আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের অষ্টম অধ্যায় ‘পশ্চিমবঙ্গ (প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ)’ এর ভৌগোলিক কারণ ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

দার্জিলিংয়ে ভারী শিল্প গড়ে না ওঠার কারণ লেখো।
ভারী শিল্প বলতে লৌহ-ইস্পাত ও অন্যান্য বিশালায়তন শিল্পের উপযুক্ত ভারী যন্ত্রপাতি, কৃষি যন্ত্রপাতি (ট্র্যাক্টর প্রভৃতি), খনি যন্ত্রপাতি, ভারী বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, যানবাহন ও যানবাহন সম্পর্কিত যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ নির্মাণ শিল্পকে বোঝায়। দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে এই ধরনের কোনো শিল্প বিশেষ গড়ে ওঠেনি। কারণ –
- লৌহ-ইস্পাত কেন্দ্রের অনুপস্থিতি – এই ধরনের শিল্পে বেশি পরিমাণে ইস্পাতের প্রয়োজন হয় বলে এই শিল্পগুলি সাধারণত লৌহ-ইস্পাত কেন্দ্রগুলির কাছে গড়ে ওঠে। দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে কোনো লৌহ-ইস্পাতকেন্দ্র না থাকায় ভারী শিল্প গড়ে উঠতে পারেনি।
- উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব – দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে বিনোদনের জন্য ‘টয়ট্রেন’ ছাড়া আর কোনো রেল ব্যবস্থা নেই। সড়কপথে যোগাযোগের সুবিধাও সীমিত। ফলে ভারী শিল্প গড়ে ওঠার জন্য যে উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থার প্রয়োজন তার অভাব রয়েছে।
- বাজার বা স্থানীয় চাহিদার অভাব – ভারী শিল্প সবসময়ই বাজার বা স্থানীয় চাহিদার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে ভারী শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্যের চাহিদা খুবই কম।
- খনিজ সম্পদের অপ্রাপ্যতা – দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে খনিজ সম্পদ থাকলেও তা আহরণ করা খুবই কষ্টসাধ্য ও ব্যয়সাপেক্ষ। তাই এখানে খনিজ সম্পদভিত্তিক ভারী শিল্প গড়ে ওঠেনি।
- দক্ষ শ্রমিকের অভাব – জনবিরল দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে ভারী শিল্পের প্রয়োজনীয় দক্ষ শ্রমিক যথেষ্ট পাওয়া যায় না।
- কারিগরি দক্ষতার অভাব – কারিগরি নৈপুণ্যের অভাবও এই অঞ্চলে ভারী শিল্প গড়ে ওঠার পথে একটি প্রধান বাধা।
পশ্চিমবঙ্গে তুলো চাষ না হওয়া সত্ত্বেও কার্পাস বয়ন শিল্পের উন্নতির প্রধান কারণগুলি কী কী? ব্যাখ্যা করো।
ভারতের প্রথম বস্ত্রশিল্প কারখানা 1818 খ্রিস্টাব্দে হাওড়ার ঘুঘুড়িতে গড়ে উঠলেও এই শিল্পের বিকাশ ও একদেশীভবন শুরু হয় অনেক পরে। পশ্চিমবঙ্গের বস্ত্রকলগুলি হুগলি নদীর উভয় তীরে হাওড়া, সোদপুর, বেলঘড়িয়া, শ্যামপুর, শ্রীরামপুর, সালকিয়া, উলুবেড়িয়া প্রভৃতি স্থানে গড়ে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গে তুলো চাষ না হলেও কার্পাস বয়ন শিল্পে উন্নতির প্রধান কারণগুলি হল –
- কাঁচামালের প্রকৃতি – কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল তুলো। এটি একটি বিশুদ্ধ প্রকৃতির কাঁচামাল। ফলে তুলো উৎপাদক অঞ্চল থেকে (মহারাষ্ট্র, গুজরাট) কাঁচামাল এনে সহজেই এখানে কার্পাস বয়ন শিল্পের উন্নতি ঘটানো সম্ভব হয়েছে।
- আর্দ্র জলবায়ু – হুগলি নদীর তীরবর্তী এবং বঙ্গোপসাগরের কাছে অবস্থিত হওয়ায় সারাবছরব্যাপী এই অঞ্চলে কার্পাস বয়ন শিল্পের অনুকূল আর্দ্র জলবায়ু বিরাজ করে।
- বাজার ও সুলভ শ্রমিক – পশ্চিমবঙ্গের জনঘনত্ব খুব বেশি হওয়ায় এবং জলবায়ু উষ্ণ প্রকৃতির হওয়ার সুতিবস্ত্রের চাহিদা যেমন খুব বেশি তেমনই কার্পাস বয়ন শিল্পের জন্য সুলভ শ্রমিকও পাওয়া যায়।
- রাসায়নিক দ্রাব্যর জোগান – হুগলি ও হলদিয়া শিল্পাঞ্চল থেকে বস্ত্রশিল্পের প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য পাওয়া যায়।
- শক্তি সম্পদের জোগান – রানিগঞ্জ-ঝরিয়ার কয়লা ক্ষেত্র, ডিভিসি -র জলবিদ্যুৎ, কোলাঘাট, ব্যান্ডেল, টিটাগড়, ফারাক্কা প্রভৃতি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এই শিল্পের প্রয়োজনীয় শক্তির চাহিদা মেটানো হয়ে থাকে।
- বন্দরের সুবিধা – কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের মাধ্যমে বস্ত্র শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ আমদানি ও উৎপাদিত বস্ত্র রপ্তানির সুবিধা পাওয়া যায়।
পশ্চিমবঙ্গের চা শিল্পকেন্দ্রগুলি চা-বাগিচার মধ্যেই বা তাদের নিকটেই গড়ে উঠার প্রধান কারণগুলো কী?
