আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় ‘পরিবেশের জন্য ভাবনা’ এর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সংক্ষেপে আলোচনা করব। এই অধ্যায় মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখান থেকে পরীক্ষায় নিয়মিত প্রশ্ন আসে। আশা করছি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পড়াশোনায় সহায়ক হবে।
দশম শ্রেণী – ভৌতবিজ্ঞান – পরিবেশের জন্য ভাবনা – বিষয় সংক্ষেপ
ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 1600 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বলয়াকারে বিস্তৃত যে অদৃশ্য গ্যাসীয় আবরণ পৃথিবীকে ঘিরে রেখেছে, তাকে বায়ুমণ্ডল বলে। তাপমাত্রা ও উচ্চতার ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলকে পাঁচটি প্রধান স্তরে ভাগ করা হয়: ট্রোপোস্ফিয়ার, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার, মেসোস্ফিয়ার, থার্মোস্ফিয়ার এবং এক্সোস্ফিয়ার।
তরল বা গ্যাসীয় পদার্থ উত্তপ্ত হলে তার আয়তন বৃদ্ধি পায়, ফলে এর ঘনত্ব কমে যায়। এর ফলে উত্তপ্ত তরল বা গ্যাসীয় পদার্থ হালকা হয়ে উপরে উঠে এবং ওপরের শীতল ভারী অংশ নীচে নেমে আসে। এভাবে যে চক্রাকার স্রোতের সৃষ্টি হয়, তাকে পরিচলন স্রোত বলে।
যদি কোনো কারণে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন কোনো অঞ্চলের বায়ু অধিক উত্তপ্ত হয়ে হালকা অবস্থায় উপরে উঠে যায়, তখন আশেপাশের উচ্চচাপ অঞ্চলের বায়ু ওই নিম্নচাপ অঞ্চলে প্রবাহিত হয়। উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে দ্রুতগামী বায়ুকে ঝড় বলা হয়।
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে অবস্থিত ওজোন স্তর সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে পৃথিবীতে আসা থেকে বাধা দেয়। এই স্তর জীবজগৎকে ওই ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে।
মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপের ফলে ওজোন স্তর ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে, যাকে ওজোন স্তরের ক্ষয় অথবা ওজোন গহ্বর বলা হয়।
ওজোন স্তর ধ্বংসের জন্য দায়ী প্রধান যৌগগুলি হলো ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC) এবং নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড (বিশেষত নাইট্রিক অক্সাইড বা NO)।
যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত CO₂, CH₄, N₂O, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি গ্যাসীয় পদার্থ পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অবলোহিত রশ্মির কিছু অংশ শোষণ করে এবং বাকি অংশ প্রতিফলিত করে ভূপৃষ্ঠ ও তৎসংলগ্ন বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত রাখে এবং জীবকূলের বেঁচে থাকার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে, তাকে গ্রিনহাউস প্রভাব বলে। গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির প্রভাবে সারা বিশ্বজুড়ে ক্রমাগত উষ্ণতা বৃদ্ধির ঘটনাকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়ন বলে। এর পরিবেশগত প্রভাব মারাত্মক হতে চলেছে।
জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহার ও ক্রমাগত অরণ্যচ্ছেদনের ফলে CO₂-এর স্বাভাবিক গ্রাহক সংখ্যা কমে যাওয়ায় বায়ুমণ্ডলে CO₂-এর পরিমাণ ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে, যা গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করছে।
একক পরিমাণ কোনো কঠিন বা তরল জ্বালানির সম্পূর্ণ দহনে যে পরিমাণ তাপশক্তি উৎপন্ন হয়, তাকে ওই জ্বালানির তাপনমূল্য বলে।
সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে শক্তির ব্যবহার ও চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীর জীবাশ্ম জ্বালানির (কয়লা, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস) ভাণ্ডার ক্রমশ নিঃশেষিত হয়ে আসছে। একে রক্ষা করতে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎসগুলির ব্যবহার আরও বাড়ানো জরুরি।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে প্রাকৃতিক সম্পদকে সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষ না করে যখন মানবজাতির উন্নয়নের কাজে সুনিয়ন্ত্রিত উপায়ে ওই সম্পদের আহরণ ও ব্যবহার করা হয়, তখন তাকে স্থিতিশীল উন্নয়ন বলে।
স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য প্রথম পদক্ষেপ হল দূষণহীন বিকল্প শক্তি উৎসের সন্ধান করা। কয়েকটি বিকল্প শক্তির উৎস হল – সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জোয়ার-ভাটার শক্তি, ভূ-তাপশক্তি, বায়োমাস শক্তি। এই শক্তি উৎসগুলি দূষণহীন এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য।
বর্জ্য পদার্থের দহনে প্রাপ্ত তাপশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ট্যাংকে থাকা জলকে উত্তপ্ত করে স্টিম উৎপন্ন করা যায় এবং ওই স্টিমের সাহায্যে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।
সাম্প্রতিককালে সন্ধান পাওয়া গেছে এমন দুটি জ্বালানি হল কয়লাখনির মিথেন এবং মিথেন হাইড্রেট। জ্বালানি হিসেবে এদের বিপুল সম্ভাবনা থাকলেও, এদের সম্পূর্ণভাবে ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠেনি।
আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় ‘পরিবেশের জন্য ভাবনা’ বিষয়ের সংক্ষেপ আলোচনা করেছি। এই আলোচনা মাধ্যমিক ও চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রায়ই এই ধরনের প্রশ্ন পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়। আশা করি, আর্টিকেলটি আপনার জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, টেলিগ্রামে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা যথাসম্ভব উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। এছাড়া, পোস্টটি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না, যারা এর উপকার পেতে পারেন। ধন্যবাদ।