আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় ‘পৃথিবীপৃষ্ঠে কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয়’ এর কিছু টীকা নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

মূলমধ্যরেখা (Prime Meridian)
ভূগোলকের অন্তর্গত 0° দ্রাঘিমারেখাটি মূলমধ্যরেখা (Prime Meridian) নামে পরিচিত।
কাল্পনিক অবস্থান – এই রেখাটি লন্ডনের গ্রিনিচ মানমন্দিরের উপর দিয়ে কল্পনা করা হয়েছে।
বৈশিষ্ট্য –
- মূলমধ্যরেখাটি উত্তরে সুমেরু থেকে দক্ষিণে কুমেরু পর্যন্ত বিস্তৃত।
- এই রেখাটি অর্ধবৃত্তাকার।
- প্রতিটি অক্ষরেখাকে মূলমধ্যরেখা প্রায় লম্বভাবে ছেদ করেছে।
গুরুত্ব –
- পৃথিবীকে পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধে বিভক্ত করেছে।
- মূলমধ্যরেখার স্থানীয় সময়কে সারা পৃথিবীর প্রমাণ সময় হিসাবে ধরা হয়।
am ও pm
পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে কোনো দ্রাঘিমারেখা যখন সূর্যের সামনে আসে তখন সূর্যকে সেই স্থানের মধ্যাকাশে দেখা যায় এবং তখন সেখানের স্থানীয় সময় হয় মধ্যাহ্ন বা বেলা 12টা। বিপরীত দ্রাঘিমারেখায় তখন সময় হয় মধ্যরাত্রি বা রাত্রি 12টা। অর্থাৎ, কোনো জায়গায় মধ্যরাত্রি 12টার পর থেকে পরদিন মধ্যাহ্ন অর্থাৎ দুপুর 12টার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সময়কে Ante (Before) Meridian বা am এবং মধ্যাহ্ন বা দুপুর 12টার পর থেকে মধ্যরাত্রি 12টার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সময়কে Post (After) Meridian বা pm বলে। অর্থাৎ, কোনো জায়গার দ্রাঘিমা বা Meridian -এর উপর সূর্য পৌঁছানোর আগের সময় বোঝাতে Ante Meridian এবং সূর্য পৌঁছানোর পরের সময় বোঝাতে Post Meridian ব্যবহার করা হয়। আর রাত্রি 12টা এবং দুপুর 12 টাকে am বা pm না বলে যথাক্রমে মধ্যরাত্রি 12টা এবং মধ্যাহ্ন 12টা বলা হয়ে থাকে।
স্থানীয় সময় (Local Time)
পৃথিবীর পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তনের ফলে পৃথিবীর কোনো-না-কোনো দ্রাঘিমারেখা সূর্যের সামনে আসে, অর্থাৎ সূর্যরশ্মি প্রতিটি দ্রাঘিমারেখার উপর লম্বভাবে পতিত হয়। এইভাবে কোনো দ্রাঘিমারেখায় সূর্যের সর্বোচ্চ উন্নতির সময় দুপুর 12টা ধরে দিনের বাকি সময়ের হিসাব করা হয়। এইভাবে আকাশে সূর্যের অবস্থান অনুসারে যে সময় নির্ধারণ করা হয়, তাকে স্থানীয় সময় বলে।
উদাহরণ – কলকাতায় (88°30′ পূর্ব) যখন সূর্যের উন্নতি সর্বোচ্চ তখন কলকাতার স্থানীয় সময় দুপুর 12টা। ঠিক সেই মুহূর্তে দিল্লির (77°12′ পশ্চিম) স্থানীয় সময় হবে সকাল 11টা 14 মিনিট 36 সেকেন্ড।
অপর নাম – সূর্যের অবস্থান অনুযায়ী স্থানীয় সময় নির্ধারিত হয় বলে সূর্যকে প্রাকৃতিক ঘড়ি এবং সময়কে সৌরসময় বলে।
কৌণিক দূরত্ব (Angular Distance)
পৃথিবীর কেন্দ্রে কোনো স্থান এবং নিরক্ষরেখা বা মূলমধ্যরেখা দ্বারা যে কোণ সৃষ্টি করে, সেই কোণের মানকে সেই স্থানের কৌণিক দূরত্ব বলে।

ব্যাখ্যা – ধরা যাক, বক্রাকার পৃথিবীপৃষ্ঠের উপর A এবং B দুটি স্থান বা বিন্দু এবং ভূকেন্দ্ররূপে O অবস্থান করে। এখানে A বিন্দু থেকে ভূকেন্দ্রের O বিন্দু পর্যন্ত এবং B বিন্দু থেকে ভূকেন্দ্রের O বিন্দু পর্যন্ত দুটি ব্যাসার্ধ বা রেখাংশ টানা হল। এইভাবে ব্যাসার্ধ দুটির মধ্যস্থিত উৎপন্ন কোণ \(\angle AOB=30^\circ\) হল ওই স্থানের কৌণিক দূরত্ব।
গ্রিনিচ থেকে ভারতের সময়ের পার্থক্য 5 ঘণ্টা 30 মিনিট কেন?
গ্রিনিচ থেকে প্রতি 7°30′ দ্রাঘিমা বা 30 মিনিট সময়ের পরিবর্তনকে প্রমাণ সময় নির্ণয়ের সর্বনিম্ন সীমা ধরা হয়েছে। এই কারণে ভারতের ঠিক মাঝে অবস্থিত দ্রাঘিমারেখা 82°46′ পূর্ব-কে প্রমাণ দ্রাঘিমা হিসাবে না ধরে 82°30′ পূর্ব দ্রাঘিমারেখাকে প্রমাণ দ্রাঘিমা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। তাই গ্রিনিচ থেকে ভারতের সময়ের পার্থক্য 5 ঘণ্টা 30 মিনিট। একই কারণের জন্য পূর্ব-পশ্চিমে অত্যধিক বিস্তৃত হওয়ায় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে 4টি ও রাশিয়ান ফেডারেশানে 9টি প্রমাণ সময় পরিলক্ষিত হয়।
প্রমাণ সময় (Standard Time)
পৃথিবীর একই দ্রাঘিমারেখায় অবস্থিত স্থানগুলির স্থানীয় সময় এক হলেও 1° দ্রাঘিমার পার্থক্যে 4 মিনিট সময়ের পার্থক্য ঘটে। ফলে কোনো দেশে বহুসংখ্যক দ্রাঘিমারেখার উপস্থিতির দরুন বিভিন্ন স্থানীয় সময় থাকলে রেল, ডাক, বেতার এবং প্রশাসনিক কাজ চালানো অসুবিধাজনক হয়ে পড়বে। এই অসুবিধা যাতে না হয়, সেজন্য কোনো দেশের প্রায় মধ্যাঞ্চল দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত দ্রাঘিমাকে প্রমাণ দ্রাঘিমা ধরা হয় এবং এই দ্রাঘিমার ওপর নির্ভর করে যখন দেশের বা ওই ভূখণ্ডের সময় নির্ণীত হয়, তখন তাকে ওই দেশ বা ভূখণ্ডের প্রমাণ সময় বলে।
উদাহরণ – ভারতের প্রায় মাঝামাঝি স্থানে এলাহাবাদের কাছে অবস্থিত 82°30′ পূর্ব দ্রাঘিমারেখার স্থানীয় সময়কে ভারতের প্রমাণ সময় হিসাবে ধরা হয়।
Class 9 Geography All Chapter Notes
আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় ‘পৃথিবীপৃষ্ঠে কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয়’ এর কিছু টীকা নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি নবম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।