পশ্চিমবঙ্গে চা-বাগিচার মধ্যেই বা চা বাগিচার নিকটেই সম্পূরিত শিল্প ব্যবস্থারূপে চা শিল্প গড়ে উঠেছে। এর প্রধান কারণ হল –
- সহজলভ্য চা পাতা – চা শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হল চা পাতা। ফলে চা বাগিচার মধ্যে চা-শিল্প কেন্দ্র গড়ে উঠলে চা পাতা পেতে সুবিধা হয়।
- চা পাতা পচনশীল – চা পাতা থেকে ‘চা’ তৈরি হয়। এই পাতা সহজে পচে নষ্ট হয়ে যায়। তাই চা বাগিচার কাছে চা শিল্প গড়ে ওঠায় তা আর পচার সম্ভাবনা থাকে না।
- দ্রুত গাঁজানো – চা গাছ থেকে পাতা তোলার পর খুব তাড়াতাড়ি গাঁজাতে হয়। বাগিচার কাছে চা শিল্প গড়ে তুললে তা সহজ হয়।
- চা পাতা শুকানো – গাঁজানো চা পাতা দ্রুত শুকিয়ে ফেলতে হয়, তা না হলে চা -এর গুণ নষ্ট হয়ে যায়।
পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের বিকাশের ফলে পরিবেশের ওপর পড়া নেতিবাচক প্রভাবগুলি উল্লেখ করো।
উত্তরের পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং, মিরিক, লাভা লোলেগাঁও প্রভৃতি পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটন শিল্পের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্ত পর্যটন ক্ষেত্রগুলির পরিবেশের অবনমন ঘটছে। এর প্রধান কারণগুলি হল –
- অরণ্য ধ্বংস ও তার প্রভাব – এই সমস্ত অঞ্চলে অরণ্য ধ্বংস করে রাস্তাঘাট নির্মাণ, বসতি স্থাপন, হোটেল নির্মাণ করা হচ্ছে। এর ফলে এই অঞ্চলে ধস, বন্যার প্রবণতা বাড়ছে।
- বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতিসাধন – পর্যটকগণের অবাধ যাতায়াত, জন কোলাহল, গাড়ির আওয়াজ প্রভৃতি কারণে পার্বত্য অঞ্চলের শান্ত পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ফলে পশুপাখির স্বাভাবিক জীবনক্রিয়া বিঘ্নিত হচ্ছে। যা এই অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতিসাধন করছে।
- দূষণ – পর্যটকদের ফেলে আসা প্লাস্টিক ও অন্যান্য বর্জ্য পার্বত্য অঞ্চলের পরিবেশকে দূষিত করছে।
- বন্যপ্রাণীর অবলুপ্তি – পাহাড়ি অঞ্চলে পর্যটকরা অবাধে ঘোরার ফলে জলদাপাড়া, বক্সাপাহাড় প্রভৃতি অরণ্যের বন্যপ্রাণী, যেমন – গন্ডার, হাতি প্রভৃতি ভয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছে না। ফলে বন্যপ্রাণীর অবলুপ্তির সম্ভাবনা বাড়ছে।
পিকনিক, তামাক সেবন, কোলাহলের ফলে বনভূমির শান্ত পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে, বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হচ্ছে। ফলে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
হলদিয়া বন্দরকে কলকাতার সহায়ক বন্দর বলা হয় কেন?
স্বাধীনতার আগে কলকাতা ছিল ভারতের প্রধান বন্দর। কিন্তু, বর্তমানে নানান সমস্যাজনিত কারণে এই বন্দরের গুরুত্ব ক্রমশ কমে যাচ্ছে। বিশেষত, নাব্যতা হ্রাসজনিত কারণে বড়ো বড়ো জাহাজ কলকাতা বন্দরে প্রবেশ করতে না পারায় এই বন্দর অপ্রধান বন্দরে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। এই অবস্থায় কলকাতা বন্দরকে রক্ষা করতে কলকাতা থেকে 96 কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে সমুদ্র উপকূল থেকে মাত্র 30 কিমি অভ্যন্তরে হুগলি ও হলদি নদীর সংযোগস্থলে হলদিয়া বন্দর নির্মাণ করা হয়। হলদিয়া বন্দরের প্রবেশপথ সরল এবং বালুচর অনুপস্থিত থাকায় ও জলের গভীরতা প্রায় 10 মিটার হওয়ায় বড়ো বড়ো জাহাজ এখানে সহজে প্রবেশ করতে পারে। তারপর ছোটো ছোটো জাহাজে করে সেইসব পণ্যদ্রব্য হলদিয়া থেকে কলকাতা বন্দরে আনা হয়। আবার অনেক সময় বড়ো বড়ো জাহাজ কিছুটা পণ্য হলদিয়া বন্দরে খালাস করে ওজনে হালকা হয়ে যাওয়ায় কলকাতা বন্দরে আসতে পারে। তাই হলদিয়া বন্দরকে সঠিক অর্থে কলকাতার সহায়ক বন্দর বলা যায়।
Class 9 Geography All Chapter Notes
আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের অষ্টম অধ্যায় ‘পশ্চিমবঙ্গ (প্রধান প্রধান অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ)’ এর ভৌগোলিক কারণ ব্যাখ্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি নবম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।