উত্তর সীমান্ত থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত সর্বাধিক বিস্তার প্রায় 623 কিমি।
পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তার – পূর্বে উত্তর 24 পরগনা থেকে পশ্চিমে পুরুলিয়া পর্যন্ত সর্বাধিক বিস্তার প্রায় 320 কিমি। উত্তর দিনাজপুরে এই বিস্তার মাত্র 9 কিমি।
পশ্চিমবঙ্গের সীমানায় অবস্থিত না হয়েও ত্রিপুরা পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য কেন?
পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার মধ্যে প্রধান মিল হল উভয় রাজ্যের প্রধান ভাষা বাংলা। এ ছাড়া এই দুই রাজ্যের মধ্যে নানান সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিল থাকার জন্য এবং বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক গড়ে ওঠার জন্য ত্রিপুরাকে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
শিলিগুড়িকে ‘উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার’ বলা হয় কেন?
উত্তর-পূর্ব ভারতের সিকিম, অসম, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড রাজ্যগুলির সঙ্গে ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের সংযোগ রক্ষা করে চলেছে শিলিগুড়ি শহরটি। এই শহরটির মাধ্যমেই উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির সঙ্গে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের বিভিন্ন দ্রব্যের আদানপ্রদান ঘটে। এই কারণে শিলিগুড়িকে ‘উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার’ বলা হয়।
পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম ও ক্ষুদ্রতম জেলার নাম লেখো।
পশ্চিমবঙ্গের বৃহত্তম জেলা হল – দক্ষিণ 24 পরগনা (9,960 বর্গ কিমি) এবং
ক্ষুদ্রতম জেলা হল – কলকাতা (185 বর্গ কিমি)।
পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক বিভক্তকরণের কয়েকটি সুবিধা লেখো।
- পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক বিভাগগুলির মাধ্যমে প্রতিটি জেলার মধ্যে সুশৃঙ্খল শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়।
- প্রশাসনিক বিভক্তকরণের মাধ্যমে বৃহত্তর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শাসনভার অনেকাংশে লাঘব হয়।
- পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলার অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি প্রভৃতির উন্নয়নমুখী কার্যাবলি পরিচালনা প্রশাসনিক বিভক্তকরণের মাধ্যমেই সহজতর হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলির নাম লেখো।
পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলা –
দিক | জেলা |
উত্তর | দার্জিলিং, কালিম্পং জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার। |
পূর্ব | কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদা, মুরশিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর 24 পরগনা। |
দক্ষিণ | পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর 24 পরগনা, দক্ষিণ 24 পরগনা। |
পশ্চিম | ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, পুরুলিয়া। |
রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন বলতে কী বোঝ?
ভারতবর্ষের রাজ্যগুলিকে ভাষার ভিত্তিতে নতুন করে গঠন করার উদ্দেশ্যে ভারত সরকার 1955 সালে ‘রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন’ গঠন করে। 1956 সালের 1 নভেম্বর ‘রাজ্য পুনর্গঠন আইন’ বলবৎ হয়। রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনের দ্বারা ভারত 14টি রাজ্যে ও 4টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভাজিত হয়েছিল। বর্তমানে রাজ্যের সংখ্যা 29 ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সংখ্যা 7 হয়েছে।
গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জি টি এ) চুক্তিটি কী?
কেন্দ্র, রাজ্য ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে 2011 সালে 18 জুলাই দার্জিলিং জেলায় সুখনার পিনটেল ভিলেজে দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলের স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে গঠিত হবে গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জি টি এ) যা পূর্বতন দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ -এর (ডিজি এইচ সি) (1988 সালে প্রতিষ্ঠিত) থেকে অনেক বেশি ক্ষমতা ও স্বাধীনতাপ্রাপ্ত।
জি টি এ ও ডি জি এইচ সি-র তুলনা করো।
জি টি এ ও ডি জি এইচ সি-র তুলনা –
জি টি এ | ডি জি এইচ সি |
সরকারের প্রতিনিধিত্ব অনেক কম, 50 জন সদস্যের 5 জন মাত্র | সরকারের প্রতিনিধিত্ব অনেক বেশি ছিল, 42 জন সদস্যের মধ্যে 24 জন |
59 টি দফতর | 19 টি দফতর |
ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের উপর আছে জি টি এ | এর ভূমিকা ছিল ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের জেলা পরিষদের |
আসন সংখ্যা বেড়ে হয়েছে 45 | আসন সংখ্যা ছিল 28 |
কেন্দ্র রাজ্যের টাকা স্বাধীনভাবে খরচ করতে পারবে | প্রকল্প অনুযায়ী কেন্দ্র বা রাজ্য টাকা দিত |
তরাই-ডুয়ার্সের কিছু অংশ আওতায় আসার পথ খোলা | আওতায় ছিল শুধুমাত্র পাহাড়ি এলাকা |
পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি আদিবাসী গোষ্ঠীর নাম লেখো।
পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী জনসংখ্যা রাজ্যের মোট জনসংখ্যার 5.5%।
- পশ্চিমবঙ্গের তিনটি আদিম জনজাতি হল – লোধা, বীরহোড়, টোটো।
- পশ্চিমবঙ্গের ক্ষুদ্র আদিবাসী গোষ্ঠীগুলি হল – শবর, লোধা, কোড়া, ভুটিয়া, সাহালি, বেদিয়া, চাকমা, হো, খোদ, লেপচা, রাভা, মেচ, মুণ্ডা ইত্যাদি।
- এ ছাড়া সাঁওতাল, কিসান, চেরো, ভূমিজ, বাইগা, সাউরিয়া, পাহাড়িয়া, মাল পাহাড়ি ইত্যাদি আদিবাসী গোষ্ঠী আছে।
নেপাল ও ভুটান কলকাতা বন্দরের ওপর একান্তভাবে নির্ভরশীল কেন?
নেপাল ও ভুটানের অবস্থান ভারতের উত্তরে পূর্ব হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে। এই দুটি দেশ স্থলবেষ্টিত হওয়ায় এখানে কোনো সামুদ্রিক বন্দর নেই। ফলে আমদানি-রপ্তানির জন্য দুটি দেশকেই কলকাতা বন্দরের ওপর একান্তভাবে নির্ভর করতে হয়।
Class 9 Geography All Chapter Notes
আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের অষ্টম অধ্যায় ‘পশ্চিমবঙ্গ (অবস্থান ও প্রশাসনিক বিভাগ)’ এর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি নবম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।